এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ৪০

0
190

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৪০.

দূর্জয় শীতল নদীর ন্যায় চুপচাপ ভঙ্গিতে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। সেই রাক্ষুসে গাড়ি দুটো এখনো তাদের পিছু ছাড়ে নি। অনুসরণ করে চলেছে অবিরত। তবে এখন আর গাড়ি দুটো থেকে কোনো ফায়ারিং করা হচ্ছে না। কেনো করা হচ্ছে না সেই সম্পর্কে দূর্জয়ের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে তার সচেতন দৃষ্টি লুকিং মিরর হয়ে লক্ষ্য করেছিলো যে একটা গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসা একজন হঠাৎ কানে ফোন চেপে ধরেছিলো। কোনো কল এসেছিলো সম্ভবত। সেই থেকে দূর্জয় ধারণা করছে হয়তো তাদেরকে এরকমই কোনো আদেশ বুলি শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এটাও খুব একটা ভালো লক্ষ্মণ নয়। অসভ্যগুলোর মাথায় নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান আছে?

বাণীর কোলে মুখ লুকিয়ে গান শুনতে ব্যস্ত বহ্নি এই পর্যায়ে চোখ জোড়া বদ্ধ রেখেই বলে উঠে,

“ মাম্মা, পানি খাবো। “

দূর্জয় শুনে তা। পানির বোতল একটা আছে। তবে এই সিটের ব্যাক কাভারে। সেটা নিতে হলে হয় বাণীর পিছনে ফিরতে হবে অথবা গাড়ি থামাতে হবে। এই মুহুর্তে দুটোর একটাও করা সম্ভব নয়। মোটেও সেফ নয়। দূর্জয় বাণীকে কিছু একটা ইশারা করে। বাণী ইশারাটুকু বুঝতেই বহ্নির মাথা থেকে খানিকের জন্য হেডফোনটা সরায়। সেই সুযোগে দূর্জয় বলে,

“ একটু অপেক্ষা করুন বহ্নি। জাস্ট এ ফিউ মোমেন্টস। “

বহ্নি নরম গলায় বলে,

“ ওকে। “

বাণী আবার তার মাথায় হেডফোনটা পড়িয়ে দেয়। মিনিট দু তিন পাড় হতেই আচমকা দূর্জয় জোরে ব্রেক কষে। আকস্মিক ব্রেকে বাণী সিটবেল্ট বাধা সত্ত্বেও সামনের দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়ে। ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে মাথায় একটা টক্কর খেতো যদি মাঝে সেই শক্ত পুরুষালী হাতের তালুটা ঢাল হয়ে না দাঁড়াতো। বাণী মাথা তুলে সামনের পানে তাকায়। সে ভীত হয় দৃশ্যটুকু দেখে।

দুটো গাড়ি সম্ভবত কম ছিলো তাই এই আরেক গাড়ির আগমন। তৃতীয় গাড়িটা ঠিক রাস্তার মাঝখানে তাদের পথ আগলে স্থির হয়ে দাঁড়ানো। পিছনের গাড়ি দুটোও এখন স্থির ভঙ্গিতে দাঁড়ানো।

মেজর শাহরিয়ার দূর্জয় পুরো পরিস্থিতিটা পরখ করে। মনে মনে পুরো হিসাব কষে নেয় সে। তিনটে গাড়ি তাদের পথ আগলে আছে। সামনে পিছনে কোনো দিকেই আর যাওয়া সম্ভব নয়। সকল পথ বন্ধ। হাতে পিস্তল আছে তবে পিস্তলে বুলেট সংখ্যা অনেক কম। ব্যাক আপ টিম কখন এসে পৌঁছাবে সেই নিশ্চয়তা নেই। এরকম একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন দূর্জয় এর পূর্বে কখনো হয় নি। তার উপর এই মুহুর্তে সে একা নয়। সঙ্গে একজন নারী ও শিশুও আছে। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও এখন দূর্জয়ের উপর। আর দায়িত্ব নিয়ে কম্প্রোমাইজ করা দূর্জয়ের স্বভাব বহির্ভূত কাজ।

অন্ধকার রাস্তা জুড়ে চারটি গাড়ির হেডলাইটের আলো জ্বলজ্বল করছে। রাক্ষুসে গাড়ি তিনটা এবার ভো ভো করে ইঞ্জিনের শব্দ তুলে ভয় দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দূর্জয় এবার মৃদু হাসে। মনে মনে বিদ্রুপ করে বলে,

“ মূর্খ চুনোপুঁটির দল। “

বাণী তখন ভয়ে কাতর। সে বুঝতে পারছে এই লোকগুলো নিশ্চিত হিরণের পাঠানো। সে কাতর দৃষ্টি মেলে পাশে তাকায়। গাড়ির ভেতরটায় কোনো কৃত্রিম আলো নেই। স্বল্প আলোয় বলিষ্ঠ মুখটা দেখে আরেক দফা তার মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। তার পাশে বসা এই মানুষটার প্রতি যেমন ভরসাও আছে, তেমনি নিজের কারণে এই মানুষটার সম্ভাব্য বিপদের আশংকাও বাণীকে শঙ্কায় ফেলে। দূর্জয়ও সেই মুহুর্তে পাশ ফিরে বাণীর দিকে তাকায়। অত:পর নিজের শান্ত শীতল স্বরে কিছু একটা বলে। বাণী কথাটুকু শুনে, বুঝে। অত:পর চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে সে প্রস্তুত।

ব্যস! দূর্জয় সঙ্গে সঙ্গে দুই পাশের জানালা নামিয়ে দেয়। চাপাস্বরে চেঁচিয়ে হেড ডাউন বলতেই বাণী বহ্নিকে সহ সম্পূর্ণ সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা নামিয়ে ফেলে। গাড়িটা স্টার্ট দিয়েই একহাতে গাড়ির স্টিয়ারিং চেপে ধরে এবং অপর হাতে নিজের পিস্তলটা চেপে ধরে দূর্জয়। সম্পূর্ণ বেগে চলমান গাড়িটা সামান্য আগাতেই সে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে সম্পূর্ণ একদিকে ঘুরিয়ে ফেলে। ফলস্বরূপ রাস্তার ঠিক মধ্যখানে গাড়িটা ৩৬০° এঙ্গেলে এক পাক ঘোরা শুরু করে। দূর্জয়ের কথামতো মূর্খ চুনোপুঁটির দল হয়তো তার চালটা ঠাওর করতে পারে নি। ঠিক সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে মেজর শাহরিয়ার দূর্জয় নিজের পিস্তলের কেবল তিনটে বুলেট খরচ করে। বুলেট তিনটা রাক্ষুসে গাড়ি তিনটার টায়ার ভেদ করে সম্পূর্ণ হাওয়া বের করে দিতেই, দূর্জয় মুহুর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বেগে ড্রাইভ করে নিজের গাড়িটা তৃতীয় রাক্ষুসে গাড়িটাকে পাশ কেটে এগিয়ে নেয়।

পরিস্থিতির সামনে নত স্বীকার না করায় ঠোঁটের কোণে অস্ফুটে হাসি ফুটে উঠে মেজর দূর্জয়ের। কোনো ব্যাক আপ টিমের সাহায্য ছাড়াই একা হাতে কেবল তিনটি বুলেটের সাহায্যেই ওই মৃত্যু ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে সে। বাণী তখনও ঝুঁকে ছিলো সামনের দিকে। এইমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। কেবল তার কানে ভেসে এসেছে তিনটি ফায়ারিং এর তীক্ষ্ণ শব্দ। দূর্জয় ড্রাইভ করতে করতে এবার পরিষ্কার গলায় বলে,

“ মাথা তুলো। চেয়ে দেখো এখন। উই আর সেফ নাও। “

বাণী ধীর গতিতে মাথা তুলে তাকায়। গাড়িটা এখন স্থির ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে পিছনে আর কোনো গাড়ির অস্তিত্ব নেই। বাণী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। সে পাশের মানুষটার দিকে চোখে কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাকায়। কিন্তু মুখ ফুটে আর ধন্যবাদটুকু বলতে পারে না। তার পূর্বেই দূর্জয় বলে উঠে,

“ বহ্নির হেডফোন খুলে ফেলো। চোখ খুলে স্বাভাবিক হয়ে বসতে বলো। বাচ্চাটা অনেকক্ষণ ধরে এভাবে আছে। “

বাণী মেয়ের মাথা থেকে হেডফোনটা খুলে ফেলে। কানের কাছে নরম গলায় বলে,

“ মা। চোখ খুলো। “

বহ্নি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। এতক্ষণ এক চাপে চোখ বন্ধ করে রাখায় চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছিলো। সে দু’হাতে চোখ কচলে ফের আবার চোখ মেলে তাকায়। একবার বাণী ও দূর্জয়ের চেহারা দেখে নিয়ে সে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। পর মুহুর্তেই চেঁচিয়ে উঠে,

“ মাম্মা! আমরা কি আবার হাইড এন্ড সিক খেলছি পাপার সাথে? “

বাণী সামান্য মাথা নেড়ে বলে,

“ হ্যাঁ মা। পাপা আর কখনো আমাদের খুঁজে পাবে না। আমরা এখন ফ্রি। “

বহ্নি খুশি হয় খুব। প্রফুল্ল গলায় চেঁচিয়ে উঠে,

“ হুররেএএ। “

দূর্জয় নীরবে সবটা শুনছিলো। সে বহ্নিকে খুশি হতে দেখে কিছুটা অবাক হয়। তার জানা মতে বহ্নি হিরণের ব্যাপারে কিছু জানে না। তার চোখে তার পাপা সুপারহিরো। তাহলে এখন এই প্রতিক্রিয়ার মানে কি? গত দু তিন দিনে কি কিছু ঘটেছে? যার ফলে বহ্নির ধারণা বদলেছে?

দূর্জয়ের ভাবনার মাঝেই বহ্নি ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

“ ইয়ো মেজর! “

দূর্জয় আর বাণী দু’জনই অবাক হয় বহ্নির পানে তাকায়। দূর্জয়ের চোখের সামনে ভেসে উঠে বহু বছর আগে এক পিছু ডাকের দৃশ্য। হাই স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত এক মেয়ে তাকে ডাকছে,

“ ইয়ো টপার! “

বহ্নির কথায় ঘোর কাটে দূর্জয়ের।

“ থ্যাঙ্কিউ। “

দূর্জয় মৃদু হেসে জানতে চায়,

“ কেনো? “

বহ্নি আর কিছু বলে না। সে কেবল হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে রয়।

__________

জঙ্গলের ভেতর গাছের ডালপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে মৃদু চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে। পাথরের উপর হাঁটু ভেঙে দ আকৃতিতে বসে আছে সাদাত। কৌতূহল পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখছে নিজের সামনে বসে থাকা নারীকে। দৃশান সরু চোখে দেখে সাদাতকে। অত:পর বিরক্তিকর গলায় শুধায়,

“ ক্যান ইউ গিভ মি মাই আইডি ব্যাক? “

সাদাত দৃশানের মতো একই সুরে বলে,

“ ক্যান ইউ আন্সার মাই কুয়েশ্চনস ফার্স্ট? “

“ কি প্রশ্ন? “

“ আমাকে স্টক করার কারণ বলো। “

দৃশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রশ্নের জবাব না পেলে এই বাদর ছেলে তাকে তার আইডি কার্ড ফেরত দিবে না। দৃশান বলতে শুরু করে,

“ তোমরা স্পেশাল মিশনে আছো তা জানি। মিশনটা কি নিয়ে সেই তথ্যও আমার অজানা নয়। আমি একজনকে খুঁজতে এখানে এসেছি। যাকে খুঁজছিলাম সে হিরণের লোক কেবল এতটুকু তথ্য আমার জানা ছিলো। আর নিজে দীর্ঘ এক তদন্তে জানতে পারি সেই হিরণ টেরোরিজমে যুক্ত। কিন্তু এর থেকে বেশি আর কিছু জানতে সক্ষম হই নি আমি। যেহেতু এইটা ভীনদেশ তাই এখানে আমার ক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু তোমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নেই। আমি এই আশায় তোমাকে স্টক করছিলাম কারণ এটাই একটা মাধ্যম ছিলো আমার হিরণ পর্যন্ত পৌঁছানোর। আর একবার হিরণের ঠিকানা জানলেই আমি ওই স্ক্রাউন্ডেলটাকে ধরে নিয়ে যেতে পারতাম। “

এতদূর পর্যন্ত দৃশান শান্ত গলায় কথাগুলো বলছিলো। কিন্তু এই পর্যায়ে সে রাগী সুরে বলে,

“ স্ক্রাউন্ডেলটাকে আমি ধরেই ফেলেছিলাম, কিন্তু তোমার অযথা তর্কের ফলে ওই অসভ্যটা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। “

সাদাত ভ্রু কুচকে তাকায়। কি অদ্ভুৎ মেয়ে মানুষ! সাদাতের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছে এখন সাদাতকেই দোষারোপ করছে! এসব চিন্তা মনে চেপে গিয়ে সাদাত প্রশ্ন করে,

“ বাংলা পারো কিভাবে তুমি? “

“ আমার দাদী বাংলাদেশী ছিলেন। আমরা ভাই বোনেরা উনার কাছ থেকে এই ভাষা আয়ত্ত্বে নিয়েছি। আই নো আমার ফ্লুয়েন্ট বাংলা শুনে যে কেউই আমাকে বাঙালি ভাববে। “

সাদাত চুপ রয়। দৃশান আবার রাগী সুরে বলে উঠে,

“ এই ছেলে। তোমার কারণে ওকে হারিয়েছি আমি। এখন তুমি আমাকে সাহায্য করবে ওকে খুঁজে পেতে। ভেবে নিও না যে আমি তোমার পিছু এতো সহজে ছেড়ে দিবো। এরকম ডাউট মনে পুষে রাখবে না। “

সাদাত এবার গম্ভীর স্বরে বলে,

“ লেফটেন্যান্ট সাদাত আমি। আর একবারও মুখে যেনো এই ছেলে, এই ছেলে টাইপ ডাক না শুনি। সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখো। “

“ সম্মান মাই ফুট। তোমার পুরো বায়োডাটা মুখস্থ আমার। গুণে গুণে তোমার থেকে দুই বছরের সিনিয়র আমি। সম্মান তোমার আমাকে দেওয়া উচিত। “

সিনিয়র জুনিয়রের তফাতটা মুখ ফুটে না বললেও তা সাদাতের অজানা থাকতো না। দৃশান নামরার আইডি কার্ডে তার জন্মসাল দেখেই সাদাত মনে মনে হিসেব করে ফেলেছিলো এই লোহার মতো শক্তিশালী মেয়েটা তার থেকে দুই বছরের বড়ো। সাদাতের মুখভঙ্গি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়। সে উঠে এসে নিজের হাতের আইডি কার্ডটা দৃশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ সরি। বাট আমি কোনো রকম সাহায্য করতে পারবো না। “

দৃশান প্রশ্ন করে,

“ কেনো? “

“ কারণ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। তুমি একজনকে খুঁজছো কেবল এতটুকু তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না। যদি সাহায্য চাও তবে সম্পূর্ণ সত্যটা আমাকে জানাতে হবে। কাকে খুঁজছো, কেনো খুঁজছো আর সেই সঙ্গে কোনো ভ্যালিড প্রুফ। “

দৃশান সরু চোখে সাদাতকে আগাগোড়া পরখ করে বলে,

“ এতোটাও বোকা নও তুমি। “

__________

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার মুজতবার রুমে বসে আছে দূর্জয়। দূর্জয়ের মুখে তিনটি গাড়ির মিলিত অ্যাটাকের সম্পূর্ণ বিবরণই শুনেছে জুলফিকার। দূর্জয় এক গ্লাস পানি পান করে গলাটা সামান্য ভিজিয়ে নেয়। অত:পর বলে,

“ ওরা হিরণের লোক ছিলো স্যার। উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে খুন করে বাণী ও বহ্নিকে নিয়ে যাওয়া। আল্লাহর হুকুম ছিলো বলে সফল হতে পারে নি। “

জুলফিকার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করে,

“ বাণী আর বাচ্চাটা কোথায়? “

“ ওয়েটিং রুমে আছে। “

জুলফিকার বলে,

“ বাণীর নিরাপত্তার দিকটা আমাদের দেখতে হবে। কেসটা বহুদূর গড়াবে। ওর স্টেটমেন্ট এর প্রয়োজন পড়তে পারে। “

“ অবশ্যই ওর সেফটি আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু এই কেসে ওর নাম আমি অযথা জড়াতে চাইছি না। “

জুলফিকার ভ্রু কুচকায়। প্রশ্ন করে,

“ মানে? কি বলছো বুঝতে পারছো? হিরণ ডিড রং টু হার। বিচারের কাঠগড়ায় এই সত্যটা বিচারকের জানা প্রয়োজন না? “

“ না স্যার। হিরণ ইজ এ টেরোরিস্ট। এই সত্যটুকু যথেষ্ট ওর শাস্তির জন্য। ওর সাথে জড়িয়ে বাণী আর বহ্নির নাম সবার সামনে আসলে বাণী প্রশ্নবিদ্ধ হবে। শি ইজ ভিক্টিম। স্টিল সবাই ওকে ক্রিটিসাইজ করবে। বহ্নির আইডেন্টিটি নিয়েও মন্তব্য করবে। দেই বোথ ডোন্ট ডিজার্ভ অল দিজ। “

জুলফিকার জানতে চায়,

“ কি করতে চাইছো তুমি? “

“ হিরণের সত্যটা সবাই জানবে। কিন্তু ওর জীবনে বাণী কিংবা বহ্নির অধ্যায়টা আমাদের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই কেসের কোথাও ওদের নাম আসবে না। “

জুলফিকার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই ছেলেকে বোঝা দায়। তিনি শীতল গলায় জানতে চায়,

“ পূর্ব পরিচিত হিসেবে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিতে চাইছো? “

“ নো স্যার। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি এটাই উত্তম মনে করতাম। শি ইজ লাইক এ কমন সিভিলিয়ান টু মি। “

দূর্জয়ের কাটকাট জবাব শুনে জুলফিকার বলে উঠে,

“ বাণী আর বহ্নির আপাতত তোমার বাসায় থাকাটা সেফ না। ওদের আমার বাসায় পাঠিয়ে দাও। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া ইজ দ্যি মোস্ট সেফ প্লেস রাইট নাও। তাছাড়া আমার বাসায় শুধু নিশাই আছে। আমি কল করে ওকে জানিয়ে দিবো। বাণী আর বহ্নির ওখানে অসুবিধা হবে না মোটেও। পরে নাহয় ওদের জন্য পারমানেন্ট একটা ব্যবস্থা করবো। আর বাণীকে হিরণের আইডেন্টিটি জানানোর দায়িত্বটা তোমার রইলো। সুযোগ বুঝে কাল একবার বাড়িতে এসো। ওর সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলে সবটা জানিও। “

দূর্জয় মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বলে,

“ অন্য কারো প্রয়োজন নেই। আমিই ওদের তাহলে ড্রপ করে দিয়ে আসছি। “

জুলফিকার বাঁধ সাধে,

“ যাচ্ছো ভালো কথা। কিন্তু ড্রপ করে ফিরে আসতে হবে না। মেসে চলে যেও সোজা। ঘুম প্রয়োজন তোমার। গত ক’দিন ধরে ঘুমের অনিয়ম করছো। বেশ ধকলও গিয়েছে তোমার উপর দিয়ে। রেস্ট প্রয়োজন। এদিকটা আমি সামলে নিবো। “

দূর্জয় বেরিয়ে যেতেই জুলফিকার তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। গত তিনদিন ধরে ছেলেটা নির্ঘুম থেকে যেই কাজগুলো করেছে তার চাক্ষুষ সাক্ষী জুলফিকার নিজেই। একদিকে বাণীকে খুঁজে বের করার তাড়া। অপরদিকে, অতি সুকৌশলে নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতককেও খুঁজে বের করেছে। সেই বিশ্বাসঘাতককে ধরার ফাঁদে আরেকটা চাঞ্চল্যকর তথ্যও জানতে পারে দূর্জয়। তা হলো এই টেরোরিস্ট অ্যাটাকের সঙ্গে হিরণের জড়িত থাকার ব্যাপারটা এবং তার ঠিকানা। এই সব কিছু সামলে বাণী নামক ওই মেয়েটাকেও উদ্ধার করে এনেছে। প্রশংসার দাবীদার ছেলেটা। সত্যিই প্রশংসার দাবীদার!

__________

দরজার কলিং বেলটা বেজে উঠতেই নিশা ধীরে সুস্থে উঠে যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই সে বড়ো বড়ো চোখ মেলে তিনটা মানুষকে এক সঙ্গে দেখে নেয়। দূর্জয় সামান্য হেসে প্রশ্ন করে,

“ হাই পাকনি। কেমন আছো? “

নিশা মুখ লটকে বলে,

“ ফাইনালি আমার কথা মনে পড়েছে তোমার? “

দূর্জয়ের কোলে থাকা ছোট মানবীটা এতক্ষণ তার কাধে মুখ লুকিয়ে ছিলো। এই পর্যায়ে সে মাথা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নিশার দিকে। নিশা বাচ্চাটাকে দেখে। আর সঙ্গে সঙ্গেই আহ্লাদ মিশ্রিত গলায় বলে,

“ হাই কিউটি। কি নাম তোমার? “

বহ্নি সামান্য নাক টেনে বলে,

“ বহ্নি। “

কথাটা বলেই বহ্নি হাই তুলে। তার চোখ ঘুম ঘুম। ঘুমে ঢলে পড়বে যেকোনো সময়। দূর্জয় নিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ শি ইজ স্লিপি। রুম দেখিয়ে দাও। ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এসে কথা বলছি। “

নিশা আঙুল দিয়ে রুমটা দেখিয়ে দিতেই দূর্জয় বহ্নিকে সহ সেই রুমের দিকে চলে যায়। বাণী তখনো দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ইতস্তত অনুভব করছে। নিশা একবার বাণীকে দেখে হেসে শুধায়,

“ হ্যালো আপু। আমি নিশা। “

বাণী সামান্য হেসে বলে,

“ আমি বাণী। “

নিশা বলে,

“ প্লিজ ভিতরে আসুন আপু। “

বাণী বুকে একরাশ সংকোচ, লজ্জা, অস্বস্তি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।

বহ্নিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা টেনে দেয় দূর্জয়। বহ্নি সম্পূর্ণ ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে অস্ফুটে বলে,

“ গুড নাইট মেজর। “

বহ্নির কথার ভঙ্গিমা দেখে দূর্জয়ের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। সে নিজেও ফিসফিসিয়ে বলে,

“ গুড নাইট কিডডো। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here