#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২২
#তানিশা সুলতানা
ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ধৈর্য ধরতে হয়। হুট করে কারো থেকে ভালোবাসা পেয়ে গেলে আবার হুট করেই সেই ভালোবাসা হারিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে মনের মিল হয়ে ভালোবাসার সৃষ্টি হলে সেই ভালোবাসা সহজে হারাবে না। বরং সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার ধরণটাও বেড়ে যাবে।
ছোঁয়া কখনোই জানতো না সাদির জীবনে কোনো নারী ছিলো। সাদিও কোনো নারীর প্রতি দুর্বল ছিলো। নারীটিকে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছিলো। সুখে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলো।
আজকে মুভি দেখার মাঝে হুট করে মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছে ইরা। ছোঁয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে ইরাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পুরোটা শুনেছে। তাদের প্রণয়, বিচ্ছেদ এবং নারীটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টাও।
নতুন কলেজে পা দিয়েছিলো সবে সাদি। মিশতো না কারো সাথে কথা বলতো না চুপচাপ ক্লাসের এক কোণে বসে থাকতো। ব্রেক টাইমেও একা একা থাকতো।
মিহি খেয়াল করতো সাদিকে। বলা বাহুল্য সে সাদির ওপর ক্রাশ খায়। ভাব জমাতে ছুঁটে যায় সাদির কাছে। সাদি ইনগোর করতো। কিন্তু মিহি দমে যেতো না। সারাক্ষণ সাদির পেছনে লেগে থাকতো।
ইরা আর সামির সাদিকে আগে থেকেই চিনতো। তারা ছোট থেকে একই স্কুলে পড়তো। কিন্তু সেভাবে সাদির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে উঠতো না। ওই একটু হাই হ্যালো এই টুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো তাদের পরিচয়। কিন্তু মিহির সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ইরা সামির সিপন আশিক আর রিমির।
মিহিকে ইনগোর করতে করতে সাদি ক্লান্ত হয়ে মিশতে থাকে। সত্যি বলতে মিহিকেও সাদির ভালো লাগতো। তারপর তাদের কথা বাড়তে থাকে বন্ধুত্ব থেকে প্রণয় হয়।
এইচএসসি পরিক্ষার ঠিক আগের দিন মিহি জানায় তার বিয়ে ঠিক হয়ল গেছে।
সাদি সেদিন এক ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেছিলো। হয়ত চোখের পানি লুকানোর জন্য।
তারপর থেকে সাদি আরও গম্ভীর এবং নিশ্চুপ হয়ে যায়।
ছোঁয়া মনোযোগ দিয়ে সবটুকু শুনে। মিহিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানায়। যাককক ওই মেয়েটা একটা বড়সর উপকার করেছে ছোঁয়ার। ওই ডাইনি সাদির জীবনে থাকলে সাদি কখনোই ছোঁয়াকে বিয়ে করতো না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
মনে মনে কয়েকবার শুকরিয়া আদায় করে ছোঁয়া।
আশিক শিপন আর সামির তিনজনই বেয়ার খেয়ে পড়ে আছে। এতোখন উল্টাপাল্টা বলে চলেছে সবাই কিন্তু এখন নিশ্চুপ হয়ে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। টিভির স্কিনে চলছে ফ্লট মুভির বিশেষ মুহুর্তটা। সাদির সেদিকে ইন্টারেস্টি না থাকলেও একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।
সতালো ভাই বোনের প্রেমকাহিনী দেখে ফোঁস করে শ্বাস টানে সাদি। টিভি বন্ধ করে ফোনটা বন্ধ করে ফেলে। বেয়ারের বোতল গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে এক পাশে রেখে দেয়। তারপর একেকটাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। তিন জনকে একটা খাটে শুয়িয়ে লাইট বন্ধ করে চাদর টেনে দেয় ওদের গায়ে।
তারপর দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়।
রিমি ইরা আর ছোঁয়ার গল্প এখনো শেষ হয় নি। সাদি নক করে ঢুকে ওদের রুমে।
“আমি খাবার রেডি করছি।
বলেই সাদি চলে যায়। ছোঁয়াও সাদির পেছনে দৌড় দেয়।
সাদি কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে নেয়। দুটো ডিম আছে।
ডিম বের করে পেঁয়াজ মরিচ বের করে নেয়।
ছোঁয়া এসে সাদির সামনে বসে পড়ে চুলার পাশে। সাাি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। তারপর নিজের কাজে মন দেয়।
” ফল্ট মুভিটা সুন্দর তাই না?
সাদি গম্ভীর গলায় বলে
“ডিজগাস্টিং
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়।
” করলা কি না আপনি। আপনার কাছে তো এমন লাগবেই। আহহহা কি ভালো হিরোটা। কি সুন্দর। ঠোঁটের পাশের তিলটা উফফফফ ইচ্ছে করছিলো টুপ করে ছুঁয়ে দেই।
সাদি পাত্তা দেয় না। ছোঁয়া আসলে জেলাস করানোর জন্য বলেছিলো ভেবেছিলো এই বুঝি জেলাস হয়ে ছোঁয়াকে একটা ধমক দিয়ে।
মনে মনে হতাশ হয় ছোঁয়া। এই করলা কি না হবে জেলাস?
কপাল কি আর এতোই ভালো?
প্রসঙ্গ বদলে ছোঁয়া বলে ওঠে
“আমি না ফিউচার প্লানিং করে ফেলেছি
এবার সাদি মনোযোগ দেয় ছোঁয়ার দিকে। পেঁয়াজ কাটা হাতটা থামিয়ে দেয়। যেনো ছোঁয়া ইন্টারেস্টিং কিছু বলবে। ইডিয়েটার যেনো এবার একটু সুবুদ্ধি হলো।
ভ্রু কুচকে সাদি বলে
” হোয়াট?
“ভেবেছি বারোটা বেবি নিবো। জমজ কলাও খেয়ে নিয়েছি। বাকিটা আপনি সামলে নিবেন।
লাজুক ভঙ্গিতে বলে ছোঁয়া। সাদি চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে৷ গরু দিয়ে হাল চাষের আশা করেছিলে সে।
” একবার চিন্তা করুন তো বারোটা বাচ্চা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে আমাকে মাম্মাম বলে ডাকছে আপনাকে পাপা বলে ডাকছে। আপনার মাথায় চড়ে নাচছে।
তারপর ইন ফিউচার আমাদের বারো পুত্র বিশ্বকাপ খেলছে আমি আর আপনি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছি
উফফফ ইমাজিন করুন মুহুর্তেটা।
সাদি মাথা নারিয়ে চুলা জ্বালায়। ছোঁয়া এবারও হতাশ। লোকটার কি অনুভূতি নেই? এতো ইন্টারেস্টিং একটা ফিউচার প্লানিং কোথায় বাহবা দিবে তা না মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
বিরবির করে সাদিকে বকা দিতে থাকে ছোঁয়া।
সাদি এবার বলে
“লিসেন
ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় কনসিনক্রিয়েট করো।
” ধুররর পড়ালেখা কে করবে?
দেখুন আপনি কষ্ট করে নকল টকল করে সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। ভালো জব পেয়েছেন। হয়ে গেলো। আমি কেনো কষ্ট করবো? আমি তো আরাম করবো। এখন কলেজে যাচ্ছি আপনাকে দেখার আশায়। আপনার বাসায় আসার জন্য। যখন পার্মানেন্টলি আপনার কাছে চলে আসবো তখন পড়ালেখাকে টাটা বাই বাই বলে দিবো।
সবাই শিক্ষিত হলে অশিক্ষিত কে থাকবে?
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“ইডিয়েট
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সাদির সামনে এসে দাঁড়ায়। লোকটা রেগে গেছে ভালোই জানে ছোঁয়া।
” আপনি পড়াবেন?
আপনি পড়ালে পড়তে পারি।
সাদি ডিম নামিয়ে চুলা বন্ধ করে বলে
“প্রতিদিন সকাল সাতটায় বাসায় চলে আসবে৷
বলেই সে চলে যায়। ছোঁয়া চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।
শেষমেশ এই ছিলো কপালে?
সাতটায় এখানে আসতে গেলে ঘুম থেকে উঠতে হবে সাড়ে ছয়টায়। জীবনে কি এতটুকুও আনন্দ নেই?
মানুষ বিয়ে করে সুখে থাকার জন্য আর ছোঁয়া বিয়ে করলো অসুখে থাকার জন্য।
চলবে