হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১২
_______
ইশার কথাগুলো শুনে আয়াশ তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। আয়াশের যেন বিশ্বাস-ই হচ্ছে না যে, কথাগুলো ইশা বলেছে। ওর ইশা এতোটা ম্যাচিউট হয়ে গেছে?? যেটা ওর অজানাই রয়ে গেছে। সবসময় যে ইশাকে সে ছোট বলে এসছে এটা তো সে ইশা নয়। এই ইশা অন্য ইশা। হ্যাঁ, অন্য ইশাই তো। এই ইশা তো বেশ ম্যাচিউট। কথাগুলো ভাবতেই আয়াশের কেন যেন মনটা হেসে উঠলো। তবে মুখে সেই হাসিটা প্রকাশ পায়নি। হয়তো ইশার সামনে সেটা লুকিয়ে রেখেছে। মুখে এখনও সেই অবাক ভাবটা বজায় রেখে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। হয়তো অবাক বলাটা ভুল হবে। অনেকটা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। আয়াশকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা আয়াশের মুখের সামনে তুড়ি বাজালো।
” কি রে? এমন করে কি দেখছিস?? ”
মুহূর্তেই আয়াশের ঘুর কাটলো। আমতা আমতা গলায় বললো —-
” আ আব ব ব কই কি দেখছি??
” তাহলে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দে আব মেরা ভাই। ”
আয়াশ কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি আবারও চলতে শুরু করেছে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আয়াশ বললো।
” আচ্ছা ইশা! তুই এতোটা ম্যাচিউট হলি কবে থেকে রে??
” কেন? তুই জানিস না কবে থেকে হয়েছি??
” না তো!
” ও তাহলে এখন জেনে রাখ। যেদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সেদিন থেকে।
” তুই আর মানুষ হলিনা।
” সেটাও হয়ে যাবো, আবার যেদিন বাংলাদেশে যুদ্ধ হবে সেদিন। তখন মানুষ হয়ে গুলি নিয়ে ডিসকাও ডিসকাও করে মারবো শত্রুদের, হুমমম।
” তুই পারিসও বটে। ”
এমন হাজারো কথা বলতে বলতে আয়াশ আর ইশা বাড়িতে এসে পৌঁছালো। তারপর ফ্রেশ হয়ে লান্স করে যে যার মতো করে রুমে চলে গেলো।
মাঝখানে প্রায় সপ্তাহ চারেকের মতো কেটে গিয়েছে। বলা চলে প্রায় মাস খানিক সময় চলে গিয়েছে। আয়াশ আর ইশার দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়ার মধ্য দিয়ে সময় গুলো বেশ যাচ্ছে। রোজকার মতো আজও আয়াশ সন্ধার সময় অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। আর রোজকার মতো ইশাও আয়াশ রুমে যাওয়ার পর পরই আয়াশের জন্য চা নিয়ে আয়াশের রুমে গিয়েছে। আসলে আয়াশ কয়েক দিন আগে ওকে কড়াভাবে বলে দিয়েছে আয়াশ আসার পর পরই যেন ও আয়াশের রুমে চা নিয়ে যায়। যদিও ইশা প্রথমে মানতে চায়নি; কিন্তু পরে আয়াশ ওকে সো কল শর্তের কথা মনে করিয়ে দেওয়াতে ও বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছে। তবে আয়াশ ওকে চা নিয়ে রুমে যেতে বলেছে ঠিকই, কিন্তু ওকে কিচেনে যেতে বারণ করেছে। বলেছে হয় মা’কে বলবে নয়তো ছোট মা’কে বলবে চা করার জন্য। ও যেন ভুলেও কিচেনে না যায়। অবশ্য আয়াশের মা-ও ইশাকে কখনো কিচেনে যেতে দেয়না। যদি ইশার কিছু প্রয়োজন হয় উনি নিজে সেটা করে দেন। আফটার অল ইশাকে মেয়ের মতো ভালোবাসেন কিনা। ইশা চায়ের কাপ সহ ট্রাই নিয়ে আয়াশের রুমের দরজায় এসে গলা কাঁকড়ি দিলো।
“এহেম ”
আয়াশ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টি-শার্ট গায়ে দিচ্ছিলো। ইশার কণ্ঠ পেয়ে তাকালো সেদিকে। ইশা এখনও দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
” কি ব্যাপার! তোকে কি ভিতরে আসার জন্য ইনভাইটেশন দিতে হবে?? ”
আয়াশের কথা শুনে ইশা মুখ বাঁকিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো—-
” হুহ্। এই জন্যই কারো ভালো করতে নেই। যদি হুট করে ঢুকে যেতাম তাহলে বলতি আমার ম্যানার্স নেই। আর এখন সৌজন্যতা দেখালাম বলে বলছিস ইনভাইটেশন দিতে হবে কিনা?? তোরা ছেলেরা আসলেই খাটাশ। মেয়েদের সবকিছুতে তুদের দোষ। ”
বলতে বলতে ইশা ট্রাইটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো।
” বেশ লেকচার দেওয়া শিখে গিয়েছিস মনে হচ্ছে?? তা শর্তের কথা কি ভুলে গিয়েছিস?? নাকি আবারও মনে করিয়ে দিতে হবে?? ”
কথাগুলো বলে আয়াশ বিছানায় এসে বসলো। ইশা বিরক্তি নিয়ে বললো—-
” তোর এই শর্তের জালায় আর বাঁচিনা। সবসময় কি আর এই শর্ত টর্তের কথা মনে থাকে??
” কেন? মাথায় কি সবসময় ছেলেদের কথা ঘুরে যে সামান্য শর্ত গুলো মনে রাখতে পারিসনা?? ”
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাটা বললো আয়াশ। ইশা ওর পাশেই বসে ছিলো। সেখানে বসে থেকেই বললো—-
” যদি ঘুরে তাতে তোর কি প্রবলেম আছে??
” আবার….??
” সরি সরি। মনে ছিলোনা। এভাবে ধমকানোর কি আছে??
” তোকে তো না ধমকালে হয়না। এখন তাড়াতাড়ি চা টা শেষ কর। একটা জিনিস দেওয়ার আছে।
সাথে সাথে ইশা খুশি হয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো —– ” কি দেওয়ার আছে? আমার জন্য কিছু এনেছিস বুঝি?? বল বল কি এনেছিস?? ”
” একটা জিনিস দেওয়ার আছে বলেছি অমনিই শুরু হয়ে গেছে না?? আমরা ছেলেরা নাকি তুদের দোষ খুঁজি সবকিছুতে। তা তোরা যে সবসময় চাই চাই খাই খাই করিস সেটা দোষের নয়?? সব মেয়েরাই এমন। কেউ কিছু দিবে বললেই হয়েছে। সাথে সাথে ব্যাঙের মতো লাফানো শুরু করে দেয়। ফাউল কোথাকার। ”
ইশা অন্যসময় আয়াশের সব কথাকে হাসির ছলে উড়িয়ে দিলেও এখন কেন যেন আয়াশের কথায় মন খারাপ করলো। বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো —-
” যা লাগবেনা তোর জিনিস। একটু খুশি হয়েছি বলে এতগুলো কথা শুনাতে হয়?? ”
ততক্ষণে আয়াশের চা খাওয়া শেষ। আয়াশ আড়চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো—-
” বাহ! তার মানে তুই রাগ করেছিস। বেশ, ভালো তো। তুই যেহেতু রাগ করেছিস তাহলে নিশ্চয় আমার আনা জিনিসটাও নিবিনা?? অবশ্য না নিলেও কোনো প্রবলেম নেই। কাল একজন আসবে বলেছে। আমি ওকে দিয়ে দিবো জিনিসটা। ”
আয়াশের কথা গুলো শুনেও ইশার কোনো রকম হেলদোল হয়েছে বলে মনে হলোনা। উল্টো ইশা চা-টা শেষ করে সেন্টার টেবিলের উপর থেকে ট্রাইটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর চলে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে গিয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো—-
” তোর জিনিস তুই যাকে ইচ্ছা তাকে দে। আমাকে বলছিস কেন?? আমি তো কিছুর নাম শুনলেই চাই চাই খাই খাই করি। যে আমার মতো কিছুর নাম শুনলেই লাফাবেনা, তাকে দিস। আসছি। ”
বলেই ইশা আর না দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো। আয়াশ ইশার সাথে এতক্ষণ মজা করলেও; এখন ইশার কথা শুনে বুঝতে পারছে ইশা ওর কথায় কষ্ট পেয়েছে। আর এটাও বুঝে গিয়েছে যে ম্যাডাম ওর সাথে অভিমান করেছে। তাই বসে না থেকে ইশা রুম থেকে বের হওয়ার আগেই দৌড়ে গিয়ে ইশার পথ আটকে দাঁড়ালো। ইশা বোধহয় এতে কিছুটা বিরক্তই হলো। বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো —–
” কি হলো? আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছিস কেন?? সর সামনে থেকে। ”
বলেই ইশা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে আয়াশ আবারও ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
” কোথায় যাচ্ছিস?? প্রতিদিন তো আমি যেতে বললেও যাস না। তেথার মতো বসে থাকিস। আর আজকে চা খাইয়েই চলে যাচ্ছিস??
” আমি থাকলে তো তোর কাজের ডিস্টার্ব হয়। রোজ বলিস সেটা। তাই আজ কোনো রকম ডিস্টার্ব করতে চাইছিনা তোকে।
” সামান্য কথায় এতোটা রিয়েক্ট করছিস কেন??
” বালাই ষাঁড়! আমি রিয়েক্ট করবো কেন?? আমি তো জাস্ট……
” আমি এতো কথা শুনতে চাই না। ট্রাইটা এখনই সেন্টার টেবিলের উপর রাখ। কুইক। (রেগে)
ইশা নিশ্চুপ………
” কি হলো? কথা কানে যায়নি?? আমি এক কথা ২বার বলা পছন্দ করি না জানিস নিশ্চয় সেটা। ”
আয়াশের ভুবন কাঁপানো ধমকে ইশা কেঁপে উঠা কণ্ঠে বললো —-
” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি।
” তাহলে এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? যা ট্রাইটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখ। ”
সাথে সাথে ইশা দৌড়ে গিয়ে ট্রাইটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক বেশি ভয় পেয়েছে। আসলে আয়াশ ওর সাথে রাগ দেখালেও এমন ধমক দিয়ে কথা বলেনা কখনো। তাই আজ হঠাৎ আয়াশের এমন ধমক দিয়ে কথা বলাটা ইশা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। ইশাকে ভয়ে তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াশ মুচকি হেসে দরজাটা লক করে দিয়ে আবারও বিছানার কাছে ফেরত আসলো। তারপর অফিস ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করতে করতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো—-
” কি হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বয়। ”
ইশা কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় বসে পড়লো। আয়াশ ব্যাগ থেকে একটা অর্নামেন্টসের বাক্স বের করে ইশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো—
” নে এটা তোর জন্য।
ইশা নিশ্চুপ…..
” কি হলো? ধর। (রেগে)
সাথে সাথে ইশা আয়াশের হাত থেকে বাক্সটা নিলো। এতক্ষণ আয়াশের উপর রেগে থাকায় ইশা বাক্সটি খেয়াল করেনি। তাই তেমন কৌতুহলও দেখায়নি। কিন্তু এখন যখন বাক্সটি হাতে নিলো, সাথে সাথে ইশার সমস্ত রাগ চলে গিয়ে কিছুটা খুশি আর কিছুটা অবাক ভাব চেহারায় ফুটিয়ে তুলে আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো—
” কি আছে এটার মধ্যে??
আয়াশ ধপাশ করে ওর পাশে বসে পড়ে বললো—–” কি আছে সেটা খুললেই দেখতে পাবি। খুলে দেখ। ”
ইশাও আর দেরি না করে বাক্সটি খুলতে শুরু করলো। মুখে সেই হাসি। এখন ইশাকে দেখলে কেউ বলবেনা যে ও একটু আগে গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো। বাক্সটি খুলছে আর বাচ্চাদের মতো করে লাফাচ্ছে। পুরোই যেন একটা বাচ্চা। আয়াশ হাসলো ইশার কাজ দেখে। তবে সেটা ইশার অগোচরেই। ইশার অবশেষে ৩ মিনিট পর বাক্সটি খোলা হলো। ইশা যেইনা বাক্সটি খুলে বাক্সে থাকা জিনিসটি দেখলো, সাথে সাথে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
” ওয়া***ও! গোল্ডের নেকলেস? তাও আমার জন্য?? আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে। এত্তো সুন্দর নেকলেস?? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এটা আমার জন্য এনেছিস। ও মাই গড়! কি যে সুন্দর এটা?? দেখি তো আমি পরে দেখি এটা পড়লে আমাকে কেমন দেখায়। ”
বলতে বলতে ইশা খুশিতে গদগদ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর উৎফুল্ল হয়ে আয়াশের আনা নেকলেসটি গলায় পড়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আয়াশ কিছু বলছেনা। শুধু ইশার কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে। আসলে ইশার বাচ্চামো গুলো ওর দেখতে ভালোই লাগে। তাই তো হুটহাট কিছু একটা এনে ওকে এমন বাচ্চা বানিয়ে দেয়। ইশা যে ওর পছন্দের কিছু পেলে বাচ্চা হয়ে যায় সেটা আয়াশের অজানা নয়। আর কেন যেন ইশার এই বাচ্চামো গুলো আয়াশের খুব ভালো লাগে। আর তাই আয়াশ মাঝে মাঝে ইশার জন্য ওর পছন্দের জিনিস গুলো নিয়ে আসে।
প্রায় গত ৫ মিনিট ধরে ইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর জন্য আনা নেকলেসটি পড়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত শত চেষ্টা করেও সে নেকলেসটি পড়তে পারলোনা। এবার আর না পেরে শেষমেষ মুখটা কাচুমাচু করে আয়নায় আয়াশের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে কাঁতর কণ্ঠে বললো —
” ভাইয়া! একটু পড়িয়ে দে না।
” আমি আনলামও; এখন আবার আমাকেই পড়িয়ে দিতে হবে?? মনে তো হচ্ছে আনাটাই ভুল হয়েছে।
” আচ্ছা তুই এতো আন-রোমান্টিক কেন বল তো?? একটু পড়িয়ে দিলে কি হয়?? সিনেমায় দেখিস না নায়করা নায়িকাদের কতো রোমান্টিক ভাবে পড়িয়ে দেয়। তুই আস্ত একটা অান-রোমান্টিক।
” তাহলে যা। কোনো রোমান্টিক ছেলে দেখে নিয়ে আয়। আমি সিনেমার নায়কও হতে পারবোনা। আর রোমান্টিকও হতে পারবোনা। আর তোর জন্য তো না-ই। আসছে সিনেমার নায়িকা হতে। উনার জন্য এতো টাকা খরচ করে গিফটও আনলাম। আবার এখন নাকি পড়িয়েও দিতে হবে। আমার আর খেয়ে ধেয়ে কাজ নেই।
” এভাবে বলছিস কেন?? আয় না। আমাকে নেকলেসটা পড়িয়ে দিলে কি তোর জাত চলে যাচ্ছে??
” তোর জালাই আর বাঁচলাম না। কেন যে আমি এটা আনতে গেলাম আল্লাহয় জানে। দেখি দে। ”
বলতে বলতে আয়াশ ইশার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইশাও কোনো রকম ভনিতা না করে নেকলেসটা আয়াশের হাতে দিয়ে দিলো।
” আয়নার দিকে ঘুর। আমার দিকে ফিরে থাকলে আমি পড়িয়ে দিবো কি করে?? ”
সাথে সাথে ইশা আয়নার দিকে ঘুরে তাকালো।
” আচ্ছা ভাইয়া! আজ হঠাৎ আমার জন্য এতো দামী একটা গিফট আনলি কেন?? না মানে আমার জানা মতে তো আজ আমার বার্থডে নয়। তাহলে আজ হঠাৎ এমন দামী গিফট আনলি যে তাও আবার আমার অতি পছন্দের একটা জিনিস?? তুই জানিস আমি কতো দিন ধরে আশা করে আছি এমন একটা নেকলেসের কথা বলবো আব্বুকে। আর আব্বু যদি না এনে দেয় বড় আব্বু তো আছেই। বড় আব্বুকে বলে এমন একটা নেকলেস আনাবো। বাট আমার আশাটা তুই পূরণ করে দিলি। হিহিহি। ”
আয়াশ নিশ্চুপ। ইশা যে ওকে এতো গুলো কথা বলেছে ওর কোনো হেলদোলই নেই। ও নিজের মতো করে ইশাকে নেকলেস পড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে নেকলেসের হুকটা একটু টাইট হওয়ায় সেটা লাগানোর চেষ্টা করছে। আয়াশকে চুপ থাকতে দেখে ইশা আবারও বললো—-
” কি রে ভাইয়া! চুপ করে আছিস কেন বল। ”
আয়াশের এবার নেকলেসের হুক লাগানো শেষ হয়েছে। তাই ইশার নেকলেসটা ঠিক করে দিতে দিতে আয়াশ বললো—–
” কি বলবো??
” এই যে, আজ হঠাৎ এতো দামী গিফট আনলি কেন আমার জন্য??
” তোর ছোট মাথায় অতো কিছু ঢুকবেনা। তাই এসব জানতে না চেয়ে বরং পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা বল। ”
ইশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইশার কাঁধে থুতনি রেখে কথাটা বললো আয়াশ। যদিও আয়াশের এমন ক্লোজ হওয়াতে অন্য সময় হলে ইশা লাফালাফি করতো। কিন্তু এখন নেকলেসের খুশিতে সব ভুলে গিয়েছে। তাই হয়তো আয়াশের কাছে আসাটা গায়ে মাখছেনা। বরং আয়াশের প্রশ্নে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো —-
” সে আর বলতে?? অনেক পছন্দ হয়েছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ্ ভাইয়া! থ্যাংক ইউ সো মাচ্।”
আয়াশ তখনও ইশাকে জড়িয়ে ধরে ইশার কাঁধে থুতনি রেখে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ আচমকাই ইশার কথা শেষ হতেই ইশার ঘাড়ে কামড় দিয়ে বসলো আয়াশ। সাথে সাথে ইশা ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলো।
” আ***হ! ভাইয়া কি করছিস?? ”
সাথে সাথে আবারও কামড় পড়লো ঘাড়ে। আর ইশাও আগের বারের মতো আবারও কুঁকিয়ে উঠলো ব্যথায়।
” আ***হ! ভাইয়া তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি করছিসটা কি? কুত্তার মতো কামড়াচ্ছিস কেন??
” যতোবার ভাইয়া বলে ডাকবি আর তুই করে বলবি ততোবার এভাবে একটা করে কামড় খাবি। ”
ইশা এবার কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো —-
” সামান্য ভাইয়া ডাকছি বলে আর তুই করে বলছি বলে এভাবে কামড় দিবি?? ”
সাথে সাথে আবারও আয়াশের সেই বিখ্যাত কামড় অনুভব করলো ইশা।
” আ***হ! আচ্ছা সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে আর ভাইয়া বলে ডাকবোনা। তুই করেও বলবোনা। প্লিজ ছাড়। ”
আয়াশ আবারও কামড় দিতে যাবে তার আগেই ইশা তড়িৎ গতিতে বললো—-
” সরি সরি। প্লিজ ছাড়ো। প্রমিস। আর বলবোনা।
” কি বলবি না??
” এই যে তোকে…. সরি, এই যে তোমাকে আর কখনো ভাইয়া বলে ডাকবোনা; আর তুই করেও বলবোনা। ”
এবার আয়াশ অবশেষে ইশাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো।
” মনে থাকে যেন। নয়তো আজকের পুনঃ আবৃত্তি হবে। কথাটা মাথায় রাখিস। ”
বলেই আয়াশ বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো।
” উউউফফফ! এমন ভাবে কেউ কামড় দেয়?? যেভাবে ব্যথা করছে মনে তো হচ্ছে কামড়ের সাথে মাংস সহ খেয়ে ফেলেছে। পুরো দাঁত সব বসিয়ে দিয়েছে। তোমাকে পড়িয়ে দিতে বলাটাই আমার ভুল হয়েছে। আমার মনে থাকেনা বলে না হয় ভাইয়া আর তুই করে বলে ফেলি। তাই বলে কুত্তার মতো এভাবে কামড় দিবে?? ”
আয়াশ বিছানায় বসে মোবাইল টিপতে টিপতে বললো—–
” যাতে আর কখনো ভুলে না যাস তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এখন থেকে ভাইয়া ডাকার আগে আর তুই করে বলার আগে আজকের কামড়ের কথা মাথায় রাখবি। তাহলে আর ভুল হবেনা। ”
চলবে……..
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি