#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়া এখনো সেই দৃশ্যটা ভুলতে পারছে না। হাত পায়ের কাঁপন একটুও কমে নি। বুকটা এখনো টিপটিপ করে যাচ্ছে।
লোকটা ভীষণ খারাপ। বাজে একটা লোক। এই লোকটাকে দেখবে না বলে বাবা মাকে ছেড়ে এতো দূরে পাড়ি জমালো। পরিচিত কলেজ পরিচিত বন্ধু বান্ধব সবাইকে ছেড়ে চলে আসলো।
কিন্তু তাতে কি হলো?
লোকটা তো চোখের সামনেই থাকবে। ছোঁয়ার কাছাকাছি। এই লোকটাকে ভুলবে কি করে ছোঁয়া? অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসবে কি করে?
প্রথম অনুভূতি কি এতো সহজে ভোলা যায়?
লোকটাকে ছোঁয়ার ভালো লাগে সেই বাচ্চাসুলভ বয়স থেকে। সবার থেকে আলাদা সে। কথা বলে না হট্টগোল পছন্দ করে না। সারাক্ষণ একা একা থাকে।
মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসলে ঈদ বা কোনো অনুষ্ঠানে তখন দেখতো তাকে।
সেই ভালো লাগাটা পাগলামিতে রূপ নিলো যখন সাদি ছোঁয়ার কলেজে চাকরি পেলো। এবং তাদের ওপর তালায় থাকতো। দূর থেকে দেখতো আর সবাইকে বলে বেড়াতো তার অনুভূতির কথা।
সাদির পাশের রুমটা ছোঁয়ার। সে আপাতত বিছানায় সটান হয়ে বসে আছে। একা একা জামা পাল্টাতে পারবে না সে। তাছাড়া সাদির লোমশ যুক্ত খালি বুকটাকে ভুলতে পারছে না।
আচ্ছা লোকটা যদি ছোঁয়াকে ভালোবাসতো তাহলে কি কাছে টানতো? বিয়ে করে নিতো? তখন?
ছোঁয়া লোকটার হাত ধরতে পারতো। খালি বুকে মাথা গুঁজতে পারতো।
নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ছোঁয়া। কয়েকটা গালি দেয় নিজেকে। ছিহহহ
দিন দিন মনটা বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।
এই লোকটাকে নিয়ে ভাবা যাবে না। তাকে ইনগোর করতে হবে।
লোকটা তোর জন্য না ছোঁয়া।
সিমি ছোঁয়ার রুমে আসে লাগেজ হাতে। সেখান থেকে জামা বের করতে করতে ছোঁয়াকে বলে
“কেনো আসলি? তুই তো বাবাকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারিস না। তাহলে?
ছোঁয়া সিমির থেকে কখনো কিছুই লুকাই না। তাই আজকেও লুকালো না৷ বলেই ফেলে
” আমি বন্ধুদের বলেছিলাম সাদু বেবিকে ভালো লাগে। তারা একে একে পুরো কলেজ জানিয়ে দিয়েছে। তার জন্য সাদু আমাকে ক্লাসের সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে এবং বের করে দিয়েছে।
সিমি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“ছোঁয়া তুই বড় হবি কবে বল তো? মানুষকে কেনো জানিয়েছিস? নিশ্চয় তোর জন্য সে টিচারদের সামনেও অপমানিত হয়েছে। সবার হাসির পাত্র হয়েছে। সাদি ভাইয়া একটু অন্য রকম মানুষ।
তুই এটা ঠিক করিস নি।
ছোঁয়া নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। সত্যিই তো। ক্লাসের সবাই সাদিকে দেখে হাসতো। ছোঁয়া নিজে কানে শুনেছে একজন স্যার সাদিকে বলেছে ” কি বেপার সাদি? শেষমেশ স্টুডেন্টের সাথে রিলেশন? ইটস নট ফেয়ার ”
সাদি অপমানিত হয়েছে।
শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। মনে মনে বলে
“ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়ানোটা একদম ঠিক হয় নি। আমার জন্য উনি অপমানিত হলো। ইসসস ছোঁয়া তুই মাথামোটা।
সিমি ছোঁয়াকে জামা পাল্টে বিছানা ঠিক করে দিয়ে চলে যায়।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। সে আড়মোড়া ভেঙে বাবাকে কল করে। কিছুখন কথা বলে ফ্রেশ হতে গিয়ে খেয়াল করে একা একা পারবে না। নিজের ওপর চরম বিরক্ত ছোঁয়া। ঢং দেখিয়ে কেনো হাত পুড়াতে গেলো?
অসয্য
এতো সকালে সিমি উঠবে না। তাই ছোঁয়া ছাঁদে চলে যায়। ইসসস এতেই যেনো ছোঁয়ার চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে।
সাদি পুশআপ দিচ্ছে। লোকটা রোজ সকালে উঠে এক্সারসাইজ করে। ছোঁয়া চুরি করে দেখতো।
আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। পানি ট্যাঙ্কির পেছনে লুকিয়ে সাদিকে দেখতে থাকে।
হাতা কাটা গেঞ্জি। দুই হাতের পেশি ফুলে উঠেছে। ঘামে সারাশরীর ভিজে জুবুথুবু হয়ে আছে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়েছে। ফর্সা পায়ের কালো লোমগুলো যেনো ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।
নাক বেয়ে ঘাম পড়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে দেখতে থাকে। নেশা লেগে যাচ্ছে। সাদির নেশা। এই নেশা বোধহয় এই জীবনে আর কাটবে না।
ছোঁয়া দৃষ্টি ফেরাতে গিয়েও পারে না।
চোখ দুটো যে বড্ড বেহায়া।
” ছোঁয়া তোর এই সাদু বেবি যদি দেখে না তুই তাকে চোখ দ্বারা ধ*র্ষ*ণ করছিস। তোকে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখবে।
নিজেকেই নিজে হুমকি দেয় ছোঁয়া। তবুও কাজ হয় না। তার হুমকিতে মন ভয় পায় না।
সাবিনা বেগম এক মগ কফি নিয়ে ছাঁদে আসে। ছেলের পাশে বসে পড়ে। সাদি টাওয়াল দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে কফির মগটা হাতে নেয়। তাতে এক চুমুক বসিয়ে মায়ের দিকে তাকায়
সাবিনা সাদিকে দেখছে। মাশাআল্লাহ ছেলে তার। দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
“আব্বা আমার একটা কথা শুনবি?
সাদি জবাব দেয় না। সে কফিতে আরেকটা চুমুক বসিয়ে খানিকটা জোরে বলে
” হেই ইডিয়েট
সামনে আয়
ছোঁয়া মুচকি হেসে আরাম করে বসে সাদিকে দেখতে ছিলো। বড় মা কি বলে শুনতে চায় সে কিন্তু হঠাৎ সাদির ডাকে সে শুকনো ঢোক গিলে নরেচরে বসে। বুঝলো কি করে গোমড়ামুখোটা?
সাবিনা আশেপাশে তাকিয়ে বলে
“কাউকেই তো দেখছি না।
সাদি মন দিয়ে কফি খাচ্ছে। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। লোকটা আর কথা বলবে না জানা আছে তার। একটা কথা যে গলা দিয়ে বেরিয়েছে এতেই ধন্য ছোঁয়া।
সে এক লাফে ট্যাঙ্কির পেছন থেকে বেরিয়ে এসে এক গাল হেসে বলে
” ওহহহ বড় মা তুমি এখানে? আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে শেষ মেষ এখানে চলে আসলাম।
তারপর সাদিকে ভালো করে দেখে বলে
“এ বাবা সাদু স্যার থুক্কু বেবি না না থুক্কু ভাইয়া আপনি এরকম অর্ধেক পোষাক পড়ে আছেন কেনো? ছিহ ছিহ আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি।
লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে ছোঁয়া। সাদি সরু চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। লোকটা কি সুন্দর করে তাকাতে জানে না? আরেহহ ভাই ছেলে মানুষের চোখের দৃষ্টি থাকবে নরম, কোমল। দেখলেই নেশা ধরে যাবে। কিন্তু এনার চোখের দৃষ্টি আগুনের মতো। তাকালেই হাঁটু কাঁপতে শুরু করে।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে বলে
” ববড় মা চলো তো। তোমার সাথে কথা আছে আমার।
সাবিনা সাদির চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর ছোঁয়াকে বলে
“সাদির সাথে একটু কথা আছে আমার।
ছোঁয়া ফট করে সাবিনার পাশে বসে পড়ে।
” বলো বলো
আমিও শুনতে চাই।
সাবিনা মুচকি হাসে। ছোঁয়াকে এক হাতে টেনে নিজের কাছে নেয়। তারপর বলে
“আব্বা আমি চাইছিলাম তুই বিয়ে কর। তোর একটা সংসার হলে আমি নিশ্চিত মনে মরতে পারবো।
ছোঁয়া বলে
” হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও তাই বলি। কতোদিন বিয়ে খাই না। আহহা পেট পুরে খাবো। বলছি কি বড়মা। এতো মেয়ে দেখার কি আছে। হাতের কাছে কতো ভালো ভালো মেয়ে আছে। এই যে আমাকেই দেখো না। কতো সুন্দর কিউট। আমার মতোই একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।
সাবিনা ছোঁয়ার কথায় হাসে। তিনিও চায় ছোঁয়াকে ছেলের বউ বানাতে। কেনো জানি মনে হয় এই মেয়েটাই পারবে তার এই গোমড়ামুখো ছেলেটাকে ভালো রাখতে।
তখনই ছোঁয়া ভাবনায় ডুব দেয়। ওনার সাথে বিয়ে হলে সংসার করবে কি করে? উনি যে নিরামিষ। কথাই বলে না। দেখা গেলো ছোঁয়াকে টুপ করে বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলো। বা হাত পা বেঁধে খাটের তলায় রেখে দিলো। তখন? রোমাঞ্চ যে ওনার দ্বারা হবে না এটা ছোঁয়া জানে।
সাদি উঠে পড়ে। ছোঁয়ার ভাবনায় ব্যঘাত ঘটে। নাহলে আরও একটু কল্পনার করতো সে।
“ঠিক আছে মেয়ে দেখো। তবে এর মতো আধপাগল যেনো না হয়।
বলেই সে চলে যায়। ছোঁয়া দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকে সাদির যাওয়ার দিকে। তাকে আধপাগল বলে গেলো?
সাবিনা হতাশ হয়। বুঝে যায় তার ছেলের ছোঁয়াকে পছন্দ না।
” বড় মা আমি আধপাগল?
“আমার সাদু যখন বলেছে তখন তুই আধপাগলই।
ছোঁয়া অবাক হয়ে যায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে
” এই আধপাগলের জন্যই একদিন আপনি ফুল পাগল হবেন৷ বলে রাখলাম।।
চলবে
আমার ফেসবুক আইডির লিংক
https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL
আমার গ্রুপের লিংক
https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link