হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ৯

0
136

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৯

_______
” ভ ভ ভাইয়া! কি করছিস এটা?? ”

ইশা নিজেকে আয়াশের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো কথাটা। তবে ইশার কথা আর ইশার নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা, কোনোটাই যেন আয়াশের উপর প্রভাব ফেললোনা। বরং আয়াশ আগের মতো করেই ইশাকে শক্ত করে ধরে রেখে বললো।

” আবার ভাইয়া?? আবার সেই তুই?? ”

” আচ্ছা সে নাহয় বললাম না। বাট কি করছো তুমি এটা?? ”

” বোকার মতো কথা বলিস না। আমি আবার কি করলাম?? জাস্ট জড়িয়েই তো ধরেছি। আমি কিছুই করছিনা। তোর যাতে শীত না লাগে তার জন্য হালকা জড়িয়ে ধরেছি মাত্র।

” কিহ?? এটাকে হালকা জড়িয়ে ধরা বলছো তুমি?? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে পুরো। আর তুমি বলছো হালকা জড়িয়ে ধরেছো মাত্র?? ছাড়ো আমায়।

” হায়রে কপাল! কেন যে ছোট মা তোকে আমার সাথে থাকতে বলে গিয়েছিলো? আর আমিও বা কেন যে আমার সাথে তোকে রাখতে গেলাম আল্লাহয় জানে। আজ বোধহয় আমার আর ঘুমোতে হবেনা। আরে গাধী! মুখটা এভাবে কম্বলের ভিতর ঢুকিয়ে রাখলে তো এমনিই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবি। মুখ বের কর জলদি। উনি বিড়ালের মতো মুখ ঢুকিয়ে রেখে বলছে আমি জড়িয়ে ধরায় নাকি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফাউল কোথাকার। ”

আয়াশের কথায় ইশা সাথে সাথে মুখটা কম্বলের ভিতর থেকে বের করে ফেললো। মুখ বের করেই লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো।

” হাআআহ, উফফফ, মনে হচ্ছে এতক্ষণে দেহে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। ”

বলেই হঠাৎ চোখ তুলে সামনে তাকাতেই আয়াশের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো ইশার। আয়াশের ছোট ছোট চোখ গুলোতে চোখ পড়লেই কেন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে ইশার। শুধু এখন নয়; সবসময়ই এমন হয়। যখনই ইশা আয়াশের চোখের দিকে তাকায়, তখনই ঐ চোখ দুটোতে হারিয়ে যায় ইশা। এক অজানাতে হারিয়ে যায়। আয়াশের ছোট ছোট চোখ, চিকন সরু নাক, প্রশস্ত ঠোঁট, আর ফর্সা মুখে খোচাখোচা দাঁড়ি। সব মিলিয়ে যেন আয়াশ একজন পারফেক্ট সুদর্শন যুবক। ইশা নিজেও বুঝতে পারেনা এই যুবকটা এতো সুন্দর কেন?? আচ্ছা আয়াশ কি আদৌ এতো সুন্দর?? নাকি শুধু ওর কাছেই মনে হচ্ছে সুন্দর। কেন মনে হয় যে আয়াশ ওর বর হলে মন্দ হতোনা?? তাহলে কি ও আয়াশকে ভালোবাসে? কিন্তু আয়াশ তো ওর বড় ভাই হয়। ভাই বোনের মধ্যে এসব কি করে সম্ভব??
অপরদিকে আয়াশেরও সেম অবস্থা। ইশার চোখে চোখ পড়তেই আয়াশের বুকের বাঁ পাশটা কেন যেন ধুকপুক করে উঠলো। শুধু আজই নয়; যতবারই ইশার টানা টানা ঐ হরিণী চোখ দুটোতে চোখ পড়ে, ততবারই আয়াশ এই সুনয়নার প্রেমে পড়ে। শুধু একবার নয় দুইবার নয়, বারংবার প্রেমে পড়ে আয়াশ। শ্যামলা চেহারায় টানা টানা হরিণী দুটো চোখ, চিকন সরু নাক, আর হালকা বাদামি কালারের দুটো ঠোঁট। সব মিলিয়ে যেন ইশা একজন সুন্দরী রমনী। আয়াশ নিজেও জানেনা, এই রমনীটাকে এতো সুন্দরী মনে হয় কেন ওর?? কেন মন চায় বারবার এই রমনীর প্রেমে পড়তে?? কেন বারংবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এই রমনীর মাঝে?? আচ্ছা ইশা কি আদৌ এতো সুন্দরী?? নাকি শুধু আয়াশের কাছেই ওকে এতো সুন্দরী মনে হয়?? কিন্তু লোকে তো বলে পুরুষ মানুষ নাকি ফর্সা চামড়ার প্রেমে পড়ে। আর ইশা তো ফর্সা নয়। ইশা তো শ্যাম বর্ণের অধিকারী। যাকে কালো বলা যাবেনা; আবার ফর্সাও বলা যাবেনা। এক কথায় অর্জিনাল স্কীন কালার যাকে বলে। তাহলে আয়াশ কেন ইশার প্রেমে পড়ে বারবার?? যতবারই আয়াশ ইশাকে দেখে, ততবারই মনে হয় এই প্রথমবার দেখছে সে ইশাকে। ইশার মধ্যে এমন কিছু তো আছে, যেটা আয়াশকে খুব করে টানে। তাহলে কি লোকের কথা ভুল?? পুরুষরা শুধু ফর্সা চামড়ার নয়; চাল-চলন, কথাবার্তা, সহজ সরল মন, এটসেটরা এটসেটরা,, এসব দেখেও প্রেমে পড়ে। হ্যাঁ, এসবেরই তো। আয়াশ তো ইশার এসব দেখেই প্রেমে পড়েছে। ইশার চাঞ্চল্যকর চাল-চলন, নির্ভেজাল তার কথাবার্তা, স্বচ্ছ কাঁচের মতো মন, আরও কতো কি। এসব দেখেই তো আয়াশ ইশার প্রেমে পড়েছে। বারংবার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। কয়েক সেকেন্ড দুজন দুজনের চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে নিজেরাই চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক করে নিলো। ইশা আয়াশের বন্ধনে আবদ্ধ সেটা বুঝতে পেরে গলা কাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলো।

” এহেম, আচ্ছা বলছিলাম যে, আমরা যে এভাবে শুয়েছি; কোনো প্রবলেম হবেনা তো?? ”

আয়াশ বাঁকা হেসে ইশাকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্লো ভয়েসে বললো—

” আমি কিছু করলেই তো প্রবলেম হবে। যখন আমি কিছু করছিই না; তখন প্রবলেম হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। হাহাহাহা। ”

ইশা আয়াশের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পেরে বললো— ” কি সব বলছো?? কি করবে?? আর তোমার কিছু করার সাথে প্রবলেম হওয়া না হওয়ার কি সম্পর্ক?? আমি তো বলছিলাম আমরা এভাবে শুয়েছি বলে কোনো প্রবলেম হবে কিনা?? আর তুমি কিসব করা না করার কথা বলছিলে। ”

” জানতাম, ম্যাডাম আমার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝবেনা। আর যেটা ভেবেছি সেটাই হয়েছে। কেন যে এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পড়লাম??

” কি হলো? কি এতো বিড়বিড় করছো?? কিছু তো বুঝা ও যাচ্ছে না। আমাকে কিছু বলছিলে কি???

” না না। তোকে বলবো কেন?? আমি নিজেকে নিজেই বলছি।

” ওওওও

” আচ্ছা অনেক হয়েছে। এখন নিজেও ঘুমা। আর আমাকেও ঘুমোতে দে।

” হুমমমম।

” হুমমমম বললে হবেনা। আগে আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধর; তারপর হুমমম বল।

” এএএএএহহ…?

” এএএহ নয়, হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধর।

” এখন কি আমাকেও তোমায় জড়িয়ে ধরতে হবে?? একে তো তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরাতে অস্বস্তি লাগছে। শুধু বারবার ভয় হচ্ছে বাসার কেউ এভাবে আমাদের দেখলে কি ভাববে?? ওরা বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিবে তো?? আর এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরতে বলছো??

” দরজার দিকে তাকা। ”

ইশা আয়াশের কথা মতো সাথে সাথে দরজার দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু দেখতে পেলোনা সেখানে। তাই আয়াশের মুখ পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

” কি ওখানে?? ”

” দরজাটা লাগানো আছে দেখতে পাচ্ছিস?? ছোট মা যাওয়ার সময় নিজে চাপিয়ে দিয়ে গেছে। এখন বুঝলি কিছু??

” কি বুঝবো??

” তোর মতো মাথা মোটা এটা বুঝবিনা, আর এটাই স্বাভাবিক। এখন আর এতো বকবক না করে আমাকে জড়িয়ে ধরতো। এখন আবার এটা বলবিনা যে, কেউ দেখবে বলে ভয় হচ্ছে। দরজা লাগানো সেটা তুই নিজের চোখেই দেখলি। এখন আর কোনো কথা না বলে আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধর। ”

ইশা বুঝতে পারলো এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আয়াশ ওকে জড়িয়ে ধরতে বলেছে তো ধরতেই হবে। নয়তো পরে দেখা যাবে রেগে ওকেই রুমে থেকে বের করে দিয়েছে। যেটা ইশা কিছুতেই চায় না। কারণ যদি আয়াশ ওকে কোনো কারণে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাহলে তো রাতে আয়াশের জ্বর বাড়লো কি কমলো সেটাও জানবেনা। আর আয়াশের কিছু প্রয়োজন হলে সেটাও বলতে পারবেনা। তাই সবদিক ভেবে ইশা নিজেও এবার আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।

” এবার ঠিক আছে। এখন শান্তিতে ঘুম হবে। ”

বলেই আয়াশ হেসে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। ইশাও এবার চোখ বন্ধ করে নিলো। কিন্তু হেসে নয়, আয়াশকে ভেঙচি কেটে। তবে মুখে না না বললেও কেন যেন আয়াশের জড়িয়ে ধরাতে ইশার বেশ ভালোই লাগছে। আয়াশের শরীরের উষ্ণতাটা যেন ইশাকে সহ উষ্ণ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। মিনিট পাঁচেক যেতেই ইশা অনুভব করলো ওর এখন আর শীত করছে না। বরং আয়াশের উষ্ণ আলিঙ্গনে কেমন যেন আরও গরম লাগতে লাগলো। তবে গায়ের উপর থেকে কম্বলটা সরালোনা। কারণ অতোটাও গরম লাগছেনা যে কম্বল ফেলে দিতে হবে। এক সময় আয়াশের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ইশার চোখে ঘুমও এসে গেলো। তবে আয়াশ এখনও ঘুমায়নি। জেগে আছে। এমন নয় যে সে না ঘুমিয়ে জেগে আছে। মূলত ঘুম আসছেনা বলেই জেগে আছে। আয়াশ বালিশের পাশ থেকে হাতিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে একবার টাইম দেখে নিলো। ১২টা বাজতে চলেছে। আয়াশ অন্য ছেলেদের মতো অতো রাত করে ঘুমায় না। রোজই ১১টা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়ে। যেই জায়গায় কখনো ১১টার জায়গায় সাড়ে ১১টা বাজে না। সেই জায়গায় আজ ১২টা বাজতে চললো তারপরেও আয়াশের চোখে ঘুম আসার নাম নেই। আয়াশ ইশার দিকে তাকালো। পাগলিটা কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত চোহারাটা আরও বেশি মায়াবী লাগছে। আয়াশ আগেও অনেকবার এই ঘুম পরীকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছে। বাট পার্থক্য হলো শুধু এটুকুই। আগে দূর থেকে দেখেছিলো। আর আজ একদম কাছে থেকে দেখছে। এতোটাই কাছ থেকে যে, এই ঘুম পরীটার প্রত্যেকটা উষ্ণ নিশ্বাস আয়াশের বুকে আঁচড়ে পড়ছে ঠিক সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। সমুদ্রের ঢেউ গুলো তীরে আঁচড়ে পড়লে তীর যেমন এক ফসলা তৃপ্তি পায়। আয়াশও ঠিক তেমনিভাবে ইশার উষ্ণ নিশ্বাস গুলো নিজের বুকে আঁচড়ে পড়তে দেখে এক ফসলা তৃপ্তি অনুভব করছে। ইশার ঘুমন্ত মায়াবী চেহারাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে আয়াশ ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও বুঝতে পারলো না।

☘️☘️☘️
পরদিন সকাল বেলা,, আয়াশ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অফিস যাওয়ার জন্য পরিপাটি করছে আর একটু পর পর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ইশার দিকে তাকাচ্ছে। আয়াশ শার্টের হাতা ঠিক করে গায়ে ব্লেজার জড়াতে জড়াতে নিজ মনেই আওড়ালো—

” কি ঘুম ঘুমাচ্ছে দেখো। উঠার নাম পর্যন্ত নেই। আর উনি নাকি আমার কিছু প্রয়োজন হবে বলে আমার সাথে ছিলো। ”

কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে আয়াশ ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে নিজেকে একদম ফিট করে নিলো। তারপর মাথার চুল গুলো একবার চিরুনি করে নিয়ে ইশার খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছু সময় ইশার ঘুমন্ত চেহারাটির দিকে তাকিয়ে থেকে এবার ইশাকে ডাক দিলো।

” ইশা! ইশা! এই ইশা উঠ। আরে উঠ না রে বাবা আর কতো পড়ে পড়ে ঘুমাবি?? ইশা! ইশা! আরে এবার তো উঠ। সবাই খাবার টেবিলে ওয়েট করছে বোধহয়। ”

ইশা গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো। কিন্তু এতো ডাকাডাকির পর কি আর চোখে ঘুম থাকে?? ঘুম কেন? ঘুমের চৌদ্দ গোষ্ঠী সহ উড়ে যাবে। ইশার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। আয়াশের এমন জোরে জোরে ডাকাডাকিতে ইশার ঘুম ভেঙ্গে ঘুমের বংশ সহ উড়ে গেছে। তবে এমন গভীর ঘুম থেকে ডাকলে কি আর চোখ খুলতে ইচ্ছে করে?? ইশারও ইচ্ছে করলোনা। তাই চোখ বন্ধ করেই রেখেছে এখনও।

” ইশা! এই ইশা……..

” কি হয়েছে? এমন ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন? বাড়িতে কি ডাকাত পড়েছে নাকিইইই? (ঘুম ঘুম কণ্ঠে)

” ওও, ম্যাডামের তাহলে ঘুম ভাঙলো। আমি তো ভাবলাম আজ আর সারাদিন উঠবিনা। এভাবেই পড়ে পড়ে ঘুমাবি। ছোট মা নাকি আরও ওকে রেখে গিয়েছিলো আমার কিছু লাগবে কিনা দেখতে। যে ঘুমালে খবর থাকেনা, সে কিনা আমার খেয়াল রাখবে। ভাবা যায়?? ”

আয়াশের এতোগুলা কথা শুনেও ইশা চোখ খুললোনা। বরং আগের মতো চোখ বন্ধ করে রেখেই বললো।

” তোর কি ডায়রিয়া হয়েছিলো নাকি যে আমি তোকে বদনা ভর্তি করে দেওয়ার জন্য না ঘুমিয়ে বসে থাকবো?? হুহ্ আমার কি আর খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই??

” ঘুমের মধ্যে কি বকছিস মাথায় আছে?? উঠ জলদি। নয়তো এক্ষুনি গিয়ে পানির বালতি নিয়ে আসবো। ”

এতক্ষণ ইশা শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে কথা বললেও। বালতি শব্দটা যেন এখন টনিকের মতো কাজ করলো। পানির বালতির কথা শুনে ইশা লাফিয়ে উঠে বসলো। কারণ সে জানে, যদি আয়াশের কথা মতো এখনই না উঠে,, তাহলে সত্যি সত্যি আয়াশ পানির বালতি নিয়ে এসে ওর গায়ের উপর ঢেলে দিবে। ইশার এখনও মনে আছে গত বছর শীতের দিনের কথা। গত বছর এমনই একদিন শীতে ইশা উঠতে চাইছিলোনা বলে আয়াশ ঠান্ডা বরফের মতো এক বালতি পানি নিয়ে এসে ইশার গায়ের উপর ঢেলে দিয়েছিলো। ইশার সেইদিনের দৃশ্যটা এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ইশা গলা উঁচিয়ে বলে উঠলো।

” এই না না ভাইয়া! পানির বালতি নিয়ে আসিস না। আমি উঠে গেছি। আর এক্ষুনি ফ্রেশও হয়ে নিবো। ”

বলেই ইশা বিছানা থেকে নেমে আয়াশকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু যাওয়া আর হলো কই?? তার আগেই আয়াশ পিছন থেকে ইশার এক হাত টেনে ধরেছে। আয়াশের এমন হাত ধরে ফেলাতে ইশা ঢের বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও আয়াশের দিকে তাকালো। তারপর বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো।

” কি হয়েছে আবার?? হাত ধরেছিস কেন?? এক মিনিট, তুই কি এখন আবার আমার হাত ধরে হিরোদের মতো আধ ঘন্টা তাকিয়ে থাকবি নাকি?? যদি এমন ভাবিস, তাহলে তোর ভাবনায় এক বালতি জল পড়লো। কারণ আমার তোর দিকে তাকিয়ে থাকার মতো সময় এখন নেই। কলেজের জন্য রেডি হতে হবে তো।

” তোর কেন মনে হলো যে এখন আমি তোর দিকে তাকিয়ে থাকবো বলে তোর হাত ধরেছি?? তুই কোথাকার কোন নায়িকা যে আমি আধ ঘন্টা ধরে তোর দিকে তাকিয়ে থাকবো?? নিজের চেহারাটা কখনো আয়নায় দেখেছিস??

” হ্যাঁ হ্যাঁ, সে দেখেছি অনেকবার। আর এটাও জানি যে, আমি দেখতে মাশা আল্লাহ। যেখানে আমি জানি আমি সুন্দর, সেখানে নতুন করে দেখার কি আছে?? তুই জানিস! কলেজের কতো ছেলে আমার জন্য পাগল?? আচ্ছা এখন বাদ দে এসব। তোকে এসব বলেই বা আমি টাইম ওয়েস্ট করবো কেন?? এখন এইটা বল যে আমার হাত ধরেছিস কেন??

” তোর এইসব আঝাইরা কথা শুনবো বলে। যত্তসব। আমি হাত ধরেছি তার কারণ হলো- তুই বোধহয় ভুলে গিয়েছিস আমার দেওয়া শর্তের কথা। তাই তো সেই তখন থেকে সব ভুলে তুই তুই করে যাচ্ছিস। ব্যাস, এটুকুই স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য ধরেছি তোর এই মূল্যবান হাতটা। নে, ছেড়ে দিলাম তোর হাত। এবার তুই বিদায় হ আমার রুম থেকে। ”

বলেই আয়াশ ইশার হাত ছেড়ে দিলো।

” আমারও তোর রুমে বসে থাকার সখ নেই। যাচ্ছি আমি। হুহ্। ”

এই বলে ভেঙচি কেটে ইশা চলে গেলো আয়াশের রুম থেকে। ইশা চলে যেতেই আয়াশ বাঁকা হাসলো। সত্যিই, পাগলিটাকে রাগাতে আয়াশের বেশ লাগে। আর পাগলিটা যখন প্রচন্ড রেগে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, তখনও আয়াশের বেশ লাগে। তাই তো কথায় কথায় পাগলিটাকে রাগিয়ে দিয়ে,, আবার সেই রাগটা আদর করে ভাঙ্গিয়ে দিয়ে নিজের অতৃপ্ত মনকে তৃপ্তি দেয়। একটু পর সবাই ডাইনিংয়ে এসে বসলো। আয়াশকে ফর্মাল ড্রেসে দেখে মা আর ছোট মা দুজনেই অবাক হলো। আয়াশ অফিস যাবে?? রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছিলেন। আয়াশকে অফিস ড্রেসে দেখে রুকসানা বেগম বেখেয়ালি হয়ে বলেই ফেললেন।

” এ কি আয়াশ! তুই অফিসে যাচ্ছিস?? ”

রুকসানা বেগমের কথা শুনে রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদ দুজনেই অদ্ভুত ভাবে তাকালেন রুকসানা বেগমের দিকে।

” আয়াশ অফিস যাবেনা তো কোথায় যাবে?? তুমি এমন রিয়েক্ট করছো কেন যেন আয়াশ আগে কখনো অফিসে যায়নি??

ভাসুরের কথায় আনিসা বেগম আগ বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ বলে উঠলেন—-
” তেমন কিছু না ভাইজান। আসলে আয়াশের আজ একটু ইশার কলেজে যাওয়া দরকার ছিলো। তাই ভাবি আয়াশকে ফর্মাল ড্রেসে দেখে এমন রিয়েক্ট করেছে। তাই না ভাবি??

” হ্যাঁ হ্যাঁ।

” কেন? ইশার কলেজে কি কোনো প্রবলেম হয়েছে?? ইশা মা! কলেজে কি কিছু হয়েছে তোর?? কোনো প্রবলেম হয়েছে?? হলে বড় আব্বুকে বল। ”

রায়হান মাহমুদের কথা শুনে ইশা তো অবাক হয়ে একবার বড় আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার বড় আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে। কি বলবে এখন সে?? আয়াশকে ওর কলেজে যেতে হবে; আর ও নিজেই জানেনা সেটা?? আর যেখানে ও নিজেই জানেনা কলেজে আজ আয়াশকে যেতে হবে। সেখানে আম্মু আর বড় আম্মু কি করে জানলো?? আচ্ছা বাসায় কোনো স্যার-টার কল করেনি তো আবার?? আল্লাহয় জানে ওর বিরুদ্ধে কোন স্যার কোন নালিশ দিয়ে বসেছে।

চলবে…….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here