হৃদয়হরণী #পর্ব:২৭ #তানিশা সুলতানা

0
233

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৭
#তানিশা সুলতানা

সামির গভীর দৃষ্টিতে ছোঁয়া এবং সাদিকে পর্যবেক্ষণ করছে। সাদি আয়নার সামনে থেকে সরছেই না। আর ছোঁয়ার গাল দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে।
কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে ছিলো। রিমি কম্বল সরিয়ে নিয়েছে।
বাই এনি চান্স ছোঁয়া কি লজ্জা পাচ্ছে? এ জীবনে সামির সব দেখেছে কিন্তু ছোঁয়াকে কখনো লজ্জা পেতে দেখে নি। শিওর হওয়ার জন্য ছোঁয়ার পাশে বসে প্রশ্ন করেই ফেলে
“তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো ছোঁয়া?

সাদি ধপ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সকলের নজর আটকে যায় ছোঁয়ার মুখ পানে। এতোগুলো মানুষকে তাকাতে দেখে ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে

” লজ্জ পাবো না? সন্তান আসতে চলেছে আমার।

সাদির হাত থেকল চিরুনি পড়ে যায়। শিপন মুখে আপেলের টুকরো ঢুকিয়েছে কামড় দিতে ভুলে গেছে। আশিক পানি খেতে গিয়েছিলো কেশে ওঠে। ইরা রিমি বড়বড় চোখ করে ছোঁয়াকে দেখছে।
সামির কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে

“শালা হারামি
টয়লেটে সময় বেশি লাগলে সেটাও আমার সাথে শেয়ার করিস। একটা প্যান্ট কিনলে আমাকে বলে কিনিস। হট একটা মুভি দেখতে ইচ্ছে হলে সেটাও আমাকে বলিস।
আর আজকে বাসর করে ফেললি আমাকে ছাড়া? এতোটা অবহেলা আমি সয্য করবো কিভাবে? ওপর থেকে কেউ দড়ি ফালাও আমি চইলা যাই। এই ধরণীতে আমি আর থাকতে চাচ্ছি না।

মিথ্যে মিথ্যে কান্নার অভিনয় করে সামির। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সব গুলো ড্রামাবাজ তার কপালেই ছিলো।
রিমি চেপে বসে ছোঁয়ার সাথে

” আমার প্রথম থেকে বলো ছোঁয়া। কিভাবে শুরু করলে। কে আগে এগিয়েছিলো। কিভাবে শেষ হলো। ঘটনাটা কবে ঘটেছে? সবটা একে একে বলো।

ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখ বড়বড় করে বলতে না করে। ছোঁয়া মুখ বাঁকায়

“আপু বলতে না করছে।
কেনো বলো তো? ওই যে মিহি পিহি আছে না? তোমরা তো তাকে চিনো। তোমাদের সাথে শেয়ার করলে যদি তোমরা মিহি পিহিকে বলে দাও। তাহলে তো সে ওনালে রিজেক্ট করো দিবে। আর যাই হোক বউয়ের সাথে উল্টা পাল্টা করা ছেলের সাথে তো সে আর পরক্রিয়া করবে না তাই না?

সকলের মুখ এবার কই মাছের মতো হা হয়ে যায়। বলে কি ছোঁয়া? মিহি আসলো কোথা থেকে? ছোঁয়ার থেকে রোমাঞ্চকর মুহুর্ত শোনার জন্য মিহির কথা চেপে যায় ওরা। মিহির চ্যাপ্টার পড়ে ধরা যাবে।

” ছোঁয়া তুমি বলতে থাকো। আমি মিহিকে বলে দিবো। চলবে?

ইরা বলে ওঠে।

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপু আমি বলবো।
আজকে একটু আগে উনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কি হয়েছে। আমিও বলছিলাম না। তাই উনি ঠাসস করে

ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি বলে ওঠে
” ঠাসস করে একটা চর মেরে দিয়েছি।
এখন চুপ না করলে বিদেশ চলে যাবো। আসবো না আর।

সকলেই বিরক্ত হয় তাকায় সাদির দিকে। ছোঁয়ার মুখখানা চুপসে যায়।
সামির মুখে আস্ত একটা আপেলের টুকরো পুরে বলে
“বা*ল যেখানে খুশি যা। আমাদের জ্বালাচ্ছিস কেনো? শুনতে তো দিবি। সারাক্ষণ পকপক করিস খালি।

ছোঁয়া গোমড়া মুখে বলে
“মিহিকে সাথে নিয়ে জাহান্নামে যান গিয়ে। আমার কি? আমিও গবুর কাছে চলে যাবো।

সাদির কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। এই গবুটা আবার কে? কোথা থেকে আসলো?
আশিক প্রশ্ন করে
” এই গবুটা কে?
“মাই ফ্লট মুভির হিরোর গ্যাব্রিয়েল। আমি ভালোবেসে গবু নাম দিয়েছি।

সাদি স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে ” ইডিয়েট”
সামির বাহবা দেয় ছোঁয়াকে
“বাহহ ছোঁয়া বাহহহ
গ্যাব্রিয়েল থেকে গবু। তা আমাদের সাদিকে ভালোবেসে কি নাম দিয়েছো?

” সাদু বেবি

সকলে এক সাথে সুর তুলে বলে ওঠে “ওহহহহ হো সাদু বেবি”

সব পাগলদের এক সাথে আড্ডা দিতে দিয়ে সাদি বেরিয়ে যায়। অফিসে প্রচুর কাজ। এই সপ্তাহেই আবার অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে তাকে বসের সাথে। সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্বও সাদির কাঁধে পড়েছে। ছোঁয়াকে নিয়ে টেনশন করে কাজ করতে পারলো না কয়েকদিন। আপাতত ছোঁয়াকে নিয়ে টেনশন নেই।
তবে ছোঁয়ার মন খারাপ হওয়ার কারণটাও খুঁজে বের করা দরকার। পরবর্তীতে আবারও একই বিষয় নিয়ে মন খারাপ বা ভুলবোঝাবুঝি হতে পারে। সাদি চাইছে না তাদের সম্পর্কে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকুক।

নিজের রুমে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে সাদি। পাশের রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। কাজ করতে একটু অসুবিধা হলেও বিরক্ত হচ্ছে না সাদি। ওই রুমে থাকা প্রতিটা মানুষ সাদির কাছে ইমপটেন্ট। ভীষণ ইমপটেন্ট।

রাতের খাবার খেয়ে তবেই সবাই বাসায় যাবে। আগেই যেতে চেয়েছিলো সাবিনা বেগম এবং নাজমা বেগম যেতে দেয় নি।
ছোঁয়া আজকে ভীষণ হেসেছে। এই কয়দিনের মন খারাপ তার গায়েব হয়ে গেছে।
এই সবাই ছাঁদে গিয়েছে। পরি নিয়ে গেছে ওদেরম পরির দাদু তার জন্য নতুন দোলনা এনেছে ছাঁদে সেটাই দেখাতে। আপাতত ছোঁয়া একা আছে। হাঁটতে পারছে না বলে আবারও মন খারাপ হচ্ছে।
পা ভাঙার আর সময় পেলো না।

সাদি কাজ শেষ করে আসে ছোঁয়ার রুমে। ছোঁয়াকে একা বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে
“বাঁদরের দল কোথায়?

” ছাঁদে গেছে।

সাদি বসে পড়ে ছোঁয়ার পাশে।
ছোঁয়া সাদিকে বসতে দেখে দুই হাতে ঠোঁট চেপে ধরে। আবারও দম বন্ধ করা চুমু খেতে আসলে ম*রেই যাবে।
আলতো হাসে সাদি।
প্রথমবার সাদিকে হাসতে দেখলো ছোঁয়া। লোকটা হাসছে? এতো সুন্দর কেনো লোকটার দাঁত গুলো। ভালো করে হাসলে মনে হয় আরও সুন্দর লাগবে।
কিপ্টা লোক। হাসির বেলায়ও কিপ্টামি করে।

ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই কানে ভেসে আসে হৃদয় কাঁপানো কয়েকটা শব্দ

“আমার জীবনে তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারী নেই।
আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট।

বেরিয়ে যায় সাদি। রেখে যায় হতদম্ভ হয়ে বসে থাকা ছোঁয়াকে। মনে মনে কয়েকবার আওড়ায় সাদি বলা কথা গুলো। পরপরই লাফিয়ে ওঠে ছোঁয়া।

চলবে

পরিক্ষার চাপে আছে তানিশা। লিখতে পারছি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here