হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ১৯

0
140

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৯

_________
” আমি কি একবারও ল্যাপটপ দিবোনা বলেছিলাম?? জাস্ট তোর সাথে একটু মজা করে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। আর তুই কিনা এতোটাই রেগে ছিলি যে সামান্য ল্যাপটপের জন্য আমার গলা টিপে ধরে ছিলি। ভাবা যায়??

” গলা টিপে ধরেছিলাম বেশ করেছি। আরও একশো বার ধরবো। ঐ মিলি গুন্ডিটা না আসলে তো মেরেই ফেলতাম। আমাকে ল্যাপটপ না দেয়া, তাই না??

” এখন কিন্তু মিলি আসবেনা। এখন তুই চাইলে গলা টিপে ধরতে পারিস। আবার চাইলে মেরেও ফেলতে পারিস। কিচ্ছু বলবোনা। আর কেউ দেখবে ও না। নে শুরু কর। ”

বলেই আয়াশ মুচকি হেসে ইশার দু’হাত নিজের গলায় এনে রাখলো। কিন্তু ইশা আয়াশের গলা চেপে ধরার বদলে উল্টো হাত দুটো সাথে সাথে আয়াশের গলা থেকে সরিয়ে নিলো।

” কি হলো? মেরে ফেল। তুই না বললি মেরে ফেলতে চাস আমায়! তোর হাতে আমি একবার নয় দুই বার নয়; হাজারবার মরতে রাজি। নে মেরে ফেল আমায়।

” মনে হচ্ছে আজ খুব রোমান্টিক হয়ে গেছো?? ব্যাপার কি??

” তুই ই তো বললি আমাকে মেরে ফেলতে চাস। তাই বলছি। আর এখানে রোমান্টিকতার কি খুঁজে ফেলি তুই??

” সেটাই। আমার ই ভুল হয়েছে। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে, মিস্টার আরিয়ান মাহমুদ আয়াশের সাথে রোমান্টিক শব্দটা যায়না। যে কিনা রোমান্টিকের ‘র’ টাও জানেনা। আর সেই হবে রোমান্টিক?? সরি….. দিস ইস মাই ফল্ট।

” যা বলছিস ভেবে বলছিস তো??

” এখানে ভাবার কি আছে?? তুই যদি এতোই রোমান্টিক হতিস তাহলে আমাকে কখনো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলিনা কেন?? কখনও তো বলিসই নি যে ইশা চল আজ আমরা বাইরে ডিনার করবো। কিংবা চল আজ আমরা লং ড্রাইভে যাবো। তুই বল,, নিয়ে গিয়েছিস কখনো??

” ঘুরতে, ডিনারে, কিংবা লং ড্রাইভে কাকে নিয়ে যায় জানিস?? গার্লফ্রেন্ডকে। তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি যে তোকে আমি ঘুরতে নিয়ে যাবো ডিনারে নিয়ে যাবো কিংবা লং ড্রাইভে নিয়ে যাবো?? আমি কেন তোকে এসবে নিয়ে যাবো?? যদি এসবে যেতে চাস, তাহলে একটা প্রেম কর। তারপর বয়ফ্রেন্ড সব জায়গায় নিয়ে যাবে।

” সত্যি বলছিস?? আমি একটা প্রেম করবো??

” হ্যাঁ কর। তোকে ধরে রেখেছে কে?? শুধু ছোট মা শুনলে পা দুটো কেটে কুকুরকে খেতে দিবে এই আর কি।

” বলছিস না কেন, আম্মু না বরং তুই চাস না যে আমি প্রেম করি। (মনে মনে)

” কি রে? কি ভাবছিস মনে মনে??

” কিছু না। আচ্ছা রাত তো অনেক হয়েছে। আই থিংক এবার আমার রুমে যাওয়া উচিত। এবার তো আমাকে উঠতে দিবে নাকি?? নাকি আমাকে আজ তোমার রুমে রাখবে বলে ঠিক করছো?? হুম??

” আমার বয়েই গেছে তোকে আমার রুমে রাখতে। তোর রুম নেই? তুই আমার রুমে থাকবি কেন?? আমি তো জাস্ট মিলিকে নিয়ে তোর মনে যেই ভুল ধারণাটা ছিলো সেটা দূর করতেই তোকে এতক্ষণ বসিয়ে রেখেছি।

” বসিয়ে কোথায় রাখলে?? আমাকে তো শুইয়ে রাখলে।

” বসিয়ে রাখা আর শুইয়ে রাখা তো একই হলো, তাই না?? এখন আর বকবক না করে তুই রুমে যেতে পারিস। ”

বলতে বলতে আয়াশ ইশার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। ইশাও এবার শোয়া থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো—-

” এতক্ষণ তো খুব কেয়ার দেখাচ্ছিলে। আর এখন তাড়িয়ে দিচ্ছো?? থাকবোনা আর তোমার রুমে। চলে যাচ্ছি আমি। শুধু চিপস আর চকলেট গুলো নিয়ে দাও। এতো উঁচুতে আমি নাগাল পাবোনা।

” চকলেট আর চিপসের কথা সেই মনে রেখে দিলি,, না?? এসব হাবি জাবি জিনিস যে কে খাওয়া শিখিয়েছে তোকে?? এসব পঁচা খাবার কি করে খাস?? এগুলো মানুষে খাই?? ”

বলতে বলতে আয়াশ ওবাড্রপের উপর থেকে চিপস আর চকলেট গুলো নিয়ে ইশাকে দিলো।

” মানুষে না খেলেও আমি খাই।

” নে ধর। এবার আমার রুম থেকে গিয়ে আমাকে উদ্ধার কর।

” যাচ্ছি যাচ্ছি। ওয়াও! কতো গুলো চিপস আর চকলেট! আমার তো জিবে জল চলে এসেছে। এত্তগুলা চিপস আর চকলেট আনার জন্য ওমমমমমাহ 💋💋💋 ”

বলেই ইশা আয়াশের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো। লজ্জায় আর পিছনেও তাকালোনা। আয়াশ মনে মনে হাসলো ইশার কান্ড দেখে। পাগলিটা আনন্দের ছুটে কি করে নিজেও জানেনা। ইশা দরজা অব্দি যেতেই আয়াশ হঠাৎ ডেকে উঠলো —- ” ইশা! ”

সাথে সাথে ইশা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো।

” কিছু বলবে??

” চিপস আর চকলেট গুলো রেখে যা। ”

মুহূর্তেই ইশার হাসি মুখটা কালো হয়ে গেলো। ও তো রীতিমতো অবাক। হঠাৎ আয়াশ ওকে চিপস আর চকলেট গুলো রেখে যেতে বলছে কেন?? আয়াশ নিজেই তো এসব দিলো। তাহলে এখন রেখে যেতে বলছে কেন??

” হঠাৎ এই কথা বলছো কেন?? তুমি নিজেই তো দিলে, আবার হঠাৎ রেখে যেতে বলছো কেন??

” কারণ এগুলো এখন নিয়ে গেলে মিলির মনে কষ্ট আসবে। তাই এগুলো এখন এখানে রেখে যা। কাল ও চলে যাওয়ার পর নিয়ে যাস। ”

আয়াশের কথায় যুক্তি খুঁজে পেয়ে ইশা নিজেই চিপস আর চকলেট গুলো আয়াশের বিছানার উপর রেখে দিলো।

” আসলে আমার মনে ছিলোনা এটা। তুমি ঠিকই বলেছো। এতো গুলো চিপস আর চকলেট দেখলে মিলি আপু কষ্ট পাবে। তুমি এগুলো তুলে রাখো। আমি কাল এগুলো নিয়ে যাবো। ”

বলেই ইশা চলে যেতে নিলে আয়াশ আবারও ডেকে থামিয়ে দিলো।

” আর শোন!

” আবার কি….??

” নাচতে নাচতে রুমে ঢুকিস না যেন। মুখটা ভার করেই রুমে ঢুকবি। বুঝেছিস??

” কেন??

” কারণ তোকে হাসিমুখে দেখলে মিলি খারাপ কিছুও ভাবতে পারে। তাই মুখটা ভার করে রুমে ঢুকবি। আর মিলি যদি জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তোর মন খারাপ কেন?? তাহলে বলবি আমি বকেছি। বুঝা গেছে?? প্রয়োজনে আমাকে কয়েকটা গালিও দিয়ে দিস। এমনিতেও তুই তো মনে মনে আমার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলেছিস।

” জু হুকুম। আসছি তাহলে। গোড নাইইইট।

” গোড নাইট।

ইশা চলে গেলো। আয়াশ হেসে চিপস আর চকলেট গুলো আবারও ওবাড্রপের উপর রেখে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়াশের কথা মতো ইশা রুমের দরজায় এসে নিজেকে একটু দুঃখী দুঃখী বানিয়ে দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো। মিলি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছিলো। ইশাকে মন খারাপ করে রুমে ঢুকতে দেখে সাথে সাথে উঠে বসলো। চিন্তিত কণ্ঠে বললো —-

” ইশা! কি হয়েছে তোমার?? তুমি না এ্যাসাইনমেন্ট করছিলে?? তাহলে তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?? আয়াশ কি কিছু বলেছে?? ”

ইশা স্যাড ফেস করে বললো—– ” এ্যাসইনমেন্ট করার সময় আমি কিছু ভুল করে ফেলেছিলাম। আচ্ছা তুমিই বলো, এ্যাসইনমেন্ট রেডি করার সময় কিছু না কিছু ভুল তো হয়ই, তাই না?? আর তার জন্য এতো গুলো বকা দিতে হয়?? সামান্য ভুল করেছি বলে কুত্তাটা আমায় ইচ্ছে মতো বকেছে। তুমিই বলো, আমার মন খারাপ হবে না??

” আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো।

” তুমি কি মনে করেছিলে আপু??

” তোমাকে যখন আয়াশ ডাইনিংয়ে বলেছিলো ওর রুমে গিয়ে বসতে, আমি তখনই ধারণা করেছিলাম যে ও তোমার উপর কোনো কারণে রেগে আছে। হলোও সেটা। আচ্ছা মন খারাপ করোনা। কি করবে?? জানোই তো আয়াশ এমনই। আমাকে ও তো কতোবার বকে দেয়। আমি কি মন খারাপ করি?? এটার জন্য মন খারাপ করতে হয়না। এসো শুয়ে পড়বে। আয়াশ কেমন জানোই তো। ডোন্ট বি আপসেট। ”

বলতে বলতে মিলি ইশাকে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলো। ইশাও আর কিছু না বলে মন খারাপের ভান করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ইশাকে শুয়ে পড়তে দেখে মিলিও এবার নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লো। মিলি শুয়ে পড়তেই ইশা লাইট অফ করে দিয়ে হালকা হাসলো। যদিও খুব জোরে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু মিলি শুনবে তাই হাসছেনা।

” বাহ ইশা বাহ! তুই কি দারুণ এক্টিং টাই না করলি! তোর তো অস্কার পাওয়া উচিত। ধ্যাত, এটা যদি কোনো নাটক সিনেমার পার্ট হতো। তাহলে নির্ঘাত আমি অস্কার পেতাম। এক মিনিট, আচ্ছা ভাইয়া কিভাবে মিলি আপু কি বলবে সেটা একদম হুবহু জানতে পারলো?? ভাইয়া যেভাবে বলেছিলো, মিলি আপু ঠিক সেভাবেই রিয়েক্ট করলো। হাউ ইস ইট পসিবল?? এক কাজ করি, ভাইয়াকে একটা টেক্সট দিই। জিজ্ঞেস করি যে কিভাবে মিলি আপুর এক্সপ্রেশনটা ও জানতো?? ”

যেই ভাবা সেই কাজ। মিলি যাতে দেখতে না পায় তার জন্য ইশা মুখটা কম্বলের ভিতর ঢুকিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে আয়াশকে মেসেজ দিলো।

” আচ্ছা তুমি কি করলে জানলে মিলি আপু কেমন রিয়েক্ট করবে?? ”

সাথে সাথে ওপাশ থেকে মেসেজ আসলো।

” মানে…?? কি কি করে জানলাম আমি?? আর মিলিই বা কি বলেছে তোকে?? ”

আবারও ইশা মেসেজ দিলো।

” তুমি যেমনটা বলেছিলে আমি তেমনটাই করেছিলাম। মন খারাপের ভান করে রুমে এসেছিলাম। আর রুমে আসতেই মিলি আপু ঠিক সেভাবেই রিয়েক্ট করলো যেভাবে তুমি বলেছিলে। আচ্ছা তুমি কিভাবে জানতে মিলি আপু এভাবে রিয়েক্ট করবে?? ”

সাথে সাথে ওপাশ থেকে আবারও রিপ্লাই আসলো।

” তোর মতো মাথা মোটাদের এটা বুঝে আসবেনা। তাই এতো না ভেবে চুপচাপ ঘুমা।

” তোমার সবসময় আমাকে অপমান করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই,, না??

” আছে তো, সেটা এখন নয়; যখন সময় হবে তখন লাইভ দেখাবো। এখন আর মোবাইল না টিপে ঘুমা। আরেকটা মেসেজও যেন না আসে। মাইন্ড ইট। ”

ইশা মুখ বাঁকিয়ে অনেক গুলো কঙ্কালের আর রাক্ষস টাইপের, সেই সাথে মুখ বাঁকানোর ইমোজি পাঠিয়ে মোবাইলটা আবারও বালিশের পাশে রেখে দিলো। ইশার রিপ্লাই দেখে আয়াশ হাসলো।

” পাগলি। আমি মেসেজ দিতে বারণ করেছি বলে কি সব ইমোজি পাঠিয়েছে দেখো। ঘুমাতে বলেছি সেটাও আমার দোষ হয়ে গেলো। আমি যে ওর ভালোর জন্যই বলি সেটা কিছুতেই বুঝতে চায়না। আমি তো জানি, যদি আমি পুরো রাত ওকে রিপ্লাই দিতে থাকি; তাহলে ও পুরো রাতই মেসেজ করতে থাকবে। পাগলিটা বুঝেই না যে ওর এমন পাগলামি গুলো আমাকে কতোটা ভোগায়। আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসবে, কিন্তু মুখে স্বীকার করবেনা কিছুতেই। হাহাহাহা। ”

☘️☘️
পরের দিন,,, রোজকার মতো আজও অফডে হওয়ায় ইশা ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় সকাল ১০টা পেরিয়ে গেছে। ইশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসলো। নাস্তা আগে থেকেই ডাইনিংয়ে ছিলো। তাই কাউকে আর ডাকতে হয়নি। তবে আয়াশকে দেখতে না পেয়ে একটু অবাক হয়েছে। প্রতি শুক্রবারেই তো আয়াশ ওর সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে। তাহলে আজ কোথায় গেলো?? রোকসানা বেগম আর আনিসা বেগম কিচেনেই ছিলেন তখন। হয়তো দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইশা আয়াশকে দেখতে না পেয়ে আর চুপ থাকতে পারলোনা৷ বড় আম্মুকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।

” বড় আম্মু! বড় আম্মু! ”

সাথে সাথে রুকসানা বেগম কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলেন।

” কি রে মা! কিছু কি লাগবে?? ”

ইশা পাউরুটিতে জ্যাম লাগাতে লাগাতে বললো—- ” না তেমন কিছু লাগবেনা। আচ্ছা আয়াশ ভাইয়াকে দেখছিনা যে?? আয়াশ ভাইয়া কি উঠেনি এখনও?? ”

” উঠেছে তো। আয়াশ তো সেই সকালে উঠেছে। আসলে ও অয়ন আর মিলিকে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়েছে। তাই দেখছিস না। ”

তখনই আয়াশ আসলো। দুষ্টু কণ্ঠে বললো—-
” কি ব্যাপার! আমাকে মিস করছিস মনে হচ্ছে?? ”

বলতে বলতে আয়াশ ইশার মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

” আমার বয়েই গেছে তোমাকে মিস করতে। দেখছিলাম না তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। অয়ন ভাইয়া আর মিলি আপু নাকি চলে গিয়েছে?? তোমরা কেউ আমাকে ডাকোনি কেন??

” ওরা চলে যাচ্ছে সেখানে তুই কি করবি??

” কি করবো মানে?? ওরা এতো গুলো দিন আমাদের সাথে ছিলো। আর ওরা চলে যাচ্ছে তুমি বলছো আমি ওদের চলে যাওয়াতে কি করবো?? এটলিস্ট বিদায় দিতে তো পারতাম। আর ওরা-ও বা কেমন?? চলে যাচ্ছে আমাকে একটু ডাকলোনা পর্যন্ত?? আচ্ছা বড় আম্মু! ওরা নাহয় ডাকেনি। আর আমার মাদার বাংলা ও আমাকে ডাকবেনা জানি। কারণ উনি নাকি আমাকে ঘুম থেকে ডাকতে গেলে হাঁপিয়ে উঠে। কিন্তু তুমি আমাকে ডাকোনি কেন??

ইশার কথা শুনে রুকসানা বেগম মুচকি হেসে বললেন—-
” আরে আমরা সবাই এমনকি অয়ন আর মিলিও ডাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু আয়াশ ডাকতে দেয়নি।

” কেন….??

” কেন সেটা আমি কি বলবো?? তুই ওর থেকে জেনে নে। আমি বরং কিচেনে যায়। ”

বলেই রুকসানা বেগম মুচকি হেসে কিচেনে চলে গেলেন। বড় আম্মুর কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে ইশা এবার আয়াশকে জিজ্ঞেস করলো —-

” আমাকে ঘুম থেকে ডাকতে বারণ করেছিলে কেন?? ”

আয়াশ বসে বসে মোবাইল টিপছিলো। ইশার কথায় এক নজর ইশার দিকে তাকিয়ে আবারও মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে বললো —-

” তোকে বলতে বাধ্য নই।

” তুমি আসলেই অনেক খারাপ। দু’জন মানুষ আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে। আর তুমি আমাকে ডাকতে দিলেনা??

” ছোট মা! আমাকে এক কাপ চা দাও তো। তোমার মেয়ের বকবক শুনতে শুনতে আমার মাথাটা ধরে গেছে। ” (চেঁচিয়ে)

আয়াশের কথা শুনে রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম দুজনেই হাসলেন।

” ছেলে মেয়ে দুটো আর মানুষ হলোনা।

আনিসা বেগমের কথায় রুকসানা বেগম ও সাি দিয়ে মুচকি হেসে বললেন—
” একদম ঠিক বলেছো আনিসা। ওদের দুজনকে নিয়ে যে কি করি। হাহাহাহা। ”

আয়াশের কথা শুনে আয়াশের মা চাচী দুজন হাসলেও ইশার রাগ হলো। রেগে বোম হয়ে বললো—- ” তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বারবার কথা ঘুরাচ্ছো কেন?? আর কি বললে? আমার বকবক শুনতে শুনতে তোমার মাথা ধরে গেছে?? আমি কি বকবক করলাম শুনি?? ”

” তোর যে ভাঙ্গা ট্যাপ রেকর্ডার! সেটা শুরু হলে কি আর থামে??

” বড় আম্মু! দেখোনা তোমার ছেলে আমাকে কি বলছে। আমি নাকি ভাঙ্গা ট্যাপ রেকর্ডার। ”

ইশার কথায় আবারও দুই জা হাসলেন। ওদের জালায় আসলেই বাঁচা যায় না। যখনই দেখো ঝগড়া করতে থাকে।

” বড় আম্মুকে যে ডেকে বিচার দিচ্ছিস; চিপস আর চকলেট গুলো যে আমার রুমেই আছে সেটা মনে আছে?? আমি না নিয়ে দিলে তো নিতেও পারবিনা। ”

আয়াশের মুখে চিপস আর চকলেটের কথা শুনতেই ইশা নড়েচড়ে বসলো। সেই সাথে গলার সুরও বদলে ফেললো মুহূর্তেই।

” সরি সরি। আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে। আর বড় আম্মুকে বিচার দিবোনা। প্লিজ তুমি রাগ করোনা।

” বাহ! মুহুর্তেই গলার সুর চেন্জ?? এই জন্যই আমি বলি। তুই আসলেই একটা ড্রামা কুইন। ”

অন্য সময় হলে যদিও ড্রামা কুইন শব্দটা শুনে ইশা রিয়েক্ট করতো। কিন্তু এখন চিপস আর চকলেটের কথা ভেবে কোনো রিয়েক্ট করলোনা। বরং হাসিমুখে বললো—-

” সে তুমি যাই বলো। আচ্ছা চলো না আমাকে চিপস আর চকলেট গুলো একটু নিয়ে দিবে। এখন তো আর মিলি আপু নেই।

” তোর চিপস আর চকলেট নিয়ে দিতে গিয়ে আমার চা টা ঠান্ডা হয়ে যাক, তাই না?? আগে চা খাবো তারপর রুমে যাবো। রুমে গেলে তখন যাস, নিয়ে দিবো।

” কিন্তু…….

” এতো কিন্তু কিন্তু করলে নিজে গিয়ে নিয়ে নে। আমাকে বলিস না।

” আরে এভাবে বলছো কেন?? আমি তো এমনিই কিন্তু বলেছিলাম।

” গুড। তাহলে আমি যখন যাবো তখন আমার সাথে রুমে যাস। ওকে??

” হুমমমম।

ইশা মুখে ‘হুমমমম’ বললেও মনে মনে আয়াশের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর। কারণ আয়াশ ওকে সবসময় বকে। আবার চিপস আর চকলেট হলো ওর জান পরাণ। চিপস আর চকলেট ও কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চায় না; তাই চিপস আর চকলেটের জন্য কিছু বলছেনা। মুখ বুঝে সব সহ্য করছে।

চলবে…….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here