#তবু_সুর_ফিরে_আসে
১০ম পর্ব
এন্টি বায়োটিক, নেবুলাইজ আর ইনহেলার নিয়ে তিন দিনেই হেরা অনেক টা সুস্থ! নওশাদের দুই ভাই ফ্যামিলি নিয়ে আসতে চেয়েছিল অসুস্থ হেরাকে দেখতে নওশাদ না করে দিয়েছে ! আগে হেরা সুস্থ হোক তারপর !
অফিসে গেলেও বারবার হেরার খবর নিয়েছে নওশাদ ! বাসায় ফিরে হেরার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছে !
হেরা নওশাদ কে দেখলেই কেঁপে কেঁপে উঠে ! মানুষ টা কে দেখতে এত ভালো লাগে ওর !
ছুটির দিনে নওশাদ সকালে উঠেই গলফ খেলতে চলে যায় ! হেরা তখন ঘুমিয়ে ছিল !
আনারের মা ওর ঘুম ভাঙ্গালো ডেকে !
আম্মা উঠেন নাস্তা খান তারপর আপনার ওষুধ খাইতে হইব ! স্যার বলছে ওষুধ খাওয়ার পর ফোন দিয়ে জানাইতে যে আপনি ওষুধ খাইছেন !
তোমার স্যার কি অফিসে গেছে ?
না খেলতে গেছে !
কি ?
কি জানি খেলে মাঠে ! প্রতিদিন বিকালে খেলে আবার ছুটির দিনে সকালেও খেলে ! কি করবো কন , বাসায় কোন মানুষ আছে উনার সঙ্গে কথা কওয়ার তাই বাইরে বাইরে ঘুরে !
ঠিক বলেছো !
আপনি স্যারের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে পারেন না আম্মা !
কি বলো না তুমি , আমার উনাকে দেখলে কেমন ভয় ভয় লাগে !
আমারো বিয়ার পর পর আনারের বাপ রে দেখলে ভয় লাগতো জানেন ! আনারের মা হাসছে !
আর কেমন লাগতো আনারের মা ?
ভয় ও লাগতো আবার দেখতেও ইচ্ছা করতো সারাক্ষণ !
তাই , হেরা মনে মনে ভাবছে আমারও তো মানুষ টাকে ভয় লাগে আবার দেখতেও ইচ্ছে করে সারাক্ষণ !
রাইতে ঘরে মধ্যে ভয়ে আমার কলিজা কাপতো জানেন আম্মা , কিন্তু উনি হাসলেই সেই ভয় আবার গায়েব হয়ে যাইতো ! খুব বাসনা করতো আম্মা মানুষ টা আমারে ! আনারের মা এখনো লজ্জা পাচ্ছে সেই কথা বলে !
হেরা মনে মনে চিন্তা করছে নওশাদ হাসলেও ওর কত ভালো লাগে ! রেজোয়ান আর সুমনার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিল সেদিন কত সুন্দর লাগছিল দেখতে !
উঠেন আম্মা খাইয়া ওষুধ খান , আমার স্যাররে ফোন দিতে হইব ।
হেরা আজ অনেক সুস্থ শ্বাস কষ্ট ভালো হয়ে গেছে! কাশিও কমে গেছে! দুপুর হয়ে আসছে নওশাদ এখনো গলফ থেকে বাসায় আসেনি !
ডাক্তার বলেছে ঠান্ডা না লাগাতে , তাই সে গোসল করে আগে চুল শুকিয়ে ফেলে বাতাসে! এত ঘন লম্বা চুল অনেক সময় লাগে শুকাতে ! তার মামিরা বলতো এত বড় চুল না কাটলে কোন দিন এজমা ভালো হবে না! ও চুল কাটার কথা চিন্তাও করতে পারেনা!
সে দোতলায় লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছে আর মনে মনে অপেক্ষা করছে নওশাদের !
শোয়েব এসে লিভিং রুমে দাঁড়ালো ! সাদা রঙের লাক্ষনো স্টিচের সেলোয়ার কামিজ আর লাল ওড়না পড়া হেরা চুল খুলে বসে আছে তখন লিভিং রুমে !
শোয়েব কিছুক্ষণ সময় তাকিয়ে রইল ! হেরা অন্য দিকে ফিরে আছে বলেই শোয়েব কে দেখতে পায়নি!
পিছন থেকে হঠাৎ শোয়েব বলে উঠলো ,
আপনার শরীর কেমন এখন ?
হেরা চমকে উঠলো ! তাড়াতাড়ি ঘোমটা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো!
জ্বি আগের চেয়ে ভালো!
সরি আমার উচিত ছিল আপনাকে ডেকে খোঁজ নেয়ার । কেমন একটা ব্যাপার হয়ে গেল আপনি বাসায় অসুস্থ হয়ে ছিলেন একি বাসায় থেকে আমি জানিই না !
আমিই কাউকে না বলার জন্য বলেছিলাম সবাই কে ! আমার এরকম হয় এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু ছিল না!
কি বলছেন, আপনার শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল মামা ঐ দিন না আসলে তো আরও খারাপ হতো আপনার অবস্থা !
সেরকম কিছু না আমি ঠিক আছি এখন !
মামা আসেনি এখনো গলফ থেকে ?
জ্বি না !
আজ হয়তো কোন টুর্নামেন্ট আছে তাই দেরি হচ্ছে অন্য দিন এই সময়ের আগে চলে আসে! শোয়েব হেরা কে যখন দেখে শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ! সাদা সেলোয়ার কামিজ এ মনে হচ্ছে এক টুকরো মেঘ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
আনারের মা এসে লিভিং রুমে ঢুকলো!
আম্মা আসেন আপনার সব জিনিস ঠিক করা হয়েছে !
হেরা ঠিক করেছে সে আজ রান্না করবে ! আনারের মা রান্না ঘরে সব রেডি করে ওকে ডাকতে এসেছে!
হেরা আনারের মায়ের সঙ্গে কিচেনের দিকে চলে গেল!
শোয়েব পিছনে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গেল ! ছুটির দিনে সে তাদের বাসায় দুপুরের খাবার খায় !
হেরা অনেক আগ্রহ নিয়ে আজই প্রথম নওশাদের জন্য রান্না করছে ! সুমনা বলেছে নওশাদ বাঙালি খাবার খেতে পছন্দ করে ! হেরা তার মত করে করার চেষ্টা করলো ! কুচো চিংড়ি দিয়ে করলা ভাজি , রুই মাছের পাতুরি, বড় মাছের মাথার মুড়িঘন্ট , গরুর মাংস!
পারুল আর রান্নার কাজ করে করে যে দুইজন সবাই ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে!
আম্মা আপনে একা হাতে সব করছেন !
আমি এসব কিছু একা হাতেই করতাম বাড়িতে পারুল !
সব কাজ করতে পারেন আপনে ?
হেরা হাসছে !
আনারের মা দৌড়ে রান্না ঘরে এসে ঢুকলো!
আম্মা স্যারের গাড়ি ঢুকছে বাসায় । দোতলায় উঠেই আপনার খোঁজ করব স্যার , আপনি যান তাড়াতাড়ি!
কেন ?
আপনে রান্নাঘরে শুনলে বকবো আমারে !
তোমাকে কেন বকবে ?
আপনার শরীর খারাপ এর মধ্যে রান্না করতেছেন !
আমার রান্না প্রায় শেষ !
তাহলে যান তাড়াতাড়ি উপরে বাকি টা ওরা করুক !
হেরা দোতলায় উঠে এলো! নওশাদ নিজের ঘরে তখন ! হয়তো গোসল করছে ! ওর খুব নওশাদ এর সামনে যেতে ইচ্ছে করছে !
হেরা নিজের চুল ঠিক করলো ! তারপর ওড়না মাথায় দিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো !
তার একটু কেমন কেমন লাগছে যদি কিছু মনে করে উনি এখন রুমে গেলে ! তারপরও সে নওশাদের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো !
দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে নওশাদ বলে উঠলো,
এসো !
হেরা ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখে নওশাদ মাত্র গোসল করে বের হয়েছে! কোমড়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে খালি গায়ে কাপড় নামাচ্ছে ওয়াল কেবিনেট থেকে!
ওকে দেখে আর একটা টাওয়াল গায়ে জড়িয়ে নিল!
হেরা লজ্জা পেয়ে গেল ! সে তাড়াতাড়ি অন্য দিকে ফিরে গেল!
নওশাদ কেবিনেটে তার ট্রাউজার খুঁজে পাচ্ছে না ! তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ভাঁজ করা অন্য সব কাপড় ফেলে দিল !
হেরা আবার তাকালো নওশাদের দিকে !
কিছু খুঁজছেন আপনি ?
আমার ট্রাউজার এখানে থাকে !
আমি খুঁজে দিব ?
তুমি পাবে না ! কিছু খুঁজে না পেলে এত বিরক্ত লাগে আমার!
হেরা সোফার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে নওশাদের কিছু কাপড় গুছিয়ে রাখা !
সোফার উপর এগুলো মনে হচ্ছে আপনার !
হেরা সেখান থেকে ট্রাউজার বের করে দিল ! আনারের মায়ের কাজ দেখো ! কেবিনেটে না গুছিয়ে রেখে সোফায় রেখে চলে গেছে !
পড়ে যাওয়া কাপড় গুলো আমি গুছিয়ে রাখি ?
তোমার কষ্ট করতে হবে না , যার কাজ সেই করবে! নওশাদ ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়লো !
আমার কষ্ট হবে না আমি করে দিচ্ছি !
আচ্ছা ঠিক আছে দাও !
হেরা খুশি মনে নওশাদ এর কবিনেটে কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে ! ওর খুব ভালো লাগছে কাজটা করতে !
নওশাদ হেরাকে দেখছে ঘোমটা নেই মাথায় এখন ! সেদিন বলার পর এখন নওশাদের সামনে এত বড় ঘোমটা দিয়ে রাখে না সব সময়! মাথার চুলটা উঁচু করে ঘোপা করলো এক ফাঁকে হেরা !
নওশাদ অবাক হয় ,কে বলবে এক অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে ! কত সুন্দর করে কথা বলে! অবশ্য সাইফুল ইসলাম স্যার ও সব সময় খুব সুন্দর সুদ্ধ বাংলায় কথা বলতেন ! স্যারের কাছে বড় হয়েছে বলেই ওর মাঝে গ্রাম্য ব্যাপার গুলো এতটা নেই !
নওশাদের হঠাৎ মনে পড়ল চুড়ি গুলোর কথা ! এখন কি দিবে চিন্তা করলো সে ? থাক পরে এক সময় দিব !
নওশাদ চশমা টা চোখে পড়তে পড়তে বলল,
তোমার শরীর কেমন আজ ?
ভালো আছি !
তোমাকে দেখে আজ মনে হচ্ছে তুমি ভালোই আছো ! ভালো লাগছে দেখে !
ওষুধ গুলো খাচ্ছো তো ঠিক ভাবে ?
জ্বি !
আমার ছোট দুই ভাই আর তাদের বউ তোমাকে দেখতে আসতে চাইছে ! আজ রাতে আসতে বললে তোমার অসুবিধে হবে না তো হেরা?
আমার অসুবিধা নেই আপনি যা ভালো মনে করেন!
তাহলে আজ আসতে বলি তুমি সন্ধ্যায় রেডি থেকো !
সুমনা ভাবি রা আসবে ?
এটা ভালো বলেছো ওদের ও আসতে বলি ! সুমনা আর রেজোয়ান দুজনই অসুস্থ ছিল ! ভাইরাস জ্বরে কাবু হয়ে ছিল !
হেরা কাপড় গোছানো শেষ করে নওশাদের সামনে এসে দাড়ালো !
সে জন্যই সুমনা ভাবি আমাকে ফোন দিতে পারেনি ! আপনি যাওয়ার পর আমাকে শপিং এ নিয়ে গেছেন !
আমি জানি !
আমি কি উনাকে একটা ফোন দিব ?
দিও এক কাজ করো তুমি ফোন দিয়ে ডিনারের দাওয়াত দাও ! ওদের ভালো লাগবে ! তার আগে চলো লাঞ্চ করে আসি আব্বা আমার জন্য অপেক্ষা করছে না খেয়ে ! শুক্রবার এ লাঞ্চ আব্বার সঙ্গে করি গত শুক্রবার ছিলাম না আব্বা র সঙ্গে খাওয়া হয়নি !
ঠিক আছে চলুন !
নওশাদ আর তার বাবা শুক্রবার দুপুরে এক সঙ্গে খায় ! আজ হেরাও ওদের সঙ্গে বসেছে !
বাবু বড় বউমা খুব ভালো গরুর মাংস রান্না করে সেদিন খাওয়ালো আমাকে !
তাই নাকি ?
নওশাদ হেরার দিকে তাকালো !
হেরা মাথা নাড়লো শুধু !
আমি তো তাহলে মিস করলাম তোমার হাতের রান্না হেরা ! নওশাদ হেসে বলল !
আনারের মা পাশ থেকে বলে উঠলো ,
স্যার আজকে ও সব নতুন আম্মা রান্না করছে !
সত্যি হেরা ?
হেরা বাটি এগিয়ে দিল নওশাদের দিকে !
রুই মাছের পাতুরি দেখে বলল,
এটা কি সবুজ সবুজ ?
আমরা মাছের পাতুরি বলি !
আম্মা রান্না করতো এসব রান্না ! দেখে তো মনে হচ্ছে টেস্টি হবে !
হেরা শ্বশুরের প্লেটে খাবার তুলে দিল !
আব্বা মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারবে না ! আমি আব্বার মাছ বেছে দেই হেরা !
হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে এত বড় একজন ব্যবসায়ী, ব্যস্ত মানুষ কিন্তু কতটা দ্বায়িত্বশীল ছেলে বৃদ্ধ বাবার মাছের কাঁটা নিজে বেছে প্লেটে তুলে দিচ্ছে ! ওর এত ভালো লাগলো দৃশ্যটা , মনটা ভরে গেল !
ওর মামারা নানার কোন খবর কোন দিন নেয় না ! কি খাচ্ছে, শরীর কেমন কখনো না! আর কত খারাপ ব্যবহার করে ! আর এই মানুষটা নিজে একা তাও সব সময় নিজের বাবার খোঁজ নেয় ! প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় ,অফিস থেকে এসে একবার হলেও খোঁজ নিবেই !
বৌমা রান্না অনেক ভালো হয়েছে !
হেরার শ্বশুরের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে খুব খুশি খুশি লাগছে! কিন্তু নওশাদ কিছু বলছে না এখনো! উনার কি ভালো লাগছে না ?
বুঝলে বৌমা তোমার শ্বাশুড়ি ও খুব ভালো রান্না করে শিখে নিও !
জ্বি আব্বা!
আব্বা ধীরে ধীরে খাও গলায় খাবার আটকে যায় কিন্তু তোমার ,নওশাদ বলল!
খাচ্ছি ! তোর আম্মা র কান্ডটা দেখ মেয়ের বাসায় গিয়ে দিনের পর দিন পরে থাকে ! কিছু বলিস না কেন বাবু?
থাকুক না আব্বা এখানে থাকলে তোমার উপর খবরদারি করে আম্মা ! এখন তুমি নিজের মত করে আছো ভালো লাগছে না তোমার?
এটা ঠিক বলেছিস ! তোর আম্মা সারাজীবন আমার উপর মাতব্বরি করলো শুধু! থাকুক পড়ে মেয়ের বাসায়!
নওশাদ হাসলো !
খাওয়া শেষ করে নওশাদ হেরাকে নিজের রুমে আসতে বলল!
আমার একটা ওষুধ এখন খেতে হয় খেয়ে আসি ?
ঠিক আছে !
হেরা ওষুধ খেয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো! চুলটা আঁচড়ে খোঁপা করলো ! মাথায় ওড়না টা দিয়ে আবার খুলে ফেলল! রুম থেকে বের হওয়ার সময় আবার ওড়না টা মাথায় দিলো !
নওশাদের রুমের দরজায় খুব ধীরে নক করছে সে !
খোলা আছে হেরা চলে এসো !
হেরা ঘরে ঢুকে দেখে নওশাদ ফোনে কথা বলছে !
সে চুপচাপ চেয়ারে বসলো !
ও বুঝতে পারছে নওশাদ তার কোন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে !
ও নওশাদের দিকে তাকিয়ে আছে ! মানুষ টা কথা বলছে ফোনে এটা দেখতেও কি ভালো লাগছে !
ফোনে কথা শেষ করে নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল,
এসি ছাড়া তোমার খারাপ লাগছে না তো !
না ঠিক আছে !
সুমনার সঙ্গে কথা বলেছি ওরা আসছে রাতে !
এখন শরীর কেমন ভাবির ?
এখন ভালো আছে ! তুমি অসুস্থ ছিলে শুনে আফসোস করছিল সে জানতো না বলে !
আপনাকে উনারা দুজন খুব পছন্দ করেন!
আমিও ওদের খুব পছন্দ করি! আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের কিছু মানুষের মধ্যে ওরা দুজন !
আমার জীবনটা একটা সময় খুব একা হয়ে গেল গীতি যাওয়ার পর, আমি তখন মানুষের সঙ্গ পছন্দ করতাম না ! একা থাকতেই ভালো লাগতো ! কিন্তু রেজোয়ান আর সুমনা তখন আমাকে একা থাকতে দিতো না ! ওরা আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে! আমি শুধু কাজে ডুবে থাকতাম !
আমি জানি একা থাকাটা কত কষ্টের , হেরা বলল!
রাতের পর রাত জেগে বসে থাকতাম বারান্দায় ! মনে হতো গীতি কখনো না কখনো আসবে হয়তো ! কত মানুষ ই তো মৃত প্রিয়জনকে হেলুসিনেশন এর মধ্যে দেখে , কিন্তু আমি কখনো গীতি কে দেখিনি !
একটা সময় সেই ইচ্ছেটা সময়ের স্রোতে চাপা পড়ে গেল আমি আর অপেক্ষা করি না গীতির জন্য! আমার অবচেতন মন , আমার সকল অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে গীতি নেই , গীতি আর আসবে না ! সেদিন থেকে নিজেকে কাজ, সামাজিকতা এসব কিছুতে বন্দী করে ফেলেছিলাম !
হেরার খুব ইচ্ছে করছে নওশাদ এর হাত টা ধরতে ! হাত ধরে বলতে আমাকে আপনার একাকিত্বের সঙ্গি বানিয়ে ফেলুন না ! আমিও খুব একা !
হেরা ?
জ্বি !
খাওয়ার টেবিলে বলিনি তোমার রান্না অনেক ভালো হয়েছে ! অনেক দিন পর এই বাড়িতে আমার জন্য কেউ এত ভালো রান্না করলো ! শুধুই আমার জন্য!
হেরার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো ! তার খুব থ্যাঙ্কস বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বলতে লজ্জা লাগছে !
একটা কাজ করবে ! ইন্টার কমটা দিয়ে রান্না ঘরে কাউকে বলো তো আমার আর তোমার জন্য চা দিয়ে যেতে ! ঐ যে পাশের ছোট ফোনটা ওটাই !
আমি বানিয়ে নিয়ে আসি ? বলেই হেরা ঝট করে উঠে দাঁড়ালো!
এই গরমে তোমার কষ্ট করে কিচেনে যাওয়ার দরকার নেই! এমনিতেই এত কিছু রান্না করেছো আজ!
প্লিজ প্লিজ যাব আর আসব !
আচ্ছা ঠিক আছে যাও বলে হেসে দিল নওশাদ !
হেরা দৌড় দিল দরজা খুলে রান্নাঘরের দিকে!
নওশাদ অবাক হয়ে গেল! আরে এই মেয়ে তো শান্ত শিষ্ট দেখালেও এখন মনে হচ্ছে ভালোই চঞ্চলতা আছে!
ঘরে বসে হাসছে নওশাদ!
শুক্রবার এই সময় সে ঘরে বসে বই পড়ে কোন কোন দিন সুইমিং করতে যায়! আজ ওসব করতে ইচ্ছে করছে না! খুব ভালো লাগছে হেরার সঙ্গে গল্প করতে! অনেক বছর পর এই বাসাটাকে খুব আপন মনে হচ্ছে! বাসাটা তাকে আটকে রাখতে পারছে !
নওশাদ লাগেজ খুলে হেরার সব গিফট বের করলো! গয়না গুলো আলাদা করে রাখলো ! চুড়ি গুলো বের করে দেখলো ! ওর আন্দাজ বলছে চুড়ি গুলো পার্ফেক্ট হবে! ওর খুব ইচ্ছে করছে নিজের হাতে হেরাকে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিতে । খুব বেশি কি হয়ে যাবে! মেয়েটা সামান্য কিছু পেলে খুশি হয়ে যায় ও চুড়ি কয়টা পড়িয়ে দিলে হয়তো খুব খুশি হবে!
হেরাকে কেউ কোন দিন আদর করে কিছু দেয়নি ! নানার সামর্থ্য সামান্য ছিল ইচ্ছা থাকলেও বৃদ্ধ নানা প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারেনি হয়তো !
আজ সে যখন ওর দ্বায়িত্ব নিয়েছে নিজের দ্বায়িত্ব সবটুকু পালন করতে চায় নওশাদ ! ওকে খুব সুন্দর সন্মানের জীবন দিতে চায় ! যার ইচ্ছে হবে বাড়ি বয়ে এসে ওকে কথা শুনিয়ে যাবে সে এসব কিছু মেনে নিবে না ! অসম্ভব !
দরজা খুলে হেরা ট্রে নিয়ে ঢুকলো !
আপনি চিনি খান না তাই না? আমি চিনি দেইনি !
সমস্যা নেই একদিন খেলে কিছু হবে না !
হেরা নওশাদের হাতে মগ তুলে দিল ! খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে?
খাচ্ছি তুমি নাও একসঙ্গে খাই !
আগে আপনি খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে !
নওশাদ মগে চুমুক দিল !
হুম ভালো হয়েছে হেরা ! জানেন নানাও আমার হাতের চা খুব পছন্দ করতো !
তাই ,সত্যি ভালো হয়েছে চা ! থ্যাঙ্কস হেরা ! তুমি আজ আমাকে মজার মজার রান্না করে খাওয়ালে এখন দারুণ চা খাওয়ালে ! তোমাকে আমি গিফট দিতে চাচ্ছি!
আমি যদি প্রতিদিন রান্না করি প্রতিদিন চা বানিয়ে খাওয়াই তাহলে কি প্রতিদিন গিফট দিবেন ?
নওশাদ হো হো করে হেসে দিল ! আচ্ছা প্রতিদিন দিব !
প্রতিদিন গিফট লাগবে না কিন্তু আমি প্রতিদিন আপনার জন্য চা বানিয়ে দিব !
ঠিক আছে কিন্তু আমি যদি প্রতিদিন গিফট দেই তখন ?
এত গিফট লাগবে না আমার ! গিফট পেলে মনে হবে গিফটের জন্য আমি কিছু করছি! আমি আমার দ্বায়িত্ব থেকে করতে চাই !
আচ্ছা ঠিক আছে ! সন্ধ্যায় অফিস থেকে যখন বাসায় ফিরব তখন তুমি চা বানিয়ে আনবে আমরা দুজন এক সঙ্গে বসে চা খাব কেমন !
ঠিক আছে!
দরজায় আনারের মা নক করছে ! হেরা উঠে দরজা খুলে দিল ! আনারের মায়ের হাতে এই বড় এক ব্যাগ!
আম্মা সুমনা ম্যাডামের ড্রাইভার আসছে বলল আপনার জন্য ম্যাডাম দিসে এই ব্যাগ !
কি আছে এই ব্যাগে ?
আমি জানি না আম্মা ! আনারের মা ব্যাগ নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো !
কি আছে ব্যাগে হেরা ? নওশাদ ও উঠে এলো !
নওশাদ আনারের মা কে ডেকে বলল,
আজ রাতে বাড়িতে গেস্ট আসবে আলাউদ্দিন কে বলো আয়োজন করতে !
জ্বি !
আনারের মা ব্যাগ নামিয়ে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল !
খুলে দেখব?
হুম তোমার জন্য পাঠিয়েছে খুলবে তো অবশ্যই !
হেরা ব্যাগের চেইন খুলে দেখে টেইলার্স থেকে ওর সব ড্রেস আর ব্লাউজ পাঠিয়েছে সুমনা !
আমার জন্য ভাবি এসব কিছু কিনে দিয়েছিল ! দেখুন! হেরা ড্রেস গুলো খুলে দেখাচ্ছে নওশাদ কে !
ও আচ্ছা , সুন্দর!
জানেন অনেক দাম এক একটা ড্রেসের ! আমি বারবার না করেছি এত গুলো ড্রেস কেন কিনতে হবে? তাও এত দাম দিয়ে কিনে দিলো !
তারপর ?
উনি জোর করে কিনে দিলেন , আমার কোন কথাই শুনলেন না!
তোমাকে ভালোবেসে কিনে দিয়েছে সুমনা !
তাই বলে এত শপিং ! আমাকে উনি কি বলল জানেন ?
কি বলেছে ?
থাক !
না শুনিই না কি বলল , সুমনা ?
বলল আমার নাকি এখন শপিং করার বয়স !
এটা ঠিক বলেছে তোমার বয়সী মেয়েরা শপিং করতে পছন্দ করে ! অবশ্য আমার ধারণা সব বয়সী মেয়েরাই শপিং করতে পছন্দ করে !
আমার এত টাকা খরচ করার অভ্যাস নেই ,যেই বললাম ভাবী বলে উঠলেন, তোমার বরের এত টাকা আছে তুমি প্রতিদিন খরচ করলেও শেষ করতে পারবে না !
নওশাদ হাসছে হেরার কথা শুনে ! সুমনা এই কথা বলল!
হুম ! আপনার কষ্টের টাকা আমি কেন খরচ করব তাই না ? আর টাকা যে কি জিনিস আমি জানি ! জানেন আমার দুইটা পরীক্ষার ফরম পূরণ করার জন্য টাকা কত কষ্ট করে নানা জোগাড় করেছে ! মামা রা দেয়নি ! নানা অসুস্থ ছিল পেনশনের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হলো নানার হাত খালি আমি দেখেছি নানার কষ্ট টা, তাই বলছি অযথা টাকা খরচ করার অধিকার আমার নেই !
আমার টাকা খরচ করার অধিকার তোমার আছে ; তুমি করতেই পারো হেরা !
না থাক এত খরচ করা ঠিক না !
হেরা কথায় কথায় তোমার গিফট টা দেয়ার কথা ভুলেই গেলাম ! দাঁড়াও এক সেকেন্ড ! বলে নওশাদ চুড়ির বক্স গুলো বের করলো !
তুমি আমার কাছে চুড়ি চেয়েছিলে না , এই নাও !
নওশাদ চুড়ি গুলো হেরাকে দিল !
এ গুলো কি সোনার চুড়ি ?
হুম , তোমার জন্য দোহা থেকে কিনেছি !
ও আল্লাহ সোনার চুড়ি আনতে গেলেন কেন , আমি তো কাঁচ কিংবা ইমিটেশন বলেছিলাম ! অনেক দাম তো সোনার ! হেরা চোখ বড় বড় করে নওশাদের দিকে তাকালো!
আগে দেখো তো তোমার হাতে লাগবে কিনা ? আমি পড়িয়ে দিব হেরা ?
দিন , হেরা হাত বাড়িয়ে দিল !
নওশাদ হেরার হাতটা ধরলো তারপর একি ডিজাইনের আটটা চুড়ি হেরার দুই হাতে পড়িয়ে দিল !
বাহ্ হেরা অনেক সুন্দর লাগছে তোমার হাতটা !
হেরা লজ্জা পেয়ে গেল !
সব সময় পড়ে থেকো সুন্দর লাগবে !
নষ্ট হয়ে যাবে না তো ?
নষ্ট হবে না ! আরো আছে দেখো পছন্দ হয় কিনা ?
এত চুড়ি !
হুম তোমার জন্য !
হেরা অবাক হয়ে দেখছে এত গুলো চুড়ি ওর জন্য এনেছে নওশাদ !
অনেক বছর পর আমি এসব কিনলাম ! গীতি নিজের শপিং নিজেই করতো ! তাই ভাবছিলাম তোমার পছন্দ হবে তো ?
অনেক পছন্দ হয়েছে আমার ! এত সুন্দর চুড়ি আমি জীবনে দেখেনি ,থ্যাঙ্কস !
গুছিয়ে রাখো বাকি গুলো !
এই ঘরে রাখি ?
তোমার ইচ্ছা যেখানে খুশি রাখো !
কোন আলমারিতে রাখব ?
একটা তে রাখলেই হলো !
নওশাদ বাকি সব গিফট গুলো দিল ! ব্যাগ, কসমেটিকস, পারফিউম । গলা কানের দুটো সেট এনেছে গোল্ডের সে গুলো রেখে দিল পরে দিবে!
এগুলোও তোমার হেরা !
এত কিছু !
হুম !
হেরা যখন বাকি চুড়ির বক্স গুলো নওশাদ এর আলমারিতে তুলে রাখছে তখন নওশাদ এর মোবাইল এ অফিসের কেউ ফোন দিয়েছে ! নওশাদ কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল!
হেরা নওশাদ কে বলে নিজের ঘরে চলে এলো !
সন্ধ্যায় হেরা শাড়ি পড়বে ঠিক করেছে ! শাড়ি সে পড়তে পারে কিন্তু নিচে কুচি গুলো একজনের ধরলে সুবিধা হয় ! ছোটবেলায় নানুর শাড়ি পড়ে খেলতো সে ! সেই থেকে শাড়ি তার খুব প্রিয় !
সুমনা তাকে খুব সুন্দর সুন্দর কয়টা শাড়ি গিফট করেছে !
সেখান থেকে হালকা হলুদ রঙের একটা সিল্কের শাড়ি পড়বে বলে ঠিক করেছে । শাড়িটার পাড়টা ডীপ বেগুনি রঙের ! এত সুন্দর শাড়ি সে কখনো দেখেনি!
সে আনারের মা কে বলে আসলো তাকে শাড়ি পড়ার সময় একটু হেল্প করতে! আনারের মা আজ খুব ব্যস্ত রান্না ঘরে । আবার বাসা গোছানো সব ওকেই দেখে করাতে হচ্ছে! অনেক দিন পর পর বাসায় গেস্ট আসে এখন ! আনারের মায়ের খুব ভালো লাগছে বাড়িটা আগের মত হবে ভেবেই ! একটা মানুষ আসতেই সব আগের মত হয়ে যাচ্ছে!
হেরা শাড়ি পড়ে চুল ছেড়ে দিলো ! মুখে একটু হালকা মেকআপ লাগালো ! সে আগে কখনো সাজতো না কিন্তু সেদিন পার্লারে একটু সাজতেই নিজের কাছেই দারুন লেগেছে ওর !
ফেইস পাউডার , কাজল আর হালকা রঙের একটা লিপস্টিক লাগালো ! বেশি সাজলে ভূতের মত লাগে ওকে ! নওশাদ বিরক্ত হতে পারে ! নওশাদ ওর জন্য পারফিউম এনেছে কয়েকটা সেখান থেকে একটা গায়ে স্প্রে করলো !
এভাবে জীবনে কখনো সাজেনি সে ! আয়নায় নিজেকে দেখে ভালো লাগছে ওর ! নওশাদ দেখবে ভেবেই আনন্দ লাগছে খুব !
রুম থেকে বের হতেই দেখে সিঁড়ি দিয়ে নওশাদ উঠে আসছে !
কালো একটা পাঞ্জাবি তে নওশাদ কে এত সুন্দর লাগছে ! ফর্সা মানুষ টাকে আরও ফর্সা লাগছে ! ওর তাকাতেই কেমন লাগছে ! মনে হচ্ছে উনি ওর মনটা পড়ে ফেলবেন হেরার চোখ দেখেই!
নওশাদ হেরাকে এই প্রথম শাড়ি পড়া দেখছে ! হলুদ শাড়িতে মেয়েটাকে তো দারুন লাগছে মনে মনে ভাবলো।
ইস আর একটু বয়স বেশি হলে কি হতো ! এত বাচ্চা বয়সী একটা মেয়ে নিজেকে ওর পাশে অপরাধী লাগে! ওর মুখের , চোখের মায়ায় পড়তে কোথায় যেন একটা বাঁধা আসে ওর ভেতর থেকে ! তারপরও ওর দিকে তাকালেই একটা মায়ায় বাঁধা পড়ে যাচ্ছে সে !
হেরা এসো তো আমার রুমে একটা জিনিস দিব তোমাকে !
কি ?
সঙ্গে এসো দিচ্ছি!
হেরা নওশাদ এর পেছন পেছন ওর রুমে ঢুকলো ! নওশাদ গলা কানের সেট গুলো বের করে দিল !
শাড়ির সঙ্গে ভালো লাগবে হেরা পড়ে দেখো !
আবার কেন ?
তোমার জন্য এনেছিলাম ! তখন দেইনি মনে হলো এখন দেই !
হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ! এত সুন্দর !
পড়ো !
হেরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার একটা সেট পড়লো !
নওশাদ কাছে এগিয়ে গেলো !
খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে ! হেরার এত ভালো লাগছে নওশাদ সুন্দর বলাতে ! ওর মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছে!
হঠাৎ নওশাদ বলল, তোমার গলার কাছে এটা কিসের দাগ ! ব্যথা পেয়েছিলে ?
হেরার কলার বোনের নিচে বুকের কাছে বড় একটা আঁচড় দেখে নওশাদ প্রশ্ন করলো ?
হেরা সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটায় হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল!
এই দাগটা দেখলে ওর মনটা কষ্টে শেষ হয়ে যায়! প্রতিদিন যখনই চোখ পড়ে তখন সে কেঁপে উঠে !
ওর চোখ ভিজে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে ! সে নওশাদের সামনে কাঁদতে চায় না আজ ! খুব চেষ্টা করছে সে চোখের পানি আটকাতে!
কি হলো বলা যাবে না আমাকে ? এই মেয়ে চোখে পানি মনে হচ্ছে তোমার ! কি ব্যাপার হেরা বলতো ?
এটা আমার জীবনের কলঙ্ক হেরা নিচের দিকে তাকিয়ে বলল !
মানে ? নওশাদ অবাক হয়ে হেরার দিকে তাকিয়ে আছে!
হেরা চুপ করে আছে !
বলো কি হয়েছিল?
নুরুল যেদিন তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আমি বাঁধা দিচ্ছিলাম ধস্তাধস্তি তে এটা ওর নখের আঁচড় ! প্রায় তিন চার ইঞ্চির উপরে বড় দগদগে একটা আঁচড় ! হেরা কেঁদে দিল !
সব সময় ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে বলে দেখা যায় না এই গলার নিচে আর বুকের উপরের দাগটা !
নওশাদ এর মনটা খারাপ হয়ে গেল !
হেরা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে ফিসফিস করে বলল,জানেন প্রতিদিন এই দাগটা দেখলে ভয়ে, কষ্টে আমার ভেতরটা পুড়ে যায় ! এই কলঙ্ক সারাজীবন আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে !
নওশাদ হেরার বুকের কাছে সেই আঁচড়টাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলো !
সঙ্গে সঙ্গে হেরার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো! শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে গেল ! ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে হেরা !তার কাছে মনে হচ্ছে সে জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে ! তার শরীরের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে !
নওশাদ গলা নামিয়ে বলল, চাঁদের ও তো কলঙ্ক থাকে হেরা, তাই বলে কি চাঁদের সৌন্দর্য কমে যায় ? তুমি চাঁদের মত সুন্দর , পবিত্র একটা মেয়ে এই সামান্য দাগ তোমাকে কলঙ্কিত করতে পারেনি ! আমার কাছে তুমি পবিত্র !
হেরা কোন কথা বলতে পারছে না ! ওর কাছে মনে হচ্ছে নওশাদের হাত টা ওর বুকের ভেতরের সব কষ্ট , সব যন্ত্রণা, সব অপমান শুষে নিয়ে যাচ্ছে!
এই হাতের স্পর্শে সে সত্যিই পবিত্র হয়ে যাচ্ছে !
( চলবে )