হৃদয়হরণী #পর্ব:২৩ #তানিশা সুলতানা

0
377

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৩
#তানিশা সুলতানা

ফজরের নামাজ শেষে সাদি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। এই সকাল বেলার ঝিরিঝিরি বাতাস ফুরফুরে হাওয়া এবং নিস্তব্ধ পরিবেশ সবটাই সাদির ভীষণ ভালো লাগে। প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে সে একটু হাঁটতে বের হয়।
এক ঘন্টা হেঁটে তবেই বাসায় ফেরে। কিন্তু আজকে বাড়িতে সকলে আছে বলে সাদি হাঁটতে বের হয় না।
বেলকনিতে দাঁড়িয়েই হাঁটতে বের হওয়ার খায়েশ মেটায়।
ঘড়ির কাটায় ঠিক ঠিক সাড়ে ছয়টা বাজতেই সাদি ছোঁয়ার ফোনে কল দেয়। ইডিয়েটটাকে বাসায় ফিরতে হবে। আজকে সেলিম ঢাকার বাইরে যাবে। ফিরবে কিছুদিন পরে। বেরোনোর সময় সে ছোঁয়াকে দেখতে চাইবে। এটা তার স্বভাব। ছোঁয়া পৃথিবীতে আসার পর থেকেই সাদি দেখে আসছে সেলিম দূরে কোথাও যাওয়ার আগে ছোঁয়ার মুখখানা দেখে বের হয়।

কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ হয় না এবং কোনো রেসপন্স নেই। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই মেয়েকে ঘুম থেকে তোলা এক প্রকার যুদ্ধ করা। সাদি নোটিশ করেছে।
পাঁচ বছর হলো সাদি ছোঁয়াকে নোটিশ করে। ছোঁয়ার খোঁজ খবর রাখে। এটাকে সাদি ভালোবাসা বা ভালো লাগা বলতে পারে না। তবে মনের খায়েশ মনে করে। মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। এইটুকুই। মেয়েটার পাগলামি গুলোও ভালো লাগে। আসলে এখন এমন মেয়ে দেখা যায় না।

মেয়েরা সারাক্ষণ এটিটিউট দেখাতে ব্যস্ত। পুরোনো ফেলে নতুন খুঁজে নেওয়াই তাদের মূল দায়িত্ব। ও আমাকে ইগনোর করছে আমি নতুন কাউকে খুঁজে নিবো। ওকে ভূলো যাবো। ভুলে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। এমনটাই চিন্তা ভাবনা সকলের।
কিন্তু ছোঁয়া?
এক সাদিতে আসক্ত।
আত্মসম্মান নেই ছোঁয়ার। সত্যিই নেই। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আত্মসম্মান টিকে থাকেও না।
নিজের আত্মসম্মান নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলে কখনোই ভালোবাসা জিতে নেওয়া যায় না।
ভালোবাসার সার্থকতা সেখানেই যেখানে জয় থাকবে। নিজের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে অপরজনের ভালোবাসা আদায় করে দিতে পারবে।

এসব ভাবনার মাঝেই ছোঁয়া কল রিসিভ করে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
“কি হয়েছে?
সাদির ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসতে গিয়ে নিজেকে থামিয়ে ফেলে।
হাসিতে তাকে মানাবে না।
তাই মুখটা কালো করে গম্ভীর গলায় বলে
” জান বাসায় যাবে না?
ছোঁয়া লাফ দিয়ো উঠে বসে। ঘুম তার উড়ে গেছে। সাদি আবার তাকে জান বলে ডেকেছে? সত্যিই ডেকেছে? না কি ভুল শুনলো?
“সোনা উঠে পড়ো। বাসায় ফিরতে হবে তোমার।
এবার ছোঁয়া শিওর হয়। কোনো স্বপ্ন টপ্ন নয়। সত্যিই সাদি কথা বলছে। তাকে উঠতে বলছে।
আহহহা দ্বিতীয় বার নিরামিষ জামাই জান আর সোনা বললো।
ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে টুপ করে লোকটার ঠোঁটে একখানা চুমু খেতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব?
ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে
” গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং বদলান আপনি। দূরল থাকলে জান সোনা কাছে গেলেই ইডিয়েট স্টুপিট।
মতলবটা কি আপনার বলুন তো?

সাদি আকাশের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে
“আপাতত উদ্দেশ্য তোমার ঘুম ভাঙানো। ভেঙে গেছে। এখন বাসায় যাও।

বলেই সাদি কল কেটে দেয়। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তার এক পাশে রিমি এবং আরেকপাশে ইরা শুয়ে আছে। ছোঁয়া ওদের মাঝখান থেকে উঠে পড়ে। বেলকনিতে চলে যয। ছোঁয়া জানে সাদি সেখানেই আছে। পাশাপাশি রুম হওয়াতে দুই রুমের বেলকনি একটাই।
ছোঁয়া রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে সাদির দিকে তাকায়

” এতো তাড়াই তাড়াই করেন কেনো? মায়া হয় না?

সাদি জবাব দেয় না। তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে৷ মেয়েটা অগোছালো। ভীষণ অগোছালো। এই যে ঘুম থেকে উঠে তেলতেলা মুখ উসকোখুসকো চুল এবং কুঁচকে যাওয়া জামা পড়েই স্বামীর সামনে চলে এসেছে। এখানে তো অন্য কেউ ও থাকতে পারবো।
মেয়েটা পারেই শুধু বকবক করতে আর কোনো কিছুতেই তার মন নেই৷
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ছোঁয়ার থেকে দৃষ্টিতে সরিয়ে নিয়ে জবাব দেয়
“আগুন আর কেরোসিন বেশিখন এক জায়গায় থাকতে নেই।
সাদির কথার মানে বুঝে উঠতে পারে না ছোঁয়া। তাই মুখ বাঁকিয়ে বলে
” শুনেছি দুরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। তাই ভাবছি আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। তাই আপনি আমায় মিস করবেন।
আমায় অনুভব করবেন।

“দুরত্ব ভালোবাসা কমায়। মায়া কমিয়ে ফেলে।

ছোঁয়া সাদির দিকে একটু এগিয়ে আসে।
” আপনি বলছেন দূরে না যেতে?

সাদিও ভনিতা ছাড়াই জবাব দেয়
“হ্যাঁ

খুশিতে ছোঁয়ার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে
” তার মানে আপনি আমায় মিস করবেন?

সাদি জবাব দেয় না। নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ ধরে নেয় ছোঁয়া। এবারও তার খুশি বেরে যায়।

“ভালোবাসেন আমায়?

সাদি জবাব দিতে সময় নেয়। হয়ত কিছু একটা চিন্তা করে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
” জানি না।
তবে তোমকে আমার ভালো লাগে।

ব্যাস ছোঁয়াকে আর পায় কে? সে এক লাফে সাদির কাছে চলে যায়। জোরে সাদির হাতে চিমটি কেটে দেয়। সাদি শব্দ করে না তবে হাত নারিয়ে ওঠে।
ছোঁয়া বুঝে যায় ব্যাথা পাচ্ছে। তাই ছেড়ে দেয়। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“আরেহহ শিওর হলাম আমি স্বপ্ন দেখছি কি না।
আপনার মতো নিরামিষ যখন পছন্দ করে ফেলেছে। ভালোবাসতেও আর বেশি সময় লাগবে না।
আর আমাদের ফুটবল টিম হতেও আর বেশি দেরি নেই।

” ইডিয়েট

“আপনারই তো বউ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here