আঁধারে_প্রণয়কাব্য #পর্ব____২ #নিশাত_জাহান_নিশি

0
124

#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব____২
#নিশাত_জাহান_নিশি

[আফিম নামটি চেঞ্জ করে আতিফ রাখা হয়েছে।]

“মা হয়ে তোর কাছে রিকুয়েস্ট করছি। তোর যদি অন্য কোথাও পছন্দ থাকে তো বলে ফেল! বিয়ের দিন দয়া করে তোর বড়ো বোনের মত আমাদের নাক কান কাটিসনা! তোর বাপকে আর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিসনা।”

লুকিয়ে সিফরা তার চোখের জল মুছল। তার মাকে কিছুতেই বুঝতে দিলোনা সে কাঁদছে। জোরপূর্বক হেসে সিফরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এসব কিছু নয় মা। তোমরা নিশ্চিন্তে আমার বিয়ে নিয়ে এগুতে পারো।”

“কিন্তু তোর চোখমুখ তো অন্য কথা বলছে। যদি আমার ধারণা সত্যি হয়ে থাকে তো বলে ফেল। আমরা অন্য ব্যাবস্থা নিব।”

“যদি অন্য ব্যাবস্থা নিতে হয় তবে আপুকে তোমরা ফিরিয়ে আনো মা। একজন না একজনকে তো হার মানতে হবেই। তাছাড়া বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে দেওয়াটা কি খুব মানানসই?”

অট্ট হেসে আফিয়া শিকদার বললেন,

“আবার লোক হাসানোর জন্য তাকে আমরা ফিরিয়ে আনব? দেখা যাবে আবারও বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে! এই মেয়ের প্রতি আমাদের আর কোনো বিশ্বাস নেই। আশা করি তোর প্রতি যে বিশ্বাসটুকু আছে সে বিশ্বাসটুকু তুই ভাঙতে দিবিনা।”

আফিয়া শিকদার প্রস্থান নিলেন। সিফরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নীরব ভঙ্গিতে ধীর পায়ে হেঁটে তার রুমে গেল। আলমারি থেকে অতি যত্নে একটি ফটো অ্যালবাম বের করল। বিছানার ওপর বসে সে ফটো অ্যালবামটি খুলতে প্রথমেই শ্যামো সুন্দর বর্ণের খুবই সাদামাটা এক যুবকের ছবি তার চোখে পরল। চোখ আঁটকে গেল তার। যুবকটি বেশ আলতো হেসে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে তার চুল ঠিক করছে। কি নির্মল, স্নিগ্ধ ও সতেজ দেখাচ্ছে তাকে। ছবিটির দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সিফরার চোখ থেকে আপনাআপনি জল গড়িয়ে পরল! আচমকা অ্যালবামটি বন্ধ করে সিফরা নিবিড় আকুতি করে বলল,

“আমাকে আপনি মাফ করে দিবেন স্পর্শ ভাই। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি আমার একটা ভুলের জন্য আজ আপনাদের জীবন এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে। যদি কোনোভাবে সম্ভব হয় তো আপনি ফিরে আসুন স্পর্শ ভাই।আমার আপুর এলোমেলো জীবনটাকে আবারও দু-হাত দিয়ে সাজিয়ে দিন। প্লিজ আপনি ফিরে আসুন প্লিজ!”

______________________

দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা পর সানামের জ্ঞান ফিরল। ঝিম ধরা শরীরে চারিপাশে তাকিয়ে দেখল সে তার রুমে নেই। তখনই হঠাৎ মনে পরল সে তো তন্নির বার্থডে পার্টিতে এসেছিল। এখনও সেই ক্লাবেই রয়ে গেছে। সাথে ঐ ভয়ঙ্কর লোকটির কথাও মনে পরল তার! সেই বিচ্ছিরি ও কর্কশ কণ্ঠস্বরও কানে বাজতে লাগল। ইতোমধ্যেই সানামের কানে একটি আধ পরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। সানাম অস্থির গলায় বলল,

“ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী?”

হম্বিতম্বি হয়ে সানাম রুম থেকে বের হতেই দেখল একটি লোক শাঁই শাঁই করে সামনের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে। লম্বায় ৬ ফিট তো হবেই! হাঁটার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছে কোনো দেশের সিনেমার হিরো হেঁটে যাচ্ছে! সময় ব্যয় করলনা সানাম। ছুটে গিয়ে সেই লোকটির পথ আগলে দাঁড়ালো। হাঁপিয়ে ওঠা গলায় শুধালো,

“আপনিই ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী তাইতো?”

যুবকটি বিরক্ত বোধ করল। ভ্রুযুগল কুৎসিতভাবে কুঁচকালো। ভাবশূণ্য গলায় বলল,

“হু ইজ ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী?”

“কেন আপনি! কণ্ঠস্বর তো এমনটাই মনে হচ্ছে।”

“হোয়াট? ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ম্যাম আ’ম নট ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী। রাস্তা আগলে ধরে এভাবে একটা অচেনা রিচ, ইয়াং, হ্যান্ডসাম ছেলেকে হ্যা*রাস করার মানে কি?”

“সরি ফর দেট। বাট আপনার কণ্ঠটা কেন জানিনা ফায়েয ফারনাজ চৌধুরীর সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।”

“বাই দ্য ওয়ে, আপনি ফায়েয ফারনাজ চৌধুরীর নাম জানেন, তার কণ্ঠস্বর চিনেন বাট তাকে চিনেন না ব্যাপারটা কি তাহলে আমি যেমনটা ভাবছি ঠিক ঐ রকম?”

চোখেমুখে দুষ্টুমির ছাপ ও বাঁকা হাসির লহরে উন্মাদ যুবকটি অন্যদিকে ইশারা করল। সানাম কপাল কুঁচকে শুধালো,

“ঐ রকম মানে? কি রকম?”

যুবকটি হঠাৎ তেতে ওঠল। শক্তপোক্ত গলায় বলল,

“ড্রামা বন্ধ করুন। মেইন পয়েন্টে আসুন। এক রাতের জন্য কত টাকা চার্জ করেন? বাড়িয়ে বললেও ক্ষতি নেই।”

“হোয়াট?”

“প্লিজ ডোন্ট বি সাউট। ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী যত দেয় আমি তার চেয়েও বেশি দিব! এবার রেটটা বলুন?”

“আপনি কিন্তু আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই আলতু ফালতু কথা বলছেন মিস্টার অ’স’ভ্য লোক। লিমিটের মধ্যে থাকুন।”

“ওহ্ রিয়েলি? ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আপনি ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেন না। আই থিংক আপনি এই পথে নতুন নেমেছেন তাই প্রথম প্রথম একটু হিজিটেড ফিল করছেন। বাট কো..নো ব্যাপার নয়, আমি আপনাকে সামলে নিব! যেভাবে ফায়েয ফারনাজ চৌধুরী আপনাকে সামলে নেয়।”

“ইউ ইডিয়ট! আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন। আপনার মত অসভ্য লোক আমি পৃথিবীতে দুটো দেখিনি।”

“ও হ্যালো মিস হোয়াটএভার। আমি কিন্তু আপনার সামনে এসে দাঁড়াইনি। আপনিই আমার সামনে এসে আমার পথ আটকে দাড়িয়েছেন ওসবের জন্য! চোখ দেখলেই বুঝা যায় কে কোন পথের! মানুষ চিনতে আমি কখনও ভুল করিনি।”

সানাম অধৈর্য হয়ে যুবকটির পথ থেকে সরে দাঁড়ালো। দুই হাত বাড়িয়ে যুবকটিকে এগিয়ে যেতে বলে ইশারা করে দাঁত চিবিয়ে বলল,

“ঘাঁট হয়েছে আমার। এবার আপনি যেতে পারেন। যত্তসব ফালতু লোক কোথাকার।”

সানামের কানের কাছে এসে যুবকটি মন্থর গলায় অশ্লীল আওয়াজ তুলে বলল,

“এত তাড়াতাড়ি হার মেনে নিচ্ছেন! বাই দ্য ওয়ে এইযে আমার কার্ড দিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার জন্য আমি টুয়েন্টি ফোর আওয়ার’স এভেইলঅ্যাবল! তবে রাতের বেলা হলে ভালো হয়! ঐ সময় মুড অন থাকে! রেট বাড়িয়ে দিতে বললেও বাড়াব নো প্রবলেম! টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো হিজিটেশন নয়। যেহেতু এখানে দুজনেরই স্যাটিসফেকশনের ব্যাপার আছে।”

যুবকটি ডানপিটে হেসে প্রস্থান নিলো! সানাম রাগে, দুঃখে ফুলেফেঁপে ওঠে যুবকটির দেয়া কার্ডটি মুহূর্তেই ছিঁড়ে ফেলল! বিষধর সাপের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করতে লাগল সানাম। যুবকটি একবার পেছন ফিরে তাকালো। রহস্যময় হাসি হেসে বলল,

“কার্ডটা ছিঁড়ে আপনি জীবনের মস্ত বড়ো ভুল করে ফেললেন মিস সারাহ্ সানাম। এবার আমার কাছে পৌঁছাতে আপনার বেশ বেগ পেতে হবে। বাই দ্য ওয়ে, রেগে গেলে মেয়েদের যে শেওড়া গাছের পেত্নীদের মত লাগে তা আমি আপনাকে না দেখলে বুঝতামই না! তবুও চলে। আপনার ক্ষেত্রে তো চালিয়ে নিতেই হবে। জেনেশুনে আপনাকে বেছে নেয়ার ফল তো আমাকে ভোগ করতেই হবে।”

বার্থডে পার্টি এখনও জমজমাট। কেক কাটা যদিও শেষ হয়ে গেছে তবে কেউ এখনও ক্লাব থেকে নড়েনি। সানাম ঘুরতে ঘুরতে ক্লাবের এক কোণায় এসে অবশেষে তন্নিকে খুঁজে পেল। ওয়াকিফের সাথে তন্নি রোমান্টিক মুহূর্ত পার করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে সানাম তন্নিকে সেখান থেকে ডেকে এনে বলল,

“আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

“মাথা খারাপ গেছে তোর? একা কিভাবে যাবি?”

“কেন? আতিফ আছেনা? আতিফ নিয়ে যাবে।”

“মনে তো হচ্ছেনা আতিফ এখনই যাবে বলে।”

“তাহলে আমি একাই যাব। রাস্তা চিনি আমি।”

“ফর দ্য গড সেইক সানাম অঘটন ঘটাস না আর। আসার পথে একবার বখাটে ছেলেদের কবলে পরেছিস, তো আরেকবার এখানে এসে জ্ঞান হারিয়েছিস। একটু অপেক্ষা কর। আতিফ তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

“ধ্যাত। তোর বার্থ ডেইটটাই কুফা। আর কখনও তোর বার্থডেতে আমাকে ইনভাইট করেছিস তো তোকে যদি আমি ড্রেনের ময়লা পানিতে না চুবিয়ে ছাড়ছি তবে আমার নাম ও সানাম নয়। এত বড়ো বাড়ি থাকতে ক্লাবেই কেন তোকে বার্থডে পার্টি এরেঞ্জ করতে হলো ইয়ার? জানিস কত ফালতু ফালতু লোক এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে? ভাবতেই গাঁয়ে কাটা দিয়ে ওঠছে।”

তন্নিকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সানাম আড্ডায় মজে থাকা আতিফকে জোর করে টেনে নিয়ে তার হলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। তন্নি জোর করে সানামের মুখে এক পিস কেক গুজে দিয়েছিল। সেই কেক খেতে খেতেই সানাম রওনা হলো।

________________________

“এত রাত হলো কেন বাড়ি ফিরতে?”

গাঁ থেকে শার্টটি খুলে হ্যাঙারে ঝুলাতেই ফায়েযের মা মালিহা চৌধুরী প্রশ্ন করলেন ফায়েযকে। ফায়েয ভাবশূণ্য গলায় বলল,

“নক করা ছাড়া আমার রুমে ঢুকলে কেন?”

“ছেলের রুমে ঢুকতে গেলেও নক করতে হবে?”

“ছেলে বড়ো হয়েছে এটা বুঝতে হবে।”

“মায়েদের কাছে ছেলেরা সবসময়ই ছোটো থাকে।”

“এসব ভুবন ভোলানো কথা আমাকে বলে লাভ নেই। নেক্সট টাইম নক করে এলে খুশি হব।”

“মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে কি মজাটা পাস শুনি?”

“ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম তাই লেইট হয়েছে। আর কিছু জানার আছে?”

“বালিশের তলায় একটা ছবি আছে দেখে নিস।”

মুহূর্তেই রাগে রঙিন হয়ে ওঠল ফায়েযের নিস্তেজ মুখমণ্ডল। তার মায়ের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি ফেলে বলল,

“তুমি চাওনা আমি বাড়ি ফিরি তাইতো? সেটা মুখে ক্লিয়ারলি বলে দিলে কি হয়?”

হাতের কাছে থাকা ফুলের টবটি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ফায়েয উন্মুক্ত শরীরে রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোটো সুইমিং পুলটিতে ডুব দিলো! পানির তলায় কিছুক্ষণ থেকে সে দম বন্ধ হয়ে আসার পূর্ব মুহূর্তে ভেজা শরীরে পাড়ে এসে বসল। কয়েকদফা বিক্ষিপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

“কি মজা পেলেন সানাম আমার জীবনটাকে এভাবে নষ্ট করে দিয়ে? আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করবনা সানাম। আমার প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত নষ্ট করার জন্য আপনাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে!”

মালিহা চৌধুরী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফায়েযকে দেখছেন। ছেলের কাছ থেকে দুঃখ পাওয়া সত্ত্বেও তিনি স্বস্তির শ্বাস ফেলে বললেন,

“উপর ওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ছবিতে এক পলক মেয়েটিকে দেখেই আমার ছেলের জীবনটা এভাবে এলোমেলো হয়ে গেল। না জানি মেয়েটা আমার ছেলের জীবনে থাকলে আর কি কি হয়ে যেতো! আমার ছেলেটা নিশ্চয়ই এতদিনে কবরে থাকত!”

#চলবে_____?

[আসসালামু আলাইকুম। নতুন গল্প কেমন লাগছে আপনাদের? গল্পের রেসপন্স দেখে মনে হচ্ছে ভালো লাগছেনা আপনাদের। এতদিন পর গল্প নিয়ে এসেও নিরাশ হলাম।🙃]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here