হৃদয়হরণী #পর্ব:৬ #তানিশা সুলতানা

0
414

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৬
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছিলো। তার মন খারাপ। মনটা কখনো ভালোই হয় না। লোকটার মায়া তাকে এমন ভাবে বস করে রেখেছে য়ে ছোঁয়া আস্তে আস্তে ভালো থাকতেই ভূলে যাচ্ছে। বেহায়া হয়ে গেছে। তার বিয়ের কথা যতবার মাথায় আসছে ততবারই হাত পায়ের কাঁপন বেড়ে যাচ্ছে। কোথাও লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তাকে।
ছোঁয়া কি করে সয্য করবে? বিকেলে মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে। মেয়ে সবার পছন্দ হবে সেটা ছোঁয়ার জানা।
তারপর?
সাদির বিয়ে হয়ে যাবে। মেয়েটা সাদিকে টাচ করবে। সাদির সাথে থাকবে। গম্ভীর মানবটার হৃদয়েও মেয়েটা এক সময় জায়গা করে নিবে। হয়ে উঠবে মেয়েটার হৃদয়হরণী। আর ছোঁয়া সারাজীবন হতাশা নিয়ে বেঁচে থাকবে?

কান্না পায় ছোঁয়ার। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ভীষণ অসহায় লাগছে। কি করবে? কোথায় গেলে সাদিকে পাবে? কার কাছে বলবে? কে সাহায্য করবে?

চোখের পানি মুছে নেয় ছোঁয়া। কেউ দেখলে কি জবাব দেবে?
মন ভালো করতে বাসা থেকে বের হয়। বাড়ির সামনে বিশাল বড় বাগান। এই বাগানটা তুষার চৌধুরী বানিয়েছে। সব ধরণের গাছ আছে এই বাগানে। খুব সুন্দর বাগানটা।

“আরেহহহ তুমি ছোঁয়া না?

ছোঁয়া চমকে পেছনে তাকায়। সাদির সাথে একটা ছেলে। বাইরে থেকে আসলো মনে হচ্ছে। এই ছেলেকে চেনে ছোঁয়া। ছোট বেলায় দেখতো সাদির সাথে। সাদির একমাত্র বন্ধু সে।
” আরেহহ আপনি সামির ভাই না?
ছোট বেলায় সারাক্ষণ আপনার নাকে সর্দি লেগে থাকতো?

সামিরের হাসি মুখটা চুপসে যায়। সাদির সামনে লজ্জায় পড়ে যায় সে।
ছোঁয়া আসলে কথাটা বলতে চায় নি। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
” তোমার তো সর্দিতে গাল দুটোও টইটুম্ব হয়ে থাকতো।
এভাবে পাল্টা ছোঁয়াকে ফাঁসানো হবে ছোঁয়া বুঝতেও পারে নি। সাদির সামনে অপমান। প্রসঙ্গ পাল্টে বলে
“কোথায় গিয়েছিলেন ভাইয়া?
” বন্ধু আমার বউ দেখতে যাবে। তাই পার্লারে নিয়ে গিয়েছিলাম।

মশকরা করে বলে সামির। সত্যিই সেলুনে গিয়েছিলো। ঘন চাপ দাঁড়ি গুলো পরিপাটি করে কেটেছে। চুল গুলোও অনেকটা ছোট করেছে। মেজাজ বিগড়ে যায় ছোঁয়া। সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়।

বেছে বেছে সব থেকে বড় আম গাছটাই উঠে পড়ে ছোঁয়া। ছোট থেকেই গাছে ওঠাতে পটু ছোঁয়া।
জৈষ্ঠ্যমাস। গাছে পাকা পাকা আমগুলো ছোঁয়ার দিকেই যেনো তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া আম খেতে থাকে। আর কাঁদতে থাকে।
মনে মনে সাদিকে হাজারখানা গালি দেয়।
সাদি নিজের রুম থেকে ছোঁয়াকে দেখতে পায়। বিরক্তিতে কপালে তিনটে ভাজ পড়ে তার। একটা মানুষ কতোটা ইডিয়েট হলে এতো বড় গাছে উঠতে পারে?

সাদি বেলকনিতে আসে।
“ওইখান থেকে নামো ইডিয়েট

হঠাৎ সাদির ধমকে চমকে ওঠে ছোঁয়া। আমের আঁটি পুরোটা মুখে ঢুকিয়ে ফেলেছিলো। ফেলে দেয়। গাল ফুলিয়ে বলে
” নামবো না আপনার কি?
“আমি আসলে চাপকে চাপকে নামাবো স্টুপিট।

সাদির ঠান্ডা ধমকে মুখ বাঁকিয়ে নেমে পড়ে ছোঁয়া। লোকটা পাষাণ। ভীষণ পাষান।

বিকেলে সবাই মিলে বের হয়। সাদি যেতে চায় নি। মায়ের জোরাজোরিতে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
গাড়িতে সাদির পাশেই ছোঁয়া বসেছে। অবশ্যই ইচ্ছে করে বসে নি। পরিস্থিতির চাপে বসতে হয়েছে।
সিফাত ড্রাইভ করছে তার পাশে সিমি বসেছে পরিকে কোলে নিয়ে।

“জিজু আমি বিয়ে করবো।

” হ্যাঁ করবে তো। রাজপুত্র এনে দিবো তোমার জন্য।
“আমার এখুনি বিয়ে করতে মন চাচ্ছে।

সিফাত সিমির দিকে এক পলক তাকায়। সিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে
“বাবাকে বলবে?
” অবশ্যই বলবা। এখনি কল করো। আমি বিয়ে করবো তো করবোই।

সাদি এতখন চুপচাপ থাকলেও এখন আর পারছে না। মেয়েটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। সব কিছুতেই তার বাড়াবাড়ি। ইচ্ছে করছে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু বেপারটা খারাপ দেখায় তাই পারছে না।

“বয়স কতো তোমার?

গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে সাদি।
ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলে
” সতেরো বছর দুই মাস পাঁচ দিন বয়স আমার। বিয়ের জন্য পারফেক্ট বয়স। আমার একটা বন্ধুর বিয়ে হয়েছে চোদ্দ বছরে। তার একটা মেয়ে হয়েছে। সেই হিসেবে আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে। এখুনি বিয়ে না করলে পিছিয়ে পড়বো আমি। আমাকে বিয়ে করতে হবে।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। সিফাত শুকনো ঢোক গিলে। পরিও এতোখন ছোঁয়ার কথা শুনছিলো। সে বলে ওঠে
“মাম্মা আমিও বিয়ে করবো।

সিমি হতাশ হয়। সিফাত হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে।
সাদি পকেট থেকে হেডফোন বের করতে করতে বিরবির করে বলে
” ইডিয়েট

ছোঁয়া আবার বলে ওঠে
“হয় আমাকে বিয়ে দাও। নাহলে বাবার কাছে দিয়ে আসো। আমি এখানে থাকতো চাই না। এসেছিলাম শান্তি পেতে। অশান্তি পেছন পেছন হাজির। আমি না জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।

সাদি ফোনে গান চালিয়ে হেডফোন ছোঁয়ার কানে গুঁজে দিয়ে ফোনটা ছোঁয়ার কোলের ওপর রাখে।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করো সাদির দিকে তাকায়। সাদি চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা ঠেকিয়ে আছে।
সিমি মুচকি হাস। ঠিক করেছে।
রাগে দুঃখে অভিমানে ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। কেউ কেনো তাকে বুজছে না?
কেনো?

সাবিনা বেগমের ঠোঁটের কোণা থেকে হাসি সরছেই না। তুষারও বেশ খুশি। মেয়ে তারা আগেও দেখেছে। মাশাআল্লাহ অনেক ভালো মেয়ে। আজকেই আংটি পড়াবে বলে ঠিক করে ফেলেছে।

ড্রয়িং রুমে বসেছে সবাই। ছোঁয়ার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। তারা খোশ গল্প শুরু করে দিয়েছে। যেটা ভালো লাগছে না ছোঁয়ার। সাদি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
একটু পরে মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। সাবিনা বেগম আর মমতা বেগমের মাঝখানে মেয়েকে বসানো হয়। কথার এক পর্যায়ে সাদিকে বলা হয় তাকে আংটি পড়িয়ে দিতে।
“মা তুমিই পড়িয়ে দাও।
ছেলের কথায় খুশিতে গদগদ হয়ে সাবিনা আংটি পড়িয়ে দেয় মায়াকে।
বিয়ের কথা ফাইনাল করেই খাবার মুখে তুলবে ওনারা। তাই তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলা হয়। সামনে শুক্রবারেই বিয়ে।

এবার সাদি এবং মায়াকে আলাদা কথা বলতে পাঠানো হয়।
ছোঁয়ার ভীষণ অস্থির লাগছে। সকালে একটু খেয়েছিলো সারাদিন একটা আম ছাড়া আর পেটে কিছুই পড়ে নি। ছোঁয়া বেশ বুঝতে পারছে যে কোনো মুহুর্তে সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। এখানে সে সিনক্রিয়েট করতে চাই না।

তাই কাউকে কিছু না বলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় এই বাড়ি থেকে। কেউ তাকে খেয়ালই করে না।

গাড়ির কাছাকাছি যেতেই মাথা ঘুরে আসে। চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে আসে। গাড়ির চাবি আনে নি সে। ভেবেছিলো গাড়িতে বসে থাকবে। কিন্তু এবার?
এতো কিছু ভাবার সময় ছোঁয়ার হয় না। আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে সে। মাটিতে পড়ার আগেই কেউ একজন খুব যত্ন করে ধরে ফেলে ছোঁয়াকে। নরম তুলতুলে দেহ খানা বুকের মধ্যে চেপে ধরে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here