হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৮
_________
“এবার বল, আমার উপর রেগে আছিস কেন?”
আয়াশের এতোটা কাছে এসে বসাতে ইশা কিছুটা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বললো—-
” তোমার মাথা টাথা কি সব গেছে?? কি করছো কি?? কেউ এসে দেখলে কি ভাববে কি?? ”
” দরজার দিকে তাকিয়ে দেখ, দরজা বন্ধ আছে। সো, প্যারা নিস না চিল থাক।
” কিহ?? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?? আমাদের দুজনকে এভাবে দরজা বন্ধ অবস্থায় এক ঘরে দেখলে সবাই কি ভাববে বুঝতে পারছো?? বিশেষ করে মিলি আপু। ও যদি ডিনার শেষ করে তোমার রুমে আসে আর যদি দেখে যে দরজা বন্ধ করা ভিতর থেকে। তাহলে কি ভাববে?? প্লিজ দরজাটা খুলে দিয়ে আসো।
” আমি তোকে রুমে ডেকেছি সবাই দেখেছে না?? তাই, এখন কেউ আমার রুমে বাদ দিয়ে আমার রুমের আশেপাশে ও আসবেনা। অতএব কে কি ভাববে না ভাববে সেটা না ভেবে বরং এটা বল যে আমার উপর রাগ করে আছিস কেন??
” হঠাৎ আমি রাগ করে আছি নাকি সেটা নিয়ে এতো উঠে পড়ে লাগলে কেন?? আর তাছাড়া আমার রাগ করা না করা নিয়ে আদৌ কি কারো কিছু যায় আসে?? আমার তো মনে হয় না।
” বাব্বাহ! আজকাল দেখছি অনেক কথা বলতে শিখে গিয়েছিস।
” কথা বলতে জানি না বলেই তো…..
” Shhhhhh, এক্সট্রা কোনো কথা নয়। জাস্ট আমি যা প্রশ্ন করবো তার উত্তর দে। আমার উপর রেগে আছিস কেন?? আচ্ছা রাগটা কি এতোদিন ধরে তোকে সময় দিইনি বলে? নাকি সন্ধায় ল্যাপটপ চেয়েছিলি ল্যাপটপ দিইনি বলে?? কোনটা?? আই মিন কোন কারণে রেগে আছিস আমার উপর?? ”
ইশা কিছু বলছেনা। শুধু চুপচাপ অপলকভাবে তাকিয়ে আছে আয়াশের মুখের দিকে।
” কি হলো? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে??
” দেখছি যে এতোদিনকার আয়াশ আর এই আয়াশের মধ্যে কতোটা পার্থক্য। ”
আয়াশ ইশার দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে বললো—-
” তা খুঁজে পেয়েছিস?? ”
” হুমমম। আচ্ছা এতোদিন এই আয়াশটা কোথায় ছিলো বলো তো??
” কেন? তোর মনে।
” হুহ্। সবসময় আদিক্যেতা। জুতো মেরে এখন গরু দান করতে এসেছে।
” জুতো মেরে গরু দান কোথায় করলাম?? আমি তো জুতো সবসময় বাসার বাইরেই খুলে আসি। আর তাছাড়া তোকে একটা চড় দিলে যেখানে পুরো বাড়ি মাথায় তুলিস। সেখানে জুতো মারলে তো পুরো ঢাকা শহর মাথায় তুলবি। হতে পারে আমাকে পুলিশেও ধরিয়ে দিবি।
” আরে পুলিশকে ধরিয়ে দিবো না তো। জাস্ট বড় আব্বুকে একটু করে বলবো।
” হ্যাঁ, যাতে তোকে একটা দিলে আমাকে চার গুণ করে ফিরিয়ে দেয়। তার থেকে পুলিশে দিস আমি সেফ থাকবো। আর যদি পুলিশ মেয়ে থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আজ গেলে কাল ফটিয়ে পরশু বের হয়ে যাবো। হাহাহাহা। ভালো না আইডিয়াটা??
” হ্যাঁ তোমরা ছেলেরা তো এটাই ভালো পারো। যখন যেই মেয়েকে পাও তাকেই ফটানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ো। আজ এ তো কাল ও। ছেলেরা আসলেই মৌমাছি। যার এক ফুলে পেট ভরে না। কারণ সে তো আবার মধু আহরণ করতে ভালোবাসে। তার কাজই তো মধু আহরণ করা। সে যেই ফুল-ই হোক না কেন?? ”
আয়াশ কোনো রকম অবাক হলোনা। কারণ ইশার রাগটা যে মিলিকে নিয়ে সেটা ও আগে থেকেই জানতো। ইনফ্যাক্ট এটাও জানতো যে ম্যাডামের রাগ ভাঙ্গাতে হলে অনেক কথা শুনতে হবে। আর হলোও সেটাই। ইশা যে মিলিকে নিয়ে খুব বেশি জেলাস সেটা ইশার কথাগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে। তবে আয়াশের কোনো রাগ হচ্ছে না ইশার উপর। বরং এটা ভেবে খুশি লাগছে যে ওর প্ল্যান কাজ করেছে। হ্যাঁ, আয়াশের প্ল্যানই ছিলো এটা। আসলে আয়াশ জানতে চেয়েছিলো যে ইশা ওকে কতোটা ভালোবাসে। যদিও আয়াশ আগে থেকেই জানতো ইশা ওকে ভালোবাসে। কিন্তু তার পরেও মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি কাজ করছিলো। যদি ওর ধারণা ভুল হয়। যদি ইশা ওকে ও যেভাবে চাই সেভাবে ভালো না বাসে। যদি ইশা ওকে শুধুমাত্র ভাই হিসেবে ভালোবাসে! তাই আয়াশ নিজের ইনসিকিউরড ফিলটা দূর করার জন্য মনে মনে একটা প্ল্যান করেছিলো;; আর মিলিকে সেই প্ল্যানে গুটি হিসেবে ব্যবহার করলো। এমন নয় যে মিলির সাথে সে ভালোবাসার নাটক করেছে। ইনফ্যাক্ট মিলিও জানে না যে আয়াশ প্ল্যান করেছে। আয়াশ তো শুধু ইশাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মিলির সাথে একটু বেশি সময় কাটিয়েছে মাত্র। আর সেটা দেখেই ইশা জেলাস ফিল করেছে। যাকে বলে প্রচন্ড জেলাস। এতোটাই জেলাস ফিল করছে যে আয়াশের উপর রাগ জমে গিয়েছে। যার রেশ ধরে গতো কয়েক দিন ধরে আয়াশের সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি ইশা। আয়াশও বুঝতে পেরেছিলো ব্যাপারটা। কিন্তু ইশাকে বুঝতে দেয়নি। ভেবেছিলো ইশা নিজের মুখে বলবে। বাট ইশা তো ইশাই। কথায় আছে না বুক ফাটে তবু মুখ ফুটেনা! ইশার ক্ষেত্রেও সেম। ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাবে। কিন্তু মুখে স্বীকার করবেনা। সেই আয়াশের সাথে রাগ দেখিয়ে যাবে। তাই আয়াশ বাধ্য হয়ে আজ প্রেয়সীর রাগ ভাঙ্গানোর দায়িত্ব নিয়েছে। ইশার কথাগুলো শুনে আয়াশ হাসলো। হেসে বললো—-
” আমাকেও অন্য ছেলেদের মতো মৌমাছি মনে হয় তোর??
” মনে হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি??
” হুমমম ঠিক বলেছিস। বাট ইশা! তোর কথা মতো আমি যদি মৌমাছি হয় তাহলে তুই ফুল রাইট?? তা আমি কি কখনও এজ এ মৌমাছি তোর উপর বসেছি?? আই হোপ আমি কি বলতে চাইছি তুই বুঝতে পেরেছিস নিশ্চয়? ”
সাথে সাথে ইশার টনক নড়লো। আয়াশের কথায় বুঝতে পারলো যে রাগের বসে ও আয়াশকে কি বলে ফেলেছে। তাই কাতর কণ্ঠে বললো —–
” আ ব ব আমি আসলে সেটা মিন করিনি। আমি জাস্ট…..
” আমি জানি, তুই কি বলতে চেয়েছিস আর কি বলতে চাসনি। তুই যে রাগের বসে এসব কথা বলে ফেলেছিস সেটা আমার ভালো করেই জানা।
” থ্যাংকস। আমাকে বুঝতে পারার জন্য। আসলে আমার এতোটাই রাগ হচ্ছে যে, কি বলে ফেলেছি নিজেও বুঝতে পারিনি।
” আমার উপর সবসময় এতো রাগ করিস কেন বল তো?? জানিস না বেশি রাগ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর??
” কি করবো?? রাগ না করলে তো কেউ বুঝতে পারেনা যে ইশা নামের কেউ এই বাড়িতে আছে।
” তাই….??
” হুমমমম।
” ২ সপ্তাহ ধরে মিলিকে বেশি বেশি সময় দিচ্ছি দেখে খুব রাগ হয়েছে আমার উপর,, তাই না??
” হয়েছে না; এখনও হচ্ছে। স্বাদের মামাতো বোনকে পেয়ে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছো একেবারে। কই? আগে তো মিলি আপু আসলেও আমাকে কখনো ইগনোর করোনি?? তাহলে এইবার কেন??
” আগে তো কখনো কাউকে পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়েনি কি করে বুঝায় তোকে সেটা। (মনে মনে)
” কি হলো? কি ভাবছো মনে মনে??
” ক ক কিছু না।
” তাহলে বললে না যে, মিলি আপুকে পেয়ে আমাকে ইগনোর করছো কেন??
” তোর কি মনে হয়? আমি তোকে সত্যি ইগনোর করেছি??
” মনে হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি??
” আচ্ছা সারা জীবন কি এভাবে মাথা মোটাই থেকে যাবি?? পাগলি কোথাকার। মিলি আমাদের গেস্ট৷ আর ওকে সময় দেওয়াটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতে এতো রাগ করার কি আছে??
” তাই বলে সবসময়?? অফিসে গেলেও দেখো ও তোমার পিছন পিছন চলে যাচ্ছে। বাড়িতে আসলেও দেখো তুমি অফিস থেকে আসার পর থেকে তোমার রুমেই বসে আছে। সবসময় ওকে সাথে রাখাটাও কি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?? ওওও আবার ওকে নিয়ে নাকি একসাথে মুভিও দেখা হয়। কই আমি বললে তো কখনো আমার সাথে মুভি দেখেনা কেউ?? তাহলে একসাথে মুভি দেখাটাও বুঝি দায়িত্ব??
” বাহ! ম্যাডাম তো দেখছি বেশ জেলাস। তা ম্যাম সাহেব কি জানেন না যে তার অপ্রিয় মানুষটি একটু গায়ে পড়া টাইপের?? তুই তো জানিসই, মিলি বরাবরই একটু গায়ে পড়া টাইপের। আমি চাইলেও কিন্তু ওর থেকে দূরে থাকতে পারিনা। আর তারপরেও যদি আমি ওকে বারণ করতাম আমার রুমে আসতে কিংবা আমার সাথে অফিসে না যেতে, তাহলে ও গিয়ে মা’কে বলতো। আর মা এতে কষ্ট পেতো। তুই কি চাস আমি মা’কে কষ্ট দিই?? তাই তো ওকে সহ্য করতে হচ্ছে। আর রইলো সন্ধায় মুভি দেখার বিষয়টা, তাই তো?? ট্রাস্ট মি, আমি তখন ওর সাথে কোনো মুভি দেখিনি। ও বানিয়ে বলেছে এটা।
” তাহলে আমি যখন ল্যাপটপের জন্য তোমার রুমে এসেছিলাম; তখন তোমরা কি দেখে হাসছিলে শুনি??
” একটা কমেডি সিন। আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছিলাম। আর মিলি আমার ল্যাপটপ নিয়ে সেটাতে মুভি দেখছিলো। হঠাৎ একটা কমেডি সিন দেখতে পেয়ে আমাকেও দেখার জন্য টেনে তুলে। তাই আমি বাধ্য হয়ে দেখেছিলাম সেটা।
” সত্যি বলছো তুমি??
” হান্ড্রেড পারসেন্ট। তবে ডোন্ট ওয়েরি। তের জন্য একটা গোড নিউজ আছে।
” কি গোড নিউজ??
” গোড নিউজটা হলো মিলিরা কাল চলে যাচ্ছে। তোর সব থেকে বড় শত্রুটা কাল বিদায় হয়ে যাবে।
” সত্যিইই…?? সত্যি বলছো তুমি?? কাল চলে যাবে ওরা??
ইশাকে খুশি হতে দেখে আয়াশ হাসলো। হেসে বললো—- ” হুমমম। মনে হচ্ছে কাল ওরা চলে যাবে শুনে অনেক খুশি হয়েছিস?? ”
” সে তো অবশ্যই। বাট অয়ন ভাইয়ার জন্য খারাপ লাগছে। অয়ন ভাইয়াকে অনেক মিস করবো। (মন খারাপ করে)
” বাহ! আমি মিলিকে সময় দিয়েছি বলে আপনি আমার সাথে রেগে বোম হয়ে আছেন। আর আপনি যে বলছেন অয়নকে মিস করবেন তার বেলায়?? নিজের বেলায় ষোলো আনা, আর আমার বেলায় চার আনা??
” আরে অয়ন ভাইয়া তো আমার ভাইয়া হয়। ও আমার জন্য প্রতিদিন এত্তো গুলো এত্তো গুলো চিপস আর চকলেট আনে। ও চলে গেলে আমার জন্য এভাবে বেশি বেশি চিপস আর চকলেট কে আনবে?? মিলি আপু আসার পর থেকে তুমি ও তো আমার জন্য এখন চিপস আর চকলেট আনোনা। আমার জন্য তাহলে চিপস আর চকলেট কে আনবে এখন থেকে??
” মিলি আসার পর থেকে তুই ও তো সন্ধায় আমার জন্য চা করে নিয়ে আসিস না। মিলি রোজ চা করে আনতে চায়। কিন্তু আমি বারণ করি। তাহলে ওকে আমি না যেতে বলি?? কারণ ও থাকলে আমাকে এটলিস্ট সন্ধায় আর চা না খেয়ে থাকতে হবেনা। কারণ তুই তো চা করে আনবি না।
” একদম মিথ্যা বলবানা। মিলি আপু আসার পরেও ৩দিন আমি তোমার জন্য চা নিয়ে এসেছি। আগে চা আনলে এক কাপ নিজে খেতে আরেক কাপ আমাকে খেতে বলতে। আর মিলি আপু আসার পর থেকে চা আনলে নিজে এক কাপ খাও আরেক কাপ মিলি আপুকে দাও। আরও বলে কিনা মিলি নে চা খা। ইশা চা এনেছে। হুহ্। আমি চা আনবো, আর খাবে কিনা ঐ মুলো। তাই আমি চা আনা বন্ধ করে দিয়েছি।
” হোয়াট…?? তুই মিলি থেকে সোজা মুলো বানিয়ে দিলি?? (হেসে)
” মিলি থেকে মুলো নয়; বরং মুলোর মতো ফর্সা বলেই মুলো বলেছি।
” কিহ..? ফর্সা বলে তুই ওকে মুলো বানিয়ে দিলি?? সত্যিই ইশা তুই পারিস ও বটে। মিলির উপর তোর এতোটাই রাগ যে, সোজা মুলো বানিয়ে দিলি। আর কি বলছিলি…? তুই চা করে আনলে আমি তোকে চা খেতে না বলে ওকে খেতে বলি, তাই তো?? আচ্ছা কেউ যদি আমার রুমে বসে থাকে, আর বাসার কেউ যদি আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে; তখন আমার চা টা আগে আমি না খেয়ে ওকেই তো খেতে দিতে হবে। আর সেখানে তুই দুই কাপ চা এনেছিলি, এট দা সেম টাইম মিলি আমার রুমে বসে আছে। আমি কি করে ওকে বাদ দিয়ে তোকে বলি যে ইশা বস চা খা। এটা কি ভালো দেখায়?? হ্যাঁ, তুই যদি তিন কাপ চা আনতি, আর আমি তোকে খেতে না বলতাম, যদি বলতাম এক কাপ নিয়ে যা। তাহলে আমার দোষ ছিলো। কিন্তু এখন দোষটা তো তোর। তুই মিলি আসার পর যেই তিন দিন চা এনেছিলি, সেই তিন দিনই ২ কাপ করে চা এনেছিলি। যখন ১দিন দেখছিস ২দিন দেখছিস যে আমি অফিস থেকে আসার পর মিলি আমার রুমে এসে বসে থাকে; তখন তিন দিনের দিন তোর উচিত ছিলো তিন কাপ চা নিয়ে আসা। আর তুই কিনা তারপরের দিন থেকে চা আনাই বন্ধ করে দিলি। এখন তুই বল দোষটা কি আমার? নাকি তোর??
” সেটাই ভাবছি৷ দোষটা আসলে কার বলো তো??
ইশার দুষ্টু কণ্ঠ শুনে আয়াশ রাগ নিয়ে বললো—-
” তুই আর মানুষ হবি না,, না?? ”
” আমি কি এখন মানুষ না? তোমার কি আমাকে দেখে গরু ছাগল মনে হচ্ছে?? আচ্ছা আমার জন্য এতোদিন চিপস আর চকলেট আনোনি কেন??
” আমি কি একবারও বলেছি তোর জন্য এতোদিন চিপস আর চকলেট আনিনি??
” তার মানে তুমি এতোদিনও আমার জন্য চিপস আর চকলেট এনেছিলে??
” হুমমম।
” কিহ? তাহলে দাও নি কেন আমাকে?? আর কোথায় সেগুলো??
” কাবার্ডের উপর তাকিয়ে দেখ।
সাথে সাথে ইশা কাবার্ডের উপর তাকালো। আর তাকিয়েই তো অবাক।
” ওয়া***ও! কতো গুলো চিপস আর চকলেট?? আমার তো এখনই জিবে জল চলে এসছে। দেখি সরো। আমি ঐগুলো নিবো।”
বলেই যেই না ইশা উঠতে চাইলো; অমনিই আয়াশ ওকে আবারও শুইয়ে দিলো।
” কোথায় যাচ্ছিস??
” আরে চিপস আর চকলেট গুলো নিতে যাচ্ছিলাম তো। তুমি আমাকে থামালে কেন??
” উঁহু। এখন নিতে পারবিনা। তার আগে আমাকে একটা কথা বল।
” কি কথা….??
” তুই তখন বাবাকে ল্যাপটপ আনতে বললি কেন??
” ও এই কথা?? ল্যাপটপ আনতে বলেছি কারণ আমার ল্যাপটপ লাগবে, তাই।
” ল্যাপটপ বুঝি আমার কাছে নেই?? আমার আমিটাই তো পুরো তোর। তাহলে তুই আবার ল্যাপটপ আনতে বললি কেন??
” কারণ তুমি তো তখন তোমারটা দাও নি। তাই আনতে বলেছি।
” তা সামান্য এক জোড়া জুতো লাগলেও যেখানে এই আয়াশকে বলিস, সেখানে আজ হঠাৎ বাবাকে বললি কেন ল্যাপটপ আনতে??
” সেটা তো তোমার উপর রাগ করে বলেছিলাম। এবার তো আমাকে চিপস আর চকলেট গুলো নেওয়ার জন্য উঠতে দাও।
” আগে বাবাকে যে ল্যাপটপ আনতে বললি তার কি হবে সেটা বল। তারপর আমি চিপস আর চকলেট গুলো নিতে দিবো।
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল সকালে বড় আব্বুকে বারণ করে দিবো ল্যাপটপ আনতে। বলবো তোমারটা দিয়ে আমার কাজ হয়ে গেছে। তাই আর ল্যাপটপ লাগবেনা। এবার হ্যাপি??
” হুমমমম।
তখনই দরজায় ঠুকা পড়লো। সাথে মিলির কণ্ঠও ভেসে আসলো —–
” ইশা! ইশা কি ব্যাপার? তুমি ঘুমাবেনা?? আর তোমরা দরজাই বা বন্ধ করে রেখেছো কেন??
” দেখেছো..?? মিলি আপু ডাকছে। মিলি আপু এখন কি ভা…..
” Shhhhh,,, তুই চুপ থাক।
ইশার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে কথাটা বললো আয়াশ তারপর চেঁচিয়ে বললো —- ” মিলি! ইশা এ্যাসাইনমেন্ট করছে৷ আর আমি ওকে হেল্প করছি। তাই দরজা বন্ধ করে রেখেছি। তুই গিয়ে শুয়ে পড়। ইশা এ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিট করে তারপর যাবে। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে রুমে যাচ্ছি। ”
বলেই মিলি সেখান থেকে চলে গেলো। মিলি চলে গিয়েছে বুঝতে পেরে ইশা বললো—-
” মিলি আপুকে মিথ্যা বললে কেন??
” তাহলে কি বলতাম শুনি…? আমরা এখানে রোমান্স করছিলাম?? নাকি এটা বলতাম যে, ইশা ম্যাডাম আমার উপর রাগ করেছে; তাই আমি উনার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছি। সেটা বললে বুঝি বেশি খুশি হতিস?? (বাঁকা হেসে)
” যদি দরজা খোলা রাখতে তাহলে এসবের কিছুই বলার প্রয়োজন পড়তোনা। এক মিনিট, আমার যে এ্যাসাইনমেন্ট আছে সেটা তুমি কি করে জানলে??
” আমাকে কি তোর মতো মাথা মোটা মনে হয়?? তুই যখন ল্যাপটপের জন্য আমার রুমে এসেছিলি আমি তখনই বুঝে গিয়েছিলাম যে তুই ল্যাপটপ নিতে আসার পিছনে কোনো না কোনো কারণ আছে। আর কারণটা যে এ্যাসাইনমেন্ট ছাড়া অন্য কিছু না আমি সেটাও জানতাম।
” তাহলে সব জেনেও আমাকে ল্যাপটপ দিলে না কেন তখন??
” আমি কি একবারও দিবোনা বলেছিলাম?? জাস্ট তোর সাথে একটু মজা করে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। আর তুই কিনা এতোটাই রেগে ছিলি যে সামান্য ল্যাপটপের জন্য আমার গলা টিপে ধরে ছিলি। ভাবা যায়??
” গলা টিপে ধরেছিলাম বেশ করেছি। আরও একশো বার ধরবো। ঐ মিলি গুন্ডিটা না আসলে তো মেরেই ফেলতাম। আমাকে ল্যাপটপ না দেয়া, তাই না?? ”
চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি