এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ৬.

0
156

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৬.

শান্ত রুম জুড়ে মোমের মিটিমিটি আলো জ্বলছে। অতি সাধারণ তবে বেশ মজবুত কাঠের দ্বারা নির্মিত দরজা এবং থাই গ্লাসের তৈরী জানালা বদ্ধ রয়েছে। বাহিরে প্রকৃতিতে বয়ে চলেছে উত্তাল ঝড়ো হাওয়া। শুভ্র ও নীল রঙা বিছানার চাদরের উপর চোখ বুজে শুয়ে রয়েছে এক নারী। পড়নের কালো বোরখাটা আর গায়ে নেই আপাতত। কেবল একটা কমলা ও গোলাপি রঙা কামিজ এবং সালোয়ার দ্বারা আবৃত তার শরীর।

রাত হয়তো তখন প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই। চেতনাহীন নারীর চেতনা ফিরে খুবই সন্তর্পণে। শীতল আবহাওয়ার শিরশিরে অনুভূতি লোমকূপে ছড়িয়ে পড়তেই বাণী হালকা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথার কাছটায় ছোট্ট কেবিনেটের উপর জ্বলমান মোমের আলোটাও তার ক্লান্ত চোখে খুব তীক্ষ্ণ অনুভূত হচ্ছে। মোমের টিমটিমে আলোতে চারিদিকে একবার চোখ বুলাতেই সে উপলব্ধি করে যে সে এই মুহুর্তে কোথায় আছে।

এই সহজ উপলব্ধিটা বাণীর মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই সে ভীত নয়নে ফের চারিদিকে তাকায়। সাথে সাথে তার চোখ গিয়ে ঠেকে বিছানা হতে খানিকটা দূরে লেদারের তৈরী এক সিঙ্গেল সিটের সোফার দিকে। বিশাল জানালার দিকে মুখ করা সোফাটাতে দূর হতে এক পুরুষ অবয়ব দেখা যাচ্ছে। সেই পুরুষ অবয়বটা কার হতে পারে তা বুঝতে এক দন্ড সময় লাগে না বাণীর।

ভীত সে ভয়ে কুকড়ে হাতের কাছে থাকা বিছানার চাদরটুকু খামচে ধরে। অশান্ত দৃষ্টি আশেপাশে তাক করে বোঝার চেষ্টা করে বর্তমান পরিস্থিতি। বহ্নি? বহ্নি কোথায়? আর রুমে মোমই বা কেনো জ্বলছে? এই বিলাসবহুল বাড়ি জুড়ে ইলেক্ট্রিসিটির অভাব মেটানোর জন্য আইপিএস তো সদা প্রস্তুত। তবে এই মোমের আলো জ্বালানোর পিছনে কারণ কি?

ভীত বাণী কোনো দিক দিশা না পেয়ে ওড়নাটা গলায় দিয়ে ধীর কদম ফেলে বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। তবে হিরণের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তার হচ্ছে না। তাই সে নীরবে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দরজার দিকে এগুতে নেয়। সাথে সাথে পিছন হতে একটা পরিচিত শিসের সুর ধ্বনি সম্পূর্ণ রুম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সহসা বাণীর পা জোড়া থেমে যায়। অসহায় সে নিজের নেত্রপল্লব বুজে নেয়। রুমের এককোণ হতে মৃদু শব্দের পদধ্বনি কাছে এগিয়ে আসতে আসতে একটা সময় ঠিক বাণীর পিছনে এসে থামলো।

বুকে এক বিন্দু সাহস সঞ্চার করে বাণী চোখ মেলে তাকায়। পিছন পানে না চেয়েই ক্ষীণ স্বরে উচ্চারণ করে,

“ বহ্নির কাছে যাচ্ছি। “

কথাটুকু বলেই এগিয়ে যেতে নিয়েও আর এগোতে পারে না সে। একটি বলিষ্ঠ হাত সাপের মতো আষ্টেপৃষ্টে তার কোমর জাপ্টে ধরে। বাণী সাথে সাথে ফের চোখ বুজে অস্বস্তিতে মুখ কুচকে ফেললো। অত:পর নিজের প্রতি নীরব করুণার হাসি নিক্ষেপ করে সে।

ছয়টা বছর! ঠিক ছয়টা বছর পর আবারও এই গাঢ় কুলষিত স্পর্শের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। কেনই বা হতে হবে না? বাণী ভুল করেছে। মস্ত বড় ভুল। বাণীর হাজারটা অপমান, ধিক্কার, চড়, থাপ্পড় মাফ করলেও এই অপরাধ কখনো মাফ করবে না অগ্যাত পুরুষ, তা বাণী ভালো করেই জানে। সে এটাও ভালো করে জানে এই অপরাধের শাস্তি হতে কেউই তাকে বাঁচাতে আসবে না। এত বছরেও কেউ আসেনি, এখনো আসবে না। যেই গুটি দুয়েক মানুষ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো, তাদের সকলের অস্তিত্বই আজ এই পৃথিবীর বুক হতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তাই নীরবে মৃত্যুর কাছে পরাজিত সৈন্যের ন্যায় সব শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত বাণী।

কানের কাছে মুখ নামানো শান্ত স্বর বলে উঠে,

“ বহ্নি নিজের বাসায় আছে এই মুহুর্তে। এই পৃথিবীতে ওর জন্য সবথেকে সুরক্ষিত জায়গা যেটা। ওকে নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে। “

ভুল বলেনি হিরণ। এই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে তার মেয়ের ক্ষতি করতে পারবে এমন দুঃসাহস কারো নেই। এমন দুঃসাহসিকতা দেখানোর আগে সেই মানুষের ঠিকানা হবে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। ভাবলেশহীন গলায় বাণী শুধায়,

“ অপেক্ষা কিসের? আপনি জিতেছেন, আমি হেরেছি। নিয়ম অনুযায়ী পরাজিত ব্যক্তির শাস্তি পাওয়ার কথা। দিন শাস্তি। আমার প্রতিবাদ করার সাধ্যি নেই। “

বাণীর এহেন আত্মসমর্পণ শেষ হতে না হতেই হিরণের অপর হাত বাণীর উন্মুক্ত গলা আবৃত করা ওড়নার কাছে পৌঁছায়। ওড়নাটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সন্তর্পণে তা টেনে গলা মুক্ত করলো হিরণ। প্রাণহীন দেহটা কাধের কাছে নরম স্পর্শ পেতেই বাণীর সম্পূর্ণ অন্তর বিষিয়ে উঠলো। বিষের দানার প্রভাবে মূর্ছা যাওয়ার পূর্বেই ডান কাধের ভাজে লুকানো মুখটা ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো,

“ হেরে যাবে জেনেও কেনো এই মরণ খেলায় মত্ত হলে? “

বাণী বুঝি অকারণে মৃদু সাহস খুঁজে পেলো। ক্ষানিকটা নির্ভীক গলায় সে জবাব দেয়,

“ জিতে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুর আশায়। “

হিরণ বাণীর কথার পিঠে রেগে গেলো কিনা বুঝা গেলো না। সে সাথে সাথে বাণীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। চোখেমুখে তার হিংস্র অগ্নিশিখা দাউদাউ করছে। চোয়াল শক্ত করে সে শুধায়,

“ কেন জিততে চাও তুমি? মেনে নাও নিজের হার। আমাকে ঘৃণা করে খুশি থাকো। তোমার তিক্ত অনুভূতির অধিপতি হিসেবে আমি আছি। তোমার ভালোবাসার অধিপতি হিসেবে বহ্নি আছে। আমার অংশ। আমি ওতটুকুতেই সন্তুষ্ট। “

কথাটুকু বলতে বলতে হিরণের মুখের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হলো। পলকহীন চোখ দুটো হতে হিংস্রতা উবে যায়। হাত বাড়িয়ে বাণীর কপালের একপাশের সাদা ব্যান্ডেজটা ছুঁয়ে দেয়। অত:পর মৃদু স্বরে বলে উঠে,

“ এই ইট পাথরের তৈরী সীমানার বাহিরে যাওয়ার ফল দেখলে? ক্ষত নিয়ে ফিরেছো। “

বাণী ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়,

“ আপনার সীমানার ভেতর থেকেও অক্ষত রইলাম কই? এই ক্ষতের থেকেও গভীর দাগ উপহার দিয়েছেন। আমৃত্যু তা ভুলবো না। “

হিরণের মুখ তখন ভয়াবহ কালো। সে এক’পা দু’পা করে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। একটা সময় সে রুমে জ্বলমান একমাত্র মোমবাতির শিয়রে এসে দাঁড়ায়। বাণীর দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই সে একহাতে মোমের ঊর্ধ্বভাগ একহাতে চেপে ধরে। মুহুর্তেই সম্পূর্ণ রুম অন্ধকারে ছেয়ে যায়। মোমের বিগলিত গরম পানীয় চামড়ার সংস্পর্শে আসতেই তা জমে সাদা রূপ ধারণ করে। কিন্তু সেই উত্তপ্ত পানীয়ের সংস্পর্শে হিরণ যন্ত্রণা খুঁজে পায় না।

বাণী এক দন্ড সময় নেয়। চোখ বুজে বড় করে নিঃশ্বাস নেয়। হিরণ তাকে কোনো প্রকার শাস্তি দেয় নি। দিবেও না। ক্ষমা পেয়েছে সে। আজ রাতে হিরণের ভয়াবহ রূপের সাক্ষী হতে হবে না তাকে। এই উপলব্ধিটুকু কাজ করতেই বাণী আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না। অন্ধকারে হাতড়ে দরজার নব ঘুরিয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে প্রস্থান করে। ঝড়ের বেগে পৌঁছে যায় নিজের মেয়ের জন্য নির্ধারিত রুমটার ভেতর। এই রুমে ঠিকই মৃদু ড্রিম লাইটের আলো জ্বলছে। অর্থাৎ হিরণ ইচ্ছে করেই ওই রুমে লাইট অফ রেখে মোম জ্বালিয়েছিলো।

বাণী অতি সাবধানে মেয়ের পিছনে শুয়ে মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। বুকে জমে থাকা কান্নাগুলো উথলে উঠতেই তার অবাধ্য চোখ জোড়ার কার্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। দূর্বল বাণী আরো একবার এই বন্দীশালায় বন্দী হয়ে রয়ে গেলো। আবারও তাকে ফিরে আসতে হয়েছে এই পাপের সাম্রাজ্যে। যেই বিষাক্ত সাম্রাজ্যে তার এক মলিন সুখ হলো বুকে আগলে রাখা এই নিষ্পাপ শিশুটা। চোখের কার্ণিশে জল ভেসে উঠলেও বাণীর বুকের কার্ণিশে ভেসে উঠলো ঠিক বারো বছর আগের অদ্ভুত সুন্দর কিছু স্মৃতিচিত্র।

__________

বর্ষা পেরিয়ে ঋতু রাণী বসন্তের আগমন ঘটলো কেবল। পরিষ্কার সাদা আকাশটা সর্বদা স্বচ্ছ থাকে এই ঋতুতে। আকাশ জুড়ে না দেখা যায় সূর্যের তীক্ষ্ণতা আর না দেখা যায় কালো মেঘদলের গুমোট ভাব। কিশোরী বাণীর হৃদয়ের অবস্থাও তখন এই পরিষ্কার আকাশের ন্যায়। যেই আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ায় দূর্জয় নামক এক সুখপাখি।

বাংলা মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থায় দশম শ্রেণির পর শিক্ষার্থীদের বসতে হয় এসএসসি নামক এক বোর্ড পরীক্ষার জন্য। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য তার বদলে রয়েছে ও লেভেলের এক্সাম। বাণীর মা অহনা বেগম ও বাবা আনিসুজ্জামান তালুকদার অবশ্য বাণীর প্রতি একাডেমিক্যাল দিক দিয়ে কখনো তেমন একটা আশা রাখেনা। কারণ বাণী স্টুডেন্ট হিসেবে কতটা জঘন্য তা তারা বেশ ভালো করেই জানে।

কিন্তু জঘন্য এবং বেকবেঞ্চার হিসেবে খ্যাত বাণীর মধ্যে হঠাৎ লক্ষ্য করা যায় আমূল পরিবর্তন। নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ হিসেব করে বলতে গেলে প্রথম সেমিস্টার এক্সামের রেজাল্টের দিন হতে সেই পরিবর্তনের আবির্ভাব ঘটে। টিচারদের একান্ত বাধ্যগত ছাত্র শাহরিয়ার দূর্জয় যেখানে সব সাবজেক্টে ৯৫+ পেয়ে টপ করেছে সেখানে বাণী তালুকদার এক সাবজেক্টে ফেল এবং বাকি সব সাবজেক্টে টেনেটুনে পাশ মিলিয়ে লাস্ট পজিশন দখল করেছে।

কখনো রেজাল্টের পরোয়া না করা মেয়েটা সেদিন প্রথমবারের মতো লজ্জিত অনুভব করে। সর্বদা চোখ পাকিয়ে চলা মেয়েটা সেদিন লজ্জায় স্কুলে চোখ তুলে কারো দিকে তাকাতে পারে নি। রেজাল্ট কার্ড নিয়ে বাড়ি ফিরেই সে থমথমে মুখে নিজের বাবার কাছে গিয়ে আবদার কম আদেশ বেশি সুরে বলে,

“ তিনদিনের মধ্যে সিলেট শহর তন্নতন্ন করে আমাকে প্রতিটা সাবজেক্টের জন্য বেস্ট টিউটর খুঁজে এনে দাও বাবা। “

বিকেল বেলায় সবুজ ঘাসে আবৃত উঠোনে বেতের সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে কেবল মাত্র চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো আনিসুজ্জামান তালুকদার। কিন্তু মেয়ের এহেন কথায় তিনি বিষম খেয়ে যায়। ফলস্বরূপ মুহুর্তেই উনার কাশি উঠে যায়। বাণীর মাঝে তেমন একটা ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে করতে নিজের মা অহনা বেগমকে ডেকে বলেন,

“ মামনি, টেক কেয়ার অফ ইউর হাজবেন্ড। “

মেয়ের উচ্চকণ্ঠ শুনে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই ঘর ছেড়ে বের হয় অহনা বেগম। কিন্তু বাড়ির দরজার কাছাকাছি আসতেই তিনি দেখেন আনিসুজ্জামান কাশতে কাশতে নাজেহাল অবস্থা প্রায়। তিনি বিলম্ব না করে সাথে সাথে এক গ্লাস পানি নিয়ে স্বামীর দিকে ছুটে। স্ত্রীর আনা গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে ধাতস্থ হতেই আনিসুজ্জামান প্রশ্ন করে,

“ বাণী কি আজও বাঁশ ঝাড়ের রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফিরেছে? “

আনিসুজ্জামানের এমন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে অবাক হলেও অহনা বেগম বিরক্তি নিয়ে জবাব দেয়,

“ আর কোন রাস্তা দিয়ে আসবে ও? কতবার মানা করেছি এসব বাঁশ ঝাড়ের নিচ দিয়ে মেয়ে মানুষ একা যেনো আসা যাওয়া না করে। কিন্তু আমার কথা শুনলে তো! দামড়া মেয়ে যদি নিজের ভালো না বুঝে তাহলে কার কি করার আছে? “

অন্যসময় হলে অহনা বেগমের এমন সেকেলে কথাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিতো না আনিসুজ্জামান। কিন্তু আজ গুরুত্ব না দিয়ে পারছে না সে। চিন্তিত গলায় বলে,

“ কোনো খারাপ কিছু আছড় করলো নাকি মেয়েটাকে? “

__________

বাবুই পাখির বাসার মতো রুমে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে আছে এক কিশোরী। গায়ের ইউনিফর্ম এখনো বদলায় নি সে। তার রুমের প্রিয় কর্ণারে থাকা রেডিওতে বেজে চলেছে সদ্য রিলিজ পাওয়া মেরি ব্রাদার কি দুলহান সিনেমার হিট সং ইষ্ক রিস্ক। গানের শব্দ পৌঁছে যায় ঘরের প্রতিটি ইট পর্যন্ত। কিন্তু গানের সাথে বাণীর মনের অবস্থার কোনো সামঞ্জস্য নেই বললেই চলে। তার মন আকাশে কুণ্ডলী পাকা কালো মেঘেরা ভীড় করেছে। বুঝতে পারছে নিজের আর দূর্জয়ের মধ্যে থাকা বিস্তর পার্থক্য। দূর্জয়ের নজরে পড়তে হলে এবং তার মন জিততে হলে তাকে আগে দূর্জয়ের সমান স্থানে পৌঁছাতে হবে।

এরকম আরো অসংখ্য ভাবনার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে ধীরে ধীরে বাণী ঘুমে তলিয়ে যায়। কালো রঙের রেডিওটায় বাজতে থাকা গানটা বুঝি ঘুম গাঢ় করতে আরেকটু সাহায্য করলো।

“ কই পিছে না আগে হে
ফির ভি জানে কিউ ভাগে হে
মারে ইষ্কে কা ইষ্কে কা দিল মেরা,
ইস্কে উস্কে ইয়ে হিসসে মে
তেরে মেরে ইয়ে কিসসে মে
মওলা সিখে বিন সিখে বিন দে সিখা। “

__________

রাতের শেষ প্রহর তখন। ফ্যাকাসে আকাশে চাঁদের অস্তিত্ব নেই। পরিবেশে তখন শিরশিরে গা কাপানো বাতাসের অস্তিত্ব। নিস্তব্ধ রুমটার দরজা হঠাৎ ধীর গতিতে খুলে যায়। ভূতগ্রস্তের ন্যায় একটি ছায়া খুবই সাবধানে প্রবেশ করে রুমের ভেতর। পাতলা টি শার্ট পরিহিত উজ্জ্বল ফর্সা রঙের পুরুষ শব্দহীন ভাবে এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। অত:পর খুব নীরবেই বহ্নির গায়ে থাকা কোমফর্টারটা কিছুটা প্রসস্থ করে টেনে ঘুমন্ত বাণীর গায়েও মেলে দেয়। সম্পূর্ণ রুম জুড়ে উপস্থিত অক্সিজেনের সাথে মিশে যাচ্ছে তিনটা মানুষের নীরব নিঃশ্বাস। কারো নিঃশ্বাসে মিশে রয়েছে বিষাদের ছায়া তো কারো নিঃশ্বাসে মিশে আছে বুকের অস্থিরতা। তৃতীয়জনের ছোট্ট নিঃশ্বাসের সাথে মিশে আছে নির্ভীক প্রশান্তি।

ঘুমন্ত দুই মানবী সামান্য নড়ে উঠতেই সেই ছায়া দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। তড়িঘড়ি করে বের হতে নিয়ে কোনো এক কাঠের ফার্নিচারের কোণার সাথে পায়ের নখে আঘাত পেতেই সে নিঃশব্দে চোখ মুখ কুচকে ফেলে। পিছনে ফিরে আবার বিছানার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জেগে গেলো কিনা! উহু! জাগে নি। উল্টো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেশ শান্তিতেই ঘুমোচ্ছে তারা। সেই ঘুমন্ত দুই মানবীর পানে চেয়ে থেকে অগ্যত ব্যক্তি উপলব্ধি করলো সে খুব জ্বালা অনুভব করছে। পায়ে নয় বরং বুকে। সিমেন্ট মানব খ্যাত পুরুষেরও কি বুক পুড়ে? ঠিক কতখানি পুড়লে হৃদয় ছাঁই হয়ে উঁড়ে যায়?

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here