#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৫
#তানিশা সুলতানা
দীর্ঘ এক ঘন্টা ঘ্যান ঘ্যান করার পরে অবশেষে দরজা খুলেছে সাদি। ছোঁয়ার চোখে পানি টলমল করছে। প্রেয়সীর মলিন মুখখানা দেখে বুকটা কেঁপে ওটে সাদমান চৌধুরী। দোষটা তো তার অবুঝ বউয়ের নয়। দোষটা হচ্ছে চরিত্রহীন শশুড়ের। শশুড়কে আচ্ছা করে টাইট দিতে হবে। শুধু শুধু বউটাকে কাঁদালো।
সাদির ইচ্ছে করছিলো বউটাকে বুকের মধ্যে আগলে নিতে। কিন্তু কিন্তু কিন্তু
নরম হওয়া চলবে না।
ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়
“পাষাণ পাষাণ পাষাণ
সাদি জবাব দেয় না। চলে যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে। ঘুমনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বলে শার্ট খুলে ফেলেছে। ফর্সা লোমশ যুক্ত বুক খানা ছোঁয়ার দুর্বলতা। ভালো করেই জানে সাদি।
ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটের ওপর বসে। আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সাদি অবয়ন। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট এবং উদাম বুক। নেশা লেগে যাবে না?
হাত পা বুকে অজস্র লোম। যা ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তাকে বেসামাল করে দিচ্ছে।
বউয়ের মন পড়তে পেরে বাঁকা হাসে সাদি। দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। ছোঁয়ার ওপর পাশে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।
ছোঁয়া মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে। হার্টলেস লোক একটা। একবার বললোও না ” ছোঁয়া আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও”
পাষাণ।
দয়ামায়া নেই একটুও।
কান্না পায় ছোঁয়ার। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারে না। অবাধ্য আঁখি পল্লবের অবাধ্য অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে দুই গাল বেয়ে। নাকে পানি চলে আসে। এই একটা সমস্যা। চোখে পানি আসার আগেই নাকে পানি চলে আসবে।
মাঝেমধ্যে ছোঁয়ার ইচ্ছে করে নাক খানা কেটে ফেলতে। শান্তিতে একটু কান্নাও করতে দেয় না।
পাষাণ লোকটার মতো নাকটাও পাষাণ।
কতোখন ছোঁয়া একই ভাবে বসে ছিলো জানা নেই। কিন্তু যখন কোমরে চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো তখন আর বসে থাকতে পারলো না।
গুটিগুটি পা মেলে শুয়ে পড়ে শখের পুরুষের পাশে। লোকটা ঘাড় ব্যাঁকা করে বুকের ওপর কোলবালিশ দিয়ে আরামসে ঘুমচ্ছে। কি করে আসলো তার ঘুম?
তার বউটা বসে কাঁদছে তাতে তার কিচ্ছু এসে যায় না? ঘুমটাই বড় হয়ে গেলো?
অভিমানে বুক খানা ভাড়ি হয়ে আসে। মনে মনে কঠোর প্রতিজ্ঞা করে ফেলে। লোকটাকে ছুঁয়ে দিবে না। তার পেছনে আর ঘুরবে না। ইগনোর করবে। চরম লেভেলের ইগনোর যাকে বলে।
আবার পরমুহূর্তেই ভাবে। এখন তো সে ঘুমিয়ে আছে। একটুখানি ছুঁয়ে দিলে কি আর হবে? বুকে মাথা রাখলে সে কি টের পাবে? অবশ্যই পাবে না।
আবার না হয় সে জেগে ওঠার আগেই সরে আসবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
আলতো হাতে কোলবালিশ সরিয়ে। মাথাটা রাখে লোমশ যুক্ত বুকখানার ওপরে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
আহহহহহা
এখানে এতো শান্তি কেনো? মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ এখানে এসেই জমা হয়েছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার।
সাদি একটু নরেচরে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বউটাকে।
ছোঁয়া চমকে ওঠে। জেগে গেলো না কি?
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
সাদি চুমু খায় ছোঁয়ার চুলের ভাজে।
ফিসফিস করে বলে ওঠে
“তোমাকে বুকে না নিলে ঘুম হয় না জান।
তার মানে সাহেব ঘুমায় নি? জেগেই ছিলো? মুখ বাঁকায় ছোঁয়া।
বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে নরম গলায় আমতাআমতা করে বলে
” এখন ভালোবাসুন।
“উহু
” কেনো?
“মুড নাই
মুখটা কালো করে ফেলে ছোঁয়া। সরে যেতে চায়। কিন্তু সাদির শক্ত বাঁধন ছাড়িয়ে সরতে পারে না।
” আমাদের ফাস্ট নাইট এভাবে হবে না। একটু স্পেশাল হবে। আফটার অল আব্দুল কুদ্দুস আসার প্রথম ধাপ এগোবো বলে কথা।
লজ্জা পায় ছোঁয়া। লজ্জা মাখা মুখখানা সাদি দেখতে পেলে নিশ্চয় স্পেশাল করার জন্য অপেক্ষা করতো না। এখুনি বাচ্চা বউটাকে ভালোবাসায় মুরিয়ে ফেলতো।
_____
সকাল সকাল সেলিমের হাঁকডাক। কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে শুধু তারই গলা শোনা যাচ্ছে।
সাদির ঘুম ভেঙেছে আরও কিছুখন আগে। বুকের ওপর ঘাপটি মেরে বিড়াল ছানার মতে ঘুমিয়ে আছে অধপাগল বউ। একটু নরাচরা করলেই তার ঘুম ছুটে যাবে। যা সাদি চাইছে না। সারাক্ষণ ছুটোছুটি করতে থাকে। এখন একটু শান্তিতে ঘুমোক না হয়।
কিন্তু জল্লাদ শশুড়ের জন্য কি আর ঘুমতে পারবে?
সাদির ইচ্ছে করছে পুরো এলাকার লেক জড়ো করপ চিৎকার করে বলতে
“শুনুন সকলে আমার শশুড় আমার বউকে আদর করতে দেয় না। আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট করে।
কিন্তু এই কথাখানা বললে কি আর সমাজে মুখ দেখানো যাবো?
অবশ্যই না
হাহহহহ
মানসম্মানের ভয়ে আমরা কতো কিছু করি না।
ছোঁয়ারও ঘুম ছুটে যায়। সে মাথা তুলে ঘুম ঘুম কন্ঠে মুচকি হেসে বলে
” গুড মর্নিং আব্দুল কুদ্দুসের পাপা
সাদির কি হয়ে যায় নিজেও জানে না। একটা সেকেন্ডও নষ্ট করে না।
দুই হাতে আগলে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে নিজের ওষ্ঠদ্বয় বিলিন করে দেয়।
হতদম্ভ ছোঁয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে দেয়।
রাতে এতো খোঁচাখুঁচির পরেও কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো না। আর সেই বরের কি না এখন মধু খাওয়ার সাধ জেগেছে।
সেলিমের আরেকটা চিৎকারে সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ছেড়ে দেয় বউকে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে নেশালো গলায় বলে
“গুড মর্নিং জান
” আই লাভ ইউ
“উমমমমম ভালোবাসি
যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমাকে কলেজে ছেড়ে আমি অফিস যাবো।
চলবে
আমার ফেসবুক আইডির লিংক
https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL
আমার গ্রুপের লিংক
https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link