এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ৭.

0
157

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৭.

আপন গতিতে এগোনো এক জোড়া পা হেটে চলেছে জামাল খান রোডের ফুটপাত ধরে। তার নেই কোনো তাড়া, নেই কোনো সঠিক গন্তব্য। আপাততর জন্য তার মাথায় কোনো দায়িত্বের বোঝাও নেই। যুবকের আপন চিত্ত জুড়ে বেশ ফুরফুরে ভাব। আচমকা চলমান পা জোড়া থমকায় আলোয় জ্বলজ্বল করা এক বিখ্যাত গ্রন্থাগারের সামনে এসে। চট্টগ্রাম বাতিঘর সেই গ্রন্থাগারের নাম। বই পড়ার প্রতি মৃদু ঝোক থেকেই বুঝি যুবক বাতিঘরে প্রবেশ করলো। বেশ কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘুরঘুর করেও মনমতো কোনো বই খুঁজে পায় না সে। এখানে থাকা বেশিরভাগ ভালো বই গুলোই ইতিমধ্যে তার পড়া হয়ে গিয়েছে।

আপনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা কোমর সমান বইয়ের তাকের সামনে এসে থামে সে। তাকের উপর অংশে থাকা একটা বইয়ের দিকে তার চোখ আটকায়। A good girl’s guide to murder. হলি জ্যাকসনের লেখা বইয়ের নামটুকু পড়েই যুবকের মনে কৌতূহল জাগে বেশ। সে বইটা নেওয়ার উদ্দেশ্যে একহাত বাড়িয়ে বইটা ছুঁতেই কোথা থেকে উড়ে এসে একটা চিকন শ্যাম হাত বইয়ের অপরপাশ ধরে ফেললো। যুবক ভ্রু কুচকে তাকের অপর পাশে ঠিক সামনে বরাবর তাকাতেই দেখলো শ্যাম বর্ণের একটা মেয়ে বইটা ধরে রেখেছে। যুবক এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্ষীণ স্বরে বলে,

“ বইটা আমি আগে নিয়েছি। আপনি অন্য কপি নিয়ে নিন। “

জিন্স, কুর্তীর সাথে গলায় স্কার্ফ ঝোলানো শ্যান বর্ণের মেয়েটা যেন যুবকের কথায় মৃদু ক্ষেপে গেলো। সে বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো,

“ এই মিয়া! মশকরা করেন? এই বই আগে আমি ধরেছি। “

মেয়েটার উচ্চস্বরে নীরব গ্রন্থাগারের নীরবতা ভঙ্গ হলো। আশেপাশের কিছু বড়ো বড়ো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা মানুষের দৃষ্টি দেখে যুবক বিরক্ত বোধ করলো। ভারী ম্যানারলেস মেয়ে তো! এটেনশন সিক্যার নাকি এই মেয়ে? এভাবে চেঁচানোর মানে কি?

যুবক ফের শান্ত গলায় বলে,

“ দেখুন বইটা আগে আমি ধরেছি। তারমানে বইটা আমার। আপনি কাইন্ডলি অন্য কপি খুঁজে নিয়ে নিন। “

মেয়েটা ফের চেঁচিয়ে উঠে,

“ আপনি আগে ধরেছেন মানে কি? হ্যাঁ? কোনো প্রমাণ আছে? আমাকে চিনেন মিয়া? এই বইয়ে আমি হাত রেখেছি মানে এই বই আমার। “

শান্ত যুবক এবার বেশ রেগে যায়। নিচু স্বরে সামান্য শাসিয়ে বলে,

“ দেখুন, আমি আপনার সাথে নিচু গলায় ভদ্রভাবে কথা বলছি। প্লিজ নিজের উগ্র কথার স্বর কমিয়ে আশেপাশের মানুষের মনযোগ আকর্ষণ বন্ধ করুন। “

শ্যাম রমণী এবার রেগে চেঁচিয়ে উঠলো,

“ এই আপনি আমাকে অভদ্র, উগ্র আর এটেনশন সিক্যার বললেন? “

রমণীর চেঁচানোর মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলো আরেকজন মেয়ে। সে এসেই রমণীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে,

“ কি হয়েছে জেসি? চিল্লাচ্ছিস কেন? “

রমণী অভিযোগের সুর মিশিয়ে বলে,

“ এই লোক আমাকে গালি দিলো মাত্র। এখন আমি আরো আগে এই বই ছাড়বো না। “

শেষের কথাটুকু কিছুটা জোর মিশিয়ে বলেই জেসি একটানে বইটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। উক্ত যুবক জেসির এহেন অভদ্রতায় বেশ বিরক্ত হলো। কিন্তু সে কিছু বলবে তার আগেই লাইব্রেরীর একজন কর্মী এসে বলে,

“ এক্সকিউজ মি আপু। বইটার জন্য অলরেডি একজন পেমেন্ট করে ফেলেছে। আর এই মুহুর্তে লাইব্রেরীতে এটাই লাস্ট কপি। আপনি পরে কখনো নিয়েন। “

কর্মীর কথায় যুবকের থমথমে কালো মুখের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। সে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে প্যান্টের পকেটে ভাইব্রেট মোডে বাজতে থাকা ফোনটা বের করে কানে গুজে সেখান থেকে প্রস্থান করে। রাগে লাল হয়ে থাকা জেসি বাধ্য হয়ে বইটা সেই কর্মীর হাতে দিয়ে দেয়। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বোকা সুরে প্রশ্ন করে,

“ বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত, তুই এটা কেন বলছিলি ওই লোককে যে তোকে চিনে কিনা? ওই লোক তোকে কেন চিনবে? তার কি তোকে চেনার কথা? “

জেসি রাগে কটমট দৃষ্টি মেলে বান্ধবীর দিকে তাকায়। পুরো পৃথিবীর সব ছাগল পাগল এসে তার কপালেই কেন জুটে?

__________

গ্রন্থাগার থেকে বের হয়ে যুবক আশেপাশে সামান্য চোখ বুলিয়ে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,

“ কোথায় তুই? “

প্রশ্নটুকু শেষ হতে না হতেই ছয়জন যুবক পিছন থেকে এসে তার আশেপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ছয়জন যুবকের আকস্মিক এহেন কান্ডে অগ্যাত যুবক চমকায় না। বরং সে সামান্য হেসে ফোন কান থেকে নামিয়ে ফের পকেটে ভরে ফেলে। সাইফ চঞ্চল গলায় প্রশ্ন করে,

“ প্রত্যয় মামা? এদিকে আমরা চাকরির প্রেশারে হিমশিম খাচ্ছি আর তুই এখানে ছোকরিও পেয়ে গেলি? “

প্রত্যয় সরু চোখে ছয়জনকে একবার দেখে প্রশ্ন করে,

“ তোরা আমার উপর নজর রাখছিলি? “

সাদাত সামান্য গলা খাকড়ি দিয়ে বলে,

“ মেজরের থেকে হাফ ডে অফ পেতেই যখন তুই সুরসুর করে একা বেরিয়ে গেলি তখন সাইফ বললো নিশ্চয়ই তুই কোনো গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস। তাই আমাদের সবাইকে নিয়ে সে অপারেশন প্রত্যয় অভিযানে নেমে পড়ে। “

সাইফ কথার মাঝে বাগড়া দিয়ে বলে,

“ ওয়েল, আমি ভুল ছিলাম না। এইবার বল মেয়ে কে? “

প্রত্যয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেথলেহেম এজি চার্চের পাশে ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠে,

“ ম্যানারলেস, মাথামোটা একটা মেয়ে। “

তার পিছনে হাঁটতে থাকা ছয়জন উউ বলে অদ্ভুত শব্দ করে উঠে। প্রত্যয় হাঁটা থামিয়ে সরু চোখে পিছু ফিরে তাকাতেই সাইফ এগিয়ে এসে প্রত্যয়ের গলায় ঝুলে থাকা হেডফোনটা একটানে নিয়ে বলে,

“ মামা! ম্যানারলেস আর মাথামোটা মেয়ের নাম কি? “

প্রত্যয় ভ্রু কুচকে বলে,

“ হেডফোন ফেরত দে। “

সাইফ উল্টো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠে,

“ আগে ভাবীর নাম বলবি তারপর হেডফোন পাবি। “

প্রত্যয় রাগ দেখিয়ে বলে,

“ কে ভাবী? কার ভাবী? “

রাফি পিছন থেকে বলে উঠে,

“ আমাদের ভাবী। যাকে এইমাত্র ম্যানারলেস আর মাথামোটা বললি। “

জুনায়েদ পাশ থেকে বলে উঠে,

“ লাভ বিয়িংস উইথ ওয়ার ব্রো। আই ক্যান স্মেল লাভ ইন দ্যা এয়ার। “

ফারদিন সামান্য বিরক্তি নিয়ে বলে,

“ আই ক্যান স্মেল অনলি পলিউশন হেয়ার। “

রিদওয়ান ফারদিনকে ধমকে বলে,

“ হোপ বেডা! তুই আনরোম্যান্টিক, সিঙ্গেল। তোর নাকে প্রেমের গন্ধরেও গরুর গোবরের মতো মনে হবে। “

উল্টো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সঙ্গীদের কথা শুনে শব্দ তুলে হাসছিলো সাইফ। তখনই ঘটে অঘটন। আকস্মিক কারো সাথে ধাক্কা লেগে সে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু তার ৮৪ কেজির দেহের ভারের ধাক্কা সামলাতে না পেরে জ্বলজ্যান্ত এক মানবী ফুটপাতের পাশ কেটে পাকা রাস্তায় পড়ে গেলো। মুহুর্তেই নিজের হাঁটু চেপে সে আর্তনাদ করে উঠলো,

“ আম্মুউউউ! “

মানবীর আর্তনাদ এবং আকস্মিক দূর্ঘটনায় একদল যুবকের মুখের হাসির শব্দ থেমে গেলো। হতভম্ব সাইফ একবার রাস্তার ধারে হাঁটু ধরে বসে থাকা রমণীকে দেখলো আবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের সঙ্গীদের দিকে তাকালো। অত:পর বেশ ধমকে বলে,

“ এই মাইয়া! চোখ কি চান্দের দিকে দিয়া ঘুরো? শালার মাইয়্যা মাইনষেরে রাস্তায় চলার লাইসেন্স দেয় কে? “

আগুন্তক রমণীর ফোলা ফোলা চোখ থেকে মুহুর্তেই জল গড়িয়ে পড়ে। অপরিচিত কারো এমন ধমক তার ঠিক হজম হয় না। সে একহাতে পা চেপে ধরে রেখে আরেক হাতে নিজের কাধের সাইড ব্যাগ হতে ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে। এক মুহুর্তের মধ্যেই অপরপাশ হতে ফোন রিসিভ হয়। রমণী অতি নরম গলায় কান্না করতে করতে বলে,

“ আব্বু আমাকে একটা ভাইয়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তুমি প্লিজ আসো। ভাইয়া আমাকে ধমকাচ্ছে। উনার সাথে আরো অনেক গুলো ভয়ংকর দেখতে ভাইয়া আছে। আমার ভয় করছে। “

এতদূর শুনতেই সাইফ বলে উঠে,

“ খাইসেরেএ! “

এইটুকু বলেই সে সাথে সাথে দৌড় লাগায়। রাস্তায় পড়ে থাকা রমণী এবং বাকি ছয়জন যুবক হতভম্ব হয়ে রয়। কিছুদূর যেতেই সাইফ ফের উল্টো দৌড়ে এসে সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলে,

“ তোরা কি বলদ? মাইয়ার বাপের কেস খাওয়ার জন্য এনে দাঁড়ায় রইসোস? দৌড় দে। “

বলেই সাইফ ফের দৌড় দেয়। তার পিছু পিছু এবার বাকি ছয়জনও ছুটে। প্রত্যয় দৌড়াতে দৌড়াতে এবার বলে,

“ মেজরের সামনে তো প্রথমদিন খুব বড় মুখ করে বলছিলি যে তুই নাকি কখনো ময়দান ছেড়ে পালাস না? এখন দোষ করে আসামীর মতো পালাচ্ছিস কেন? “

সাইফ দৌড়াতে দৌড়াতে জবাব দেয়,

“ হোপ ব্যাটা! শালার মাইয়া জাতই একটা গ্যাঞ্জাম। আর গ্যাঞ্জাম দেখলে পালানোই হইসে বুদ্ধিমানের কাজ। “

__________

অন্ধকার রুমে মাথার উপর কেবল একটা মৃদু আলোর বাল্ব জ্বলছে। সেই বাল্বের ঠিক নিচেই রয়েছে একটা টেবিল ও একটা চেয়ার। টেবিলের উপর সামান্য ভর দিয়ে বসে আছে কালো প্যান্ট এবং কালো শার্ট পরিহিত এক পুরুষ। শার্টের হাতা তার কনুই পর্যন্ত গোটা। তার ঠিক সামনেই চেহারায় আহত অবস্থায় বসে আছে এক মধ্য বয়স্ক পুরুষ। ব্যথাতুর মুখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষকে আবেদন করে চলেছে,

“ হামকো ছোড় দো স্যার। হাম তো মামুলি আদমি হে। হামকো কুছ নেহি মালুম। “

সাথে সাথেই কালো শার্ট পরিহিত পুরুষ টেবিল থেকে ভর সরিয়ে নেমে আসে। লোকটার চুল মুঠি করে ধরে ভয়ংকর ভরাট কণ্ঠে শুধায়,

“ তুই যদি সাধারণ এক দোকানদারই হস তাহলে ছয় মাস আগে এভার ভিউ রেস্টুরেন্টে হামলা করা ওই জঙ্গিদের জন্য ড্রাইভারের কাজ করছিলি কেন? “

“ স্যার সাচ মে হামকো কুছ নেহি মালুম। “

দূর্জয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। এই ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনালদের সাথে চলা লোকদের হয়তো এটাই নীতি। জীবন দিবে তবুও স্বীকারোক্তি না। দূর্জয় কিছু না বলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সেই অন্ধকার কক্ষ হতে বেরিয়ে যায়।

দূর্জয় প্রস্থান করতেই মোর্শেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। শ্যাম বর্ণের এই ভয়ংকর লোকটার প্রশ্ন উত্তরের পর্ব শেষ হওয়ায় খানিকটা স্বস্তি পায় সে। কিন্তু তখনই ফের রুমের দরজাটা শব্দ তুলে খুলে যায়। মোর্শেদ চোখ তুলে তাকাতেই দেখে দূর্জয় ফের রুমে প্রবেশ করছে। কিন্তু খালি হাতে বের হলেও খালি হাতে ফেরে নি সে। তার হাতে থাকা বস্তুটা দেখতেই মোর্শেদের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। সে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রয় ছাট করে কাটা চুল এবং কাটকাট চেহারার পুরুষের দিকে। এই পুরুষ করতে কি চাইছে? মতলব কি?

মোর্শেদের মস্তিষ্কের প্রশ্নের আনাগোনার মাঝেই দূর্জয় সুইচবোর্ড চেপে সাদা আলোর বাল্বটা নিভিয়ে অন্য একটা সুইচ অন করে দেয়। মুহুর্তেই সম্পূর্ণ রুম জুড়ে ভুতুড়ে লাল রঙের মৃদু আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ে। মোর্শেদ কিছু বলবে তার পূর্বেই দূর্জয় একহাতে তাকে চেয়ার সহ টেনে সুইচবোর্ডের দেয়ালের দিকে নিয়ে যায়। মোর্শেদ ফের ভীত চোখ মেলে দূর্জয়ের হাতে থাকা বস্তুটার দিকে তাকায়।

দূর্জয় খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বস্তুটার ইলেক্ট্রিক ওয়্যারের প্লাগটা সুইচবোর্ডে লাগিয়ে সুইচ অন করতেই তীক্ষ্ণ শব্দ তুলে সরু, চিকন এবং ধারালো একটা অংশ ঘুরতে শুরু করে। সেই তীক্ষ্ণ শব্দে মোর্শেদের মাথা ধরে গেলেও দূর্জয় স্বাভাবিক গলায় বলে উঠে,

“ এই রুমটাকে প্রথম দেখায় সকল অপরাধী খুব স্বাভাবিক একটা রুম ভাবে। ঠিক আমার মতো। এই রুমে প্রবেশ করা সকল অপরাধী আমাকে প্রথম দেখায় বুঝতে পারে না যে আমি ঠিক কতটা ভয়ংকর হতে পারি। আমি তাদের সুযোগ দেই। কিন্তু তারা তা হাতছাড়া করে। ঠিক সেই মুহুর্তে এই রুম এবং আমি খোলস ছেড়ে নিজেদের ভয়ংকর রূপ ধারণ করি। দিজ ইজ দ্যা রেড রুম এন্ড আমি এই মুহুর্তে তোর আতংক। তাই এই ড্রিল মেশিন দ্বারা আমি তোর চেহারায় নতুন নকশা আঁকার আগে যা জানিস সব স্বীকার কর। “

মোর্শেদ ছোটার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু সেই সুযোগ তার কাছে নেই। তার দুই হাত চেয়ারে পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পড়ানো। পা দুটোও শক্ত করে বাঁধা। এ কি জমদূতের হাতে এসে পড়লো সে? মোর্শেদ মুখ খুলতে যতই সময় নিচ্ছে ততই ড্রিল মেশিনটা ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে আনছে দূর্জয়। ঠিক তার চোখ বরাবর। সম্ভাবনীয় পরিণতির কথা ভেবে মোর্শেদ তিরতির করে ঘামছে। দয়ামায়াহীন এই নির্দয় পুরুষ যে কতটা ভয়াবহ তা উপলব্ধি করতেই তার বুক কাপে। ড্রিল মেশিনটা আর তার চোখের মাঝে যখন কেবল আর কয়েক আঙুলের ফারাক ঠিক সেই মুহুর্তে মোর্শেদ চোখ বুজে চিৎকার করে বলে উঠে একটি নাম,

“ রইস দিলদার। “

__________

জনমানবহীন নীরব এলাকাটার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাসাদ সমতুল্য এক ভিলা। রাত তখন নয়টা বাজে। ভিলার ঠিক মাথার উপরেই যেনো উঠেছে মস্ত বড় চাঁদ। বাহির হতে গাড়ির হর্ণের শব্দ ভেসে আসতেই সদর সিংহ প্রবেশ দ্বার খুলে যায় দু’দিকে। একটি কালো গাড়ি সমীচীন গতিতে প্রবেশ করে বিশাল ওয়াক ওয়ে ধরে। ঠিক ভিলার সামনে এসে গাড়িটা থামে। গাড়ি হতে নেমে আসে হিরণ। ফোনালাপে ব্যস্ত প্রবেশ করে বাড়ির ভেতর। বিশাল লিভিং এরিয়ায় উপস্থিত দু’জন কাজের লোককে চোখের ইশারায় বলে এখান থেকে চলে যেতে। আদেশের দাসরা আদেশ মাথা পেতে মুহুর্তেই প্রস্থান করে। ফোনের অপর পাশ হতে ভেসে আসে একজন পুরুষের স্বর,

“ আজকাল কাজে বেশ অমনোযোগী মনে হচ্ছে তোমায়। ব্যাপার কি? “

হিরণ নিজের ক্ষমতাবান স্বর বজায় রেখে বলে,

“ আপনার ধারণা ভুল। “

ফোনের অপর পাশে থাকা পুরুষ এবার সামান্য রসিকতা মিশিয়ে বলে,

“ শুনলাম তোমার নাকি বউ আর বাচ্চাও আছে। এটাও কি আমার ভুল ধারণা? “

অগ্যাত লোকের সূক্ষ্ম উপায়ে দেওয়া হুমকিটা ধরতে সময় লাগলো না হিরণের। সাথে সাথে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কাটকাট স্বরে জবাব দেয়,

“ আপনি আজকাল কাজ ছাড়া অহেতুক জায়গায় খুব মস্তিষ্ক খাটাচ্ছেন। বয়স হয়েছে। মস্তিষ্ককে আরাম দিন। কে জানে? মস্তিষ্কের উপর এতো প্রেশার দিলে না আবার ব্রেইন হ্যামারেজ হয়ে যায় আপনার। “

কথাটুকু বলেই হিরণ ফোন কেটে দিলো। রাগে ফোস ফোস করছে সে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে। শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে ঘনঘন নিঃশ্বাস নেয় সে। পৌঁছে গিয়েছে তারা। খুব দূর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে তারা। এই এতো বড় ব্ল্যান্ডারটা কিভাবে হলো তা মনে পড়তেই তার উবে যাওয়া রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।

তড়িৎ গতিতে সে সিঁড়ি ভেঙে উপরে চলে আসে। নিজের রুম বরাবর মেয়ের রুমে প্রবেশ করতেই দেখে বহ্নি বিছানায় বসে খুব মনযোগ দিয়ে টিভিতে মার্ভেল স্টুডিওর একটা সিনেমা দেখছে। কিন্তু দরজা খুলে পাপার আগমন টের পেতেই তার মনযোগে ব্যাঘাত ঘটে। দাঁত বের করে হেসে সে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে পাপার কোলে ছুটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেয়। হিরণ এগিয়ে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রশ্ন করে,

“ ডিনার করেছো মা? “

“ ইয়েস পাপা। জানো আমি আর মাম্মা সন্ধ্যায় লেমন কেক বেক করেছি। আমি তোমার জন্যও রেখেছি। “

হিরণ মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলে,

“ থ্যাঙ্কিউ মা। তুমি এখন বসে মুভি দেখো। মাম্মা এখন একটু পাপাকে টাইম দিক? “

বহ্নি হেসে বলে,

“ শি ইজ ইউরস। “

হিরণ বহ্নিকে কোল থেকে নামিয়ে চোখ তুলে রুমের এককোণে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাণীকে দেখে। অত:পর রুমে আসার জন্য ইশারা দিয়েই বেরিয়ে যায়।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here