হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ১৬

0
84

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৬

_______
” কোথায় যাচ্ছো?? ”

” অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছি; হাত ধুতে হবেনা?? বস,, আমি হাত ধুয়ে আসছি।

ইশার প্রশ্নের উত্তরে আয়াশ কথাটি বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ততক্ষণ ইশা বসে বসে রুমের চারপাশটা দেখতে লাগলো। এমন নয় যে আয়াশের রুমটা নতুন করে সাজানো হয়েছে। মূলত ইশা আয়াশের রুমে আসলে এমনিই ও আয়াশের রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। কেন সেটা ওর নিজেরও অজানা। আয়াশের রুমে চোখ বুলাতে গিয়ে হঠাৎ ইশার মাথায় একটা কথা আসলো।

” কি ব্যাপার! আমি আসার পর থেকে অয়ন ভাইয়াকে তো একবারও দেখলাম না?? মিলি আপু যেহেতু আমার রুমে থাকছে; সেহেতু অয়ন ভাইয়া তো এই রুমেই থাকার কথা। ও কোথায় গেলো?? নাকি আমার রাগ ভাঙ্গাবে বলে আয়াশ ভাইয়া ওকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে?? ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে আসলে জিজ্ঞেস করবো। ”

তখনই আয়াশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

” আচ্ছা অয়ন ভাইয়াকে দেখছিনা যে?? অয়ন ভাইয়া কোথায়?? আমি এই রুমে আসার পর থেকে ওকে তো একবারও চোখে পড়েনি। ”

ইশার কথা শুনে আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে। অবাক কণ্ঠে বললো —-

” অয়নকে দেখছিস না মানে?? ওকে আমার রুমে দেখবি কেন?? আমাদের কি রুমের অভাব হয়েছে যে ও আমার রুমে থাকবে??

” আরে আমি বলেছি নাকি যে আমাদের রুমের অভাব আছে?? আমি তো জাস্ট বলছিলাম যে মিলি আপু যেভাবে আমার রুমে থাকছে অয়ন ভাইয়ার ও তো তেমনি তোমার রুমেই থাকার কথা। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি।

” আরে বোকা! মিলি মেয়ে; অন্য রুমে একা একা থাকতে ভয় পাবে তাই তোর সাথে তোর রুমে থাকছে। বাট অয়ন তো আর মেয়ে নয় যে ভয় পাবে। ও আমার রুমে থাকতে যাবে কেন??

” তাহলে ও কোথায়??

” কোথায় আবার?? গেস্ট রুমে।

” তবে তুমি যেহেতু একা থাকো; অয়ন ভাইয়াকে চাইলেই তোমার সাথে রাখতে পারো। গল্প করতে করতে দুজন ঘুমাতে পারবে।

” তুই বোধহয় ভুলে গিয়েছিস আমি কারো সাথে রুম শেয়ার করিনা।

” তাহলে আমাকে যে সেদিন তোমার সাথে রাখলে??

” সেটা তো ছোট মা বলেছিলো বলে রেখেছিলাম।

” সেটাই।

আয়াশ মনে মনে হেসে কিছু সময় চুপ থেকে বললো—-” ইশা! ”

ইশা কিছু একটা ভাবছিলো। আয়াশের ডাকে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে বললো—-
” হুমমম! ”

” তোর মিলির সাথে থাকতে প্রবলেম হলে এখনও কিন্তু আমার সাথে থাকতে পারিস।

” হ্যাঁ, আমি তোমার সাথে থাকি; আর তুমি আমাকে চেপে মেরে ফেলো।

” হোয়াট?? চেপে মেরে ফেলবো মানে??

” কেন? মনে নেই? সেদিন যেভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলে; আরেকটু হলে তো হাড়গুড় সব ভেঙ্গে যেতো। ভাগ্যিস আল্লাহ বাঁচাইছে।

” ইশা! তুই আর মানুষ হলিনা। জড়িয়ে ধরলে যে কারো হাড়গুড় ভেঙ্গে যায় সেটা তোর কাছ থেকে শুনলাম। ইডিয়েট। যা গিয়ে শুয়ে পড়। আই মিন রুমে যা।

” বাহ রে, এতক্ষণ তোমার সাথে থাকতে বলছো; আর এখন রুমে চলে যেতে বলছো??

” কারণ তোর মতো মেয়েকে আমি আমার সাথে রাখবোনা। যা হাঁট।

” যাচ্ছি যাচ্ছি। তোমাকে বলতে হবেনা। আমি তোমার রুমে থাকার জন্য বসে থাকিনি। হুহ্। আসছি। গোড নাইট।

” হ্যাঁ হ্যাঁ গোড নাইট।

ইশা উঠে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু দরজা অব্দি গিয়েই কিছু একটা মনে করে থেমে গিয়ে আবারও পিছন ফিরে আয়াশের সামনে এসে দাঁড়ালো।

” আবার কি হয়েছে??

” আচ্ছা আমি রুমে গেলে যদি মিলি আপু জিজ্ঞেস করে আমি তোমার রুমে এতক্ষণ কি করছিলাম; আর তুমি আমাকে কেনই বা ডেকেছিলে; তাহলে কি বলবো?? না মানে আমার মাথায় কিছু আসছেনা তাই জিজ্ঞেস করছি।

” কি বলবি বলবো??

” হ্যাঁ, বলার জন্যই তো জিজ্ঞেস করছি।

” তাহলে শোন,, বলিস আমার সাথে রোমান্স করতে ডেকেছি; আর তাই এতক্ষণ দেরি হয়েছে।

” মানে? কি বলছো এইসব?? তোমার মাথা টাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?? মিলি আপু শুনলে কি ভাববে??

” তা আর কি বলবো?? তুই এতোটাই গাধী যে আমার রুম থেকে গিয়ে মিলি জিজ্ঞেস করলে কি বলবি সেটা খুঁজে পাচ্ছিস না। তোর মতো গাধীকে এটা না বলে আর কি বা বলবো?? আরে বাবা আমি তোকে কোনো একটা কাজে ডেকেছিলাম এটা তো আমি তোর রুমেই বলে এসেছি। আর যদি দেরি কেন হয়েছে জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবি যেই কাজটি করার জন্য আমি তোকে ডেকেছিলাম সেটা করতে করতে দেরি হয়ে গেছে। সিম্পল।

” আরে বাবা আমিও তো জানি সেটা। কিন্তু কাজটা কি জিজ্ঞেস করলে তখন কি বলবো?? সেটাই জানতে চাইছি।

” ওহ গড়! তুই কাজটা কি সেটাও বলতে পারবিনা?? ভাত খাস কেন বল তো?? স্টুপিট। আমার কোনো একটা ফাইল খুঁজে পাচ্ছিলাম না সেটা খুঁজতেই দেরি হয়ে গিয়েছে বলিস।

” শিট! এই সামান্য কথাটি আমার মাথায় আসেনি??

” তোর গোবর ভর্তি মাথায় এমনিতেও কিছু আসবেনা। যা বের হ আমার রুম থেকে।

” যাচ্ছি যাচ্ছি। গোড নাইট।

বলেই ইশা চলে গেলো। আয়াশ মুচকি হাসলো।

” পাগলি। ”

ইশা রুমে এসে দেখলো মিলি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে।

” এ কি আপু! তুমি এখনও ঘুমাও নি?? ”

বলতে বলতে ইশা দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। মিলি মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে দিয়ে বললো—

” ঘুম আসছিলোনা; তাই ফেসবুকিং করছিলাম।

” ওওওও

” আচ্ছা তোমাকে ওইভাবে আয়াশ ডেকে নিয়ে গেলো কেন?? আর তোমার আসতে এতো দেরিই বা হলো কেন??

” আর বলোনা আপু। ভাইয়ার একটা ফাইল খুঁজে পাচ্ছিলোনা; তাই ওটা খুঁজতেই আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে। আর সেটা খুঁজতে খুঁজতে এতো সময় লেগে গেছে।

” এখন পেয়েছে ফাইলটা??

” না পেলে কি আর খাটাশটা আমাকে রুমে আসতে দিতো?? সারারাত না ঘুমিয়ে রাখতো।

” হিহিহিহি।

” হাসছো কেন আপু??

” হিহিহিহি, তোমার কথা শুনে। আয়াশকে তুমি খাটাশ বলছো?? হিহিহি, ভাগ্যিস ও নেই এখানে। তাহলে বলতে পারতে??

” আরে ধুর, ও থাকলেও বা কি করবে?? আমি ওকে ভয় পাই নাকি??

” সত্যি ভয় পাও না??

” একদমই না। ওকে ভয় পাবো কেন?? ও কি বাঘ নাকি ভল্লুক যে ওকে ভয় পাবো??

” সেটাও ঠিক। বাট ও যেই রাগী; আমার নিজেরই তো ওর সামনে উল্টা পাল্টা কিছু বলতে ভয় করে।

” তুমি আয়াশ ভাইয়াকে ভয় পাও?? হিহিহিহি

” কিছুটা। ওকে না; ওর রাগটাকে ভয় পাই। বুঝা ও যায়না কখন শান্ত থাকে আর কখন রেগে যায়। বাই দা ওয়ে, তোমার না কাল কলেজ আছে; ঘুমিয়ে পড়ো। আমার ঘুম পাচ্ছে। গোড নাইট।

” গোড নাইট।

পরের দিন,, সবাই ডাইনিংয়ে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো। তখনই খাওয়ার মাঝখানে হঠাৎ
আয়াশ বললো—–

” অয়ন! তুই আমার সাথে অফিসে চল। এখানে বাড়িতে বসে বসে বোর হবি। তাই আমার মনে হয় তোর আমার সাথে অফিসে গিয়ে ঘুরে আসা উচিত। সময়ও কাটলো। অফিসটাও ঘুরে দেখা হলো। কি বলিস??

” ওকে ডান। তুই না বললেও কিন্তু আমি বলতাম।

” আয়াশ! আমাকেও নিয়ে যাবি?? আমিও তুদের অফিসটা দেখে আসতে পারতাম। আর তাছাড়া ইশাও কলেজে চলে যাবে। আমি বাড়িতে বসে বসে কি করবো?? ফুফি আর আন্টিরা বড়জন। ওদের সাথে আমি কি বা গল্প করবো?? তাই আমি ঠিক করেছি আমিও তুদের সাথে যাবো। ”

আয়াশ হ্যাঁ বলতেই যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই অয়ন বললো—- “একদম না। আয়াশ নিতে চাইলেও আমি নিয়ে যাবোনা তোকে। ”

তখনই রুকসানা বেগম বললেন— ” সে কি? কেন? ওকে নিয়ে গেলে কি প্রবলেম?? ”

” হ্যাঁ, সেটাই তো। আমাকে নিয়ে যেতে তোর প্রবলেম কোথায়?? আয়াশ তো না বলছেনা। তাহলে তুই আগ বাড়িয়ে না বলছিস কেন??

মিলির কথায় অয়ন ঘুর আপত্তি করে বললো—-
” তুই মেয়ে মানুষ। অফিসে গিয়ে কি করবি?? তার চেয়ে বরং ফুফিদের সাথে ঘরে থাকিস সেটাই ভালো হবে।

” এমনভাবে বলছিস যেন মেয়েদের অফিসে যেতে নেই?? আচ্ছা আয়াশ! তুদের অফিসে মেয়ে ওয়ার্কার আছে না??

” অফকোর্স আছে। মেয়ে নেই এমন কোনো অফিস আছে নাকি?? আর অয়ন তুইও বা কেমন?? মেয়েরা চাঁদের দেশে পর্যন্ত চলে যাচ্ছে; আর তুই বলছিস মিলি মেয়ে মানুষ, তাই অফিসে কেন যাবে?? আজব।

আয়াশের সাপোর্ট পেয়ে মিলি খুশি মনে বললো—
” আয়াশ! তুই একটু বুঝা। আমাকে এমন করে করে কোথাও যেতে দেয় না। এখানেও আনতে চায়নি। নিহাত আব্বু আম্মু বলেছে বলে এনেছে।

” একদম ঠিক করেছি আনতে চাইনি। এখনও অফিসে নিবোনা আমাদের সাথে। দেখি কি করিস?? এখানে তো আর আব্বু আম্মু নেই।

অয়নের কথা শুনে সাথে সাথে রুকসানা বেগম বলে উঠলেন —
” অয়ন! তুই বোধহয় ভুলে গিয়েছিস এখানে ভাইয়া ভাবি না থাকলেও আমি কিন্তু আছি।

” ফুফি! তুমি শুধু শুধু ওকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছো। পরে কিন্তু ও মাথায় চড়ে নাচবে।

রুকসানা বেগম হালকা রেগে বললেন —-
” নাচলে নাচুক। সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। ভাইয়া তো এমন না। তুই এমন হলি কিভাবে??

মিলি অয়নকে রাগানোর জন্য খোঁচা মেরে বললো—-
” ফুফি! বুঝছোনা?? ওকে বোধহয় আব্বু আম্মু কারো কাছ থেকে পালক নিয়েছে। তাই আব্বুর সাথে মিল নেই।

মিলির কথায় অয়ন রেগে গিয়ে বললো—-
” আমাকে নয়; তোকে পালক নিয়েছে।

” একদম না। তোকে নিয়েছে। আমি তো আব্বু আম্মুর আদরের মেয়ে। দেখিস না আব্বু আমাকে তোর থেকে বেশি ভালোবাসে??

” তুই দেখিস না আম্মু তোর থেকে আমাকে বেশি দেখতে পারে??

” আচ্ছা তোরা কি শুরু করেছিস বল তো?? এখানে এসেও ঝগড়া করছিস?? দেখ পাবলিক ফ্রিতে তুদের নাটক দেখছে। ”

আয়াশের কথা শুনে অয়ন আর মিলি দুজনেই তাকিয়ে দেখলো ওদের ঝগড়া দেখে রায়হান মাহমুদ, হাসান মাহমুদ, আনিসা বেগম, এবং ইশা, সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।

” আসলে মামা-মামি তুদের দুটোকে একসাথে পৃথিবীতে এনেই ভুল করেছে।

আয়াশের কথার প্রতিবাদ করে অয়ন বললো—
” আরে কে বলেছে একসাথে এনেছে?? আমি ওর থেকে ৩৭ সেকেন্ড আগে এসেছি।

” তোর সাথে আসতে আমার বয়েই গেছে। তোর সাথে তো আমি জান্নাতেও যাবোনা। আর সেখানে দুনিয়াতে আসবো?? প্রশ্নই উঠেনা।

” ভুলে যাস না শত হলেও আমি তোর বড়। পুরো ৩৭ সেকেন্ডের বড়।

” হ্যাঁ হ্যাঁ,, তুইও ভুলে যাসনা আমি তোকে দয়া করেছিলাম। তুই আগে আসার জন্য কান্না করছিলি তাই পাঠিয়ে দিয়েছি। নয়তো কিন্তু আমিই বড় হতাম। বুঝেছিস??

” আরে আ……

ওদের ভাই বোন দুজনকে এমন তর্ক বির্তক করতে দেখে আয়াশ আর না পেরে এবার ধমক দিয়ে উঠলো— ” আচ্ছা তোরা থামবি?? বাচ্চাদের মতো কি শুরু করে দিলি এসব?? মিলি! আজ অয়ন যাক। প্রমিস করছি; কাল আমি তোকে নিয়ে যাবো। ”

” কিন্তু……

” তুই আমার কথাটা রাখবিনা?? ”

আয়াশ মিলিকে এমন আদুরে গলায় বললো যে মিলি আর কিছু বললোনা। আয়াশের কথায় রাজি থাকলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সবাই আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু সবাই খেলেও ইশার খাওয়ায় মনোযোগ বসছে না। বারবার আয়াশ আর মিলিকে দেখছে। কেন যেন আয়াশের কথাটা ওর একদম পছন্দ হয়নি।

” বাহ! মিলি আপুকে কতো সুন্দর করে বললো তুই আমার কথাটা রাখবিনা?? আর আমাকে হলে তো সবসময় ধমকের উপর রাখে। এখন মিলি আপুর জায়গায় যদি আমি উনার অফিসে যাওয়ার জন্য বায়না করতাম; তাহলে আমাকে তো এতো সুন্দর করে বলতোনা। উল্টো ধমকের উপর ধমক দিতো। ”

কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করে ইশা ফুস করে একটা দম ছেড়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
নাস্তা শেষ করে আয়াশ, আয়াশের বাবা, আয়াশের চাচ্চু আর অয়ন সবাই অফিসে চলে গেলো। আর ইশা নাস্তা শেষ করে কলেজে চলে গেলো। যদিও ইশা মিলিকে বলেছিলো ওর সাথে কলেজে যেতে; কিন্তু মিলি যায়নি। তাই ইশা একাই কলেজে চলে গিয়েছে। এভাবেই দিনগুলো কাটতে লাগলো। অয়ন আর মিলির এখানে এসে দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছে। শুধু অয়ন আর মিলির নয়; সবার দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছে। শুধুমাত্র ইশার ছাড়া। ইশার দিন গুলো আজকাল কেন যেন খুব বেশি বিষণ্নতায় কাটে বললে তেমন একটা ভুল হবেনা। আর তার একটাই কারণ,, সেটা হলো আয়াশ। ইশা বেশ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছে, মিলি আসার পর থেকে আয়াশ অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। ওকে আর আগের মতো সময় দেয় না। ও নিজ থেকে কথা বলতে চাইলেও কথা বলেনা। আগের মতো আর অফিস থেকে এসে বলেনা, ইশা আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আমার রুমে আয়। আগের মতো ওর সাথে গল্প করেনা। সবসময় কেমন যেন ওকে ইগনোর করে চলে। হ্যাঁ, ইশা এ সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবে নিতো; যদি না আয়াশ মিলিকে সময় দিতো। ওকে সময় দিচ্ছে না ঠিকই; কিন্তু মিলিকে তো সময় দিচ্ছে। ও রুমে গেলেই বলে কাজ আছে। পরে আসিস। কিন্তু কই? মিলিকে তো একবারও বলেনা যে কাজ আছে পরে আসিস। আগে যেই সময়টা ওকে দিতো; আয়াশ এখন সেই সময়টা মিলিকে দেয়। আর তাই ইশার আজকাল মনটা বেশিরভাগ সময়ই খারাপ থাকে। কেমন যেন সবসময় নিজেকে একা একা লাগে। মনে হয় যেন সবকিছু থেকেও কিছু একটা মিসিং। এভাবে ১দিন ২দিন করতে করতে মাঝখানে প্রায় সপ্তাহ দুয়েকের মতো কেটে গিয়েছে।
অয়ন আর মিলি আয়াশদের বাসায় এসেছে আজ ১৫ দিন। আর এই ১৫ দিনের ১৪ দিনই ইশার খারাপ কেটেছে। আর বলে রাখা ভালো যে, এই ১৫ দিনের বেশিরভাগ দিনই মিলি আয়াশের সাথে অফিসে গিয়েছে। ইশার এটা বুঝে আসেনা যে মিলি আয়াশের অফিসে গিয়ে করেটা কি?? পুরো অফিস ঘুরে দেখার জন্য তো ১দিন; বেশি হলে ২দিন লাগবে। কিন্তু প্রতিদিন অফিসে গিয়ে কি করে?? ওর হলে তো বিরক্ত এসে যেতো। আর মিলি কিনা প্রতিদিন নাচতে নাচতে চলে যায়?? রোজকার মতো আজও আয়াশ সন্ধায় অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। তবে আজ কোনো একটা কারণে মিলি আয়াশের সাথে যায়নি। কিন্তু অফিসে যায়নি তাতে কি হয়েছে?? আয়াশ বাসায় ফিরতেই আয়াশের পিছন পিছন আয়াশের রুমে চলে গিয়েছে। ইশা ড্রয়িংরুমের সোফাতেই বসে ছিলো। মূলত ও আর মিলি বসে গল্প করছিলো। যেই না দেখেছে আয়াশ এসেছে অমনিই মিলি ওর পিছু পিছু রুমে চলে গেলো। ইশার আগে এসব দেখে মন খারাপ হলেও; এখন কেন যেন মন খারাপের বদলে হাসি পাচ্ছে।

” আচ্ছা ছেলেরা বুঝি এমন হয়?? আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরলে রোজ আমার জন্য চিপস আর চকলেট নিয়ে আসতো। আর বলতো, ইশা তুই আমার জন্য চা নিয়ে রুমে আয়। নয়তো কিন্তু চিপসও পাবিনা; চকলেটও পাবিনা। চিপস আর চকলেট পেতে চাইলে তাড়াতাড়ি চা নিয়ে রুমে আয়। আর এখন….. এখন অফিস থেকে ফিরে চিপস আর চকলেট আনা তো দূরের কথা; একটা বার জিজ্ঞেসও করেনা যে ইশা তুই কি করছিস। ”

কথাগুলো ভেবে ইশা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। আয়াশ যেহেতু এখন আর চায়ের কথা বলেনা; তাই ইশা আর নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে চা নিয়ে যায়না। যদিও প্রথম দুয়েকদিন আয়াশ না বলা স্বত্তেও ইশা চা নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আয়াশ না করায় এখন আর নিয়ে যায়না। ইশা রুমে এসে সোজা পড়তে বসে পড়লো। কারণ সামনের মাসেই ওর ফাইনাল এক্সাম। হাতে আর মাত্র ১টা মাস সময় আছে। এখন থেকে যদি পড়া গুলো কমপ্লিট না করা হয় তাহলে পরে দেখা যাবে এক্সাম চলে এসছে; কিন্তু পড়া এখনও রয়ে গেছে। তাই ইশা গতো কয়েক দিন কিছু কিছু পড়া শেষ করার চেষ্টা করছে। যদিও আয়াশের বিহেভিয়ার গুলোর কারণে ও পড়ায় মনোযোগ দিতে পারেনা। তারপরেও চেষ্টা করে। আয়াশের কারণে এক্সাম তো আর খারাপ করতে পারবেনা। কিন্তু পড়তে বসে হঠাৎই ইশার একটা কথা মনে পড়লো।

” ওহ শিট! আজ তো স্যার কিছু এ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলো। আর তাই আজ এক্সামের পড়া না পড়ে আগে স্যারের দেওয়া এ্যাসাইনমেন্টটা করতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো ল্যাপটপ লাগবে। আর আমার তো কোনো ল্যাপটপও নেই। এখন কি করবো?? ধুর, কেন যে বড় আব্বুকে বললাম না একটা ল্যাপটপ আনতে?? বললে বড় আব্বু আজকেই নিয়ে আসতো। এখন আমি কি করি?? ল্যাপটপ ছাড়া তো এ্যাসাইনমেন্ট গুলো করা সম্ভবও না। কি করি? কি করি?? আইডিয়া, আয়াশ ভাইয়ার কাছে তো ল্যাপটপ আছেই আমি এতো টেনশন করছি কেন?? ”

চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here