হৃদয়হরণী #পর্ব:৩৪ #তানিশা সুলতানা

0
381

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৪
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার সামনে লম্বা সুন্দরী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। যার পরণে হালকা নীল রংয়ের শাড়ি। হাঁটু সমান লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথে রেখেছে। মুখে নেই কোনো সাজসজ্জা তবুও মেয়েটিকে অপূর্ব লাগছে।
এই মেয়েটিকে ছোঁয়া চিনে৷ চিনবে না কেনো? এই সেই মেয়ে যে ছোঁয়ার সাদির মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। এই জীবনে মুখখানা ভুলতে পারবে না ছোঁয়া। এই মানুষটার প্রতি ভীষণ জেলাস ছোঁয়া।
গোল গোল চোখ করে মিহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ছোঁয়া।
ছোঁয়ার তাকানো দেখে মুচকি হাসে মিহি। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার মুখখানা ছুঁয়ে দিতে চায়। ছোঁয়া দু পা পিছিয়ে যায়। এতেও হাসে মিহি। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ভালো আছো?
প্রশ্ন খানা ছোঁয়ার পছন্দ হয় নি। রসিকতা করতে এসেছে উনি? সেই দিন এই কপালই তো সাদির কাঁধে চেপে কাঁদছিলো। ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে মিহির কপাল ফা*টি*য়ে দিতে। বা খুব জোরে আঘাত করতে, ব্যাথা দিতে।
সাদির কাঁধে মাথা রেখে উনি দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে এই বিষয়টা মহিলাটিকে বুঝিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার। কিন্তু পারছে না।

” কথা বলবে না ছোঁয়া?

ছোঁয়ার থেকে জবাব না পেয়ে বলে মিহি।
ছোঁয়া কটমট চোখে তাকায় মিহির দিকে।

“আমার স্বামীর কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে কেঁদেছিলেন৷ আমি ভুলে যাই নি। আমার সাদিকে টাচ করার সাহস হয় কি করে? কেনো ছুঁয়েছিলেন? এই মুহুর্তে আপনার কপাল আমি ফাটিয়ে দিলে ব্যাপাটা ভালো দেখাবে?

উচ্চ স্বর ছোঁয়ার। কথায় বা আঁখি পল্লবে রাগের ছড়াছড়ি। ফর্সা গোলগাল মুখখানা লাল হয়ে উঠেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। রাগের কারণে বোধহয় মেয়েটার নিঃশ্বাসও জোরে জোরে পড়ছে।
মিহি সব কিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

” রেগে গেলে তো হেরে গেলে ছোঁয়া।

আলতো হেসে বলে মিহি।

“ছোঁয়া চৌধুরী হারতে শিখে নি। সাদমান চৌধুরী আমার। একান্তই আমার। তার দিকে নজর দিবেন না আপনি। এটা আমার ওয়ার্নিং।

ছোঁয়ার উচ্চ স্বরের কথায় দমে যায় মিহি। এসেছিলো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।কিন্তু উদ্দেশ্য খানা এই মুহুর্তে বলে দিলে ছোঁয়া কিছুতেই মানবে না।

” ঠিক আছে নজর দিবো না। তো একটা প্রশ্নের জবাব দাও। কেনো এতো ভালোবাসো তাকে? তার তো প্রচুর টাকা পয়সা নেই। দেখতেও আহামরি রাজকুমার নয়। বয়সটাও বেশি। তাহলে?
কি দেখে পাগল হলে?

“ভালোবাসা কখনো বয়স মানে না। টাকা পয়সার বিচার করে না। আমার চোখ দুটো খুলে নিয়ে নিজের চোখে লাগিয়ে দেখুন৷ এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম ব্যক্তি হচ্ছে আমার সাদু। তাকে ভালোবাসার জন্য আমার শ-খানিক কারণ লাগে না। বরং তাকে ভালো না বাসার জন্য অনেক কারণ লাগবে৷

মুগ্ধ হয় মিহি। নিজের ওপর রাগ হয়। এভাবে কখনোই ভালোবাসতে পারে নি সে। ভালোবাসতে পারলে অবশ্যই তার জীবনে এমন একটা দিন আসতো না।

” সাদি যদি আমাকে চায়? তোমাকে ডিভোর্স দিতে চায়?

মিহির প্রশ্নে ছোঁয়ার বুক কেঁপে ওঠে। হৃদয়ের আর্তনাদ শুরু হয়ে যায়। তবুও মিহির সামনে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে নারাজ সে।
বুক ফুলিয়ে জবাব দেয়
“আমি আটকে রাখতে জানি। আগলে রাখতেও জানি৷ আমার সাদি কখনোই আপনার কাছে ফিরবে না। আর ফিরতে চাইলেও আমি ফিরতে দিবো না। আমার অনেক সাধনার ফল সাদু, আমার বর। তাকে প্রাণ থাকতে আমি হারাতে দিবো না।

বলেই ছোঁয়া কলেজের দিকে চলে যায়। মিহির আর একটা কথাও সে শুনতে নারাজ। কলেজের গেইটের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে ছোঁয়া। মিহি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কলেজে নতুন বিল্ডিং দেওয়া হচ্ছে। তারপর জন্য ইট ভেঙে রাখা হয়েছে। ছোঁয়া এক টুকরো ইট খুঁজে ছুঁড়ে মারে মিহির কপাল বরাবর। ছোট থেকেই ঢিল ছোঁড়ায় এক্সপার্ট ছোঁয়া। তাই এবারের ঢিলটাও বিফলে যায় না। সোজা গিয়ে লেগে পড়ে মিহির কপালে। মুহুর্তেই কপালে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে মিহি। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে ক্লাসের দিকে চলে যায়।

__

সাদি সবেই বাসায় এসে পৌঁছালো। ভীষণ ক্লান্ত সে। বড় একটা জার্নি। বরাবরই জার্নিতে অসুস্থতা অনুভব করে সাদি। ইচ্ছে ছিলো বাসায় ফিরবে। কিন্তু মানুষের কোলাহল ভালো লাগবে না এই মুহুর্তে। তাই বাসায় ফেরা হলো না। ভেবে নিয়েছে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবে।
তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। সাদি বিরক্ত। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এই মুহুর্তে সামির ছাড়া কেউ আসে নি এটাই তার ধারণা।
ঘামে ভেজা সাদা রংয়ের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে দরজা খুলে দেয় সাদি।
সাথে সাথে ছোঁয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
সাদি প্রথমে হতদম্ভ হয়ে যায়। পরে মুচকি হেসে দুই হাতে আগলে নেয় আধ পাগল বউটাকে৷
ছোঁয়াকে ভেতরে এনে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

“ইসসস কতো মিস করছিলাম আপনাকে জানেন আপনি? শেষমেশ আপনার দেখা পেলাম। শুনুন এটাই ছিলো আপনার বউ ছাড়া শেষ ঘুরতে যাওয়া। পরের বার থেকে আপনার সাথে যাবো আমি।

সাদি ছোঁয়াকে ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে৷ সোফায় বসিয়ে দেয়। নিজেও বসে ছোঁয়ার পাশে। ছোঁয়া তার সুদর্শন বরটাকে দেখতে থাকে। আর সাদি চোখ বন্ধ করে ঘাম জুড়ানোর অপেক্ষায় থাকে

ছোঁয়া সাদির দিকে একটু চেপে বসে বলে
” শুনুন না একটা জিনিস ভেবেছি

সাদি চোখ বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বলে
“বলো

” ভাবছি নকল একটা সার্টিফিকেট বানাবো।

ধপ করে চোখ খুলে সাদি। তাকায় ছোঁয়ার মুখপান।

“এভাবে কেনো তাকাচ্ছেন? বাবা বলেছে এইচএসসির পরে দুজনকে এক সাথে থাকতে। সেইইইইইই আরও দেড় বছর। এতোদিন আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
তো আমি যদি একটা নকল সার্টিফিকেট বানাতে পারি এইচএসসির। তাহলে বাবাকে দেখিয়ে বলতে পারবো ” দেখো বাবা পাশ করেছি। এবার আমাকে আমার সাদুর সাথে থাকতে দাও”
আইডিয়াটা দারুণ না?

সাদি হেসে ফেলে। থা*প্প*,ড় মারে ছোঁয়ার মাথায়। সাথে বিনুনি টেনে দেয়। কিঞ্চিৎ ব্যাথা পেলেও ছোঁয়া তা প্রকাশ করে না।

“লেজ ছাড়া বাঁদর। উনি তোমার বাবা।
ছোট বাঁদরের থেকে বড় বাঁদরের বুদ্ধি অলওয়েজ বেশি থাকে।

ছোঁয়া আবারও ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো। বাবা চট করে ধরে ফেলবে। সাদি ছোঁয়ার আঙুল গুলো দেখতে থাকে আর ছোঁয়া ভাবতে থাকে। তারপর লাফিয়ে উঠে বলে

” তাহলে চলুন আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে নেই।

সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
“কিভাবে নিবো? আর আব্দুল কুদ্দুস কে?;

” কে আবার আমার আর আপনার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো তো। মেয়ে দিয়া ছেলে কুদ্দুস। দারুণ না?

“এইসব উদ্ভট নাম তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে?

” পাশের বাসার দাদিমার ছেলের নাম কুদ্দুস। দাদিমা দাদুকে ডাকতেছি “ও কুদ্দুসের বাপ আইসা দেখো তোমার আকাইম্মা কুদ্দুস মাইয়া লইয়া আইছে”
উফফফ কি যে জোশ লাগছিলো। তখনই ঠিক করে ফেলি আমার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো।
তারপর আপনাকে ডাকবো “ও কুদ্দুসের বাপ। আপনার কুদ্দুস আপনার মতোই নিরামিষ হইছে। আমার তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখায় না।

ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হাসি আটকাতে পারে না। বা হাত চোখের ওপর রেখে হো হো করে হাসতে থাকে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদির হাসি দেখতে থাকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here