হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৬
__________
” তার মানে এখন চিপস আর চকলেট নিতে তোমার মাথা টিপতে হবে?? ”
ইশার কথা শুনে আয়াশ হেসে বললো—- ” যদি বলি তাই। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমার মাথা টিপে দিবো। এখন দাও তো আমার চিপস আর চকলেট। আগে এসব দিবা; তারপর আমি মাথা টিপে দিবো। নয়তো দিবো না। ”
আয়াশ হেসে ইশার হাতে চিপস আর চকলেট গুলো দিয়ে দিলো।
” পাগলি, এই নে। ”
ইশা তো চিপস আর চকলেট পেয়ে সেই খুশি। কারণ চিপস আর চকলেট হলো ইশার প্রিয় খাবার। তবে যেই সেই চকলেট না। ডরি মিল্ক চকলেট হতে হবে। আর চিপসও যেই সেই চিপস হলে হবেনা। চিসপাপ চিপসটাই হতে হবে। আর আয়াশ ইশার এই দুটি পছন্দের খাবার রোজ অফিস থেকে আসার সময় সাথে আনতে কখনোই ভুলেনা। ইশা চিপস আর চকলেট পেয়ে ভুলেই গিয়েছে আয়াশের মাথা টিপার কথা। ইশা যখন চিপস আর চকলেট নিয়ে ব্যস্ত; তখনই আয়াশ বলে উঠলো।
” ইশুউউউউ! ভুলে গিয়েছিস কথা কি ছিলো? ”
ইশা চিপস আর চকলেটের জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে এক গাল হেসে বললো—
” কোনো কথা ছিলো কি?? আমার তো মনে পড়ছেনা। আচ্ছা মনে পড়লে তখন আবার আসবো। এখন আমি যাই, হ্যাঁ?? চিপস আর চকলেট গুলো না খেলে ওরা আবার মাইন্ড করবে। বাইইইই…..”
কথাগুলো বলেই ইশা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো; এই চলে যাবে বলে। আয়াশ কিছু বলছেনা। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশার হাস্ব্যোজ্জল মুখটির দিকে। ইশা চলে যেতে নিলে আয়াশ পিছন থেকে ডেকে উঠলো।
” ইশা..! ”
আয়াশের আদুরে কণ্ঠে ডাক শুনে ইশা সাথে সাথে থেমে গিয়ে পিছনে তাকালো।
” কিছু কি বলবে??
” নাহ,, কিছু না। শুধু চায়ের কাপটা নিয়ে যা। ”
ইশা হেসে দিয়ে আবারও ফিরে এসে আয়াশের থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চলে গেলো। আয়াশ এটা দেখে মুচকি হাসলো।
” পাগলি। কখন যে বড় হবে। আর কখন যে আমার ফিলিংসটা বুঝবে আল্লায় জানে। মাথা ব্যথা করছে বলে ওকে দিয়ে রুমে চা পাঠাতে বললাম। টিপে না দিক; এট লিস্ট ও পাশে থাকলে মনে তো শান্তি পেতাম। বাট ম্যাডাম তো মাথা টিপে দেওয়া দূরে থাক। উল্টো চিপস আর চকলেট পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে চলে গেলো। একবার জানতেও চাইলোনা যে সত্যিই আমার মাথা ব্যথা করছে কিনা। হাহ, কি আর করা। আজ আর বসে থাকাটা পসিবল হবেনা। যাই, আমি বরং শুয়ে থাকি। শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে। আর মাথাটাও মনে হচ্ছে এক্ষুনি ফেটে যাবে। আজ হঠাৎ এমন মাথা ব্যথা করছে কেন কি জানি। ”
কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করে আয়াশ বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর কিছু সময় উপরের ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে চোখটা বন্ধ করে নিলো। চোখটাও আজ কেন যেন খুব জলছে। তাই আর মেলে রাখতে না পেরে চোখ জোড়া বন্ধ করে এক হাত চোখের উপর রাখলো। এভাবেই কেটে গেলো মিনিট দশেক সময়। হঠাৎ মাথার চুলে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আয়াশ চমকে তৎক্ষনাৎ চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে চোখ জোড়া মেলে তাকালো। আর তাকিয়েই অবাক হলো। কারণ মাথার চুলে হাত দেওয়া ব্যক্তিটি আর কেউ নয় ইশা। হ্যাঁ, ইশাই আয়াশের মাথার কাছে বসে আয়াশের চুলে হাত দিয়েছে। আসলে ইশা যখন আয়াশের রুম থেকে বের হচ্ছিলো তখন এক নজর আয়াশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর আয়াশকে দেখেই ইশার বুঝতে দেরি হলোনা আয়াশের সত্যিই মাথা ব্যথা করছে। তাই আয়াশের রুম থেকে গিয়ে কিছুতেই বসে থাকতে পারছিলোনা। শুধু আয়াশের মাথা ব্যথার কথা ভেবে চটপট করছিলো। তারপর এক সময় আর বসে থাকতে না পেরে চলেই আসলো আয়াশের রুমে। ইশা আসলে এমনই। আয়াশ যেমন ইশার সামান্য কষ্টও সহ্য করতে পারেনা। ইশাও ঠিক তেমনি আয়াশের বিন্দু মাত্র কষ্ট সইতে পারেনা। আর ইশা জানে, আয়াশ মাথা ব্যথাটা কখনোই নিতে পারেনা। মাথা ব্যথা করলে আয়াশ তখন একদম ছোট বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারেনা। কখনো কখনো তো মাথা ব্যথা করলে আয়াশ নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ে ফেলতে চায়। আবার কখনো বা নিজের মাথাটা দেওয়ালের সাথে গিয়ে বারি খাওয়ায়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আয়াশের এই মাথা ব্যাথার ব্যাপারে বাসার কেউ-ই জানেনা। আসলে একেবারে যে জানে না তা কিন্তু নয়। আয়াশের যে মাথা ব্যথা করে মাঝে মধ্যে সেটা জানে। কিন্তু আয়াশ যে মাথা ব্যাথা করলে তখন এমন পাগলামো করে সেটা কেউ জানেনা। এই ব্যাপারে ইশাই শুধু অবগত। তাই তো আয়াশের মাথা ব্যথার কথাটা শুনে আর আয়াশকে এমন ফ্যাকাশে দেখে, ইশা নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকতে পারলোনা। আবারও ছুটে আসলো আয়াশের রুমে। আর এসেই আয়াশের মাথার কাছে বসে আয়াশের মাথায় তার কোমল হাতটি রাখলো। আর সাথে সাথে আয়াশ চোখ মেলে তাকালো হাতের মালিকের দিকে। আয়াশকে এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা এবার বলে উঠলো।
” কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?? আমি কি এলিয়েন নাকি যে এভাবে তাকিয়ে দেখছো?? ”
ইশার কথায় আয়াশ কোনো রকম চোখ সরালোনা। বরং আরও গাঢ়ো দৃষ্টি রেখে ইশার উপর তারপর বললো।
” না, ঠিক তা নয়। তুই এলিয়েন হতে যাবি কেন?? আমি তো দেখছি আমার ইশুকে। যে কিনা আমার কষ্টের কথা ভেবে রুমে গিয়ে থাকতে না পেরে আবারও আমার কাছে ছুটে এসেছে।
” তোমার ইশু মানে??
” আ ব ব না কিছু না। আচ্ছা এখন এইটা বল যে, তুই না চলে গেলি চিপস আর চকলেট খেতে। ওসব না খেলে নাকি ওরা মাইন্ড করবে। তো তাহলে এখন এসব না খেয়ে এখানে আসলি কেন?? ওরা মাইন্ড করবেনা বুঝি??
” ওসব তোমাকে ভাবতে হবেনা। এখন কি আজাইরা বকবক করতেই থাকবে?? নাকি মাথা টিপতে দিবে??
” সে আর বলতে? দে দে। তাড়াতাড়ি টিপে দে। মাথাটা খুব ব্যথা করছে। ”
বলেই আয়াশ ইশার হাতটা ধরে নিজের কপালে রেখে দিলো। ইশাও মুচকি হেসে তার কোমল স্পর্শে আয়াশের মাথা টিপতে লাগলো। তবে এক নাগাড়ে টিপে যাচ্ছে তাও কিন্তু নয়। ক্ষণে ক্ষণে টিপছে। আবার ক্ষণে ক্ষণে মাথার চুল গুলো টেনে দিচ্ছে। ইশা আয়াশের মাথা টিপছে; আর আয়াশ এক দৃষ্টিতে ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে আয়াশ বরাবরই ইশার মাথা টিপে দেওয়াতে মুগ্ধ। শুধু আজ নয়; এমন প্রায়ই হয়। অর্থাৎ প্রায়ই আয়াশের মাথা ব্যথা করে; আর সবসময়ই ইশা আয়াশের মাথা টিপে দেয়। ঠিক এখন যেভাবে টিপ দিচ্ছে সেভাবে। তবে বাসার কেউ-ই জানে না যে আয়াশের প্রায়ই মাথা ব্যথা করে। বাসার সবাই জানে আয়াশের মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে। আর সেটাও আয়াশ এমনভাবে সবার সামনে প্রেজেন্ট করে যেন ওর কোনো মাথা ব্যথাই করছেনা। শুধু মাথাটা একটু ধরেছে মাত্র।
রুমের মাঝে পিনপতন নীরবতা। আয়াশ কিংবা ইশা কারো মুখে কোনো কথা নেই। শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ইশার কাজটা সে কন্টিনিউ রেখেছে। নীরবতার প্রহর কাটিয়ে ইশাই প্রথমে বলে উঠলো।
” আচ্ছা তুমি মেডিসিন নাও না??
” মানে? কিসের মেডিসিন??
” এই যে তোমার প্রায়ই মাথা ব্যথা করে; তার জন্য কোনো মেডিসিন নাও না?? আই মিন ডক্টর দেখাওনি কখনো??
” আরে এই সামান্য মাথা ব্যথার জন্য মেডিসিনের কি দরকার?? আর ডক্টর-ই বা দেখাবো কেন??
” হোয়াট…? এটাকে তোমার সামান্য মাথা ব্যথা মনে হচ্ছে?? যদি সামান্যই হয়, তাহলে মাথা ব্যথা করলে তখন এমন পাগলামো করো কেন??
” আরে ও তো আমি ইচ্ছে করেই করি। তোর কেয়ারিং পাবো বলে। আচ্ছা তুই-ই বল, আমি যদি আগে আগে এমন পাগলামি না করতাম তাহলে কি তুই এখন এমন ছুটে আসতি?? তাই প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই রিয়েক্ট করি।
” তাই, না??
” হুমমমমম।
” চাপা তো ভালোই মারতে পারো।
” মানে?
” মানে হলো এই যে তুমি আমাকে কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা বলে বুঝাচ্ছো।
” হোয়াট? (হেসে)
” রাখো তোমার হোয়াট। তোমার হোয়াটের গোষ্ঠীর ষষ্ঠী পূজা করবো আমি। ফাউল ছেলে; আমাকে কি বাবু মনে হয় যে এমন মিথ্যা বলে বুঝাতে চাইছো??
” আরে আমি কেন বাবু মনে করবো তোকে?? তুই নিজেই তো তখন বললি। তুই নাকি পিটার খাস।
” ভাইয়াআআআ…! (রেগে)
” শর্তের কথা কি ভুলে গিয়েছিস??
” আরে রাখ তোর শর্ত টর্ত। আমি সিরিয়াস একটা কথা বলছি তোকে। আর তুই কিনা মজা করে উড়িয়ে দিচ্ছিস??
” ওহ হো! তুই সিরিয়াস কথা বলছিলি?? সরি সরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আবার বল। তুই কি সিরিয়াস কথা বলছিলি শুনি।
” ভাইয়া! আমার মনে হয় তোর একটা ডক্টর দেখানো উচিত।
” ইশা তুই কিন্তু শর্ত….
” তুই কি শর্ত নিয়ে পড়ে থাকবি?? নাকি আমাকে বলতে দিবি।
” জি, বলুন ম্যাডাম। আপনার বাণী শোনার জন্য আমি সবসময় শীরধার্য।
” ভাইয়া! আমি কিন্তু সিরিয়াস। আই থিংক তোর এই মাথা ব্যথাটার জন্য ডক্টর দেখানো উচিত।
” কেন?? মরে যাবো বলে ভয় পাচ্ছিস?? হুমমমম??
” আবার আজাইরা কথা বলছিস??
” তুই আগে আমাকে ভাইয়া বলা ছেড়ে তুমি করে বল। তারপর আমিও একটা সিরিয়াস কথা বলবো তোকে।
” তুমি পারোও বটে। বলো কি বলবে।
” বলছিলাম যে, আচ্ছা ইশু! আমি মরে গেলে তুই আমাকে মিস করবি?? না মানে আমি তো তোকে অনেক বকি; সবসময় কড়া শাসনের মধ্যে রাখি; তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি। আমি মরে গেলে তোর আমার কথা মনে পড়বে?? ”
আয়াশের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে ইশার বুকটা মুহূর্তেই ধুক করে উঠলো। আয়াশের মরার কথাটা যেন ইশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধেছে। মুহূর্তেই ইশার চোখ দুটি ছলছল হয়ে উঠলো। এক্ষুনি কেঁদে দিবে দিবে এমন অবস্থা। তবে আয়াশের কথা শুনে ইশা যতোটা না কষ্ট পেয়েছে। ইশার তার চেয়েও বেশি রাগ হয়েছে। আয়াশ কি করে বলতে পারলো এমন একটা কথা?? মরা কি এতোই সহজ নাকি যে বললেই মরে যাবে। ইশার যেন রাগে আগুন জলছে গায়ে। অন্য সময় হলে হয়তো ভাইয়া বলে চেঁচিয়ে উঠতো। কিন্তু এখন তো সেটা বলেও রাগ কমানো যাবেনা। কারণ ভাইয়া বলার সাথে সাথে আয়াশ আবারও তার বিখ্যাত শর্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলবে,, ইশা! তুই কি ভুলে গেছিস শর্তের কথা?? তাই ইশা এবার রাগ কমানোর জন্য আর ভাইয়াআআ বলে চেঁচালোনা। বরং আয়াশের চুলগুলো টেনে ধরলো গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে। আয়াশের যেন জান যায় যায় অবস্থা। আয়াশ সাথে সাথে ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো।
” আআআহহহ, ইশু কি করছিস কি?? লাগছে তো। প্লিজ ছাড়। ”
ইশা জানে, কেউ আয়াশের চুল জোরে টেনে ধরলে ওর আরও বেশি মাথায় খারাপ লাগে। কিন্তু ও যে রাগের বসে আয়াশের চুল টেনে ধরেছে; সেটা ওর মাথাতেই ছিলোনা। আয়াশের কুঁকিয়ে উঠাতে ইশার খেয়াল হলো যে, সে আয়াশের চুল টেনে ধরেছে। ইশা সাথে সাথে আয়াশের চুল ছেড়ে দিয়ে অস্থির হয়ে আয়াশকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
” সরি সরি ভাইয়া। প্লিজ রাগ করোনা। ব্যথা পেয়েছো?? এক্সুয়েলি আমি খেয়াল করিনি তোমার মাথায় লাগবে সেটা। Sorryyyy….. কি করবো বলো। তুমি এমন একটা কথা বললে; তাই তো আমার রাগ উঠে গেলো। লিসেন, ফারদার যেন এমন কথা আর না বলো।
” কেন? ভয় পেয়েছিস আমার মরে যাওয়ার কথা শুনে?? (হেসে)
” আবার? (রেগে)
” আচ্ছা বাবা সরি। আর বলবোনা। তুই এমন রাগ করছিস কেন??
” করবোনা? তুমি বারবার এই একই কথা নিয়ে পড়ে আছো কেন?? মরা কি এতো সহজ নাকি?? আর তারপরেও যদি আল্লাহ তোমাকে নিয়ে যেতে চাই; তাহলে আল্লাহকে বলবো সে যেন তোমাকে না নিয়ে আমাকে নিয়ে যায়। প্রয়োজনে আমি মরে…..”
বাকি কথা আর শেষ করতে পারলোনা ইশা। তার আগেই আয়াশ হাত দিয়ে ইশার মুখ আটকে দিয়েছে।
” একদম চুপ। আর যেন এমন কথা না শুনি। জাস্ট ফরগেট ইট। এই বিষয়ে আমিও কোনো কথা বলবোনা; আর তুইও কোনো কথা বলবিনা। Okey…???
” উমমম উমম। ”
ইশার অস্পষ্ট আওয়াজে আয়াশের মনে পড়লো সে ইশার মুখ চেপে ধরে রেখেছে। তাই আয়াশ তাড়াতাড়ি হাতটা ইশার মুখ থেকে সরিয়ে আনলো।
” উফফফ, এমনভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে?? ওও, এখন আমি বলেছি বলে তোমার খারাপ লাগছে, তাই না?? আর তখন যে তুমি সেম কথা বারবার বলে যাচ্ছিলে। তুমি বললে কোনো দোষ নেই; আর আমি বললেই দোষ??
” আচ্ছা সরি বলেছি তো। এই দেখ কান ধরছি। আর কখনো বলবোনা। ”
বলেই আয়াশ দু হাতে নিজের কান ধরে মুখটা কাচুমাচু করে তাকালো ইশার দিকে। যেন ওর মতো ইননোসেন্ট আর কেউ নেই। ইশা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বললো—-
” মনে থাকবে তো??
” হুমমম, হান্ড্রেড পারসেন্ট থাকবে। কারণ আমি বুঝে গিয়েছি……
” কি বুঝে গিয়েছো??
” এই যে, তুমি আমাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছো, সেটাই। কেউ একজন আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে, তাও আবার গভীরভাবে। হাহাহাহা
” এক মিনিট, কে তোমাকে ভালোবাসে? তাও আবার গভীরভাবে।
” কেন? তুই।
” এএএএহহহ,, আমার বয়েই গেছে তোমাকে ভালোবাসতে। তোমাকে ভালোবাসতে যাবো? তাও আবার আমি?? (হিহিহিহি) হাসালে আমায়। তোমাকে আমি ভালোবাসতে যাবো কোন দুঃখে শুনি??
” থাক, আর লজ্জা পেতে হবেনা। আমি জানি, মেয়েরা এই বিষয়টা একটু মানতে নারাজ থাকে। নো প্রবলেম, আমি মাইন্ড করিনি।
” হুহ্, আসছে। তুমি মাইন্ড করলেও কি আর না করলেও কি?? যেটা ঠিক আমি সেটাই বলেছি।
” উফফফফফ, মাথাটা আবারও ব্যথা করছে। আআআহহহ। ”
বলেই আয়াশ মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরার ভান করলো। আর আড়চোখে ইশার দিকে তাকালো। ইশা তো আয়াশের আবারও মাথা ব্যথা করছে শুনেই অস্থির হয়ে পড়েছে।
” দেখি দেখি। খুব ব্যথা করছে?? এতো কথা কে বলতে বলেছিলো হ্যাঁ?? ব্যথাটা একটু কমে এসছিলো; আর অমনিই কথা বলা বকবক করা শুরু হয়ে গেছে, না?? দেখি হাত গুলো সরাও। আমি মুভ লাগিয়ে দিচ্ছি। ব্যথা কমে যাবে। দেখিইইই। ”
বলতে বলতে ইশা পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হাত বাড়িয়ে মুভটা নিলো। তারপর পরম যত্নে সেটা আয়াশের পুরো কপালে মালিশ করে হালকা করে আয়াশের মাথাটা টিপে দিতে লাগলো। ইশার এমন অস্থির হওয়া দেখে আয়াশ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে। আর মনে মনে হাসতে লাগলো। আসলে আয়াশের মাথা ব্যথাটা অতোটাও লাগছেনা; যতোটা সে ইশার কাছে ভান করেছে। বস্তুত সে ইচ্ছে করেই এমন করেছে; যাতে ইশার ভিতরে ওর জন্য লুকিয়ে রাখা ভালোবাসাটা একটু হলেও আয়াশ নিজে ফিল করতে পারে যে কতোটা ভালোবাসে ইশা ওকে। আর আয়াশ সাকসেসও হয়েছে। হ্যাঁ, ইশা আয়াশকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। প্রচুর ভালোবাসে। অতোটাই ভলোবাসে; যতোটা ভালোবাসলে সে আয়াশকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারেনা। কিন্তু বোকা ইশা বুঝতে পারেনা সেটা। সে এটাও জানে না যে ভালোবাসা কাকে বলে। আর সে-ই বা আয়াশকে কতোটা ভালোবাসে। ইশা মনে করে ওর মনে আয়াশের জন্য যেই ফিলিংসটা আছে; সেটা শুধু একজন ভাইয়ের প্রতি একজন বোনের যেই ফিলিংসটা থাকা দরকার,, সেটাই। ইশা যে আয়াশকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সেটা ইশার বোধগম্যের বাইরে।
চলবে………
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি