#হৃদয়হরণী
#অন্তিম পর্ব
#তানিশা সুলতানা
সামিরের বিয়ে আজকে। বিয়ের ডেট ফিক্সড ঠিক হতে হতে পাঁচ মাস লেগে গেলো। ছোঁয়া বর্তমানে নয় মাসের প্রেগন্যান্ট। ভাড়ি পেটটা নিয়ে চলাফেরা করতে বেশ কষ্ট হয়ে যায় তার। ছিঁচকাদুনি ছোঁয়া বড় হয়ে গিয়েছে। এখন বাচ্চাটা এতো জ্বালাতন করে তবুও কাঁদে না ছোঁয়া। সাদি চিন্তা করবে ভেবে সাদিকেও জানায় না। চুপি চুপি সয্য করে নেয় হবু সন্তানের দেওয়া ব্যাথা। সাদি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে দুই মাসের। মূলত ছোঁয়ার ডেলিভারি না হওয়া ওবদি সে ছোঁয়াকে একা ছাড়বে না। এতে ছোঁয়াও ভীষণ খুশি। মানুষটা আশেপাশে থাকলে ছোঁয়া সাহস পায়। মনোবল বাড়ে, শান্তি পায়৷ দূরে গেলেই মনে হয় এই বুঝি লেভার পেইন উঠলো। এই বুঝি কষ্ট হবে।
সাদি সামিরের বিয়েতে যাবে না৷ ছোঁয়াকে একা রেখে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আধপাগল সামিরও আর জোর করে নি যাওয়ার জন্য। বুঝেছে সাদির মনোভাব।
বাড়ির সকলেই বিয়েতে গেলেও রয়ে গিয়েছে নাজমা সাদি এবং সাবিনা।
দুই মা ছোঁয়াকে চোখের আড়াল করে না। ছটফটে ছোঁয়া কখন কিকরে বসবে এটাই তাদের চিন্তা। সেই চিন্তা থেকেই ছোঁয়াকে এতোটা চোখে চোখে রাখা।
বাড়িতেই টিচার রেখে দেওয়া হয়েছে। ছোঁয়া দুষ্টুমি কমিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগও দিয়েছে। বাড়িতেও একটু আতটু পড়ালেখা করে সে। এইচএসসি এখনো ৪ মাস দেরি আছে।
এখন বিকেল তিনটে বাজে। ছোঁয়ার পেটে একটু একটু পেইজ হচ্ছে। সাদি মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ এ অফিসের কাজ করছে। কোম্পানি বড় একটা প্রজেক্ট এর দায়িত্ব দিয়েছে সাদিকে। বাড়ি বসেই সোি দায়িত্ব পালন করছে সে।
এই মুহুর্তে ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে না লোকটাকে ডাকতে। করুক একটু নিরিবিলিতে কাজ। ছোঁয়া ভেবে নেয় ব্যাথা হয়ত একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে। তাই টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।
সময় গড়াতে থাকে। তার সাথে ব্যাথা। ডাক্তার বলেছিলো লেভার পেইনের কথা। যখন তখন লেভার পেইন উঠতে পারে এটাও বলা হয়েছিলো ছোঁয়াকে। নির্দিষ্ট ডেট দেওয়া থাকলেও অনেকের ক্ষেত্রেই ডেট এর আগেই বাচ্চা চলে বসে। ছোঁয়ার ক্ষেত্রেও তেমন ব্যাপার হচ্ছে।
এবার আর ছোঁয়া টিকতে পারে না। মৃদু স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে। সাদি ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেলে সাথে সাথে। এগিয়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। চিন্তিত ভঙিতে ছোঁয়ার হাত খানা ধরে
“কষ্ট হচ্ছে?
ছোঁয়া এক পলক দেখে নেয় সাদির মুখ খানা। তারপর ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে
“ব্যাথা করছে।
সাদি সময় নষ্ট না করে ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়। ছুঁটে চলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
____
” সাদু কুদ্দুসকে বলুন বায়না না করে খেয়ে নিতে। আমি ভার্সিটিতে যাবো।
সাদিট তিন বছরের ছেলে ছোঁয়াদ এক মনে গেমস খেলে যাচ্ছে। কোনো দিকেই তার খেয়াল নেই। ছোঁয়া মুখে খাবার দিতে গিয়েছে বিধায় মুখের চার পাশে খাবার লেগে আছে। তবে একটা দানাও ছোঁয়া ছেলের মুখে দিতে পারে নি৷
সাদি শার্টের সব গুলো বোতাম লাগানো শেষ করে ছেলের পাশে বসে।
হাত বাড়িয়ে ডাকে
“ছোঁয়াদ পাপার কাছে এসো
ছোঁয়াদ ফোন ফেলে এক লাফে বাবার কোলে উঠে পড়ে।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে
“আমি এতোখন কুদ্দুস কুদ্দুস বলে ডাকলাম। সাড়া দিলো না।
ছোঁয়াদ তার ফোকলা দাঁতে হেসে আঙুল নারিয়ে বলে
“মাই নেম ইজ ছোঁয়াদ চৌধুরী।
সাদি হেসে ছেলের মাথায় চুমু খায়। তারপর ছোঁয়ার থেকে খাবারের বাটি নিয়ে চামচ দিয়ে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেয়। ছোঁয়াদ খেতে থাকে।
ছোঁয়া রেগে বম হয়ে যায়। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়
“ছেলেকে একদম নিজের কব্জায় নিয়ে নিয়েছেন আপনি।
” তুমিও নিয়ে যাও।
“কালো জাদু করেছেন যে। আমি নিবো কি করে?
” তুমি সাদা জাদু করে ফেলো।
ছোঁয়াদ বলে ওঠে
“পাপা হোয়াট ইজ সাদা জাদু?
“কুদ্দুস তুই একদম ইংরেজি বলবি না। ওটা ইংরেজদের ভাষা।
ছোঁয়াদ ছোঁয়াকে ভেংচি কাটে। ছোঁয়া বলে ওঠে
” আমার এখুনি আরেকটা ছেলে লাগবে। যাকে আমি পালবো। যে আমার মতো হবে। বাবার মতো ছেলে আমার লাগবে না।
সাদি হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয়
“ওই যে দরজা।
যাও নিয়ে এসো ছেলে।
ছোঁয়া সাদির চুল টেনে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়। সাদি হাসে।
” আমার পরিবার।
আধপাগল বউ। আমার হৃদয়হরণী।
বড় আর হলে না তুমি।
____সমাপ্ত___