তবু_সুর_ফিরে_আসে ৯ম পর্ব

0
190

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৯ম পর্ব

ন‌ওশাদ সন্ধ্যায় ঢাকায় ল্যান্ড করলো।‌শোয়েব অফিসের একটা জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিল তাই রিসিভ করতে আসতে পারেনি । গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার বাহার এসেছে! ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে গাড়িতে উঠতে আরো আধ ঘন্টা সময় লাগলো।
এয়ার পোর্ট রোড দিয়ে গাড়িটা যখন বাসার দিকে ফিরছে আকাশে তখন এই বড় চাঁদ ! ওর মনটা ভালো হয়ে গেল চাঁদ টা দেখে।
হেরা কে নিয়ে ছাদে বসে চাঁদ দেখলে কেমন হবে ? ভাবনা টা মনে আসতেই এত হাসি পেল ওর কি সব ভাবছে সে।
শুধু আজ না গত কয়দিন সে যা কিছু সুন্দর দেখেছে ওর মনে হয়েছে হেরা দেখলে খুব আনন্দ পাবে ! এসব কিছুই তো সে দেখেনি জীবনে !
হেরা ওর কাছে চুড়ি চেয়ে ছিল ! যাওয়ার সময় কাউকে বলে যাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল সে । কিন্তু দোহা এয়ার পোর্টে গোল্ডের দোকান গুলো দেখে ওর মনে পড়ে গেল হেরার চুড়ির কথা। মেয়েটা কাঁচের চুড়ি চেয়েছিল ! ন‌ওশাদ ওর জন্য সোনার চুড়ি এনেছে অনেক গুলো। বিভিন্ন ডিজাইনের । চুড়ি, গলার চেইন, কানের দুল, কসমেটিকস ! বহু বছর পর সে কারো জন্য এত কিছু শপিং করলো। সোফিয়াতে ডলসি এন্ড গাবানার একটা হ্যান্ড ব্যাগ দেখে ওর চোখ আটকে গেল, সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেলল । দাম শুনলে হেরা আঁতকে উঠবে নির্ঘাত! আঁতকে উঠবে কি বেহুঁশ হয়ে যাবে ! থাক সব কিছু শোনার কি দরকার ! মনে মনে হাসছে ন‌ওশাদ। এসব গিফট কিভাবে ওকে দিবে এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে ওর !

গাড়ি থামতেই রিয়াজ দরজা খুলে সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়ালো !
কি অবস্থা রিয়াজ ?
ভালো স্যার!
আব্বার শরীর ঠিক আছে !
জ্বি স্যার !
ড্রয়িং রুমে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে আনারের মা এসে সামনে দাঁড়ালো!
ন‌ওশাদ মনে মনে একটু আশা করেছিল হেরা ওর আসার খবর শুনে সামনে আসবে!
চোখ তুলে আশেপাশ টা দেখছে যখন আনারের মা বলে উঠলো,
স্যার নতুন আম্মা নিজের ঘরে !
ও আচ্ছা ! আমি রুমে যাচ্ছি কফি পাঠাও আমার জন্য !
সিঁড়ির কাছে যেতেই আনারের মা পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
স্যার !
কিছু বলবে ? ন‌ওশাদ পেছন ফিরে তাকালো !
নতুন আম্মার শরীর খুব খারাপ ডাক্তারের কাছে নেয়া দরকার !
কেন , কি হয়েছে ?
আম্মার শ্বাস টানের সমস্যা আছে বাড়ছে খুব!
মানে ?
শ্বাস কষ্ট, খুব ঠান্ডা লাগছে স্যার দম ফেলতে পারে না ! আর কাশতে কাশতে জীবন শেষ! কয়েক রাত ঘুমায় নাই!
কি বলছো এসব কবে থেকে ?
আপনে যাওয়ার দুই দিন পর ! খুব বাড়াবাড়ি স্যার!
কোথায় এখন ? বলেই ন‌ওশাদ দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো! পিছনে পিছনে আনারের মা ও উপরে উঠলো!
গেস্ট রুমের দরজার সামনে এসে ন‌ওশাদ দুই সেকেন্ড থমকে দাঁড়ালো , তারপর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো !
আনারের মা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, সে বুঝতে পারছে না সে ভেতরে ঢুকবে কিনা !
ন‌ওশাদ রুমে ঢুকে দেখে হেরা ঘুমাচ্ছে! হালকা গোলাপি রঙের একটা চাদরের উপর সাদা একটা নকশী কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে পাশ ফিরে । কাছে যেতেই মুখটা দেখলো ফর্সা মুখটা কেমন ফেকাসে লাগছে ! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ঘুমের মধ্যে !
ন‌ওশাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল !
হেরা ! হেরা !
গভীর ঘুমে হেরা ! কোন সাড়াশব্দ নেই!
ন‌ওশাদ আনারের মায়ের দিকে তাকালো ! এত খারাপ অবস্থা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি কেন?
আম্মা বলল ঠিক হয়ে যাবে ! এমন নাকি হয় উনার !
শোয়েব কে বলো নি ?
বলছিলাম সকালে কিন্তু উনি জলদি জলদি অফিস গেল গা !
বাসায় এত গুলো মানুষ মিলে একজনের খেয়াল রাখতে পারলে না ? আমি বারবার বলে গেলাম ওর যেন কোন সমস্যা না হয় !
ন‌ওশাদ আবার হেরাকে ডাকলো ! হেরা !
সারারাত ঘুমায় নাই স্যার! আমি ডাকতাম ?
হাত তুলে ন‌ওশাদ না করলো আমি দেখছি বলে আনারের মায়ের দিকে তাকাতেই আনারের মা ঘর থেকে বের হয়ে গেল !
ন‌ওশাদ ঝুঁকে হেরা কে আবার ডাকলো এবার ওর হাত টা ধরে একটু ঝাকুনি দিতেই হেরা চোখ খুলে তাকালো !
ন‌ওশাদ কে দেখেই হেরা চমকে উঠলো ! উঠে বসে পাশে রাখা ওড়না টা দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ফেলল!
এ কি অবস্থা তোমার ?
আপনি কখন আসলেন ?
এই তো কিছুক্ষণ আগে ! কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার শরীর খুব খারাপ ! চোখ লাল হয়ে আছে!
আমার একটু এজমার সমস্যা আছে ওটাই বেড়ে গেছে ! ঠিক হয়ে যাবে ! হেরা কাশতে কাশতে বলল!
তুমি ডাক্তারের কাছে যাওনি কেন ? আনারের মা বলল তুমি কোন ওষুধ খাওনি ! আমি সবাইকে বলে গেলাম তোমার খেয়াল রাখার জন্য ! ন‌ওশাদ হেরার পাশে বিছানায় বসলো ! হেরা লজ্জায় একটু গুটিয়ে গেল !
তোমার কি এখনো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে ?
হুম, রাত হলেই বাড়ে ঠিক হয়ে যাবে একটা ইনহেলার হলেই ভালো হয়ে যাব!
তুমি বললেই তো হবে না ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে ! আচ্ছা কবে থেকে তোমার এই এজমা ?
স্কুলে যখন পড়তাম তখন থেকে ! একটু ঠান্ডা লেগে গেলে কষ্ট হয়!
ভালো করে ডাক্তার দেখিয়েছো কখনো ?
নানা ভাই একবার একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল তিনি ইনহেলার দিয়েছিল ! কথা বলেই হেরা ওড়না মুখের সামনে চেপে কাশতে শুরু করলো ! কোন কথাই আর বলতে পারছে না !
অবস্থা তো তোমার খুব খারাপ ! বুকে কফ জমে গেছে!
ন‌ওশাদ উঠে দাঁড়ালো! তারপর মোবাইল বের করে ছোট ভাই ফারহান কে ফোন দিল !
: হ্যালো ফারহান !
: কেমন আছো ভাইয়া ? কখন আসছো তুমি?
: আমি ভালো আছি , এই তো এলাম ! আচ্ছা এজমার সমস্যা নিয়ে কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, তোর পরিচিত কেউ আছে ?
: আছে কার সমস্যা ভাইয়া ? আমি সিরিয়াল দিয়ে রাখব ?
: সিরিয়াল না আজ এক্ষুনি লাগবে আমার !
: ঠিক আছে আমি কথা বলে জানাচ্ছি তোমাকে , কিন্তু সমস্যা টা কার ?
: হেরার !
: ও আচ্ছা ভাবির !
: হ্যাঁ ! এক্ষুনি আমার ডাক্তার লাগবে ফারহান আজ চারদিন তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছে কোন ওষুধ খায়নি। আমি এসে দেখি দম ফেলতে পারছে না !
: আশ্চর্য আমাকেও তো তোমার বাসা থেকে কেউ কিছু বলেনি!
: শোয়েব ও জানে না আমি এসে দেখি অবস্থা খারাপ!
: তুমি অস্থির হয়ো না ভাইয়া আমি তোমাকে দুই মিনিটের মধ্যে ফোন দিচ্ছি!
ফোন রেখে ন‌ওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে বড় বড় চোখ করে !
এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো ?
কিছু না , এত অস্থির হবেন না প্লিজ আদা চা খেলেই কাশি ঠিক হয়ে যায় আমার!
তাই যদি হতো তুমি নিশ্চয়ই আদা চা খাচ্ছিলে এই কদিন ,এতক্ষনে ঠিক হয়ে যেতো ?
যাও রেডি হ‌ও আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি !
আপনি এত দূর থেকে কষ্ট করে আসলেন আজ ! পরে গেলেও হতো আমার !
হেরা আমি হেঁটে আসিনি প্লেনে এসেছি , এমন কোন কষ্ট হয়নি। তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া টা জরুরি এখন ! তুমি তো কথাই বলতে পারছো না ! যাও রেডি হ‌ও, আমি আসছি বলে ন‌ওশাদ রুম থেকে বের হয়ে গেল!

হেরার একটা ভালো লাগা অনুভূতি হচ্ছে ! তার জন্য মানুষ টা ব্যস্ত হয়ে গেছে! এভাবে তার অসুখে নানা ছাড়া কেউ ব্যস্ত হয়নি কখনো! কত সে এরকম শ্বাস কষ্ট নিয়ে বাড়ির বড় বড় চাদর, কাঁথা ধুয়েছে, ঘর মুছেছে ! মামিরা বিন্দু মাত্র সহানুভূতি দেখায়নি ! হেরার চোখে পানি চলে আসলো!
আনারের মা দরজায় এসে দাঁড়ালো!
আম্মা উঠেন ভাউ হন !
কি বললে?
কাপড় পড়েন যান , ডাক্তারের কাছে যাবেন না !
হুম যাচ্ছি !
হেরা সুমনার কিনে দেয়া একটা বেগুনি রঙের থ্রি পিস পড়লো ! চুল আঁচড়ে একটা বেনী করলো ! কি মনে করে চোখে একটু কাজল লাগালো ! এই প্রথম সে ন‌ওশাদের সঙ্গে বের হচ্ছে , হোক ডাক্তারের কাছে তবুও তো মানুষ টার সঙ্গে যাচ্ছে সে !
আজ ওর পাশে বিছানায় যখন বসলো মানুষ টা তখন তার কেমন যেন লাগছিল ! মনে হচ্ছিল মানুষ টা বসে থাকুক আর একটু ওর কাছে !
নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল হেরা !
আম্মা আয়নার সামনে দাঁড়ায় হাসেন কেন ? আনারের মা তাকিয়ে আছে ওর দিকে!
কিছু না এমনি !
আপনার শরীর খারাপ তাও জামাটা পড়াতেই কি সুন্দর লাগতাছে আম্মা ! এরকম সাজগোজ ক‌ইরা থাকবেন সব সময় , নতুন ব‌উ মানুষ আপনে সাজলে কত ভালা লাগে দেখতে! শাড়ি পড়লে আপনারে না জানি কত সুন্দর লাগব ! শাড়ি পড়তে পারেন না আম্মা ?
তোমার স্যার কোথায়?
নিজের রুমে , যান আপনে !
না থাক এখানেই থাকি ! খুব হাঁচি হচ্ছে! উনার সামনে হাঁচি কাশি দিতে আমার ভালো লাগছে না!
আপনার কষ্ট দেইখা আমার ই কষ্ট হ‌ইতাছে আম্মা! যান ডাক্তারের কাছে দেখবেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হ‌ইয়া যাইবেন !

হেরা কে নিয়ে ন‌ওশাদ ওর ডাক্তার ছোট ভাইয়ের পরিচিত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেল ! ডাক্তার এক্সরে করাতে দিলেন ! নেবুলাইজ করলো ! সব কিছু ন‌ওশাদ পাশে থেকে করালো ! হেরার কেন জানি ন‌ওশাদের পাশে থাকাটা খুব ভালো লাগছে ! ওর কাছে মনে হচ্ছে ওর শ্বাস কষ্ট ন‌ওশাদ কে দেখে কমে গেছে! ওর ওষুধ লাগবে না ন‌ওশাদ পাশে থাকলেই ও ভালো হয়ে যাবে! ডাক্তার এক গাদা ওষুধ দিল ! জোড় দিয়ে বলল, কোন ভাবেই ঠান্ডা না লাগাতে ! ন‌ওশাদ নেবুলাইজার মেশিন কিনে নিয়ে এলো !
আসার সময় গাড়িতে উঠে ন‌ওশাদ বলল, প্রথম দিন ঠাণ্ডা লাগতেই ওষুধ খেলে এত কষ্ট হতো না ! আমার‌ই ভুল হয়েছে , তোমার গলা বসে গিয়েছিল দেখে তখনই ওষুধ এনে দেয়া উচিত ছিল! এখন থেকে ঠান্ডা লাগার কোন কাজ করবে না! এসি খারাপ লাগলে বন্ধ করে দিবে!
আমি এসি দেই নাই কিন্তু রাতে অটোমেটিক দেখি এসি অন হয়ে ছিল !
অটোমেটিক তো এসি অন হয় না এসি কেউ না কেউ অন করেছে ! যাই হোক খুব সাবধানে থাকবে ! এই যে দম ফেলতে পারছো না আমার‌ই দেখে খারাপ লাগছে!
আপনাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম !
ঝামেলার কথা না আমিও অসুস্থ হয়ে যাই নিয়মের বাহিরে চললেই ! যাদের এমন অসুস্থতা থাকে যে নিয়মের বাহিরে গেলে অসুস্থ হয়ে যায় তাদের খুব সতর্ক থাকতে হয় বুঝলে!
আপনি অসুস্থ হয়ে যান, কি হয় আপনার ?
আমার রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে পায়ের জয়েন্ট এ খুব ব্যাথা হয় আমি একদম বিছানা বন্দী হয়ে পড়ি !
খুব কষ্ট হয় ?
হুম খুব কষ্ট হয় ! হাঁটতে পারি না !

শোয়েব বাসায় এসে সব শুনেছে! আনারের মায়ের উপর তার এত রাগ হলো !
আনারের মা তুমি চারদিন ধরে উনি অসুস্থ আর আজ সকালে বললে আমাকে ! তাও কি বললে , উনার ঠান্ডা লেগেছে!
তাইতো ঠান্ডা লাগছে দেইখাই তো এত কষ্ট হচ্ছিল !
আরে বোকা মেয়ে মানুষ শ্বাস কষ্ট হচ্ছে এটা বললে না কেন ?
আপনার ফোন আইসা গেল তাই তো আর কিছুই বলতে পারলাম না ! আপনেও অফিস গেলেন গা !
ফোন দিয়ে বলতা ? এখন মামা কি ভাববে আমি একজন মানুষের খেয়াল রাখতে পারলাম না ! আর একটা কথা যুথী খালামনি এসে উনাকে এত কথা শুনিয়ে গেল সেটাও তো বলোনি ?
লাভ কি হ‌ইতো , উনারা দুই বোন তো এমনই !
তোমাকে লাভ লোকসান চিন্তা করতে হবে না আনারের মা ! রিয়াজ ভাই না বললে তো জানতাম ই না এই ঘটনা ! আমাকে সব কিছু মামাকে বলতে হবে কারণ দ্বায়িত্ব মামা আমাকে দিয়ে গিয়েছিল!
শোয়েব যখন আনারের মায়ের সঙ্গে কথা বলছে তখনই ন‌ওশাদ আর হেরা বাসায় এসে পৌঁছালো !
শোয়েব ছুটে এলো ওদের কাছে!
ন‌ওশাদ কে দেখেই বলল,
সরি মামা আমি জানতাম ই না মামির এত শরীর খারাপ ছিল!
ন‌ওশাদ শুধু শোয়েব এর দিকে তাকিয়ে হাসলো !
আনারের মা , পারুল কেউ বলেই নাই আমাকে উনার শরীরের এই অবস্থা ! আজকে সকালে বলল, ঠান্ডা লেগেছে ! আমি ভেবেছি নরমাল ঠান্ডা ! সরি মামা !
ইটস ওকে , ব্যাপার না !
ডাক্তার কি বলেছে ?
ওষুধ দিয়েছে নবুলাইজ করতে হবে দিনে তিন বার !
হেরা ন‌ওশাদ এর দিকে তাকিয়ে বলল , আমি উপরে যাই?
যাও আমি আসছি !
হেরা চলে যাওয়ার পর শোয়েব আবারও ন‌ওশাদ কে সরি বলল!
ঠিক আছে এত বার সরি বলতে হবে না !
মামা আর একটা ঘটনা ঘটেছে !
ন‌ওশাদ শোয়েব এর দিকে তাকালো , কি ?
দুই দিন আগে যুথী খালামনি এসেছিল !
হুম, তারপর !
মামিকে ডেকে অনেক কথা শুনিয়েছেন !
ন‌ওশাদ শোয়েব এর দিকে তাকিয়ে আছে , তুমি ছিলে তখন বাসায় ?
না মামা ! এটাও ওরা আমাকে বলেনি , আজ রিয়াজ ভাই বলল !
ঠিক আছে মনে হয় সময় এসেছে সবার সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ! বুঝলাম না শোয়েব , ন‌ওশাদ আজমী যখন একটা ডিসিশন নিয়েছে সবার এত মাথাব্যথা কিসের ? লাইফ টা তো আমার নাকি ! আমি ঠিক করব আমি জীবনে একা থাকব নাকি সঙ্গী খুঁজে নিব ! কখন, কাকে নিব তাও আমি ডিসাইড করব !
কারো কিছু বলার থাকলে আমাকে এসে বলুক, হেরাকে বলার কি হলো ?
শোয়েব চুপ করে শুনছে শুধু!
নওশাদ দোতলার দিকে আসতে নিলো শোয়েব ডাক দিল, মামা !
আর কিছু বলবে ?
বড় দুলাভাই এর প্রোমোশন হয়েছে ! এসপি হয়েছেন !
আঁখি র হাজব্যান্ড ? গুড !
মামা পোস্টিং হয়েছে সেই উত্তরবঙ্গের একটা জেলায় !
সমস্যা কি ভালো তো ! একটা জেলার এসপির কত পাওয়ার থাকে !
মামা আমার ভাগ্নি দুইটা ঢাকায় প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে আপা দুলাভাই ওখানে চলে গেলে এরা থাকবে কোথায়, আমাদের বাসা তো সেই দূরে ! বসুন্ধরা এলাকায় ওদের ভার্সিটি প্রতিদিন আসাও ঝামেলা! আর আমাদের বাসার পরিস্থিতি তো জানেনই পড়াশোনা র কোন পরিবেশ নেই !
কি চায় আঁখি ?
আপনি যদি হোম মিনিস্টার কে বলে ঢাকায় পোস্টিং করে দিতেন! দুলাভাই তো ওখানে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে ! আপা মেয়ে দুইটার জন্য যেতে চাইছে না !
ন‌ওশাদ বলল, শোয়েব প্রোমোশন পোস্টিং ফিরানো উচিত হবে না বুঝে দেখিও ! আমি মিনিস্টার কে বলে ঢাকায় রেখে দিতে পারি কিন্তু সব চাকরির একটা নিয়ম, সৌন্দর্য আছে !
মেয়ে দুইটার জন্য চিন্তা করছে আপা ! আমাদের জয়েন ফ্যামিলি পড়াশোনা পরিবেশ নেই আর সেই পুরান ঢাকা থেকে প্রতিদিন বসুন্ধরায় আসা যাওয়াও ঝামেলা!
ন‌ওশাদ কিছুক্ষণ চিন্তা করলো তারপর বলল, এক কাজ করা যায় এই বাড়িতে থাকুক আঁখির মেয়েরা। এত বড় বাড়ি খালি পড়ে আছে! আর ছয় সাত মাস পর না হয় মিনিস্টার কে বলে জামাই কে ঢাকায় নিয়ে আসলাম!
মামা দুলাভাইয়ের তো কোন সমস্যা নেই আপাই বেশি মেয়েদের জন্য অস্থির হচ্ছে!
তুমি বলে দেখো মেয়েরা এখানে থাকলে কোন সমস্যা হবে কিনা ?
সমস্যা কিসের মামা ? এই বাসা থেকে ওদের ভার্সিটি কত কাছে !
সেটাই ড্রাইভার দিয়ে আসলো , নিয়ে আসলো প্রতিদিন ! আমি চিন্তা করেছি হেরাকেও ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিব। ও দুজন সঙ্গী পাবে ! সমবয়সী দুজন থাকলে হেরার ভালো লাগবে!
সেটাই মামা !
তুমি কথা বলে দেখো আঁখি আর ওর হাজব্যান্ড কি বলে ?
জ্বি মামা!

ন‌ওশাদ উপরে উঠে এলো! হেরার ঘরের দরজায় নক করতেই আনারের মা দরজা খুলে দিয়ে ,
ন‌ওশাদ কে দেখেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল সে !
হেরা ঘরের মাঝখানে দাড়িয়ে ছিল।
ন‌ওশাদ ঘরে ঢুকলো ! তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিল হেরা !
জ্বি!
যুথী তোমাকে কি বলেছে ?
হেরা কি বলবে বুঝতে পারছে না ! ওর ওসব কথা বলতে ইচ্ছে করছে না !
ন‌ওশাদ বিছানায় বসলো ! বলো কি বলেছে ?
তেমন কিছু না !
হেরা তোমাকে বলেছি না আমার কাছে বলবে সব কিছু !
হেরা যেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে রইল !
বলো ?
উনি জানতে চাইছিলেন আপনার সঙ্গে কিভাবে পরিচয় , বিয়েটা কিভাবে হলো ?
আর ?
এই টুকুই !
ন‌ওশাদ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল হেরার দিকে ! হেরা আমি ওদের চিনি অনেক বছর ! দুই বোন যথেষ্ট মেজাজি ! কি বলতে পারে বুঝেছি ! আমি তোমার কাছে সরি বলছি যদি ওরা তোমাকে আঘাত করে থাকে অপমান করে থাকে ! নেক্সট টাইম এরকম কেউ এই বাড়ি বয়ে এসে তোমাকে অপমান করবে না কথা দিচ্ছি !
ন‌ওশাদ এর কথা শুনে হেরার চোখে পানি চলে আসলো !
তুমি কেঁদো না ! আমাদের বিয়ের দায় আমার, তোমার কাছে কেন কেউ কৈফিয়ত চাইবে ?
হেরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল , আমাকে কথা শোনানোর জন্য আমি কাঁদছি না ! জীবনে আমি অনেক খারাপ কথা , গালিগালাজ শুনেছি পৃথিবীতে কেউ আমার কাছে এভাবে সহানুভূতি দিয়ে কথা বলেনি ! আপনি প্রথম কেউ এতটা সন্মান দিচ্ছেন!
কারো খারাপ ব্যবহার এখন আমাকে আর কষ্ট দেয় না কিন্তু ইদানিং আপনার কাছ থেকে পাওয়া এত সুন্দর ব্যবহার, সন্মান আমাকে অবাক করে ! আমি কি সত্যিই এসব পাওয়ার যোগ্য? এই সব কিছু কি সত্যি আমার সঙ্গে ঘটছে ! আমি তো সারাজীবন শুধু মানুষের কটু কথা ই শুনে এলাম ! আপনি দয়া করে আমার জন্য কাউকে কিছু বলবেন না ! একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ! উনারা সত্যি ই তেমন কোন খারাপ ব্যবহার করেননি ! এটা তো সত্যি এই সংসার উনার বোনের আমি হঠাৎ অযাচিত প্রবেশ করেছি ! উনারা কষ্ট পাচ্ছেন এটাই স্বাভাবিক ! এত দিন আপনি উনাদের আপন মানুষ ছিলেন। আমাকে কাউকে না বলে বিয়ে করে ফেলাতে উনারা ধাক্কা খেয়েছেন ! উনাদের ব্যাপার টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে !
হেরা , তুমি এত কিছু বুঝো ?
আমি খুব অবাক হচ্ছি ! আমার কাছে তোমাকে নিতান্তই বাচ্চা মনে হয় কিন্তু তুমি তো দেখি অনেক বুঝদার মেয়ে! ন‌ওশাদ এর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল! শোয়েব এর কাছ থেকে যুথীর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল!
হেরা হেসে দিল আমি হয়তো জীবনের অনেক পরিস্থিতি র সম্মুখীন হয়েছি বলেই বয়সের তুলনায় বেশি বুঝদার হয়েছি ! হতে হয়েছে আমাকে !
কথা শেষ করতে পারলো না হেরা ওর খুব কাশি শুরু হয়ে গেল !
দাঁড়াও তোমাকে আবার নেবুলাইজ করা দরকার ! বলেই ন‌ওশাদ মেশিন বের করলো নিজেই তারপর যেভাবে শিখে এসেছে সেই মোতাবেক সব মেডিসিন দিয়ে নেবুলাইজার মেশিন অন করলো নিজে হাতে হেরাকে মাস্ক পড়িয়ে দিল !
হেরা মুখে মাস্ক টা লাগিয়ে দিল ন‌ওশাদ । ঘোমটা দেয়া দেখে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো মাস্ক টা পড়াতে! হেরা ঘোমটা খোলা, আমার সামনে এত বড় ঘোমটা টেনে থাকো কেন?
তোমার মুখটাই ভালো করে দেখতে পারি না ! হেরা লজ্জা পেলেও মাথার ঘোমটা টা খুলে ফেলল! ন‌ওশাদ কথাটা বলেই চিন্তা করছে এই কথাটা বলা ঠিক হয়নি হেরা লজ্জা পাচ্ছে !
মুখে মাস্ক লাগিয়ে সে ন‌ওশাদ কে দেখছে। ন‌ওশাদ এর চোখে চোখ পড়তেই ওর বুকের ভেতরে এক অন্য রকম কাঁপুনি অনুভব করছে ! তার বাইশ বছরের জীবনে এরকম ভাবে কখনো বুকের মাঝে ধুকপুক করেনি ! মানুষ টা ওর একটু কাছে আসতেই ওর হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে ! কেমন জানি গা শিউরে উঠছে! ওর হৃদপিন্ডটা এত লাফাচ্ছে মনে হচ্ছে আশেপাশে সবাই ওর বুকের ভেতরে র শব্দ শুনতে পাবে, এর নাম কি ? এই ব্যাপারটাই কি ভালোবাসা ?
হেরার গা কাঁটা দিয়ে উঠলো ! কি যেন একটা গলার কাছে চেপে ধরলো !
হেরা চোখ বন্ধ করে ফেলল !
ঠিক আছে হেরা সমস্যা হচ্ছে না তো ? ন‌ওশাদ প্রশ্ন করলো!
হেরা শুধু চোখের পলক ফেলল ! ওর দাঁতের সঙ্গে দাঁত লেগে যাচ্ছে ! মনে হচ্ছে আর একটু সময় এভাবে ন‌ওশাদ ওর পাশে বসে থাকলে ও বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে!
হেরা বুঝতে পারেনি,এই মাত্র হ্যাঁ এই মাত্র‌ই সে ন‌ওশাদ আজমী র প্রেমে পড়ে গেল !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here