#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৮
#তানিশা সুলতানা
মায়া নামের মেয়েটি একের পর এক কল করে যাচ্ছে। এভাবে ফোনে কথা বলার অভ্যাস সাদির নেই। সে কথা বলতে চায় না। কল কেটে দিচ্ছে বারবার তবুও কল করে যাচ্ছে।
সাদির বিরক্ত আকাশ ছুঁই ছুঁই। মেয়ে মানুষ এতোটা নিলজ্জ কি করে হয়?
বিয়ে ঠিক হয়েছে ভালো কথা। বিয়ে তো হয়ে যায় নি তাই না? এভাবে কল করার মানে কি? অপর পাশের মানুষটা বিরক্ত হতে পারে এদিকে কি বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই?
ছোঁয়াকে ডেকেছিলো মায়ার সাথে কথা বলানোর জন্য। মায়াকে বলার জন্য যে সাদি এটা পছন্দ করে না। কিন্তু ইডিয়েট টা আসলোই না। উল্টো হাতে কামড়ে দিলো।
দাঁতে চওড়া দাগ বসে গেছে হাতে। ফর্সা হাতটা লালচে হয়ে গেছে।
সাদি হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চর মারতে।
তখনই সাজ্জাদ রুমে ঢুকে হাতে ল্যাপটপের প্যাকের এবং ফোনের প্যাকেট নিয়ে।
“আব্বা কি করছো?
সাদি জবাব দেয় না। বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাজ্জাদ জিনিস গুলো খাটের ওপর নামায়।
” দেখো তো বাবা পছন্দ হয় কি না? শো রুমে গিয়ে তো বলেছিলাম সব থেকে বেস্টটা দিতে।
সাদি সাজ্জাদের পাশে বসে। প্যাকেট খুলে দেখতে থাকে। নাহহ খুব ভালো হয়েছে। এগুলোই কিনতে চাইছিলো সে। মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করে না। মুখটা গম্ভীর করেই থাকে।
“ধন্যবাদ
সাজ্জাদ হাসে
” চাকরির পরিক্ষা দিচ্ছো?
“জ্বী। মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেছি। ১ তারিখ জয়েন করবো।
” বাড়িতেই থাকবে তো?
“নাহহ সামনে সপ্তাহেই চলে যাবো। বাসা দেখে ফেলেছি।
সাজ্জা আর বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। ইচ্ছে করছে বলতে থেকে যাও না এখনে। অফিস তো কাছেই। কিন্তু বলতে পারে না। তার ছেলে থাকবে না যে।
” ওই মেয়েটিকে বলে দিবেন আমাকে যেনো কল না করে।
সাজ্জাদ চট করে ধরে ফেলে কার কথা বলছে।
“কিন্তু বাবা সে তো দুইদিন পরে তোমার বউ হবে।
” তো?
সাজ্জাদ আরকি বলবে?
“ঠিক আছে বলে দিবো।
ততখনে সাদি ছোঁয়ার ফোন থেকে নিজের সিম খুলতে শুরু করে দিয়েছে। সিম খুলে ছোঁয়ার সিম লাগিয়ে সাজ্জাদের হাতে দেয়।
” এটা ওকে দিয়ে দিবেন।
সাজ্জাদ ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। মাথায় তার হাজারটা চিন্তা। ছেলেকে তো বিয়ে করাচ্ছে সংসার কি করবে? মেয়েটা ভালো থাকবে তো? সাদি কি মেনে নিবে মেয়েটাকে?
সাদি ল্যাপটপ দেখছে তখনই সামির হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে। সাদির পাশে এসে ধাপ করে বসে পড়ে।
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় সাদির দিকে। এই সময় তো ওর এখানে আসার কথা না?
সাদির তাকানো দেখে সামির দাঁত কেলায়
“আসলে হয়েছে কি বল তো? তোকে নিতে এলাম
সাদি জবাব দেয় না। চুপচাপ কাজ করতে থাকে
সাদির এটেনশন না পেয়ে সামির সাদির সামনে থাকা ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।
” আরে ইয়াররর আমার কথা শোন।
সাদি বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“ডোন্ট ডিস্টার্ব সামির। কাজ করছি।
“কাজ বাদ দে ভাই। বিয়ে নিয়ে ভাব আগে। দেখ ভাই বিয়ে কিন্তু জীবনে এক বারই করবি৷
” ইডিয়েটটা পাগলামি না করলে বিয়ে করতামই না। জাস্ট ওকে থামানোর জন্য বিয়ে।
সামির গালে হাত দিয়ে বসে। সাদির কথার মিনিং সে বুঝতে পারে নি। কাকে থামানোর জন্য বিয়ে করছে সে? তবে জিজ্ঞেস করলে সাদি জবাব দেবে না। তাই বলে
“আচ্ছা বুঝলাম। এবার আমাকে থামানোর জন্য শপিং এ চল। শিপন রনি আসিফ ওরাও আসবে। জমিয়ে আড্ডা দিবো।
সাদি না করে না। সারাক্ষণ রুমে বন্ধ থাকতে তারও ভালো লাগছে না। একটু মাইন্ড ফ্রেশ করানো দরকার।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নেয়। সামির তো ভীষণ খুশি।
ছোঁয়া বেরিয়েছে একটু। সারাক্ষণ রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না তার। আশেপাশে একটুখানি ঘুড়ে দেখার জন্য বেরিয়েছে। কিছু কেনাকাটাও করবে।
বাড়ি থেকে বের হতেই দেখতে পায় ফুসকা মামা। ছোঁয়াকে আর পায় কে? এক দৌড়ে চলে যায় ফুসকা খেতে। বেশি করে ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা অর্ডার করে।
বেশ আয়েশ করে বসে পড়ে চেয়ারে। আরেকটা চেয়ার সামনে রেখেছে। সেটায় ফুসকা প্লেট নামিয়ে খাবে।
খুব তাড়াতাড়ি ফুসকা চলে আসে। আর ছোঁয়া খেতে শুরু করে দেয়। আহহহা কি ইয়াম্মি। দুই আঙুলে ফুসকা তুলে তা টক পানিতে চুবিয়ে মুখে পুরে নেয়। তারপর চোখ দুটো বন্ধ করে চিঁবতে থাকে ফুসকা।
ফুসকা খাওয়ার মাঝেই ছোঁয়া খেয়াল করে একটা ছেলে তাকে দেখছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে। শেষ ফুসকাটা মুখে পুরে উঠে দাঁড়ায় ছোঁয়া। সোজা গিয়ে দাঁড়ায় ওই ছেলের সামনে।
ছেলেটা হকচকিয়ে যায়।
” চেহারায় মধু মিশিয়েছি? না কি বিশ্ব সুন্দরী নায়িকা আমি?
ছেলেটা কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। আমতাআমতা করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
“কি জবাব দিন। আপনার জন্য ভালো করে খেতে পারি নি আমি জানেন? দেখছেন খাচ্ছি। তাও ডিস্টার্ব করতে হবে? মানুষ না আপনি? বাড়িতে খেতে পারছি না এক জ্বালায় এখানে এসে খেতে পারলাম না আপনার জ্বালায়।
ছেলেটা ছোঁয়ার প্লেটের দিকে তাকায়। একটু টক পানিও বেঁচে নেই। তবুও খেতে পারলো না?
” শুনুন মিস্টার। আমি ছোঁয়া চৌধুরী। আমার দিকে এক বার তাকিয়েছেন ভালো কথা দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস করবেন না। চোখ গেলে দিবো একদম। এতো মেয়ে দেখতে ইচ্ছে হলে বিয়ে করে বউকে সামনে বসিয়ে রাখবেন। অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিলে একদম চোখ তুলে হাতে ধরিয়ে দিবো। চিনে রাখবেন আমায়।
যতসব
বলেই ছোঁয়া গটগট করে চলে যায়।
সাদি সামির আসিফ একটুখানি দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। সামির তাকিয়ে আছে সাদির দিকে।
শিপন শুকনো ঢোক গিলে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“এটা মেয়ে না ভাঙা রেডিও?
সামির এক গাল হেসে বলে
” সাদির বোন বলে কথা। এমন হবে না?
“কিহহহ সাদির বোন?
আসিফ খানিকটা জোরে বলে ওঠে
” কাজিন
বলেই সাদি হাঁটতে শুরু করে। এসেছিলো শপিং করতে। কিন্তু এখানে থামতে হয়েছে শিপনের জন্য। তার আসতে লেট হচ্ছিলো।
ছোঁয়ার কাছে ভাংটি টাকা নেই। হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়েছে ফুসকা ওয়ালাকে। ফুসকা মামা বলছে তারও ভাংটি নেই। ছোঁয়ার মেজাজ এমনিতেই খারাপ। এখন ভাংটি নেই বলে মেজাজ আরও বিগড়ে যায়
“মামা ভাংটি না থাকলে ফুসকা বিক্রি করতে আসেন কেনো? আপনার মনে রাখা উচিত আমার মতো বড়লোক মানুষও ফুসকা খেতে আসে। এক হাজার কেনো লাখ টাকার ভাংটি রাখা উচিত আপনার। এভাবে খেয়ে দেয়ে ঝগড়া করার মানে হয়?
ফুসকা মামা তাকিয়ে আছে।
” এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। যান এটা ভাংটি করে নিয়ে আসুন। ততখনে আমি দোকান দেখছি।
“আমি কেনো ভাংটি আনবো? আপনি আনবেন।
” আমি কেনো আনবো? টাকা নিবেন আপনি। আমার তো ভাংটি দরকার নেই। আপনি টাকা না নিলে আমারই ভালো।
সাদি এগিয়ে আসে। পকেট থেকে একশত টাকার নোট বের করে দেয়। ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়
“এক্সকিউজ মি অচেনা বেডা
আপনি কেনো আমার টাকাটা দিয়ে দিচ্ছেন? আপনার টাকার ফুসকা আমি খাবো না। দরকার পড়লে বমি করে বের করে দিবো।
সাদি ফুসকা মামার থেকে একশত টাকা নিয়ে নেয়। তারপর ছোঁয়ার থেকে হাজার টাকা নিয়ে একশত টাকার ১০ টা নোট ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে টাকা দেয়।
চলবে