হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ১৩

0
129

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৩

_______
রাত ১২টা,,,, মাহমুদ মেনশনের সবাই যখন ঘুমে মগ্ন, আয়াশ তখন চুপি স্বারে ইশার রুমের দরজা ঠেলে ইশার রুমে প্রবেশ করছে। এতো রাতে আসার একটাই কারণ, আর সেটা হলো ইশা যাতে ঘুমিয়ে পড়ে আর আয়াশের আগমনটা যেন বুঝতে না পারে। আর এখন শুধু ইশা কেন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, শুধু আয়াশ বাদে। এমন কি যার জন্য আয়াশ এখনও জেগে আছে, সে-ও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আয়াশের চোখে ঘুম নেই। আর ঘুম আসবেই বা কি করে?? ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে আঘাত করে কারও চোখে কি ঘুম আসে?? আয়াশের চোখেও আসছেনা। তাই তো বাড়ির সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে আর নিজের রুমে বসে থাকতে পারেনি। ছুটে এসেছে প্রেয়সীর ঘা’তে মলম লাগাতে। আয়াশ ইশার রুমে ঢুকেই দরজাটা আবারও আগের মতো চাপিয়ে দিলো। তারপর কোনো রকম শব্দ না করে ধীর পায়ে হেঁটে ইশার পাশে গিয়ে বসলো। ইশা গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই আয়াশের উপস্থিতিটা টের পায়নি।

” পাগলিটা আর বড় হলোনা। দেখো হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেমন করে ঘুমাচ্ছে?? কম্বল কোথায় আর ও কোথায় নিজেও জানেনা। আর ওর নাকি রাতে প্রচুর শীত করে। ভাবা যায়?? ”

কথাগুলো নিজ মনে আওড়িয়ে আয়াশ মুচকি হেসে ইশার পায়ের কাছ থেকে কম্বলটা নিয়ে ভালো করে ইশার গায়ে জড়িয়ে দিলো। সাথে সাথে ইশা ঘুমের ঘুরেই কম্বলটা দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো। আয়াশ এটা দেখে আবারও মুচকি হেসে ইশার মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়লো। কম্বল টেনে দেওয়া গলার কামড়ের দাগটা দেখা যাচ্ছে না। তাই আয়াশ ইশার গলা থেকে কম্বলটা সরিয়ে একটু নিচে টেনে দিলো। যাতে গলার দাগটা দৃশ্যমান হয়। যখনই আয়াশ ইশার গলার দাগটা দেখতে পেলো, সাথে সাথে আঁতকে উঠলো সে।

” ও মাই গড়! আমি এতোটা জুরে কামড় দিয়েছি ?? পুরো কামড়ের দাগ বসে গেছে। না জানি ব্যথাটা কেমন পেয়েছে পাগলিটা। ভাগ্যিস দাগটা বাসার কারো চোখে পড়তে দেয়নি। যদি পড়তো তাহলে তো আব্বু আম্মু আমার খবর করে ছাড়তো। পাগলিটা কিভাবে সহ্য করেছে এতোটা ব্যথা?? আমার এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। কেন যে মাঝে মধ্যে নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি?? আমার জন্য শুধু শুধু এতোটা কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে ওকে। ”

কথাগুলো বলতে বলতে আয়াশ পকেট থেকে একটা অয়েন্টমেন্ট বের করে পাশে রাখলো। তারপর কয়েক সেকেন্ড ইশার গলার দাগটির দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই দাগটির উপর লম্বা সময় ধরে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আয়াশের মনে হচ্ছে যদি সব ব্যথা চুষে নেওয়া যেতো, তাহলে হয়তো ও তাই করতো। দাগটির দিকে তাকালেই কেমন একটা ঘৃণা জন্মায় নিজের উপর। ও কবে থেকে এমন জানুয়ার হয়ে গেছে যে এমন করে ওর ইশুকে কামড় দিলো?? পারলো ও এটা করতে?? আয়াশ দীর্ঘ সময় ধরে কামড় দেওয়া স্থানটিতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে এবার পাশ থেকে অয়েন্টমেন্টটি হাতে নিয়ে সেটার থেকে কিছু ঔষধ বের করে হাতের আঙ্গুলে নিলো ইশার গলায় লাগিয়ে দিবে বলে। তবে ইশা একটু নড়েচড়ে উঠায় আয়াশ হাতটা আর বাড়ায়নি; যদি ইশা বুঝতে পেরে যায় তাই। কিছু সময় পর যখন বুঝতে পারলো ইশা ঘুমের মধ্যেই নড়েচড়ে উঠেছে আয়াশ স্বস্তির একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর ইশা যাতে জেগে না যায় এবং কোনো রকম ব্যথা না পায় তার জন্য আস্তে আস্তে খুব যত্ন করে ইশার গলায় ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগলো আয়াশ। আয়াশ ঔষধটা এতোটাই যত্ন করে লাগাচ্ছে যে যেন ব্যথাটা ইশা নয় বরং ও পেয়েছে। আচ্ছা ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়?? ভালোবাসার মানুষটিকে যতোটা না আঘাত করা হয়; তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট নিজেকে পেতে হয়।
ইশার গলায় ঔষধ লাগানো শেষ হলে আয়াশ উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাতটা ধুয়ে আসলো। তারপর আবারও ইশার পাশে বসে পড়লো। ততক্ষণে ইশা আবারও নড়েচড়ে গা থেকে কম্বলটা ফেলে দিয়েছে। তাই আয়াশ আবারও ইশার গায়ে কম্বলটা টেনে দিলো। তারপর কম্বলের বাইরে বের হয়ে থাকা ইশার বাম হাতটি কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। ফের ইশার হাতের আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল ঢুকিয়ে অন্য হাতে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে লাগলো।

” আই এম সরি ইশু! আই এম রিয়েলি সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি কামড় গুলো এতোটা জুরে পড়ে যাবে। আমি সত্যিই অনেক বেশি সরি। প্লিজ ফরগিভ মি। আর কখনো এমন করবোনা। কখনোই না। আমি আসলেই একটা ইডিয়েট। নয়তো এভাবে……

হঠাৎই কারও পায়ের শব্দ শুনতে পেলো আয়াশ। চমকে উঠলো সাথে সাথে।

” এতো রাতে কার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে এটা?? বাড়ির সবাই-ই তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তাহলে এখন আবার কে উঠলো?? ”

আয়াশ যখন কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করছিলো, তখনই রুমের দরজা ঠেলে আনিসা বেগম রুমে ঢুকলেন। আয়াশ তখনও ইশার পাশে বসা ছিলো। তবে কে আসছে না কে আসছে সেটা ভেবে ইশার গা থেকে হাতটা সরিয়ে এনেছে। এতো রাতে ছোট মা’কে ইশার রুমে ঢুকতে দেখে আয়াশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ছোট মা’কে এই মুহূর্তে কি বলবে বা কি বলা উচিত কিছুই বুঝতে পারছনা। ও কিছু বলবে তার আগেই আনিসা বেগম ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন—–

” ও তার মানে তুই??

” আ ব ব হ্যাঁ ছোট মা। কিন্তু তুমি এখানে??

” আর বলিস না। হঠাৎ পানির পিপাসা পেয়েছিলো; রুমে দেখি পানি নেই। তাই ডাইনিংয়ে পানি খেতে এসেছিলাম। হঠাৎ ইশার রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম লাইট জলছে। আমি মনে করেছিলাম ও ভয় পেয়ে লাইট জালিয়ে রেখেছে। তাই দেখতে আসলাম। এসে দেখছি তুই বসে আছিস।

” হ্যাঁ, আসলে ওর তো আবার ঘুমালে খবর থাকেনা তাই দেখতে আসলাম যে ঠিকঠাক মতো শুয়েছে কিনা। কম্বল গায়ে দিয়েছে কিনা। দেটস ইট। এই দেখোনা, আমি এই পর্যন্ত তিন তিন বার ওকে কম্বলটা গায়ের উপর টেনে দিয়েছি। আর ম্যাডাম দেখো, কম্বল কোথায় আর উনি কোথায় খবরও নেই।

” ওর কথা আর বলিস না। ও সবসময় এমনই। পাশে কেউ থাকলে ওকে ও যে কতো বার লাথি দেয় নিজেও জানেনা। আর সেখানে এটা তো কম্বল মাত্র। বাই দা ওয়ে, তা আজ কি তুই এখানেই থাকবি??

” আমি এখানে থাকলে ভয় করবেনা তোমার??

” ধুর, কি যে বলিস না! তোকে ভয় পাওয়ার কি আছে??

” না মানে তোমার মেয়ের সাথে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলি সেটার ভয় করছেনা??

” আরে ভয় পাবো কেন? তুই কিছু করলে তো ভালোই। আমি তাড়াতাড়ি নানিমা হবো; আর ভাবি দাদিমা। হিহিহিহি।

” ও তার মানে আমার হবু বউয়ের সাথে রোমান্স করায় কোনো বাঁধা নেই, তাই তো?? হুমম??

” ছিহ আয়াশ! আমি তোর সাসুমা হই। একটু তো সম্মান কর। শাশুড়িকে কেউ এসব বলে??

” আমি আমার সাসুমাকে নয়; আমার ছোট মা’কে বলছি। যে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাই বন্ধুকে বলতে দ্বিধা কোথায়??

” তারপরেও। সাসুমা ও তো হই। আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তোর জিনিস তুই পাহারা দে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম। ”

আনিসা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়াশ কিছু সময় উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও ইশার দিকে তাকালো।

” ম্যাডাম কতো সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে দেখো। আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে উনি ঘুমের রাজ্যে মগ্ন। কেমন বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে। এই কিউট ফেসটা দেখলে মন চাই এই মুখটার দিকেই তাকিয়ে থাকি সারাক্ষণ। ছোট মা তো আমার জিনিস আমাকে পাহারা দিতে বলে চলে গিয়েছে। কিন্তু বলা যতো সহজ করা যে ততোটাই কঠিন। ওর সাথে থাকা মানে যে আমার নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করা ছোট মা’কে কি করে বুঝায় সেটা। ম্যাডাম তো দিব্যি পড়ে পড়ে ঘুমাবে। কিন্তু আমার ঘুমের ১২টা বেজে যাবে। কখন যে পাগলিটাকে নিজের করে পাবো আল্লাহয় জানে। এই পিচ্চি! আচ্ছা তোকে এতো পরে পৃথিবীতে আসতে কে বলেছে? হ্যাঁ? আরেকটু আগে আসতে পারলিনা?? তাহলে আমাকে এতো এতো অপেক্ষার প্রহর গুণতে হতোনা। ”

কথাগুলো বলে আয়াশ ইশার গায়ে আবারও কম্বলটা জড়িয়ে দিয়ে ইশার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো। তারপর ইশার রুমের লাইটটা অফ করে আগের মতো ড্রিম লাইটটা জালিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

☘️☘️
পরের দিন,,
আজ শুক্রবার, অফডে হওয়ায় আয়াশ আর ইশা একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠলো। আসলে শুক্রবার আসলে ওরা দুজনেই এমন। ১০টার আগে কারো ঘুমই ভাঙতে চায়না। ঘুম থেকে উঠে দুজনেই যে যার মতো করে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ডাইনিংয়ে বসলো।

” মা! ছোট মা! দেখি নাস্তা দাও। ক্ষুধা লেগেছে খুব।

” আম্মু! বড় আম্মু! আমারও খুব ক্ষুধা লেগেছে। তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও। ”

রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম কিচেনেই ছিলেন। নিজেদের ছেলে মেয়েকে বেলা ১০টায় ঘুম থেকে উঠে এসে ডাইনিংয়ে বসতে দেখে দুজনেই হাসলেন। রুকসানা বেগম হেসে বললেন —-

” তুদের দুজনের অবশেষে ঘুম ভাঙলো তাহলে?? আচ্ছা আয়াশ! ইশা না হয় ছোট তাই শুক্রবারে বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। কিন্তু তুই তো ছোট নশ, এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠার কোনো মানে হয়??

” ভাবি! তুমি শুধু শুধু আয়াশকে বলছো। বলার কথা তো ইশাকে। আর তুমি ইশাকে না বলে বলছো আয়াশকে?? ও বেচারার রোজই সকাল সকাল উঠে অফিসে যেতে হয়। তাই নাহয় শুক্রবার আসলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। কিন্তু ইশা তো আর রোজ সকাল সকাল উঠে অফিসে যায় না। ওর এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠার কি প্রয়োজন?? ”

আনিসা বেগম কিচেন থেকে পরোটা আর ভাজি নিয়ে আসতে আসতে কথাগুলো বললেন। কিন্তু আয়াশ চুপ থাকলেও ইশা চুপ থাকেনি।

” আম্মু! তুমি সবসময় শুধু আমার দোষই দেখো। ভাইয়া যে অফিস যায় রোজ সকালে উঠে সেটা চোখে পড়লো; আর আমার কলেজে যাওয়াটা চোখে পড়লোনা?? আমিও তো রোজ রোজ সকাল সকাল উঠে কলেজে যায়। তাই শুক্রবার একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠি।

” বকবক করতে থাকবি নাকি নাস্তা করবি?? দুইটার একটা কর। তোর বকবকের জন্য আমি খাবার খেতে পারবোনা নয়তো।

” আমার বকবকের সাথে তোর খাওয়ার কি সম্পর্ক?? তুই তোর খাবার খা। আমি যা খুশি তাই করবো।

” তাহলে এক কাজ কর; বাথরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে চিল্লা। আমার সামনে এটলিস্ট ঘ্যানর ঘ্যানর করিস না।

” আয়াশ!

রুকসানা বেগমকে ধমক দিতে দেখে আনিসা বেগম বললেন—- ” ভাবি! তুমি আয়াশকে শাসাচ্ছো কেন?? ও তো ঠিকই বলেছে। ইশা এমন চিল্লাচিল্লি করলে ও শান্তিতে খেতে পারবে?? ”

” আরে ওকে তুমি না চিনলেও আমি হারে হারে চিনি। ইশার বকবক করা তো একটা ইস্যু মাত্র। ওর মেইন উদ্দেশ্য হলো ইশাকে পচানো। তোর ওকে না পচালে পেটের ভাত হজম হয়না না আয়াশ??

” ইশা! তোর জন্য দেখলি তো ভাবি আয়াশকে বকছে। যতো নষ্টের গোড়া তুই। তোকে নিয়ে যে আমি কি করি? শোন! আরেকবার যদি আয়াশ তোর জন্য ভাবির বকা খায়; তাহলে দেখবি তোর খবর আছে। এখন তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে রুমে যা।

” আনিসা! তুমি ওকে…….

” থাক বড় আম্মু! তুমি আম্মুকে কিছু বুঝাতে যেয়োনা। আম্মুকে কিছু বুঝাতে যাওয়াটাই বেকার। ”

তাড়াহুড়া করে খাবার খেতে খেতে কথাটা বললো ইশা। ইশাকে এভাবে তাড়াহুড়ো করে খেতে দেখে আয়াশ ধমকে উঠলো।

” হোয়াট ননসেন্স! ইশা এভাবে খাচ্ছিস কেন?? তোর খাবার কি কেউ নিয়ে যাচ্ছে? নাকি তুই খাবার খেয়ে যুদ্ধ করতে যাবি?? কোনটা??

ইশা নিশ্চুপ…….

” আস্তে খা। গলায় আটকে গেলে পরে আবার আমাকেই দোষ দিবি। বলবি আমার জন্য তুই ছোট আম্মুর বকা খেয়েছিস; আর রাগ করে তাড়াতাড়ি খেতে গিয়ে গলায় আটকে গিয়েছে। আমি বাবা দোষ না করে দোষী হতে পারবোনা।

” আমি থাকলে তো তুই খেতে পারবিনা। তাই আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিচ্ছি। যাতে তুই ভালো করে খেতে পারিস। এমনিতেও………

ইশা নিজের কথাটা শেষও করতে পারলোনা। তখনই দরজা থেকে একটা হাস্ব্যোজ্জল পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে আসলো —-

” হাই এভরি ওয়ান?? হোয়াটস আপ?? ”

চেনা কণ্ঠ পেয়ে সাথে সাথে আয়াশ আর ইশা দরজার দিকে তাকালো। একটা সুদর্শন ছেলে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।

” আরে অয়ন যে, কি রে শা**লা! সকাল সকাল তুই?? ”

ছেলেটি ততক্ষণে ওদের কাছে চলে এসেছে। আয়াশের কথা শুনে ছেলেটি আয়াশের পিঠে চাপড় দিয়ে বললো—

” তোরা এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠেছিস বলে কি এখনও সকাল রয়ে গেছে?? শা**লা! ঘড়ি দেখ একবার। ১১টা বাজে। ইশা! কেমন আছো??

” জি ভাইয়া ভালো। তুমি ভালো আছো??

” ইয়াহ। আই এম ফাইন।

” তা আরেকজন আসবে বলেছিলো উনি কই??

আয়াশ কথাটা বললো। তখনই পাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো।

” আমি এসে গেছিইই। হাউ আর ইউ টুইন ওয়ান??

মিলির মুখে হাউ আর ইউ টু ইন ওয়ান শুনে আয়াশ হেসে বললো—-
” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই টু ইন ওয়ান??

” আই মিন দুই দেহ এক প্রাণ। কেমন আছিস? ইশা কেমন আছো??

” জি আপু ভালো। এ কি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।

” মা! এদিকে এসো। কে এসছে দেখো। তাড়াতাড়ি এসো।

রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম তখনও কিচেনেই ছিলেন। কিন্তু দুই জা নিজেদের মধ্যে কথা বলায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, ড্রয়িং রুমের আওয়াজ গুলো ওদের কানেই গেলোনা। হঠাৎ আয়াশের চিৎকার শুনে তৎক্ষনাৎ আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলেন।

” কোথায় কে এসছে?? ”

বলেই রুকসানা বেগম সামনে তাকাতেই উনার মুখে এক চিলকি হাসি ফুটে উঠলো।

” কে আবার? তোমার প্রাণের প্রিয় ভাইপো আর ভাইজি এসেছে।

” তাই তো দেখছি। কি রে অয়ন মিলি তোরা হঠাৎ?? আমাকে তো একটু বললিও না। কেমন আছিস তোরা??

বলতে বলতে রুকসানা বেগম ওদের দিকে এগিয়ে আসলেন। ফুফিকে দেখতেই অয়ন আর মিলি বসা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি সালাম করলো।

” আরে বস তোরা, সালাম করতে হবেনা। বাড়ির সবাই কেমন আছে?? ”

অয়ন হেসে বললো—-
” ভালো আছে ফুফি। তুমি আমাদের একদম ভুলেই গিয়েছো। একটু তো যাও- ও না আমাদের দেখতে। তাই আমরা চলে আসলাম তোমাকে দেখতে।

” ভালো করেছিস তোরা এসেছিস। তা আমাকে বলিস নি কেন আসবি?? আমি তুদের জন্য গাড়ি পাঠাতাম। ”

ফুফির কথায় মিলি অভিমানী গলায় বললো —
” ফুফি! তোমাকে না বললেও তোমার ছেলেকে কিন্তু আমরা ঠিকই বলেছি। ভেবেছি ও আমাদের নিতে আসবে। কিন্তু এসে দেখি মহাশয় ব্রেকফাস্ট করছেন। সকাল ১১টায় উঠে নাকি ব্রেকফাস্ট করছে,, ভাবা যায়??

” আরে ওর কথা আর বলিস না। তোরা বলার জন্য আর মানুষ পেলি না?? আমাকে না বলে তোরা ওকে বললি কেন??

” মা! আমি কি জানতাম নাকি তোমার ভাইপো ভাইজি সকাল সকাল চলে আসবে?? আমি তো ভেবেছিলাম দুপুরের দিকে আসবে; আর আমি নাস্তা করে ওদের আনতে যাবো। কিন্তু তার আগেই তো ওরা…….এনি ওয়ে, অয়ন! মিলি! মনে হয় তোরা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার সময় পাসনি। আয় বসে নাস্তা কর আমাদের সাথে।”

আয়াশের টেট দেওয়া কথা শুনে অয়ন সাথে সাথে তেতে উঠলো।
” শালা! আমরা তোর মতো সকাল ১০টায় ঘুম থেকে উঠিনি। তাই নাস্তা না করে আসার প্রশ্নই উঠেনা।

” আরে আমি বলছিলাম কি…….

” নে, অমনিই আসতে না আসতে শুরু হয়ে গেলো তুদের দুষ্টুমি না?? তোরা বস, আমি তুদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।

” ভাবি! তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। আমি নিয়ে এসেছি।

আনিসা বেগমকে নাস্তা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে অয়ন হেসে বললো—-
” আরে আন্টি! আপনি আবার কষ্ট করে এসব আনতে গেলেন কেন??

মিলি হেসে বললো—-
” আন্টি বুঝি এতক্ষণ এসব আনার জন্য আসতে পারেনি ?? ”

” আরে সেটা নয়। জাস্ট ভাবলাম তোমরা এতো দূর থেকে এসেছো, তাই আর কি। এনি ওয়ে, ভালো আছো তোমরা?? ”

চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here