#তবু_সুর_ফিরে_আসে
২য় পর্ব
খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে নওশাদ ! নামাজ পড়ে কোন দিন একটু শুয়ে থাকে তারপর ট্রেডমিলে হাঁটে । এক্সেরসাইজ করে। ছিচল্লিশ বছর বয়স তাঁর কিন্তু তাকে আটত্রিশ থেকে বড় জোর চল্লিশ মনে হয় ! সে সেভাবেই মেইনটেইন করে রেখেছে নিজেকে। অবশ্য তাদের ফ্যামিলির ধাত টাই এমন । গীতি বলতো বয়স চোরা সবাই ! পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির শরীর টা তে এখনো মেদ জমতে দেয়নি সে ! প্রেসার, ডায়াবেটিস কোন সমস্যা নেই ! পায়ে কখনো কখনো গাউটের ব্যথা হয় একটু , সেজন্য তাকে খাওয়া কন্ট্রোল করে চলতে হয় !
গীতি যাওয়ার পর থেকে বন্ধুরা কেউ কেউ আবার বিয়ে করতে বলে তাকে ! আত্মীয়-স্বজন সবাই এখনও অস্থির করে বিয়ের জন্য । বড় বোন তার ছেলের কাছে ফ্লোরিডা তে থাকে, প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে একদিন ফোন দিবে বিশ পঁচিশ মিনিট কথা বলবে যার পুরোটাই থাকে নওশাদ কে বিয়ের জন্য রাজি করানো ! এক পর্যায়ে কান্নাকাটি করবে বুবুকে বোঝাতে বোঝাতে নওশাদ এর অনেক সময় ব্যয় হয় !
নওশাদ এর শ্বাশুড়ি এখনও জীবিত আছেন তিনি ছেলে ফাহমিদ এর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন দেশে এলে তিনিও দুই তিন বার বিয়ের কথা তুলেছেন। কিন্তু তার দুই শালী বীথি আর যুথী বিয়ের কথা শুনতেই পারে না ! গীতি যাওয়ার পর শালী বীথি র আগের বিয়েটা ফাইনালি ডিভোর্স হয়ে গেল যখন, শ্বাশুড়ি আর গীতির বড় ভাই বীথির সঙ্গে তার বিয়ের কথাও বলেছিল ! নিশাল যেহেতু বীথির কাছ ঘেঁষা তাই ! নওশাদ কোন ভাবেই রাজি হয়নি !
বীথিও চেয়েছিল খুব। এটা সে বুঝত একদিন তো সরাসরি বীথিই তাকে বলেছিল সে রাজি আছে বোনের সংসার আর নিশালের দ্বায়িত্ব নিতে !
সেদিন হেসে নওশাদ বলেছিল, খালা হিসেবে কি তুমি নিশাল কে মায়ের মত আদর দিতে পারবে না বীথি ?
বীথি মন খারাপ করে বলেছিল, পারব !
তাহলে কেন আমার এই জীবনের সঙ্গে জুড়তে চাইছো যেখানে আজও তোমার বড় বোন রাজত্ব করে ? গীতি কে আমি এখনো যতটা ভালোবাসি , কাউকে গীতির স্থানে বসাতে পারবো না !
সেদিন চোখ ছলছল করে বীথি বিদায় হয়ে গিয়েছিল, তার কিছুদিন পর এক ডাক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যায় ! ছোট ছোট দুটো মেয়ের মা এখন ! উত্তরায় নিজের ফ্ল্যাট ভালোই আছে বীথি। মাঝে মাঝে বোনের সংসারে মাতব্বরি করতে আসে ! নিশাল কে খুব আদর করে । নিশাল ও বীথির জন্য পাগল!
আজ হঠাৎ একটা সাধারণ গ্রাম্য মেয়েকে নওশাদ এর স্ত্রী হিসেবে কোন ভাবেই মানতে পারছে না বীথি ! নওশাদ জানে আজ দিন শুরু হওয়ার পর ই কত প্রশ্নের সম্মুখীন তাকে হতে হবে !
নিজেকে সেই ভাবেই সে প্রস্তুত করে নিচ্ছে !
নিচের থেকে হেঁটে এসে দোতলায় বাবার ঘরে ঢুকলো ! তার বাবা ফরহাদ আজমীর বয়স প্রায় নব্বই। সরকারি চাকরি করতেন । মা মারা গেছেন পনের বছর আগে ! বৃদ্ধ বাবা কে কখনো ভাইদের দ্বায়িত্বে দেয় না নওশাদ ! কখনো ওরা নিয়ে গেলেও দুই দিনের মধ্যে গিয়ে সে নিয়ে আসে। গীতি যাওয়ার পর কাজের লোকজনই বাবার সব দেখাশোনা করে ! ওর বাসায় যত লোক আছে বাবার সেবার জন্য অন্য ভাইদের বাসায় সেই সুযোগ নেই। তাই তাদের কষ্ট দিতে চায় না সে !
বাবার ঘরে ঢুকে দেখে তিনি ইজি চেয়ারে বারান্দায় বসে আছে ! চোখে ল্যান্স পড়ানো হয়েছে বলেই এখনো ভালো দেখে। শুধু কানে একটু কম শোনে !
জোরে কথা বলতে হয় ! স্মরণ শক্তি কমে গেছে !
নওশাদ কে দেখে বললেন,
ও বাবু তুই ! তা আজ ইউনিভার্সিটি তে যাস নি কেন ? পড়াশোনা এভাবে হয় নাকি ?
তোমার শরীর কেমন আব্বা ?
আমার শরীর ভালো তুই ইউনিভার্সিটি কেন গেলি না সেটা আগে বল ?
একটু পরে যাব এখনো সময় আছে !
আমি যেন না শুনি ক্লাস মিস দিচ্ছিস ! তোর আম্মা র শরীর কি আজ বেশি খারাপ ?
নওশাদ বলল, আম্মা ঠিক আছে ! তোমার সকালের নাস্তা দিতে বলব ?
দিতে বল ! কাউকে বল পেপার পড়ে শোনাতে ! বকুল কোথায় ?
বকুল কে আব্বা ?
নাম মনে থাকে না, যে পেপার পড়ে শোনায় সেই ছেলেটা !
ওর নাম রাজু ! আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে। তুমি নাস্তা খেয়ে ঘুমাও । রাতে তোমার ঘুম কম হচ্ছে মনে হয় !
আচ্ছা তাড়াতাড়ি যা ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তোর।
নওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাবার রুম থেকে বের হয়ে এলো । বাবাই ভালো আছে কখনো সব মনে থাকে কখনো সব ভুলে যায় !
বাবার টেক কেয়ার করে চব্বিশ পঁচিশ বছরের একটা ছেলে আছে নাম রাজু । সকাল থেকে রাত বাবার সব কাজ করে শুধু দুপুরের পর আনারের মা উনার খেয়াল রাখে ! এই সময় টা আব্বা ঘুমিয়ে থাকে বেশি ভাগ সময় ! রাজু তখন ব্রেক নেয়।
নওশাদ আনারের মা কে ডাকলো ,
আনারের মা ছুটে এলো জ্বি স্যার ?
আব্বার নাস্তা নিয়ে রাজুকে যেতে বলো !
জ্বি স্যার পাঠাচ্ছি !
বীথি ঘুম থেকে উঠেছে ?
খালাম্মা এখনো উঠে নাই !
নওশাদ নিজের ঘরের দিকে পা বাড়িয়েও আবার পিছন ফিরে তাকালো, গেস্ট রুমে যিনি আছেন সে উঠেছে ?
দেখি নাই এখনো ডাকব স্যার?
না দরকার নেই ! যাও তুমি !
নওশাদ নিজের রুমে এসে ঢুকলো ! গোসল শেষ করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেল ! ড্রয়ার খুলে গীতির ছবি বের করলো ! আগে দেয়াল জুড়ে গীতির কত ছবি ছিল । মারা যাওয়ার পর ও ছিল একদিন এক আলেম এর কাছ থেকে যখন শুনল মৃত ব্যক্তির আত্মার আজাব হয় ছবি এভাবে লোকজন বারবার দেখলে সেই থেকে সব ছবি সে নামিয়ে ফেলেছে। গীতি কে বেঁচে থাকতে ও কষ্ট দিতে চাইতো না কখনো। সেখানে মৃত্যুর পর ছবির জন্য গীতির কষ্ট হোক সে কখনো চায় না !
ড্রয়ারের ভেতরে রাখা থাকে গীতির ছবি ! নওশাদ প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ছবি টা দেখে তারপর বের হয়ে যায় !
আজ ছবিটা হাতে নিয়ে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল !
মনে মনে গীতির সঙ্গে সব সময় সে কথা বলে !
তুমি কষ্ট পাচ্ছো গীতি বিয়ে করেছি বলে !
সবচেয়ে বড় কথা এভাবে হঠাৎ অজানা অচেনা একটা বাচ্চা বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছি বলে ?
মেয়েটা কে বাঁচাতে ই ঐ মুহুর্তে বিয়ে ছাড়া আর কোন উপায় আমার সামনে ছিলো না !
এক ঝলক ওকে দেখেছি চোখ দুটো দেখেই মনে হয়েছিল ওকে যে কোন উপায়ে বাঁচাতে হবে আমার !
বিশ্বাস করবে না গীতি ওর চোখ দেখে আমার ভিতরে কি হলো তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না !
ওর চোখ দুটো তোমার মত ! সে জন্যই কি বিয়ে করে ফেললাম গীতি ?
আমি তো কখনো তাড়াহুড়া করে ডিসিশন নেই না , তবে কেন গতকাল এরকম একটা ডিসিশন নিলাম বুঝতে পারছি না !
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও ! আমি সেই মুহূর্তে বুঝতে পারিনি মেয়েটির বয়স মাত্র বাইশ বছর ! আমার তো এখন লজ্জায় শেষ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা ! ওর ভালো করতে গিয়ে আবার খারাপ কিছু করে ফেললাম না তো ?
গীতি আমি ওর সঙ্গে সংসার করতে পারব না ! অসম্ভব ! মেয়েটি র আশ্রয় দরকার এই মুহূর্তে আমি তাই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোথা থেকে যে বিয়ের বন্ধনে জড়িয়ে গেলাম ! কি করা উচিত বলো তো গীতি?
দরজায় টোকা পড়ার শব্দ হচ্ছে !
গীতির ছবি টা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে নওশাদ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল ,
কে এসো ?
আনারের মা এসে দাঁড়িয়েছে ! খালাম্মা খাওয়ার টেবিলে বসে আছে !
যাও আমি আসছি !
আনারের মা তবুও দাঁড়িয়ে আছে !
আর কিছু বলবে ?
উনাকে কি খাওয়ার টেবিলে আসতে বলব !
কাকে ?
নতুন আম্মা কে ?
নতুন আম্মা ! নওশাদ একটু থমকে গেল ! না থাক উনার খাবার রুমে দিয়ে এসো !
আনারের মা রুম থেকে বের হয়ে গেল !
নওশাদ এর মাথায় ‘নতুন আম্মা’ শব্দটা ঘুরছে। তাই তো যে মুহূর্তে সে ঘোষণা করেছে মেয়েটি তার স্ত্রী সেই মুহূর্ত থেকে এই সংসারের প্রতিটি মানুষের কাছে সেই মেয়েটির অবস্থান অন্য রকম !
টাই এর নট বাঁধতে বাঁধতে নওশাদ চিন্তা করছে আজ এই বাড়ির ভেতরের প্রতিটি মানুষ জানে কালকে পর্যন্ত তার সকল আত্মীয় স্বজন থেকে বন্ধু মহল জানবে ! সে তো এত বড় সত্য কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। জীবনে কোন কাজই সে লুকিয়ে করেনি কিন্তু আজ সে পরিস্থিতি র চাপে পড়ে করা বিয়েটা নিয়ে লুকোছাপা করবে ?
বিয়ের মত ব্যাপার কি লুকিয়ে রাখা যায় ? ভাবতে ভাবতে
নওশাদ স্যুট টা হাতে নিয়ে খাওয়ার রুমের দিকে রওনা হলো !
গেস্ট রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একবার মনে হলো হেরার খবর নেয়া দরকার ! পরক্ষনেই মনে হলো এখন আর ওর খবর না নিলেও চলবে ! এ বাড়ির প্রতিটি কাজের লোক ওর যত্নের চুড়ান্ত করবে ! কারণ সে এখন নওশাদ আজমীর স্ত্রী।
সিঁড়ি থেকেই সে বীথির গলা শুনতে পাচ্ছে ! ফোনে কারো সঙ্গে মেজাজ দেখাচ্ছে ! নওশাদ কে দেখে ফোন নামিয়ে রাখলো !
নওশাদ টেবিলে বসে নিজের প্লেটে খাবার তুলে নিলো । সবজি আর রুটি তার প্রতিদিনের ব্রেকফাস্ট ! সঙ্গে থাকে দুধ চিনি ছাড়া চা ! খাওয়ার বিষয়ে সে খুব সচেতন !
তিনি বীথির দিকে সবজির বাটি এগিয়ে দিলেন ! বীথি বাটি হাতে নিয়ে টেবিলে নামিয়ে রাখলো !
খাবার টেবিলের পাশে একজন বুয়া দাঁড়িয়ে আছে ! নওশাদ ওর দিকে তাকাতেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেল ! এ বাড়ির কাজের লোকজন নওশাদ এর চোখের ইশারা ভালো চিনে ! বুয়া বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোয়েব এসে ঢুকলো !
শোয়েব হলো নওশাদ এর সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ ! নওশাদ চোখ বন্ধ করে শোয়েব কে বিশ্বাস করে ! ওর মামাতো বোনের ছেলে ! অনেক বছর ধরে নওশাদ এর সঙ্গে আছে। নওশাদ এর ব্যবসা , বাসা সবখানে শোয়েব এর অবাধ বিচরণ ! সে নওশাদ এর একরকম পিএ, কখনো কখনো এডভাইজার ও । চেয়ার টেনে খাওয়ার টেবিলে বসলো শোয়েব! বেশিরভাগ দিনই সে এই বাসার তিন তলায় থাকে ! এখনো বিয়ে করেনি ! ওর মা অনেক পাত্রী দেখাচ্ছে কেন জানি সে রাজি হচ্ছে না !
নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, মামা আপনি কালকে রাতে কখন ফিরেছেন ? বিকেল থেকে আপনার ফোন বন্ধ পাচ্ছি ! ড্রাইভার বাহারের ফোন ও বন্ধ !
নওশাদ রুটি মুখে দিতে দিতে বলল, চার্জ ছিল না ফোনের দুজনের কারো !
শোয়েব তোমার মামার বিয়ের বরযাত্রী যাও নি তুমি ?
বীথির এরকম প্রশ্নে অবাক হয়ে শোয়েব বীথির দিকে তাকালো !
খালামনি আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না !
শোয়েব তোমার মামা প্লাস বস গতকাল তার নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসেছে ! দোতলার গেস্ট রুমে আছে তোমার নতুন মামি যাও দেখে এসো !
নওশাদ খাচ্ছে কোন কথা বলছে না ! টি পট থেকে চা ঢেলে আগে বীথির দিকে এগিয়ে দিল নওশাদ ! তারপর বীথিকে উদ্দেশ্য করে বলল, গরম চা খেলে কি মাথা আরও গরম হবে নাকি ঠান্ডা জুস দিতে বলব তোমাকে বীথি ?
দুলাভাই আপনি আমার সঙ্গে ফাজলামি করছেন ? রাগে গজগজ করতে করতে বীথি বলল।
না তা কেন আমি তোমার মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করছি নওশাদ হেসে বলল।
আমার মেজাজ ঠান্ডা আছে দুলাভাই !
বীথি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন , আমি মানছি তোমার মন খারাপ হচ্ছে হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় এসে হাজির হয়েছি দেখে ! একটা কথা চিন্তা করে দেখো তো আমার মত একজন মানুষ এরকম কাজ নিশ্চয়ই কোন বড় কারন না থাকলে করে না ! আগে কারণ টা শোনো তারপর রাগ দেখিও ! আমি তো তোমার বোনের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করিনি তাই না , ফ্যামিলির সবাই চাইছিল আমি যেন বিয়ে করি ! এখন করেছি।
নওশাদ শোয়েবের দিকে তাকিয়ে বলল,শোয়েব তোমাকেও জানানোর সুযোগ পাইনি আমি কালকে বিয়ে করেছি !
শোয়েব নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না ! কি বলেন মামা সত্যি ? হঠাৎ !
সব আমি পরে বলছি তোমাকে বুঝিয়ে !
শোয়েব তোমার মামা মহা সুন্দরী এক কম বয়সী বাচ্চা মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। দুলাভাই আপনার বউ নিশালের সমবয়সী না তো ? কিভাবে পটালেন এই মেয়েকে ? নাকি আপনার রূপ, টাকা, আভিজাত্যের মোহে বিয়ে বসে পড়েছে এই গ্রাম্য ভূত মেয়েটা ? আর বুঝলাম না আপনি ওকে গেস্ট রুমে রাখছেন কেন ? নিজের বেড রুমে নিজের বিছানায় নিয়ে রাখেন ! আমরা বাসর খাট সাজিয়ে দেই!
এবার নওশাদ চোখ মুখ কঠিন করে বলল,বীথি একটু বেশি বলে ফেলছো না ! শোন আমি কেন মেয়েটিকে বিয়ে করেছি সবাই সময় হলে জানবে, মেয়েটি আমার আইনত এবং ধর্মীয় মতে স্ত্রী আশাকরি সেই সন্মান দিয়ে কথা বলবে তুমি ! আর আমি কাকে কোন রুমে কোন বেডে রাখব সেটা আমি ডিসাইড করব ! তোমাকে টেনশন করতে হবে না ! বাসর খাট সাজানোর দরকার পড়লে লোকজন আছে তারাই ব্যবস্থা করবে ! তোমাকে সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হবে না !
নওশাদ এর কথা শুনে বিথী আরো উত্তেজিত হয়ে গেল !
দুলাভাই আমার মৃত বোন টার কথা চিন্তা করলেন না আপনি?
তোমার বোনের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া টা আমি পরকালে গিয়ে করে নিব ঠিক আছে !
আর নিশাল এর সঙ্গে ?
নওশাদ একটু চুপ হয়ে গেল ! তারপর বলল , বীথি নিশালের সঙ্গে আমি কথা বলব ! তুমি ভুলেও ওকে আগে কিছু বলবে না এটা আমার অনুরোধ ! আমার বিশ্বাস তুমি আমার অনুরোধ রাখবে !
শোয়েব চলো আজ আমার অনেক কাজ আছে ! বলে নওশাদ খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গেল !
বীথি বসে আছে ! ওর এত রাগ হচ্ছে নওশাদ এর উপর। মনে মনে ভাবছে,একদিন নিজে মুখে মানুষটাকে বিয়ের কথা বলেছিল তখন আপার কথা বলে তাকে রিফিউজ করেছিল । আজ এত বছর পর গাইয়া একটা মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে ! অশিক্ষিত , গেঁয়ো এই মেয়ে কিনা নওশাদ আজমীর বউ ! এত সহজে এই মেয়ে কে এই বাড়ির বউ হতে দিব না সে ! এটা আমার বোনের সংসার ! নিশালের অধিকার অন্য কেউ ভাগ বসাবে আমি থাকতে কোন দিন না !
বীথি উঠে গিয়ে আনারের মা কে ডাকলো!
জ্বি খালাম্মা ?
পারুল কোথায় ?
ওর জ্বর আসছে দুইদিন ধইরা । ঘরে ঘুমায় !
যাও ডেকে নিয়ে আসো বলো আমি ডাকছি !
জ্বি!
বীথি পারুল কে এই বাসায় কাজ করতে এনেছিল ! এই বাসার সকল খবর পারুল ই তাকে জানায় !
পারুল জ্বরে কাহিল আজ দুই দিন ! দাঁড়াতে পারছে না ! তবুও কষ্ট করে এসে বিথীর সামনে দাঁড়ালো!
: খালাম্মা ডাকছেন !
শোন পারুল তোর স্যার নতুন বউ নিয়ে আসছে শুনেছিস!
শুনলাম, তয় দেখি নাই!
আমাকে সব খবর পাঠাবি আর একটা কথা মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখবি !
আইচ্ছা !
আমি যাচ্ছি ফোন দিবি আমাকে !
বীথি তার মেয়েদের নিয়ে চলে গেল নিজের বাসায় । গাড়িতে বসে উত্তরা যাওয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে সিডনি । সিডনি থেকে ফ্লোরিডা সব জায়গায় নওশাদ এর বিয়ের খবর সে পৌঁছে দিয়েছে !
আজ সারাদিন নওশাদ অফিসের কাজ বাদ দিয়ে ফোন এটেন্ড করতে করতেই দিন পার করার ব্যবস্থা বীথি করে দিল !
( চলবে )