#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৫
#তানিশা সুলতানা
মানুষ সব সময় তার বিপরীতে স্বভাবের মানুষকেই ভালোবেসে ফেলে। এই যে ছোঁয়া চঞ্চল, উড়নচন্ডী, হৈ হুল্লোড় করতে পছন্দ করে। কিন্তু সাদি?
গম্ভীর! একটু বেশিই গম্ভীর সে। মানুষ কখনো এতোটা গম্ভীর হয়?
হুমম হয়
মানুষের জীবনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে যা তাকে গম্ভীর হতে বাধ্য করে। সাদি ছোট বেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের কিন্তু এতোটা গম্ভীর সে ছিলো না। একটু আতটু কথা সেও বলতো। খিলখিল করে না হাসলেও মুখ টিপে সে হাসতো। বন্ধুদের সাথে খুব বেশি আড্ডা না দিলেও মাঝেমাঝে একটু সময় দিতো।
কিন্তু এখন তার সেই হাসিটা চলে গেছে।
সামির সাদির কথা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে কানে হেডফোন গুঁজে নিয়েছে আর ছোঁয়া সামির সাথে কথা বলে যাচ্ছে। অবশ্য সামির কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না শুধু ছোঁয়ার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। হাত নেরে নেরে কথা বলছে সে। কথার মাঝেমাঝে শব্দ করে হেসে উঠছে। হাসতে হাসতে গাড়ির কাঁচে বাড়ি খাচ্ছে।
ছোঁয়া কথা গুলো অদ্ভুত। এই যে যেমন সে পাখি হলে উড়ে চলে যেতো ফ্লাইটে। গাড়ি করে যেতে হতো না। টাকা বাঁচতো। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে দুই চারটা গাড়ি চুরি করে ফেলতো সে। সাদির মাথা নেরা করে দিলে কেমন লাগবে। এইসবই
একই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছে সাদি। বাড়িতে থাকলেও পারতো। কিন্তু সাদি থাকবে না। এখান থেকে ছোঁয়ার কলেজে যাওয়ার রাস্তা দশ মিনিটের। আর সাদির অফিসের সামনেই বাসাটা।
মেইন রোডের পাশেই তিন তালা বিল্ডিং এর ওপরের তালার বাসাটা ভাড়া নিয়েছে সে।
বেশ বিলাশ বহুল রুমটা। তিনটে রুম। দুটো রুমের সাথে ছোট্ট বেলকনি আছে। একটা কিচেন আর ছোট্ট একটা ড্রয়িং রুম। একটা পরিবার অনায়াসে থাকতে পারবে।
রিমি আশিক পাপন তারা পুরো বাসাটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। আনাচে কানাচে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সব থেকে বেশি ফুল লাগানো হয়েছে সাদির রুমটাতে। মনে হচ্ছে ফুলেরই বাগান।
ছোঁয়া বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে যায়। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সবটা।
রিমি আর পাপন ছোঁয়ার সাথে সাথে যাচ্ছে। তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কোথায় কি আছে। ছোঁয়া ভীষণ খুশি। কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার। এমনটাই তো সে কল্পনা করেছিলো। স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন কি তবে সত্যি হলো?
সাদি ফাঁকা রুমটাতে ঢুকে পড়েছে। তার ফ্রেশ হওয়া দরকার।
রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
ছোঁয়া বাসর ঘরে ঢুকতেই লাফিয়ে ওঠে। খাটের মাঝখানে গিয়ে বসে রিমিকে ছবি তুলে দিতে বলে। রিমিও হাসি মুখে ছোঁয়ার ছবি তুলে দিতে থাকে।
সামির বিরিয়ানি আনে। খিধেয় সবারই পেট চৌ চৌ করছে। ছোঁয়া শাড়ি গহনা ফেলে সুতি থ্রি পিছ পড়ে নিয়েছে। এতোখনে তার শান্তি লাগছে।
রিমি পাপন খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। সাদি এখনো বের হয় নি রুম থেকে। সবাই জানে সাদি বিরিয়ানি খাবে না। তাই রিমি গিয়ে গ্যাসে ভাত আর করলা সিদ্ধ বসিয়ে দেয়। তারা খেতে খেতে হয়ে যাবে।
তারপর সবাই মিলে খেতে থাকে। বিরিয়ানি ছোঁয়ার ভীষণ প্রিয়। তাকে তিন বেলা বিরিয়ানি খেতে দিলেও সে না করবে না। ছোঁয়া গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে থাকে। আজকে তার বিয়ে হয়েছে তার বর এখনো খায় নি এদিকে ছোঁয়ার খেয়াল নেই৷ সামির ভাবে মেয়েটা নেহাতি বাচ্চা। এখনো সংসার স্বামী এসবে তার আগ্রহ হয়ে ওঠে নি।
তবে মেয়েটা সাদিকে অসম্ভব ভালোবাসে৷
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। ছোঁয়া পেঁয়াজ মরিচ কেটে করলা ভর্তা করে নেয়। সত্যি বলতে এই ভার্তা ছোঁয়ারও খুব পছন্দ। গরম গরম ভাতের সাথে খেতে দারুন লাগে।
প্লেটে ভাত বেরে তারপর ভর্তা নিয়ে সাদিকে ডাকতে যায়।
পাষাণ লোকটা এখনো দরজা খুলে নি। ছোঁয়া দরজায় টোকা দেয়
“এই যে দরজা খুলুন। আপনার রুমে সোনাদানা নেই যে কেউ চুরি করে নিয়ে নিবে। ঢং বাদ দিয়ে দরজা খুলুন। আর তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
তবুও সাদির কোনো সাড়া নেই। ছোঁয়ার রাগ হয়। দুটো লাথি মারে দরজায়। তারপর জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে মারতে ডাকে
” সাদু দরজা খুলবেন কি না বলুন? না খুললে আমি ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম। ঢং দেখাচ্ছেন কাকে আপনি? আপনার ঢং দেখায় সময় নেই আমার। জলদি জলদি দরজা খুলুন৷ এমন একটা ভাব করছেন যেনো বিয়ে করে লজ্জা পাচ্ছেন। বা আপনি মেয়ে জোর করে আপনাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই দরজা বন্ধ করে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে দরজা খুলুন।
সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে আসে। মুখ নারিয়ে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। কি কি বলেছে ভাবতেই আবারও শুকনো ঢোক গিলে। পিটপিট করে এক পলক তাকায় সাদির দিকে। বেচারা রোবট গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। রেগে আছে না কি বোঝা যাচ্ছে না।
ছোঁয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে বলে
“সরি
আসলে আপনি তো দরজা খুলছিলেন না। তাই ভাবলাম মুখ চালাই। শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে আমাকে থামানোর জন্য দরজা খুলে দিবেন৷
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে ছোঁয়ার থেকে নজর ফিরিয়ে নেয়
” সত্যি বলছি। আমি শুধুমাত্র আপনাকে বের করার জন্য বেশি কথা বলেছি। তাছাড়া আমি কখনোই বেশি কথা বলি না। এই যে এই বিল্ডিং এর কসম। আমি তো পাগল যে রাক্ষসের সামনে মুখ চালাবো
“ভেরি গুড এতোদিনে নিজেকে চিনেছো।
বলেই সাদি খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে। আর ছোঁয়া ভেবাচেকা খেয়ে যায়। মুখের ওপর অপমান করে দিলো? বজ্জাত লোক। কিছু বলারও যাবে না৷
সাদি খাচ্ছে আর ছোঁয়া পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লাগলে দেবে সে।
” কোন রুমে থাকবে?
সাদির প্রশ্নটা বুঝতে পারে না ছোঁয়া। কোন রুমে থাকবে মানে?
ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া খেয়াল করে সাদি পানি ঢালছে গ্লাসে। তারাহুরো করে সাদির হাত থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাকতে যায় ছোঁয়া। কিন্তু গ্লাস পড়ে গিয়ে পুরো পানিটা সাদির শরীরে এসে পড়ে।
ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া। এই যে এখনই একটা ধমক খাবে সে।
রাতে শরীর কাঁপতে থাকে সাদির। ভাতের প্লেটেও পানি পড়েছে। পান্তা ভাত হয়ে গেছে।
ছোঁয়া কিছু বলতে যায়
“এখান থেকে যাও তুমি ইডিয়েট
সাদি গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে বলে।
কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো টলমল করছে। সে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।
সাদির আর খাওয়া হয় না। বেসিনে গিয়ে হাত ধুঁয়ে এঁটো থালাবাসন গুছিয়ে নেয়। এতোগুলো মানুষ খেয়েছে। থালাবাসন জমেছে অনেক গুলে। তাই থালাবাসন মেজে নেয়।
ছোঁয়া ফুল সাজানো খাটে বসে আছে মন খারাপ করে। ইচ্ছে করে ফেলেছে না কি ছোঁয়া? এভাবে ধমক দেওয়ার কোনো মানে হয়? পাষাণ লোক। ছোঁয়া মনে মনে সাদিকে বকা দিচ্ছে তখনই সাদি ঢুকে পড়ে ছোঁয়ার রুমে।
ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। লোকটা এখানে কেনো এসেছে? বাসর করতে? ইসসস ছোঁয়া লজ্জা লুকাবে কোথায়? সাদি কি তাহলে আমিষ হয়ে গেলো?
বিয়ের রাতে রাত বারোটায় ফুল সাজানো রুমে বউয়ের কাছে মানুষ কেনো আসে?
ছোঁয়া সবটা জানে। সে তার বান্ধবীর কাছে শুনেছে। এ টু জেড সবটা শুনেছে সে।
লজ্জায় লালনীল হতে থাকে ছোঁয়া।
চলবে
সরি অপেক্ষা করানোর জন্য।
নেট এখন আসলো। লিখা শেষ করেছিলাম কাল বিকেলেই।