হৃদয়হরণী #পর্ব:৫১ #তানিশা সুলতানা

0
344

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫১
#তানিশা সুলতানা

গার্লফ্রেন্ড শব্দটাতে রাজিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হয়। কিশোরী বয়স থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছে সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। ছলে বলে কৌশলে কতো বুঝিয়েছে। ঘেসে ঘেসে থেকেছে সেলিম এর আশেপাশে।
কিন্তু আফসোস সেলিম তাকে পাত্তা দেয় নি। তেইশ বছর বয়সেই বিয়ে করে নেয় নাজমাকে। এবং চব্বিশ বছর বয়সেই বাবা হয়ে যায়। রাজিয়া চোখের পানি ফেলেছে অনেক। সেলিম এর বিয়ের দিন খায় নি পর্যন্ত।
কিন্তু তার এই দুঃখের দাম তো সেলিম দেয় নি। বুড়ো বয়সে এসে তবুও তো সেলিমের গার্লফ্রেন্ড উপাধিটা পেলো।
রাজিয়া মনে মনে ভেবে ফেলে সেলিম এর সাথে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিবে। দুটো সেলফি তুলে স্টোরিও দেবে।

সেলিম শুকনো ঢোক গিলে তাকায় এক পলক নাজমার দিকে। আরেক পলক তাকায় সাদির দিকে। শয়তান ছেলের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। সেলিম না মানলেও সাদির হাসিটা তার খুব পছন্দ। ছেলেটা হাসলে খুব সুন্দর লাগে।
ঘন কালো কুচকুচে দাঁড়ির মাঝখানে গোলাপি ওষ্ঠজোড়া সবারই নজর কাড়বে আগে।
ছেলে মানুষের ঠোঁট এতোটা আকর্ষণীয় হয় জানা ছিলো না সেলিম এর।

নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত সেলিম৷ মেয়ের জামাইয়ের প্রশংসা করছে মনে মনে? বজ্জাত ছেলেটার।

“আব্বা গার্লফ্রেন্ড কেনো বলছিস?

নাজমার কপালের ভাজ চওড়া হয়েছে। রান্না ঘর থেকে সাবিনা ডেকে যাচ্ছে সেদিকে হুশ নেই তার। গার্লফ্রেন্ড এর রহস্য উন্মোচন করে তবেই তিনি সরবে এখান থেকে।
সাদি কিছু বলার আগেই রাজিয়া দু পা এগিয়ে এসে বলে
” আমি সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড। মানে প্রেমিকা।

খুক খুক করে কেশে ওঠে সেলিম। সাজ্জাদ মুখ টিপে হাসছে। সাদির ঠোঁটের কোণেও হাসি। নাজমা রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।
সেলিম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে ওঠে

“ও…… ও আ…..মার জাস্ট ফ্রেন্ড। সেই ছোট বেলায় এক সাথে স্কুলে যেতাম। ওই আর কি

সাদি ফট করে বলে ওঠে
” ছোট বেলার স্মৃতি চারণ করতেই তো ছোট বাবা সেই দিন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো ওনার সাথে রিকশায় বসে পাশাপাশি লান্স করতে।
তাই না শশুড় মশাই

সেলিম কটমট চোখে তাকায় সাদির পানে। সাদি হেসে ফেলে।
নাজমা রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
“প্রেমিককে নিয়ে বেরিয়ে যান। বিয়ে করতে চাইলে বলিয়েন আমি নিজে ডিভোর্স দিয়ে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
এই অকর্মার সাথে আমিও সংসার করতে আগ্রহী নই।

বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। সেলিমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সাজ্জাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। বাড়িতে এবার সাইক্লোন বয়ে যাবে ভালোই আন্দাজ করতে পারছেন তিনি।

রাজিয়া বলে ওঠে
” সেলিম তুমি

সেলিম দুই হাত জোর করে বলে
“এখান থেকে যা বোইন তুই। বুড়ো বয়সে বউ ছাড়া করিস না আমায়।

রাজিয়া আবারও কিছু বলতে চায়। সেলিম বলতে না দিয়ে যেতে বলে। বেচারা চলে যায়। সেলিম সাদির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। লম্বায় সেলিম কিছুটা বেটে।
সাদি বুকে হাত দিয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়ায়।
” রিভেঞ্জ নিলাম শশুড় মশাই। আমার পেছনে লাগতে আসলে একদম ডিভোর্স করিয়ে শাশুড়ী মাকে আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। দেখতে তো এখনো মাশাআল্লাহ। তোমার মতো বুড়োর সাথে মানায় না তাকে।
নিশ্চয় শাশুড়ী মাকে পটানোর আগে সার্টিফিকেট দেখিয়ে নানাকে পটিয়ে ফেলেছিলে?

সেলিম এই ছেলেকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু তাকিয়েই আছে।
সাদি কিছু একটা ভেবে বলে
“অবশ্য সার্টিফিকেট তোমার ছিলোও না। ঘুস দিয়ে চাকরি নিয়েছো তো।
একটা কথা ভেবে দেখো
তুমি বত্রিশ বছর বয়সে দুই বাচ্চার বাবা ছিলে। আর আমি বউকে

থেমে যায় সাদি।
সেলিম চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছে। মনে মনে কয়েকবার নিলজ্জ বলে গালিও দিয়ে ফেলেছে সাদিকে। শশুড় মশাইয়ের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?

” তুই বাপ কথা বলিস না। যা তো আমার সামনে থেকে।
সাদি ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ তানিশা সুলতানা চলে যায়। সাজ্জাদ এতোখন দুটোর ফুসুরফুসুর শুনতে পায় নি। অবশ্য কান খাড়া করে ছিলো। তবে কানে পৌঁছায় নি।
সেলিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ এর পাশে এসে বসে।

সাজ্জাদ সরল মনে প্রশ্ন করে
“সাদি কি বললো?

সেলিম জবাব দেয় না। কি করে বলবে তিনি তার নিলজ্জ জামাই তাকে সাবান ছাড়াই ধুঁয়ে দিচ্ছে।

_____

সাদির দেওয়া লকেট ওয়ালা চেইন এখনো গলা থেকে খুলে নি ছোঁয়া।
অসুস্থতা তার কমে নি। শরীরে ব্যাথা গুলো রয়েই গিয়েছে। কেমন ঔষধ খাওয়ালো তাকে যে এখনো ব্যাথা কমছে না?
নিশ্চয় কিপ্টা সাদি কম দামি ঔষধ এনেছিলো। লোকটার কিপ্টামি তানিশা সুলতানা আর শেষ হয় না। ১২ টা বাচ্চা হলে যে কি করবে আল্লাহ জানে?
তাদের খেতেই বোধহয় দিতে চাইবে না।

সিমি ছোঁয়ার পাশে বসে ভাত মাখছে। পরি ছোঁয়ার কোলে বসেছে।

” আচ্ছা আপি বর কয়দিন আদর করলে বেবি আসবে?

ছোঁয়ার এরকম প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে যায় সিমি। ভ্রু কুচকে তাকায়,ছোঁয়ার দিকে। বোনের মুখ দেখে ছোঁয়া ঠিক বুঝতে পারে তার কথার মিনিং তার বোন বুঝতে পারে নি।
“না মানে আমার মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম
তখনই রুমে ঢুকে পড়ে সাদি। সে ছোঁয়ার কথা শুনেছে।
মনে মনে খানিকটা রেগেও গিয়েছে সাদি। ন্যাকামি করারও একটা লিমিট থাকা দরকার। বাচ্চা তো আর না।
আজকে সাদি ছোঁয়ার বাচ্চামি ছোঁটাবে।

চলবে

আমার ফেসবুক আইডির লিংক

https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL

আমার গ্রুপের লিংক

https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here