তবু_সুর_ফিরে_আসে ১৩ তম পর্ব

0
206

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

১৩ তম পর্ব

শোয়েরের বড় বোনের দুই মেয়ে এলিন আর নাহিন ! পিঠোপিঠি দুই বোন বসুন্ধরা এলাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে ! বাইশ, আর একুশ হবে বয়স। এ বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েদের মত‌ই স্মার্ট, চটপটে টাইপের মেয়ে ! দুই বোনের ই প্রতিটা বিষয়ে খুব মিল তারা দুজন‌ই পড়াশোনার চেয়ে সাজগোজ, ড্রেস‌আপ, ফেসবুক, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা টুকটাক প্রেম নিয়ে উৎসাহী বেশি !
তাদের মা মেয়েদের নিয়ে চিন্তিত পড়াশোনার চেয়ে বেশি তাদের আচরণ নিয়ে ! কিন্তু তার স্বামী আবার একা থাকতে পারেন না পরিবার ছাড়া সেজন্য একমাত্র স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে স্বামীর সঙ্গে যেতে হচ্ছে! মেয়েদের রেখে যাচ্ছে মামা ন‌ওশাদ এর বাসায় !
ন‌ওশাদ ড্রয়িং রুমে ঢুকে বলল, জামাই কে নিয়ে আসলে না কেন আঁখি ?
ও জয়েন করে ফেলেছে মামা ! চলে গেছে ! আমি ছেলের পরীক্ষা আর এদের দুজনের জন্য রয়ে গেছি ! আগামীকাল ছেলের পরীক্ষা শেষ হবে পরশু চলে যাব !
মামা আপনি কিন্তু আমার মেয়েদের শাসন করবেন !
কেন আঁখি ? শাসন করতে হবে কেন ?
ওরা যথেষ্ট ফাঁকিবাজ পড়াশোনার ব্যাপারে আর কোন ভুল করলে ই আচ্ছা শাসন করবেন !
ভুল করলে শাসন করতে হয় বুঝি ? আমি তো মনে করি ভুল করলে ভুল শুধরে নেয়ার উপায় বলে দিতে হয় প্রথমেই শাসন করে ফেললে সে শিখবে টা কিভাবে ?
ও আপনি যাই বলেন আজকালের ছেলে মেয়ে আদরে মাথায় উঠে যায় !
ন‌ওশাদ হাসছে এই যে দুই বোন কি নাম ?
আমি এলিন আর ওর নাম নাহিন !
তোমরা দুইজন কি আদর পেলে মাথায় উঠে যাবে ? সম্পর্কে কিন্তু নাতনি হ‌ও দুইজন, আদর তো করতেই হবে কিন্তু মাথায় উঠা যাবে না আমার !
আমরা কিন্তু নানা ডাকতে পারবনা এত ইয়ং কাউকে কি নানা ডাকা যায় ? কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দিল এলিন!
দেখলেন মামা কি রকম ফাজিল এরা ! নানা কে নানা ডাকবি না তো কি ডাকবি তোরা আঁখি রাগ করে বলল ?
ন‌ওশাদ হো হো করে হাসছে ! আঁখি ওরা কিন্তু দারুণ কথা বলেছে নানা ডাকটা একটু বেশি মুরুব্বি হয়ে যায় ওরা এ যুগের মেয়ে ওরা এসব ব্যাপার খুব ভালো বুঝে ! কি ডাকতে চাও বলো ?
আমরা ভাইয়া ডাকব !
ন‌ওশাদ হেসে বলল,এইটা আমার‌ও পছন্দ হয়েছে !
শোয়েব চুপচাপ বসে আছে মোবাইল টিপাটিপি করছে ! ন‌ওশাদ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
শোয়েব তোমার দ্বায়িত্ব কিন্তু ওদের খেয়াল রাখা ! আমি তো ব্যস্ত থাকি কি লাগবে না লাগবে সব খোঁজ রাখতে হবে তোমার ! আমি চাই ওরা এ বাসায় যতদিন থাকবে খুব ভালো যেন থাকে ! এবং কোন অযত্ন যেন না হয় !
জ্বি মামা !
মামা নতুন মামি কোথায় উনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম , আঁখি বলল?
ও হ্যাঁ হেরা নিজের ঘরেই আছে ! তোমরা উপরে চলে যাও !
শোয়েব আনারের মা কে ডেকে বলো হেরাকে বলতে ওর সঙ্গে দেখা করতে আঁখি এসেছে !
শোয়েব আনারের মায়ের খোঁজে বাসার ভেতরে চলে গেল !
তোমরা বসো আমি আমার রুমে যাচ্ছি। রাতের খাবার খেয়ে তারপর যেও আঁখি আর এই যে দুই বোন তোমাদের কিছু লাগলে আনারের মা আর পারুল কে বলবে !
জ্বি !
নাওশাদ নিজের রুমে চলে গেল !
শোয়েব এসে আবার ড্রয়িং রুমে ঢুকলো ! আপা তোকে একটা কথা বলছি একটু খেয়াল রাখিস !
কি ?
মামা বিয়ে করেছে সবাই কে বলেছি কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বলিনি সেটা হলো মামার ওয়াইফ এর বয়স কিন্তু খুব কম ! খুব কম মানে অনেক কম মামার থেকে !
তাই নাকি !
হুম , সামনে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বেফাঁস কিছু বলে ফেলবি না কিন্তু ! এলিন, নাহিন তোদের ও বলছি ! গ্রামের মেয়ে কিন্তু পড়াশোনা করেছে কথা বার্তা শুনে তাই মনে হয় ! মামা উনাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবে ঠিক করেছে ! সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটির আগের পরিচয় যাই ছিল এখন কিন্তু ন‌ওশাদ মামার ব‌উ মনে রাখবি !
ঠিক আছে, চল যাই উপরে !
হুম , যা বলেছি মনে থাকে যেন !
নাহিন বলল,মামা আমাদের ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে যাই ?
রিয়াজ ভাই কে বলছি ও পাঠানোর ব্যবস্থা করবে তোরা যা !

শোয়েবের ভাগ্নি রা তিন তলায় শোয়েব এর রুমের পাশে তাদের জন্য নির্ধারিত ঘর দেখে এসে দোতলায় লিভিং রুমে হেরার জন্য অপেক্ষা করছে !
মামা তোমাদের নতুন মামিটা কেমন দেখতে ?
আসলেই দেখতে পাবি নাহিন !
আমরা কি ডাকবো উনাকে? নানি তো অবশ্যই ডাকব না , এলিন বললো!
ডাকাডাকি নিয়ে একটা অসহ্য তামাশা শুরু করেছিস দুই বোন !
আম্মু তুমি ওসব বুঝবে না আজকাল সম্পর্ক যাই থাকুক ডাকতে হয় বয়স এবং স্ট্যাটাস বুঝে !
ইস নাহিন তোরা দুই বোন এত কিছু বোঝা শুরু করেছিস কবে থেকে ? পড়াশোনা বাদে বাকি সব কিছু বেশি বুঝে ফেলেছিস ! শোন এই বাসায় এমন কিছু করবি না যাতে আমাদের মান সম্মান নষ্ট হয় ! তোর আব্বু কিন্তু বারবার বলে দিয়েছে এই কথা ! এই মামাকে দিয়েই কিন্তু তোর আব্বু র নেক্সট পোস্টিং ঢাকায় করিয়ে আনতে হবে মনে রাখিস !
মনে থাকবে আম্মু এক কথা বারবার বলো না তো বলে এলিন বিরক্ত হয়ে উঠে গেল !
হেরা আনারের মায়ের সঙ্গে এসে লিভিং রুমে ঢুকলো !
ওকে দেখে আঁখি আর দুই বোন এলিন, নাহিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ! শোয়েব আঁখিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো আপা এই হলো মামি !
আঁখি অন‌্য সবার মত‌ই হেরা কে প্রথম দেখেই ন‌ওশাদ এবং হেরার বয়সের তুলনা করে একটু অবাক হচ্ছে !
মামি আমার বড় বোন আর দুই ভাগ্নি ! দুই ভাগ্নি কিছুদিন এই বাসায় থাকবে !
হেরা হেসে বলল,ও আচ্ছা !
আঁখি এগিয়ে গিয়ে বলল,আমার নাম আঁখি আমার দুই মেয়ে এলিন আর নাহিন !
এলিন আর নাহিন হেরাকে দেখে মিটমিট করে হাসছে !
মামি আপনাদের কষ্ট দিব কিছুদিন ওরা এখানে থাকবে মামাই বলল !
হেরা বলল,কষ্টের কি আছে আশ্চর্য এত বড় বাড়ি। ওদের দেখে আমার ই খুব ভালো লাগছে ! প্লিজ আপনি এভাবে বলবেন না !
নাহিন হেরার পাশে এসে বসলো আপনাকে তো কোন ভাবেই নানু বলে ডাকা যাবে না আমি কি বলেছিলাম আম্মু ?
চুপ নাহিন বেশি কথা বলিস তুই !
আপনি কিছু মনে করবেন না মামি আমার মেয়ে দুইটা একটু বেশি কথা বলে !
হেরা বলে উঠলো এভাবে বলছেন কেন আমার তো খুব মজা লাগছে ! আমিও অনেক কথা বলি ! এ বাসায় এসে কথা বলার মানুষ পাই না ওরা থাকলে খুব ভালো লাগবে !
আনারের মা জুস নিয়ে ঢুকলো !
জুস খেতে খেতে এলিন বললো, আমরা কিন্তু আপনার বর কে ভাইয়া ডাকবো তো আপনাকে ভাবি ডাকি ? আমাদের বয়সী কাউকে নানি ডাকব না !
আমাকে নাম ধরে ডাকলে আরো খুশি হব হেরা বলল!
কি বলেন মামি আমার মেয়েরা আপনাকে নাম ধরে ডাকবে মাথা নষ্ট ! এমনি তেই এরা বেশি বুঝে আপনি আর পশ্রয় দিয়েন না !
শোয়েব হেরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এলিনের চেয়েও বয়সে ছোট হবে এই মেয়ে !
তারপর দুই ভাগ্নি র দিকে তাকিয়ে দিল এক ধমক ,
কি কখন থেকে শুরু করেছিস ডাকবি কি নিয়ে ক্যাচরক্যাচর ! পারিস ও তোরা ?
আপনি কিছু মনে করবেন না মামি !
আমি কিছুই মনে করছি না আপনি শুধু শুধু ধমক দিচ্ছেন ওদের!
না মামি আপনি জানেন না এরা কতটা দুষ্টু আঁখি নিজের মেয়েদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালো ! আপনার কাছে আমার রিকোয়েস্ট ওদের বেশি পাত্তা দিবেন না !
আঁখি হেরাকে পাত্তা ‌না দেয়ার কথা বলে গেল কিন্তু রাতে ওদের মা ডিনার করে ফেরত যাওয়ার ঘন্টা খানেক এর মধ্যে তিনজনের মধ্যে দারুন ভাবে হয়ে গেল ! সম বয়সী তিনটা মেয়ে একটা বাসায় থাকলে যা হয় ন‌ওশাদের বাসা তাই হয়ে গেল! হাসাহাসি গল্প দৌড়াদৌড়ি সারাক্ষণ !
পর দিন অফিস থেকে ফিরে ন‌ওশাদ হেরার খোঁজ নিয়ে জানতে পেল হেরা এলিন নাহিনের সঙ্গে তিন তলায় গল্প করছে ! ন‌ওশাদ এর ভালো লাগছে মেয়েটা একা আর বোরিং ফীল করছে না ! কিন্তু তার খুব ইচ্ছে করছে এখন হেরার সঙ্গে সময় কাটাতে ! একবার ভাবলো আনারের মা কে দিয়ে খবর পাঠাবে তারপর মনে হলো থাক ! গল্প করছে করুক !
ন‌ওশাদ ফ্রেশ হয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে লিভিং রুমে র দিকে যাচ্ছে শোয়েব ওখানে কিছু ফাইল নিয়ে অপেক্ষা করছে! আজ ফ্যাক্টরি তে ছিল সারাদিন তাই ফাইল বাসায় নিয়ে এসেছে শোয়েব!
কিছুক্ষণ ফাইল দেখে শোয়েব এর সঙ্গে কথা বলছে ঠিক তখন হেরা আর তার নতুন দুই সঙ্গী উপর থেকে হৈচৈ করে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো !ন‌ওশাদের হেরার এই কিচিরমিচির দেখে খুব মজা লাগছে !
হেরা ন‌ওশাদ কে দেখে অবাক হয়ে গেল!
আপনি কখন এসেছেন ?
এসেছি অনেক আগে !
আমাকে কেউ বলে নাই !
তুমি গল্প করছিলে তোমার সঙ্গীদের সঙ্গে তাই বিরক্ত করলাম না !
কি এলিন নাহিন তোমাদের কেমন লাগছে এই বাসা ?
দারুন !
সঙ্গী পছন্দ হয়েছে ?
ব‌উমনি কে অনেক পছন্দ হয়েছে , এলিন বললো!
দেখুন না আমাকে ওরা ব‌উমনি বলছে আমার খুব লজ্জা লাগছে আপনি বলে দিন তো আমাকে নাম ধরে ডাকতে , হেরা অভিযোগ করলো‌ ন‌ওশাদের কাছে !
ন‌ওশাদ বলল,এটা তোমাদের তিন জনের ব্যাপার তোমরা ডিসাইড করো কি ডাকবে বাট ব‌উমনি ইজ নট বেড ! আমার ছোট মামিকে আমরা ব‌উমা ডাকি , সবচেয়ে ছোট খালাকে ডাকি মামনি ! আগে আদর করে এসব ডাকতো আত্মীয়-স্বজন রা কিন্তু এখন আর এসব নেই !
তো আমরা কিন্তু তোমাকে ব‌উমনি ই ডাকছি ফাইনাল হয়ে গেল , নাহিন হেরার দিকে তাকিয়ে বলল!
হেরা লজ্জা লজ্জা মুখে নওশাদের দিকে তাকিয়ে আছে !
শোয়েব খুব বিরক্ত হচ্ছে তার ভাগ্নিদের কর্মকান্ডে ! এদের বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধির লেভেল জিরো ! কালকে থেকে কাকে কি ডাকবে এসব নিয়ে পরে আছে ! তার ইচ্ছা করছে দুইটাকে আচ্ছা ধমক দিতে কিন্তু পারছে না মামার জন্য এবং উনার ওয়াইফের জন্য ! আজ সারাদিন তিনজনে খুব হৈচৈ করেছে । বিকালে অফিস থেকে এসে দেখে তিনজন দোতলায় হিহি তে ব্যস্ত ! ওর মনে হচ্ছে এলিন, নাহিন পড়াশোনার চেয়ে বেশি হাহা হিহি করে দিন পার করে দিবে এখানে !

ন‌ওশাদ নিজের ঘরে এসে ঢুকলো ! একটু পরে হেরাও ওর রুমে এসে ঢুকলো !
কি অবস্থা তোমার কপালের হেরা ?
হেরা ন‌ওশাদের বিছানায় বসতে বসতে বলল, কপালের অবস্থা ভালো !
দেখি ফোলা কমেছে ?
ফোলা কমে গেছে ! ব্যথা আছে একটু !
দেখি কাছে আসো !
ন‌ওশাদ সোফায় বসা ছিল হেরা ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো !
ন‌ওশাদ হেরার কপালে হাত ছুয়ে দেখলো !
হেরা হেসে দিল !
হাসছো কেন ?
আমার মামিরা বলতো আমার পোড়া কপাল। কপাল খারাপ আর কি আমিও তাই ভাবতাম !
তারপর ?
তারপর কিছু না !
মানে ?
এখন মনে হয় আসলে পোড়া কপাল বলে কিছু নেই ! খারাপ ভালো শুধু সময়ের ব্যাপার ! মনে মনে হেরা বলল, আমার তো দেখি রাজ কপাল!
বাপরে কত বড় বড় কথা জানো তুমি !
আমি অনেক কথা জানি !
ন‌ওশাদ বলল,তুমি বলো আমি শুনছি ! তবে আজ অনেক কথা গল্প হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি ! বান্ধবী পেয়ে গেছো ! অফিস থেকে এসে তোমার রুমে গেলাম দেখি তুমি নেই তখন‌ই বুঝেছি হেরা এখন অনেক ব্যস্ত !
সে রকম কিছু না ! আমরা গল্প করছিলাম ! ওদের রুমে গেলাম তাই টের পাইনি কখন আপনি এসেছেন! সরি !
সরি বলতে হবে না ! এমনি বললাম ! তুমি আনন্দে আছো দেখতে ভালো লাগছে !
আপনি ঠিক ভাবে ডিনার করলেন না কেন ?
খেলাম তো !
না আমি খেয়াল করেছি আপনি সামান্য খেয়ে উঠে গেলেন !
ইচ্ছে করছিল না ! আজ ফ্যাক্টরিতে গেলাম ভালুকা সেখান থেকে গাজীপুরে আমার দুটো গার্মেন্টসের প্রোডাকশন এর কিছু ডিসিশন আমি সরাসরি দেখে দিব বলে যেতে হলো । সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম ! এই যাওয়া আসার পথে আবার জ্যামে বসে টায়ার্ড হয়ে গেছি! এখন মাথা ঘাড় পিঠ সব ব্যথা করছে !
বেশি খারাপ লাগছে ?
খারাপ লাগছে ! তুমি ফোন দিয়ে বলো তো আমাকে একটু কফি দিতে !
না এত রাতে কফি খেতে হবে না ! আমি যদি আপনার মাথা টিপে দেই কোন সমস্যা আছে ?
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকালো !
হেরা খুব উৎসাহ নিয়ে ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে আছে ! আরাম পাবেন !
ন‌ওশাদ হেসে দিল না সমস্যা নেই কিন্তু তুমি এই কষ্ট টা না করলেও পারো !
কষ্ট হবে না ।আমি নানা ভাইয়ের মাথা ব্যথা করলে চুল টেনে দিতাম কপালে হাত বুলিয়ে দিতাম !
আচ্ছা ঠিক আছে দাও !
হেরা সঙ্গে সঙ্গে ন‌ওশাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ওর কপালে হাত ছোয়ালো !
ন‌ওশাদ চোখ বন্ধ করলো বুকটা কেমন করে উঠলো ওর ছয় বছরের উপর হবে কেউ একজন তার কপালে হাত ছুয়ে আছে ! গীতি এভাবে প্রায় রাতেই ওর কপালে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত ! অনেক দিন পর কেউ তার এতটা যত্ন করছে !
হেরা ন‌ওশাদের চুল টেনে দিচ্ছে খুব সতর্কতার সঙ্গে আবার টান লেগে ব্যথা যেন না পায় সেই খেয়াল ও রাখছে !
ন‌ওশাদ চোখ বন্ধ করে আছে ! মনে মনে ভাবছে আসলেই নিজের বলে একটা মানুষ জীবনে লাগে ! হেরার এতটা কাছে আমি আসিনি, হেরাকেও আসতে দিতে পারছি না কিন্তু একমাত্র ও ই তো একজন যে এভাবে আমার কপালে হাত টা রাখতে পারে আর কেউ তো না !
হেরা বলল,কি চিন্তা করছেন ?
হুম , খুব ভালো লাগছে হেরা !
বলেছিলাম না আরাম হবে !
সত্যিই হেরা অনেক ভালো লাগছে ! জানো অনেক বছর পর কেউ আমার কপালে এভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে !
আপনি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন আমি আর কিছুক্ষণ এভাবে চুলে বিলি কেটে দেই ভালো লাগবে !
আর লাগবে না হেরা ! ন‌ওশাদ হেরার হাত দুটো ধরলো ,থ্যাঙ্কস হেরা ! যাও রাত অনেক হয়ে গেছে তুমিও ঘুমিয়ে যাও !
আমার করার কিছু নেই এখন কিছুক্ষণ ব‌ই পড়ব তখন এমনিতেই ঘুম চলে আসবে !
দেখলাম রবার্ট ফ্রস্ট এর কবিতার বই পড়ছো হেরা !
আমার খুব ভালো লাগে রবার্ট ফ্রস্ট এর কবিতা!
ভালো ! অনেক অনেক ব‌ই আছে স্টাডি রুমে যত ইচ্ছা পড়ো !
আমি তো খুব এক্সাইটেড আপনার ব‌ই গুলো দেখে ! ওসব কথা বাদ থাক আপনি আমার সঙ্গে আসুন বলে হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে গেল ! এখন শুয়ে পড়ুন আমি চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি !
আরে আর লাগবে না !
আপনার চোখ লাল হয়ে আছে একটুক্ষনেই ঘুম চলে আসবে দেখবেন !
আচ্ছা ঠিক আছে!
ন‌ওশাদ বিছানায় শুয়ে পড়লো ! হেরা পাশে বসে চুল বিলি কেটে দিচ্ছে !
চোখ বন্ধ করেন !
আচ্ছা ঠিক আছে এই যে বন্ধ করলাম চোখ !
হেরা ন‌ওশাদের কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ! কিছুক্ষণ পর ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে দেখে হেরা বুঝলো ন‌ওশাদ ঘুমিয়ে গেছে ! গায়ের চাদর টা টেনে দিল ! তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সে ! তার এখনো ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে ঠোঁট টা ছুঁয়ে দিতে মানুষ টার ! কিন্তু তা কি হয় নাকি উঠে গেলে বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে ! হেরা আলো নিভিয়ে খুব সাবধানে ঘর থেকে বের হয়ে গেল !
ন‌ওশাদ এর ঘুম আসেনি হেরা ওর এত কাছে ছিল ওর ভেতরে অনেক অনেক বছর পর একটা উত্তেজনা অনুভব করছিল । এই উত্তেজনা টা পাশ কাটিয়ে আর যাই হোক ঘুমিয়ে পড়া যায় না ! সে ইচ্ছে করলেই পারতো হাতটা বাড়িয়ে হেরাকে বুকে টেনে নিতে ! হেরার বুকের সেই দাগটাতে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে ! খুব সহজ ছিল এটা করা কিন্তু কঠিন কাজটাই সে করতে পেরেছে নিজেকে সংযত করতে পেরেছে ! অনেক দ্বিধা অনেক কিছু ঝট করে এসে যায় সামনে হেরা আর ওর মাঝে ! শরীর আদিম সুখে ভেসে যেতে পারে কিন্তু মন, সেখানে তো কত যুদ্ধ ! এখনো নিশাল কে কিছুই বলা হয়নি ! এখনো কোথাও না কোথাও গীতির অস্তিত্ব তাকে হেরার কাছে যেতে বাঁধা দেয় ! এই ঘরে এই বিছানায় কত স্মৃতি কত আবেগঘন মুহূর্ত কেটেছে গীতির সঙ্গে ! সব সামনে চলে আসে !
ন‌ওশাদ বিছানা থেকে নেমে সাইড টেবিলে র ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো তারপর সিগারেট ধরিয়ে ভাবনায় ডুবে গেল ! সত্যি ই কি ভুল করলাম কিছু এভাবে বিয়ে টা ঠিক হয়নি ? কিন্তু আজ হেরা কপালে হাত ছোঁয়াতেই এত হাহাকার কেন হচ্ছে বুকের ভেতরে, কেন বারবার মনে হচ্ছে এমন একটা হাত মমতা নিয়ে , ভালোবাসা নিয়ে তাকে জড়িয়ে রাখুক ! খুব অধিকার নিয়ে কেউ তাকে বেঁধে রাখুক ! তাকে শাসন করুক! কেন, কেন বারবার মনে হচ্ছে ?
ন‌ওশাদ সিগারেট শেষ করেও কিছুক্ষণ বসে রইল !
অনেক রাত হয়ে গেছে ! বাংলা ক্যালেন্ডারে অগ্রাহায়ণ এর রাত শুরু হয়ে গেছে। এই মাঝ রাতে বাহিরে ঝিরঝিরে ঠান্ডা আসি আসি করছে ! ন‌ওশাদ আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে এলো ! বিছানায় শুয়ে এবার সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেল সে !

পরদিন সকালে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে দেখে পা ফেলতে পারছে না ! পায়ে প্রচন্ড ব্যথা ! বুঝতে পারছে এটা কিসের ব্যথা ! অনেক দিন পর আবার গাউটের ব্যথা টা তাকে যন্ত্রণা দেয়ার জন্য ফিরে এসেছে ! খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বাম পায়ের আঙ্গুলে ! ব্যথাটা আঙ্গুলে হলে কি হবে পা ফেলতে মারাত্মক কষ্ট হয় ! খুব কষ্ট করে বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ, সেইভ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো ! অফিসে যেতে পারবে কিনা বুঝতে পারছেনা ন‌ওশাদ ! অনেক কষ্ট করে পা টেনে আবার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো!
আরো কিছুক্ষণ এভাবেই পা টা একটা বালিশের উপর তুলে ধরে শুয়ে রইল !
পা নামাতে কষ্ট হচ্ছে খুব!
ইন্টারকমে রান্নাঘরে ফোন দিয়ে আনারের মা কে আসতে বলল!
একটুপর আনারের মা ছুটতে ছুটতে এসে হাজির ! দরজায় টোকা দিল !
এসো !
ভেতরে ঢুকে বালিশের উপর পা রাখা দেখেই আনারের মা বুঝতে পেরেছে ন‌ওশাদের পায়ের ব্যথা উঠেছে!
স্যার বরফ নিয়ে আসি আমি !
ব্রেকফাস্ট দাও খেয়ে পেইন কিলার খেতে হবে অফিস যাব !
জ্বি স্যার !
আনারের মা দৌড় দিল রান্নাঘরের দিকে !
কিছুক্ষণ পর আইস ব্যাগ নিয়ে হাজির হলো ওর পিছনে পিছনে পারুল খাবারের ট্রলি ঠেলে ঢুকলো !
ন‌ওশাদ একটা খেজুর আর তিন চামচ কর্নফ্লেক্স মুখে দিয়ে রেখে দিল ! খেতে ইচ্ছে করছে না কিছুই শুধু পেইন কিলার আর অন্য ওষুধ গুলো খাবে বলেই একটু কিছু মুখে দেয়া !
আনারের মা চা হাতে নিয়ে ঢুকলো আবার !
রেখে যাও পরে খাব !
জ্বি স্যার !
হেরা উঠেছে ?
অনেক রাত পর্যন্ত ব‌ই পড়ছে মনে হয়, ঘুমাচ্ছে আম্মা !
আচ্ছা থাক এখন ডাকার দরকার নেই ওর সময়মত উঠুক !
আনারের মা ঘর থেকে বের হয়ে গেল ! ন‌ওশাদ আইস ব্যাগ টা কিছুক্ষণ পায়ে ধরে রাখলো তারপর উঠে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেল ! কষ্ট হচ্ছে কিন্তু যেতেই হবে আজ ! জরুরী একটা কনফারেন্স আছে।

হেরা কে ঘুম থেকে ডেকে তুললো এলিন ! উঠো কি অবস্থা তোমার এখনো ঘুমাচ্ছো যে ?
অনেক রাত পর্যন্ত ব‌ই পড়েছি তাই উঠতে দেরি হয়ে গেল!
তোমাদের ক্লাস নেই আজ ?
ছিল আমার ক্লাস ক্যানসেল হয়ে গেল অন্য যে ক্লাস টা ছিল ফ্রেন্ড রা বলল করবে না তাই আর যাই নাই !
নাহিন চলে গেছে ?
না সে রাতে চুলে তেল দিয়েছে শ্যাম্পু করেনি বলে যায়নি !
চুলে শ্যাম্পু নেই বলে ক্লাস করা যাবে না ! হেরা অবাক হচ্ছে !
কি যে বলো না ব‌উমনি তেল দেয়া চুল নিয়ে ভার্সিটিতে গেলে মান সম্মান থাকবে না !
ও আচ্ছা ! আমার এত কিছু জানা নেই !
আনারের মা রুমে ঢুকে বলল,
সবাই আসেন নাস্তা খেয়ে নেন আম্মা !
তোমার স্যার কখন গেছে অফিসে ?
প্রতিদিন যখন যায় ! আজ স্যারের শরীর খারাপ ছিল !
হেরা লাফ দিয়ে উঠলো , কি হয়েছে আনারের মা ?
ঐ যে পায়ের আঙ্গুলে র ব্যথাটা আবার আসছে !
কোন ব্যথা ?
স্যারের আঙ্গুলে একটা ব্যথা আছে হঠাৎ হঠাৎ হয় !
এখন কি অবস্থা একটু খোঁজ নিয়ে বলো না আনারের মা ?
ব‌উমনি তুমি ফোন দাও !
আমি ?
হুম! সমস্যা কি ?
না মানে আমি তো কখনো ফোন দেই নাই উনাকে !
তখন প্রয়োজন পড়েনি আজ তোমার প্রয়োজন তাই ফোন দিলে !
কিছু মনে করবেন না তো উনি ?
কিছু মনে করবেন কেন আশ্চর্য ?
আমার কাছে নাম্বার নেই উনার !
এটা কোন বড় ব্যাপার না ! আনারের মা তোমার কাছে আছে না নাম্বার? নিয়ে আসো আর ফোন টা আনো !
আনারের মা কর্ডলেস আর ফোন বুক নিয়ে এলো !
দাও আমার কাছে আমি ডায়েল করে দিচ্ছি , বলে এলিন কর্ডলেস টা আনারের মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নিল! তারপর ন‌ওশাদ এর নাম্বার টা ডায়েল করে দিল !
রিং হচ্ছে তুমি কথা বলো ব‌উমনি, আমরা তারপর একসঙ্গে নাস্তা খাব ! চলো আনারের মা !
এলিন আর আনারের মা ঘর থেকে বের হয়ে গেল!
ন‌ওশাদের নাম্বারে রিং হচ্ছে হেরার মনে হচ্ছে রিং এর সাউন্ড টা তার বুকের ভেতরে হচ্ছে !
হ্যাঁ বলো আনারের মা , ওপাশ থেকে ন‌ওশাদ বলে উঠলো !
আমি , হেরা !
ও আচ্ছা কি অবস্থা তোমার ? কি ব‌ই পড়ছিলে রাত জেগে ?
সরি আপনি যাওয়ার আগে উঠতে পারিনি !
এটা তোমার জন্য মেন্ডেটরি না হেরা !
না তারপরও আনারের মা বলল আপনার শরীর খুব খারাপ!
খুব খারাপ না ! পায়ে সামান্য ব্যথা পেইন কিলার খেয়েছি ঠিক হয়ে যাবে । তুমি চিন্তা করো না আমার এমন হয় হঠাৎ হঠাৎ!
কখন আসবেন আজ ?
চলে আসব বিকেলে !
দুপুরে বাসায় খাবেন ?
বলতে পারছি না এখন তোমার সঙ্গে কথা বলেই কনফারেন্স রুমে গিয়ে ঢুকবো , তারপর কখন বের হব কনফারেন্স শেষ করে ঠিক নেই !
আচ্ছা ঠিক আছে!
থ্যাঙ্কস হেরা !
থ্যাঙ্কস কেন ?
এই যে ফোন করে খোঁজ নিলে !
আনারের মা যখন বলল আপনার শরীর খারাপ আমার টেনশন হচ্ছিল !
টেনশন করো না আই এম ফাইন ! এখন রাখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে !
জ্বি ভালো থাকবেন!
হেরা ফোন রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল ! তার এত ভালো লাগলো কথা বলে মানুষটার সঙ্গে! কি সুন্দর ধীরে ধীরে কথা বলে! কত ভরাট গলা ফোনে শুনতে কি ভালো লাগে ! ওর খুব ইচ্ছে করছিল আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে!

দুপুরে লাঞ্চ করার পর ওরা তিনজন বসে গল্প করছে হেরার রুমে ! এলিন নাহিন যা দুষ্ট কত দুষ্টামি র গল্প যে ওদের স্টকে আছে হেরা অবাক হয়ে শুনে! ইস ওদের লাইফটা খুব এক্সাইটিং এ ভরপুর ! নাহিন একসঙ্গে দুটো ছেলেকে ওর পিছনে ঘুরাচ্ছে একজন ওর ক্লাস মেট আর একজন ওর আত্মীয় ! আত্মীয় ছেলেটা দেশের বাহিরে থাকে !
সারাক্ষণ ওর সঙ্গে মেসেঞ্জার এ মেসেজ পাঠাতে থাকে!
হঠাৎ এলিন বললো, আচ্ছা ব‌উমনি একটা প্রশ্ন করি কিছু মনে করবে না তো ?
না কিছু মনে করবো কেন বলো?
তুমি আর ভাইয়া হাজব্যান্ড ওয়াইফ কিন্তু তোমরা নরমাল হাজব্যান্ড ওয়াইফের মত না কেন ?
মানে বুঝলাম না ?
এই যে তোমরা দুইজন দুই রুমে থাকো , তোমাকে দেখলেই বোঝা যায় তুমি এখনো উনার সামনে অনেক লজ্জা পাও কেমন জড়তা দুজনের মধ্যেই এটা কেন ? প্লিজ কিছু মনে করো না দুইদিন হয়েছে তোমার বাসায় এসেছি কথাটা মাথায় ঘুরছিল বলে তোমাকে বলে ফেললাম !
হেরা মুখে একটা স্মিত হাসি রেখে বলল, আমি কিছু মনে করিনি এলিন ! আসলে আমাদের বিয়েটা হুট করেই হয়েছে তো তাই এখনও আমার মাঝে লজ্জা বলো জড়তা বলো এসব রয়ে গেছে ! আর আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না দুইজন দুই ঘরে আছি । কিছুক্ষণ চুপ করে হেরা বলল, এলিন আমার জীবনটা অনেক কষ্টের ছিল বুঝলে বাবা মা নেই নানার কাছে মানুষ হয়েছি । মামা মামিদের কাছে অবাঞ্চিত টাইপ ছিলাম । সেখান থেকে উনি আমাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন এতেই আমি অনেক খুশি এর বাহিরে বেশি কিছু চাওয়া ভুল হবে !
আচ্ছা তোমাদের তো অনেক বয়সের গ্যাপ তুমি কিভাবে রাজি হলে বিয়েতে তোমার ফ্যামিলি বা কিভাবে রাজি হলো ?
সেই গল্প অন্য কোন দিন বলব এলিন শুধু জেনে রাখো উনি আমাকে বিয়ে করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন এর জন্য এই জন্ম কেন আরও কয়েক জন্ম ভরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও উনার কাছে কম হয়ে যাবে!
তুমি অনেক ভালো আর সুন্দর একটা মেয়ে তোমার জীবনটা কেন এত দুঃখের বুঝলাম না!
বুঝতে হবে না বাদ দাও তো ! আমি এখন অনেক অনেক হ্যাপি ।
সত্যি ?
হ্যাঁ!
নাহিন হাতে করে একটা স্পিকার নিয়ে ঢুকলো !
এটা কি নাহিন?
ব‌উমনি এটা হ্যান্ড কারাওকি !
মানে ?
তুমি যে কোন গান গাইতে চাও ব্লুটুথ দিয়ে কানেক্ট করলেই ঐটার মিউজিক বাজবে তুমি শুধু গানের লিরিক্স টা সুর দিয়ে গাইবে ব্যস !
দারুন জিনিস তো !
অনেক দারুন ।
এখন কি করবে এইটা দিয়ে ?
গান গাইব তারপর ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করব !
সত্যি এখন গান গাইবে ?
হুম !
তাহলে শুরু করো !
কোন গানটা গাইবো সেটাই বুঝতে পারছি না!
এলিন বলল,নাহিন তোর ফালতু গান আপলোড দিয়ে দিয়ে লোকজনের কান ঝালাপালা আর করবি না প্লিজ !
আপি তুই একটা গান গা তারপর কথা বলিস !
শোন আমি গান গাইতেও পারি না কাউকে বিরক্ত ও করি না !
হেরার খুব মজা লাগছে দুই বোনের খুনশুটি গুলো !
ব‌উমনি তুমি গান গাইতে পারো ?
আরে না !
একটু দেখো চেষ্টা করে !
হেরা রুম থেকে বের হয়ে গেল ঐ দিনের মত পরিস্থিতি যেন না হয় তাই সে দোতলার বারান্দা থেকে দেখে এলো ন‌ওশাদ এর গাড়ি আবার চলে এলো কিনা !
নাহিন গান গাইতে শুরু করতেই এলিন ভুল ধরা শুরু করলো! দুই বোনের এই নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় ! নাহিন দুই লাইন গাওয়ার আগেই এলিনের হাসি শুরু হয়ে যায়! তারপর নাহিন আবার প্রথম থেকে শুরু করে! গান টা আর কমপ্লিট হয় না!
হেরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে! কত দিন পর এভাবে হাসছে সে মনেও করতে পারছে না !
হেরা স্পীকার টা নিয়ে গানটার শেষ অংশটুকু গাইতে শুরু করলো,
” আমি যেন এই আলোর খেয়ায়
আনমনে ভেসে যাই,
কোন স্বপ্নের‌ও দেশে যাই!
কত শিউলি আনন্দ যায় ডেকে ডেকে
দূর বনভূমি থেকে!

তুমি এলে যেন এক মুঠো চঞ্চল চঞ্চল
খুশি এলো অন্তরে।
আমার দু’চোখ ভরে তুমি এলে !
অনেক বৃষ্টি ঝড়ে তুমি এলে
যেন একমুঠো রোদ্দুর আমার দুচোখ ভরে
তুমি এলে …..

এলিন আর নাহিন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে হেরার দিকে ! আনারের মা এসেছিল কিছু একটা বলতে সে হেরার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ! তার মনে পড়ে গেল তার আগের আম্মার কথা তিনিও মন ভালো থাকলে এভাবে গুনগুন করে গান গাইতে ! কি সুন্দর গান গায় এই আম্মা !
ব‌উমনি তুমি এত সুন্দর গান কোথায় শিখলে ?
নাহিন আমি গান কখনও শিখিনি আমার গান শিখার মত অবস্থা জীবনে ছিল না !
নাহিন এটাকে বলে গান আর তুমি যেটা গাও সেটাকে বলে অত্যাচার ! বলেই হো হো করে হেসে দিল এলিন !

প্রচন্ড জ্বর এবং পায়ে ব্যথা নিয়ে ন‌ওশাদ বাসায় চলে এসেছে । ড্রয়িং রুমে বসেই শুনতে পেল উপরে গান চলছে ! ন‌ওশাদের প্রচন্ড পায়ের ব্যথা বেড়েছে , কনফারেন্সে থাকার সময়‌ই গায়ে জ্বর এসেছে ! অফিসে বসে থাকতে পারছিল না জ্বরের জন্য !
এই মুহূর্তে হেরার গান শুনে ওর অদ্ভুত লাগছে ! কারণ এই গান টা গীতি গাইতো প্রায় সময় ! এভাবে সুর ফিরে আসবে ওর জীবনে সে কখনো ভাবেনি !
অনেক কষ্ট করে রেলিং ধরে ধরে উপরে উঠে এলো সে !
ওকে দেখে আনারের মা দৌড়ে বের হয়ে এলো!
স্যার শরীর কি বেশি খারাপ ?
না ঠিক আছি তুমি চা নিয়ে আসো কড়া করে মাথা খুব ধরেছে আমার!
জ্বি স্যার !
ন‌ওশাদ নিজের রুমে ঢুকে গেল !
আনারের মা দৌড়ে হেরার রুমে গিয়ে ঢুকলো !
আম্মা স্যার আসছে মনে হচ্ছে শরীর খুব খারাপ !
কোথায় বলে হেরা চমকে উঠলো?
নিজের ঘরে গেছে !
হেরা ন‌ওশাদের রুমে ছুটে গেল !
হেরা কে দেখে ন‌ওশাদ হেসে দিল ! আনারের মা তোমাকে গিয়ে বলে আসছে তাই না !
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক অসুস্থ!
পায়ের ব্যথা বেশি বেড়েছে ?
হুম সঙ্গে জ্বর ! ব্যথা বেশি বাড়লে জ্বরটা আসে, দেখো কালকেই চলে যাবে ! ন‌ওশাদ শুয়ে থেকেই বলল!
হেরা কাছে এসে ন‌ওশাদের কপালে হাত দিল , অনেক জ্বর তো !
প্যারাসিটামল খেয়েছি ! রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে!
হেরা বলল,আমি যদি এখানে বসে থাকি বিরক্ত হবেন না তো ?
না বিরক্ত হবো কেন ? বসো এখানে !
হেরা তোমার গানের গলা তো খুব চমৎকার ! আমি কিন্তু আজ‌ও তোমার গান শুনেছি ! একটা কথা বলব এই গানটা গীতির খুব প্রিয় ছিল ! আমাকে সময় করে একদিন শোনাবে গানটা ?
হেরা লজ্জা পাচ্ছে তাও বলল ঠিক আছে!

দুই দিন ন‌ওশাদ পা নিচে নামাতেই পারেনি ! জ্বর টাও যাওয়া আসার মধ্যে আছে। হেরা ঘুমানো ছাড়া সারাক্ষণ ওর পাশে বসে থাকে! কপালে জলপট্টি ও দিয়ে দিয়েছে ! ন‌ওশাদ মনে মনে শুধু ভাবে কেউ কখনো ওর যত্ন নিবে আবার, কয়দিন আগেও কি ভেবেছিল সে ?
হেরা গত দুই দিন সারাক্ষণ ন‌ওশাদের পাশে থাকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছে , ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছে ! ফ্রুটস হাতে তুলে দিচ্ছে ! ন‌ওশাদ এক বেলা না খেয়ে ছিল ওকে এতটুকু মেয়ে রীতিমতো ধমক দিয়ে উঠিয়ে খাবার খেতে বাধ্য করলো ! ন‌ওশাদ তো অবাক ! খুব মজা লাগছে ওর ! খুব জ্বর ছিল যখন একবার তার খুব ইচ্ছা করছিল হেরার হাত ধরে বলতে ,
হেরা আমাকে একটু শাসন করো অনেক বছর আমাকে কেউ শাসন করে না !
তিন দিনের দিন সকালে ন‌ওশাদ নিজের রুমে বসে আছে ! আজ শরীর টা একটু ফ্রেশ লাগছে ওর । রাত থেকে জ্বর নেই। পা টাও নড়াচড়া করতে পারছে কিছুটা !
ব্রেকফাস্ট এর পর হেরার সঙ্গে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছিল । হেরা এলিন আর নাহিনের প্রসঙ্গে গল্প করছে ! ওদের ওর এত ভালো লাগছে কিসের জন্য সেই কথাই বলছে ন‌ওশাদ কে !
হেরা হাত নেড়ে নেড়ে ওদের খুনসুটি গুলো বলছে আর নিজেই হেসে ভেঙ্গে পড়ছে! ন‌ওশাদ গল্পের চেয়ে বেশি হেরার গল্প বলাটা এনজয় করছে!
হঠাৎ ন‌ওশাদ এর মোবাইল এ রিং হচ্ছে। তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার !
ভ্রু কুঁচকে তাকালো ন‌ওশাদ এই নাম্বার কার আবার?
ন‌ওশাদ হ্যালো বলতেই, ওপাশের মানুষ টা বলে উঠলো,
পাপা !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here