#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৮
#তানিশা সুলতানা
“তুমি আমার শখের নারী ছোঁয়া। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
বক্স খুলে সেটার ভেতর থেকে লকেট ওয়ালা একটা চেইন বের করতে করতে বলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে ভাজ পড়ে।
” বাই এনি চান্স আপনি কি আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতেন?
মৃদু হাসে সাদি। খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে। ইশারায় ছোঁয়াকেও বসতে বলে। ছোঁয়াও সাদির পাশে বসে।
“তোমাকে আমি কবে থেকে ভালোবাসি জানি না। তবে বউ বানানোর স্বপ্ন দেখেছি অনেক আগে থেকেই। নিজের স্বপ্নটার কথা শেয়ার করেছিলাম তোমার বাবার কাছে। তিনি নাকোচ করে দেন। এবং স্পষ্ট গলায় বুঝিয়ে দেয় তোমার আর আমার মধ্যে ঠিক কতেটা দুরত্ব রয়েছে।
আমিও বুঝে গিয়েছিলাম। এবং তোমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতাম। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বন্ধুত্ব করেছিলাম মিহির সাথে।
বন্ধুত্ব ছিলো বা তার থেকেও কিছুটা বেশি৷
হয়ত আমার চাওয়াটা সত্যি ছিলো তাই তুমি আজকে আমার।
ভেংচি কাটে ছোঁয়া। লোকটা তাকে আগে থেকেই ভালোবাসে। অথচ কি নাটকটাই না করলো। একটুও ভালোবাসা দেখাতো না।
সাদি লকেটা খুলে। তার ভেতরে দুটো নাম লেখা। একটা ” দিয়া এবং অপরটা ছোঁয়াদ”
নাম দেখে ছোঁয়ার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়। সে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়।
“আমার ছেলের নাম আমি কুদ্দুসই রাখবো। ছোঁয়াদ কখনোই রাখবো না।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” ছোঁয়া পাগলামি করে রাতটা নষ্ট করিও না।
“আর আপনি যে আমার ছেলের নাম নষ্ট করছেন।
সাদি হতাশ বুঝে যায় তার আধপাগল বউ মানবে না।
” ঠিক আছে ডাক নাম কুদ্দুস থাকবে। স্কুল কলেজে ছোঁয়াদ দেবো।
ছোঁয়া এটা মানতেও নারাজ। তাই দারুণ তেজে আবারও বলে ওঠে
“একদম না।
স্কুল কলেজেও কুদ্দুস থাকবে।
হার মানে সাদি।
” ঠিক আছে। আপাতত কাছে এসো।
“কাছে যাবো তার আগে আপনি কান ধরে বিশ বার উঠবস করবেন।
” কিন্তু কেনো?
“এতোদিন চোরকির মতো আমাকে আপনার পেছনে দৌড় করানোর জন্য।
আপনি জানেন আপনি আমাকে কতোটা পিছিয়ে দিয়েছেন? বিয়ের দিন থেকেই যদি আমরা কাছাকাছি থাকতাম তাহলে এতোদিনে কুদ্দুস আমাদের কোলে চলে আসতো। এবং কুদ্দুসীকে আনার প্ল্যানিং শুরু করে দিতে পারতাম।
” কুদ্দুসী আবার কে?
“মেয়ের নাম কুদ্দুসী রাখবো। দিয়া থাকবে ভালো নাম। ডাক নাম কুদ্দুসী।
সাদি দুই হাত জোর করে বলে
“মাপ কইরা দে বোইন। তুই বের হ আমার রুম থেকে। আমাকে একটু শান্তি দে।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
” আমাকে আজকে বের করে দিলে আপনার চুলের কসম। আমি চলে যাবো গ্যাব্রিয়েল এর কাছে। ২০ বছর পরে দশটা বাচ্চা নিয়ে তবেই ফিরবো আপনার কাছে।
হতাশ সাদি। কথাবার্তা ছাড়া কান ধরে উঠবস করতে থাকে। ছোঁয়া কাউন্ট করতে থাকে। গুনে গুনে বিশবার কান ধরে শেষ হলে ছোঁয়া এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদিও আগলে নেয় ছোঁয়াকে।
ছোঁয়া সাদির পানজাবির বোতাম খুলে লোমশযুক্ত বুকে ছোট ছোট চুমু খায়।
এবং ফিসফিস করে বলে
“কথা দেন
সাদি ছোঁয়ার মাথায় চুমু খেয়ে জবাব দেয়
” কি কথা দিবো?
“অল্প অল্প করে চুমু খাবেন। রাক্ষসের মতো নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিবেন না।
দাঁতে দাঁত চেপে ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয় সাদি। এই বলদ কি কোনো দিনও মানুষ হবে না?
ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে।
” এভাবে দাঁত কটমট করবেন না। দাঁত ভেঙে গেলে কুদ্দুস এবং কুদ্দুসী আপনাকে বাবা না ডেকে নানা ডাকবে।
রাগতে গিয়ে রাগ করতে পারে না সাদি। কি বলবে একে? স্বভাব তো এমনই। রাগ করলেই কি ম্যাচুউর হয়ে যাবে? কখনোই না।
ছোঁয়া হাত টেনে কাছে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে নিজের পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা।
দুই হাতের বেসামাল স্পর্শ এবং পুরু ওষ্ঠের অত্যাচারে অস্থির ছোঁয়া। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকলেও শখের পুরুষ একটুও ছাড় দেয় না ছোঁয়াকে।
অতিষ্ঠ হয়ে সাদির চুল গুলো মুঠোয় পুরে নেয় ছোঁয়া। সাদি ছেড়ে দেয়। এবং কড়া গলায় জানিয়ে দেয়
“আজকে কোনো রকমে বাঁদরামি করলে চলে যাবো মিহির কাছে মাইন্ড ইট।
ব্যাস ছোঁয়া রানী একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। চুল গুলো ছেড়ে দেয়। এবং নিজেই সাদির ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয় নিজ ওষ্ঠদ্বারা।
__
ফজরের আজান দিয়েছে বেশ কিছু খন আগে৷ ইতোমধ্যে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে গিয়েছে। ছোঁয়া এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে। মূলত সে সাদির পাশে শুবে না। এক ঘন্টা যাবত এভাবেই বসে আছে। সাদি শুয়ে শুয়ে দেখছে অভিমানী বউটাকে।
বউ রেগে নেই। তবে অভিমান করেছে সাথে ভয়ও পেয়েছে মনে হয়। সাদি ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না। আন্দজ করবে কি করে? কথাই তো বলছে না। শেষ কথা বলেছিলো গভীর স্পর্শের মুহুর্তে। মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে সাদি মনে করে ছোঁয়া শেষ কথা কি বলেছিলো। বলেছিলো “আজ না প্লিজ। কিন্তু সাদি ছোঁয়ার কোনো কথা শোনে নি৷ আসলে শুনতে পারে নি। নিজেকে দমিয়ে রাখতেও পারে নি।
পাশে শখের নারী সে আবার বউ বত্রিশ বছরের পাকাপোক্ত যুবক হয়ে নিজেকে দমাতে সক্ষম হয় নি।
অবশ্য এর জন্য সাদি অনুসূচনাও হচ্ছে না। তানিশা সুলতানা এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছে৷ জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করে দিয়েছে। আজ নাহয় সাদি একটু জ্বালালো।
“ছোঁয়া একটু ঘুমিয়ে নাও।
ভালো লাগবে।
এটা নিয়ে চার বার বললো সাদি। তবুও ছোঁয়ার কোনো সারা নেই। একটু নরেচরে বসে ছোঁয়া। শরীরে এখনো শারি পেঁচিয়ে আসে।
বিরক্তর চরম পর্যায়ে চলে যায় সাদি। এক লাফে উঠে পড়ে। ছোঁয়া চমকে তাকায় সাদির দিকে। লোকটা উঠছে কেনো?
ছোঁয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদি পাজা করে কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। মৃদু চিৎকার করে ওঠে ছোঁয়া। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে গলা জড়িয়ে ধরে সাদির।
সাদি বাঁকা হাসে
” ঘুমবে না। তো কি করার?
চলো গোছল সেরে নেই।
চোখ দুটো বড়বড় করে মেলে ছোঁয়া। লোকটা আজকে এতোটা জ্বালাচ্ছে কেনো? ডিসেম্বরের শুরু। প্রচন্ড শীত। এই শীতে এখন গোছল? মরেই যাবে ছোঁয়া। লোকটার এতো অত্যাচারে ছোঁয়া মরে নি বলে এখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মারতে চাইছে?
পাষাণ লোক।
চলবে
আমার ফেসবুক আইডির লিংক
https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL
আমার গ্রুপের লিংক
https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link