হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই পর্বঃ- ১০

0
105

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১০

_______
” কেন? ইশার কলেজে কি কোনো প্রবলেম হয়েছে?? ইশা মা! কলেজে কি কিছু হয়েছে তোর?? কোনো প্রবলেম হয়েছে?? হলে বড় আব্বুকে বল। ”

রায়হান মাহমুদের কথা শুনে ইশা তো অবাক হয়ে একবার বড় আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার বড় আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে। কি বলবে এখন সে?? আয়াশকে ওর কলেজে যেতে হবে আর ও নিজেই জানেনা সেটা?? আর যেখানে ও নিজেই জানেনা কলেজে আজ আয়াশকে যেতে হবে। সেখানে আম্মু আর বড় আম্মু কি করে জানলো?? আচ্ছা বাসায় কোনো স্যার-টার কল করেনি তো আবার?? আল্লাহয় জানে ওর বিরুদ্ধে কোন স্যার কোন নালিশ দিয়ে বসেছে।
ইশা অতো শতো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মায়ের দিকে চোখ যেতেই মা যেন চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝালো ওকে। ইশার বুঝতে দেরি হলোনা আম্মু আর বড় আম্মু কেন আয়াশকে ওর কলেজে যেতে হবে বলছে। হয়তো জ্বরের শরীর নিয়ে অফিস পাঠাতে চাইছে না বলেই দুই জা মিলে এমন মিথ্যা প্ল্যান সাজিয়েছে। ইশার নীরবতার মাঝখানে রায়হান মাহমুদ আবারও বলে উঠলেন।

” কি রে মা চুপ করে আছিস কেন বল। তোর কলেজে কি কোনো প্রবলেম হয়েছে?? যদি প্রবলেম হয়ে থাকে তাহলে আয়াশের যেতে হবেনা,, বড় আব্বু নিজে গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলবো। আমাকে বল কি হয়েছে।

” আরে না বড় আব্বু! তেমন কিছুই হয়নি। তোমাকে যেতে হবেনা। আয়াশ ভাইয়া গেলেই চলবে। ঐ আসলে আমি কিছু নোটস কালেক্ট করতে পারিনি গত এক মাসের। নোটস গুলো ছেলেদের কাছ থেকে কালেক্ট করতে হবে বলে। তাই বড় আম্মুকে বলেছি যেন ভাইয়াকে একটু বলে আমার সাথে কলেজে যাওয়ার জন্য।

” ও এই ব্যাপার?? আচ্ছা ঠিক আছে। আয়াশ তোর সাথে গিয়ে সব নোটস কালেক্ট করে দিবে। তুই একদম টেনশন করিসনা। আয়াশ! তুই আজ-ই গিয়ে আমার মেয়েকে সব নোটস কালেক্ট করে দিবি। দরকার হলে আজ তুই আর অফিসে আসিসনা। তারপরেও সব নোটস কালেক্ট হওয়া চাই। গট ইট?? ”

যেহেতু মা আর ছোট মা মিলে সব বলেই দিয়েছে। সাথে ইশাও নিজের ঢোলটা পিটিয়ে দিয়েছে। সেহেতু আয়াশের আর বলার-ই বা কি আছে?? তাই বাবার কথায় সম্মতি জানালো।

” জি বাবা! তবে আজ যে আমাকে একটা মিটিং করার কথা বলেছিলে তুমি?? সেটার কি হবে??

” সেটা নিয়ে তুই টেনশন করিসনা। ওটা আমি আর হাসান সামলে নিবো।

” ওকে ফাইন।

” কিন্তু ভাইজান! মিটিংটা আমাদের থেকে আয়াশ বেশি হ্যান্ডেল করতে পারতোনা?? ইশার নোটস গুলো তো অন্যদিনও নেওয়া যাবে। বাট ক্লায়েন্ট তো মিটিংয়ের জন্য বারবার আসবেনা। তাই বলছিলাম যে……

” হাসান তুইও না…! ইশার থেকে আমাদের মিটিং আর ক্লায়েন্ট বড় হলো নাকি?? আর তুই কি ভুলে গিয়েছিস? ইশার সামনে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। নোটস কালেক্ট না করলে এক্সাম দিবে কি করে?? ইশার জন্য যদি দরকার পড়ে এইরকম কয়েকটা মিটিং আমি ক্যান্সেল করতে রাজি আছি। তুই এসব নিয়ে ভাবিস না। এখন তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। বের হতে হবে আমাদের। ঐ মিটিংটা করার আগে রহমান ইন্ডাস্ট্রির সাথে একটা কনফারেন্স মিটিং আছে। যেটা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। ”

হাসান মাহমুদ বরাবরই ভাইয়ের আনুগত্য। আর তাই উনি কখনো ভাইয়ের মুখের উপর কথা বলেন না। এখনও বরাবরের থেকে ব্যতিক্রম কিছু হলোনা। ভাইয়ের কথার উপর হাসান মাহমুদ আর একটা টু শব্দও করলেন না। অল্প সময় অতিবাহিত হতেই রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদ দুজনেই খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে গেলেন। বাবা আর চাচ্চুকে মেইন দরজা অতিক্রম করে বেরিয়ে যেতে দেখেই আয়াশ এবার বলে উঠলো।

” বাহ! তোমরা ৩ জনে মিলে যেই ফাটাফাটি এক্টিং টা করলে। আর ইশা! ওয়াও, তুই তো একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছিস। তোর তো অস্কার পাওয়া উচিত রে। কতো ভালো অভিনয় করলি। ভাবা যায়?? যদি পারতাম আমি এক্ষুনি অস্কারটা নিয়ে এসে তোর হাতে ধরিয়ে দিতাম, হুমমম। বাট তোর হাতে এটা মানাবেনা, তাই দিচ্ছিনা। (বাঁকা হেসে)

” হুহ্, আমার লাগবেনা তোর ঐ অস্কার। আমি তো জাস্ট বড় আম্মুর কথা ভেবে এক্টিং টা করলাম। নয়তো তোর জন্য কে মিথ্যা বলবে?? আমি তো মোটেও বলবোনা।

” ব্যাস, তোদের শুরু হয়ে গেলো আবার?? এখন ছাড় এসব। ইশা তাড়াতাড়ি খেয়ে কলেজে যা। আর আয়াশ তোর আজ কোথাও যেতে হবেনা বাবা। তুই বরং রুমে গিয়ে রেস্ট নে।

আনিসা বেগমের কথায় রুকসানা বেগমও সম্মতি জানিয়ে বলে উঠলেন—
” হ্যাঁ আয়াশ! আনিসা একদম ঠিকই বলছে। তুই রুমে গিয়ে শুয়ে থাক। তোর আজ আর কোথাও যেতে হবেনা।

” মা! ছোট মা! তোমরাও না…! আমার কি অতো জ্বর হয়েছে নাকি যে রুমে বসে থাকতে হবে?? তোমরা এসে দেখো, আমার শরীর এখন একদম ঠিক আছে। ”

নিজের এক হাত কপালে রেখে বললো আয়াশ। কিন্তু তাতেও আনিসা বেগমের মন গলাতে পারলোনা। উনি কিছুটা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন—-

” তারপরেও, তোর আজ অফিসে যাওয়া হবেনা আয়াশ। আমি কিন্তু ভাবি নয় যে, তোর কথায় গলে যাবো। ভাবিকে ভুলাতে পারলেও আমাকে কিন্তু ভুলাতে পারবিনা। আজ অফিসে যাবিনা বলছি যাবিনা। ব্যাস।

” আরে আমি কখন বললাম যে, আমি অফিসে যাবো।

” মানে? তাহলে কোথায় যাবি??

” কেন? তোমাদের এই মোস্ট অফ দা ইলিজিবল ড্রামা কুইন যে এতক্ষণ ধরে ড্রামা করলো। উনার নাকি নোটস কালেক্ট করা হয়নি ছেলেদের থেকে। তাই উনার নোটস কালেক্ট করতে কলেজে যাবো।

” আরে সে তো এমনিই ভাইজানের সামনে বলেছিলো ও। যাতে ভাইজান তোকে অফিস যেতে বারণ করে। মূলত এর পুরোটাই একটা নাটক ছিলো।

” ছোট মা! তুমি তোমার মেয়েকে এখনও চিনলেনা। ও যেহেতু বলেছে ওর নোটস কালেক্ট করা হয়নি, তাহলে আই এম ডেম শিওর ওর সত্যিই নোটস কালেক্ট করা হয়নি। না হলে ও নোটসের কথা কখনোই বলতোনা। অন্যকিছু বলতো। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোমরা জিজ্ঞেস করে দেখো ওকে।

” ইশা মা! আয়াশ যেটা বলছে সেটা কি ঠিক?? আমি জানি আয়াশ শুধু শুধু আঝাইরা বকছে। তুই নিজেই বলে দে তো সেটা, যে ওর কথা একদম ঠিক না। তুই সব নোটস কালেক্ট করেছিস। আমি চায়না আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ মিথ্যা ধারণা পোষণ করে রাখুক। ”

ইশা এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তাকিয়ে ছিলো বললে ভুল হবে। মূলত নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আয়াশ আর বড় আম্মুর কথাগুলো শুনছিলো; আর প্লেটের নুডলস গুলো চামচ দিয়ে নাড়ছিলো। কারণ আয়াশ যা বলছে একদম ঠিকই বলছে। ইশা সত্যিই গত একটা মাসের নোটস কালেক্ট করেনি। আর সেটাও ছেলেদের কাছ থেকে নোটস কালেক্ট করতে হবে বলে। কারণ আয়াশের কড়া আদেশ, ইশা যেন কলেজের কোনো ছেলের সাথে কথা না বলে। এমনকি কোনো নোটসও যেন না নেয়। তবে আয়াশ ভালো করেই জানতো ও বললে সেটা ইশা কখনোই শুনবেনা। বরং জিদ করে আরও বেশি ছেলেদের সাথে কথা বলবে। তাই আয়াশ বুদ্ধি করে ছোট মা’কে দিয়ে অর্ডারটা জারি করেছে। কারণ আর যাই হোক, ইশা মায়ের কথা কখনো অমান্য করতে পারেনা। মা’কে জমের মতো ভয় পাই কিনা। রুকসানা বেগমের প্রশ্ন শুনে ইশা মুখটা কাচুমাচু করে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো বড় আম্মুর দিকে। তারপর করুণ কণ্ঠে বললো—

” বড় আম্মু! ইয়ে মানে আসলে হয়েছে কি…. ”

ব্যাস, ইশার আমতা আমতা করা দেখে রুকসানা বেগমের বুঝতে দেরি হলোনা যে আয়াশের কথায় ঠিক। ইশা সত্যি সত্যি গত এক মাসের কোনো নোটস কালেক্ট করেনি।

” ইশা মা! তার মানে তুই সত্যিই নোটস কালেক্ট করিসনি?? ”

ইশা মুখটা কাচুমাচু করে বললো—- ” হ্যাঁ বড় আম্মু। আসলে নোটস গুলো ছেলেদের থেকে কালেক্ট করতে হবে তো, তাই।

” আমি জানতাম, আয়াশের কথায় ঠিক হবে। দেখলে ভাবি! তুমি শুধু শুধু আয়াশকে ভুল প্রমাণ করতে চাইছো। এখন ইশাই কিন্তু ভুল প্রমাণ হলো। দেখলে তো?? ”

ছোট মা’র কথায় এবার আয়াশও তাল মিলালো।

” একদম ঠিক বলেছো ছোট মা। মা! এখন দেখলে তো কে ঠিক?? তোমার মেয়ে নাকি আমি?? ”

” আরে এটা এমন কি আর?? ও তো বলেছে ছেলেদের কাছ থেকে বলে নোটস গুলো নিতে পারেনি। এখানে তো ওর কোনো ভুল নেই।

রুকসানা বেগমকে পরাজিত করতে আনিসা বেগম বললেন —-
” ভাবি! ইশার ভুল কি কখনো তোমার চোখে পড়ে? আমার তো মনে হয়না। ওর এক্টিং দেখে তো এক মুহূর্তের জন্য আমি ভেবেই নিয়েছিলাম যে ও নোটসের কাহিনীটা আমার চোখ রাঙ্গানী দেখে সেকেন্ডের মধ্যে বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বুঝতেই পারিনি ও সত্যি সত্যি কথাগুলো বলেছে।

” মিথ্যা বলবোনা, আমিও কিন্তু তোমার মতোই মনে করেছিলাম আনিসা। এক মিনিট, আচ্ছা আয়াশ তুই কি করে বুঝলি যে ইশা সত্যি সত্যি নোটস কালেক্ট করেনি?? না মানে আমরা তো ওর কথাগুলোকে অভিনয় ধরে নিয়েছিলাম। তাহলে তুই কিভাবে বুঝলি যে ইশা অভিনয় করছেনা সত্যি সত্যি নোটসের কথা বলছে।

” আরে মা! তোমরা এই ফাউলটাকে না চিনলেও ওকে আমি হারে হারে চিনি। ও যে ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো ইউস করে, সেটা আমার থেকে ভালো করে আর কে জানে??

” মানে??

” মানে একদম সিম্পল। ও হয়তো অনেকদিন ধরে আমাকে নোটসের কথাটা বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু বলতে পারেনি। আর তাই যখনই বাবা ওর কাছে জানতে চাইলো কলেজে কোনো প্রবলেম হয়েছে কিনা। সাথে সাথে ওর সবার আগে নোটসের কথাটাই মাথায় আসলো। আর পটাপট সেটাকে বাবার সামনে প্রেজেন্টও করে দিলো। তোমরা মনে করলে ও অভিনয় করছে। বাবা মনে করলো ও সত্যি কথা বলছে। আর আমি বুঝতে পারলাম, ফাউলটা নোটসের টেনশনে আছে। ব্যাস, সব পানির মতো ক্লিয়ার।”

আয়াশের কথা শুনে রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম দুই জা একে অপরের দিকে তাকালেন। তারপর আচমকাই পিক করে দুজনে হেসে দিলেন। আসলেই, ইশাকে আয়াশের চেয়ে বেশি হয়তো আর কেউ বুঝবেনা।

” আচ্ছা আমরা তাহলে আসছি মা। ছোট মা আসছি আমরা।

আনিসা বেগম স্নেহ জড়ানো কণ্ঠে বললেন—-
” হ্যাঁ আয় বাবা। তবে সাবধানে যাস।

” এই যে ড্রামা কুইন চলুন এবার। এতো খেলে তো মুটকি হয়ে যাবি। সব খাবার তো তুই একাই সাবার করে দিয়েছিস মনে হচ্ছে। কিছু তো অবশিষ্ট রাখ।

” হুহ্, এমনভাবে বলছিস যেন টেবিলের সব খাবার আমি একাই খেয়ে নিয়েছি। তুই তো আমার থেকে ত্রি ডাবল খাস। তখন কি আমি কিছু বলি?? আমি যখন তোর খাওয়া নিয়ে বলিনা, তাহলে আমার খাওয়া নিয়ে তুই বলছিস কেন?? আমার সবকিছুতে নজর না দিলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না বুঝি??

” না হয়না। এবার তাড়াতাড়ি চল। নয়তো এই জন্মে তুই আর নোটস নিতে পারবিনা।

” আম্মু! বড় আম্মু! আসছি আমি।

” ঐ তুই কি একা যাচ্ছিস যে আসছি আমি বলছিস?? আমরা দুইজন মানুষ যাচ্ছি। আর তাই আসছি আমি নয়, আসছি আমরা বলবি।

” আমার তো তোকে মানুষই মনে হয়না। তাই শুধু আমার জন্য বলেছি। আফটার অল তুই তো মানুষ না; তুই হলি একটা গন্ডার। হিহিহিহি ”

বলেই ইশা এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।

” তবে রে…… দাঁড়া আসছি আমি। আচ্ছা মা! ছোট মা! আসছি তাহলে।

” আচ্ছা আয়। আর হ্যাঁ, সাবধানে চালাস গাড়ি। তোকে বললেও তো তুই ড্রাইভারকে নিয়ে যাসনা। তাই সাবধানে দেখে চালাস।

মায়ের কথায় আয়াশ মুচকি হেসে বললো—-
” জু হুকুম মেরে মা। তুমি একদম টেনশন করোনা। ”

আয়াশ ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। ইশা আগে থেকেই ড্রাইভিং সিটের পাশেরটাতে বসে ছিলো। আয়াশকে বসতে দেখে দাঁত খেলিয়ে হাসলো। আয়াশ এক পলক ইশার দিকে তাকিয়ে তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সারা রাস্তা ইশা বকবক করলেও আয়াশ কিছু বললোনা। শুধু হুম হা বলে জবাব দিয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময় পর গাড়ি এসে থামলো কলেজ গেইটের সামনে। খানিক সময় নিয়ে আয়াশ আর ইশা দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে আসলো। আয়াশ এক নজর পুরো কলেজটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে তারপর ভিতরের দিকে হাঁটা ধরলো। সাথে ইশাও হাঁটছে আয়াশের সাথে পা মিলিয়ে। এই সময় ঢের ছেলে মেয়েদের আনাগোনা। এই ক্লাস টাইম হবে বলে। তবে ক্লাস টাইম হতে এখনও পয়তাল্লিশ মিনিট বাকি। আয়াশ এই কলেজেরই স্টুডেন্ট। আর ও যেহেতু কলেজে টফার ছিলো, অর্থাৎ মুস্ট ইন্টেলিজেন্ট ছিলো। তাই এখানাকার সব স্যাররা আর কিছু পুরাতন স্টুডেন্টরাও আয়াশকে চিনে। বিশেষ করে সিনিয়র ছেলেরাই বেশি চিনে আয়াশকে। আর তার কারণ হচ্ছে আয়াশ স্টাডিতে যেমন টফার ছিলো; ঠিক তেমনি কলেজের বিপি ও ছিলো। আর সেই সুবাদে আয়াশের এই কলেজে বেশ নাম ডাক। সবাই বেশ সম্মান করে এখনও পর্যন্ত ওকে। কারণ একটাই, আয়াশ কখনো কোনো খারাপ কাজ করেনি কলেজে। সেটা কলেজের বিপি হওয়া সত্বেও। যেখানে আজকালকার ছেলেরা সামান্য ক্লাস ক্যাপ্টেইন হলেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে সেখানে আয়াশ পুরো কলেজের ছাত্রদের হেড ছিলো। তারপরেও কখনো কোনো মেয়েকে ইভটিজিং রেগিং এসব করেনি। আর না কোনো ছেলেকে করতে দিয়েছে। কখনো অন্যায়ভাবে কোনো জুনিয়রের উপর দাদাগিরি দেখায়নি। আর না অন্য কাউকে দেখাতে দিয়েছে। সবসময় কলেজের ছোট বড় সবার পাশে থেকেছে; সবার সাথে ভদ্র ব্যবহার করেছে; সবাইকে পড়ালেখার প্রতি উৎসাহ করেছে। আর তাই আজও কলেজের বেশ কিছু ছেলেমেয়ের কাছে “আরিয়ান মাহমুদ আয়াশ” নামটা একটা আইডল। আয়াশ ইশাকে সাথে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে গেলো। কারণ আয়াশ জানে, এই সময় সব ছেলেদেরকে সে ক্যাম্পাসেই পাবে। দুজনেই ক্যাম্পাসে এসে ঢুকলো।

” ইশা!

ইশা আয়াশের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আয়াশের ডাক শুনে ইশা আয়াশের পাশে এসে দাঁড়ালো।

” ঐ যে কর্নারের টেবিলটাতে বসে আছে, ঐ গুলো না তোর ক্লাসের ছেলে??

” হুমমমম। তুমি তো চিনোই আমার ক্লাসের ছেলেদের। তারপরেও আমার থেকে জিজ্ঞেস করছো কেন??

” বকবক করার স্বভাবটা আর গেলোনা তোর।”

বলেই আয়াশ ছেলে গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। ছেলে গুলোর কাছে গিয়ে ঐ টেবিলের একটা চেয়ার টেনে ওদের সামনে বসে পড়লো। ইশার ক্লাসের প্রতিটা ছেলে মেয়েই আগে থেকে চিনে আয়াশ যে ইশার ভাই সেটা। আর ওর ক্লাসের ছেলেরা বরাবরই আয়াশকে ভয় পায়। আর মেয়েরা বরাবরই আয়াশের উপর ক্রাশ খায়। বরাবরের মতো আজও তাই হলো। আয়াশকে ওদের সামনের চেয়ারে বসতে দেখে সেখানে বসে থাকা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে গেলো। এটা দেখে আয়াশ হাসলো।

” আরে দাঁড়িয়ে গেলে কেন তোমরা সবাই?? বসো বসো। ”

ছেলে গুলো সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে আস্তে আস্তে আবারও নিজেদের চেয়ারে বসে পড়লো। তবে ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পেয়ে আছে সবাই। কারণ ওরা জানে, আয়াশ এখানে আসা মানে নিশ্চয় মারাত্মক কিছু। নিশ্চয় ইশাকে কেউ কিছু বলেছে। কেননা আয়াশ ইশার কোনে প্রবলেম না হলে কলেজে সচরাচর আসেনা। আয়াশ এসেছে মানে কেউ না কেউ ইশাকে কোনো রকম টিস করেছে। কিন্তু ওরা তো কেউ কিছু বলেনি ইশাকে?? ইনফ্যাক্ট আয়াশের ভয়ে ওরা ইশার সাথে কোনো কথায় বলেনা। তাহলে কিছু বলা তো দূরের কথা। তবে এমন নয় যে আয়াশকে দেখতে রাগী রাগী মনে হয় বলে ইশার ক্লাসের ছেলেরা ওকে ভয় পায়। আয়াশ অত্যন্ত গোড বিহেভিয়ার সম্পন্ন একজন ব্যক্তি। যার কারণে ও যতোই রাগী হোক, বাইরে থেকে কখনো বুঝায় যায় না যে সে রাগী। আবার এমনও নয় যে আয়াশ ইশার ক্লাসের ছেলেদেরকে ইশার সাথে কথা বলতে কড়াভাবে বারণ করেছে। বরং আয়াশকে ইশার ক্লাসের ছেলেদের ভয় পাওয়ার মেইন কারণ হচ্ছে ইশা। কেননা ইশা ওর ক্লাসের একটা ছেলে একদিন ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বলে ক্লাসের সব ছেলেগুলোকে সেদিন ডেকে বলেছিলো।

চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here