তবু_সুর_ফিরে_আসে ১৭তম পর্ব

0
162

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

১৭তম পর্ব

বারান্দায় এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো ন‌ওশাদ ! হেরা কি ভাবছে কে জানে ? ওর এত অস্বস্তি হচ্ছে কেন ! এখন নিশাল কে বলে দিয়েছে এবং নিশাল ও সহজ একটা রিয়েকশন দিয়েছে তবুও হেরাকে কাছে টানতে এত কিছু চিন্তা কেন করতে হচ্ছে ! ন‌ওশাদ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে , মেয়েটাকে বুকের মাঝে টেনে নিতে এত ইচ্ছে করে কিন্তু পরোক্ষনেই মনে হয় ও কি চাইছে থাকুক এই দূরত্ব টা?
কিছুক্ষণ বারান্দার চেয়ারে বসে রইল সে ! তারপর রুমে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসলো ! ল্যাপটপ টা চার্জে লাগালো ! তাকিয়ে দেখে হেরা আগের মতোই ঘুমিয়ে আছে ! অনেক রাত হয়েছে ঘুম ওর চোখেও আসছে ! কিছুক্ষণ হেরার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ! ডিসেম্বরে র শুরু বলেই হালকা ঠান্ডা পড়েছে এখানেও ! চাদরটা নিজের গায়ে টেনে নিচ্ছে যখন ন‌ওশাদ, হেরা ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরলো ! একদম ন‌ওশাদের মুখোমুখি ! ন‌ওশাদ কাত হয়ে ঘুমন্ত হেরাকে দেখছে ! ওর থেকে শুধু আধা হাত দূরত্বে হেরা ! নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে! সেই ছোট্ট তিল টা আবার তাকে চুম্বকের মত টানছে । দেখতে দেখতে মনের ঘোরে ন‌ওশাদ হাত বাড়িয়ে তিল টা স্পর্শ করলো ! হেরা গভীর ঘুমে নড়াচড়া ও করলো না !
হেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে ওর খুব ভালো লাগছে! একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে ওর শরীর থেকে, কেমন একটা নেশা নেশা লেগে যাচ্ছে ! আবার সেই ঝিঁঝিঁ পোকা শরীরে ঝিম ধরাচ্ছে ! ন‌ওশাদ পাশ ফিরে গেল ! নিজেকে সংযত করার এক অপার শক্তি আছে তার ভেতরে ! সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । চোখ বন্ধ করে পরে র‌ইলো একটা সময় ঘুমিয়ে গেল !

ফজরের সময় এমনিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় সেটা যত রাতই ঘুমাক ! আজ একটু আগে আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল কারণ ঘুমের ঘোরে হেরার হাত ওর ঘাড়ের ওপর পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ছয়টা বছর একা ঘুমায় হঠাৎ হেরার হাতটা ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করতেই চমকে ঘুম ভেঙে গেল।
পাশ ফিরে দেখে হেরা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ! ঘুমন্ত হেরার বয়স আরও কম লাগছে ওর কাছে ! টান দিয়ে সব টা চাদর নিজের দিকে নিয়ে নিলো হেরা ! ন‌ওশাদ উঠে আধ শোয়া হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ফজরের নামাজের আর বেশি সময় নেই !
নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বারান্দায় বসলো ন‌ওশাদ।
তারপর হেরার পাশে গিয়ে ডাকলো ,
হেরা ! হেরা ভোর হচ্ছে যাবে সমুদ্রের কাছে !
আর একবার ডাকতেই হেরা চোখ খুলে তাকালো !
হুঁ! কি হয়েছে ?
ভোর হচ্ছে তুমি যাবে সমুদ্রের কাছে !
হ্যাঁ যাব !
তাহলে উঠো রেডি হয়ে এসো !
ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে ?
না ! চুল ঠিক করে নাও আর একটা চাদর গায়ে দিয়ে নাও বাহিরে হালকা কুয়াশা ঠান্ডা বাতাস ও আছে !
হেরা ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকে গেল!
ন‌ওশাদ ফুল স্লিভ একটা গেঞ্জি পড়ে চুল ঠিক করে চশমা টা চোখে দিচ্ছে যখন, হেরা রুমে এসে ঢুকলো !
আয়নায় চুল ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো ! চলেন!
চাদর পড়তে বললাম না তোমাকে বাহিরে ঠান্ডা !
লাগবে না ঠিক আছি !
তোমার ঠান্ডার সমস্যা চাদর নিয়ে নাও !
আমার চাদর নেই । বিড়বিড় করে বলল হেরা !
ও সরি ! তুমি এবার ঢাকায় গিয়ে আমার সঙ্গে শপিং এ যাবে তোমার যা যা দরকার কিনতে হবে !
হেরা হাসলো আমার অনেক আছে এত অস্থির হতে হবে না!
হেরা একটা কথা বলব, তুমি যদি এভাবে নিজের কি লাগবে না লাগবে বলতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে থাকো কিভাবে হবে ? আমার তো সব খেয়াল করার মত সময় হয়ে উঠে না ! ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরলো তোমার তো আমার প্রয়োজনে র জিনিস গুলোও খেয়াল রাখতে হবে, সেখানে তুমি যদি নিজের টা বলতে ই আন‌ইজি ফীল করো তাহলে তো ঝামেলা ! আমি চাই তুমি আমার খেয়াল রাখো ।
হেরা লজ্জায় মুখ নামিয়ে বলল, আমি তো আপনার পছন্দ অপছন্দ জানি না । আপনার পছন্দের নাগাল ও পাবো না কোন দিন ওসব নামীদামী জিনিস আমি জীবনেও দেখিনি ! যে কাজ কখনোই করিনি সেটা করতে সাহস হবে না কখনো ,আমার তাই মনে হয় !
ন‌ওশাদ হেরার ঘাড়ে হাত রাখলো, হেরা পৃথিবীতে অনেক কাজ আছে মানুষ জীবনে কখনো করেনি কিন্তু তাই বলে কখনো ই করবে না তা কিন্তু না । আর একবার সেই কাজ টা করলে তখন আর বলা যায় না যে করিনি বা করব না ! তুমি জানো সেই কাজ টা কি ?
কারো জন্য শপিং?
ন‌ওশাদ একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো , তারপর হেসে দিল !
ভুল বললাম ? হাসছেন যে ?
না কিছু না চলো সূর্য উঠে যাবে ! তুমি ভালো করে ওড়না দিয়ে কান ঢেকে নাও !
ওরা দুজন কটেজ থেকে বের হয়ে এলো ! ন‌ওশাদ মনে মনে হাসছে ! কি বোঝাতে চাইলাম আর বোকা মেয়ে কি বুঝলো !
রিসোর্টে র নিজস্ব বীচ বলেই বেশি মানুষ নেই ! ন‌ওশাদ আর হেরা পানির কাছাকাছি হাঁটছে !
হেরা তুমি তো আমাকে তোমার গানটা শোনালে না !
কোন গান?
আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে দৌড় দিলে তখন যে গানটা গাইছিলে !
কি যে বলেন আমি কোন দিন গান শিখি নাই ! নানা ভাইয়ের রেডিও তে শুনতাম ! ঐ শুনে শুনে , আর একা একা তো সব মানুষই গুনগুন করে ।
এলিন নাহিনদের যখন ঐ গুনগুন গান শুনাতে পেরেছো আমাকেও শুনাতে হবে !
মাথা খারাপ !
দেখা যাক কি হয় হেরা ! আমার কিন্তু ঠান্ডা লাগছে চলো কটেজের দিকে যাই ! আব্বা উঠে গেছে হয়তো!
জ্বি !

ফরহাদ আজমী তখন‌ও ঘুমিয়ে আছে ! ন‌ওশাদ আর হেরা নিজেদের ঘরে এসে ঢুকলো। চা খাবেন আপনি?
খেলে ভালো লাগতো !
এখানেই আছে সবকিছু আমি বানাই ?
বানা‌ও ! ওয়াটার কেটলি চালু করতে পারবে ?
হুম কালকে ভাবি করেছে যখন আমি দেখেছি । পারব !
গুড ।
হেরা চা বানালো দুজনের জন্য ! ন‌ওশাদের দিকে কাপটা বাড়িয়ে দেয়ার সময় দেখে ন‌ওশাদ মোবাইলে নিশালের ছবি দেখছে !
নিশালের খোঁজ নিয়েছিলেন এর পর ?
হ্যাঁ ওর কলেজের এডজুট্যান্ট এর সঙ্গে কথা হয়েছে ! শরীর ঠিক আছে ! পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ! সামনে ওর এস‌এসসি পরীক্ষা । আসবে এ মাসেই দশদিনের ছুটিতে !
মাত্র দশ দিন !
হুম!
তারপর আবার কবে আসবে ?
একবারে পরীক্ষা শেষ হলে অনেক দিনের ছুটি!
ওকে বললাম, এবার ছুটিতে চলো আমরা দুইজন ঘুরে আসি কোথাও !
রাজি হলো না ওর পড়াশোনার প্রেসার আছে বলল!
ও খুব সিরিয়াস পড়াশোনা নিয়ে ?
ওর মাম্মা সিরিয়াস ছিল তখন ও সিরিয়াস ছিল না । মাম্মা যাওয়ার পর ও সিরিয়াস হয়েছে !
ভালো তো মায়ের ইচ্ছা পূরণ করছে !
আমার তো ওকে ক্যাডেট কলেজে পাঠানোর ইচ্ছে ছিল না কিন্তু ঐ মায়ের ইচ্ছা নাকি ছিল সেটা বলেই তো রাজি করালো আমাকে ! এখন দেখা যাক আর কি কি মায়ের ইচ্ছে ওর কাছে রয়ে গেছে ?
চিন্তা করবেন না আপনার ছেলে আপনার মতোই হবে !
কি জানি , আমি চাই ও ওর মত‌ই হোক ! ন‌ওশাদ উঠে দাঁড়ালো , হেরা আমি রেডি হতে গেলাম । আমি আর রেজোয়ান বের হব হোটেলের সাইটে যেতে হবে ! তুমি ও রেডি হ‌ও ব্রেকফাস্ট করতে যাব আমরা!
জ্বি !
ন‌ওশাদ ওয়াস রুমে ঢুকে যেতেই হেরাও নিজের ড্রেস বের করলো । ব্রেকফাস্ট করতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেল!

সবাই এক সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে রেস্টুরেন্টের দিকে এসে বসলো! রেজোয়ান ন‌ওশাদের পাশে বসে কানে কানে বলল, কি দোস্ত রাতটা কেমন গেল ?
দারুন !
বলেছিলাম না আমি, আমার উপর ভরসা রাখতে!
শালা তুই যা ভাবছিস সেরকম কিছু না ! পাগল নাকি তুই !
আরে এখানে পাগলের মত কি বললাম !এই প্রথম দুজন একসঙ্গে ছিলি ভাবলাম বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে রাতটা দারুন কেটে গেছে !
চুপ !
ঠিক আছে চুপ করলাম !
সুমনা তোমরা যাবে আমাদের সঙ্গে ?
নো ওয়ে ন‌ওশাদ আন্ডার কন্সট্রাকশন কোথাও গেলে ধূলো বালিতে আমার এলার্জির অ্যাটাক শুরু হয়ে যাবে তারপর কনটিনিউয়াসলি হাঁচি ! তোমরা যাও আমি আর হেরা এখানেই থাকব !
আব্বা থাকবে একটু দেখে রেখো !
তুমি টেনশন করো না , আংকেল কে দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের !

ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান চলে গেল কাজে ! হেরা কিছুক্ষণ নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে ব‌ই পড়লো ! একবার শ্বশুরের সঙ্গে বসে গল্প করে এলো। রোদ দেখে শ্বশুর রুমেই বসে আছেন এখন বের হবেন না । টিভি দেখছেন।
সুমনা হেরার রুমে এসে ঢুকলো !
কি করছো?
কিছু না ভাবি ব‌ই পড়ছি ।
কি ব‌ই ?
গল্পের বই !
চলো বাহিরে সেডের নিচে গিয়ে বসি !
ঠিক আছে চলেন !
আমি ড্রেস টা চেঞ্জ করে আসি তুমি এসো আমার রুমে !
জ্বি ভাবি !
সুমনা যাওয়ার পর হেরা নিজেও রেডি হলো ! সাদা জমিনে চিকন একটা লাল পাড়ের শাড়ি সঙ্গে সিঁদুর লাল ব্লাউজ ! শাড়িটা এলিনের । সে ই এই শাড়িটা গুছিয়ে দিয়েছে হেরাকে । হেরার এই ব্লাউজের সঙ্গে পড়তে বলেছে , খুব সুন্দর লাগবে নাকি ওকে । ছবি তুলতে বলেছে অনেক কিন্তু ন‌ওশাদ কে দিয়ে নিজের ছবি তোলার কথা ও জীবনেও বলতে পারবে না !
হেরা সুমনার রুমে ঢুকতেই সুমনা বলল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে সাদা শাড়িতে হেরা !
এলিনের শাড়ি এটা !
সুন্দর।
আমিও তাহলে শাড়ি পড়ি একটু অপেক্ষা করো ! সুমনা শাড়ি বের করে পড়ার জন্য নিয়ে গেল।
হেরা বসে আছে সুমনা সাজছে !
একটা লাল টিপ এনে হেরার কপালে পড়িয়ে দিল সুমনা !
আপনি টিপ পড়েন ভাবি ?
না বহুবছর আগে পড়তাম। কয়দিন আগে আত্মীয়ের বিয়েতে গেলাম তখন গায়ে হলুদে দিয়েছে টিপের পাতা। ব্যাগে রয়ে গেছে দেখে মনে হলো, টিপে তোমাকে দারুন লাগবে ! ন‌ওশাদ কিন্তু এই বাঙালি সাজটা খুব পছন্দ করে ! তুমি এভাবে সেজে থাকো ও দেখলে পাগল হয়ে যাবে !
কি যে বলেন না ভাবি ! হেরা সুমনার কথায় লজ্জা পেয়ে গেল !
হুম আমি ন‌ওশাদ কে পঁচিশ বছর ধরে চিনি ম্যাডাম !
ওরা হাঁটতে হাঁটতে কটেজের সামনে চলে গেল ! সেখানে কাঠের পাটাতনের ওপর বসলো । জায়গা টা এত সুন্দর সামনে সাগর পাশে খাল । কত কাপল , ফ্যামিলি ঘুরে বেড়াচ্ছে !
ভাবি একটা কথা জিজ্ঞাসা করব ?
বলো ? সুমনা হেরার দিকে তাকালো !
উনি কেমন মানুষ পছন্দ করেন ?
ন‌ওশাদ ! ও নিজে সহজ সরল তাই জটিল মানুষ পছন্দ করে না ! একটা কথা কি জানো ন‌ওশাদ খুব ভালোবাসতে পারে ! গীতি ওকে যতটা ভালো বাসতো ও তারচেয়ে বহুগুণ ভালো গীতিকে বাসতো ! গীতির বোন দের দেখেছো খুব রগচটা টাইপের আর গীতি ছিল ডমিনেটিং টাইপের ! ন‌ওশাদ ওর কথার বাহিরে কখনো যেতো না ! এটাই হলো ন‌ওশাদের ভালোবাসা গীতির প্রতি ! গীতি চাইতো ন‌ওশাদ কে নিজের আয়ত্তে রাখতে ন‌ওশাদ সেভাবেই থাকতে পছন্দ করতো । গীতিও ন‌ওশাদের জন্য সব করতো ! জীবনের কোন পরিস্থিতিতে ই ন‌ওশাদ কে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তাও করতো না ! কিন্তু মরে গিয়ে আচমকাই ছেড়ে চলে গেল !
তুমি ন‌ওশাদ কে ভালোবাসো দেখবে ও তোমার মত হয়ে ধরা দিবে !
কিন্তু ভাবি আমি উনার মত হতে চাই ! উনি যা পছন্দ করেন !
সুমনা তাকিয়ে আছে হেরার দিকে ! ন‌ওশাদ খুব ভাগ্যবান তোমাকে ব‌উ হিসেবে পেয়ে । আজকাল মেয়েরা চায় তার মতো হয়ে উঠুক তার স্বামী আর তুমি কিনা চাইছো ন‌ওশাদের মত হয়ে উঠতে !
ভাবি আমি উনার নখের যোগ্য‌ও না, কি বলেন আপনি এসব উনি ভাগ্যবান ? আমি জীবনে কোন পূর্ণ করেছিলাম তাই উনাকে পেয়েছি ! উনার স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছি !
হাসছে সুমনা !
এখন আমি প্রায় সময় চিন্তা করি , আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন এটাই সত্য নুরুল যদি আমার জীবনে গ্রহনের মত না আসতো তাহলে কি আপনার বন্ধুকে পেতাম ?
এটা তোমার ভাগ্যে লিখা ছিল হেরা ! সব কিছু ভাগ্যে লিখা থাকে ! তাহলে তোমাকে একটা গল্প শোনাই হেরা , আমি তখন বুয়েটে পড়ি ফাস্ট ইয়ার প্রায় শেষের পথে ! পরীক্ষা সামনে ! আমার সাবজেক্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ! পরীক্ষা সামনে দেখে ক্লাস, লাইব্রেরি আর বাসা । আড্ডা বন্ধ ! সবাই পরীক্ষার চিন্তায় মগ্ন। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে আসা যাওয়া করি প্রতিদিন ! বাসার গাড়ি নামিয়ে দিয়ে আসে কিন্তু ফিরি দুই বান্ধবী এক সঙ্গে রিক্সায় ! একদিন ফটোকপি করার জন্য নীলক্ষেত যাব । বান্ধবী আসেনি একা আমি । পলাশীর মোড়ে আসতেই খুব বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল ! একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আছি ! আরো অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে ! বৃষ্টি তো আর থামে না ! চিন্তা করলাম নীলক্ষেত আর যাব না বাসায় চলে যাব ! কোন রিক্সা যাবে না ধানমন্ডি ! রিক্সা আসে অন্য লোক উঠে চলে যায় ! প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায় যায় অবস্থা ! অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ! দূরে একটা খালি রিক্সা দেখে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম তখন‌ও ভালো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ! কাদা পানিতে আমার স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেল , হাতের কাগজ কিছু পানিতে পড়ে গেল ! ভিজে তো আমি শেষ । রিক্সাটা যাবে না ! হঠাৎ দেখি একটা ছেলে একটা রিক্সা নিয়ে আমার কাছে এসে বলল, ওকে নিয়ে যান !
আমি সেই রিক্সা নিয়ে ধানমন্ডি এলাম । ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে গেছে ভয়ে ভয়ে আসছি ! বাসার গেটে নামছি দেখি ছেলেটা আমার পিছনে পিছনে এসে অন্য রিক্সা দিয়ে পৌঁছে দিয়ে গেল ! আমি তো অবাক ! ছেলেটিকে ধন্যবাদ টুকুও দিতে পারিনি। বাসায় এসে কয়দিন জ্বরে ভুগলাম খুব ! ছেলেটির কথা খুব মনে পড়ছিল ! কিন্তু জানি না কোথাকার ছেলে ! পরীক্ষা শেষ হলো ! নতুন ইয়ার শুরু হলো ! একদিন এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে আর্কিটেকচারের কিছু ছেলের সঙ্গে পরিচয় হলো । হঠাৎ একজন কে দেখে মনে হলো ওকে কোথাও দেখেছি ! মনের উপর জোর দিয়ে বের করলাম সেই ছেলেটা যে আমাকে রিক্সা খুঁজে দিয়েছে, বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ! পরিচিত হলাম, ধন্যবাদ দিলাম কিছুটা বন্ধুত্ব ও তৈরি হলো ! আর্কিটেকচারের তিন চার জনের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল ! কিন্তু সেই ছেলেটার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব যতটা বেশি হলো তারচেয়েও বেশি ওর সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করতে লাগলো । সে খুব ভালো ছাত্র, ডিপার্টমেন্টের স্যার রা তাকে খুব পছন্দ করে ! কথা বলা , কবিতা আবৃত্তি, গান ও গাইতো সুন্দর , বন্ধু মহলে সবার মধ্য মনি ! আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম ! কিন্তু কিছু বলি না শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখি ! কিছু বলার সাহস ছিল না আমার ! একদিন জানলাম ও একজন কে ভালোবাসে, তখন নিজেকে গুটিয়ে নিলাম । গুটিয়ে নিতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলাম ও কিভাবে কিভাবে বুঝে গেল প্রশ্ন করতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না স্বীকার করে ফেললাম ওকে ভালোবাসি !
হেরা প্রশ্ন করলো, ভাবি মানুষ টা কে ?
বলো তো হেরা কে সে ?
আমি বুঝতে পেরেছি কে সে ! হেরার মুখে স্মিত একটা হাসি !
ঠিক ধরেছো ! ন‌ওশাদ ই সেই মানুষ !
তারপর !
তারপর আর কি ওর বন্ধুত্ব টা আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয় ছিল ওর ভালোবাসার চেয়ে তাই আজ‌ও বন্ধু হয়ে আছি !
আর রেজোয়ান ভাই ?
ও আমার বন্ধু ছিল । ও জানতো আমার মনের খবর ! সে তার বন্ধুত্ব দিয়ে আমাকে ন‌ওশাদের মোহ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছে ! তারপর ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিয়েছে !
তারপরও আপনারা কত ভালো বন্ধু এত কিছু জানার পরেও !
হুম !
একটা কথা কি জানো আজ যে কথা তোমাকে বললাম এই কথা আমরা কেউ ই গীতিকে বলিনি কোনদিন । ও অনেক পজেসিভ ছিল ন‌ওশাদের বিষয়ে ! ও জানলে হয়তো এত সুন্দর বন্ধুত্ব টা থাকতো না আমাদের ! আমি ন‌ওশাদ কে বন্ধু হিসেবে পেতে চেয়েছি তাই ঐ একটা বয়সের মনের আবেগের অনুভূতি টা কে মনের ভেতরেই দাফন করে ফেলতে পেরেছি !
হেরা সুমনার দিকে তাকিয়ে আছে !
ন‌ওশাদ গীতির ভাগ্যে ছিল , ন‌ওশাদ তোমার ভাগ্যে লিখা আছে আমার ভাগ্যে রেজোয়ান যার মনটা সোনার তৈরি ! ওকে না ভালোবেসে উপায় নেই ও আমার ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে !
তুমি ন‌ওশাদ কে ভালোবাসো হেরা ?
হেরা কোন জবাব দিলো না তাকিয়ে আছে সুমনার দিকে!
ন‌ওশাদকে খুব ভালো বাসবে দেখবে তোমার জীবনটা আলোয় ভরে যাবে ! ওর হাতে এমন এক জাদু আছে যেখানে ভালোবাসা দিলে দ্বিগুণ ভালোবাসা পাওয়া যায় , বন্ধুত্ব দিলে দ্বিগুণ বন্ধুত্ব !

ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান লাঞ্চ টাইমে চলে এলো রিসোর্টে! কটেজে হেরাকে না পেয়ে সে আব্বার রুমে ঢুকলো , তিনি বসে বসে জোহরের নামাজ পড়ছেন ! রাজুকে জিজ্ঞাসা করলো হেরার কথা ! ও‌ ই বলল, সুমনা আর হেরা বীচের দিকে গেছে ! ওদের খুঁজতে খুঁজতে ন‌ওশাদ আসছে ! দূর থেকে ই সুমনা কে দেখলো বসে আছে সঙ্গে হেরা ! বাহ্ দুজন শাড়ি পড়ে বসে আছে! ন‌ওশাদ কে দেখেনি ওরা কেউ ! কাছাকাছি আসতেই ন‌ওশাদ দেখতে পেলো সাদা শাড়ি আর লাল ব্লাউজ পড়ে হেরা বসা ! খুব মনোযোগ দিয়ে সুমনার কথা শুনছে ! চুল গুলো সামনে আনা তাই ফর্সা পিঠ, কোমড় দেখা যাচ্ছে ! দাড়িয়ে গেল সে, নিজের ব‌উকে এভাবে লুকিয়ে দেখছে এই রিসোর্টে সেই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি। হাস্যকর না!
ন‌ওশাদ ওদের কাছে এগিয়ে গেল !
কি ব্যাপার ?
চমকে সুমনা বলল,এই তুমি কখন এলে ন‌ওশাদ ?
এলাম মাত্র ! ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকালো ! মনে মনে ভাবছে,সাদা শাড়ি , লাল ব্লাউজ পড়া কত মেয়েকে জীবনে দেখেছে কাউকে এতটা মানিয়ে যেতে কখনো দেখিনি !
আবার লাল টিপ কপালে এই মেয়ে দেখি আজ মাথা খারাপ করে ছাড়বে আমাকে , মনে মনে ভাবছে ন‌ওশাদ !
এত রোদের মধ্যে বসে আছো যে তোমরা ?
আমাদের মাথার উপর সেড আছে ,আর বাতাসের জন্য রোদটা খারাপ লাগছে না ! রেজোয়ান কোথায় ?
ও রুমের দিকে গেল !
তোমরা বসো আমি রেজোয়ান কে নিয়ে আসি ! বলে সুমনা উঠে গেল!
ঠিক আছে !
সুমনা চলে যাওয়ার পর ন‌ওশাদ হেরার পাশে বসতে বসতে বলল, সমুদ্রে নেমেছিলে ?
একা নামব কিভাবে ?
তুমি না ভালো সাঁতার জানো !
হুম, ভাবলাম আপনি যদি বকা দেন !
সেটা ঠিক ভেবেছো একা নামলে বকাই দিতাম ! আমার সঙ্গে নামার কথা তোমার !
আপনি সত্যি সত্যি আমার সঙ্গে সমুদ্রের পানিতে নামবেন ?
তোমার কি মনে হয় ?
ফিফটি ফিফটি সম্ভাবনা !
ন‌ওশাদ হাসছে ! কাছে আসো হেরা ! তোমার টিপটা ঠিক করে দেই একটু বাঁকা মনে হচ্ছে !
ন‌ওশাদ হেরার টিপ ঠিক করে দিল ! খুব সুন্দর লাগছে এই সাদা শাড়িতে ! সুমনা পড়িয়ে দিল শাড়ি ?
না আমিই পড়েছি ! আপনার কাজ শেষ হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি , আমি ভেবেছিলাম বিকেল হবে ফিরতে !
যে কম্পানি টা হোটেলের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করছে ওদের চীফ ডিজাইনার বিকেলের ফ্লাইটে আসবে ওকে নিয়ে বসবো সন্ধ্যায় । এখন তাই চলে এলাম তাড়াতাড়ি !
চলেন কটেজের দিকে যাই !
থাকো না ,আমার তো ভালো লাগছে এভাবে বসে থাকতে ! কতদিন পর এভাবে রিল্যাক্স সময় কাটাচ্ছি ! সামনে সমুদ্র , পাশে সুন্দরী নারী বেহেস্তী মুহুর্ত একেই বলে !
বেহেস্তে সমুদ্র আছে কিনা জানিনা তবে আপনার জন্য সেখানে সত্তর জন হুর নাকি থাকবে !
ইসস সত্তর জন তাই না কি দারুন ব্যাপার হবে ! ন‌ওশাদ হাসছে !
ছেলেরা এটা শুনে খুব মজা পায় !
আর মেয়েরা খুব রাগ করে এটা শুনে যে হাজব্যান্ড সত্তর জন হুর পাবে ! ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে বলল, সত্তর জনকে সামলানো খুব টাফ হবে আমার জন্য তো অবশ্যই !
কিন্তু এখন তো খুশি হচ্ছেন খুব !
তাই আমাকে দেখে মনে হচ্ছে ?
কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি রেগে যাচ্ছো !
সত্যি সেরকম কিছু না। ছিঃ ছিঃ ।
ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরলো দুষ্টামি করলাম ! চলো লাঞ্চ করি তারপর সমুদ্রে নামব তোমার সঙ্গে !

ওরা কটেজের দিকে আসছে ! কটেজের পাশে একটা বর‌ই গাছ । হেরা গাছের কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল ! এই ব‌র‌ই গাছটা দেখে আমাদের বাড়িতে একটা বর‌ই গাছ আছে সেটার কথা মনে পড়ে গেল। প্রতি বছর অনেক ব‌র‌ই আসে ! জানেন তার অর্ধেক আমিই খেয়ে ফেলি !
কিন্তু এটাতে তো বর‌ই নেই দেখছি হেরা !
ঐ উঁচুতে কয়েকটা আছে !
আমি নাগাল পেলে পেড়ে দিতাম তোমাকে কিন্তু যথেষ্ট উঁচুতে !
হেরা বলল, আমি গাছেও উঠতে জানি !
এই মাথা খারাপ মেয়ে কি বলো এসব সাবধান হাত পা ভাঙবে !
কিছু হবে না !
সত্যিই কি তোমার খুব বর‌ই খেতে ইচ্ছে করছে?
আসলে এই গাছটা দেখে মনে পড়ে গেল বাড়ির গাছটার কথা ,সেটাই বড় কথা !
হেরা কে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ ন‌ওশাদ হেরাকে পেছন থেকে আলগি দিয়ে উঁচুতে তুলে ধরলো !
হায় হায় কি করছেন পড়ে যাব তো নামান !
তাড়াতাড়ি পারো হেরা হাত বাড়ালেই নাগাল পাবে এখন !
হেরা হাত বাড়িয়ে বর‌ই পাড়লো !
হেরা কে নামানোর আগেই রেজোয়ান আর সুমনা এসে গেল !
রেজোয়ান বলল,ওপসস সরি সরি ন‌ওশাদ এখানে তো একেবারে বাংলা সিনেমা চলছে দোস্ত ! এই সুমনা চলো কেটে পড়ি !
হেরা ব‌র‌ই হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে !
রেজোয়ান তুমি ওদের লজ্জা দিচ্ছ কেন ? দেখো দুজনেই লজ্জা পাচ্ছে ! ন‌ওশাদের ফিটনেস দেখেছো তুমি পাড়বে এই বয়সে এই কাজ করতে ? আমার হ্যান্ড ব্যাগ টা কিছুক্ষণ হাতে রাখলেই হাঁপিয়ে যাও !
তোমার হ্যান্ড ব্যাগ আর তোমার ওজন কাছাকাছি সুমনা !
সেট আপ !
ন‌ওশাদ কিপ ইট আপ আমরা রেস্টুরেন্টে র দিকে যাচ্ছি এসো তোমরা ! সুমনা রেজোয়ান কে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে গেল !
রেজোয়ান যাওয়ার সময় ন‌ওশাদের কানে কানে বলে গেল , সীন টা দারুন ছিল ! চালিয়ে যা !
হেরা আমি আব্বাকে নিয়ে আসছি তুমিও যাও রেস্টুরেন্টে র দিকে !
হেরা ছুটে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে র দিকে ! এত লজ্জা পেতে হবে কখনও ভাবেনি সে ! ন‌ওশাদ এমন একটা কাজ করবে সেটাও কল্পনা করেনি সে ! হেরা একটা নারকেল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই হাসছে !

সন্ধ্যায় বীচের পাশে বসে ছিল ওরা চারজন । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ! এত সুন্দর একটা পরিবেশ । হঠাৎ সুমনা ন‌ওশাদ কে ধরলো গান শোনানোর জন্য !
তোমার মাথা খারাপ সুমনা !
কেন ভার্সিটিতে পড়ার সময় ন‌ওশাদ কত সুন্দর গান গাইতে তুমি !
ভার্সিটি থেকে বের হয়েছি আজ বিশ বছরের উপর !
কি সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ দেখেছো , প্লিজ চেষ্টা করলেই ন‌ওশাদ এই সন্ধ্যা টা তুমি আরো সুন্দর বানাতে পারো গান গেয়ে !
এই সুন্দর সন্ধ্যায় আর একজন আছে এখানে সে গান শোনাতে পারে আমাদের !
কে রেজোয়ান ?
তোরা শুনতে চাইলে আমি গান গাইতে পারব !
তোমার হেরে গলার গান শুনতে কেউ চাইছে না রেজোয়ান ! আমার মনে হয় ন‌ওশাদ হেরার কথা বলছে ?
হেরা তুমি গাইতে পারো প্লিজ প্লিজ শোনাও !
ভাবি সেরকম কিছু তো পারি না !
যাই পারো ন‌ওশাদ যখন বলছে শুনতে ভালো লাগবে শিওর !
ন‌ওশাদ বলল, গাও না হেরা ! তোমার কিন্তু গান শোনানোর কথা ছিল !
হেরা তার প্রিয় একটা গান দিয়ে শুরু করলো,
বাহিরে চান্দে আলো ঘর অন্ধকার,
খুলিয়া দিয়াছি ঘরের সকল দুয়ার।
তবু কেন সে আমার ঘরে আসে না,
সে আমারে চিনে কিন্তু আমি চিনি না।
চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে ,
কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে !
সবাই মনোযোগ দিয়ে হেরার গান শুনছে ! ন‌ওশাদ এক অন্য রকম মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে দেখছে হেরা কে ! হেরা চোখ বন্ধ করে গাইছে গান ! গান শেষ হলে সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।

রেজোয়ান এর ফোনে ইন্টোরিওর ডিজাইনারের ফোন আসাতে গান আর গাইতে হলো না হেরাকে !
খুব সুন্দর গান গাও হেরা ! সুমনা হেরার হাত ধরলো !
তোমরা গান শুনতে থাকো আমি আর ন‌ওশাদ গেলাম ডিজাইনার চলে এসেছে ! হেরা খুব সুন্দর গান একদম পার্ফেক্ট ছিল এই চাঁদের সঙ্গে ! মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ! চল ন‌ওশাদ !
ন‌ওশাদ উঠে যাচ্ছে , ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল ! গানের কথা গুলো মনে হচ্ছে হেরার মনের কথা । ওকে দূরে সরিয়ে রেখেছি বলে কি এই গান গাইলো ?
ওরা চলে যেতেই সুমনা হেরা কে ধরলো , এত সুন্দর গান গাইতে পারো তুমি ! শিখেছো কোথায়?
কোথাও না ভাবি ! আমার নানার অবস্থা খুব খারাপ ছিল গান শিখানোর মত বিলাসিতা করার উপায় ছিল না!
আজ দুপুরে ন‌ওশাদ যা করলো দেখে খুব মজা পেয়েছি !
ভাবি আমি নিজেই আবাক হয়ে গিয়েছিলাম উনি ওভাবে আমাকে কোলে তুলে নেয়াতে । রেজোয়ান ভাই কি ভেবেছেন কে জানে?
ওর কথা বাদ দাও ও ন‌ওশাদের সঙ্গে সব সময় মজা করে !
চলো হেরা রুমে যাই পানিতে নেমেছি বলে এখন পুরো গা ব্যথা করছে।
আমার খুব ভালো লেগেছে ভাবি !
তোমার বয়স বাইশ আমার ছিচল্লিশের বুড়ো হাড্ডি , বুঝলে চলো রুমে !
ওরা দুজন রুমে চলে এলো ! হেরা শ্বশুরের সঙ্গে বসে টিভি দেখলো কতক্ষণ ! শ্বশুর নয়টার ভেতরে ডিনার করে ফেলে ! হেরা ডিনার করার সময় পাশে বসে রইল।
বাবু কোথায় ব‌উমা ?
অফিসের কাজ করে আব্বা !
তুমি এখানে বসে না থাকলেও চলবে যাও তোমার ছেলের কাছে যাও ও কাঁদবে !
হেরা চুপচাপ বসে আছে ! শ্বশুর কে দেখলে ওর মায়া হয় প্রায় সময় , ক্ষনে ক্ষনে কথা ভুলে যান তিনি !
শ্বশুরের খাওয়া শেষ হলে হেরা সুমনার ঘরে গেল !
সুমনা ফোনে কথা বলছে দেখে বের হয়ে একা একাই কটেজের বাহিরে বীচের দিকে একটা পাটাতনের ওপর বসে রইল ! জায়গাটা অন্ধকার কিন্তু হারিকেন, বিভিন্ন রঙ্গিন বাতি জ্বলছে তাই আলো আছে যথেষ্ট । একা থাকতেও ভালো লাগছে এই মুহূর্তে। দুপুরে ন‌ওশাদ ওকে যেভাবে কোলে তুলে নিলো কথাটা মনে হতেই একা একাই হাসছে হেরা ! মানুষটা আসলেই অদ্ভুত !
হঠাৎ হেরা তার পিঠে হাতের স্পর্শ পেল ! গা পুরো ঝাড়া দিয়ে উঠলো ওর , ন‌ওশাদ এভাবে হাত রেখেছে !
লজ্জা লাগছে তাকাতে !
হাতটা এখনো পিঠে রাখা !
হেরা পাশ ফিরে তাকাতেই আকাশ থেকে পড়ল ! অজানা অচেনা একটা ছেলে মুখে দাড়ি হেরার পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ! হেরা তাকাতেই আবার হাসছে !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here