হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ২

0
220

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ২

__________
” তার মানে আমাকে সুন্দর লাগছে তাই না? ”

ইশার কথায় আয়াশ ঘুর আপত্তি জানিয়ে বললো— ” আমি কখন বললাম সেটা?? আমি তো বলেছি তোকে…….

আয়াশকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশা বললো—-
” থাক ভাইয়া, তোকে আর কষ্ট করে বলতে হবেনা। আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগছে অনেক। তাই তো তুই সুন্দর লাগছেনা বললি। কারণ তুই তখনই আমাকে সুন্দর লাগছেনা বলিস যখন আমাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। থ্যাংকস বলে দেওয়ার জন্য। ”

” কইছে তোকে। আস্ত একটা পেত্নীর মতো লাগছে। ওকে নাকি আবার সুন্দর লাগছে। হুহ্।”

ইশা রেগে আরও কিছু বলতে যাবে তখনই মিনু রহমান রুমে ঢুকলেন। ফুফিকে দেখে ইশা আর কিছু বললোনা। মিনু রহমান ট্রাই টা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে মুচকি হেসে ইশার দিকে তাকালেন। তারপর হেসে বললেন—

” বাহ! তোকে তো বেশ সুন্দর লাগছে রে ইশা। মাশা আল্লাহ কারো নজর না লাগে যেন। ”

বলেই মিনু রহমান হেসে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এটা দেখে আয়াশ বাঁকা হাসলো। কিন্তু হাসিটা ভিতরে চেপে রেখে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো—-

” আচ্ছা ফুফি! তোমার কোন দিক থেকে ওকে সুন্দর লাগছে বলো তো। না মানে আমার তো ওকে কোনো দিক থেকে সুন্দর লাগছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই বলছিলাম আর কি। মনে হয় তোমার চশমার পাওয়ারটা কমে গিয়েছে। ফুফাকে বলে নতুন একটা চশমা আনিয়ে নিও। ”

সাথে সাথে মিনু রহমান আয়াশের কাছে গিয়ে আয়াশের কান টেনে ধরলেন।

” আহ ফুফি কি করছো? আমার লাগছে তো। কান ধরেছো কেন??

” তুই মিথ্যা বলে আমার মেয়েটাকে রাগাচ্ছিস কেন?? তাই কান টেনে ধরেছি। ওকে এতো সুন্দর লাগছে। তারপরেও তুই বলছিস ওকে সুন্দর লাগছে না?? ”

ফুফির সাপোর্ট পেয়ে ইশাও খুশিতে গদগদ হয়ে বললো—–
” একদম ভালো হয়েছে। ফুফি! তুমি একদম ছাড়বেনা ওর কান। এভাবেই ধরে রাখো। ফাউল ফোলা! আমাকে নাকি সুন্দর লাগছে না। হুহ।

” আহ ফুফি! এবার তো ছাড়ো। আচ্ছা আমি মিথ্যার কি বলেছি?? আমি তো যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। আচ্ছা এবার ছাড়ো। আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। খাবার এনে না খাইয়ে রাখবে নাকিইইই??

” ফুফি! আজকের মতো ছেড়ে দাও। বাচ্চা ছেলে এতো করে বলছে যখন ছেড়ে দাও। নয়তো পরে দেখবে নাক টেনে টেনে কাঁদছে। ছেড়ে দাও। ”

কিছুটা ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো ইশা। মিনু রহমান হেসে বললেন—-
” আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের মতো ছেড়ে দিচ্ছি। আর যেন ওর সাথে এমন ফাজলামি না করিস। মনে থাকবে??

” হ্যাঁ হ্যাঁ। খুব মনে থাকবে। একবার বাড়িতে যেতে দাও। তারপর মজা দেখাবো। ”

আয়াশের কথা শুনে ইশা ভেঙচি কাটলো।
” হুহ। দেখা যাবে। ”

” আচ্ছা অনেক হয়েছে। এবার তোরা খাবার খেয়ে নে। নয়তো দেখা যাবে খাবার না খেয়েই থাকতে হচ্ছে সারারাত। ”

এই বলে মিনু রহমান দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে রুম ত্যাগ করলেন। আয়াশও এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আসার পর থেকে এখনও ফ্রেশ হওয়া হয়নি। তাই এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আয়াশ সাথে আনা লাগেজটার থেকে একটা পাঞ্জাবি আর একটা পায়জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়াশ উঠে চলে যেতেই ইশা এবার ধপাস করে খাটের উপর বসে পড়লো। তারপর নখ কামড়াতে কামড়াতে কিছু একটা ভেবে রহস্যময়ী হাসি দিলো। কোনো একটা দুষ্টু বুদ্ধি যে মনে মনে আঁটছে; সেটা ইশার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ইশা কয়েক সেকেন্ড ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলতে লাগলো।

” চান্দু! আজ তুমি সবার সামনে আমাকে অনেক অপমান করেছো। নিহাদ এটা বিয়ে বাড়ি বলে চুপ করে আছি। নয়তো তোমার ইট তোমার দিকেই ছুড়ে মারতাম পাটকেল হিসেবে। আগে বাড়িতে যায়। তারপর এর সুদ তুলবো আমি। যদি আজকের অপমানের সুদ না তুলি তো আমার নামও ইশা না। হুমমম। ”

কথাগুলো মনে মনে ভাবছে আর মুখে টেডি স্মাইল দিয়ে যাচ্ছে ইশা। আয়াশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইশাকে এভাবে বসে বসে কিছু একটা ভাবতে দেখে আর মুখে টেডি স্মাইল দেখে ওর বুঝতে দেরি হলোনা ইশা কোনো একটা দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছে। আয়াশ হাসলো।

” পাগলিটা কখনোই বড় হবেনা। আমি যে ওর ভালোর জন্যই ওকে শাড়ী পড়াতে শাসন করেছি সেটা বুঝলো না। উল্টো এটা মনে রেখে দিলো যে, আমি ওকে সবার সামনে অপমান করেছি কেন?? আর এখন হয়তো এটাই ভাবছে যে, বাড়িতে গিয়ে আমার থেকে কিভাবে সুদ নেওয়া যায়। নিজের ভালোটা কখনোই বুঝবেনা। আর আমার ইমোশনসটাও কখনো বুঝবেনা। আচ্ছা ও কি কখনোই বুঝবে না আমার ফিলিংসটা?? ”

কথাগুলো মনে মনে ভেবে আয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইশার দিকে এগিয়ে গেলো। ইশা ভাবনায় এতোটাই মগ্ন যে, আয়াশ যে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে; সেটা সে টেরই পেলোনা।

” এই যে ম্যাডাম! ”

আয়াশের ডাকে ইশার ভাবনার সুতো ছিড়লো। চমকে তাকালো আয়াশের দিকে। আয়াশ একদম ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

” এমন ডেবিল স্মাইল দিয়ে কি এতো ভাবছিলি শুনি?? আচ্ছা বাই এনি চান্স, আমাকে মেরে টেরে ফেলার প্ল্যান করছিস না তো?? ”

আয়াশের কথা শুনে ইশা অবাক হয়ে বড় একটা ঢুক গিললো। আয়াশ কিভাবে বুঝলো যে ও আয়াশকে নিয়েই ভাবছে?? যদিও মেরে ফেলার কথা ভাবছেনা। কিন্তু ওর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা তো ভাবছে।

” আচ্ছা ভাইয়া! তুই আমাকে একটা কথা বল তো। তুই কি ব্যবসার পাশাপাশি মনোবিজ্ঞান নিয়েও পড়েছিস??

” কেন বল তো???

” না, আমি যখনই কিছু একটা নিয়ে ভাবি তুই দেখছি সবসময় একদম ঠিকঠিক ভাবে বুঝে যাস। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। ”

কথাটা বলেই ইশা সাথে সাথে জিহবায় কামড় দিলো। এই রে, এটা কি বলে ফেলেছে সে?? কথার ফাঁকে যে কি বলে ফেলেছে নিজেও জানে না সেটা।

” তার মানে তুই আমাকে মেরে ফেলার কথায় ভাবছিলি??

” এ মা, না না। তা ভাববো কেন?? তুই তো আমার একমাত্র ভাইয়া। তোকে কি আমি মেরে ফেলার কথা ভাবতে পারি বল।

” কি বললি??

” কই? কি বলেছি??

” একটু আগে ওটা কি যেন বললি? আমি ভালো করে শুনতে পায়নি। আবার বল। আমি তোর কি হই??

” না মানে আমার একমাত্র চাচাতো ভাইয়া।

” তখন চাচাতো শব্দটা কি বিদেশে ছিলো যে মুখ দিয়ে আসতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হচ্ছে?? আর কখনো যদি ভাইয়া বলেছিস তো দেখবি কি করি।

” আরে এতো রাগ করছিস কেন?? ভাইয়া বলা আর চাচাতো ভাই বলা তো সেম কথা।

” যেটা বুঝিস না সেটা বলতে আসিস না। ভাইয়া বলা আর চাচাতো ভাই বলার মধ্যে যে কতোটা পার্থক্য সেটা বুঝার বয়স এখনও তোর হয়নি। তাই এমন বলছিস। বুঝলে কখনোই বলতিসনা। আচ্ছা বাদ দে এইসব। আয় খেয়ে নিবি। ”

ইশা আয়াশের কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝলোনা। তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসলো। আয়াশ হাতের ঠাওয়েলটা স্ট্যান্ডে রেখে সেন্টার টেবিলের উপর থেকে খাবারের ট্রাইটা হাতে নিয়ে ইশার মুখোমুখি খাটে বসলো। ইশা যেই না জামার হাতা গুটিয়ে হাত ধুতে যাবে; অমনিই আয়াশ ধমকে উঠলো।

” একদম হাত বাড়াবি না।

” মানে কি?? তাহলে কি আমি খাবো না?? আমি কি না খেয়ে থাকবো নাকি??

” সবসময় বেশি বুঝিস কেন?? আমি একবারও বলেছি সেটা??

” সেটা বলিসনি তো কি বলেছিস শুনি?? তোর কথা দ্বারা তো এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, আমি যেন না খেয়ে থাকি। ডাইরেক্টলি তো মানা করতে পারছিস না। তাই ইন্ডাইরেক্টলি মানা করছিস।

” আরেকটা বাজে কথা বললে একটা থাপ্পড় খাবি। বেশি বকবক না করে হা কর। ”

বলেই আয়াশ একটা গ্রাস বানিয়ে ইশার মুখের সামনে তুলে ধরলো। ইশা অবাক হলো। তবে আয়াশ ওকে খাইয়ে দিবে সেটা ভেবে নয়। কারণ আয়াশ প্রায়ই ওকে এমন ভাবে খাইয়ে দেয়। ইশা যেই কারণে অবাক হয়েছে সেটা হলো আয়াশ যে ওকে এখন এখানে বিয়েতে এসেও খাইয়ে দিবে; সেটা ইশা কল্পনাও করেনি।

” ভাইয়া! শুধু শুধু তুই কেন কষ্ট করছিস?? আমি নিজেই তো খেয়ে নিতে পারবো। তুই রাখ। আমিই খেয়ে নিচ্ছি।

” আরেকটা কথা বললে কিন্তু আজ সারারাত না খাইয়ে রেখে দিবো। তখন বললেও আর খাবার পাবিনা। তাড়াতাড়ি হা কর বলছি। ”

ইশা জানে, আয়াশকে কিছু বললেও লাভ হবেনা। কারণ এখন যদি আয়াশকে আর একটা কথা বলে তাহলে সত্যি সত্যি হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে। আর তাছাড়া এমন তো নয় যে, আয়াশ আজই প্রথম ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ইশা সংকোচ বোধের কারণে খেতে পারবেনা। যেহেতু আগেও অনেকবার সে আয়াশের হাতে খেয়েছে; তাই এখন আর কোনো রকম আপত্তি করলোনা। বিনা বাক্যে আয়াশের হাতের খাবার টুকু মুখে পুরে নিলো। ইশাকে খাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আয়াশ নিজেও খেয়ে নিলো। আয়াশ আর ইশার খাওয়া সবে শেষ হয়েছে। তখনই হুড়মুড়িয়ে সবাই রুমে প্রবেশ করলো। সবাই বলতে আয়াশের বাবা-মা, আর ইশার বাবা-মাা এসেছে। ইশা বাবা-মা, বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে দেখে খুশি হয়ে সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলো।

” ইয়েএএএএ, তোমরা সবাই এসে গেছো?? ওয়াও, কতো মজা হবে এখন?? কি মজা কি মজা। ”

এই বলে ইশা দৌড়ে গিয়ে রুকসানা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আহ্লাদি গলায় বললো—” বড় আম্মু! তোমরা এসেছো?? ”

রুকসানা বেগম ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন—-” হ্যাঁ রে মা এসেছি। ”

ইশা এবার রুকসানা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো। অবাক কণ্ঠে বললো—-

” কিন্তু তোমরা তো বলেছিলে তোমরা আসবেনা। তাহলে এখন আসলে কেন??

” হ্যাঁ, আসবোনা বলেছিলাম। তবে সেটা তো আয়াশ আসতে পারবেনা বলেছিলো বলে। কিন্তু মহোদয় যে আগে আগে এসে আমাদেরকেই ইনভাইট করবে সেটা কি আমরা জানতাম নাকি রে??

” আরে ভাবি! আয়াশকে বকোনা তো। নিশ্চয় ইশা হয়তো এমন কিছু করেছে যা ওর কানে পৌঁছেছে। তাই তো আসবেনা বলেও চলে আসলো। নয়তো আয়াশ কি দুই কথা বলার মতো ছেলে নাকি?? ”

আনিসা বেগমের কথা শুনে রুকসানা বেগম বললেন— ” হ্যাঁ, তুমি তো আমার মেয়ের দোষটাই দেখবে। আয়াশ কি ধোয়ার তুলসী পাতা?? ও-ও তো ভুল করে। তখন কি ইশা কিছু বলে?? তাহলে ও কেন বলবে?? আর বিয়ে বাড়িতে আসলে একটু আধটু ভুল সবারই হয়ে থাকে। ”

রুকসানা বেগমের সাপোর্ট পেয়ে সাথে সাথে ইশা আহ্লাদি গলায় বললো —” একদম ঠিক বলেছো বড় আম্মু। আমি কি ভাইয়া ভুল করলে কিছু বলতে যায়?? তাহলে ও কেন আমাকে বলতে আসে?? আর ও কোন রাজ্যের রাজা যে আমাকে ওর কথা সবসময় মানতে হবে?? ”

” তুই একদম চুপ থাক। ভাবি তোকে লাই দিয়ে দিয়ে দিন দিন মাথায় তুলে ফেলছে। ”

সাথে সাথে রুকসানা বেগম জা’কে হালকা আঁচে ধমক দিলেন—- ” আনিসা! তুমি একদম ধমকাবে না আমার মেয়েকে। ওর কোনো দোষ নেই। সব দোষ আয়াশেরই, আমি জানি। ”

এতক্ষণ মহিলা পার্টিদের কথোপকথন চললেও এইবার রায়হান মাহমুদও মুখ খুললেন। তাও আবার ইশার পক্ষ নিয়ে।

” একদম ঠিক। দোষ ইশার নয়; আয়াশেরই। আমার ইশা মা কি কোনো ভুল করতে পারে??”

বড় ভাইয়ের কথা শুনে এবার হাসান মাহমুদ আর চুপ থাকলেন না। আয়াশের পক্ষ হয়ে উনিও কয়েক লাইন যুক্তি ছুড়ে দিলেন।

” ভাইজান! তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আয়াশও কোনো ভুল করতে পারেনা। ইনফ্যাক্ট আমার ছেলে বলে কথা। ”

এসব তর্ক বির্তক করতে করতে এরইমধ্যে সবাই এসে খাটে বসেছে। তবে আয়াশ ছাড়া। আয়াশ খাটে না বসে সোফায় গিয়ে বসলো। ইশার না খাটে বসতে হয়েছে; আর না সোফায় বসতে হয়েছে। ইশাকে রুকসানা বেগম ছোট বাচ্চাদের মতো করে কুলে নিয়ে বসেছেন। আর রায়হান মাহমুদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এরপর দুই ভাই আর দুই জা মিলে আরও কিছু সময় এমন দুষ্টু মিষ্টি তর্কাতর্কি চালিয়ে গেলো। আয়াশ কিছু বলছেনা। শুধু ওদের কান্ড দেখে যাচ্ছে। আর তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে ওর কখনো নিজের পক্ষে কিছু বলার প্রয়োজনই পড়েনা। কারণ ওর পক্ষ হয়ে বলার জন্য সবসময় ছোট মা আর চাচ্চু তো আছেই। আসলে ওদের ফ্যামিলিতে এমনই। আয়াশের বাবা-মা ইশার পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর ইশার বাবা-মা আয়াশের পক্ষ হয়ে কথা বলবে। সবসময় আয়াশ আর ইশা, ওদের দুজনকে নিয়েই যেন চার জনের মধ্যে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি লেগেই থাকে। আয়াশ যেমন রায়হান মাহমুদ আর রুকসানা বেগমের একমাত্র ছেলে। ঠিক তেমনই ইশাও হাসান মাহমুদ আর আনিসা বেগমের একমাত্র মেয়ে। দুই ভাই আর দুই জা’য়ের মধ্যে এতোটাই মিলমিশ যে, কখনো সামান্য পরিমাণের মনমালিন্য পর্যন্ত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যেখানে নিজের ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাথে এক সাথে এক পরিবারে থাকতে পারছেনা। সেখানে রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদ পুরো ফ্যামিলি নিয়ে একসাথে সপরিবারে থাকছে। যাকে বলে যৌথ পরিবার। হ্যাঁ, আয়াশ আর ইশা আপন চাচাতো ভাই বোন।

” বড় আম্মু! জানো আজ তোমার ছেলে কি করেছে?? ”

ইশার কথা শুনে রুকসানা বেগম কিছু বলার আগেই রায়হান মাহমুদ বলে উঠলেন—-

” কি করেছে মা?? তোকে কি ঐ বাঁদরটা মেরেছে?? মারলে আমাকে বল। আমি এখনই ওর একটা ব্যবস্থা করবো।

” হ্যাঁ মা বল কি করেছে আয়াশ। আমার অনুপস্থিতিতে আমার মেয়েকে মারা?? ”

বড় আব্বু আর বড় আম্মুর পক্ষ পেয়ে ইশা আদুরে গলায় বললো —
” জানো…? ও না আমাকে এত্তগুলা মেহমানের সামনে ইনসাল্ট করেছে।

” কিহ…? আমার মেয়েকে অপমান করেছে আয়াশ?? ওর এতো বড় সাহস?? ”

হালকা রাগ করার অভিনয় করে কথাটা বললেন রায়হান মাহমুদ। তারপর আয়াশের দিকে তাকিয়ে ধমক দেওয়ার ভান করে বললেন—-

” আয়াশ! তুই ইশাকে অপমান করেছিস কেন?? আমরা নেই বলে তুই সুযোগ পেয়ে আমার মেয়েকে অপমান করেছিস?? তোকে দেখবি, তোকে আমি তেলাপোকা কোর্টে দেবো। আরও শাস্তি আছে; সেগুলো বিয়ে থেকে গিয়ে দেবো। ”

আয়াশকে শাস্তি দেওয়ার কথা শুনে ইশা তো সেই খুশি। ওর যেন খুশিটা ধরছেই না। খুশি হয়ে বড় আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি গলায় বললো—

” বড় আব্বু! তুমি সত্যি বলছো? ভাইয়াকে বাড়িতে গিয়ে শাস্তি দিবে?? ”

রায়হান মাহমুদ ইশার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বললেন—

” হ্যাঁ মা! আয়াশকে বাড়িতে গিয়ে বড় শাস্তি দেবো।

” ইয়েএএএএএ,, ভাইয়াকে শাস্তি দিবে। বাড়িতে গিয়ে শাস্তি দিবে। আমার লক্ষী বড় আব্বু।

” ভাইজান! তুমি কিন্তু এটা ঠিক করছো না। ইশার কথায় তুমিও সাই দিচ্ছো??

হাসান মাহমুদের কথা শুনে ইশা মন খারাপ করে বললো—-
” আব্বু! তুমি আমায় একটুও ভালোবাসোনা। তুমি সবসময় ভাইয়ার হয়ে কথা বলো। বড় আব্বু আর বড় আম্মুই শুধু আমার পক্ষে কথা বলে। তুমিও ভালো না আম্মুও ভালো না। তোমরা পঁচা। শুধু বড় আব্বু আর বড় আম্মুই ভালো। ” (গাল ফুলিয়ে)

আয়াশ এতক্ষণ চুপ করে ইশার কাজকর্ম দেখে যাচ্ছিলো। এতক্ষণে সে মুখ খুললো।

” এই যে ড্রামা কুইন! আপনার ড্রামা কি শেষ হয়েছে?? নাকি আরও বাকি আছে হ্যাঁ??

” হুহ্।

” এএএএহ,, আসছে মুখ বাঁকাতে। এতো সুন্দর হসনি যে আমাকে মুখ বাঁকাবি।

” তোর চোখ বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে। তাই এমন বলছিস। আমি সুন্দর না তো কে সুন্দর?? হুমমমম??

” রাখ তো তোর বাজে কথা। বাবা! মা! চাচ্চু! ছোট মা! চলো নিচে যায়। হলুদের অনুষ্ঠান মনে হয় শুরু হওয়ার সময় হয়েছে। আচ্ছা তোমরা খাবার খেয়েছো তো???

” হ্যাঁ রে বাবা, আমরা খেয়েছি। আসার সাথে সাথেই তো মিনু আপা খেতে বসিয়ে দিয়েছে আমাদের। তাই খেয়ে তারপরই আমরা উপরে আসলাম। (আনিসা বেগম)

” ওকে, চলো তাহলে। মিস ড্রামা কুইন! আপনার ড্রামা শেষ হয়ে থাকলে আপনিও চলুন।

” বড় আব্বু! দেখো না, ভাইয়া আমাকে কি বলছে। আমি নাকি নাটক করছি। আচ্ছা তোমরাই বলো। আমি কি নাটক করছি?? ”

রায়হান মাহমুদ রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললেন—- ” আয়াশ তুই কিন্তু মার খাবি। সবসময় ইশার পিছনে লাগিস কেন বল তো?? ”

সাথে সাথে হাসান মাহমুদ আয়াশের পক্ষে বলে উঠলেন— ” ইশা! তুই সবসময় সবকিছুতে নালিশ কেন করিস বল তো?? আয়াশ কি এমন বলেছে হ্যাঁ?? ও তো জাস্ট মজা করছিলো। তুইও না…??

” হাসান! তুই আমার সামনে ইশা মা’কে বকছিস?? তোর তো সাহস কম না। আয়াশের সাথে সাথে তোরও শাস্তি হবে, দেখিস। ”

হাসান মাহমুদ জানে ভাই তার কেন এমন বলছে। ইশাকে খুশি করতে যে এমন বলছে সেটা কারো অজানা নয়। তাই উনি অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলেন। কারণ ইশাকে দেখিয়ে হাসলে ইশা আরও চটে যাবে। সবাই কথা বলতে বলতে হলুদের অনুষ্ঠানে চলে আসলো। এতো সময় ধরে আয়াশ আর ইশার মধ্যে হার জিত লড়াই হলেও; এখন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে যেন একই সুতোয় বাঁধা। আয়াশ ইশার হাত ধরে রেখেছে। যেখানেই যাচ্ছে ইশার হাত ধরে ওকে সহ সাথে নিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই কোথাও হারিয়ে যাবে। আসলে হলুদের অনুষ্ঠানে এতো বেশি ছেলে ঘুরঘুর করছে যে, ইশাকে এখানে একা ছাড়া আয়াশের সেফ মনে হচ্ছে না। তাই ওর হাত ধরে রেখেছে। ইশা প্রথমে ছাড়াতে চাইলেও; পরে কিছু একটা ভেবে আর কোনো রকম ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলোনা। হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে প্রায় ১টা নাগাদ।

চলবে……….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here