হৃদয়হরণী #পর্ব:১৪ #তানিশা সুলতানা

0
369

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৪
#তানিশা সুলতানা

সাদি বড়বড় পা ফেলে হাঁটছে। কোথায় যাচ্ছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ধরেই হাঁটছে সাদি। ছোঁয়াও সাদিকে অনুসরণ করে পা মেলাচ্ছে৷ শাড়ি পড়ার অভস্ত্য না ছোঁয়া। তাই পা মেলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে সে। খুব করে ইচ্ছে করছে সাদির ওই শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতটা ধরতে। মোটা মোটা আঙুলের ভাজে নিজের ছোট ছোট আগুন গুলো গলিয়ে দিতে। কিন্তু সেই সাহস কি আছে ছোঁয়ার? দেবে একটা ধমক। বা একটা থাপ্পড়ই দিলো। তখন কি হবে? সুন্দর গালটা লাল হয়ে যাবে। সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে। থাকক বাবা হাত ধরার প্রয়োজন নেই৷ পাশে যে হাঁটতে পারছে এটাই তো অনেক। তাই না?

প্রায় চল্লিশ মিনিট হেঁটে প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে ওরা। ছোঁয়া এবার আর চুপ থাকতে পারে না। ভীষণ ক্লান্ত সে। দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।

“আপনার টাকা নেই বললেই পারতেন। আমার কাছে টাকা আছে। একটা রিকশা নিয়ে আসতাম। তা না হাঁটিয়ে আনলেন? নতুন বউ আমি ভুলে গেছেন? আপনিই বোধহয় দুনিয়াতে প্রথম ব্যক্তি যে তার বউকে হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে আসলো। আপনার নাম জাদুঘরে তুলে রাখা উচিত। কিপ্টামির একটা লিমিট থাকা দরকার আপনি সেটা পেরিয়ে গেছেন। পাষান লোক একটা

সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। অভিমানী মুখটা দেখে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।
” আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো আমার সাথে পথ চলা খুব একটা সহজ হবে না।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে সাদিকে। ঠিক ধরতে পেরেছে। লোকটা তাকে জব্দ করতে হাঁটিয়ে নিয়ে আসলো। কি ভেবেছে এভাবে হারিয়ে দিবে ছোঁয়াকে? কখনোই না।

“আই থিংক আপনিও বুঝতে পেরেছেন ছোঁয়া চৌধুরী এতো তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হবে না।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷ ভাঙবে তবু মচকাব না৷
” হাঁটা তো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাছাড়া আমার বরের টাকা নেই। হাঁটবো না হয়। আপনি পাশে থাকলে আমি হাঁটতে হাঁটতে উগান্ডাও চলে যেতে পারবো। সমস্যা নেই আমার। ভালোবাসার জন্য শাহজাহান তাজমহল বানালো, ফরহাদ পাহাড় কেটে রাস্তা বানালো আমি সামান্য হাঁটতে পারবো না?
কি যে ভাবেন না আপনি। করলা খেতে খেতে মাথায় গ্যাস্টিক হয়েছে আপনার।

সাদি চুপচাপ হাঁটতে থাকে। ছোঁয়ার কথা যেনো সে শুনতেই পাচ্ছে না। ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকে। একটা মানুষ এতোটা নিরামিষ কি করে হতে পারে?

আলোয় ঝলমল করা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। আর কয়েক পা বাড়ালেই বাড়ির গেইট। ছোঁয়ার এখন একটু একটু ভয় করছে। সবাই কিভাবে নিবে? কি বলবে? কেমন রিয়াকশন হবে?
কিন্তু বেচারা গোমড়ামুখো চিল মুডে ভেতরে ঢুকছে। যেনো তার কোনো চিন্তাই নেই। যত চিন্তা সব ছোঁয়ার একার।
দারোয়ান চিৎকার করে বলে
” ছোট আপা আর ছোট ভাইজান চইলা আইছে।
তার চিৎকারে ছোঁয়া ভরকে যায়। বাড়ির মেইন দরজায় পা রাখতে গিয়েও ফিরিনে আনে। সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সাদি ভেতরে চলে গেছে।

আত্নীয় স্বজন পরিবারের সবাই ঘিরে দাঁড়িয়েছে সাদিকে। কাঁদতে কাঁদতে সাবিনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। নাজমা আর সিমিও কেঁদেছে অনেক।
ছোঁয়া ভেতরে ঢুকতেই নাজমা বেগম দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলে
“মা কোথায় গিয়েছিলি তুই?
কতো চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের।

ছোঁয়া কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। সেলিম আর সাজ্জাদ পাশাপাশি বসেছিলো। সেলিম দাঁতে দাঁত চেপে সাদির দিকে এগিয়ে যায়। সাদির কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে
” তোকে বলেছিলাম না আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকতে?
সিফাত এসে ওনাকে ছাড়িয়ে দূরে নেয়। রাগে থরথর করে কাঁপছেন তিনি। সাদি নিজের কলার ঠিক করে শান্ত চোখে তাকায় সেলিমের দিকে। কিন্তু জবাব দেয় না।
সাজ্জাদ ছেলের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কাঁধে হাত রেখে বলে
“কোথায় গিয়েছিলে? বরযাত্রী যেতে হবে তো। সবাই অপেক্ষা করছিলাম।

সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।
” ওকে বিয়ে করেছি আমি।

আরও একবার চমকায় সকলে। সেলিম এবার বলার মতো কথা খুঁজে পায় না। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। সাবিনা চোখের পানি মুছে সাদির দিকে এগিয়ে আসে।
নাজমা বেগমও রেগে যায় এবার। এটা হতে পারে না। তার ফুলের মতো পবিত্র মাসুম মেয়ে। তার বিয়ে নিয়ে হাজারটা জলপনা কল্পনা করা আছে তার৷ সাদি ছেলে ভালো। কিন্তু তার মেয়ের সাথে মানাবে না।

তিনি কঠিন সুরে বলে ওঠে
“যা বলেছিস বলেছিস। এটা আর বলবি না আব্বা। কোনো বিয়ে হয় নি।
ছোঁয়া মায়ের কথায় অবাক হয়। বিয়ে হয় নি মানে কি? বিয়ে তো হলো।
সেলিমও তেরে এসে বলে
” কোনো বিয়ে হয় নি৷ ছোঁয়াকে নিয়ে আমি এখুনি শহর ছাড়বো।

ছোঁয়া আতঙ্কে ওঠে।
“না না আমি কোথাও যাবো না। বিয়ে হয়েছে আমাদের। প্রমাণ আছে

সিমি ছোঁয়াকে কথা বলতে বারণ করে কিন্তু ছোঁয়া শোনার পাত্রী নয়।
সেলিম এবার কষিয়ে ধমক দেয় ছোঁয়াকে
” একটা কথাও বলবে না তুমি। বড় হয়ে গেছো না?
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো তোমার। বিয়ে হয়েছে তো? ডিভোর্সও দিয়ে দিবে৷ থাকবে না তোমারা এক সাথে। তোমাদের এক সাথে মানাবে না।

বাবার ধমকে ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। জীবনে প্রথমবার সে বাবার থেকে কড়া কথা শুনলো।

সাদি এবার সাবিনাকে বলে
“মা কাল থেকে আমাকে অফিস জয়েন করতে হবে। আমি চলে যাবো এখুনি
বলেই সে নিজের রুমে চলে যায়।

সেলিম আবারও বলে ওঠে
” তুমি সাদি ডিভোর্স দিবে। ছেড়ে দিবে তাকে এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্ত নরচর হলে তোমাকে মে*রেই ফেলবো আমি।

ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে
” মায়ের সাথে তোমাকে মানলে, আপির সাথে জিজুকে মানালে আমার সাথেও ওনাকে মানাবে।
তুমি মাকে ছাড়তে পারলে, আপি জিজুকে ছাড়তে পারলে, আমিও সাদুকে ছেড়ে দিবো।
এবার সিদ্ধান্ত তোমার।

সেলিম বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়ের কথা শুনে। সিফাত মুখ টিপে হাসে। সাজ্জাদের সিটি বাজাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পারছে না। এই মেয়েই পারবে তার ছেলেকে মানুষ করতে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে নিজের রুমে ঢুকে যায়। তাকেও তো জামাকাপড় গোছাতে হবে।
কাঁদতে কাঁদতে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয় সে। শখের একটা লাগেজ আছে ছোঁয়ার। সেটা বাবা কিনে দিয়েছিলো। সেই লাগেজটাই নিয়ে যাচ্ছে ছোঁয়া।

সাদি রুম থেকে বের হতেই দেখে ছোঁয়াও বেরিয়ে গেছে৷
ছোঁয়া কাছাকাছি আসতেই সাদি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। কারো সাথে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া সাদির পেছন পেছন দৌড় দেয়।
সবাই তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।

বাইরেই সামির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাদি গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। ছোঁয়াও পেছনে বসে।
সাদির দিকে তাকিয়ে বলে
“আমি তো ভেবেছিলাম এখন হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন। যাক একটু হলেও অপাষাণ।

সামির ড্রাইভিং করতে করতে জিজ্ঞেস করে
” অপাষাণ আবার কি?
“অপাষাণ মানে একটু হলেও মায়া আছে।
সামির হাসে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সে ফোন দেখছে।
” সামির ভাইয়া
তোমার বাকি বন্ধুরা কোথায়?
“কোথায় আবার তোমাদের জন্য ঘর সাজাচ্ছে?

“কি দিয়ে ভাইয়া? নিমপাতা আর আস্ত আস্ত করলা দিয়ে?

ছোঁয়ার কথায় সামির শব্দ করে হেসে ওঠে।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here