#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৮
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার প্রেগন্যান্সির খবর শুনে কেউ খুশি না। সকলের মুখ ভারি। শুধু ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণা থেকেই হাসি সরছে না।
বাড়িতে গোল বৈঠক বসেছে। ছোঁয়া আপাতত তার রুমে। তাকে সাবিনা বেগম ঘুমাতে বলে চলে এসেছে।
ডাক্তার সাদিকে প্রেগ্ন্যাসি কনফার্ম জানানোর পর থেকে সাদির চোখে মুখে গম্ভীর একটা ভাব চলে এসেছে।এমনিতেই সব সময় গম্ভীর ভাব সাদির মুখখানায় বজায় থাকলেও আজকে মুখখানা অন্য রকম। রেগে আছে না কি খুশি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কেউ বুঝতে চাইছেও না।
সেলিম একটু পরপরই কটমট চোখে তাকাচ্ছে সাদির দিকে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। বড্ড বেয়াদব ছেলেটা।
নাজমা বেগমও হতাশ হয়েছে। তার মেয়েটা কখনো নিজে হাতে খেতে পারে না ঠিকঠাক। সে কি করে বাচ্চা সামলাবে? কি করে প্রেগ্ন্যাসির এই কঠিন লড়াই লড়বে?
সাজ্জাদ ছেলের মুখ পানে তাকিয়ে বলে ওঠে
“বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে। আমাদের উচিত তাকে সাদরে গ্রহণ করা। এদের মুখ গোমড়া করে থাকার মতো কিছু হয় নি।
সাজ্জাদের এই কথায় তেঁতে ওঠে সেলিম। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়
” আমার মেয়েটার বয়স খেয়ালে নেই তোমার ভাইয়া? বাচ্চা সামলানোর মতো বয়স হয়েছে ওর?
তোমার ছেলে সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি করবে।
সাবিনার কপালে ভাজ পড়ে। এখানে তার ছেলের দোষ খুঁজে পাচ্ছে না তিনি।
“ছোট ভাই
সাদু কি করেছে এখানে? ছোঁয়াকে চিনেন না আপনি?
সব সময় সাদুর ওপরেই কেনো তোমার এতো রাগ? কেনো আমার ছেলেকেই কথা শোনাও তুমি?
সেলিম আজকে আর চুপ থাকে না। তিনি আঙুল তুলে বলে ওঠে
” আরও দশ বছর আগে তোমার ছেলে ছোঁয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে আমাকে। আরও আগে থেকেই সে বিয়ে করার পরিকল্পনা করে রেখেছে।
সকলেই থমকে যায়। এই বিষয়ে কারোরই ধারণা ছিলো না। কেউ এতোটুকুও আন্দাজ করতে পারে নি যে সাদি ছোঁয়াকে ভালোবাসতো।
কারণ সাদি সারাক্ষণই ছোঁয়াকে এড়িয়ে চলতো।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“ভালোবেসেছি তাই আপনাকে বলেছিলাম। গোটা দুনিয়া খুঁজে দেখো আমার মতো তোমার মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তোমার আধপাগল মেয়েকে ভালোবেসে আগলে রাখতে কোনো পুরুষই পারতো না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।
সেলিমের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সত্যিই সাদি তার মেয়েকে খুব ভালোবাসে সেটা সে জানে। বলা বাহুল্য সেলিমও মনে মনে সাদিকে বেশ পছন্দ করে। কিন্তু সে স্বীকার করতে নারাজ।
সিমি বলে
” তোমরা এভাবে কেনো বসে আছো? কেনো টেনশন করছো? ছোঁয়াকে দেখো সে কতোটদ খুশি। আমাদের মুখ গোমড়া দেখে ছোঁয়া ডিপ্রেশনে চলে যাবে।
সাদি দাঁড়িয়ে যায়।
“তোমার বোনের ডিপ্রেশনে চলে যাওয়াই উচিত। আস্ত পাগল একটা। জানটা জ্বালিয়ে খেলো আমার।
বলেই সাদি চলে যায়। সিমি মুখ টিপে হাসে। এদের খুনশুটি দেখতে বেশ ভালো লাগে সিমির।
সাজ্জাদ উঠে দাঁড়ায়। সেলিমের মুখোমুখি দাঁড়ায়
” ভাই সব ভুলে যা। তুই নানা হতে যাচ্ছিস আর আমি দাদা। সেলিব্রিট করি। পরির দাদুভাইয়ের ভাই আসবে মিষ্টির বন্যা বয়িয়ে দিতে হবে না?
সেলিম আর মুখ ভার করে থাকতে পারে না। হেসে জড়িয়ে ধরে সাজ্জাদকে। অতঃপর দুই ভাই বেরিয়ে যায় মিষ্টি কিনতে।
___
সাদি রুমে ঢুকে দেখে অশান্ত রানী শান্ত হয়ে ঘুমচ্ছে। এক পলক ঘুমন্ত রানীকে দেখে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সাদি। মনে করার চেষ্টা করতে থাকে। সাদি তো ঠিকঠাকই ছোঁয়াকে ঔষধ দিতো। ছোঁয়া খেয়েও নিতো। তাহলে?
কিভাবে কি হলো?
না কি ছোঁয়া খেতো না?
ফেলে দিয়ে সাদিকে মিথ্যে বলতো?
চোয়াল শক্ত করে ফেলে সাদি। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চর বসিয়ে দিতে ছোঁয়ার তুলতুলের নরম গালে।
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় ছোঁয়া খাটের ওপর গোল হয়ে বসে আছে। চোখে এখনো ঘুম জড়ানো। বিরক্তির মাত্রা বেরে যায় সাদির। ঘুম শেষ হয় নি তবুও উঠে বসে থাকতে হবে।
সাদি দৃষ্টি সরিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সময় নিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। বা হাত চুলে চালিয়ে চুল গুলো পরিপাটি করার চেষ্টা চালায়।
ছোঁয়া তাকিয়ে আছে সাদির মুখ পানে। বেশ বুঝতে পারছে সাদি রেগে আছে। রাগ ভাঙাতেই মূলত ঘুমকে বিদায় জানিয়ে এভাবে বসেছে।।
“আপনি কি রেগে আছেন আমার ওপর?
মাথা নিচু করে নরম গলায় সুধায় ছোঁয়া। সাদি জবাব দেয় না। তাকায় না পর্যন্ত। নিজের মতো পারফিউম লাগাতে থাকে। ড্রেসিং টেবিল গোছাতে থাকে।
সাদির থেকে এমন ইগনোর পেয়ে ছোঁয়ার কান্না পায়। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারে না।
” আপনি এতোটা অখুশি হলে আমি এর্বোশন করাতেও রাজি।
বুক কেঁপে ওঠে সাদির। হাত থেমে যায়। হাতে থাকা পারফিউমের বোতল ঠাসস করে রেখে পেছন ঘুরে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। বসে পড়ে ছোঁয়ার পাশে।
“বয়স কতো তোমার? প্রেগন্যান্সির মানে জানো? মুখের কথায় বাচ্চা হয়ে যাবে? নিজে যেটা ভালো মনে করো সেটাই ভালো? বাকিরা ভুল?
ছোঁয়া তুমি বুঝতে পারো না কিছু? সারাক্ষণ বাঁদরামি ছাড়া আর কিছু পারো তুমি?
বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে সাদি। ছোঁয়ার কান্নার সুর বেরে যায়। সে সাদির কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে। ব্যাসস সাদির রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
দুই হাতে আগলে নেয় ছোঁয়াকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
” আপনি আমার পাশে থাকলে আমি সব পারবো। আমায় শুধু একটু ভালোবাসবেন আর সাহস দিবেন। তাহলেই হলো।
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সাদি।
ছোঁয়াকে সোজা করে বসিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“আমার কথার অবাধ্য হলে মে রে হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসবো। বলে দিলাম আমি।
চলবে
আমার ফেসবুক আইডির লিংক
https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL
আমার গ্রুপের লিংক
https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link