এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ১১.

0
147

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১১.

বাণীর অবিরত হৃদয় কাঁপছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো তার। কি করতে চাইছে শমসের? মেয়ের হাতে তার বাবাকে খুন করবে? নিজেদের মতো বহ্নির হাতও রক্ত মেখে নোংরা করতে চাইছে? দুর্দম্য দুঃশ্চিন্তা ও ব্যাকুলতায় ছটফট করছে বাণী। তীব্র অস্থিরতায় তার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এলোমেলো হয়ে পড়ে। নিজের অজান্তেই সে একহাতে হিরণের ব্লেজারের কনুইয়ের দিকটা চেপে ধরে।

হিরণ অনুভব করলো বাণীর অস্থিরতা। তবুও সে নিজেকে শান্ত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলো। অন্যমনস্ক হলে চলবে না তার। হিরণ আরেকটু শক্ত করে পিস্তলটা আঁকড়ে ধরতেই আচমকা শমসের মজুমদার শব্দ করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে তিনি বহ্নির হাতে চেপে ধরা পিস্তলটা নামিয়ে নিলেন। অত:পর মশকরার সুরে বললেন,

“ হিরণ? ভয় পেয়ে গিয়েছিলে নাকি? মেয়েকে খুব ভালোবাসো বুঝি? মেয়ের জন্য বাপ সমতূল্য পালকের দিকে পিস্তল তাক করতেও দ্বিধা করলে না। “

হিরণ অতি সন্তর্পণে নিজের রাগটুকু গিলে তাক করা পিস্তলটা নামিয়ে নেয়। মুহুর্তেই বাকি সকলের পিস্তলও নেমে যায়। বাণী যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বহ্নি বোকার ন্যায় সবার দিকে তাকিয়ে আছে। এইমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনার আগাগোড়া কিছুই তার ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝে উঠতে পারে নি। হিরণ নরম স্বরে মেয়েকে কাছে ডাকতেই বহ্নি একলাফে শমসের মজুমদারের কোল হতে নেমে তার দিকে দৌড়ে চলে যায়। হিরণ চোখের ইশারায় বাণীকে বলে মেয়েকে নিয়ে উপরে চলে যেতে। বাণী আর অপেক্ষা করে না। সে নিজের প্রাণভোমরাকে বুকে আগলে নিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়।

হিরণ এবার ক্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠে,

“ বহ্নি কিংবা বাণী আমার এই জগতের অংশ নয়। ওদেরকে কেউ এই জগতের অংশ করুক তা-ও আমি চাই না। কেউ সেই দুঃসাহস দেখালে আমি তাকে ছেড়ে দিবো না। “

হিরণের বলা কথাটায় যেন খুব মজা পেলো শমসের। সে কৌতুক করে বললো,

“ আরে! আমি তো মজা করছিলাম কেবল। আর মজা নয়। এবার কাজের কথায় আসা যাক। “

কাজের কথা শুনতেই হিরণ শান্ত হয়ে শমসেরের মুখোমুখি এক সোফায় বসে পড়লো। সচল মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ ধ্যানটুকু নিবেশ করলো নিজেদের পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আলোচনার প্রতি। শমসের ঠোঁটের কোণে জয়ের হাসি ফুটিয়ে বলে,

“ লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার মুজতবা হাত ধুয়ে নেমেছে আমাদের সন্ধানে। যদিও উনার মেয়ের মাধ্যমে উনাকে সতর্ক করা হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু জুলফিকার যে সেই সতর্ক বার্তাকে তেমন একটা তোয়াক্কা করবে না তা আমি ভালো করেই জানি। হাজার হোক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৈন্য বলে কথা। এদের রক্ত ফুটন্ত পানির ন্যায় টগবগে। সেই টগবগে রক্ত ঝরানোরও আলাদা মজা আছে। “

হিরণ পাষণ্ড মুখে বললো,

“ ভুল করেছেন। জুলফিকার মুজতবার মেয়েকে নিয়ে সাজানো খেলায় একজন সৈন্য মারা গিয়েছে। জুলফিকার মুজতবা ও তার স্পেশাল ফোর্স এই বিষয় ভুলে যাবে ভাবছেন? উহু। কখনোই না। তারা এখন আরো সক্রিয় হয়ে আমাদের পিছনে পড়বে। একজন সাধারণ নাগরিকের তুলনায় একজন শহীদ সৈন্যের রক্তের দাম ঢের বেশি। সামির নামক ওই সৈন্যের মৃত্যুতে জুলফিকার মুজতবা এবং তার স্পেশাল ফোর্স আঘাত পেয়েছে। আর আপনি জানেনই তো, জঙ্গলে অক্ষুণ্ণ বাঘের তুলনায় আহত বাঘ বেশি হিংস্র হয়। “

শমসের মজুমদার ক্রুর হেসে বলেন,

“ হিংস্র বাঘকে পোষ মানাতে আমি জানি। তাইতো পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর দেরি করবো না। সময় এসেছে। শীঘ্রই আরেকটা বাজিমাত করবো। “

এই পর্যায়ে হিরণের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠে। সে প্রশ্ন করে,

“ এই মহান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব তবে কে পাবে? “

শমসের মজুমদার বুক ফুলিয়ে উচ্চারণ করে একটি নাম,

“ আব্রাহাম। “

হিরণের দৃষ্টি সাথে সাথে গিয়ে স্থির হয় শমসেরের পিছনে রইস দিলদারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দিক। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন যুবকের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে স্থির চিত্তে রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। এই যুবক এতো বড় দায়িত্বের ভার বহন করবে? হিরণের চোখে মুখে অসন্তুষ্টি ফুটে উঠে। এতো অভিজ্ঞ লোক থাকতে দুই দিনের এই ছেলেকে এতটা ভরসা কেন করছে শমসের মজুমদার? নিশ্চয়ই তার পিছনে বড় কোনো কারণ আছে?

হিরণের অসন্তোষ মুখভঙ্গি দেখে শমসের শুধায়,

“ ও নিজের কাজে কতটা পারদর্শী সেই প্রমাণ ইতিমধ্যে আজ জুলফিকার মুজতবাকে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দিয়ে ফেলেছে ও। ওকে কেউ অবিশ্বাস করুক তা আমি চাই না। “

হিরণ নিজের অসন্তুষ্টি আর প্রকাশ করলো না। তবে তা সম্পূর্ণ আড়ালও করলো না। সে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে,

“ প্ল্যান ম্যাপ রেডি? “

আব্রাহাম নামক সেই রাশভারী যুবক এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে এগিয়ে এসে টি টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। নিজের হাতের রোল করা বিশাল কাগজটা টি টেবিলের উপর মেলে দিতেই সাদা কাগজের উপর দেখা যায় এক অদ্ভুত নকশা। এই নকশা বড় ভয়ংকর! এই নকশা বড় বিধ্বংসী! বিধ্বংসী সেই নকশার পানে চেয়ে একঝাঁক চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। ফুটে উঠে তাদের ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি। দেশবাসী যেই রক্তের খেলার ইতি ঘটেছিলো ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে সেই রক্তের খেলা তো কেবল শুরু!

__________

বারান্দায় থাকা আরামকেদারায় আয়েশী ভঙ্গিতে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজে রেখেছে এক পুরুষ। দখিনা বাতাস চিত্ত শীতল করে দিতেই ক্ষনিকের প্রশান্তিতে সে তন্দ্রাঘোরে মতে। তার সেই তন্দ্রাভাব কাটে তীক্ষ্ণ ফোনের রিংটোনের শব্দে। চোখ মেলে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে ইংরেজিতে পাঁচ শব্দের একটা নাম। বুকে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে সে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই অপর প্রান্ত হতে এক নারী কণ্ঠ বলে উঠে,

“ ভুলে গিয়েছো আমাকে? “

“ এই প্রশ্নটা করতে কল দিয়েছো তুমি? “

“ তুমি কি আমার কল পেয়ে বিরক্ত হও দূর্জয়? “

দূর্জয় নিষ্প্রভ দৃষ্টি মেলে রাতের আকাশের দিকে তাকায়। সে কিভাবে বোঝাবে যে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে? ওই বাড়ি থেকে, এই নারী থেকে সে খুব ব্যস্ত হয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাইছে। দূর্জয় মলিন গলায় শুধায়,

“ আমি তোমার প্রতি কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেছি? “

ফোনের অপর পাশের নারীর গলা এবার খানিকটা নরম হয়ে এলো। উদাস স্বরে প্রশ্ন করে,

“ আজকের তারিখটা মনে আছে তোমার? “

দূর্জয় নীরব রয়। এখন হয়তো রাত বারোটার উপর বাজে। বছর ঘুরে সেই দূর্বিষহ তারিখটা তবে এসেই পড়লো! সত্য হতে অজান্তা নারী নিশ্চয়ই খুব আয়োজন করে আজকের দিনটায় দুঃখ বিলাস করবে? ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে দূর্জয় বলে,

“ ভুলি নি। “

দূর্জয়ের ছোট্ট দুই শব্দের জবাবের পিঠে সেই নারী বলে উঠলো,

“ আর বিরক্ত না করি তোমায়। “

দূর্জয় এবার নরম কণ্ঠে প্রশ্ন করে,

“ তুমি ভালো আছো মামণি? “

ফোনের অপর পাশ হতে এবার ক্ষানিকটা নাক টানার শব্দ এবং তার সাথে ব্যস্ত গলায় বলা কিছু শব্দ ভেসে এলো,

“ আমি ভালো নেই দূর্জয়। ছয়টা মাস ধরে তুমি বাড়ি ফিরছো না। তোমার কি মনে হয় আমি বুঝি না যে তুমি কেন বাড়িতে আসো না? ওর স্মৃতি থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করছো তাই না? কিন্তু যে অস্তিত্বে মিশে আছে তার স্মৃতি কিভাবে উপেক্ষা করবে তুমি? “

“ তুমি এতটা দূর্বল হয়ে পড়লে কবে? তুমি তো এতটা দূর্বল কখনো ছিলে না। বাবা তোমার এই রূপ দেখলে চমকে যেতো। কখনোই চিনতে পারতো না। “

“ তুমি যেই কঠিন ও দৃঢ় নারীর কথা বলছো সে মেজর শাহরিয়ার রিফাতির স্ত্রী ছিলো। শাহরিয়ার রিফাতির মৃত্যুর সাথে আমার সেই সত্তার মৃত্যুও ঘটেছে। এখন আমি শুধুমাত্র একজন মা। যার সবথেকে বড় দূর্বলতা তার সন্তান। “

“ তোমার ছেলেও কিন্তু তোমার স্বামীর পথেই হাঁটছে মামণি। আমাদের পেশা ভিন্ন নয়। একজন মেজরের স্ত্রী হয়ে সবসময় যেভাবে বিচক্ষণ মস্তিষ্ক ও শক্ত হাতে সব সামলেছো সেই একইভাবে এখন একজন মেজরের মা হয়ে সেম কাজটা করো। “

দূর্জয় যতটা সহজে এই কথাগুলো বললো ফোনের অপর পাশের নারীর ভয় ততটাই বেড়ে গেলো। এই একটাই তো তার ভয়। যেই পেশাকে এককালে মনের গহীন থেকে শ্রদ্ধা করতো তিনি আজকাল সেই পেশাই তার ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপন বলতে তো এখন শুধুমাত্র এই ছেলেটাই আছে তার কাছে। কোনো মূল্যেই এই ছেলেকে হারাতে পারবেন না তিনি।

__________

বজ্রপাতের ধ্বনিতে কেপে উঠছে নীরব রাত। একের পর এক বজ্রধ্বনি পরিবেশটাকে ভয়ংকর করে তুলছে। অস্ত্রধারী লোকদের সমাগম বিলীন হয়ে ঘরটা নিস্তব্ধ হয়েছে ঘন্টা খানেক আগে। নিজের রুমের পরিচিত সোফাটায় মূর্তির ন্যায় বসে আছে হিরণ। কাচের বিশাল জানালা দিয়ে দেখছে অন্ধকার রাতে মেঘের তান্ডবলীলা।

ঘড়িতে তখন রাত একটা বাজে। বহ্নিকে ঘুম পাড়িয়ে নীরবে রুম থেকে বেরিয়ে আসে বাণী। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রবেশ করে বহ্নির রুম বরাবর অপরপাশের বেডরুমে। রুমে প্রবেশ করতেই সে দেখতে পায় সম্পূর্ণ রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। ১৬ ডিগ্রীতে সেট করা এসি হতে বেরিয়ে আসা বাতাস রুমের ভেতরকার পরিবেশকে হীম শীতল করে তুলেছে।

বাণী একবার সম্পূর্ণ পরিবেশ পরখ করে। অত:পর থমথমে গলায় বলে উঠে,

“ আমার মেয়ের সবথেকে বড় দূর্ভাগ্য হলো যে আপনার মতো নরপশু তার পাপা। “

বাণীর বলা কথাটা হিরণের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সে রাগে লাল হয়ে থাকা চোখ জোড়া মেলে পিছনে তাকায়। অন্ধকার রুমে বাণী হিরণের সেই দৃষ্টি স্পষ্ট দেখতে পেলো না। দেখলে হয়তো নিশ্চয়ই সে দমে যেতো। বাণী অটল গলায় ফের বলে উঠে,

“ আমি সবসময় ভাবতাম আল্লাহ আপনাকে কন্যা সন্তানের পিতাই কেন বানালো? মেয়ে সন্তান তো আল্লাহর রহমত হয়। আপনি তো জীবনে এমন কিছু করেন নি যে আপনি এই রহমত হাসিল করতে পারবেন। কিন্তু পরে আমি বুঝতে পারলাম আমার মেয়ে আপনার জন্য রহমত নয় বরং আপনার সবথেকে বড় শাস্তি। আপনার কি কখনো ভয় হয় না? যেই ভালোবাসার দাবি আপনি আমার কাছে করে বেড়ান, ধরুন সেই একই ধরনের ভালোবাসা কখনো বহ্নির জীবনে আসলো। কেমন অনুভব করবেন আপনি? “

হিরণ হিসহিসিয়ে বলে উঠে,

“ আর একটাও কথা বলবে না বাণী। “

হিরণের শান্ত গলার সতর্ক বার্তা বাণী কানে তুলে না। তার সহ্যেরও একটা সীমা রয়েছে। আজকে নিচে ঘটে যাওয়া ঘটনা সে মোটেও মেনে নিতে পারছে না। সেই শমসের মজুমদার যখন তার মেয়ের হাতে পিস্তল চেপে ধরেছিলো তখন বাণীর মনের অবস্থা কি রকম ছিলো তার একমাত্র সাক্ষী উপরওয়ালা। বাণী হিরণকে তোয়াক্কা না করে বলে,

“ ভয় পাচ্ছেন? বহ্নির ভাগ্যও আমার মতো হয়ে যায় কিনা সেই ভয় পাচ্ছেন? মেয়ের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখার ক্ষীণ সম্ভাবনাও আপনাকে ভীত করে তুলছে। “

হিরণের ধৈর্য্য শক্তি হারায়। সে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে গিয়ে বাণীর গলা চেপে ধরে। হিরণ সন্নিকটে আসার সাথে সাথেই বাণী নাকে একটা উটকো গন্ধের ঘ্রাণ টের পায়। এই ঘ্রাণ কিসের তা বুঝতে একটুও সময় ব্যয় করতে হয় না তার। শয়তানদের মজলিসে কোন পানীয় বেশি প্রাধান্য পায় তা বাণী ভালো করেই জানে। কিন্তু এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বলার সুযোগ পায় না সে। হিরণ তার আগেই ক্ষোভ মিশ্রিত স্বরে বলে উঠে ,

“ আজকে নিচে যেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সম্পূর্ণ দায়ভার তোমার। তোমার খাঁচা ছেড়ে পালানোর ফলেই শমসের মজুমদার তোমাদের পরিচয় জানতে পেরেছে এবং আমার বাড়িতে এসে আমার সামনেই এমন দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। বাহিরের বাতাস গায়ে লাগতেই উড়ার জন্য খুব কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছো। তাই-না? কিন্তু আমিও খুব ভালো করে জানি কিভাবে ডানা কাটতে হয়। আমি যত নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করি, তুমি ততই আরো টেনে হিচড়ে আমার ভয়ংকর রূপ বের করে আনো। “

বাণীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হতেই সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হিরণের দানবীয় হাতের থাবা হতে মুক্তি পাওয়া মুশকিল। বাণী আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আচমকা মুখ ভর্তি থুথু ছুড়ে মারে হিরণের দিকে। হিরণ সাথে সাথে হাতের বাধন আলগা করে ফেলে। দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই বাণী দু হাতে নিজের গলা ধরে কাশতে শুরু করে। ক্ষানিকটা প্রশান্তির আশায় সে চোখ বুজে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে।

কিন্তু আচমকা চুলের মুঠিতে টান খেতেই বাণী চোখ মেলে তাকায়। সাথে সাথে সে দেখতে পায় হিরণের ভয়ংকর রূপ। যেই রূপকে বাণী জমের মতো ভয় পায়। চুলের মুঠি আরেকটু শক্ত করে ধরতেই বাণী চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। হিরণের চোখ ঠিকড়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুন দৃষ্টি মেলে সে বলে,

“ আমাকে রাগিয়ে ভালো করো নি বাণী। “

বাণী আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তার পূর্বেই হিরণ নিজের হিংস্রতার পরিচয় দেওয়া শুরু করে। বাণী কেবল অনুভব করলো তার চারপাশটা বিকট শব্দ তুলে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে ছয় বছর পূর্বের এরকমই এক রাতের দৃশ্য। যেই রাতের প্রহর শুরু হয়েছিলো খুন, লাশ এবং রক্ত দিয়ে আর শেষ হয়েছিলো বাণীর হৃদয় ও দেহ কুলষিত হওয়ার মাধ্যমে। আজও সেই একই রাতের পুনরাবৃত্তি ঘটে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here