হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৫
_______
” ভাইয়া! আমার না এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। যা করার সকালে করবো। এখন কোনো কাজ টাজ করতে পারবোনা।
ইশার ঘুম জড়ানো কণ্ঠ শুনে আয়াশ ধমকে উঠলো— ” ড্রামা বন্ধ করে উঠবি?? নাকি মার খাবি?? কোনটা?? উঠ তাড়াতাড়ি। মিলি যেই না বললো ঘুমিয়ে পড়েছে। অমনিই ঘুমের ভান ধরলি, না??? তোরা ঘুমিয়ে পড়লে তুদের রুম থেকে যে কথার আওয়াজ শোনা গেলো সেটা কি তুদের ভূতে বলেছিলো??
” আরে ভাইয়া! তুই ভুল শুনেছিস বোধহয়। আমরা তো…..
” এখনও না উঠে কথা বলছিস?? উঠ তাড়াতাড়ি। আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুণবো। এর মধ্যে যদি না উঠিস তাহলে কিন্তু খবর আছে। এক………….দুই………তি
আয়াশ তিন বলার আগেই ইশা শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। তারপর আয়াশকে কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো। ইশার কান্ড দেখে মিলি হাসলো। ইশাটার বাচ্চামো স্বভাব গুলো আর গেলোনা। ইশাকে যেতে দেখে আয়াশও বাঁকা হেসে ইশার পিছন পিছন হাঁটা ধরলো।
” আনিসা! এখন শীতের দিন। তাই রাতটা সচরাচর একটু বড়ই হয়। এতো বড় একটা রাত মেয়েটা না খেয়ে কিভাবে থাকবে?? যতোই ওর সামনে রাগ দেখায়। কিন্তু ও না খেয়ে আছে সেটা তো খারাপ লাগছে, তাই না?? আমার মনে হয় তোমার একবার খাবার নিয়ে ওর রুমে যাওয়া উচিত ছিলো। ”
হাসান মাহমুদ আর আনিসা বেগম দুজনেই শুয়ে ছিলেন। তখনই কথাটা বললেন হাসান মাহমুদ। আনিসা বেগম স্বামীর কথায় এক গাল হেসে বললেন—-
” তোমার কি মনে হয়?? আয়াশ থাকতে তোমার মেয়েকে না খেয়ে থাকতে দিবে??
” মানে??
” আয়াশ ওর জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছে রুমে। তুমি টেনশন না করে ঘুমাও। আয়াশ যেহেতু খাবার নিয়ে গিয়েছে; আমি শিউর আয়াশ ওকে না খেয়ে ঘুমাতে দিবেনা। ”
☘️
” নে এবার তোর রুমে এসেছি। কি বলবি বল। ”
আয়াশের রুমে ঢুকে কথাটা বললো ইশা। আয়াশ ওর পিছনেই ছিলো। আয়াশ দরজা বন্ধ করতে করতে বললো —-
” কিছু বলবো না, করবো। ”
বলেই বাঁকা হাসলো আয়াশ। আয়াশের কথা শুনে ইশা চমকে পিছনে তাকালো। আমতা আমতা গলায় বললো —-
” আ ব ব ক ক কিছু করবি মানে কি?? আর তুই দরজা ব ব বন্ধ করছিস কেন??
” কালকের কামড় গুলো কি ভুলে গিয়েছিস??
” আ ব সরি। আগে দরজাটা খুলো প্লিজ। আর তুমি আমার দিকে এভাবে এগিয়ে আসছো কেন?? আমি কিন্তু চিৎকার দিবো বলে দিচ্ছি। ”
আয়াশ ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ইশার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো—-
” তা চিৎকার করে সবাইকে কি বলবি শুনি??
” ব ব ব বলবো ত ত তু…..
” হ্যাঁ আমি…… আমি কি বলবি??
” প্লিজ আমার দিকে এগিয়ে এসোনা। আ আ আ আমার……
” তু তু তোর কি হয়েছে শুনি??
ইশা গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলো। আর আয়াশ ওর দিকেই এগিয়ে আসছিলো। হঠাৎ আয়াশের কণ্ঠটা দূর থেকে এসেছে বুঝতে পেরে ইশা আড় চোখে তাকালো সেদিকে। তাকিয়ে দেখলো আয়াশ সেন্টার টেবিলের উপর থেকে একটা ভাতের প্লেট হাতে নিচ্ছে। আয়াশ বিছানায় বসে ভাতের প্লেটটি সামনে রেখে বললো—-
” তোর কি মনে হয়ে ছিলো?? আমি তোর সাথে কিছু করে ফেলবো?? হাহাহাহা। আচ্ছা তুই-ই বল,, তোর মতো মেয়ের সাথে কিছু করা যায়??
” মানে??
” এতো মানে মানে করিস না। তোর ছোট মাথায় এসব ঢুকবেনা। তাই ছোট্ট মাথাটিতে চাপ না দিয়ে এসে বস।
” আমি খাবোনা।
” আমি তোর পারমিশন চায়নি। বসতে বলেছি। বস তাড়াতাড়ি।
” না বসলে কি করবি??
” না বসলে কি করবো সেটা পরের কথা। আগে তুই যে ননস্টপ তুই তুই করে যাচ্ছিস সেটার জন্য কিন্তু কালকের মতো আবারও কামড় দিবো। তবে এবার আর কামড় গুলো ঘাড়ে পড়বেনা।
” কোথায় পড়বে তাহলে??
” গালে। যাতে সবাই দেখতে পাই। (হেসে)
” দেখলে তো ভালোই। আমি সবাইকে বলবো যে তুই আমার গালে কামড় দিয়েছিস। তখন সবাই তোকে রাক্ষস বলবে।
” তোর মতো তো আর সবাই বোকা না যে রাক্ষস বলবে। রাক্ষস নয়; বরং অন্য কিছু বলবে। ”
বোকা ইশা আয়াশের কথার মানে বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করলো —- ” অন্য কিছু কি বলবে?? ”
” বলবে আমি তোকে লাভ বাইট দিয়েছি। আর লাভ বাইট মানে নিশ্চয় জানিস। তখন কি তোর শুনতে ভালো লাগবে??
” তুমি কিন্তু অনেক খারাপ।
” তাই বলছি। তাড়াতাড়ি এসে বস। নয়তো জানিসই তো খারাপ ছেলেরা কি কি করতে পারে।
” তুমি আসলেই খারাপ। একটু সুন্দর করে বললে কি হয়?? না, তা না করে সবসময় ধমকাবে। একটু সুন্দর করে বললে তো পারো। ইশা! আমি তোর জন্য খাবার এনেছি। প্লিজ খেয়ে নে। কিন্তু তুমি সেটা কেন বলবে?? তুমি তো শুধু শিখেছো ধমকের উপর ধমক দেওয়া। বড় আম্মু বোধহয় জন্মের সময় তোমাকে মধু দিতে ভুলে গিয়েছিলো। তাই সবসময় এমন তিতা তিতা কথা বের হয়।
” তোর কি বলা হয়েছে?? বলা শেষ হলে এবার এসে বসতে পারিস। আমার সকালে আবার অফিসে যেতে হবে৷ তোর বকবক শোনার জন্য আমার টাইম নেই। আয়…….
ইশা জানে, আয়াশ ওকে না খাইয়ে ছাড়বেনা। যত যাই বলুক, জিতটা যে আয়াশের হবে সেটা ওর অজানা নয়।৷ তাই অবশেষে বাধ্য হয়ে আয়াশের সামনে গিয়ে বসে পড়লো ইশা।
” নে হা কর। ”
ইশার মুখের সামনে ভাতের গ্রাস ধরে কথাটা বললো আয়াশ। ইশাও বিনা বাক্যে হা করে আয়াশের হাত থেকে ভাত টুকু মুখে পুরে নিলো। ইশা খাচ্ছে আর আয়াশ কিছু সময় পরপর গ্রাস বানিয়ে ইশার মুখের সামনে ধরছে। খাওয়ার মাঝেই হঠাৎ আয়াশ বললো—– ” না খেয়ে চলে আসলি কেন?? ”
ইশা খেতে খেতেই জবাব দিলো— “খাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা তাই। ”
” ইচ্ছা ছিলো না?? নাকি রাগ করে??
” জানোই যখন তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন??
” না তবুও জিজ্ঞেস করছি আর কি। তা রাগটা কার উপর?? মায়ের উপর নাকি মিলির উপর?? হুমম??
” তুমি কি আমাকে কখনো বড় আম্মুর সাথে রাগ করতে দেখেছো?? আর রইলো মিলি আপু?? ও আমাদের গেস্ট। আমি ওর সাথে রাগ করবো কেন??
” মায়ের উপরও রাগ করিসনি; আবার মিলির উপরও রাগ করিসনি বলছিস। তাহলে রাগটা করেছিস কার উপর?? ছোট মা’র উপর??
” নাহ।
” তাহলে??
ইশা নিশ্চুপ…….
” বাই এনি চান্স রাগটা কি আমার উপর??
” জানোই যখন তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন??
” না শিউর হচ্ছিলাম আর কি। আচ্ছা সবসময় আমার উপরেই রাগ করিস কেন বল তো। না মানে মা তোকে খাইয়ে দেয়নি। আর মায়ের হাতে খাচ্ছিলো মিলি। তাহলে এখানে আমার দোষটা কোথায়?? আমার উপর রাগ করেছিস কেন??
” রাগ করাটা স্বাভাবিক নয় কি??
” হ্যাঁ রাগ করাটা স্বাভাবিক। আমি কি একবারও বলেছি রাগ করাটা অস্বাভাবিক?? আমি বলতে চাইছি রাগটা করার প্রপার কারণটা কি??
” তুমি এখনও কারণ জানতে চাইছো?? আমি যখন বড় আম্মুকে একটু অভিমান করে বলেছিলাম আমার কথা ভুলে গিয়েছে; তখন তুমি আনাকে কতো গুলো কথা শোনালে। বড় আম্মু নাকি আমাকে প্রায়ই খাইয়ে দেয়। আর আমি নাকি মিলি আপুকে খাইয়ে দেওয়াটা সহ্য করতে পারছিনা। আরও কতো কি। তাই আমার রাগ হয়েছে। সবার সামনে এভাবে রাগ দেখিয়ে কথা গুলো বলা কি খুব জরুরি ছিলো??
” আচ্ছা তুই সারাবছর এমন বোকাই থাকবি??
” মানে??
” মানে হলো যদি আমি তখন তোর সাথে ঐভাবে রাগ না দেখাতাম তাহলে মিলি কতোটা কষ্ট পেতো জানিস?? ও আমাদের গেস্ট ওটা বুঝিস, আর এটা বুঝিস না??
” তাই বলে সবার সামনে বকবে??
” ছোট মা ও তো বকেছে। কই? ছোট মা’র সাথে তো রাগ করিসনি। তাহলে সবসময় সব রাগ আমার উপরেই কেন?? আমি খেয়াল করেছি, বাসার সবাই তোকে বকলেও তুই ওদের কারো সাথে রাগ না করে রাগ করিস আমার উপর। কেন??
” সব বুঝো। আর এটা বুঝোনা কেন তোমার উপর রাগ করি??
” না বললে আমি কি করে বুঝবো যে কেন রাগ করিস??
” থাক, তোমার আর বুঝতে হবেনা।
আয়াশ মনে মনে হাসলো। তবে মুখে প্রকাশ করলোনা সেটা। মুখে গাম্ভীর্য ভাব রেখেই বললো—- ” ওকে। তুই বলতে না চাইলে বলিস না। বাই দা ওয়ে, তোর পিছনে আমার মোবাইল রাখা আছে। ছোট মা’কে কল দিয়ে বল যে তুই ভাত খাচ্ছিস। ”
” কেন?? আম্মু কি জানে তুমি আমার জন্য রুমে ভাত নিয়ে এসেছো সেটা??
” তোর কি মনে হয়?? আমি তোর জন্য নিজে ভাত বেড়ে নিয়ে এসছি?? হাহাহা। অতোটাও ভালোবাসা নেই যে আমি তোর জন্য কষ্ট করে ভাত বেড়ে আনবো। ছোট মা-ই আমাকে ভাত বেড়ে দিয়েছিলো। এখন আর অযথা প্রশ্ন না করে কল দে ছোট মা’কে। ”
ইশাও অগত্যা আয়াশের কথায় মায়ের নাম্বারে কল দিলো। ভাগ্যক্রমে একবার রিং হতেই কলটা রিসিভ হলো।
” হ্যাঁ আয়াশ! বল।
ইশা মোবাইলটা নিজের সামনে ধরে বললো—-
” তোমার আয়াশ নয়; আমি। ”
সাথে সাথে আনিসা বেগম ধমকে উঠলেন—– ” ইশা! বেয়াদবের মতো কথা বলছিস কেন?? আয়াশকে ভাইয়া না বলে আয়াশ বলছিস কোন আক্কেলে?? ”
” আচ্ছা তোমার উপদেশ দেওয়া বন্ধ করে আমার কথাটা শুনবে?? নাকি দিয়েই যাবে??
” কি বলবি বল।
” এই দেখো, আমি ভাত খাচ্ছি।
বলেই ইশা মোবাইলটা একটু দূরে নিয়ে ওকে যে আয়াশ খাইয়ে দিচ্ছিলো সেটা দেখালো। আয়াশ এতক্ষণ খেয়াল করেনি যে ইশা ছোট মা’কে ভিডিও কল দিয়েছে। ভেবেছিলো লাউড স্পিকার দিয়ে কথা বলছে ইশা। তাই ও ইশার কথা বলার ফাঁকেও ইশাকে অনায়াসে খাইয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ ইশা মোবাইলটা দূরে নিয়ে গিয়ে খাওয়াটা দেখাচ্ছে দেখে আয়াশ কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।
” ইশা কি করছিস?? আমি তোকে কল দিয়ে বলতে বলেছিলাম। ভিডিও কল দিয়ে দেখাতে বলিনি। ”
বলেই আয়াশ ইশার হাত থেকে ছু মেরে মোবাইলটা নিয়ে কলটা কেটে দিলো। আনিসা বেগম বুঝতে পারলেন উনার দেখে ফেলাতে আয়াশ লজ্জা পেয়েছে। উনি হাসলেন।
” কি হলো এটা?? মোবাইলটা এভাবে নিয়ে নিলে কেন?? আর কলটাই বা কেটে দিলে কেন??
” তুই কি বোকা?? আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি সেটা ভিডিও কলে ছোট মা’কে দেখানোর কি ছিলো?? ছোট মা কি ভাববে??
” কিছু ভাববে?? তাও আবার আম্মু?? হিহিহি, হাসালে আমায়। যেখানে তোমার সাথে একা একটা রুমে থাকায় আম্মু কিছু মনে করেনি সেখানে তোমার হাতে খাইয়ে দিলে কি মনে করবে??
” তাই বলে ভিডিও কলে দেখাবি??
” দেখালাম আর কি, আম্মুর মেয়ের জামাই কতোটা কেয়ারিং।
” কিছু বললি??
” আ ব ব না তো। কিছু বলিনি।
কথা বলতে বলতে ইশার খাওয়া-ও শেষ হয়ে গেলো। খাওয়ানো শেষ হলে আয়াশ হাত ধুয়ে প্লেটটা আবারও সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দিলো।
” এবার আমি তাহলে যাই??
” চলে যাবি…??
” খাওয়া তো শেষ। বসে থেকে কি করবো?? তবে তুমি চাইলে বসতে পারি।
” বাহ! এখন দেখছি কোনো রকম ভুল হচ্ছে না?? কালকের কামড়টা কি একটু জোরে হয়েছিলো??
” সে আর বলতে?? এখনও ব্যথা করছে।
” সত্যি ব্যথা করছে??
” তোমার কি মনে হয়? আমি মিথ্যা বলছি??
” না তা নয়। আচ্ছা ওয়েট। ”
বলেই আয়াশ উঠে ওবাড্রপ থেকে কালকের সেই অয়েন্টমেন্ট টা বের করে আবারও আগের জায়গায় এসে বসলো।
” দেখি আরেকটু কাছে আয়।
” কি ওটা??
” অয়েন্টমেন্ট। কামড়ের জায়গায় লাগিয়ে দিলে ব্যথাটা কমে যাবে।
” কাল কামড় দিয়ে আজ ব্যথা কমার মেডিসিন দিচ্ছো?? (তাচ্ছিল্য হেসে)
” সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি কামড় গুলো এতো জোরে পড়বে। আই এম রিয়েলি সরি।
” সরি…. আর তুমি?? আমি সত্যি শুনছি তো?? নাকি আমার কান ভুল শুনেছে?? আরেকবার বলবে প্লিজ??
” আমি এক কথা দুই বার বলিনা জানিস নিশ্চয় সেটা। না শুনলে কানের ডাক্তার দেখিয়ে নিস। এখন তাড়াতাড়ি এদিকে আয়।
” ধুর, তুমিও না! একটু আগে কতো সুন্দর করে বলছিলে। আর এখন সুর পাল্টে গেলো??
” বকবক করবি?? নাকি অয়েন্টমেন্ট টা লাগাতে দিবি।
” না থাক; অয়েন্টমেন্ট লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কামড় দেওয়ার আগে যখন ভাবোনি আমি ব্যথা পাবো কিনা। তাহলে এখন ভাবছো কেন??
” বললাম তো আমি বুঝতে পারিনি। আমি বারণ করা স্বত্তেও তুই যখন বারবার ভাইয়া ভাইয়া করছিলি আর বারবার তুই তুই করছিলি তখন আমার রাগ উঠে গিয়েছিলো। আচ্ছা তুই চাইলে কিন্তু আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারিস।
” প্রতিশোধ?? কিভাবে??
” আমি যেমন তোকে কামড় দিয়েছি; তুইও তেমনভাবে আমাকে কামড় দিবি। সিম্পল।
” এটা কোনো প্রতিশোধ হলো??
” প্রতিশোধ নয় তো কি! মানুষকে বলতে শুনিসনি?? মারের বদলে মার; রক্তের বদলে রক্ত; আর খুনের বদলে খুন। তাই আমি যেহেতু তলকে কামড় দিয়েছি; সিম্পলি তুইও আমাকে কামড় দিবি। ব্যাস।
” পাগল হয়েছো তুমি?? কিসব বলছো?? মানুষ মানুষকে কখনো কামড় দেয়??
” তার মানে আমি মানুষই নয়, তাই না?? নিশ্চয় আমি কুকুর বা জানোয়ার হয়ে গিয়েছি। তাই তো তোকে এভাবে কামড় দিয়েছি।
” ভাইয়া সরি, প্লিজ এভাবে বলোনা। আমি সেটা মিন করতে চাইনি। আমি জাস্ট বলতে চেয়েছিলাম যে তুমি নাহয় আমার উপর রাগ করে কামড় দিয়েছো। তাই বলে আমিও….??
” তাহলে অয়েন্টমেন্ট টা লাগাতে দিচ্ছিস না কেন?? ”
ইশা বুঝতে পারছে আয়াশ রাগের বসে ওকে কামড় দিয়েছিলো ঠিকই। বাট ওর মুখে ব্যথার কথা শুনে এখন অপরাধ বোধ কাজ করছে। তাই কিছু না বলে আয়াশের সামনে এসে বসে গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে ফেললো।
” নাও লাগিয়ে দাও। তারপরেও মুখ ভার করে থেকোনা প্লিজ। ”
ইশার কথা শুনে আয়াশ মনে মনে হাসলেও মুখটা গম্ভীর করেই রাখলো।৷ গম্ভীর কণ্ঠে বললো —–
” তোকে কে বলেছে আমি মুখ ভার করে রেখেছি?? আমি তো জাস্ট…..
” হয়েছে। আর মিথ্যা বলতে হবেনা তোমার। এতক্ষণ অয়েন্টমেন্ট লাগানোর জন্য জোরাজোরি করছিলে। এখন লাগিয়ে দিচ্ছোনা কেন?? নাও অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দাও। ”
আয়াশ আর কিছু না বলে অয়েন্টমেন্টের ভিতর থেকে কিছু অয়েন্টমেন্ট হাতের আঙ্গুলে নিয়ে খুব যত্ন করে ইশার ঘাড়ে লাগিয়ে দিতে লাগলো। আয়াশের এই মুহূর্তে খুব করে ইচ্ছে করছে, যদি কালকের মতো ওর ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে ইশার ব্যথাটা কিছুটা হলেও চুষে নিতে পারতো। তাহলে হয়তো ওর মনকে বুঝাতে পারতো। কিন্তু এখন যে মনটা খাঁচায় বদ্ধ পাখির মতো ছটপট করছে সেটা কিভাবে ইশাকে বুঝাবে সে?? ইশা তো কতো সহজে বলে দিয়েছে যে কাল কামড় দিয়ে নাকি ও আজ মলম লাগাতে চাইছে। কিন্তু অবুঝ ইশা তো জানেই না যে, কাল আয়াশ ওকে ঠিক আজকের মতোই যত্ন করে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিলো। সেই সাথে আয়াশের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়াও দিয়েছিলো ওর ঘাড়ে। অবশ্য আয়াশ আজও কালকের মতোই ওকে ঘুমিয়ে পড়ার পরই অয়েন্টমেন্ট লাগাতে যেতো। কিন্তু আজ ইশার রুমে মিলি থাকছে; তাই আয়াশের এখনই অয়েন্টমেন্ট টা লাগিয়ে দিতে হচ্ছে ইশাকে। নয়তো জীবনেও ইশার জানা মতে ওকে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিতোনা আয়াশ।
” নে হয়েছে। এবার ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিতে পারবি। ”
ইশাও সাথে সাথে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আবারও আগের জায়গায় বসে পড়লো। হঠাৎ আয়াশকে উঠতে দেখে ইশা অবাক কণ্ঠে বললো —-
” কোথায় যাচ্ছো?? ”
” অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছি; হাত ধুতে হবেনা?? বস আমি হাত ধুয়ে আসছি। ”
চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি