হৃদয়হরণী #পর্ব:৫৪ #তানিশা

0
367

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৪
#তানিশা সুলতানা

নার্স রাখতে চেয়েছিলো সাদির জন্য বাড়ির লোকজন। কিন্তু ছোঁয়া নাকোজ করে দিয়েছে৷ তার স্বামীর সেবা সে একাই করবে। কোনো নার্সের প্রয়োজন নেই।
ছোঁয়ার মুখের ওপর কেউ কথা বলতে পারে নি।
অগত্য সাদিকে নিয়ে বাড়িতে ফেরা হয়।

হুইল চেয়ার ব্যবহার করে সাদিকে তার জন্য বরাদ্দকৃত রুম ওবদি নিয়ে আসে ছোঁয়া। চোখ মুখের বিষন্নতা তার কমছেই না। দুই গালে এখনো লেগে আছে পানির দাগ। চোখের পাঁপড়ি ভেজা। ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে। হাজারবার সাদি কাঁদতে না করছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বিশালদেহী সাদিকে হুইট চেয়ার হতে বিছানায় বসানো চুনোপুঁটি ছোঁয়ার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।তবুও সে কোমরে ওড়না বেঁধে সাদির ভালো হাতটা কাঁধের ওপর তুলে প্রস্তুতি নিতে থাকে বিছানায় বসানোর। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে

“তুমি একা পারবে না। ভাইয়াকে ডাকো।

ছোঁয়া নাক টেনে জবাব দেয়
” আমি একাই পারবো। তাদের প্রয়োজন নেই।

অগত্য সাদি বুঝে ফেলে তার বউয়ের জেদ। তাই সে নিজেই ছোঁয়ার ওপর অল্প বল প্রয়োগ করে উঠে দাঁড়ায় এবং বিছানায় বসে৷ এই টুকুতেই হাঁপিয়ে উঠেছে সাদি। পায়ের ব্যাথা তীব্র। আজকেই ছাড়তো না হাসপাতাল থেকে। কিন্তু সাদি থাকবে না। তার দুটো কারণ।
এক হাসপাতালের এই ফিনাইলের গন্ধ তার পছন্দ না। দুই সে যতখন হাসপাতালে থাকবে তার মা এবং বউ কাঁদতে কাঁদতে আধমরা হয়ে যাবে।

ছোঁয়া সাদির পাশে বসে হাঁপাতে থাকে। তারও বেশ ধকল গেছে।
“দেখলেন পারলাম। সব সময় দুর্বল ভাবেন আমায়।

সাদি আলতো হাসে।মেয়েটা সত্যিই আর বড় হলো না।

” বসুন এখানে। আমি পানি নিয়ে আসছি। গা মুছিয়ে দিবো।
সাদি বাঁধা দেয় না। ছোঁয়া ওড়না খানা খাটে রেখে চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। বেশি সময় না নিয়ে জলদি বালতি ভর্তি পানি নিয়ে বেরিয়ে আসে। আলমারি থেকে সুঁতি একখানা ওড়না বের করে বালতিতে চুবিয়ে তা থেকে পানি ঝেড়ে আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে সাদির হাত পা মুখ বুকসহ যেখানে যেখানে রক্ত লেগে আছে সব জায়গায়। এতোটাই আলতো করে মুছে দিচ্ছে যে মনে হচ্ছে যেনো সাদি ব্যাথা না পায়।

সাদি দেখতে থাকে তার বউকে। বউয়ের এই রূপ আগে কখনো দেখা হয় নি। এই অবুঝ নারী এতোটাও যত্নশীল? কোথায় লুকিয়ে ছিলো তার এই হৃদয় কাঁপানে রূপ?

কাবাড খুলে একটা শার্ট এনে তা সাদিকে পড়িতে যেতে নেয় ছোঁয়া। একটা হাত অনায়াসে ঢুকাতে পারলেও অন্য হাত ঢুকাতে পারে না ব্যান্ডেজ করা। শেষমেশ হাতের ওপর নিয়ে শার্ট এনে বোতাম লাগিয়ে দেয়।
এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে চুমু খায় কপালে। সাদির দুই গাল হাত রেখে সুধায়

“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?

সাদি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।

” ভাবছি

“কি?

” আমার আধপাগল বউ বড় হয়ে গিয়েছে। এবার কুদ্দুসকে আনাই যায়।

ছোঁয়া মুচকি হাসে। সাদি হতাশ হয়। ভেবেছিলো ছোঁয়া লাফিয়ে উঠবে। সাদির গলা জড়িয়ে ধরবে। এখুনি বায়না ধরবে। এটা সেটা বলে বকবক শুরু করে দিবে। কিন্তু এসব কিছুই হলো না। আধপাগল কি একটা এক্সিডেন্ট এ বড় হয়ে গেলো?

ছোঁয়া সাদির পায়ের কাছে বসে পড়ে। ব্যান্ডেজ করা পায়ে চুমু খায়।

“আমার কিচ্ছু চাই না। আপনি সুস্থ থাকুন। এতেই আমি খুশি। কুদ্দুস কুদ্দুসী দিয়া এদের কাউকেই লাগবে না আমার।

তখনই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সাবিনা বেগম এবং সিমি। সাবিনার হাতে ভাতের থালা। চোখে তার অশ্রু টলমল করছে। সিমির হাতে ঔষধের প্যাকেট এবং পানির গ্লাস।
” আব্বা খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।

বলতে বলতে বসে সাদির পাশে। ভাতের থালা নামিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুখে। ছোঁয়া সাদির আরেক পাশে বসে।
“আম্মু কাঁদছো কেনো? ঠিক আছি আমি।

নাক টেনে সাবিনা জবাব দেয়
” আর কাঁদবো না আব্বা। খেয়ে নে।

ভাত মাখতে থাকে তিনি। লোকমা বানিয়ে সাদির মুখের সামনে ধরে। কোনো বায়না ছাড়া খেয়ে নেয় সাদি।
“কি থেকে কি হয়ে গেলো আব্বা? ভালো ছেলে বাড়ি থেকে বের হলি আর
আবারও কেঁদে ওঠে সাবিনা। ছোঁয়াও ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে। যাতে তার কান্নায় শব্দ না হয়।

” মা কাঁদছেন কেনো? আপনি কাঁদলে ভাইয়া খাবে কিভাবে? বুঝুন একটু।

সাবিনা আবারও চোখের পানু মুছে নেয়। সাদি মায়ের হাত খানা মুঠোয় পুরে নেয়।
“শুকরিয়া আদায় করো না আম্মু৷ আল্লাহ তো আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। যদি আমি নাই ফির

বাকিটা শেষ করতে পারে না সাদি। ছোঁয়ার মুখের দিকে চোখ পড়ে যায়। আর থেমে যায়। চোখের ইশারায় ছোঁয়াকে শান্ত হতে বলে।
” কাঁদে না আম্মু৷ আমাকে খাইয়ে তোমরা খেয়ে নিও প্লিজ। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার সুস্থ করে তুলো আমায়।
সাবিনা মাথা নারায়।

_____

রাতে কেউই ভালো করে খেতে পারে না। ছোঁয়া তো কিছুই মুখে তুলে না। তাকে জোর করেও কেউ খাওয়াতে পারে নি।
সামির সহ সাদির সকল বন্ধুরা হাজির হয়েছে। এবং সকলে সাদির সাথে আড্ডা দিচ্ছে। এটা ওটা বলে সাদিকে হাসাচ্ছে। সাদিও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ছোঁয়া দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছে। মনে মনে আল্লাহর দরবারে সে শতবার শুকরিয়া আদায় করে ফেলেছে।
আজকের ঘটনায় ছোঁয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে। কি হয়ে গেলো?
সামিরও ভীষণ আঘাত পেয়েছে। কিন্তু সে প্রকাশ করতে পারছে না। মনে মনে পুরছে অনুসূচনায়।

আড্ডা দিয়ে সকলে বাসায় যায় রাত এগারোটা নাগাদ। ইরা এবং রিমিকে তাদের বাড়ির লোক এসে নিয়ে যায়। সেলিম কয়েকবার সাদিকে আড়াল থেকে দেখে গিয়েছে। সাদির রুমে ঢুকতে সাহস পায় নি তিনি। তার ধারণা সে সাদিকে পছন্দ করতো না বলে সাদিও তাকে পছন্দ করে না।
পরি পুরো সময়টা জুড়েই সাদির মাথার কাছে বসে ছিলো।
একে একে সকলেই সাদিকে দেখে চলে যায় ঘুমতে। তখন ছোঁয়া রুমে আসে। এতোখন সে পাশের রুমে বসে ছিলো। শান্তিতে একটু কেঁদেছে। সাদির সামনে তো কান্না করার কায়দা নেই।

দরজা বন্ধ করে সাদির দিকে তাকায়। মানুষটা আধশোয়া হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।

“ঘুমবেন না?

ছোঁয়া মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করে।

” হুমম
এসো ভালো করে শুয়িয়ে দাও আমায়।

ছোঁয়া সাদা লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে সাদির বালিশ ঠিক করে। তারপর সাদিকে শুয়িয়ে দেয় ঠিক করে। নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে।

“বুকে মাথা রাখবা না?

ছোঁয়ার আবারও কান্না পায়। কান্না আটকে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
” আপনি ব্যাথা পাবেন।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে ছোঁয়া।
পাবো না এসো।

“না না প্লিজ

” তুমি আসবে? না কি আমি আনবো?

ছোঁয়া সুর সুর করে সাদির বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। সাদি এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় প্রেয়সীকে।

চলবে

আমার ফেসবুক আইডির লিংক

https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL

আমার গ্রুপের লিংক

https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here