তবু_সুর_ফিরে_আসে ১৪তম পর্ব

0
193

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

১৪তম পর্ব

ন‌ওশাদ হ্যালো বলতেই ওপাশের মানুষ টা বলে উঠলো,
পাপা!
নিশাল !
ন‌ওশাদের বুকের ভেতরে গিয়ে পাপা ডাকটা স্পর্শ করলো !
এতদিন পরে ফোন দিলে নিশাল আমি টেনশন করছিলাম !
আমি ফোন দিয়েছিলাম পাপা , তোমার ফোন বন্ধ পেলাম বুঝলাম তুমি হয়তো দেশের বাহিরে ! তারপর ছোটখালামনি কে কল করলাম ‌, বলল তুমি দেশের বাহিরে গেছো !
আর কিছু বলেনি বীথি ?
আর কি বলবে ? শুধু বললো তুমি চার পাঁচ দিনের জন্য ইউরোপ গিয়েছো !
ন‌ওশাদ ছেলের সঙ্গে কথা বলছে দেখে হেরা আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে গেল ! বাবা ছেলের মাঝে থাকাটা ঠিক হবে না!
সরি পাপা আমি তোমার লাস্ট পেরেন্টস ডে তে আসতে পারিনি । আমি খুলনা গিয়েছিলাম ! সরি !
পাপা ব্যাপার না তুমি বিজি মানুষ সব সময় কি আর সময় বের করা সম্ভব হয় তোমার ! আমি বুঝি !
না নিশাল তোমার জন্য আমার সময়ের অভাব নেই !
তোমার শরীর ঠিক আছে পাপা ?
আমি ভালো আছি নিশাল ! তুমি কেমন আছো ?
আমার আজ চারদিন জ্বর পাপা । আমি অসুস্থ থাকি যখন তুমি অসুস্থ হয়ে যাও এই কথাটা হঠাৎ মনে হলো তাই ফোন দিলাম ! মনে আছে পাপা মাম্মা সব সময় বলতো বাবা ছেলে এক সঙ্গে অসুস্থ হবে আর মাম্মা কে বিপদে ফেলে দেই আমরা !
ভুলে গিয়েছিলাম তুমি বলাতে মনে পড়লো ! আমি চাই তুমি সব সময় ভালো থাকো নিশাল ! ডাক্তার ঠিক মতো ওষুধ দিয়েছে তো তোমাকে ?
দিয়েছে তুমি টেনশন করো না ! আমি ঠিক হয়ে যাব ইনফেক্ট আজ সকাল থেকে জ্বর নেই আমার !
আমি জানি আমার নিশাল অনেক স্ট্রং !
ফোন রাখছি পাপা অন্য একজনের ফোন থেকে ফোন করেছি ! ভালো থেকো !
হুম!
নিশাল ফোন রেখে দিলে ন‌ওশাদ চুপ করে বসে রইল অনেক্ষণ ! ওর বারবার মাথায় ঘুরছে নিশালের কথাটা ! ওরা দুইজন সব সময় এক সঙ্গে অসুস্থ হয়ে যায় ! নিশালের জন্মের পর থেকে এই ঘটনা ঘটছে ! গীতি সব সময় বলতো এমন রক্তের মিল জীবনে দেখিনি একজন অসুস্থ কিছুক্ষণ পর আরেকজন অসুস্থ হবেই ! নিশালের গা গরম হলেই গীতি অফিসে ফোন দিয়ে বলতো তাড়াতাড়ি চলে আসো বাসায়। তোমার ও জ্বর এলো বলে তোমার ছেলের গায়ে জ্বর! প্রথম প্রথম ন‌ওশাদ হেসে উড়িয়ে দিত কথাটা কিন্তু ঘটতো ঘটনাটা !
বিদেশে গেছে শরীর খারাপ লাগছে দেশে ফোন দিয়ে শুনতে হতো নিশাল ও অসুস্থ !
গীতি আক্ষেপ করে বলতো সন্তান নাকি মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন কিন্তু নিশাল তো বাপের সকল জীন নিয়ে এসেছে মায়ের চেহারার মিল টুকু ছাড়া আর কিছু পায়নি ! সব তার পাপার সঙ্গে মিল!
এত মিল যে ছেলের সঙ্গে সেই ছেলের সঙ্গে আজ কত দূরত্ব ! দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ন‌ওশাদ!
হঠাৎ খেয়াল করলো ওর চোখের কোণে পানি ! ছেলেটার শরীর খারাপ কিন্তু ছেলে তার থেকে কত দূরে !
ছেলের ছবিটা মোবাইলে ওপেন করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ! বুকের ভেতরে এত খালি খালি লাগছে খুব ইচ্ছে করছে নিশালকে দেখতে !
কিছুক্ষণ বসে রইল মোবাইল টা হাতে নিয়ে । তারপর ড্রাইভার বাহার কে কল করলো ,
বাহার গাড়ি বের করো বাহিরে যাব !
আমি নিচে আছি স্যার !
আমি আসছি অপেক্ষা করো !
ন‌ওশাদ ধীরে ধীরে উঠে ড্রেস চেঞ্জ করলো ! তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেল ! সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে হেরাকে ডাকলো ,
হেরা ! হেরা !
হেরা ছুটে এলো রুম থেকে !
অফিসে যাচ্ছেন আপনি ?
আমি নিশাল কে দেখতে যাচ্ছি বিকেলে চলে আসব !
ও ঠিক আছে তো ?
অনেক দিন ছেলেকে দেখিনা হেরা আজ ওকে না দেখলে থাকতে পারবো না !
আচ্ছা , সাবধানে যাবেন ! হেরা ন‌ওশাদের কাছে এসে দাঁড়ালো ! সিঁড়ি দিয়ে নামতে কষ্ট হবে আমি নিচে দিয়ে আসি আপনাকে ?
ঠিক আছে চলো !
ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরলো ! চুপচাপ দুজন নিচে নেমে এলো !
আপনাকে দেখে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার মন অতিরিক্ত খারাপ এবং খুব টেনশনে আছেন ! আমাকে কি বলা যায় ?
হেরা নিশালের আজ চারদিন খুব জ্বর ! আমি আর ও সারা জীবন এক সঙ্গে অসুস্থ হ‌ই ব্যপারটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম ! খুব খারাপ লাগছে ছেলেটার জন্য! তুমি দোয়া করো ও যেন ভালো হয়ে যায় কলেজে ওর যত্ন নেয়ার কেউ নেই !
আপনি চিন্তা করবেন না নিশাল সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ! আপনি ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন !
না নিয়ে আসা যাবে না দেখে আসব শুধু !
সাবধানে যাবেন আপনার ও শরীর খারাপ !
হুম! ন‌ওশাদ গাড়িতে উঠে গেল !
হেরা গাড়ির দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ! ওর ও খুব ইচ্ছে করছে ন‌ওশাদের সঙ্গে যেতে কিন্তু এটা তো অসম্ভব !
বাহার গাড়ি স্টার্ট করলো !
হেরা গাড়ি গেট পার হ‌ওয়ার পর যতক্ষণ দারোয়ান গেট না লাগালো ততক্ষন দাঁড়িয়ে রইল ওখানে !

ন‌ওশাদ ছেলের পছন্দের ফ্রুট, খাবার কিনে নিলো ! বুলগেরিয়া থেকে ছেলের জন্য চকলেট এনেছিল সেটাও সঙ্গে নিলো !
গাড়িতে বসে ভাবছে সে আর তার ছেলে দুজন কতটা একা ! এর জন্য গীতি দায়ী । এভাবে একা ফেলে দুজনকে চলে যেতে পারলো ! দশ বছরের একটা ছেলে কে রেখে চলে গেল কিছু বলে গেল না। ছেলে কি খেতে পছন্দ করে, কি অপছন্দ করে , কি করলে আনন্দ পায় কিছুই সে জানতো না ! একটা মেয়ে বাবার যতটা কাছ ঘেঁষা হয় একটা ছেলে ততটা হয় না ! আর সে এমন এক বাবা যে বাসার খবর রাখেনি কখনো ! রাখতে হয়নি গীতি সব সামলাতো ! কোন দিন সংসারের কিছু নিয়ে তাকে ব্যস্ত করেনি আর সেই মানুষটা সংসার সন্তান সব তার ঘাড়ে ফেলে ধুম করে একদিন নাই হয়ে গেল !
আর নিশাল ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেল! ছেলেটা তার সঙ্গে থাকলে ছেলের সঙ্গে এই দূরত্ব টা কোন দিন তৈরি হতো না!
আজ কতদিন পর ছেলেটা এতটা আবেগ নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলল। ওর মনে পড়ে গেছে তার মাম্মার কথা ! তোমার মাম্মা খুব স্বার্থপর নিশাল সে চলে না গেলে আমাদের এরকম দ্বীপের মত দূরে দূরে থাকতে হতো না !
গাড়িতে বসে এসব ভাবতে ভাবতে ন‌ওশাদের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ! অনেকক্ষণ পা টা নামিয়ে রাখাতে মনে হচ্ছে ব্যথাটা আবার আসছে ! ন‌ওশাদ পা টা সীটের উপর উঠিয়ে রাখলো !
চোখ বন্ধ করে ঘাড় কাত করে বসে আছে সে !
ঘন্টা তিনেক পর বাহার বলল, স্যার চলে এসেছি !
ন‌ওশাদ গাড়িতে উঠেই কলেজের এডজুট্যান্ট এর সঙ্গে কথা বলেছে । সে আবার ন‌ওশাদ এর ক্লাসমেট এর ছোট ভাই তাই পারমিশন পেতে সমস্যা হয়নি । প্রিন্সিপাল কে কল করেছে নিশাল অসুস্থ শুনে বলল, যেকোনো সময় এসে দেখে যেতে পারে ! প্রিন্সিপাল এর সঙ্গে ও ভালো সম্পর্ক ওর। মা নেই স্টুডেন্ট এর প্রতি এক রকম মমতাই দেখায় কলেজের টিচার রা নিশালের ! পুরো কলেজে এখন পর্যন্ত নিশাল ই এক মাত্র স্টুডেন্ট যার মা নেই ! পেরেন্টস ডে তে সবার মা আসে কিন্তু নিশালের মা আসে না । কখনো কখনো বাবাও যায় না । সে জন্য নাকি তার ক্লাসমেট এমনকি অনেক সময় সিনিয়র ভাইদের মায়েরা ওকে খুব আদর স্নেহ করে ।
ক্লাস সেভেনে ছিল যখন একবার এক পেরেন্টস ডে তে ন‌ওশাদ দেশের বাহিরে ছিল বীথি র তখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে যুথী ছিল প্রেগন্যান্ট কেউ আসেনি ও মন খারাপ করে হাউজে বসে ছিল ওর সব ক্লাসমেট রা ওকে সেইবার টেনে নিয়ে এসেছিল নাকি রুম থেকে ! সব ক্লাসমেট এর মায়েরা নাকি এত খাইয়েছিল ওকে ওর পেট ব্যথা হয়ে গিয়েছিল । আর একবার আরমান গিয়েছিল ওর পেরেন্টস ডে ন‌ওশাদ দেশের বাহিরে থাকাতে ! এর পর থেকে নিশাল খুব বেশি ইমোশনাল হয় না কেউ না আসলে !
কলেজের এম‌আই রুমে যেতে হাঁটতে হলো বেশ কিছুটা ন‌ওশাদ এর খুব কষ্ট হলো । রুমে ঢুকে দেখে নিশাল ঘুমাচ্ছে ! ছেলের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ন‌ওশাদের খুব ইচ্ছে করছে ওর কপালে চুমু খেতে ! মুখটা কত শুকিয়ে গেছে ! ছেলেটা বড় হয়ে গেছে কত ! দাড়ি গোঁফ হয়েছে এখন ! এই ছেলেটা এতটুকু হয়েছিল ন‌ওশাদ কোলে নিলে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে রাখতো ! কত রাত বুকে নিয়ে ন‌ওশাদ ঘুমাতো বিছানায় নামিয়ে দিলে উঠে যেত ! অনেক দিন ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরা হয় না !
ন‌ওশাদ নিশালের কপালে হাত রাখলো ! সঙ্গে সঙ্গে নিশাল চোখ খুলে তাকালো ! কয়েক সেকেন্ড অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নিশাল !
পাপা ! পাপা তুমি এখানে ? মানে এখানে এখন !
হুম তোমাকে দেখতে চলে এলাম !
নিশাল উঠে বসলো !
তুমি অনেক শুকিয়ে গেছো নিশাল ?
না পাপা তুমি অনেক দিন পরে দেখছো তো তাই মনে হচ্ছে ! আমার ওয়েট ঠিক আছে !
কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে মুখটা শুকনা! জ্বর এখন কেমন দেখি , বলে ন‌ওশাদ ছেলের কপালে হাত রাখলো !
জ্বর নেই পাপা !
হু ঠিক আছে !
আজ‌ই চলে যাব হাউজে ! তুমি হঠাৎ চলে আসবে আমি ভাবতেই পারিনি !
তুমি বললে জ্বর, এটা শুনেই থাকতে পারলাম না !
আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে বললাম না তুমি সব কাজ ফেলে চলে এলে !
তোমাকে দেখতে আসা আমার সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিশাল !
নিশাল চোখে চশমা টা পড়ে দাঁড়ালো ন‌ওশাদের পাশে !
ন‌ওশাদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে নিজের ছেলেকে মাসাআল্লাহ কত লম্বা হয়েছে , ফর্সা মুখ টাতে এক অদ্ভুত মায়া ! চোখে ওর মত চশমা পড়ে !
কি দেখছো ?
তোমাকে , ঠিক মত খাও না নিশাল ?
কি বলছো পাপা আমি যথেষ্ট খাওয়া দাওয়া করি !
তোমার জন্য তোমার পছন্দের চকলেট এনেছিলাম বুলগেরিয়া থেকে !
থেঙ্কস ! চলো বারান্দায় বসি পাপা !
নিশাল বারান্দার দিকে র‌ওনা হলো ! ন‌ওশাদ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ছেলের পিছনে পিছনে ! নিশাল পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে উঠলো,
তোমার পায়ের ব্যথা টা আবার শুরু হয়েছে ?
হ্যাঁ ! তবে আজ ভালো আছি !
নিশাল কাছে এসে বলল , আমার হাত ধরো পাপা !
ন‌ওশাদ ছেলের হাত ধরলো !
নিশাল হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওকে, ন‌ওশাদের খুব ভালো লাগছে ! বারান্দায় চেয়ার‌ ছিল দুজন সেখানে বসলো !
কবে থেকে পায়ের ব্যথা ?
চারদিন থেকে ! আমারো জ্বর ছিল নিশাল !
আমার মন বলছিল তাই সকালে তোমাকে ফোন দিলাম !
তোমার মাম্মা ঠিক কথাই বলতো আমাদের এক সঙ্গে অসুখ করে !
হুম ! নিশাল হাসলো !
নিশাল তুমি তোমার মাম্মা কে অনেক মিস করো ?
অনেক করি না এখন আর, হঠাৎ হঠাৎ করি ! ক্যাডেট কলেজে আসার আগে বেশি করতাম !
আমি এখনো করি ! এই যে অসুস্থ হয়ে গেলাম তোমার মাম্মার কথাই বারবার মনে হচ্ছিল ! তোমার মাম্মা কাজ টা ঠিক করেনি আমাদের এভাবে ফাঁকি দিলো !
আমি তো অনেক মানুষের মাঝে থাকি তাই মাম্মা কে মিস করি না কিন্তু তুমি একা বাসায় থাকো সে জন্যই বেশি মিস করো !
তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো নিশাল !
তাই তো এবার এসএসসি দিব বড় ই তো হয়ে গেছি !
তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে ?
ভালো !
নেক্সট ছুটিতে চলো আমরা দুজন বোরা বোরা আইসল্যান্ড থেকে ঘুরে আসি ! তুমি স্কুভা ড্রাইভ করতে চাইছিলে ! স্কুভার জন্য বেস্ট প্লেস !
এই ছুটিতে অসম্ভব পাপা আমার পরীক্ষা সামনে !
খুব বেশি সমস্যা হয়ে যাবে পড়াশোনার ?
পরীক্ষার পর যাওয়া যাবে ! তোমার হোটেলের কি খবর ?
আরো কয়েক মাস লাগবে ইন্টোরিওর এর কাজ চলছে ! কেন ? তুমি হোটেলের খবর জানতে চাইছো যে নিশাল ? ন‌ওশাদ ছেলের মুখে তার বিজনেস প্রজেক্ট এর নাম শুনে অবাক হলো ! নিশাল কখনোই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না !
আমি চাইছিলাম যদি তুমি এলাউ করো, আমার সব ক্লাসমেট দের নিয়ে পরীক্ষার পর তোমার হোটেলে তিন চার দিন থাকবো কক্সবাজারে !
অবশ্যই থাকবে ! আমি বলি কি ইনোগোরেশন টা তোমরা যখন যাবে তখনই করব !
না না আমার জন্য ফেলে রেখো না ! তুমি তোমার প্ল্যানে কাজ করো !
আমার হাতে সময় আছে ! তুমি তোমার সব বন্ধুদের এখন থেকেই বলে দাও !
দেখা যাক কি হয় !
প্রয়োজনে আমি সবার গার্ডিয়ান এর সঙ্গে কথা বলব!
ঠিক আছে পাপা !
একটা কথা বলব পাপা ?
বলো !
আমাকে বলছো আমি শুকিয়ে গেছি আমি তো দেখছি তুমি শুকিয়ে গেছো ! এখনো একা খেতে হয় বলে খেতে পারো না তাই না ?
সে রকম কিছু না নিশাল ! চার দিন অসুস্থ ছিলাম তাই তোমার কাছে মনে হচ্ছে ! নিশাল এস‌এসসি র পর কলেজ টা এখানে না থেকে ঢাকায় থাকলে হয় না ? অনেক তো পড়লে এখানে !
কি যে বলো পাপা ! দেড় বছরের জন্য আর কোথাও যাব না ! তুমি চিন্তা করো না দেড় বছর চোখের পলকে চলে যাবে !
তোমার ছুটি কবে ?
আর দশ বার দিন পর ! এবার সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে !
নিশাল তোমাকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম ?
বলো পাপা ! নিশাল তাকিয়ে আছে ন‌ওশাদের দিকে !
আচ্ছা থাক পরে বলি !
আর তো বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না , বলতে পারো !
নিশাল কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল, ঠিক আছে! পাপা দাদাভাই কেমন আছে ?
ভালো আছে !
কার্টুন দেখে ?
হ্যাঁ ! তখন তোমাকে ডাকাডাকি করে !
নিশাল হাসছে ! দাদা ভাই কে একবার এখানে আনতে পারলে ভালো হতো। আমি আমার ফ্রেন্ডদের দাদা ভাইয়ের গল্প করি ওরা দেখতে পেতো !
তোমার দাদা ভাই এতটা জার্নি করতে পারবে না !
সেটাই!
ন‌ওশাদ ঘড়ির দিকে তাকালো তারপর নিশালের দিকে তাকিয়ে বলল, নিশাল আমি তোমাকে না বলে একটা কাজ করে ফেলেছি !
কি কাজ ? কি‌ হয়েছে পাপা ? তোমাকে কেমন আনমাইন্ড লাগছে ! বড় কোন সমস্যা ?
পাপা আমি বিয়ে করেছি !
নিশাল অবাক হয়ে তাকালো ! ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা ধাক্কা সে খেয়েছে! কিছুক্ষণ ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল! কিছু বলছে না !
হঠাৎ ঘটনা টা ঘটে গেছে নিশাল !
কবে করলে ?
এক মাস ও হয়নি ! তারপর ন‌ওশাদ সব ঘটনা খুলে বললো কিভাবে , কোন পরিস্থিতিতে বিয়েটা করতে হয়েছে তাকে ! নিশাল মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনলো সব !
সব বলে ন‌ওশাদ ও মাথা নিচু করে বসে আছে !
কিছুক্ষণ পর নিশাল‌ই বলে উঠলো ,
তুমি অকোয়ার্ড ফীল করো না পাপা , ইটস ইওর লাইফ ! ইউ হেভ টু রাইট হাউ টু হ্যান্ডেল ইওর ওউন লাইফ ! আই এম ইওর পার্ট অফ লাইফ নট ইওর লাইফ কন্ট্রোলার ! সো বি হ্যাপি !
তোমার যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে চলো আগাই ! তুমি তো একা হেঁটে গাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবে না আমার হাত ধরো ! নিশাল বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল!
ন‌ওশাদ ছেলের বাড়ানো হাত টার দিকে তাকিয়ে আছে! তারপর হাত টা ধরলো সে, উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো!
সরি নিশাল আমার সেই মুহূর্তে র পরিস্থিতি টা তোমাকে বোঝাতে পেরেছি কিনা জানি না !
ইট’স ওকে পাপা ! আমি বুঝতে পারছি !
অনেক দিন পর ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরে ন‌ওশাদের খুব ভালো লাগছে! খুব ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষণ এভাবে থাকতে ! কিন্তু নিশাল খুব লজ্জা পাচ্ছে !
চলো পাপা !
চলো ! ন‌ওশাদ ছেলের কপালে চুমু খেলো ! নিশাল এবার সত্যিই খুব লজ্জা পাচ্ছে !
ন‌ওশাদ ছেলের হাত ধরে বের হয়ে এলো ! নিশাল গাড়ি পর্যন্ত ওকে এগিয়ে দিতে এসেছে ! গাড়িতে উঠতে উঠতে ন‌ওশাদ বলল, ফোন দিও নিশাল ! তোমার এডজুট্যান্ট এর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তোমার শরীর বেশি খারাপ হলে আমাকে জানাতে বলেছি !
নিশাল শুধু মাথা নাড়লো !
আসি ?
ভালো থেকো পাপা !
ন‌ওশাদের খুব ইচ্ছে করছে আর একবার ছেলেকে বুকে একটু জড়িয়ে ধরতে ! কিন্তু নিশাল লজ্জা পেয়ে যাবে ভেবে সেই চিন্তা বাদ দিল !
গাড়ি স্টার্ট দিল বাহার ! ন‌ওশাদ মাথা বের করে ছেলেকে দেখছে যতক্ষণ দেখা যায় ! নিশাল‌ও দাঁড়িয়ে আছে!
দূরত্ব টা বেড়ে যাচ্ছে শুধু বাহ্যিক না হয়তো তারচেয়ে ও বেশি মানসিক। এটা ভাবছে আর ন‌ওশাদ এর মন খারাপ হচ্ছে !
পুরো রাস্তা ন‌ওশাদ মন খারাপ করেই বসে রইল ! বাসায় পৌছতে পৌছতে প্রায় রাত হয়ে গেছে ! গাড়ি থেকে নামার সময় পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে ই পারছে না ! রিয়াজ ধরে নিয়ে এলো বাসার ভেতরে ! ন‌ওশাদ ক্রেচ একদম পছন্দ করে না তাই ব্যথার সময় ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে না ! কিন্তু এবারের ব্যথাটা ওকে খুব কষ্ট দিচ্ছে এভাবে কারো উপর নির্ভর করতে আরো খারাপ লাগছে !
সোফায় বসতে বসতে রিয়াজ কে বলল,
তুমি একটা ক্রেচ কিনে নিয়ে আসো ! গাড়ি নিয়ে যাও পঙ্গু হাসপাতালে র সামনে পাবে শিওর অন্য কোথাও আছে কিনা জানিনা !
জ্বি স্যার ! উপরে উঠিয়ে দিয়ে যাই আপনাকে ?
হ্যাঁ চলো !
রিয়াজ যখন ন‌ওশাদ কে ধরে দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে তুলছে হেরা খবর পেয়ে দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ালো !
পায়ে ব্যথা অনেক বেড়েছে তাই না ?
ন‌ওশাদ হেরাকে দেখে তাকালো , অনেক টা সময় পা নিচে নামিয়ে বসে ছিলাম তাই এখন পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে! অস্থির হ‌ওয়ার কিছু নেই হেরা !
হেরা ন‌ওশাদের সঙ্গে সঙ্গে রুমে ঢুকলো !
রিয়াজ বিছানায় বসিয়ে দিলো ন‌ওশাদ কে !
রিয়াজ যা বললাম , তাড়াতাড়ি যাও বাহার অনেকক্ষণ ড্রাইভ করেছে সবুজ কে নিয়ে যাও ! তাড়াতাড়ি বলেছি বলে এই নয় গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে ! সবুজ কে বলবে সাবধানে চালাতে !
স্যার !
রিয়াজ রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর হেরা প্রশ্ন করলো ,
কেমন আছে নিশাল ?
হ্যাঁ ভালো আছে ! আজ জ্বর আর উঠেনি ! আজ হাউজে চলে গেছে !
আপনার মন ভালো হয়নি কেন ছেলেকে দেখে ?
নিশাল অনেক শুকিয়ে গেছে মুখটা ছোট্ট হয়ে গেছে ! আসার সময় কেন জানি খুব খারাপ লাগছিল আমার !
স্বাভাবিক অসুস্থ ছেলেকে দেখলে খারাপই তো লাগার কথা !
শুধু সেই জন্য না হেরা !
তাহলে ?
আমি ওকে বলেছি বিয়ের কথাটা !
ও আচ্ছা , কি বলল নিশাল ?
আমি ভেবেছিলাম ও রিয়েক্ট করবে কিন্তু করেনি ! বলল, ইট’স ইওর লাইফ পাপা !
হেরা চুপচাপ পাশে এসে বসলো ! ন‌ওশাদ ও চুপ করে বসে আছে !
আপনার ঘরে পড়ার কাপড় বের করে দেই ফ্রেশ হয়ে নিন , বলে হেরা উঠে দাঁড়ালো !
ঠিক আছে দাও !
হেরা কেবিনেট খুলে ন‌ওশাদের ট্রাউজার আর টিশার্ট বের করে ওর কাছে নিয়ে এলো ! ন‌ওশাদ কাপড় গুলো হেরার হাত থেকে নিয়ে পাশে রেখে হঠাৎ হেরার হাতটা ধরলো ! হেরা নিশাল কি খুব কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছি না ? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে , ছেলেটাকে দেখে মনটা এত খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ করেই ছেলেটা মনে হচ্ছে অনেক বড় হয়ে গেছে ! আমি বুঝতে পারছি না ওর মনে কি চলছে ? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হেরা খুব ! আমি একজন ব্যর্থ বাবা ! ছেলের না হতে পেরেছি বন্ধু , না হতে পেরেছি নির্ভর করার মত কেউ ! ন‌ওশাদ হেরার হাতটা জড়িয়ে ধরলো !
হেরার খুব খারাপ লাগছে ন‌ওশাদের এই ভেঙে পড়া অবস্থাটা দেখে ! খুব ইচ্ছে করছে ন‌ওশাদের মাথায় হাত টা রাখতে । হেরা কোন সংকোচ কে পাত্তা না দিয়ে ন‌ওশাদ এর মাথায় হাত টা রাখলো ! দুজনেই চুপচাপ হয়ে র‌ইলো বেশ কিছুক্ষণ !
তারপর হেরাই বলে উঠলো , কাপড় বদলে নিন ! ডিনার করে ওষুধ খেতে হবে আপনার !
হুম !
দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ হচ্ছে ন‌ওশাদ হেরার হাতটা ছেড়ে দিল !
দরজা খুলতেই দেখে শোয়েব দাঁড়িয়ে আছে !
মামা আছেন ?
এসো শোয়েব !
শোয়েব ন‌ওশাদের রুমে ঢুকতেই হেরা বের হয়ে নিজের ঘরে এলো ! ন‌ওশাদের মনের অবস্থাটা দেখে ওর এত কষ্ট লাগছে ! খুব অসহায় লাগছে ওর ! হেরা নিজের ঘরের দরজা টা চাপিয়ে দিল তারপর ছুটে গিয়ে আলমারি খুলে ন‌ওশাদের সেই নীল গেঞ্জি টা বের করে বুকে জড়িয়ে ধরলো কেন জানি ওর খুব কান্না পাচ্ছে ! বারবার মনে হচ্ছে ন‌ওশাদের এই মুহূর্তের কষ্টের কারণ সে ! এত স্ট্রং একটা মানুষ কতটা অসহায়ের মত ছেলের জন্য হাহাকার করছে ! একজন সফল মানুষ বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ ভাবছে ?
হেরা ন‌ওশাদের গেঞ্জি টা ধরে কাঁদছে ! কিছুক্ষণ পর বাথরুমে ঢুকে গেল দরজা চাপানো কেউ ঢুকে গেলে ওকে কাঁদতে দেখলে হাজার টা প্রশ্ন করবে !
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে হেরা ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে ! নিজের জীবন কত কষ্টে পার হয়েছে কিন্তু আজ ন‌ওশাদের কষ্ট টা মেনে নিতে তার বুক ফেটে যাচ্ছে ! কেন জানি ন‌ওশাদের করুন মুখটা দেখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে !
অনেকক্ষণ পর মনে হলো ন‌ওশাদ কে ডিনার এগিয়ে দিতে হবে , তারপর ওষুধ খাইয়ে দিতে হবে ! চোখে মুখে পানি দিয়ে দরজা খুলে বের হতে নিলো কিন্তু দরজা টান দিয়ে কোন ভাবেই খুলতে পারছে না ! এই দরজা তো ঘরের ভেতর থেকে লাগানোর কিছু নেই ! তাহলে কেন খোলা যাচ্ছে না হেরা বুঝতে পারছে না !
হেরা কয়েক বার দরজার লকটা ঘুরিয়ে টানাটানি করলো ! কিন্তু কোন লাভ হলো না ! তারপর জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিতে লাগলো ! আনারের মা কে চিৎকার করে ডাকাডাকি শুরু করলো ! এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট তার পর দশ মিনিট লক ঘুরাচ্ছে, টানছে , দরজায় জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিয়ে শব্দ করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না!
তার খুব অস্থির লাগছে ! সে জানে কিছুক্ষণ পর কেউ না কেউ রুমে আসবে তবুও ওর কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে ! সে ছোটবেলা থেকে লুকোচুরি খেলতে গেলে কখনো বেশিক্ষন লুকিয়ে থাকতে পারতো না ! ওর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যেত ! আজ সে রকম লাগছে! খুব অস্থির লাগছে ! গলা শুকিয়ে যাচ্ছে পানি পিপাসা লাগছে !
হেরা দরজা জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে চিৎকার করছে ! ওর বুকের ভেতর কেমন হাঁসফাঁস লাগছে । দম বন্ধ হয়ে যাবে নাকি ? হেরা আরো বেশি অস্থির হয়ে যাচ্ছে ! যখন মনে পড়লো ঘরের দরজা টাও সে আটকে রেখে এসেছে লক করেছে কিনা মনে করতে পারছে না ! অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল ওর ! পুরো বাড়ির কেউ জানতেই পারেনি হেরা বাথরুমে আটকে গেছে !

আনারের মা আর পারুল হঠাৎ করেই ব্যস্ত হয়ে গেছে কারণ ন‌ওশাদ অসুস্থ শুনে ওকে দেখতে এসেছে বীথি আর যুথী ! ন‌ওশাদের রুমে বসে কথা বলছে ওরা সবাই ! এলিন আর নাহিন তাদের রুমে ! এলিন তার এসাইনমেন্ট রেডি করছে আর নাহিন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত !
দোতলায় কি হচ্ছে তিনতলায় কেউ জানে না !

ন‌ওশাদ বীথি যুথী র সঙ্গে নিজের ঘরে বসে নিশালের সঙ্গে দেখা করে এসেছে সেই কথা বলছে !
দুলাভাই নিশালকে কি বিয়ের কথাটা বলেছেন ?
হ্যাঁ বলেছি বীথি !
শুনে কি বলল ?
কি বলবে ও অনেক ম্যাচিউর ছেলে !
কি বলল সেটা বলেন দুলাভাই ?
বলল আমার জীবন আমি যেকোন ডিসিশন নিতে পারি ! তার কোন সমস্যা নেই বিয়েটা নিয়ে ! ন‌ওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল !
বীথির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে অন্য কোন উওর আশা করেছিল ! শুধু বলল, ও আচ্ছা !
যুথী বলল, তাহলে তো ভালোই ! আমরা টেনশন করছিলাম ও কি রিয়েক্ট করে সেটা ভেবে! আল্লাহ রহমত করেছে মন খারাপ করেনি ছেলেটা !
বীথি বলল,আপা ও যে চুপচাপ ছেলে ভেতরে কি চলছে কে জানে ?
ন‌ওশাদ চুপ করে আছে!
একটুপর প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে ন‌ওশাদ বলল, যুথী তোমার শ্বাশুড়ি এখন কেমন আছেন ?
আছেন দুলাভাই আগের মত ! গত ছয় মাসে , মাসে দুবার করে হসপিটালে ভর্তি করা হচ্ছে বাসা আনা হচ্ছে ! বয়স হয়েছে একদিন এভাবেই হয়তো মারা যাবে !
দেখতে যেতে পারিনি এবার সুস্থ হয়ে উঠি তারপর যাব একদিন দেখতে !
আনারের মা আর পারুল চা নাস্তা নিয়ে ঢুকলো !
এখন চা নিয়ে এলে কেন আনারের মা একবারে ডিনার দিতে সবাই কে ?
না দুলাভাই ডিনার খাব না এখন বাসায় ফিরতে হবে তাড়া আছে !
কি বলো যুথী ডিনার করতে কতক্ষণ সময় লাগবে আর ?
না না দুলাভাই আর একদিন ! এখন শুধু চা খাব !
হেরা কোথায় আনারের মা ?
স্যার আম্মা মনে হয় তিন তলায় আপাদের সাথে ! ডাকবো?
ঠিক আছে থাকুক!
আপা কি শোয়েবের বোনের মেয়ে দুইটা , বীথি বলল?
হু খালাম্মা!

হঠাৎ রুমের বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে !
কিসের চিৎকার দেখো তো আনারের মা ?
জ্বি স্যার দেখতেছি !
আনারের মা ন‌ওশাদের রুমের দরজা খুলতেই শোনে তাকে চিৎকার করে হেরার ঘর থেকে ডাকছে এলিন ! আনারের মা দৌড়ে গেল হেরার ঘরের দিকে ! তারপর সে ও চিৎকার দিয়ে উঠলো !
কি হয়েছে ? ন‌ওশাদ বলে উঠলো !
বীথি, যুথীও উৎসুক দৃষ্টিতে ন‌ওশাদের ঘর থেকে তাকাচ্ছে !
আনারের মা কি হয়েছে আনারের মা ?ন‌ওশাদ জোরে জোরে ডাকছে !
পারুল দৌড়ে ন‌ওশাদের রুমে এসে ঢুকলো ! স্যার আম্মা বাথরুমে বেহুঁশ হ‌ইয়া প‌ইড়া আছে !
ন‌ওশাদ ক্রেচে ভর দিয়ে হেরার রুমে ছুটে এলো ! সঙ্গে বীথি আর যুথী !
তিন তলা থেকে ততক্ষণে নাহিন আর শোয়েব ও ছুটে এসেছে !
ন‌ওশাদ রুমে ঢুকে দেখে এলিন হেরার মাথাটা কোলে নিয়ে বাথরুমের সামনে ফ্লোরে বসে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে চোখে মুখে !
কি হয়েছে এলিন ওর ? ন‌ওশাদ চিৎকার করে উঠল!
ভাইয়া আমি ঘরে ঢুকে দেখি ঘর খালি ভাবলাম বৌমনি আপনার রুমে তাই বের হয়ে যাচ্ছি তখনই হঠাৎ বাথরুমে র ভেতর থেকে দরজা ধাক্কা দেয়ার আওয়াজ । ও আনারের মার নাম ধরে ডাকছে ! গলা কেমন গোঙানির মত শোনা যাচ্ছিল ! আমি কাছে গিয়ে দরজা জাড়ে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল দেখি ও কেমন অস্বাভাবিক চেহারায় তাকিয়ে আছে ,এমন ঘেমে ভিজে আছে আমি ওর হাত ধরার আগেই পড়ে যাচ্ছিল ধরতে ধরতে সেন্স লেস হয়ে গেল !
স্যার এই দরজা ডা এমন হয় হঠাৎ হঠাৎ ভেতর থেইকা আটকায় যায় ঘটনা মনে হয় এইডাই ঘটছে ,আনারের মা বলে উঠলো !
কি বলছো আনারের মা জানো তাহলে ঠিক করাও নি কেন ?
স্যার সব সময় হয় না হঠাৎ হঠাৎ !
দেখলে তো হঠাৎ কি হয়ে গেল ! এখন ওকে তুলে বিছানায় নাও ! ন‌ওশাদ নিজেই হেরার হাত টা ধরলো ! বাকিরা সবাই ধরে বিছানায় শুইয়ে দিল !
বেহুঁশ হ‌ওয়ার কি হলো বুঝলাম না মৃগী রোগ নেই তো দুলাভাই ওর ?
ন‌ওশাদ বীথির দিকে তাকালো ! বীথি আজেবাজে কথা বলো না তো !
দুলাভাই আপনি জানেন না গ্রামের মেয়েদের এই টাইপের রোগ থাকে নয়তো একটুক্ষন বাথরুমে আটকে থাকলে এরকম বেহুঁশ হয় কেউ ?
ন‌ওশাদ চিৎকার করে বলে উঠলো যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না ! দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর তীব্র ক্লাস্টোফোবিয়া আছে !
ক্লাস্টোফোবিয়া কি জিনিস জানো ? যাও গুগল করো করে দেখো ! ও অনেকক্ষন আটকে ‌ছিল অনেক আগে আমার রুম থেকে এসেছে কমপক্ষে আধঘন্টা র বেশি ও এখানে আটকে আছে আমার ধারণা !
কেউ আমার রুম থেকে মোবাইল টা এনে দাও ! ফারহান কে ফোন দিতে হবে জলদি !
শোয়েব মোবাইল আনতে ছুটে গেল !
আনারের মা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দরজা ঠিক করাবে তোমার বুদ্ধি দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি আজ ! তুমি এত বড় ব্যাপার টা পাত্তা কিভাবে দিলে না ! রাতে বেলা আটকে থাকলে কি হতো ? কেউ জানতে তোমরা ? তাও ভালো এলিন এসেছিল বলে, তা না হলে আর কতক্ষন এভাবে আটকে থাকতো কে জানে !
এলিন হেরার কে ডাকছে ! ওর চোখ বন্ধ কিন্তু একটু একটু কাঁপছে চোখের ভেতরে ! ন‌ওশাদ হেরার মাথার কাছে বসলো !
হেরা , হেরা তাকাও । এই তো আমি চলে এসেছি তাকাও !
হেরা চোখ খুলে তাকালো ! ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে ! ন‌ওশাদ বলল, পানি খাও তো একটু !
এলিন হেরার মাথাটা তুলে ধরে পানি খাইয়ে দিল !
ন‌ওশাদ সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমরা সবাই এখন যাও এ ঘর থেকে আমি হেরার কাছে আছি ! ন‌ওশাদের কথা শুনে
সবাই একে একে ঘর থেকে বের হয়ে গেল !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here