#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব____২০ [অন্তিম_পর্ব]
#নিশাত_জাহান_নিশি
নাবিল পিছু ঘুরল। মায়ার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁট লেগে গেল। নাবিল নেশালো হয়ে ওঠল। ঠোঁট আঁকড়ে ধরল মায়ার! সুখের নেশায় ভাসিয়ে দিতে লাগল মায়াকে।
_________________________
“থামলি কেন আপু? কষিয়ে আরও দুটো চড় দে। এই চার পাঁচটা চড়ে কিছু হয়?”
সানাম ভাবলো না। চড়িয়ে পুনরায় সিফরার গাল দুটো লাল করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল! গাল ফেটে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আশ্চর্যের বিষয় হলো সিফরা একটুখানি টু শব্দও করলনা! দাঁতে দাঁত চেপে আঘাতের পর আঘাত সহ্য করতে লাগল। এরচেয়েও কঠিন শাস্তির জন্য প্রস্তুত সে। এভাবে অপরাধবোধ নিয়ে বাঁচা যায়না। সানাম বিক্ষুব্ধ। সিফরাকে মারতে ধরার পর ধীরে ধীরে যেন রাগ প্রশমিত হতে লাগল! বিষয়টি ফায়েযের দৃষ্টিকটু লাগল। পাশ থেকে ফায়েয এসে সানামকে থামালো! সানামের হাত টেনে ধরে তীক্ষ্ণ সুরে বলল,
“স্টপ ইট সানাম। এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে।”
ধাতস্থ হলো সানাম। ফায়েযের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কান্না বিজরিত সিফরার উষ্ণ মুখশ্রীতে তাকালো। সিফরা কেঁদে দিলো। গালের ব্যাথায় মুখ থেকে রা টি ও বের হচ্ছিলনা তার! তবুও বলার চেষ্টা করল। সানামের পা দুটি চেপে ধরল সে। অসহায় ও আর্ত গলায় বলল,
“এবার তো আমাকে মাফ করে দাও আপু। আর কত অনুতাপের আগুনে পোড়াবে বলো? আমি যে প্রতিটি মুহূর্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। এভাবে তো বেঁচে থাকা যায়না। হয় তুমি আমাকে নিজ হাতে গলা টিপে খুন করো। নয় আমাকে ক্ষমা করো।”
সানাম ক্রমাগত রুদ্ধশ্বাস ফেলতে লাগল। ফায়েয শিথিল দৃষ্টি ফেলল ভাবুক ও অধীর সানামের দিকে। ইশারায় বুঝালো এবার অন্তত ক্ষমা করে দিতে। ফায়েযের ইশারা বুঝল সানাম। সিফরাকে পায়ের তলা থেকে ওঠালো। রক্ত ঝরে পড়বে এই গাল দুটিতে আলতো হাত ছোঁয়াতেই সিফরা উহ্ করে আর্তনাদ করে ওঠল। সানামের বুক কেঁপে ওঠল। বোনের প্রতি দরদ অনুভব হতে লাগল। ব্যাথীত হয়ে বোনকে বুকের মাঝে চেপে ধরল। বলল,
“বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?”
ডুকরে কেঁদে সিফরা বলল,
“এসব কোনো ব্যাথা নয় আপু। তোমাকে যে আঘাত দিয়েছি আমি এর কাছে এই আঘাত কিছুই নয়। তুমি চাইলে আমাকে আরও মারতে পারো আপু। তবুও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিওনা। পাঁচবছর আগে আমি যে ভুলটা করেছিলাম সেটা পুরোপুরি আবেগের বশে করেছিলাম! এখনকার মতো যদি বুঝতাম তবে পূর্বে এই ভুলটা করতাম না। প্লিজ আমার মনের কথাগুলো একটু বুঝার চেষ্টা করো আপু। আমাকে মাফ করো।”
অতীতের কোনো ঘটন কিংবা অঘটন কিছুই ভেতরে পুষে রাখতে চাইলনা সানাম। সিফরার প্রতি যে ক্ষোভ জমা ছিল তার, সব চড়ের মাধ্যমে পুষিয়ে নিয়েছে! আপন বোনকে এরচেয়ে বেশি কিছু আর কি করতে পারে। অপরাধের পর সিফরা এখন নিজেকে শুধরে নিয়েছে এরচেয়ে পজিটিভ বিষয় আর কি হতে পারে? সানাম মুখ খুলল। বলল,
“আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তুই আর স্পর্শ মিলে আমাকে যেভাবে ঠকিয়েছিস বা ঠকাতে চেয়েছিলিস তার ফল কিন্তু তোরা সকলে পেয়েছিস! তোরা যে প্ল্যান ভেবে রেখেছিলিস এরচেয়ে ভালো প্ল্যান আমার আল্লাহ্ আমার জন্য ভেবে রেখেছিলেন! তোরা এই কাজটা করেছিলিস বলেই তো ফায়েযের মতো একজন সৎ ও পাগলাটে প্রেমিক আমার কপালে এসে জুটল! এরজন্য আমি তোদের কাছে থ্যাংকফুল! যা ক্ষমা করে দিলাম তোকে। বাট উপর ওয়ালা তোকে ক্ষমা করবেন কিনা তা তো আমি বলতে পারবনা!”
সিফরাকে ছেড়ে দাড়ালো সানাম। ক্ষীণ হেসে সিফরার চোখে লেগে থাকা জলগুলো সন্তপর্ণে মুছে দিলো। সিফরা ক্ষমা তো ঠিকই পেল কিন্তু মনে শান্তি পেলনা এখনও! বারে বারেই একই প্রশ্ন আওড়াতে লাগল উপর ওয়ালা তাকে ক্ষমা করবে তো? সিফরার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সানাম বলল,
“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
সানামের রুম থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে সিফরা পা বাড়ালো। ইতিমধ্যেই প্রত্যয়ের সম্মুখীন হয়ে গেল সে। সিফরার দিকে আচম্বিত দৃষ্টি পড়ল প্রত্যয়ের। কি করুন অবস্থা মুখমন্ডলের। প্রত্যয় অস্থির হয়ে ওঠল। প্রশ্ন ছুড়ল,
“কি হয়েছে আপনার?”
সিফরা নিরুত্তর। বোবা কান্নায় লিপ্ত হয়ে প্রত্যয়কে উপেক্ষা করে মাথা নুইয়ে প্রস্থান নিলো। প্রত্যয় হতভম্ব ও উদগ্রীব দৃষ্টি ফেলে সিফরার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল,
“কি হলো মেয়েটির? মনে হলো কেউ মেরেছে তাকে। এরকম সুন্দরী একটা মেয়েকে কেউ মারতে পারে?”
নির্লিপ্ত ভঙিতে সানাম বুকের ওপর হাত গুঁজে দাড়ানো। ফায়েয বেশ ভাবে চলে এলো। শার্টের কলারটি পেছন দিকে এলিয়ে দিলো। অধর জুড়ে ক্রুর হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে আচমকা সানামের কোমড় জড়িয়ে ধরল! সানামকে যতটুকু সম্ভব কাছে টেনে আনল। সানামের সচকিত চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাহ্। এত্তো ভালোবাসা? এত্তো প্রশংসা? ফায়েয ফারনাজ চৌধুরীকে অবশেষে সারাহ্ সানাম সত্যি সত্যিই মন দিয়ে বসল?”
ফায়েযকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো সানাম! নাক ফুলিয়ে বলল,
“কেন? কোনো সন্দেহ?”
কলার ঝেরে ফায়েয রসিয়ে বলল,
“মন মন খেলা আর ভালো লাগেনা। কবে দেহ দিবে বলো?”
ডানপিটে গলায় ফায়েয প্রশ্নটি ছুড়ে দিলো সানামের দিকে। সানাম হিরহিরিয়ে ওঠল। ফায়েযের দিকে এগিয়ে এলো। কোমরে হাত গুজে শুধাল,
“আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না?”
“আটকাআটকির কি আছে? আজ পাকা কথা হয়ে গেলে তো আগামী মাসেই তুমি আমার ঘরণী হবে! আহা কি একটা রাত আমার জন্য অপেক্ষা করছে! মাথা ঠিক থাকবে তো আমার?”
ফায়েযের লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করার জন্য সানাম হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল! সানাম বের হয়ে যেতেই প্রত্যয় রুমে প্রবেশ করল। ফায়েযের ঠোঁটের কোণে এখনও ব্যগ্র হাসির রেখা লেগে। সানামকে নিঁখুতভাবেই ক্ষ্যাপাতে পেরেছে সে! তখনি প্রত্যয় পেছন থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ফায়েযকে শুধাল,
“সিফরার কি হয়েছে রে?”
ফায়েয ভাবশূণ্য গলাতেই বলল,
“কেন? তোর এত জানার আগ্রহ কেন?”
“মেয়েটাকে কেউ মেরেছে এমন মনে হলো।”
“খুব জ্বলছে দেখছি তোর! কাহিনী কি?”
বিষম খেলো প্রত্যয়। মাথা নুইয়ে পেছনের চুলগুলো টেনে লাজুক স্বরে বলল,
“কাহিনী আবার কি। কিছুনা।”
“প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি? সত্যি করে বল?”
তৎপর কণ্ঠে ফায়েয প্রশ্ন ছুড়ল। প্রত্যয় নির্ভীক দৃষ্টিতে ফায়েযের দিকে তাকালো। ভনিতা ভুলে বলল,
“আমি কি পাত্র হিসেবে অযোগ্য?”
“বিয়ে করতে চাইছিস?”
“সিফরা রাজি হবে তো?”
“তুই সিরিয়াস?”
“আমাকে দেখে কি মনে হয়?”
ফায়েয লক্ষ্য করল প্রত্যয় আসলেই সিরিয়াস। ফানি মুডে নেই সে। বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে প্রত্যয়কে বেশ ভালো করেই চেনা তার। সেক্ষেত্রে দ্বি-মতের কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। প্রত্যয়ের কাঁধে হাত রাখল ফায়েয। বলল,
“আমি কি তবে কথা আগাব?”
“প্রস্তাব রেখে দেখ। সিফরারও মত, অমতের ব্যাপার রয়েছে। জোর করে তো কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবেনা।”
ফায়েয ভাবল। সিফরার জন্য প্রত্যয় মন্দ নয়। প্রত্যয় দেখতে যেমন ঠিকঠাক তেমন যথেষ্ট পয়সাওয়ালাও। পরিবারও শিক্ষিত ও অমায়িক। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখল ফায়েয। সানামকেও এই বিষয়ে কিছু জানালো না। নিজের বিয়ের পাকা কথা বলতে এসে সে দুই পরিবারের মাঝখানে অবশেষে প্রত্যয় ও সিফরার বিয়ের প্রস্তাবটি রাখল! প্রত্যয়ও পাশে ছিল।
ছেলে হিসেবে সিফরার জন্য প্রত্যয়কে পছন্দ করে ফেলেছেন সিফরার পরিবার! তবে সিফরার থেকে মতামত নেয়া বাকি তাদের। মেয়ের অমতে কোথাও বিয়ে দিবেন না তারা। ভেবেচিন্তে সময় নিলেন কয়েকদিনের। এসবের মাঝে সানাম ফুলে পেঁকে গেল! ফায়েয কেন তাকে আগে এই বিষয়ে কিছু জানালোনা এ কারণেই ফায়েযের ওপর রুষ্ট সে।
রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরার পূর্বে ফায়েয একবার সিফরার রুমে গেল। বিছানায় উল্টে রয়েছে সিফরা। সদ্য গোসল সেরে বিছানায় গাঁ এলিয়েছে সে। প্রত্যয়ের বিষয়টি তার কানে এলেও তেমন আমলে নিলোনা সে! মন মেজাজ ভালো নেই তার। গুমোট অবস্থা। পেছন থেকে ফায়েয দরজায় টোকা মারল। গলা খাঁকিয়ে বলল,
“সিফরা আসব?”
তড়িঘড়ি করে সিফরা শোয়া থেকে ওঠে গেল। গাঁয়ের ওড়নাটি ঠিক করে নিজেকে সম্পূর্ণ পরিপাটি করে বলল,
“হ্যা জিজু আসুন।”
ফায়েয রুমে প্রবেশ করল। সিফরা মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে। নরম সুরে ফায়েয শুধাল,
“শরীর ঠিকঠাক এখন?”
“হ্যা জিজু ভালো এখন।”
“প্রত্যয়ের ব্যাপারে কিছু বলার ছিল তোমাকে।”
“জি বলুন?”
“প্রত্যয় তোমাকে ভালোবাসে এবং বিয়ে করতে চায়। এক্ষেত্রে তোমার মতামত কি?”
সিফরা নিশ্চুপ। প্রত্যত্তুর করলনা। ফায়েয অহেতুক কথা বাড়ালো না। সিফরাকে কেবল আশ্বাস দিয়ে এইটুকুনি বলল,
“তোমার মনে যা আছে নির্বিঘ্নে বলে ফেলতে পারো। তবে আমি আমার বন্ধু সম্পর্কে তোমাকে শুধু এতটুকুই বলব তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবেসে কিংবা বিয়ে করে তুমি ঠকবেনা। যদি আমার ওপর তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস থাকে তো আমার কথাগুলো একবার ভেবে দেখবে। অসুখী হবেনা কখনও। কয়েক দিন সময় নাও। আমার কথাগুলো ভেবে দেখো। এখন আসছি ওকে?”
সিফরা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বুঝালো। ফায়েয প্রস্থান নিলো। শেষবারের মতো সানামের সাথে একবার দেখা করতে তার রুমে গেল। সানাম ভীষণ রেগে। মুখ ফুলিয়ে রেখেছে সে। সানামের রাগের কারণ ধরতে পারল ফায়েয। ব্যগ্র হেসে আগে পিছে ঘুরতে লাগল সানামের। দুষ্টুমির স্বরে বলল,
“আরে এত রাগ করে কেন। সুন্দরীদের রাগলে পেত্নীদের মতো দেখায়। আমি কোনো পেত্নীর জামাই হতে পারবনা!”
তেড়ে এসে ফায়েযের শার্টের কলার চেপে ধরল সানাম। ফায়েযের দিকে রাগী দৃষ্টি স্থির রেখে গিজগিজিয়ে বলল,
“আর কি কি বিষয় আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছেন বলুন?”
কদাচিৎ হেসে ফায়েয বলল,
“কি লুকাব? আমার তো সব ওপেন।”
“নিজেকে খুব শেয়ানা ভাবেন?”
“তার প্রমাণ কি কম পেয়েছ?”
“ভনিতা না করে সোজাসাপটা বলুন প্রত্যয় ভাইয়া যে সিফরাকে বিয়ে করতে চায় তা আপনি আমাকে আগে বললেন না কেন?”
শার্টের কলার হতে সানামের হাতটি সরালো ফায়েয। সানামের দু-কাঁধে হাত ঝুলিয়ে আলতো হাসল। বলল,
“আমিও এই নিউজটা একটু আগেই জেনেছি। স্কোপ পাইনি তোমাকে বলার। এবার তোমার মতামত দাও। প্রত্যয়ের সাথে সিফরাকে কেমন মানাবে?”
“দারুন। বাট সিফরা রাজি হবে তো?”
“সময় লাগবে। বাট হবে।”
“এত কনফিডেন্স?”
“আমার কনফিডেন্স লেভেল কতটা হাই তা তুমি বিয়ের রাতেই বুঝতে পারবে সুইটহার্ট!”
এই বলে সানামের গালে চুমু খেতে আসা ফায়েযকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো সানাম। অন্যপাশ ফিরে লজ্জা জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“ভাগেন। বাড়ি যান।”
“একটা পাপ্পি দিব এতেই এত হিসেব? কোনো ব্যাপার নয়, সময় আমারও আসবে!”
অভিমান নিয়ে ফায়েয প্রস্থান নিলো। সানাম পিছু ডাকল। তবে ফায়েয শুনলনা!
______________________
“আমি জানি সবকিছু সিফরা। জেনেশুনেই তোমাকে বিয়ে করেছি।”
প্রত্যয়ের উক্ত কথায় চমকে ওঠল সিফরা। কান্না থামালো সে। মুখের জবানও বন্ধ হয়ে গেল প্রায়। আচম্বিত দৃষ্টি ফেলল তার সম্মুখে বর বেশে বসে থাকা প্রত্যয়ের দিকে! স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল দৃষ্টি প্রত্যয়ের। লাল টুকটুকে বউ সেজে বাসর ঘরে বসে সিফরা ও প্রত্যয়! অবশেষে মুখ খুলল সিফরা। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“সবকিছু জানার পরেও আপনি আমাকে ভালো চোখে দেখেন?”
সিফরার আশঙ্কিত দু-চোখে কোমল হাত ছোঁয়ালো প্রত্যয়। ভীষণ যত্নে লুটিয়ে পড়া চোখের জলগুলো মুছে দিলো। নিবিড় সুরে বলল,
“পাপকে ঘৃণা করতে হয়, পাপীকে নয়। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তুমি যে তোমার ভুল বুঝে বিনা সংকোচে মন খুলে ক্ষমা চাইতে পেরেছ এবং এর জন্য এখনও অনুতপ্ত বোধ করছ, নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ এটাই বা কয়জন করতে পারে? আমার চোখে তুমি মহৎ। কেননা আমি জানি পরেরবার তুমি এই ভুল করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ তোমার শিক্ষা হয়ে গেছে। তোমাকে এখন যেভাবে গড়িয়ে তোলা হবে তুমি সেভাবেই গড়ে ওঠবে! এটা আমার উপলব্ধি। কিন্তু এটা সত্যি যে প্রথম দেখায় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। মনে হলো প্রেম করার চেয়ে বিয়ে উত্তম তাই তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়েই তোমাকে বিয়ে করে ফেললাম।”
সিফরার সকল দুঃখ নিমিষেই মধুর সুখে পরিণত হলো। মুহূর্ত কয়েক পূর্বেও যে কি-না প্রত্যয়কে তার অপছন্দের শীর্ষ তালিকায় রেখেছিল কিছু সময়ের ব্যাবধানে প্রত্যয়ের নামটি পছন্দের প্রিয় শীর্ষে চলে এলো! কোনোদিকে কালক্ষেপন না করে সিফরা সুখের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে অকস্মাৎ প্রত্যয়ের বুকে মাথা গুজলো। প্রত্যয়কে অবাক করে দিয়ে সে বলল,
“মা-বাবার পরে সবচেয়ে কাছের জায়গাটি আপনি আজ দখল করে নিলেন! কতটা নিঁখুত আপনার বিশ্লেষণ শক্তি। আমাকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আপনি রাখেন। ধন্যবাদ আমাকে বুঝার জন্য। একটাই অনুরোধ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি এভাবেই আমাকে বুঝার ক্ষমতা আপনার মধ্যে থাকুক। কথা দিচ্ছি আপনি আমাকে যেভাবে গড়ে তুলবেন আমি সেভাবেই গড়ে ওঠব। ভবিষ্যতে আমার দ্বারা কোনো ভুল আর হবেনা।”
প্রত্যয় স্বস্তি পেল। মৃদু হাসল। সুখের আবেশে চোখ জোড়া বুজে নিলো। সিফরাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। বলল,
“বাঁচালে আমায়। তোমায় বুকে ধরে এবার আমি মরেও শান্তি পাব।”
অশ্রেভেজা সিফরার কপালে চুমু খেয়ে প্রত্যয় ধীরে ধীরে সিফরাকে তার রোমাঞ্চিত ভালোবাসায় রাঙিয়ে তুলতে লাগল।
_________________________
“কি হলো? এবার তো মুখটা দেখাও?”
কাতর কণ্ঠস্বর ফায়েযের। দুই বন্ধু ও দু-বোনের একসাথেই বিয়ে হলো আজ! গাঁ থেকে পাঞ্জাবি খুলে টুলে বেশ মুডে চলে এলো ফায়েয! কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানও তর সইছেনা তার। অনুমতি পেলেই সানামের ওপর ঝাপিয়ে পড়া বাকি! তার দৃষ্টির সীমানাতেই বিশাল বড়ো ঘোমটা টেনে সানাম বাসর ঘরে বসে। ফায়েযের রঙ ঢঙ দেখছে সে। অধৈর্য ফায়েযকে দেখে মিটিমিটি হাসল সানাম। ঘোমটার নিচ থেকে কঠিন কণ্ঠে বলল,
“বসে থাকুন। আরও দুই মিনিট বাকি।”
“আরে কি বলো এসব? দিনক্ষণ দেখে এখন রোমাঞ্চ করতে হবে নাকি? ঘোমটা সরাও বলছি।”
“ইশ বললাম না দুই মিনিট? এত কন্ট্রোললেস কেন আপনি?”
“তুমি কি বুঝবা? ফুটবল টিম কি তুমি বানাবা? বানাব তো আমি! তোমার জন্য সব আয়োজন ব্যর্থ হবে এখন!”
অবশেষে ঘোমটা খুলল সানাম। চোখেমুখে উত্তেজনা তার। উৎফুল্লিত কণ্ঠে বলে ওঠল,
“হ্যাপি বার্থডে বর সাহেব।”
ঘড়িতে তখন বারোটা বেজে এক মিনিট। ফায়েযের এতক্ষণে টনক নড়ল। বিয়ে করার উত্তেজনায় ভুলেই গিয়েছিল আজ তার জন্মদিন! হেলদোল নেই তার। সানামের মুখ দর্শন করে সে অধীর হয়ে সানামের কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দিলো। বলল,
“বার্থডে গিফট কই?”
“কি চাই বলুন?”
“আজ রাতে কোনো ডিস্টার্ব নয়। এটাই হবে আমার জন্মদিনের বেস্ট গিফট! কি পাব তো?”
সানাম লজ্জা পেল। ফায়েযের বুকে মুখ লুকালো। বলল,
“ফুটবল টিম বানানোর এতই তাড়া?”
“কত কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছি জানো?”
“কত কষ্টে? বলুন শুনি?”
“এই সুখের দিনে দুঃখের আর কথা স্মরণ করতে চাইনা। বহু সাধনা, দীর্ঘ অপেক্ষা ও বিরহের পর অবশেষে তোমাকে নিজের করে পেলাম। চাওয়ার মতো যদিও কিছু অবশিষ্ট নেই আর তবে এই স্নিগ্ধ ও ভালোবাসায় সিক্ত মায়াবী রাতের মতো প্রতিটি রাত আমাদের জীবনে অনাবিল সুখ বয়ে আনুক। দুঃখ আমাদের ছোঁয়ার আগে নির্বাসিত হোক।”
সানাম আলতো হাসল। জীবনের সব না পাওয়ার দুঃখ ঘুঁচিয়ে তার জীবনে ফায়েয নামক এক আশ্চর্য ম্যাজিকম্যান এলো। আঁধার কেটে নতুন ভোরের উদয় হলো। ফায়েয রুদ্ধশ্বাস ফেলল। আচমকা গভীর শোক তলিয়ে গেল! মনে মনে আওড়ে বলল,
“সাদিদ ভাইয়ার মতো করুন অবস্থা যেন আমার কিংবা আমাদের না হয় সানাম! যদিও তোমার প্রতি আমার শতভাগ আস্থা রয়েছে। তবুও এতটুকু ফরিয়াদ তো উপর ওয়ালার কাছে চাওয়াই যায়! আমি তোমাকে মিস করছি সাদিদ ভাইয়া! ভীষণ মিস করছি! জানিনা কি অবস্থায় আছো তুমি। তবে আজন্ম আমার প্রতিটি দোয়ায় তুমি থাকবে!”
কিয়ৎক্ষণ নীরব বেদনায় বিভোর হয়ে থাকলেও ফায়েয ধীরে ধীরে সানামের কোমল শরীরের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে ওঠল। তার উষ্ণ ভালোবাসার ছোঁয়ায় সানামকে ক্রমে ক্রমে ডুবিয়ে দিতে লাগল।
#সমাপ্ত
[আসসালামু আলাইকুম। এই প্রথম বোধ হয় আমি কোনো গল্প এত কম পর্বের লিখলাম! গল্পের থিম আমি যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম গল্পটা ঠিক সেভাবেই এগিয়েছে। মাঝে মাঝে অনেক পাঠকদের মনোক্ষুন্নও হয়েছে। এরজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখীত। চাইলে গল্পটা বাড়ানো যেতো, তবে কেন জানিনা এই গল্পটা আমার বেশি টানতে ইচ্ছে হলোনা। আশা করি লেখিকার ইচ্ছেকে আপনারা গুরুত্ব দিবেন এবং দু-এক লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করে যাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।]