হৃদয়হরণী #পর্ব:১৭ #তানিশা সুলতানা

0
349

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৭
#তানিশা সুলতানা

গম্ভীর দৃষ্টি ছোঁয়াকে দেখছে সাদি। এই নারীর প্রতি তার আসক্তি নেই তবে কিছু একটা আছে।
কিশোর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলো সে। একটা নারীর সঙ্গ পেয়ে গম্ভীর একঘেয়ে সাদি মিশতে শিখেছিলো। বন্ধু বানিয়েছিলো রিমি, ইরা, পাপন, ইমন, আশিক ওদের সাথে।
সময়ের ব্যবধানে সেই নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে কিন্তু বন্ধুরা ছাড়ে নি। সেই নারীর প্রতিও সাদির আসক্তি ছিলো না ছিলো ভালো লাগা এবং মায়া। সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিলো সাদির। অনেকটা সময় লেগেছিলো।
এখনো হয়ত মনের কোথাও সেই নারীর জন্য মায়া কাজ করে।
সেই নারীর হাত ধরার ইচ্ছে ছিলো সাদির। কিন্তু ধরতে পারে নি। সেই নারীর ললাটে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বলার ইচ্ছে ছিলো “আমাকে ছেড়ে যেয়ো না”
কিন্তু বলতে পারে নি। তার আগেই মায়াবী নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে।
যেইদিন সেই নারীর বিয়ে ছিলো সেই দিন ছোঁয়ার ভীষণ জ্বর ছিলো। মনে আছে সাদির। বাড়ি সুদ্ধ সকলেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছিলো।
তখন বয়স কতো ছিলো ছোঁয়ার? দশ বছর হবে মনে হয়।
বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিলো না। সকলেই বাইরে ছিলো। প্রথমবার বাচ্চা ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিয়েছিলো সাদি। ছোঁয়ার গরম মাথাটা সাদির বুকে পড়তেই হৃদয় কেঁপে উঠেছিলো।

ব্যাথায় মুখটা লাল হয়ে গেছে ছোঁয়ার। উঠে বসতে গিয়ে কম্বলের নাক লেগেছিলো। চোখে পানি চলে এসেছে। হালকা রক্তও এসেছে নাক ফুলের পাশে।
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছছে। সাদি রেগে আছে বুঝতে পারছে ঢের। অবশ্য লোকটা কখনই বা রেগে থাকে না? সদা তার নাকের ডগায় রাগ থাকে।

“আন্টি বললো নাকফুল পড়তে হয়। আম্মু পড়ে, বড় মা পড়ে,আপি পড়ে।
আমাকে একটা নাকফুল কিনে দিয়েন প্লিজ

সাদি জবাব দেয় না। তার নজর ছোঁয়ার নাকে থাকা সাদা পাথরের নাক ফুলের দিকে। বেশ মানিয়েছে ছোঁয়াকে। চেহারা থেকে বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা চলে গেছে। পারফেক্ট বউ মনে হচ্ছে। কে বলবে এই মেয়েটার শিরায় শিরায় দুষ্টমি বিরাজ করছে?

“দুইশো টাকা লাগছে। আন্টি দিয়ে দিয়েছে। আপনি আমাকে দুইশো টাকা দিয়েন। আমি আন্টিকে দিয়ে দিবোনি।

সাদি লম্বা শ্বাস টানে। ছোঁয়ার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ছোট্ট করে বলে।

” আচ্ছা

ছোঁয়া বিছানা থেকে নামতে যায়। সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। তাকায় সাদির মুখের পানে। লোকটাকে আজকে অন্য রকম লাগছে। বেশ অদ্ভুত তার চোখের দৃষ্টি। বিলাই চোখ দুটোতে রাগ, বিরক্তি কিংবা সহানুভূতি নেই। আছে শুধু গম্ভীর মুগ্ধতা।
ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য পাগল ছোঁয়ার নেই। সে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।
আমতা আমতা করতে থাকে। লোক আসলে কি করতে চাচ্ছে বোঝার চেষ্টা করতে থাকে ছোঁয়া। আজকে কেমন অচেনা লাগছে তাকে। এটা কি সত্যিই সাদমান চৌধুরী?
সাদি ছোঁয়া দিকে একটু চেপে বসে। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার নাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। এতোটা আশা করে নি ছোঁয়া। ধমক খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে।
ছোঁয়াকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে খুব দ্রুত শব্দ করে চুমু খায় সাদি ছোঁয়ার নাকে। ভুমিকম্পোর মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এ কেমন অনুভূতি? শ্বাস টানতেও পারছে না। বুক কাঁপছে পেটে মোচর দিচ্ছে গলা শুকিয়ে গেছে। শরীরের দুর্বলতা জ্বর জ্বর ভাবটা কোথাও একটা বিলিন হয়ে গেছে। সাদির দেওয়া ছোট্ট স্পর্শ মনের মধ্যে গভীর দাগ কেটে গেছে। সুন্দর পবিত্র অনুভূতি অসুস্থতা বিলিন করে দিলো বোধহয়?
ছোঁয়া নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা নাকে দেয়। সাদি দূরে চলে গিয়েছে চুমু খাওয়ার পরপরই। তবে রুম থেকে বের হয় নি৷

“শ্বাস টানো
স্বাভাবিক হয়ে বাইরে এসো। ইরা এসেছে তোমায় দেখতে।

বলেই সাদি দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া সত্যিই শ্বাস টানে। চোখ খুলে তাকায়। এখনো মনে হচ্ছে লোকটার ছোঁয়া নাকে লেগে আছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার। লাফিয়ে ওঠে সে।
এক লাফে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে

” চুমু যেহেতু দিয়েছে আরও দিবে। যাককক ফুলবল টিম বানানোর চান্স আছে তাহলে। হয়ত একটু সময় লাগবে। তবে আমিষ হবে লোকটা৷ এটা কনফার্ম।
মনে মনে এইটুকু ভাবতেই চুমু দেওয়ার মুহুর্তটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে
“আমার বর আমাকে চুমু দিছে।
সত্যিই চুমু দিছে। ইসসসসসসসস
এই লজ্জা আমি লুকাবো কোথায়?
দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে ছোঁয়া।
” মুহুর্তেটা ভিডিও করে রাখতে পারলে ভাল্লাগতো। একটু পরপর দেখতাম। কিন্তু আফসোস।

ছোঁয়া চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বের হয়। বেশ ফুরফুরে মেজাজ তার।

ইরা আর সাদি বসে আছে। ইরার হাতে কফির মগ। সে কফি খাচ্ছে আর নিজের বরের কথা গল্প করে যাচ্ছে। সাদি চুপচাপ ফোন দেখছে। ইরার কথা যে সে শুনছে না বুঝতে পেরে হাসে ছোঁয়া।
আপুটাকে বেশ মনে ধরেছে তার। একদম তার মতো।

“আপু সরি আপনাকে অপেক্ষা করালাম। আসলে নাক ফুঁটো করেছি তো তাই একটু অসুস্থ ছিলাম। এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি।

বলতে বলতে ইরার পাশে এসে বসে ছোঁয়া। ইরা কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে সেটা টি-টেবিলে রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে।

” তা এখন সুস্থ হলে কি করে? সাদি চুমু খেয়ে নিয়েছে?

ছোঁয়া লাজুক হাসে। মাথা নিচু করে ফেলে। বেশ লজ্জা লাগছে তার। ছোঁয়াকে লজ্জা পেতে দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে ইরা।
গাল টেনে দেয় ছোঁয়ার।

“ইসস কি মিষ্টি তুমি। তোমাকে আমি টিপস শিখিয়ে দিবোনি।

সাদি দাঁড়িয়ে যায়।
” দেখতে এসেছিস। দেখেছিস এখন চলে যাবি। আর আশা চলবে না এখানে।

ইরা ভেংচি কাটে
“বললেই হলো? আমি তো আসবোই।
ছোঁয়া বুঝলে আমি রিমি ইমন আমরা তিনজন মিলে তোমাকে

ইরাকে বলতে না দিয়ে বাকিটা সাদি বলে ওঠে
” এমনিতেই বাঁদর
এখন তোরা তিনজন মিলে গাছে উঠিয়ে দিবি।
ওকে বলে দে বাড়াবাড়ি করলে বাড়িতে রেখে আসবো।

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে। ইরা ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“তুই যা তো এখান থেকে। আমি ছোঁয়ার সাথে কথা বলতে এসেছি। আমি খাবো। রান্না কর গিয়ে। সর এখান থেকে।

সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকায়। যার অর্থ “বাড়াবাড়ি করলে সত্যিই রেখে আসবো”

সাদি চলে যায়। ইরা ছোঁয়ার সাথে গল্প করতে থাকে। দুজনের গল্প বেশ জমে উঠেছে। ইরা ভীষণ মজার মানুষ। ছোঁয়াও মজা পাচ্ছে।

রাত দশটার দিকে ইরাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বের হয় সাদি। ছোঁয়া বই নিয়ে বসে আছে। সাদি কড়া গলায় পড়তে বলেছে। কি আর করার? বাধ্য বরের বাধ্য বউ হয়েছে ছোঁয়া পড়ছে।

____

সেলিম চৌধুরী বসে আছে সাজ্জাদ চৌধুরীর সামনে। দুজনের মুখটা গম্ভীর।
“ভাইয়া আমার মেয়েটার ভবিষ্যত আছে। সে এখনই পড়ালেখা বাদ দিয়ে সংসার করুক এটা আমি চাই না।
ছোঁয়াকে তুমি নিয়ে এসো। এইচএসসি পরিক্ষার শেষে ধুমধাম করে ওদের আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। আপাতত সে এই বাড়িতে থাকবে।

সেলিমের কথাটা মন্দ না। এমনটাই ভালো হবে।

” ঠিক আছে আমি কাল গিয়ে নিয়ে আসবো ছোঁয়াকে। তবে সেলিম ছোঁয়াকে আনার পেছনে যদি তোর অন্য কারণ থাকে তাহলে জেনে রাখ আমি সেটা হতে দিবো না। তুই নিজেও জানিস তোর মেয়ে আমার ছেলের জন্য কতোটা পাগল। তো এমন কিছু করিস না যাতে মেয়েটা আঘাত পায়।

সেলিম জবাব দেয় না। বেরিয়ে যায় সাজ্জাদের রুম থেকে। দরজার আড়াল থেকে সাবিনা সবটা শুনছিলো।
তিনি স্বামীর কাঁধে হাত রাখে।
“তোমার সাথে আমিও যাবো। কয়েকটা দিন থেকে আসবো সাদুর সাথে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ।
” ঠিক আছে। ব্যাগ গুছিয়ে নাও।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here