হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ৪

0
151

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৪

__________
আচ্ছা আচ্ছা চলে যাচ্ছি আমি। তবে চা টা খেয়ে নিস। অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি তো তাই।”

এই বলে ইশা বসা থেকে উঠে হাঁটা ধরলো। আয়াশ তাচ্ছিল্য হেসে আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। তবে দরজা অব্দি গিয়েও কেন যেন আবার পিছন ফিরে তাকালো ইশা।

” ভাইয়া আবারও বলছি। সত্যিই চলে যাবো??

” আমিও আবারও বলছি। তুই দয়া করে আমার রুম থেকে বিদায় হ।

” ওকে। আমি তাহলে যাচ্ছি। ও হ্যাঁ, একটা কথা তো তোকে বলতে ভুলেই গিয়েছি ভাইয়া। ঐ যে নিশি আপুর ফ্রেন্ড সুমন আছে না…! ও-ও কিন্তু আমাকে তোর মতো ভাইয়া ডাকতে মানা করেছে। আর আমাকে নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিয়েছে। আর মোবাইল নাম্বারও দিয়েছে। ও হ্যাঁ, ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টও দিছে মনে হয়। ভাবছি তুই যখন আমার সাথে কথা বলছিস না। এখন থেকে আর তোর রুমে আসবোনা। তোকে কেন শুধু শুধু ডিস্টার্ব করবো। আমি বরং সুমনের সাথেই কথা বলবো। যাই গিয়ে ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টটা এক্সেপ্ট করে ওকে একটা হাই বলে আসি। ভেবেছিলাম তোর সাথে বসে চা খেতে খেতে গল্প করবো। বাট তুই যখন আমার সাথে কথাই বলবিনা। তাহলে কি আর করা?? আসছি আমি। ”

আয়াশ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই কথা বলছিলো। ইশার লাস্ট কথাগুলো শুনে ভ্রু কুঁচকে ইশার দিকে তাকালো সে। ইশা কথাগুলো বলেই চলে যাচ্ছিলো।

” ইশা দাঁড়া। ”

ইশা সাথে সাথে থেমে গেলো। আসলে ইশা জানতো আয়াশ ওকে ডাকবে। তাই চলে যাওয়ার অভিনয় করছিলো মাত্র। আর যখনই শুনলো আয়াশ ওকে দাঁড়াতে বলেছে। অমনিই সে থেমে গেলো। পিছন ঘুরে তাকালো সে। তারপর আয়াশের চোখে চোখ রেখে সরশ গলায় বললো।

” ভাইয়া কিছু কি বলবি?? ডাকলি যে আবার??

” চা টা কি খাওয়ার জন্যই এনেছিস??

” হ্যাঁ, চা এনেছি যেহেতু নিশ্চয় খাওয়ার জন্যই এনেছি, তাই না??

” ওওওওও।

” এখন তাহলে যায় আমি….??

” যাবি…??

” হুমমমম।

” কারো জন্য চা আনলে যে চায়ের কাপ তার হাতে তুলে দিতে হয় সেটাও কি জানিস না??

” তুই-ই তো আমাকে চলে যেতে বললি। আমি হাতে তুলে দেওয়ার সময় কোথায় পেলাম??

” এখন তো সময় পেয়েছিস। এখন তুলে দে।

” তুই যখন বলছিস ঠিক আছে। তুলে দিচ্ছি। ”

এই বলে ইশা চাপা হেসে সেন্টার টেবিলের পাশে গিয়ে চায়ের একটা কাপ আয়াশের দিকে এগিয়ে দিলো। আয়াশও বিনা বাক্যে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো।

” এখন কি আমি যেতে পারি?? ”

ইশার কথা শুনে আয়াশ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো— ” খুব তাড়া দেখছি। তো তাড়া কি সুমনের সাথে হাই হ্যালো বলার জন্য? ”

ইশা লজ্জা পাওয়ার ভান করে লাজুক হেসে বললো— ” হুমমম। আসলে সুমন বোধহয় আমাকে ভালোবাসে। তাই ওকে একটু বাজিয়ে দেখবো আর কি। যদি মনে হয় হ্যাঁ। তাহলে আমিও…….

” এতটুকুতেই স্টপ যা। বাকিটা বলার দুঃসাহস ভুলেও করবিনা। ”

ইশা বাঁকা হাসলো। তবে সেটা আয়াশের অগোচরে। আয়াশের দিকে বরং অবাক দৃষ্টি রেখে বললো—

” কেন রে ভাইয়া! বাকিটা বললে কি হবে?? আমি তো সত্যিটাই বলছি।

” বেশি বকবক না করে চা টা শেষ কর। তারপর ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা আছে তোর সাথে।

” খুব বেশি ইম্পর্ট্যান্ট?? ”

আয়াশ এবার চোখ গরম করে তাকালো ইশার দিকে। ব্যাস, ইশা সাথে সাথে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে বললো—

” ওকে ওকে। খাচ্ছি। সবসময় এমন চোখ লাল করে তাকানোর কি আছে?? ”

বলেই ইশা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো। তারপর স্টাইলিশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলো। আয়াশ বাঁকা চোখে তাকালো ইশার দিকে। যেটা ইশার দৃষ্টি গোচর হলোনা। কিছু সময়ের মধ্যে দুজনের চা শেষ হয়ে গেলে মিনিট কয়েক নীরব থেকে আয়াশ এবার বলে উঠলো।

” ইশা! তুই বললি না যে আমি তোর সাথে কয়েকদিন ধরে ভালো করে কথা বলছিনা!

” হুমমমম। বলছিস না তো। বিয়ে থেকে আসার পর থেকে তো আমার সাথে কোনো রকম কথাই বলছিস না। শুধু ততটুকুই জবাব দিস যতটুকু আমি নিজ থেকে জানতে চাই।

” আচ্ছা তুই কি চাস আমি তোর সাথে আবারও আগের মতো কথা বলি?? তোর সাথে আবারও আগের মতো হয়ে যায়??

” হুমমমম। চাই তো। তুই জানিস না তুই আমার সাথে একদিন কথা না বললে আমার ভালো লাগেনা?? প্লিজ আমার অপরাধটা কি বল। আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। তারপরেও প্লিজ আগের মতো কথা বল আমার সাথে।

” ওকে তাহলে। আমি তোর সাথে আগের মতো করেই কথা বলবো। ইনফ্যাক্ট আগের থেকে আরও বেশি ভালো করে কথা বলবো। আগের থেকে আরও বেশি ক্লোজ হয়ে যাবো তোর সাথে। ততোটাই ক্লোজ হবো, যতোটা ক্লোজনেসনেস তুই কল্পনাও করতে পারবিনা। আগের থেকে অনেক বেশি সময় দিবো তোকে। বলতে পারিস আমার অফিস থেকে আসার পরের পুরো সময়টায় তোর। বাট তার জন্য তোকে একটা কাজ করতে হবে। ”

ইশা তো এমনিতেই আয়াশের আগের মতো করে ওর সাথে কথা বলার কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। এখন আয়াশের মুখ থেকে বলা আগের থেকে আরও বেশি ভালো করে কথা বলবে; আগের থেকে আরও বেশি করে সময় দিবে শুনে ইশার যেন খুশিটা আর ধরছেই না। আসলে ইশা আয়াশকে এতোটাই চোখে হারায় যে, আয়াশের একটু অবহেলাও সহ্য করতে পারেনা সে। ছোট বেলা থেকেই আয়াশের সামান্য পরিমাণ অবহেলাও ইশার বুকে গিয়ে লাগে। আয়াশ একদিন ইশার সাথে কথা না বললে সেদিন ইশা সারাদিন আয়াশের পিছন পিছন ঘুরতো। আর একটাবার কথা বলার জন্য আয়াশকে নানাভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতো। যখন দেখতো আয়াশ কিছুতেই ইমপ্রেস হচ্ছে না। তখন ইশা বসে বসে কান্না করতো। কিন্তু এখন যেহেতু বড় হয়ে গেছে; তাই চাইলেও তো আর বসে বসে কান্না করতে পারবেনা। আর এইজন্যই ইশা অনেক মন খারাপ করে থেকেছে গত দুই দিন। তবে আজ যখন আয়াশের মুখে এমন কথা শুনলো; ইশার মন খারাপটা মুহূর্তেই উবে গেলো। মনে তার এক ফালি রোদ উঁকি দিলো। হাসি হাসি মুখ করে বলেই ফেললো তাই।

” সত্যি বলছিস ভাইয়া! আমাকে আগের থেকেও বেশি সময় দিবি?? আর আমার সাথে আগের মতো কথা বলবি?? তার মানে এখন থেকে অনেক্ষণ ধরে গল্প করতে পারবো তের সাথে, তাই না??

” হুমমমম।

” ওকে। তাহলে আমার কি করতে হবে বল। তুই যা করতে বলবি আমি সব করবো।

” সত্যিই যেটা করতে বলবো সেটা করবি??

” অফ কোর্স করবো।

” ভেবে বলছিস তো??

” আরে হ্যাঁ রে বাবা আমি একদম ভেবে বলছি। তুই বরং কি করতে হবে সেটা বল।

” আচ্ছা ওয়েট…….

এই বলে আয়াশ উঠে আলমারি থেকে একটা পেপার বের করলো। তবে কিসের পেপার সেটা ইশার অজানা। আয়াশ পেপারটা নিয়ে ইশার মুখোমুখি খাটে বসলো। তারপর ইশার দিকে একটা কলম সহ কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো।

” নে, এটাতে সাইন করে দে। ”

ইশা অবাক হয়ে আয়াশের দিকে তাকালো। অবাক কণ্ঠে বললো— ” ভাইয়া এটা কিসের পেপার?? আর আমিই বা এতে সাইন করবো কেন??? ”

” তুই যাতে আমাকে আর ভাইয়া বলতে না পারিস সেটার একটা চুক্তিপত্র। রেজিস্ট্রি পেপার।

” মানে…??

” আ ব ব না মানে, ঐ যে তোকে বলেছিলাম না যদি আমাকে আগের মতো করে ফিরে পেতে চাস তাহলে তোকে একটা কাজ করতে হবে। এইটা হলো সেই কাজ। আই মিন এই পেপারে সাইন করাটাই হলো তোর সেই কাজ। ”

ইশা একবার আয়াশের হাতের পেপারটার দিকে তাকিয়ে আবারও আয়াশের দিকে তাকালো। অবাক কণ্ঠে বললো—

” এটাতে কি লিখা আছে??

” এই পেপারটাতে….??

” হুমমমম। এই পেপারটাতে কি লিখা আছে??

” আগে সাইন কর। তারপর বলছি।

” নাহ। আগে বল কি লিখা আছে পেপারটাতে। তারপর আমি সাইন করবো। আচ্ছা বাই এনি চান্স, তুই কি আমার প্রপারটি সব তোর নামে করে নিতে চাইছিস না তো ভাইয়া??

” ধরে নে তাই। তবে তোর প্রপারটি আমার নামে করবো না। বরং আমার প্রপারটিটাই চূড়ান্ত ভাবে আমার করে নিবো। এখন ঝটপট সাইনটা করে দে তো।

” তুই কিন্তু বলিসনি ওটাতে কি লিখা আছে। বল না ভাইয়া এই পেপারে কি লিখা আছে?? আচ্ছা তোর বলতে হবে না। আমাকে দে আমি নিজেই পড়ে দেখি এটাতে কি লিখা আছে। এদিকে দে তো পেপারটা। ”

কথাগুলো বলে ইশা যেই না আয়াশের দিকে কাগজটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। অমনিই আয়াশ কাগজটা পিছনে নিয়ে গেলো।

” উঁহু। তোর এটা পড়া হবেনা। আই মিন তুই পড়তে পারবিনা এটা। ধরে নে, এই পেপারটা না পড়ে সাইন করাটাও তোর অন্য একটা কাজ। সো, এটা না পড়েই তোকে সাইন করতে হবে।

” এ কি ভাইয়া! পেপারটা আমি পড়তে পারবোনা মানে?? পেপারটা যদি আমি না পড়ি তাহলে বুঝবো কি করে এটা কিসের পেপার?? আর আমি কিসের সাইন করছি।

” আচ্ছা লিসেন, আমিই বলছি তোকে এই পেপারে কি লিখা আছে।

” হুমমমম। বল তাহলে।

” এই পেপারটাতে কয়েকটা শর্ত লিখা আছে। অর্থাৎ এই পেপারে সাইন করবি মানে হলো তুই পেপারে থাকা আমার সব শর্তে রাজি আছিস। তবে শর্তগুলোর মধ্যে ১ নম্বরে যেই শর্তটা আছে, সেটা হলো এখন থেকে তুই আমার সব কথা শুনবি। ইনফ্যাক্ট আমি যাই বলবো তুই সবকিছু বিনা বাক্যে মেনে নিবি। আর দ্বিতীয় নম্বর শর্তটা হলো, তুই আমার কোনো কাজে বাঁধা দিতে পারবিনা। কোনো কাজে বাঁধা দিতে পারবিনা মানে কোনো কাজেই না। ইনফ্যাক্ট তোর সাথে কিছু করলেও বাঁধা দিতে পারবিনা। আর ৩ নম্বর শর্তটা হচ্ছে, এখন থেকে তুই আর আমাকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারবিনা। আমাকে তুই করেও বলতে পারবিনা। ভুলেও না। আমাকে তুমি করে বলতে হবে। বল রাজি??

” এক মিনিট ভাইয়া! আমি রাজি হওয়ার কথা আসছে পরে। আগে বল এসব কেমন শর্ত ভাইয়া?? প্রথম এবং দ্বিতীয় শর্তটা নাহয় বুঝলাম। বাট ৩ নম্বর শর্তটা আমি মানতে পারবোনা। তোকে ভাইয়া ডাকবোনা?? আর কি বললি… তোকে তুই করে বলতে পারবোনা?? তুমি করে বলতে হবে?? (হিহিহিহি) ভাইয়া! সত্যিই তুই আমাকে হাসালি। আমি তুমি করে বলবো? তাও তোকে?? ইমপসিবল। আমি প্রথম দুইটা শর্ত মানলেও তৃতীয় শর্তটা মানতে পারবো না। আমি কিছুতেই তোকে ভাইয়া বলাটা ছাড়তে পারবোনা। আর কিছুতেই তুমি করে বলতে পারবোনা।

” দরজাটা খোলাই আছে। তুই তাহলে আসতে পারিস।

” ভাইয়া….! (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে)

” আর একটা কথাও না। যেতে বলেছি যা। আর হ্যাঁ, এরপর থেকে আমার রুমে আসার আগে পারমিশন নিয়ে আসবি। আর ভুলে যাবি আয়াশ নামের তোর কেউ ছিলো। ”

ইশা বুঝতে পারলো আয়াশ ওর শর্ত গুলো নিয়ে খুবই সিরিয়াস। আয়াশ যেটা বলছে সেটা ওকে মানতেই হবে। সে যে শর্তই হোক। অন্যথায় আয়াশ ওর সাথে কখনো কথাই বলবেনা। ইশা ভাবনায় পড়ে গেলো সে এখন কি করবে এটা নিয়ে। আয়াশের শর্তে কি রাজি হবে?? কিন্তু আয়াশের শর্তে রাজি না হলে তো আয়াশ সত্যি সত্যি কথা বলবেনা ওর সাথে। আয়াশ ওর সাথে কথা বলবেনা, ইশা এটা কিছুতেই মানতে পারছেনা। হ্যাঁ, আয়াশের শর্তে রাজি হয়ে যাওয়াটাই বেটার হবে। কারণ ইশা চায়না আয়াশ আর ওর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হোক। সে সহ্য করতে পারবেনা আয়াশের অবহেলা। ইশা যখন এসবই ভাবছিলো; তখনই ইশার ভাবনার সুতো ছিড়ে আয়াশ বলে উঠলো।

” কি হলো?? এখনও বসে আছিস কেন?? যাআআআআ। ”

” যাবো তো। তার আগে পেপারটা দে আমি সাইন করে যাই। ”

মুহূর্তেই আয়াশের মুখে হাসি ফুটলো। আয়াশ খুশি হয়ে বললো— ” সত্যি বলছিস তুই?? তুই সাইন করবি এই পেপারে?? ”

” হুমমমম। করবো তো। বাট আমার কথা হলো তুই আমার সাইন করার কথা শুনে এতো খুশি হচ্ছিস কেন??

” সে তুই বুঝবিনা। এখন জলদি সাইনটা করে দে তো। ”

বলেই আয়াশ ইশার সামনে কাগজটা রেখে সেটার উপর একটা কলম রাখলো। তবে কাগজটা আয়াশ খোলাখুলি ভাবে ইশার সামনে রেখেছে তা কিন্তু নয়। কাগজটা রেখে সেটার উপর অন্য একটা সাদা কাগজ রেখে পুরো কাগজটাই ঢেকে দিয়েছে; পুরো কাগজটা এমনভাবে ঢেকে দিয়েছে যেন শুধু সাইন করার স্থানটাই দেখা যায়। ইশা এক নজর আয়াশের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে পেপারটাতে সাইন করে দিলো। আয়াশ এটা দেখে মুচকি হাসলো। সাইন করা হলে ইশা বললো।

” নে ভাইয়া সাইন করে দিলাম। এবার তুই খুশি??

” ইশুউউউউ! তুই কি শর্তের কথা ভুলে গিয়েছিস ??

” হুহ। আমার বয়েই গেছে।

” তার মানে তুই আমার শর্ত মানবিনা, তাই তো?? (রেগে)

” আরে আমি সেটা কখন বললাম?? মানবো তো। বাট আমার না কেমন কেমন লাগছে। হঠাৎ তুমি করে বলাটা কেমন লাগছে যেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আজ হঠাৎ তুমি করে বললে বাসার সবাই কি ভাববে?? ভাববে আমরা গোপনে বিয়ে করে নিয়েছি।

” হ্যাঁ, সে তো করেই নিয়েছি।

ইশা অবাক চাহনি নিয়ে তাকালো আয়াশের মুখ পানে। ইশার অবাক চাহনি দেখে আয়াশ থতমত খেয়ে গেলো। কি বলে ফেলেছে এটা সে?? দ্রুত কথা ঘুরানোর জন্য বললো।

” আ ব ব আরে যে যা ভাবার ভাবুক। তাতে আমাদের কি আসে যায়?? আর তাছাড়া সবাই আমাদের ঘরের মানুষই তো। তোকে এইসব নিয়ে ভাবতে হবেনা। আমি ম্যানেজ করে নিবো।

” আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না??

” কি কাজ??

” সবার সামনে তুই করে বলবো, আর যখন শুধু আমরা একা থাকবো তখন তুমি করে বলবো। হবে না?? ”

আয়াশ একটু ভেবে বললো— ” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে যতোটুকু সম্ভব ভাইয়া ডাকাটা এড়িয়ে চলবি। ওকে? ”

” হুমমমমম। ”

আয়াশ উঠে কাগজটা আবারও আলমারিতে তুলে রাখলো যেখান থেকে সে এটা নিয়েছিলো। তারপর সোফায় বসে ল্যাপটপটা কুলে নিয়ে আবারও কাজ করতে লাগলো। ইশা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বসে থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়াশ এক পলক ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।

” ইশুউউউউউউ! তুই তো গেছিস। হাহাহাহা। তুই ভাবতেও পারবিনা আমি তুকে কিসের পেপারে সাইন করিয়েছি। তুই কল্পনাও করতে পারবিনা যে তুই নিজের অজান্তেই পুরোটা আমার হয়ে গেছিস। আজ থেকে তুই পুরোটাই আমার। শুধুই আমার। হাহাহাহা। জাস্ট আরেকটা ছোট্ট কাজ করা বাকি আছে। যেটা আমি খাবার টেবিলে করে নিবো। ব্যাস, আর কোনো বাঁধা থাকবেনা তখন। আমি জানি ইশু! আমার এটা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করতাম বল। তোকে যে সেই ছোট থেকেই প্রচন্ড ভালোবাসি। তুই সেদিন যখন সুমনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলি; তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। ঠিক বুকে এসে লেগেছিলো তোর হেসে কথা বলাটা। আমি চাইনা তুই কারো সাথে বেশি ক্লোজ হ। তাই তো আগে থেকে আমার করে নিলাম। যাতে ঘুড়িটা আকাশে উড়লেও নাটাই টা আমার হাতেই থাকে। আর দিন শেষে ঘুড়িটাকেও আমার কাছে টেনে নিতে পারি। তাই তো গত ৩দিন ধরে তোর সাথে রেগে থাকার এই ছোট্ট অভিনয়টা করলাম। যাতে আমি বললেই তুই সাইন করতে রাজি হয়ে যাস। হাহ, সব যখন এখন ঠিকঠাকই হয়ে গেছে, আমি তাহলে কাজগুলো করে নি। ”

কথাগুলো নিজে মনে আওড়িয়ে আয়াশ মুচকি হেসে ল্যাপটপে কাজ করা শুরু করলো। আজ যেহেতু ইশাকে নিয়ে সব টেনশন মাথা থেকে নেমে গেছে। তাই আয়াশের কাজগুলো আজ ডিনারের টাইম হওয়ার আগে আগেই শেষ হয়ে গেছে। যেখানে অন্যান্য দিন রাত ১২টা বাজলেও কাজ শেষ হয়না সেখানে আজ রাত ৯টা বাজতেই আয়াশের সব কাজ শেষ। আয়াশ কাজ শেষ করে ল্যাপটপটা সাইডে রেখে উঠে দাঁড়ালো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গায়ের আলসামি ভাবটা ঝেড়ে নিলো একবার। বেশি সময় বসে থাকলে শরীরটাতে কেমন যেন আলসেমি ভাব চলে আসে।

চলবে……..
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here