হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৫
__________
রাত ১০টা,, আয়াশদের ফ্যামিলির সবাই ডাইনিংয়ে বসে আছে এই ডিনার করবে বলে। আসলে ওদের ফ্যামিলির একটা নিয়ম আছে। আর সেটা হলো, এখানে কেউ আগে আর কেউ পরে খায় না। সবাই একসাথে বসেই খায়। এমনকি আয়াশের মা আর বড় মা-ও আয়াশদের সাথে বসে একসাথে খাবার খায়। অন্য ফ্যামিলির মতো বউয়েরা খাবার পরিবেশন করবে; আর ছেলেরা খাবে; এই নিয়মটা আয়াশদের ফ্যামিলিতে নেই। রায়হান মাহমুদ, হাসান মাহমুদ, আয়াশ আর ইশা, ওরা সবাই ডাইনিংয়ে বসেছে। আর রুকসানা বেগম এবং আনিসা বেগম, ওরা দুজনে কিচেন থেকে একে একে সব এনে রাখছে টেবিলে। কারণ খেতে বসলে তখন তো আর ডাইনিং থেকে কিচেনে কিচেন থেকে ডাইনিংয়ে দৌড়াদৌড়ি করা যায় না। তাই এই ব্যবস্থা। যদিও কিচেনটা ডাইনিংয়ের সাথেই লাগানো। বাট খাবার টেবিল থেকে কিছুর জন্য উঠা রায়হান মাহমুদের পছন্দ না। আর তাই সবকিছু খাওয়ার আগেই এনে রাখে। যেহেতু রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম এখনও ডাইনিংয়ে বসেনি। তাই কেউ খাওয়া-ও এখনও শুরু করেনি। বরং চারজনেই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত। তখনই হঠাৎ আয়াশ আনিসা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
” ছোট মা! ও ছোট মা!
” হ্যাঁ বাবা বল।
” ছোট মা! আচ্ছা কেউ বিয়েতে রাজি থাকলে কোন কথাটা বলতে হয়?? আই মিন কোন কথাটার দ্বারা বুঝাতে হয় যে সে বিয়েতে রাজি।
” পাগল ছেলে! এটা কেমন প্রশ্ন?? এটা তো সবাই জানে। ইশা পর্যন্ত বলতে পারবে বিয়েতে রাজী থাকলে কোন কথাটা বলতে হয়। আর তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস??
” তাই…?
বলেই আয়াশ ইশার দিকে তাকালো।
” ইশা! ছোট মা বলছে বিয়েতে রাজি থাকলে কি বলতে হয় সেটা নাকি তুইও জানিস। আচ্ছা কি বলতে হয় রে?? না মানে আমার এই মুহূর্তে মনে নেই তো; তাই জানতে চাইছি।
” আরে সেটা না জানার মতো কি আছে?? বিয়েতে রাজি থাকলে সবারই তো একটা কথায় বলতে হয়। আর সেটা হলো কবুল।
” কি বলতে হয় বললি?? বকুল??
” আরে গাধা! বকুল নয় কবুল বলতে হয়।
” কি বলতে হয় বলেছিস? আমি আবারও শুনলাম না।
” ওহ হো, কবুল, কবুল, কবুল। এই কথাটাই ৩ বার বলতে হয়। বুঝলি…?? (চেঁচিয়ে)
” উফফফ, শুনেছি তো। এতো জোরে বলার কি আছে?? আর এতোবার বলার কি আছে?? কানটা মনে হয় ফাটিয়ে দিলি। ”
কথাটা বলেই আয়াশ কান চেপে ধরার অভিনয় করলো। তবে মনে মনে হাসিও পেলো বেশ। ব্যাস, ওর কাজটা হয়ে গেছে। এখন আর কোনো চাপ নেই। আয়াশের কান্ড দেখে আনিসা বেগম আর রুকসানা বেগম দুজনেই হাসলেন। ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে আর পারা যায় না। কিছু সময় পর রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম ডাইনিংয়ে বসলে সবাই খাওয়া শুরু করলো। আয়াশ খাবার খাচ্ছে ঠিকই; তবে চোখ দুটো ইশাতেই আটকে আছে। আয়াশ খাচ্ছে আর ইশাকে দেখে যাচ্ছে অপলকে। কারণ এই রমনীটি যে এখন থেকে শুধুই ওর। পুরোপুরি ওর।
সেদিনের পর কেটে গিয়েছে আরও পাঁচ পাঁচটা দিন। আয়াশ এখন ইশার সাথে আগের মতোই বিহেভ করে। আগের মতোই ইশাকে কেয়ার করে। ইনফ্যাক্ট আগের থেকে আরও বেশি কেয়ার করে ইশাকে। সবসময় চোখে চোখে রাখতে চায় ইশাকে। অফিসে যাওয়ার সময় আর অফিস থেকে এসে আগে ইশাকেই খোঁজবে। যেমনটা সে আগেও করতো। ইশাও বেশ খুশি আয়াশকে আগের মতো করে ফিরে পেয়ে। কারণ যেই কয়দিন আয়াশ ওর সাথে কথা না বলে ছিলো; ইশার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো দিন গুলোতে। তবে গত কয়েকদিন ধরে আয়াশের কিছু কিছু কাজ আর কিছু কিছু ব্যবহার ইশাকে বেশ ভাবায়। আয়াশ ওর সাথে এমন উদ্ভট কিছু কাজ করে যেগুলো আয়াশ আগে কখনো ওর সাথে করেনি।
রোজকার মতো আজও সন্ধায় আয়াশ অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। ইশা তখন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আম্মু আর ছোট আম্মুর সাথে গল্প করছিলো। কারণ এই বাসায় সবকিছু সিনেমাটিক হলেও; সিনেমাটিকভাবে ড্রয়িংরুমে টিভি সেট নেই। আর তার মেইন কারণ হচ্ছে রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদ, উনারা কেউ-ই চান না বাড়ির বড় ছোট সবাই একসাথে বসে টিভি দেখুক। এটা কেন যেন বেমানান মনে হয় দুই ভাইয়ের। তাই তো বসার ঘরে টিভি না রেখে প্রত্যেকের রুমে রুমে টিভি সেট করতে চেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান যুগ তো ডিজিটাল যুগ। যেখানে হাতে হাতে মোবাইল; সেখানে রুমে রুমে টিভির কি প্রয়োজন?? জাস্ট মোবাইলে ওয়াইফাই কানেক্ট করলেই তো টিভির সব মোবাইলে দেখা যায়। ইনফ্যাক্ট টিভির চেয়েও আরও বেশি কিছু জানা শোনা যায়। তাই আয়াশ আর ইশা কেউ-ই নিজেদের রুমে টিভি সেট করেনি। টিভি সেট করেছে শুধুমাত্র আয়াশের বাবা-মায়ের রুমে,, আর ইশার বাবা-মায়ের রুমে। আয়াশ বাসায় ঢুকে সবাইকে সোফায় বসে থাকতে দেখে, সে-ও ধীর পায়ে হেঁটে সোফায় এসে বসলো। তবে আয়াশকে আজ বেশ ক্লান্ত আর ফ্যাকশে দেখাচ্ছে। কেমন যেন মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। যেটা রুকসানা বেগম, আনিসা বেগম, আর ইশা, কারোরই চোখ এড়ালোনা। সবার চোখ এখন আয়াশের উপর। আয়াশকে এই সময় সোফায় এসে বসতে দেখে তিনজনেই একটু অবাক হলো। কারণ আয়াশ অফিস থেকে এসে কখনো এভাবে সোফায় বসেনা। সোফায় কেন?? আয়াশ অফিস থেকে এসে নিজের রুমের সোফায় বা খাটেও বসেনা। যতক্ষণ না ফ্রেশ হয়। কিন্তু আজ ফ্রেশ না হয়েই সোফায় এসে বসলো কেন?? এই প্রশ্নটাই সবার মনে। রুকসানা বেগম ছেলেকে এমন ক্লান্ত দেখে শেষমেশ জিজ্ঞেস করেই ফেললেন।
” কি রে বাবা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?? শরীর খারাপ লাগছে??
” হ্যাঁ,, তাই তো। আমিও সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। আয়াশ বাবা! বাবা তোর কি হয়েছে?? তোকে এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেন?? শরীর দূর্বল লাগছে?? আচ্ছা তুই বস। আমি তোর জন্য এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে আসি। কাজ করে শরীরটার কি হাল করেছিস হ্যাঁ?? বস, আমি আসছি। ”
কথাগুলো বলেই আনিসা বেগম অস্থির হয়ে যেই না সোফা থেকে উঠতে চাইলেন; অমনিই আয়াশ ক্লান্ত হেসে বলে উঠলো।
” না ছোট মা! তুমি কষ্ট করে শরবত আনতে যেয়োনা। আমি এই মুহূর্তে শরবত টরবত খাবোনা। তুমি বরং ইশাকে দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও। মাথাটা খুব ধরেছে আজ। ফ্রেশ হয়ে এক কাপ গরম চা খেতে পারলে খুব ভালো হবে। পারবেনা এক কাপ চা করে দিতে??
” দূর পাগল ছেলে! না পারার কি আছে?? তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ততক্ষণে চা বানিয়ে ইশাকে দিয়ে তোর রুমে পাঠাচ্ছি। কেমন?? ”
আয়াশ “হুমম” বলে দ্রুত পায়ে উপরে চলে গেলো। রুকসানা বেগমও উঠে আনিসা বেগমের পিছন পিছন কিচেনে চলে গেলেন। আসলে উনারা এমনই। যেখানেই যায় দুই জা একসাথে যায়। শুধু বসে রইলো ইশা। ইশা এখনও ঠাঁই বসে আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ততক্ষণই তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ না আয়াশ রুমে ঢুকলো।
” এর আবার কি হলো?? আচ্ছা ভাইয়ার কোনো রকম শরীর খারাপ করেনি তো?? ধুর, ও তো আবার ভাইয়া বলাটাও কমিয়ে দিতে বলেছে। এখন তো ভাইয়া ডাকলেই রীতিমতো শাসায়। আচ্ছা একবার কি রুমে যাবো?? না, থাক। এমনিতেও তো একটু পরে চা নিয়ে রুমে যেতে হবে। তখন না হয় দেখে নিবো কি হয়েছে। তবে ভাইয়াকে দেখে আমি যা বুঝতে পারলাম তার দ্বারা আমার এটা মনে হলো যে, ওর প্রচুর মাথা ব্যথা করছে। আর তাই ওকে এমন দেখাচ্ছে। কারণ ভাইয়ার যখনই প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে শুধুমাত্র তখনই ও এমন হয়ে যায়। একদম শুকনো মুখ করে ফেলে। ”
কিছু সময় পর চা বানানো হয়ে গেলে ইশা আয়াশের জন্য চা নিয়ে আয়াশের রুমে গেলো। আয়াশ ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসেছে। ইশা চা নিয়ে রুমে ঢুকলো। ইশাকে রুমে ঢুকতে দেখে আয়াশ ম্লান হাসলো। ইশা কয়েক সেকেন্ড আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চায়ের কাপটা আয়াশের দিকে এগিয়ে দিলো। আয়াশও হেসে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিতে দিতে বললো।
” ইশা! বস এখানে। ”
বলেই আয়াশ নিজের পাশে ইশারা করলো। অর্থাৎ ইশা যেন সেখানেই বসে। ইশাও বাধ্য মেয়ের মতো আয়াশের ইশারাকৃত জায়গায় বসে পড়লো।
” আচ্ছা ভাইয়া! তোর সব কথা আম্মু এক কথায় কেন মেনে নেয় বল তো?? ”
সাথে সাথে আয়াশ চোখ লাল করে তাকালো ইশার দিকে। যেটা দেখে ইশার বুঝতে দেরি হলোনা সে কোন ভুলটা করেছে।
” উফস সরি সরি। ভুল হয়ে গেছে আমার। আর হবেনা এমন। ”
আয়াশ সম্মতি সূচক মাথা উপর নিচ করলো। যার মানে হলো সেই যেন হয়। আর যেন ভুল না হয়। এরপর কিছু সময় দুজনের মাঝে নিরবতায় কেটে গেলো। নিরবতার সুতো কাটিয়ে আয়াশই বলে উঠলো এবার।
” কি যেন বলছিলি??
” ও হ্যাঁ, বলছিলাম যে আম্মু তোমাকে এতো বেশি ভালোবাসে কেন?? আর তোমার সব কথায় বা বিনা বাক্যে মেনে নেয় কেন??
” ওমা ভালোবাসবেনা? আর মেনে নিবে না?? মেয়ের জামাই বলে কথা। ”
আয়াশ ঘুরের মধ্যে কি বলে ফেলেছে সে নিজেও জানেনা। হঠাৎ ইশার দিকে তাকাতেই ইশার অবাক চাহনি চোখে পড়লো তার। মুহূর্তেই আয়াশের খেয়াল হলো সে একটু আগে কি বলে ফেলেছে। ইশা অবাক চাহনি নিয়ে অবাক কণ্ঠে বললো— ” মানে….?? ”
আয়াশ সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে নিলো– ” কিছু না। ও তুই বুঝবিনা। ”
” সেটাই। আমি তো এখনও পিটার খাই। বুঝবো কি করে?? ”
আয়াশ বুঝতে পারলো ইশা কথাটা ওকে পিন্স মেরে বলেছে। কারণ সে ইশার কথাকে সবসময় সবকিছুতে ছোট বলে উড়িয়ে দেয় বলে ইশা প্রায়ই এমন অভিমান করে। আয়াশ হেসে বললো।
” এ মা, তাই নাকি রে?? আমাকে আগে বলবিনা?? তাহলে আমি অফিস থেকে আসার সময় চকলেট আর চিপস না এনে পিটার নিয়ে আসতাম। আচ্ছা কোনো ব্যাপার না। কাল যাওয়ার সময় সব চকলেট আর চিপস গুলো নিয়ে যাবো। তারপর আসার সময় একটা পিটার নিয়ে আসবো তোর জন্য। ভালো হবেনা?? ”
অন্য সময় হলে আয়াশের এমন টেট মারা কথা শুনে হয়তো ইশা রাগ করতো। কিন্তু এখন রাগ করলোনা। কারণ কথার মাঝখানে যে আয়াশ চকলেট আর চিপসের নাম নিয়েছে সেটাই ইশার সব রাগ উড়িয়ে দিয়েছে। ইশা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
” ভাইয়া! সত্যিই আমার জন্য চকলেট আর চিপস এনেছিস??
” আবার ভাইয়া…??
” আরে রাখ তো এইসব। আগে আমার চকলেট আর চিপস চাই।
” ওমা, এমন ভাবে বলছিস যেন আগে কখনো আনিনি। আজ তুরি না প্রথমবার এনেছি যে এমন খুশি হচ্ছিস?? রোজ তো আনি।
” আরে প্রতিদিন তো আনলে আমাকে ড্রয়িং রুমেই দিয়ে আসো। বাট আজ দিলে না তাই ভাবলাম আনোনি। এখন যেহেতু এনেছো তাহলে দেরি করছো কেন? তাড়াতাড়ি দাওওও। ”
বলেই ইশা আরও একটু আয়াশের সামনে গিয়ে বসলো। আয়াশও এবার বাঁকা হেসে মুখটা একদম ইশার কানের কাছে নিয়ে এসে আস্তে করে বললো।
” তার আগে একটা কাজ করতে হবে তোমায় ডিয়ার। ”
আয়াশ কথাটা ইশার এতোটা কাছে মুখ নিয়ে এসে বলেছে যে, আয়াশের সব নিশ্বাস ইশার গলার কাছে পড়ছে। আয়াশের এমন উষ্ণ নিশ্বাস পড়ায় ইশার সারা শরীর কেমন যেন হিম শীতল হয়ে গেছে। তবে এটা এমন আর নতুন কি?? গত কয়েকদিন ধরে আয়াশ রোজ-ই এমন হুটহাট ইশার কাছে চলে আসে। আর এমন ক্লোজ হয়ে কথা বলে, যার ফলে ইশা এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে আয়াশের হুটহাট করা কাজগুলোতে। তবে মাঝে মাঝে অস্বস্তিও হয় খুব। কিন্তু আয়াশের শর্তের কথা মনে করে আয়াশকে কিছু বলেনা। তবে ইশা এটাও খেয়াল করেছে যে আয়াশ ওর কাছাকাছি আসলে যেমন অস্বস্তি লাগে; ঠিক তেমনি ভালো লাগাও কাজ করে আয়াশের প্রতি। একদিকে আয়াশের উষ্ণ নিশ্বাস গুলো সব ইশার গলায় পড়ছে; অন্য দিকে আয়াশ এখনও ঠাঁই আগের মতো করে ওর দিকে ঝুকে আছে। দুইটা মিলিয়ে ইশার কাঁপাকাপি অবস্থা। ইশা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
” ক ক কি কাজ করতে হবে?? ”
আয়াশ আবারও এক ফসলা বাঁকা হেসে নিয়ে মুখটা আরও একটু ইশার কানের কাছে নিয়ে পিসপিসিয়ে বললো।
” যা বলবো তাই করবি তো?? ”
ইশা আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বললো—
” হুমমমম। ক ক করবো। চিপস আর চকলেটের জন্য আমি সব করবো। ”
আয়াশ মুখটা আগের মতো রেখেই বললো—-
” সত্যিই করবি?? আই মিন যা বলবো সব করবি?? এভরিথিং??
” হুমমমমম।
” তাহলে আজ রাতটা আমার সাথে থাকতে বললে, থাকবি তো?? খুব ভালোবাসবো। খুব। কি? রাজি তো?? ”
ইশা এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও আয়াশের এহেন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলো। ইশা ভাবতেও পারেনি আয়াশ ওকে এমন কিছু বলবে। তাও আবার সামান্য চিপস আর চকলেটের জন্য। আয়াশের প্রশ্নটা ইশার মস্তিষ্কে পৌঁছানোর সাথে সাথে ইশা ভয় পেয়ে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে গেলো। আয়াশের কথাটা ইশার মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথেছে যে, ইশার হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে। শেষ পর্যন্ত আয়াশের কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনবে ইশা সেটা ভাবতেও পারেনি। তাই সে আয়াশের কথায় ভয় পেয়ে আমতা আমতা করতে করতে লাগলো—” আ ব ব আব আব ”
ইশার এমন ভীতু ফেস দেখে আয়াশ এবার জোরে হেসে দিলো। আয়াশ তো হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে।
” (হাহাহাহা) ইশুউউউ! (হাহাহা) ভয় পেয়ে গেছিস, তাই না?? ”
একে তো এমন একটা সেন্সিটিভ কথা শুনে ইশার এখনও কান জলছে; তার উপর আয়াশ এমনভাবে হাসছে। ইশা এবার কোমরে দুই হাত রেখে কয়েক সেকেন্ড আয়াশের কর্ম দেখে তারপর রাগী গলায় বললো।
” খুব হাসি পাচ্ছে, না?? খুব হাসি পাচ্ছে?? আমাকে তো পুরো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। আমাকে ভয় লাগিয়ে দিয়ে এখন তোমার হাসি পাচ্ছে?? ফাজিল ছেলে।
” কি করবো বল। তোর সামান্য কাছে যাওয়াতে যেই হারে কাঁপাকাপি করছিলি। ভাবলাম এটা বললে তুই কি রিয়েক্ট করিস দেখি। আর কেমন ভয় পাস তাও দেখি। এন্ড আমি শিওর ছিলাম, তুই এটা শুনে নির্ঘাত ভয় পাবি। হালকা কচি করে হার্ট অ্যাটাকও করতে পারিস। তাই তোকে ভয় দেখানোর লোভটা আর সামলাতে পারিনি। হাহাহাহা। কেমন দিলাম বল তো??
” একেবারে জঘন্য। ফাউল ছেলে কোথাকার। এমন কথা কেউ বলে?? আমার তো এখনও কান জলছে। মন চাচ্ছে একটা বারী দিয়ে মাথা ফাটায় দিই। আমার এমন রাগ হচ্ছে, এমন রাগ হচ্ছে…….. আর কোনোদিন যদি এমন কথা বলেছো তো; তাহলে দেখবে।
” তাই…..?? তা কি করবে শুনি??
” বেশি কিছু না। জাস্ট চুলগুলো সব একটা একটা টেনে ছিড়বো। হুহ্। ”
ইশার মুখ বাঁকানো দেখে আয়াশ হাসলো।
” নট বেড। ”
কথাটি বলে আয়াশ উঠে অফিসের ব্যাগ থেকে চিপস আর কয়েকটা চকলেট বের করে আবারও আগের জায়গায় বসে পড়লো। তারপর ইশাকে দেখিয়ে বললো।
” এখন বল, চিপস আর চকলেট লাগবে??
” আবার জিগায়। না দিয়ে এখনও বলছো লাগবে কিনা?? দাও। ”
বলেই ইশা ছু মেরে আয়াশের কাছ থেকে চিপস আর চকলেট গুলো নিতে চাইলো। কিন্তু আফসোস, তার আগেই আয়াশ এসব পিছনে নিয়ে গেছে। ইশা এবার ধপাস করে আয়াশের সামনে বসে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো।
” কি হলো? আমার জন্য এনেছো বলে এখন দিচ্ছোনা কেন?? দাও না….!
” উঁহু। আমি তো আগেই বলেছি। এসব নিতে চাইলে আগে একটা কাজ করতে হবে।
” আবার….??
” আরে কোল ডিয়ার। তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই না।
” তাহলে..??
” আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে।
” তো…??
” একদম সিম্পল। আমার মাথাটা টিপে দিলে আমি এসব তোকে দিয়ে দিবো।
” তার মানে এখন চিপস আর চকলেট নিতে তোমার মাথা টিপতে হবে??
চলবে…….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি