হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ১৭

0
125

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৭

_______
” ওহ শিট! আজ তো স্যার কিছু এ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলো। আর তাই আজ এক্সামের পড়া না পড়ে আগে স্যারের দেওয়া এ্যাসাইনমেন্টটা করতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো ল্যাপটপ লাগবে। আর আমার তো কোনো ল্যাপটপও নেই। এখন কি করবো?? ধুর, কেন যে বড় আব্বুকে বললাম না একটা ল্যাপটপ আনতে?? বললে বড় আব্বু আজকেই নিয়ে আসতো। এখন আমি কি করি?? ল্যাপটপ ছাড়া তো এ্যাসাইনমেন্ট গুলো করা সম্ভবও না। কি করি? কি করি?? আইডিয়া, আয়াশ ভাইয়ার কাছে তো ল্যাপটপ আছেই আমি এতো টেনশন করছি কেন?? ”

যেই ভাবা সেই কাজ। ইশা উৎফুল্ল মনে রুম থেকে বেরিয়ে আয়াশের রুমে গেলো। কিন্তু ইশা যতোটা খুশি হয়ে আয়াশের কাছে এসেছিলো; আয়াশের রুমের দরজায় এসে ইশা ততোটাই হতাশ হলো। ইশা আয়াশের দরজায় এসে দেখলো আয়াশ আর মিলি ল্যাপটপে কিছু একটা দেখে খুব হাসাহাসি করছে। এতোটাই হাসছে যে মিলি তো পুরো হাসতে হাসতে আয়াশের গায়ে ঢলে পড়ছে। দৃশ্যটা দেখার জন্য ইশা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। যার ফলে ওর খুব মন খারাপ হয়। কিন্তু ল্যাপটপটা না নিয়ে গেলেও হবেনা। তাহলে এ্যাসইনমেন্ট গুলো করা হবেনা। তাই ইশা আর কোনো উপায় না পেয়ে আয়াশের দরজায় নক করলো।

” আসবো….?? (মলিন কণ্ঠে)

হঠাৎ ইশার কণ্ঠ পেয়ে আয়াশ আর মিলি দুজনেই দরজার দিকে তাকালো। মিলি হাসতে হাসতে বললো—-

” আরে ইশা তুমি?? দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন?? ভিতরে আসো। ”

ইশা মেকি হেসে ভিতরে ঢুকলো। তারপর আয়াশ আর মিলির সামনে এসে দাঁড়ালো।

” কি রে? কিছু বলবি?? ”

আয়াশের কথায় ইশা ম্লান কণ্ঠে বললো —-
” হ্যাঁ ভাইয়া! আ ব ব আচ্ছা তোর ল্যাপটপটা কি আজকের জন্য আমাকে একটু দিতে পারবি??

” ল্যাপটপ..? আমার ল্যাপটপ দিয়ে তুই কি করবি??

” দরকার আছে, তাই।

” হঠাৎ আজকে আমার ল্যাপটপের দরকার হচ্ছে কেন তোর??

” দিতে পারবি কিনা সেটা বল। এতো কথা বলার কি আছে??

” ইশা! তু……

মিলি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তখনই মিলির মোবাইলে কল আসে।

” আয়াশ! তুই বস। আমি আম্মুর সাথে কথা বলে আসছি। ”

এই বলে মিলি ফোনটা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে গেলো। ইশা এক নজর মিলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবারও আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো— ” কি হলো? কিছু বলছিস না যে?? ”

” আগে বল ল্যাপটপ দিয়ে কি করবি। তারপর ভেবে দেখবো দিবো কি দিবোনা।

” বললামই তো দরকার আছে। দরকার না হলে নিশ্চয় চাইতাম না!

” আমি ও তো সেটাই বলছি। তোর হঠাৎ আমার ল্যাপটপের দরকার পড়লো কেন??

” আমি এতো কিছু বলতে পারবোনা। তুই শুধু দিবি কিনা সেটা বল।

” না দিবোনা। যতক্ষণ না কারণটা বলবি ততক্ষণ আমি তোকে ল্যাপটপ দিবোনা।

” সত্যি দিবি না??

” নাহ।

ইশা এবার আচমকাই আয়াশের দিকে তেঁতে গিয়ে দু’হাতে আয়াশের গলা টিপে ধরলো। সাথে সাথে আয়াশ কেশে উঠলো।

” (কুহু কুহু) ই ইশা! কি করছিস?? ছাড়। এভাবে টিপে ধরলে আমি মরে যাবো তো!

” তুই মরে যা। একদম মরে যা। আমাকে ল্যাপটপ দিবি না, না?? তোর ল্যাপটপটাতে এমন কি আছে শুনি যে আমাকে দিতে পারবিনা?? ”

আয়াশের গলাটা টিপে ধরে রেখেই বললো ইশা। আয়াশ ইশার হাত দুটো গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো—-

” (কুহু কুহু) আরে আমি কখন বলেছি দিবোনা?? আমি তো জাস্ট কারণটা জানতে চেয়েছি।

” কারণ জানতে চাইবি কেন?? তোর ল্যাপটপ চাইছি বলে তোকে কারণ বলেই ল্যাপটপ নিয়ে যেতে হবে?? কেন??

” আচ্ছা আগে গলাটা তো ছাড়। ব্যথা পাচ্ছি তো।

” আগে বল ল্যাপটপ দিবি কিনা। তারপর ছাড়বো।

” আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো কমপ্লিট করে দিলে হবে??

” কেন?? এতক্ষণ কাজ ছিলোনা বুঝি?? যেই না আমি ল্যাপটপ চাইছি অমনিই তোর কাজ আছে, তাই না?? ”

তখনই মিলি রুমে ঢুকলো। ইশাকে আয়াশের গলা টিপে ধরে রাখতে দেখে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো ——-
” ইশা! কি করছো কি?? এগুলো কেমন ছেলে মানুষি?? ছাড়ো। আয়াশ ব্যথা পাচ্ছে তো। ব্যতিক্রম হলে ও তো মারা যাবে। ”

ইশা মিলির কথাতেও ছাড়লোনা। উল্টো আরও চেপে ধরে বললো —- ” মরে গেলে যাক। আমি মরে যাওয়ার জন্যই ধরেছি। আমাকে নাকি ওর ল্যাপটপ নিতে হলে কারণ বলতে হবে। তাই যতক্ষণ না আমাকে কারণ না জানা ছাড়া ল্যাপটপ দিতে রাজি হবে। ততক্ষণ এভাবেই ধরে রাখবো। এতে যদি ও মরে-ও যায় আই ডোন্ট কেয়ার।

” (কুহু কুহু কুহু) ই ইশা! তুই (কুহু কুহু) এ এতোটা নিষ্টুর হতে পারলি?? সামান্য ল্যাপটপের জন্য কিনা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিস??

” হ্যাঁ নিষ্টুর হয়ে গেছি। আগে বল আমাকে ল্যাপটপ দিবি কিনা। নয়তো এভাবেই ধরে রাখবো। ”

আয়াশ আচ্ছা বলতেই যাবে, তার আগেই মিলি বলে উঠলো —– ” আরে ইশা! আমরা তো ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিলাম; তোমাকে কি করে দিবে সেটা?? আমাদের মুভি দেখা হয়ে গেলে নাহয় তুমি নিয়ে যেও। ”

সাথে সাথে আয়াশের গলা থেকে অটোমেটিক ইশার হাত গুলো সরে আসলো৷ ম্লান হেসে বললো —-

” ওওও। আমি তাহলে ভুল সময়ে এসেছিলাম। সরি আপু! আমি আসলে জানতাম না তোমরা মুভি দেখছো৷ জানলে কখনোই আসতাম না। আর ভাইয়া তুইও বা কেমন?? তোরা মুভি দেখছিলি তাই ল্যাপটপটা দিতে পারবিনা সেটা বললেই তো হতো। এতো বাহানা করার কি দরকার ছিলো?? সরি। তোরা কন্টিনিউ কর। আমি আসছি। আপু ক্যারি অন। হিহিহিহি। ”

কথাগুলো বলেই ইশা আয়াশের রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। আয়াশকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলোনা। ইশাকে এভাবে চলে যেতে দেখে আয়াশ কিছুটা অবাক হলো। কারণ ইশা ওর কাছ থেকে কখনো কিছু নিতে আসলে যতক্ষণ ও জিনিসটা না দেয়; ততক্ষণ ইশা রুম থেকে এক পা-ও নড়েনা। কিন্তু আজ ইশা ল্যাপটপটা না নিয়ে চলে গেলো?? কিভাবে সম্ভব?? আয়াশের ভাবনার মাঝেই মিলি ওর পাশে বসে বললো— ” আয়াশ! তুই এমন কেন বলতো?? ”

আয়াশ সেন্টার টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ডগডগ করে সবগুলো পানি খেয়ে নিলো। তারপর গ্লাসটি আবারও আগের জায়গায় রেখে দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বললো— ” কেমন?? ”

” এই যে, তুই ইশার সব কিছু সহজেই মেনে নিস। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলতো। তুই এভাবে ইশার সবকিছু নিরবে সহ্য করিস কেন?? দেখলি লাই দিয়ে দিয়ে কি করেছিস?? লাই দিতে দিতে এতোটাই মাথায় তুলে ফেলেছিস যে, তোকে সামান্য ল্যাপটপের জন্য গলা টিপে ধরেছে। এটা কোনো কথা?? তুই ওর সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করিস কেন?? ”

আয়াশ মিলির কথায় কোনো প্রত্যুত্তর করলোনা। শুধু হাসলো।

” কি হলো? হাসছিস কেন??

” তোর কথা শুনে।

” আমি হাসার মতো কি বললাম শুনি??

” আচ্ছা তুই কি কখনো কাউকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছিস?? যদি না বাসিস তাহলে তুই এসব বুঝবি না। বাই দা ওয়ে, আমার এখন কিছু কাজ আছে। তাই মুভিটা তোর আজ আর দেখা হবেনা। অন্য সময় দেখে নিস। আর তুই তখন ইশাকে কেন বললি যে আমরা মুভি দেখছিলাম?? মুভি তো দেখছিলি তুই। আমি তো জাস্ট কমেডি সিনটা দেখলাম; তাও তোর বলাতে। আর তুই ইশাকে বললি যে আমরা মুভি দেখছিলাম। এটা বলা কি খুব জরুরি ছিলো??

” আরে এভাবে বলছিস কেন?? আমি তো জাস্ট ও যাতে তোর গলাটা ছেড়ে দেয় তার জন্য বলেছিলাম।

” হ্যাঁ বলে আমায় উদ্ধার করেছিস। আগুনে ঘি ঢেলে বলছিস আগুন নিবানোর চেষ্টা করেছিলি। এখন আমার যে কতো কাটকুড় পুড়াতে হয় আল্লাহয় জানে। ”

কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করলো আয়াশ। আয়াশের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মিলি বললো—-

” আয়াশ! কি ভাবছিস??

” কিছু না।

” না ভাবলেই ভালো। এখন চল মুভির বাকি অর্ধেকটা দেখে নিই। নয়তো আর দেখা হবেনা।

” কেন?? আর দেখা হবেনা কেন??

” তোকে অয়ন কিছু বলেনি??

” কিসের কথা বলছিস বুঝলাম না।

” কাল আমরা চলে যাবো। সেটার কথাই বলছি। অয়ন তোকে বলেনি??

” কি বলিস?? তোরা এসেছিস কাল মাত্র ১৫ দিন হবে। আর কালকেই চলে যাবি?? অয়ন আমাকে বলেছিলো। বাট আমি মনে করেছিলাম ফান করেছে। সত্যি চলে যাবি??

” হুমমম। অনেক দিন তো হলো। আম্মু একটু আগেও কল দিয়ে বলছে কাল যেন চলে যায়। পরে নাহয় আবার আসবো।

” আর কয়েক দিন থেকে গেলে কি এমন হবে??

” তেমন কিছু হবেনা। বাট এতোদিন তো আর বেড়াতে পারিনা। অলরেডি ফিফটিন ডেইস গন। সো উই হেভ টু গো। প্লিজ তুই রাগ করিস না।

” ওকে। চলেই যখন যাবি কি আর করার। ”

ডিনারের টাইম হয়ে গেলে সবাই এক এক করে ডাইনিংয়ে এসে বসলো। সবার একদম শেষে আসলো ইশা। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক নজর ডাইনিংয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো। আর তাকাতেই ইশার খারাপ মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো। কারণ একটাই, আয়াশ আর মিলি পাশাপাশি বসেছে। কিন্তু ইশা তো আর জানেনা আয়াশ মিলির পাশে নয়; বরং মিলি এসে আয়াশের পাশে বসেছে। আয়াশ আর মিলিকে পাশাপাশি বসতে দেখে ইশার মন খারাপ হলেও সবার সামনে মন খারাপটা দেখালোনা। বরং মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বড় আম্মুর পাশে এসে বসলো। সবাই যেহেতু ইশার জন্যই বসে ছিলো; তাই ইশা আসতেই সবাই খাওয়া শুরু করলো।

” কি রে মা! তুই প্রতিদিন সবার আগে এসে বসে পড়িস। কিন্তু আজ এতো দেরি করলি যে?? ইনফ্যাক্ট আমি ডেকে আসার পরও আসলিনা। কিছু নিয়ে কি বিজি ছিলি??

রুকসানা বেগমের কথায় ইশা ম্লান হেসে বললো—-
” না বড় আম্মু! তেমন কিছু না। ঐ আসলে পড়ছিলাম। তাই পড়াটা কমপ্লিত করে আসতে একটু লেট হয়েছে।

” ও তা আজ কি আমার মেয়েটিকে খাইয়ে দিতে হবে??

” না না বড় আম্মু! আজ আমি নিজেই খেয়ে নিবো। তুমি খেয়ে নাও। ”

রুকসানা বেগম হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। সবাই খাচ্ছিলো; তখনই হঠাৎ ইশা বললো—- ” বড় আব্বু! তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো। ”

” হ্যাঁ মা! বল না কি কথা।

” না মানে আমার একটা ল্যাপটপ লাগবে। তুমি কি কাল আমাকে একটা ল্যাপটপ এনে দিতে পারবে??

” ইশা! তুই ল্যাপটপ দিয়ে কি করবি?? তোর আবার ল্যাপটপের কি দরকার??

হাসান মাহমুদের কথা শুনে রায়হান মাহমুদ বেশ বিরক্ত হলেন। রাগী কণ্ঠে বললেন—-

” হাসান! আমি তোকে জিজ্ঞেস করতে বলেছি?? আগে কথা বলিস কেন?? ইশা মা! তুই একদম চিন্তা করিসনা। কালকেই ল্যাপটপ আমাদের বাড়িতে চলে আসবে। আমার মেয়ে একটা ল্যাপটপ চাইছে; আর আমি সেটা কিনে দিবোনা তা কি হয়?? আজ সকালে বলিসনি কেন?? তাহলে আমি আসার সময় নিয়ে আসতাম।

” মনে করেছিলাম কিনার প্রয়োজন হবেনা; তাই বলিনি।

” ইট’স ওকে। আমি আমার মেয়ের জন্য কালকেই ল্যাপটপ নিয়ে আসবো।

” থ্যাংকস বড় আব্বু।

” ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। ”

ইশার ল্যাপটপ আনার কথা শুনে কেউ কোনো রকম অবাক না হলেও আয়াশ বেশ অবাক হলো। আর হবে নাই বা কেন?? যেই ইশা এক জোড়া জুতা পর্যন্ত ওকে ছাড়া অন্য কাউকে আনতে বলেনা। সেই কিনা আজ বড় আব্বুকে ল্যাপটপ আনতে বলছে।

” ইশা হঠাৎ আজ বাবাকে ল্যাপটপ আনতে বলছে কেন?? ওর তো যখনই কিছু লাগে আমাকেই আনতে বলে। আজ হঠাৎ বাবাকে ল্যাপটপ আনতে বলছে কেন?? তার মানে আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটাই। ম্যাডাম আমার উপর প্রচন্ড রেগে আছে। হুমমম, আই গট ইট। ”

কথাগুলো নিজ মনে ভাবলো আয়াশ। তখনই মায়ের কথায় ইশার দিকে তাকালো আয়াশ।

” ইশা মা! তোর প্লেটে তো একটা ভাত ও নেই। আনিসা! ভাতের বাটি টা দাও তো। ইশাকে ভাত দিই।

” না না বড় আম্মু! আমি আর নিবোনা। তাই বলিনি। এমনিতেও আমার ক্ষুধা ছিলোনা। তোমরা বকা দিবে তাই খেতে বসেছি। প্লিজ আমাকে আর ভাত দিও না।

” তাই বলে এতো অল্প খেয়ে উঠে যাবি??

স্ত্রীর কথায় সাই দিয়ে রায়হান মাহমুদও বলে উঠলেন—
” হ্যাঁ রে ইশা মা! এতো অল্প খেয়ে এতো বড় একটা রাত কিভাবে থাকবি??

” কোনো প্রবলেম হবেনা বড় আব্বু! আমি পারবো। ঘুমালে আর খবরই থাকবেনা আমার। তোমরা খাও। আমি রুমে যাচ্ছি। ”

বলতে বলতে ইশা খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যাচ্ছিলো। তখনই আয়াশ পিছন থেকে বলে উঠলো —- ” ইশা! একটু রুমে গিয়ে বসিস। তোর সাথে কিছু কথা আছে। ”

” কিন্তু ভাইয়া আমার তো ক্লাসের পড়া আছে। সেগুলো আগে শেষ করতে হবে।

” কাল ফ্রাইডে। পুরো দিন পড়তে পারবি। এখন আমার রুমে গিয়ে বসতে বলেছি বসবি। আমি বেশি কথা শুনতে চাই না। ”

ইশার নিজেরও মনে ছিলোনা যে কাল ফ্রাইডে। এখন হঠাৎ আয়াশের মুখে কাল ফ্রইডে শুনে মনে মনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কারণ কাল যদি ফ্রাইডে না হতো তাহলে এ্যাসাইনমেন্ট গুলো জমা দিতে পারতোনা। এখন কালকের দিনটা সময় পাওয়ায় মনে মনে একটু খুশিই লাগছে। কিন্তু কাল ফ্রাইডে শুনে যতোটা না খুশি লাগছে; আয়াশের রুমে যেতে হবে কথাটা ভেবে তার চেয়েও বেশি রাগ লাগছে। ইশার কিছুতেই মন চাইছেনা আয়াশের রুমে যেতে। কিন্তু সবার সামনে না-ও করতে পারছপনা। তাই বাধ্য হয়ে আয়াশের রুমে গিয়ে ঢুকলো। আয়াশ খাওয়ার মাঝখানে আড় চোখে উপরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো; ইশা নিজের রুমে ঢুকছে নাকি ওর রুমে ঢুকছে সেটা দেখার জন্য। ইশাকে আয়াশ ওর রুমে ঢুকতে দেখে মনে মনে হাসলো। তারপর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ও-ও খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো। আয়াশ রুমে এসে ইশাকে দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারলো ইশা বেলকনিতে আছে। তাই আয়াশ দরজাটা লক করে দিয়ে বেলকনির দিকে গেলো। ইশা বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ কয়েক সেকেন্ড নিরবে তাকিয়ে থেকে ও-ও এবার মুচকি হেসে ইশার পিছনে গিয়ে ইশার দু’পাশের গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়ালো। আয়াশকে নিজের এতোটা কাছে দেখে ইশা কিছুটা বিচলিত হলো। আয়াশকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ বললো—– ” ঠান্ডার মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? ভিতরে চল। ”

” আমার গায়ে সুইটার আছে। তাই ঠান্ডা লাগছেনা। তুমি কি বলবে সেটা বলো। আমি রুমে যাবো। ”

আয়াশ আগের মতো দাঁড়িয়ে থেকেই বললো—-
” আজ খুব বেশি তাড়ায় আছিস মনে হচ্ছে। এতো তাড়া কিসের?? হ্যাঁ?? ”

ইশা নিশ্চুপ…..

” কি হলো? কথা বলছিস না যে??

” কিছু বলার নেই। তাই চুপ করে আছি। আর তুমি এতোটা কাছে এসে দাঁড়িয়েছো কেন?? এতো বড় বেলকনি দেখতে পাচ্ছোনা?? দাঁড়ানোর জন্য আমার পিছনেই চোখে দেখলে??

” আমার উপর খুব রাগ, তাই না??

” হাহ, আমার সেই অধিকার কি আছে??

” বাহ! ভালো বলেছিস তো! তা কথাগুলো কোথা থেকে শুনলি বল তো??

” হাবিজাবি কথা না বলে আমাকে এখানে কেন ডাকা হয়েছে সেটা বললে বেশি খুশি হবো।

” যেটা বলার জন্য ডেকেছি সেটাই তো বলছি। আমার উপর এতো রাগ করেছিস কেন?? হুমমম??

” আমার রাগ ভাঙ্গানোর মতো কি মানুষ আছে যে আমি রাগ করবো?? ”

সাথে সাথে আয়াশ হুট করে ইশা কিছু বুঝে উঠার আগেই ইশাকে কুলে তুলে নিলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ইশা তো পুরোই থ। আয়াশ হঠাৎ এমন কিছু করবে ইশা ভাবতেও পারেনি। বুঝে আসতেই ও আয়াশের কুল থেকে নামার জন্য ছুটাছুটি করতে করতে বললো—-

” ক ক কি করছো কি?? নামাও আমায়। কুলে নিয়েছো কেন??

” বেশি লাফালাফি করলে বেলকনি দিয়ে সোজা নিচে ফেলে দিবো। সো, পড়ে যেতে না চাইলে ছুটাছুটি না করে চুপ থাক। ”

বলতে বলতে আয়াশ ইশাকে এনে সোজা বিছানায় শুইয়ে দিলো। তারপর নিজেও ইশার পাশে বসে এক হাত ইশার গায়ের উপর দিয়ে অন্য পাশে রাখলো। যাতে ইশা উঠতে চাইলেও উঠতে না পারে। ফের ইশার চোখে চোখ রেখে বললো —- “এবার বল, আমার উপর রেগে আছিস কেন?? ”

” তোমার মাথা টাথা কি সব গেছে?? কি করছো কি?? কেউ এসে দেখলে কি ভাববে কি?? ”

চলবে…….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here