#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২০
#তানিশা সুলতানা
সাদি রান্না করছে। সাবিনা বেগম চেয়েছিলো রান্না করে রেখে যেতে কিন্তু সাদি বারণ করেছে। মায়ের হাতের তেল মসলা যুক্ত খাবার খেতে তার অসুবিধা হয়। সাদি সাধারণ অল্প তেলের কম মশলার খাবার খেতে পছন্দ করে। তবে সাবিনা বেগম অনেক গুলো রুটি বেলে রেখে গেছে সাথে অনেক সবজি মাছ এসব কেটে দিয়ে গেছে। এমনকি সাদির জামাকাপড়ও ধুয়ে দিয়ে গেছে।
সাদি ভাতের মধ্যে করলা সিদ্ধ দিয়েছিলো সেটা তুলে ফেলে। ছোঁয়া সাদির পেছনে এসে দাঁড়ায়।
“আমি কিন্তু সত্যিই আজকে যাবো না। যাবো না মানে যাবো না। কেউ জোর করলেও যাবো না। শুনেছেন আপনি?
সাদি জবাব দেয় না। সে করলা রেখে ভাতের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। সাদি যে কাজটাই করবে একদম মনোযোগ দিয়ে করবে। যেনো কোনো ভুল না হয়। সাদির থেকে জবাব না পেয়ে ছোঁয়া খুশি হয়ে যায়। তার মানে গোপনে রোমান্টিক সাদি চাইছে ছোঁয়া থাকুক। গোপনে রোমান্টিক কেনো?
এই যে কাছে থাকলে করলার মতো বিহেভিয়ার আর দূরে গেলে জান সোনা৷ এটা কি গোপনে রোমান্টিক নয়?
ছোঁয়ার এসব ভাবনার মাঝে সাদি বলে ওঠে
” তোমাকে যেতেই হবে ইডিয়েট
ছোঁয়া ভেংচি কাটে। তাকের ওপর থেকে চিনির বোয়াম নিয়ে আসে। ছুড়ি দিয়ে করলার মুখ কেটে তা থেকে বিচি বের করে তারপর মধ্যে চিনি পুরতে পুরতে বলে
“ইডিয়েট বানান করেন তো। বানান পারেন?
আচ্ছা থাক বানান করতে হবে না। শুধু এইটুকু বলুন ইডিয়েট বানানে E আছে কি না।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ভাতের মার ফেলে৷ তাকায় এক পলক ছোঁয়া দিকে। মেয়েটা জাস্ট ইম্পসিবল।
সাদির থেকে জবাব না পেয়ে ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে
” নকল করে পাশ করছে চুরি করে ইডিয়েট বানান শিখছে। সে আবার আসে আমার সাথে তর্ক করতে। চুপচাপ থাকবেন সব সময়।
সাদি জবাব দেয় না। নিজের কাজে মন দেয়। ছোঁয়াও আর সাদিকে ঘাটায় না। করলার মধ্যে চিনি ভরতে থাকে। ছোঁয়া উদ্দেশ্য এই চিনি ভর্তি করলা সাদিকে খাওয়াবে। যাতে তার মুখ থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হয়। আর সাদি ভেবে নিয়েছে এই করলা ছোঁয়া খাবে। তাই এতো যত্ন করে চিনি ভরছে।
সাদির রান্না শেষ। মাগরিবের আজানও দিয়ে দিয়েছে। এবার সাদি ফ্রেশ হতে রুমে চলে যায়। ছোঁয়াও পেছন পেছন যায়।
সাদি সবেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। ছোঁয়া গিয়ে দাঁড়ায় সাদির সামনে। সাদি পাত্তা না দিয়ে বেলকনিতে চলে যায় টাওয়াল রাখতে। ছোঁয়াও পেছন পেছন যায়। টাওয়াল মেলে দিয়ে সাদি রুমে আসে তখনও ছোঁয়া পেছন পেছন রুমে আসে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সাদি। ছোঁয়াও পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সাদি আয়নার মধ্যেই ছোঁয়া দিকে তাকিয়ে বলে
“কি চাই?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে থাকে। ছোঁয়ার হাসি দেখে সাদি বলে
” ভাইয়া কল করেছিলো। আসছে তোমাকে নিতে।
ছোঁয়ার মুখটা কালো হয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে ঘুরে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ছোঁয়া করলাটা ঢুকিয়ে দেয় সাদির মুখে। এবং এক লাফে সাদির ল্যাপটপ ধরে
“ফেলে দিলে এটাও ফেলে দিবো
সাদি খানিকটা তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে। তারপর আস্তে আস্তে চিবাতে থাকে। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
” আপনাকে রোমান্টিক বানানোর প্রথম ধাপ পার করলাম।
সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া খুশিতে নাচতে থাকে। উফ এখন থেকে সাদির মুখ দিৈ মিষ্টি কথা বেরুবে।
কিন্তু ছোঁয়ার নাচ বেশিক্ষণ টিকে না। সাদি এসে ছোঁয়ার হাত ধরে সাথে সাথে থেমে যায় ছোঁয়া। তাকায় সাদির দিকে।
সাদি কাঁচা একটা করলা ছোঁয়ার সামনে ধরে
“এটা খেয়ে ফেলো। নাহলে তোমাকে দিয়ে আসবো। আর কখনো আনবো না।
ছোঁয়ার হাসি মুখটা এখন কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। সাদির থেকে করলাটা নিয়ে চোখ মুখ খিঁচে এক কামড় দেয়।
অসহায় চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে চিবাতে থাকে। সাদি ঠোঁট দুটো হালকা মেলে ছোঁয়ার মাথা টোকা দিয়ে বলে
” গুড জব
ছোঁয়া মনে মনে সাদিকে বকতে থাকে। আর তেঁতো করলা চিবাতে থাকে। সাদি আবার গিয়ে দাঁড়ায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে
“বয়সের তুলনায় বেশিই মিষ্টি তুমি৷ করলা খাবে সকাল বিকাল নিয়ম করে।
ছোঁয়া করলা গিলে সাদির দিকে তেড়ে এসে বলে
” বয়সের তুলনায় বেশিই নিরামিষ আপনি। বুড়ো হয়ে গেছেন। বেশি বেশি মধু খাবেন।
যতসব
জীবনটা তামাতামা বানিয়ে দিলেন।
বলতে বলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ছোঁয়া। মুখসহ ভেতর পর্যন্ত তিঁতা হয়ে গেছে। এটা জামাই না রাক্ষস?
ছোঁয়া যেতেই সাদি আলতো হাসে।
বিরবির করে বলে
“স্টুপিট একটা।
সিফাত চলে আসে। মূলত সেলিম পাঠিয়েছে সিফাতকে। সাদি আর সিফাত সোফায় বসে আছে। সিফাত এটা সেটা বলে যাচ্ছে সাদি শুধু শুনছে। বরাবরই এমন স্বভাবের সাদি। সবাই বলবে সে শুনবে। তার যেনো বলার কিছু নেই।
ছোঁয়া এতোখন ওয়াশরুমে কাটিয়ে এসেছে। সে বমি করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। বমিও শত্রুতা করলো আজকে।
রুম থেকে বেরিয়ে সিফাতকে দেখে ছোঁয়ার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। এবার তাকে যেতে হবে।
মূলত সাদির সাথে থাকবে কাছাকাছি থাকবে এই জন্য ছোঁয়া সাদির কাছে থাকতে চায় না। সাদিকে একা বাড়িতে রাখডে তার ভয় করে সেই জন্য সে সাদিকে ছাড়তে চায় না। এতো বড় বাড়ি সাদি একা থাকবে। যদি কোনো বিপদ হয়? এটাই তার চিন্তা।
সিফাত হাত ঘড়ি দেখে বলে
” এবার যেতে হবে। পরি অপেক্ষা করছে। ছোঁয়া কোথায়?
“আজকে ও এখানেই থাকুক। কাল যাবে।
সিফাত মুচকি হাসে।
” আচ্ছা আসছি আমি। সাবধানে থাকিস।
বলেই সিফাত চলে যায়। সিফাত যেতেই ছোঁয়া এক দৌড়ে সাদির কাছে আসে। দুই পায়ের গোড়ালি উঁচু করে সাদির গাল টেনে দেয়
“আমার টুনুমুনু জামাই
সাদি বিরক্ত হয়ে পিছিয়ে যায়।
কপাল কুঁচকে বলে
” টুনুমুনু আবার কি?
ছোঁয়া নিজের বিনুনি ঘোরাতে ঘোরাতে বলে
“ভালোবাসার ডাক।
সাদি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে
“কতো কিছু যে শুনতে হবে
” বুড়ো বয়সে এতো মিষ্টি বউ পেয়েছেন টসব শুনতে হবে না?
সাদি রুমে যেতে যেতে বলে
“তেঁতো করার পদ্ধতি জানা আছে আমার।
চলবে