হৃদয়হরণী #পর্ব:৫৬ #তানিশা সুলতানা

0
353

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৬
#তানিশা সুলতানা

মিহির বর মিহিকে ছেড়ে দিয়েছে। তার কারণ হচ্ছে মিহি সংসারী নয়। সে স্বামী সংসার সামলে উঠতে পারছিলো না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় রান্না করে দিতে পারতো না। মোট কথা মিহি তার স্বামীকে কেনো ভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারছিলোনা। বা মিহি চাইছিলোও না। মনের মধ্যে কোথাও একটা সাদি রয়েই গিয়েছিলো।
বিয়ের দুই বছর পরে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এবং ডিভোর্সের ঠিক এক সপ্তাহ পরে মিহির এক্স বর নতুন বিয়ে করে নেয়।
মিহি হচ্ছে মায়ার চাচাতো বোন। মিহির মনে হয় এখনো কোথাও না কোথাও সাদির মনে তার জন্য জায়গা রয়েছে। এবং সে চেষ্টা করলে সাদির সাথে সবটা ঠিক করে নিতে পারবে।
আজকেও মিহি এসেছে সাদির অফিসে। শেষবার খোলাখুলি কথা বলতে চায় সাদির সাথে।
অফিসে ঢুকতে ঢুকতেই সাদি মিহিকে খেয়াল করে। এবং আন্দাজও করতে পারে এখানে তার আসার কারণটা।
সাদি এগিয়ে যায়। মিহির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
“এখানে তুমি?

মিহি বসে ছিলো। সাদির কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
” তোমার সাথে কথা বলতে চাই আমি।

“ক্যান্টিনে চলো

সাদি আগে আগে হাঁটতে থাকে। মিহি পেছনে পেছনে। ক্যান্টিন এখন ফাঁকা। হাতে গোনা কিছু মানুষ রয়েছে। সাদি ফাঁকা একটা টেবিল দেখে বসে পড়ে। মিহিও সাদির সামনাসামনি বসে পড়ে।
সাদি টেবিলের ওপর দুই হাত তুলে মিহির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
” কিসের আশায় এখানে এসেছো মিহি?
তোমার কি মনে হয় না তুমি বোকা? তোমার সাথে রিলেশনশিপ এ থাকার সময়ও আমি তোমাকে বলেছিলাম ছোঁয়ার কথা। তার প্রতি আমার ফিলিংস আমি শেয়ার করেছিলাম তোমার সাথে। তাহলে?
তুমি কি বুঝতে পারছো না? আমি ছোঁয়াকে কতোটা ভালোবাসি? ওকে পেয়ে আমি কতোটদ খুশি?

মিহির চোখে পানি টলমল করছে। সে সাদির হাতের ওপর হাত রাখে। সাদি হাতটা সরিয়ে নেয়।

“একটু ভালো থাকার লোভে তোমার কাছে আসি আমি।

হাসে সাদি।
“এখানে সুখ পাবে না তুমি। আর এসো না। ছোঁয়া জানতে পারলে তোমার এটা সেটা নানান কথা শুনিয়ে দিবে। তখন নিজেও লজ্জা পাবে আমিও লজ্জায় পড়ে যাবো।

বলেই সাদি চলে যায়। মিহি বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে সাদির চলে যাওয়ার দিকে।

সেলিম হাজারবার সরি বলে বউয়ের সাথে সম্পর্ক ঠিকঠাক করে নিয়েছে। শেষবারের মতো সেলিমকে ক্ষমা করে দিয়েছে তিনি। দ্বিতীয় বার এই রকম ভুল করলে একদম সোজা ডিভোর্স দিয়ে দিবে এমনটাও হুমকি দিয়েছে।।

ছোঁয়ার একা একা ভালোই লাগছে না। এতোদিন সাদির সাথে চিপকে চিপকে থাকতো। একটা মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করতো না। কিন্তু আজকে লোকটা কতো দূরে।
আসবেও সেই রাতে। সাদি আসার আগে আগে বই নিয়ে পারতে বসতে হবে। যাতে রেজাল্ট দিলে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে পারে ” পড়েছিলাম তো। মনে না থাকলে আমি কি করবো”

এখন বাজে সন্ধ্যা সাতটা। সাদি ফিরবে নয়টায়। এতো সময় কি করবে ছোঁয়া? ভাবতে ভাবতপ মাথায় চলে আসে দুষ্টু বুদ্ধি।
সেই যে একদিন বরটার সাথে সুন্দর একটা রাত কাটালো তারপর তো আর তেমন সময় পার করা হলো না। আজকেই তাহলে সাদিকে একটু চমক দেওয়া যাক।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছোঁয়া চট করে কাবাড থেকে সেই হাঁটু বের করা জামা খানা বের করে ফেলে। ফল্ট মুভিটা চালিয়ে নোয়াকে ফলো করতে থাকে। একদম পারফেক্ট নোয়ার মতো সাজবে সে।
সাদির জন্যও কাবাড ঘেটে একখানা কালো জ্যাকেট বের করে নেয়। এটা সাদিকে পড়াবে। একদম পারফেক্ট নোয়া এবং নিক লাগবে দুজনকে।

নোয়ার মতে চুল গুলো উঁচু করে বেঁধে ফেলে। হদঁটু বের করা জামা এবং হালকা মেকাপ। রুমে কয়েকটা মোমবাতিও জ্বালিয়ে ফেলে। ব্যাস এবার শুধু সাদি আসার অপেক্ষা।
সব কিছু শেষ করে বিছানার ওপর বই নিয়ে বসে পড়ে ছোঁয়া। একটু পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়ার নাটক আর কি।

সাদিকে আজকে একটু দ্রুতই ছুটি দেওয়া হয়েছে। তাই জলদি বাসায় চলে আসে। দরজা খুলে খাটের দিকে নজর দিতেই সাদির কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। তার আধপাগল বউ পড়ছে। পড়ার স্টাইল ও আলাদা। সব গুলো বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বিছানায়। উপুড় হয়ে শুয়ে একটা বই রেখেছে মাথার ওপরে এবং আরেকটদ বই উল্টো করে ধরে বইয়ের পেছনে ফুল আঁকছে।
ফোঁস করে শ্বাস টানে সাদি।

“কি করছো?

ফুল আঁকায় এতোটাই মনোযোগ দিয়েছিলো যে সাদি এসেছে এটা সে টেরই পায় নি। জলদি উঠে বসে ছোঁয়া। মাথার ওপর থেকে বই নামিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে

” একটু পড়ছিলাম আর কি?

সাদি কিছু বলে না। দরজা আটকে অফিসের ব্যাগ জায়গা মতো রাখে। তারপর ট্রাই খুলতে থাকে।
সাদির কোনো রিয়াকশন না পেয়ে ছোঁয়া বলে ওঠে
“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না?

সাদি পরনের শার্ট খুলে ফেলে৷ চুল গুলো হাতের সাহায্যে এলোমেলো করে নেশাতুন কন্ঠে বলে।
” বলবো না বোঝাবো।

তারপর রুমের লাইট অফ করে জাপ্টে জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। কোলে বসিয়ে চুম্বন এঁকে দেয় ছোঁয়ার ললাটে।
ফিসফিস করে বলে
“তুমি করে বলবে?
ছোঁয়া নার্ভাস। লোকটা একটুখানি ছুঁয়ে দিলেই ছোঁয়া জমে বরফ হয়ে যায়।
গলা দিয়ে কথাই বেরুতে চায় না।
” বলো না জান? জাস্ট একবার।

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ছোঁয়া আস্তে করে ডাকে
“ও গো শুনছো। ভালোবাসি তোমাকে।

সাদমান চৌধুরীকে পাগল করতে এইটুকুই যথেষ্ট ছিলো।
সে তার আদরকে নিয়ে ডুবে যায় ভালোবাসার সাগর। আরও একটা সুন্দর রাত কাটায় দুজন।

___

প্রত্যাশার থেকে বেশি কিছু পেয়ে গেলে সাধারণত একটু বেশিই খুশি লাগে। আজকে ছোঁয়ারও খুশি হওয়ার দিন। তবে সে খুশি না। আবার কষ্টও হচ্ছে না। মোটামুটি একটা শকের মধ্যে আছে। ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষায় তিন সাবজেক্টে ফেল করছে ছোঁয়া। মনে মনে আশা ছিলোদুই সাবজেক্ট এ ফেল করার। কিন্তু একটা সাবজেক্ট বেশি ফেল করায় ছোঁয়া হতদম্ভ। কেনোনা আগেই নোটিশ দেওয়া হয়ে গিয়েছে দুই সাবজেক্টে ফেল করলে ওঠাবে সেকেন্ড ইয়ারে। কিন্তু তিন সাবজেক্টে করলে গার্ডিয়ান লাগবে। এখানেই ছোঁয়ার টেনশন। গার্ডিয়ান পাবে কই এখন? বাবা জানলে ঠ্যাং ভাঙবে। সাদি কান ছিঁড়ে দিবে।
তাহলে?

কলেজের মাঠে এসব চিন্তা করতে করতে হাঁটতেছিলো ছোঁয়া। হঠাৎ করে মাথায় চক্কর দিয়ে ওঠে। গা গুলিয়ে গড়গড় করে বমি করে দেয়।
ছোঁয়ার বন্ধু তিথি ছোঁয়াকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।
ছোঁয়া পানি খেয়ে একটু ঠিকঠাক হয়ে তিথিকে বলে
“দোস্ত আমাকে কনগ্যাচুলেশন বল। আমি প্রেগন্যান্ট।

চলবে

আমার ফেসবুক আইডির লিংক

https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL

আমার গ্রুপের লিংক

https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here