হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৮
__________
” ইশা মা চল তাহলে। আয়াশ একা খেতে পারবে বলতেছে। তাহলে আমরা বসে থেকে কি করবো। চলো আমরাও নিচে গিয়ে খেয়ে নিই। আনিসা চলো। ”
বলেই রুকসানা বেগম যেই না বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। অমনিই ইশা বলে উঠলো।
” বড় আম্মু তোমরা যাও। আমি ভাইয়ার সাথেই খাবো। ভাইয়া যদিও মুখে বলছে; বাট ওর একা একা খাওয়ার তো অভ্যাস নেই তাই না?? তাই আমি ভেবে দেখলাম যে আমার ভাইয়ার সাথে রুমে বসে খাওয়াটাই ভালো হবে। তোমরা যাও। আমি ভাইয়ার সাথে খেয়ে নিবো।
” কিন্তু আয়াশ তো বলছে ও একা খেতে পারবে। আর তাছাড়া তুই ও তো আমাদের ছেড়ে খেতে পারিস না। তাহলে আবার এটা বলছিস কেন?? আচ্ছা তুই কি তোর আম্মুর বকার ভয়ে এমন বলছিস?? যদি এমন হয় তাহলে বলবো আমি থাকতে আমার মেয়েকে কেউ কিচ্ছু বলতে পারবেনা। চল আমাদের সাথে।
” আরে বড় আম্মু! তোমাকে কি করে বলি যে আমি আম্মুর ভয়ে নয়, তোমার ছেলের ভয়ে রাজি হচ্ছি। আমি যদি এখন রুমে বসে ওর সাথে না খায়; তাহলে যে আমার কপালে শনি রবি সোম অনেক কিছুই আছে সেটা আমি ভালো করেই জানি। ”
কথাগুলো নিজ মনে ভেবে ইশা হেসে বললো—-
” আরে নাহ বড় আম্মু! আমি আম্মুর ভয়ে কেন রাজি হবো। আমি নিজের থেকেই রাজি হয়েছি। ভাইয়া অসুস্থ না?? তাই আর কি। আমি ভেবে দেখলাম আম্মু ঠিকই বলেছে, আমরা নিচে গিয়ে খেলে ভাইয়ার একা একা খেতে ইচ্ছে করবেনা। তাই আমিও ওর সাথে এখানে খাবো বলে ঠিক করেছি। ”
কথাগুলো বলতে বলতে ইশা গিয়ে আয়াশের পাশে বিছানায় বসে সেন্টার টেবিলের উপরে থাকা খাবারের প্লেটটি হাতে নিলো। রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম এটা দেখে বেশ খুশিই হলেন। তবে আনিসা বেগম কিছু একটা ভেবে হঠাৎই মুখের হাসিটা লুকিয়ে ফেললেন। চেহারায় এক রাশ গুরুগম্ভীর্য রেখে বললেন——
” যাক তাহলে, এতক্ষণ পর হলেও সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে তোর। আমরা তাহলে আসছি। চলো ভাবি। ”
বলেই আনিসা বেগম এক পা সামনে এগিয়ে আবারও থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন। আনিসা বেগমকে হঠাৎ থেমে যেতে দেখে রুকসানা বেগমও থেমে পিছন ফিরে তাকালেন।
” ও হ্যাঁ, আর একটা কথা ইশা! আজ রাতে তুই এই রুমে আয়াশের সাথেই থাকবি। বুঝেছিস? ”
আনিসা বেগমের কথা শুনে রুকসানা বেগম আর ইশা দুজনেই বেশ অবাক হলো। ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুকসানা বেগম বলে উঠলেন—- ” আনিসা! তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?? ”
” আরে ভাবি! এখানে এতো ভাবাভাবির কি আছে?? ছেলেটা অসুস্থ। রাতে কখন কিসের প্রয়োজন হয় তার কি ঠিক আছে?? তুমি আর আমি তো থাকতে পারবোনা এখানে। কারণ ইশার আব্বু আর ভাইজান জেনে যাবে। আর আমরা কেউ যেহেতু থাকতে পারবোনা আয়াশের সাথে। তাই ইশাই আজ আয়াশের সাথে থাকবে। যাতে আয়াশের কোনো রকম অসুবিধা না হয়। এখন চলো তো। অনেক জোরে ক্ষুধা লেগেছে। ”
কথাগুলো বলে আনিসা বেগম বড় জা’কে হাত ধরে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কাউকে কিছু বলার জন্য সুযোগ পর্যন্ত দিলোনা। ইশা তো মা’কে বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারলোনা। কারণ আনিসা বেগম যে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেছে।
” আ আ আ আম….. যাব্বাবা, চলে গেলো?? আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিলোনা। ধ্যাত, আম্মুটাও না…!
” কেন? তুই থাকতে চাস না আমার সাথে?? ”
আয়াশের কথা শুনে ইশা এবার আয়াশের দিকে ফিরলো। রাগী কণ্ঠে বললো—-
” না চাইবোনা কেন? আমি তো খুব করে চাই। এতোটাই চাই যে এখন আম্মুর বলাতে আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। যত্তসব। তুমি বুঝতে পারছো আমরা এক রুমে থেকেছি শুনলে সবাই কি ভাববে?? দুইজন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে এমন একা একটা রুমে এক রাত থাকা মানে বুঝো কিছু?? সবাই তো আমাদের নিয়ে যা নয় তাই ভাববে।
” কারা ভাববে?? কি ভাববে?? আর কেনই বা ভাববে??
” কারা ভাববে? কি ভাববে? আর কেনই বা ভাববে? এএএহহ, নেকা। কেন? কারা ভাববে জানোনা? আব্বু, আম্মু, বড় আব্বু, বড় আম্মু, ওরা সবাই……”
এতটুকু বলেই ইশা জিব কেটে থেমে গেলো। এসব কি বলছিলো সে?? ওর আম্মু নিজেই তো ওকে আয়াশের সাথে থাকতে দিয়ে গিয়েছে। তাহলে কে কি ভাববে সেটা নিয়ে ও এতো ভাবছে কেন?? কিন্তু ওর আম্মুটাই বা কেমন?? এমন একা একটা রুমে একটা ছেলের সাথে কেউ নিজের মেয়েকে থাকতে দিয়ে যায়?? হোক না সে চাচাতো ভাই। কিন্তু পুরুষ তো।
” কি হলো? চুপ করে গেলি কেন?? শেষ কর পুরো কথা। কারা কি ভাববে বল শুনি।
” ছাড়ো তো এইসব। উঠো খাবে। খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে তো। ”
আয়াশও আর কোনো রকম কথা না বলে আস্তে করে উঠে বসলো। তবে সোজা হয়ে নয়; খাটের কার্নিশের সাথে বালিশ ঠেকিয়ে সেই বালিশে হেলান দিয়ে বসেছে।
” এ কি? সোজা হয়ে না বসলে খাবে কি করে?? আর আম্মুটাও না…! বাসায় বুঝি আর প্লেট ছিলোনা। মাত্র একটা প্লেটে করে দুজনের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। ভাবা যায়??
” এটাও বুঝলিনা কেন এক প্লেটে করে নিয়ে এসেছে??
” এখানে বুঝার কি আছে?? বাসায় প্লেট বোধহয় শর্ট পড়েছে; তাই একটাতে করে এনেছে।
” যদি বলি তুই আমাকে খাইয়ে দিবি বলে এক প্লেটে করে এনেছে।
” এএএএহহহ, আসছে। আমি তোমাকে খাইয়ে দিতে যাবো কেন?? তুমি তো অতোটাও অসুস্থ হওনি যে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।
” সেটা ঠিক। বাট আমি যে তুই খাইয়ে না দিলে খাবোনা।
” কি মুশকিল রে বাবা। প্রতিদিন তো নিজের হাতেই খাও। তাহলে আজ আমাকে খাইয়ে দিতে হবে কেন??
” প্রশ্ন না করে খাইয়ে দিবি কিনা সেটা বল। নয়তো আমি শুয়ে পড়ছি। বেশি সময় ধরে বসে থাকার মতো ইচ্ছে কিংবা শক্তি কোনোটাই আমার নেই। ”
ইশা বুঝতে পারলো আয়াশ সিরিয়াস মোডে আছে। আর আয়াশ সিরিয়াস মোডে থাকা মানে, ওর একটা কথা হ্যাঁ থেকে না বললে কপালে দুঃখ আছে। তাই ইশা সাথে সাথে বলে উঠলো।
” আরে না না। খাইয়ে দিবো আমি। না খেয়ে শুয়ে পড়লে তখন মেডিসিন খেতে পারবেনা। আর জ্বরটাও ভালো হবেনা। বসো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”
এই বলে ইশা দ্রুত হাত ধুয়ে আয়াশের জন্য গ্রাস বানিয়ে সেটা আয়াশের মুখের সামনে ধরলো। আয়াশের তো সেই খুশি লাগছে। প্রথম বার, এই প্রথম বার ইশার হাতে খাবার খাবে। ভাবতেই যেন খুশিতে সপ্ত আকাশে উড়াল দিচ্ছে। তবে মনে মনে এতো খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করছেনা সেটা। চেহারায় একদম গুরুগম্ভীর্য ভাব বজায় রেখে ইশার হাত থেকে খাাবর টুকু মুখে পুরে নিলো।
” উমমমম, আজকের খাাবরটার মজায় আলাদা। সত্যিই, ভালোবাসার মানুষের হাতে খাবার খাওয়ার স্বাদটাই ভিন্ন। ”
ভালোবাসার মানুষটির হাতে খাবার খেলে যে এতো স্বাদ লাগে; সেটা আয়াশের আগে জানা ছিলোনা। জানা থাকলে হয়তো আয়াশ প্রতিদিনই ইশাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে ওর হাতে খেয়ে নিতো। আয়াশ যখন ভাবনার আকাশে উড়ছিলো; তখনই ইশা আবারও একটা গ্রাস তুলে ধরলো আয়াশের মুখের সামনে। তবে আয়াশ এই গ্রাসটা মুখে পুরলোনা। বরং ইশার হাতটি ধরে ইশার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে ধরে বললো।
” শুধু কি আমাকেই খাইয়ে দিবি?? তুই খাবিনা?? এক গ্রাস তুই খাবি। আর এক গ্রাস আমাকে খাইয়ে দিবি। নে, হা কর। ”
ইশাও কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো। তারপর থেকে এক গ্রাস আয়াশকে খাওয়াচ্ছে, আর অন্য গ্রাস নিজে খাচ্ছে। এভাবে করে খাওয়া শেষ করলো ইশা আর আয়াশ। খাওয়া শেষ হলে ইশা প্লেটটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দিয়ে আয়াশকে মেডিসিনও খাইয়ে দিলো। আয়াশের যেহেতু বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না; তাই সে মেডিসিন খাওয়ার সাথে সাথেই কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো। তবে আয়াশ শুয়ে পড়লেও ইশা এখনও শুইনি। ও তো বরং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখনও ভাবছে কি করবে?? আয়াশের সাথে এই রুমে কি থাকবে? নাকি নিজের রুমে চলে যাবে। যদিও আয়াশের উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে ওর। আয়াশ যে ওর সাথে খারাপ কিছু করবেনা সেটা ইশা ভালো করেই জানে। আয়াশই তো একমাত্র ব্যক্তি, যাকে ইশা চোখ বন্ধ করে ভরসা আর বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু তারপরেও ইশার কাছে কেমন যেন লাগছে এক রুমে থাকার বিষয়টা। কারণ এখানে ব্যাপারটা বিশ্বাস নিয়ে নয়; এখানে ব্যাপারটা নিজের মেন্টালি প্রিপিয়ার নিয়ে। ইশা যখন আয়াশের খাটের পাশে দাঁড়িয়ে অতো শতো ভাবছিলো,, তখনই আয়াশ বলে উঠলো।
” কি হলো ইশা! এখনও ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? আচ্ছা বাই এনি চান্স তুই কি কনফিউসড এই রুমে থাকা নিয়ে??
” না মানে আ আসলে….
” কনফিউসড হলে আমার সাথে থাকার দরকার নেই। তুই নিজের রুমে চলে যা। আমি মরে পড়ে থাকলে তখন না হয় এসে ডেকে তোলার চেষ্টা করিস। ”
আয়াশের মরার কথাটা যেন ইশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিধঁলো। মুহূর্তেই আয়াশের উপর বেশ খানিকটা দূর্বল হয়ে পড়লো ইশা।
” কি সব বলছো? এখানে মরার কথা আসছে কোথা থেকে?? আর আমি কি বলেছি আমি থাকবোনা?? আমি তো আসছিলামই। জাস্ট এখানে দাঁড়িয়ে একটা হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছিলাম।
” এখন মিলানো হয়েছে হিসাব??
” হুমমমম।
” তাহলে এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন??
” না মানে আচ্ছা আমি কি তোমার পাশে বিছানাতেই শুবো??
” হ্যাঁ, কেন??
” না বলছিলাম যে, এভাবে পাশাপাশি না থেকে আমি সোফায় ঘুমালে হতোনা??
” তোর কি এটাকে কোনো ভারতীয় সিরিয়াল মনে হচ্ছে যে একজন সোফায় ঘুমাবে আর একজন বিছানায়?? আমার এতো বড় বিছানাটা তোর চোখে পড়ছেনা?? ঐ ছোট সোফাটায় চোখে পড়লো?? আচ্ছা এসব নাহয় বাদ দিলাম। তুই শুধু এইটা বল যে, তুই সোফায় ঘুমালে আর আমি এখানে ঘুমালে যদি আমার কিছু প্রয়োজন হয় অথবা যদি আমি তোকে ডাকি তুই উঠতে পারবি?? তুই তো বুঝতেই পারবিনা যে আমার কিছু প্রয়োজন হচ্ছে।
” হ্যাঁ, ঠিক তো। ভাইয়া তো ঠিকই বলছে। আমি যদি সোফায় ঘুমায় তাহলে ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হলে বুঝবো কি করে?? ধুর, আমিও মাঝে মধ্যে কি সব বোকামি করিনা?? আমি তো জানি ভাইয়া আমার সাথে ভুল কিংবা খারাপ কিছু করবেনা। তারপরেও এতো ভাবছি কেন?? হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমরা দুইজন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে। এভাবে এক রুমে এক বিছানায় একই লেপের নিচে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু তারপরেও, আম্মু তো আর না বুঝে শুনে থাকতে বলেনি। তবে আমার মনে হয় এক রুমে এক বিছানায় থাকলেও ভাইয়ার সাথে একই কম্বলের নিচে থাকাটা আমার জন্য ঠিক হবেনা। ”
ইশা যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত, তখনই আয়াশ আবারও বলে উঠলো।
” কি হলো? এভাব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস?? নাকি এখনও কনফিউসড থেকে বেরিয়ে আসতে পারিসনি যে আমার সাথে থাকবি নাকি থাকবিনা। আচ্ছা তুই যদি এতোই কনফিউসড হস, তাহলে থাকার দরকার নেই। আমি তো আগেও বলেছি, তুই তোর রুমে চলে যা। আমার প্রবলেম হবেনা।
” আমি কি বলেছি আমি কনফিউসড?? আমি তো…….
” আবার এটা বলিস না যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছিস। কারণ আমি তোর মুখ দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারছি তুই আমার সাথে থাকাটা নিয়ে ভাবছিস।
” তুমি সবসময় দু’লাইন বেশি বুঝো। এতো বুঝতে কে বলেছে হ্যাঁ?? তুমি থাকো, আমি আসছি।
” দাঁড়া, কোথায় যাচ্ছিস??
” আমার কম্বলটা নিয়ে আসতে। এতো ঠান্ডার ভিতর আমি কি কম্বল ছাড়া থাকবো নাকি??
” কেন? আমার কম্বলে থাকতে প্রবলেম কোথায়??
” আমরা দুইজন ছেলে মেয়ে। আর দুজন ছেলে মেয়ে একই কম্বলে থাকা নিশ্চয় ভালো দেখায় না। তাই আমার কম্বল আনতে যাচ্ছি। যে শীত পড়েছে রে বাবা। মনে হয় কম্বলের ভিতরে সুইটার নিয়েই ঢুকে পড়তে হবে। আসছি আমি।
” দাঁড়া ইশা।
” আবার কি??
” কিছু নাহ। জাস্ট এইটা বলছিলাম যে কম্বল নিয়ে আর আমার রুমে আসার দরকার নেই। ওখানেই ঘুমিয়ে পড়িস।
” মানে??
” মানে হলো, তোর রুম থেকে কম্বল নিয়ে আসতে হলে আমার রুমে আসার দরকার নেই।
” কিন্তু……
” কোনো কিন্তু টিন্তু আমি শুনতে চাই না। যদি আমার সাথে থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়। আর নয়তো রুমে চলে যা। রাত অনেক হয়েছে। আমি ঘুমাবো।
” আরে রাগ করছো কেন?? আর সবসময় চলে যা চলে চলে যা করো কেন?? আমি তো এমনিই বলছিলাম। আমি তো থাকবো তোমার সাথে।
” তাহলে এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? সকাল হলেই কি শুবি??
” না না। এখনই শুবো। আসছি। ”
বলেই ইশা মেকি হেসে যেই না বিছানার দিকে আসতে ধরলো। অমনিই আয়াশ বললো।
” আরে আগে লাইটটা তো অফ কর।
” এই না না। তোমার সব কথা তো শুনছি আমি। প্লিজ লাইটটা অফ করোনা। আমার অন্ধকারে ঘুমোতে ভয় লাগে।
” আরে পাগলি! অন্ধকার থাকবে কেন?? ড্রিম লাইট জলবে তো। অফ করে আয়। আমি আছি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
” না না। আমি পারবোনা। লাইট অন করাই থাকবে। নয়তো আমি সারারাত ভয়ে ঘুমোতেই পারবোনা।
” তাহলে তো ভালোই হবে। না ঘুমিয়ে অন্য কিছু করবো।
” কিছু কি বললে??
” আ ব আব না ঐ বলছিলাম যে, আচ্ছা লাইট অফ করার দরকার নেই। তুই এসে শুয়ে পড়। ”
ইশা খুশি হয়ে হেসে আয়াশের পাশে উঠে বসলো। তারপর যেই না আয়াশের পাশে কম্বল টেনে শুতে যাবে অমনিই আয়াশ বাঁধ সাধলো।
” তুই কি এখন সুইটার নিয়ে ঘুমোবি নাকি??
” হ্যাঁ। আমার খুব শীত করছে। গত কয়েকদিন ধরে যেই শীত পড়ছে। আমি তো রোজ-ই সুইটার নিয়ে ঘুমায়।
” তুইও পারিস বটে। জানিস না রাতে সুইটার পড়ে ঘুমোতে নেই?? এতে গায়ের রক্ত শুকিয়ে যায়। আমি অসুস্থ হওয়া সত্বেও আমার শীত করছেনা। আর তোর এতো শীত আসে কোথা থেকে?? আজজজব। কি এমন শীত পড়ছে যে রোজ সুইটার পড়ে ঘুমাতে হয়?? আমি তো রোজই খালি গায়ে ঘুমায়। শুধু আজ শার্টটা খুলিনি। কই? আমার তো এতো শীত লাগেনা।
” তোমার শীত করেনা বলে কি আমারও শীত করবেনা নাকি? আজব। আর প্রতিদিন যদি এতোই খালি গায়ে ঘুমাও; তাহলে আজ শার্ট পড়ে শুয়েছো কেন??
” কারণ তুই যেই নেকার নেকা। দেখা যাবে আমি শার্ট খুলতে গেলে এমনভাবে চেঁচাবি যেন আমি আমার নয় তোর কাপড় খুলছি। তাই শার্টটা গায়েই রেখে দিয়েছি।
” ওওওও
” এখন আর কথা না বলে তাড়াতাড়ি সুইটার খুলে রেখে শুয়ে পড়।
” বাট রাতে যদি আমার শীত করে??
” আমি থাকতে তোর সুইটারের প্রয়োজন হবেনা সেটা নিশ্চিত থাক।
” কেন? তুমি কি শীত কমিয়ে দিবে??
” নাহ, তোকে উষ্ণ করে দিবো। এখন কি শুবি? নাকি বসে বসে বকবক করবি??
” হুহ্।
আয়াশকে ভেঙচি কেটে গায়ের সুইটারটা খুলে পাশে রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লো ইশা।
” কি হলো? এতো দূরে শুয়েছিস কেন?? এতো দূরে শুলে তো আমার থেকে পুরো কম্বল টেনে নিয়ে যাবি। আর শীতও করবে তোর। তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবিনা।
” উ উ উ উফফফ। কি ঠান্ডাআআ! তোমার কথা শুনে এমনিতেই শীত করছে। আর এখন বলছো তোমার দোষ নেই?? ”
কথাগুলো বলে ইশা আয়াশের কাছে না এসে বরং নিজেকে আরও গুটিয়ে নিলো। আয়াশ কিছু না বলে মুচকি হেসে আরও একটু ইশার কাছে গিয়ে ইশার গা ঘেঁষে শুয়ে ইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতে করে ইশার মুখটা একদম আয়াশের বুকের সাথে ঠেকে গেলো। আয়াশের এহেন কাজে ইশা তো রীতিমতো অবাক। আয়াশ ওকে জড়িয়ে ধরেছে?? ইশা নিজেকে আয়াশের বন্ধন থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো– ” ভ ভ ভাইয়া! কি করছিস?? ”
” আবার ভাইয়া?? আবার তুই??
চলবে………
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি