তবু_সুর_ফিরে_আসে ২০তম পর্ব ২য় খন্ড

0
169

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

২০তম পর্ব

২য় খন্ড

সকাল থেকে আনারের মা আজ ছুটোছুটি করছে ! বিকেলে তার স্যারের বোন দুলাভাই আসবে সে জন্য রাতে অন্য সব ভাই রা তাদের ব‌উদের নিয়ে হাজির হবে ! মেহমানদের খাওয়া থেকে শুরু করে আপ্যায়ন সব করতে হবে তাকেই ! বহুবছর থেকে এসব কাজ করে সে অভ্যস্ত । কিন্তু তবুও ইদানিং সে হাঁপিয়ে উঠে ।
আনারের মা তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেন ?
আম্মা অস্থির হচ্ছি কি সাধে , সমস্যা তো ফুফু না সমস্যা হলো স্যারের ভাইয়ের ব‌উ রা ! আসবো আর আমার কামের ভুল ধরবো !
তুমি চিন্তা করো না তো !
আম্মা তাড়াতাড়ি সংসার টা আপনার হাতে নেন তাহলে দেখবেন কারো কোন মাতব্বরি শুনতে হ‌ইব না !
হেরা হাসলো , আনারের মা আমার তো এখনো নিজেকে এই সংসারের মনেই হয় না !
হ‌ইব আম্মা একটা কথা ক‌ই কিছু মনে নিয়েন না যেদিন এই ঘর বদলায়ে আপনার ঘর ঐটা হ‌ইব দেখবেন আপনারো মনে হ‌‌ইব সংসার আপনার, দ্বায়িত্ব আপনার, মানুষ গুলোও আপনার !
কি জানি ?
আম্মা আজকে সুন্দর ক‌ইরা সাজগোজ ক‌ইরা থাকেন তো আপনারে ফুফুআম্মা প্রথম দেখব ! স্যার খুব মানে সন্মান দেয় বড় ব‌ইনরে আবার ফুফুআম্মাও স্যাররে সব ভাইদের চেয়ে বেশি আদর করে। খুব আদর করব আপনারেও আগের আম্মারে অনেক আদর করতো !
আমার ভয় লাগছে !
ভয়ের কিছু নাই !
নিশাল কোথায় ?
ভাইয়ার মাস্টার আসছে পড়ে ! সেই দুপুরের খাওয়ার পর আসছে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ব স্যারের কাছে !
এলিন আনারের মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো ! কে আসবে বৌমনি ?
স্যারের বড় ব‌ইন আর দুলাভাই !
সেজন্যই বাসায় আজ এত আয়োজন চলছে !
হুম! তুমি কখন এলে ভার্সিটি থেকে?
অনেকক্ষণ !
আফা আম্মারে সুন্দর ক‌ইরা আপনাদের মত সাজায় দেন তো !
আরে না না । আমি শুধু শাড়ি পরব । মুরুব্বি মানুষ শাড়ি পড়লে খুশি হবে কি বলো এলিন!
তুমি ব্যাপার টা আমার উপর ছেড়ে দাও তো আমি তোমাকে রেডি করে দিচ্ছি ! চলো কোন শাড়ি পড়বে দেখি !
তাড়াতাড়ি করেন আফা গাড়ি কিন্তু এয়ার পোর্ট গেছে যে কোন সময় আইসা পড়ব সবাই !

সন্ধ্যায় ন‌ওশাদ নিজে এয়ার পোর্টে গিয়ে বোন আর দুলাভাই কে রিসিভ করলো ! ন‌ওশাদের বোন তাকে ছোট থেকেই খুব আদর করে।‌ন‌ওশাদ মায়ের চেয়ে বেশি বুবুর ন্যাওটা ছিল ছোটবেলায়। এয়ার পোর্টে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন জান্নাত আজমী ! অনেকদিন পর ভাইদের দেখলে আজ‌ও তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
ন‌ওশাদের গাড়ি বাসায় পৌঁছানোর আগেই ছোট দুই ভাইয়ের ব‌উ নাদিয়া আর মিলা বাচ্চাদের নিয়ে হাজির হলো ! দুই ভাইয়ের ব‌উ এসে আনারের মা কে ধরলো ।
তোমার নতুন আম্মা কোথায় ?
আম্মা নিজের ঘরে বসেন আপনারা আসব এখনি !
এই আনারের মা তোমার আম্মা নাকি গেস্ট রুমে থাকে স্যারের সঙ্গে থাকে না ?
ছোট আম্মা আমি কেমনে ক‌ই স্যার কখন ডাকে নিজের ঘরে আর কখন আসে আম্মার ঘরে ? আমি তো স্যার আর আম্মার ঘরের দিকে সারাদিন চায়া থাকি না !
এক রুমে থাকে না সেটা বলো !
তাদের ব্যাপার সেপার তারা জানে বসেন আম্মা আসতেছে রেডি হয় !
নিশাল ওর নতুন মা কে দেখে কি বলল সেটা বলো ?
ভাইয়া তো খুব খুশি দুপুরেও দুইজন একসাথে ভাত খাইছে ! আম্মা ভাইয়ার জন্য রান্না করে !
সত্যি বলছো এটা তো বিরাট ঘটনা! আমি ভাবছিলাম নিশাল রিয়েক্ট করবে !
মেঝ ভাবি আমারো তাই মনে হচ্ছিল !
মিলা দেখি বুবু এত কম বয়সী বিয়ে করেছে বলে ভাইয়াকে কি বলে ?
ভাবি বুবু কিছুই বলবে না দেখো বুবু অন্য দুই ভাইয়ের থেকে ভাইয়ার প্রতি বেশি দূর্বল ! দেখলে না গীতি ভাবি মারা গেল যখন বুবু কি কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে গেল।
গীতি ভাবীর প্রতি বুবু সব সময় ই বেশি দরদ দেখিয়েছে বিয়ের পর থেকে তো তাই দেখতাম বুঝলে !
চলো উপরে যাই !
না মিলা এখন সিঁড়ি ভাঙতে ইচ্ছে করছে না। তোমার মেঝ ভাইয়া এখনো কেন আসছে না বুঝলাম না ?
ভাইয়া কি এয়ার পোর্টে গেছে?
না বড় ভাইয়া গেছে ! বুবু কি ভাববে এত বছর পর আসছে আর ছোটভাই রিসিভ করতে আসে নাই !
ওদের কথার মাঝখানে হেরা চলে এলো।
ভাবি, বড় ভাবি আসলো ! দেখেছো এখন দেখে মনেই হয় না গ্রামের মেয়ে ! হাঁটা চলা ড্রেস সব কিছুতেই এলিগ্যান্ট ব্যাপার চলে আসছে !
দেখতে হবে না কার ব‌উ , ন‌ওশাদ আজমীর গায়ের বাতাস লাগলেও এলিগ্যান্ট ব্যাপার চলে আসার কথা। তারমধ্যে সব কিছু হাতে ধরে শিখাচ্ছে মনে হয় সুমনা ভাবি ! উনি তো মারাত্মক স্মার্ট !
ভাইয়ার সঙ্গে যখন দাঁড়ায় না এই মেয়ে একেবারে সেরকম লাগে ।
ঠিক বলেছো !
ভাইয়া তো অল‌ওয়েজ স্মার্ট , ফিগার মেইনটেইন করে । প্রতিদিন গলফ খেলে , জীমে যায়, সুইমিং করে । আর বাকি দুই ভাই যদি নিজেদের নিয়ে ভাবতো একটু ! বিশেষ করে আরমান !
তোমার দেবর মনে হয় কত সচেতন , ঘোড়ার ডিম !
হেরা কাছে আসতেই চুপ হয়ে গেল দুজন!
কেমন আছো ভাবি ?
ভালো !
ওমা কি সুন্দর লাগছে তোমাকে !
ভাবি তো বিউটিফুল এজ অল‌ওয়েজ !
কখন আসলেন আমাকে মাত্র বলল আনারের মা !
এই ভাবি আপনি করে বলো না আমাদের, সম্পর্কে তুমি বড় বয়স যাই হোক !
ঠিক আছে বলব !
তোমরা কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলে শুনলাম !
আপনার ভাইয়ার কাজ ছিল সঙ্গে আব্বা, রেজোয়ান ভাই আর সুমনা ভাবি ও গিয়েছিল।
আব্বা যাচ্ছে শুনে তো অবাক হয়েছি আমরা !
এত মানুষ নিয়ে হানিমুন , ভাইয়া কক্সবাজারে হানিমুনে যাবে কল্পনাও করিনি । ভাইয়া যাবেন গ্রীস, অস্ট্রিয়ার মত জায়গায় কথাটা বলে নাদিয়া হেসে উঠলো!
উনি হোটেলের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন সঙ্গে আমাদের নিয়েছেন !
মিলা উঠে এসে হেরার পাশে বসলো । ভাবি গলার কানের এই এমারেল্ড এর সেট কি ভাইয়া দিয়েছে ?
জ্বি !
ভাইয়ার পছন্দ‌ই অসাধারণ !
তোমার কোন সন্দেহ আছে মিলা, ভাবিকে দেখে বুঝতে পারছো না ! ভাইয়ার পছন্দের হাইট কোথায়।
হেরা ওদের গল্পের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু অস্বস্তি বোধ করছে !
দুজনেই চুপ করে গেল কারণ ন‌ওশাদের গাড়ি গুলো এসে বাসায় ঢুকেছে ! দুই বুদ্ধিমতি জা উঠে গেল তাদের ননাস কে রিসিভ করতে !
হেরার খুব লজ্জা লাগছে ! ননাস কে আগে দেখেনি আর কালকে সন্ধ্যার পর থেকে ন‌ওশাদের সামনে যেতে তার কেমন যেন লাগছে ! উনি তাকালেই গা শিউরে উঠছে !
গাড়ি থেকে নেমেই ন‌ওশাদের বোন ছোট ভাইয়ের ব‌উদের জড়িয়ে ধরলো !
হেরা বাকি দুজনের থেকে যথেষ্ট পিছনে দাঁড়িয়ে আছে !
নতুন ব‌উ কোথায় তাকে আগে দেখি !
বুবু আগে ঘরে আসেন ভাবি আছে ।
হেরা মাথায় ঘোমটা দিয়ে এগিয়ে গেল ননাসের সামনে ! ছলছল চোখে জান্নাত আজমী হেরা কে জড়িয়ে ধরলো , হেরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো !
জান্নাত আজমী ন‌ওশাদ কে উদ্দেশ্য করে বলল,বাবু তুই তো দেখি পরী নিয়ে চলে এসেছিস ভাই !
ন‌ওশাদ নিজেও আজ হেরাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। বটল গ্রীন একটা বেনারসী কাতান টাইপের শাড়ি পড়েছে হেরা ! চুল টেনে খোঁপা করেছে । বেলী ফুল দিয়ে সেই খোঁপা ঢেকেছে ! কানে গলায়, হাতে এমারেল্ড আর জারকানের গয়না পড়েছে ! কপালে একটা সবুজ টিপ ।‌ এত সুন্দর লাগছে ! মাথায় ঘোমটা দেয়াতে একে বারে নতুন ব‌উ ! গাড়ি থেকে নেমেই ওকে দেখে বুকে ধাক্কার মত লাগলো ওর । কালকে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওর দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে হেরা। নিজের কাছে অপরাধী লাগছে নিজেকে ন‌ওশাদের। রাতে ভেবেছিল সরি বলবে , গিয়েছিল রুমে সরি বলার জন্যেও কিন্তু বলতে পারেনি । আজকে বলবে ! কিন্তু আজকে ওকে কাছেই পাওয়া যাবে না মনে হচ্ছে।
কি রে বাবু ওখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস , এদিকে আয় ?
ন‌ওশাদ বুবুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো !
ব‌উ এর পাশে দাড়া আমি দেখি তোদের দুজনকে !
বুবু আগে বসো রেস্ট নাও এত লম্বা জার্নি করে আসলে।
যা বলছি আমার কথা শোন আমি রেস্ট করব তোকে চিন্তা করতে হবে না !
ন‌ওশাদ হেরার পাশে এসে দাঁড়ালো !
ন‌ওশাদের দুলাভাই মজা করে বলল, শালাবাবু তোমার ব‌উ ভাগ্য মারাত্মক! দারুন মানিয়েছে!
হেরা আমার ভাইয়ের খেয়াল রেখো ও জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে !
বুবু হয়েছে এখন আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিও না প্লিজ ।
জান্নাত আজমী হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা গয়নার বক্স বের করলেন ! হেরার হাতে দিয়ে বললেন , তোমার জন্য ! নতুন ব‌উ খালি হাতে দেখব নাকি !
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে আছে ! হেরা লজ্জা পাচ্ছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে !
লজ্জার কিছু নেই সব ভাইদের ব‌উ দের আমি দিয়েছি এটা তোমার ! কি নাদিয়া, মিলা ?
জ্বি বুবু । তবে বড় ভাইয়ার প্রতি আপনি বেশি দূর্বল ! তাই বেশি আদর পায় ভাবিরা ! হাসতে হাসতে নাদিয়া বলল!
বাবুর মত অন‌্য দুই ভাই আমাকে এতটা ভালোবাসে বুঝি ? কোথায় বাকি দুজন এত দিন পর আসলাম ওদের দেখা নেই !আর বাবু এত ব্যস্ত মানুষ ঠিকই সব ফেলে এয়ার পোর্টে ছুটে গেছে।
সরি বুবু ওরা আসছে পথে আছে !
বুবু ফারহান তো বাসায়ই কম থাকে !
সে আমি জানি টাকার পিছনে দৌড়াচ্ছে !
বুবু চলো আব্বার কাছে যাই !
বাচ্চারা কোথায় ?
সব উপরে নিশালের রুমে ! আসছে !
দোতলায় উঠতেই সব বাচ্চারা ঘিরে ধরলো তাদের ফুপি কে। হৈচৈ এর মধ্যে ন‌ওশাদ হেরার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ! তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে কে সাজিয়ে দিলো ?
হেরা মাথা নিচু করে বলল, এলিন!
চোখে আটকে আছো একেবারে। কথাটা বলেই ন‌ওশাদ তার আব্বার রুমে ঢুকে গেল !
নিশাল কে দেখে তার ফুপি জড়িয়ে ধরলো। আমার শেহজাদ বাবাটা কেমন আছে ?
ভালো , তুমি আমাকে শেহজাদ ই ডাকবে সব সময় ?
হুম তোমার নাম শেহজাদ আজমী আমি রেখেছিলাম !
কলেজে সবাই ডাকে কিন্তু ফ্যামিলি র লোকজন নিশাল ডাকলেই ভালো লাগে তো !
ওটা তোমার পাপা রেখেছে আমি শেহজাদ ই ডাকব !
আচ্ছা ডেকো ! অনেক দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা।
তুমি ইউএসএ তে চলে আসো আমার কাছে !
পাপা দিবে না জীবনেও, ক্যাডেট কলেজে ই আছি তাই বলে বাসায় চলে আসতে । দেশের বাহিরে গেলে থাকতে পারবে না পাপা।
নিশালের ছোট চাচী মিলা নিশালকে সবার সামনেই বলে উঠলো, নতুন মা কে কেমন লাগলো নিশাল ?
চুপ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে সবাই ! নিশাল যথেষ্ট অপ্রস্তুত হয়ে গেল, সবচেয়ে বেশি অপ্রস্তুত হয়ে গেল হেরা !
জ্বি ভালো চাচী !
ছোট ভাইয়ের ব‌উ এর দিকে তাকিয়ে জান্নাত আজমী বলে উঠলেন , তোমার দেখি মিলা বুদ্ধি আগের মতই আছে । বাচ্চা ছেলেটা কে অপ্রস্তুত করে দিলে খেয়াল আছে !
সরি বুবু !
তোমরা সবাই লিভিং রুমে গিয়ে বসো আমি আব্বার সঙ্গে দেখা করে আসি !
সবাই লিভিং রুমে চলে গেল ! হেরা নিশালের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো !
সরি আমার জন্য তোমার আন‌ইজি অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
আপনি সরি বলছেন কেন ছিঃ ! আমার চাচীরা একটু এমন‌ই মজা করে !
কিছু খাবে তুমি , দুপুর থেকে পড়ছো !
জ্বি আনারের মা কে দিয়ে কিছু একটা রুমে পাঠিয়ে দিলেই হবে !
আচ্ছা পাঠাচ্ছি !
থেঙ্কস আন্টি !
হেরা তাকিয়ে আছে নিশালের দিকে ।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল , কিন্তু যখন জান্নাত আজমী হেরা কে গেস্ট রুমে আবিষ্কার করলেন তখন‌ই মেজাজ খারাপ করে ফেললেন।
কিছুই বললেন না চুপ করে র‌ইলেন সবার সামনে ! ছোট ভাই আর তাদের ব‌উদের সামনে ন‌ওশাদ কে তিনি ছোট করতে চাইছেন না !
সবাই রাতে ডিনার করে বিদায় নেয়ার পর তিনি ন‌ওশাদ কে ধরলেন !
বাবু আমি কোন ঘরে থাকব ?
তোমার জন্য তিন তলায় রুম রেডি করে রেখেছি বুবু কেন অসুবিধা হচ্ছে ?
দোতলায় কি সমস্যা , এখানেও তো গেস্ট রুম আছে সবসময় আসলে তো আমি ওখানেই থাকি !
বুবু তুমি আর দুলাভাই আমার রুমে থাকো‌‌, আমি আনারের মা কে বলে দিচ্ছি সব নিচে নামিয়ে আনবে এক্ষুনি!
আর তুই কোথায় থাকবি ?
আমার বাসা এক জায়গায় থাকলেই হলো !
জায়গাটা কোনটা শুনি ?
বুবু তুমি থাকাথাকি নিয়ে প্যাঁচানো শুরু করলে কেন , কি হয়েছে ?
কি হয়েছে মানে তোর বিয়ে করা ব‌উ তোর রুমে না থেকে গেস্ট রুমে থাকছে কেন বাবু ?
বুবু আসলে হয়েছে কি , তুমি শান্ত হয়ে বসো বুঝিয়ে বলছি !
আগে বল বিয়েটা সত্যি করেছিস তো ?
ওমা কি বলে বিয়ে না করে একটা মেয়েকে ব‌উ পরিচয় দিব সবার কাছে ? আশ্চর্য!
আশ্চর্য তো আমি হচ্ছি , আমার ভাই বাবু তো এমন অবিবেচক না ! একটা মেয়ে কে বিয়ে করে তাকে তার প্রাপ্য সন্মান না দিয়ে তাকে আশ্রিতার মত বাসায় ফেলে রেখে অসন্মান করার কি মানে ?
নাকি মেয়েটা তোর স্ট্যাটাস এর সাথে যাচ্ছে না ওর সংস্পর্শে আসতে দ্বিধা হচ্ছে ?
বুবু এসব কি বলছো ?
ঠিক কথাই বলছি । তোর বাসা কাজের লোকজনের ভরা তোর ব‌উ কে তাদের সামনে অপমান করছিস না ? বাহিরের মানুষের কথা বাদ দে ওরা তোর বেড রুমে উঁকি দিয়ে দেখছে না কিন্তু এই বাড়ির অন্য লোকদের সামনে তো অপমান করছিস বাবু !
বাবু মেয়েটা গরীব হলেও মানুষ তো , ওর ও মান সন্মান বলে কিছু আছে ! সন্মান দিতে বিয়ে করে এখানে এনে কিন্তু আরেক অপমানের ভেতরে ফেলেছিস। একটা মেয়ের বিয়ের পর সবচেয়ে বড় অধিকার তার স্বামীর উপর ! তুই সেটাই তো তাকে দিচ্ছিস না !
বুবু আমি একটু সময় চেয়ে নিয়েছি ওর কাছ থেকে !
কিসের সময় ? দশ জন ওকে নিয়ে হাসাহাসি করছে তোকে নিয়ে হাসাহাসি করছে ! আজ এই মুহূর্তে তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে আসবি ! সেখানে তোদের মধ্যে দূরত্ব থাকলো কি ঘনিষ্ঠতা হলো কেউ দেখতে আসবে না বাবু ! আল্লাহ কে ভয় কর অন্তত !
বুবু নিশাল যাক !
কেন এবার গেলে তোর ছেলে আবার আসবে যখন তখন কি আবার ব‌উকে ঘর থেকে বের করে দিবি ?
না তা কেন ?
বুবু আর কয়টা দিন সময় দাও !
তাহলে তুই তোর মত থাক তোর বাসায়, আমি কালকে আমার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকা শুরু করি !
এখন আমি কিভাবে হেরা কে আসতে বলব তাও আজকেই ?
তোকে কিছু বলতে হবে না আমি ওকে নিয়ে আসছি তোর ঘরে !
জান্নাত আজমী ন‌ওশাদের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন । ন‌ওশাদ খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

বুবু কি করবে বুঝতে পারছে না সে ! সবচেয়ে বড় কথা নিশাল কে কিভাবে ফেইস করবে কালকে ! ইস বুবু কয়টা দিন পরে আসলে কি হতো !
দরজায় পারুল এসে দাঁড়িয়েছে !
কিছু বলবে ?
স্যার ফুফুআম্মা বলল বিছানায় সুন্দর দেখে একটা চাদর বিছিয়ে দিতে !
কেন এই চাদর কি দোষ করেছে ভালোই তো আছে ! ন‌ওশাদের মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
আমি জানি না বলল , নতুন দেখে চাদর বিছাতে!
জানো না নতুন কড়কড়া চাদরে আমি ঘুমাতে পারি না , আনারের মা কোথায় ?
উপরের গেস্ট রুমে ফুফুআম্মার জিনিস দোতলায় আনে !
এখন কি করতাম স্যার ? পারুল ভয়ে ভয়ে বলল!
কি আর করবে বিছিয়ে দাও !
পারুল বিছানার চাদর পাল্টে দিচ্ছে !
ন‌ওশাদ মনে মনে ভাবছে বুবু আর কি কি নাটকীয়তা করে আজ আল্লাহ জানে ! রেজোয়ানের মত খাট ফুল দিয়ে ভরবে না তো ! ও আল্লাহ প্লিজ সেইভ মি !
একটু পর জান্নাত আজমী তড়িঘড়ি করে এসে ন‌ওশাদের রুমে ঢুকলো !
কি রে এখনো শার্ট প্যান্ট পড়ে বসে আছিস কেন ?
চেন্জ করতে যাচ্ছি বুবু !
শোন একটা সুন্দর দেখে পাঞ্জাবি পড় !
বুবু এত রাতে পাঞ্জাবি পড়ব কেন ? তোমার কি সত্যি মাথা খারাপ হয়ে গেছো ! হেরা দেড় মাস এই বাড়িতে আছে ও আমাকে প্রতিদিন দেখছে বুবু ওর জন্য এখন আমাকে এই রাত বিরাতে পাঞ্জাবি পড়তে হবে না !
আচ্ছা থাক পড়িস না , মেজাজ ঠান্ডা কর !
তোকে একটা জিনিস দিতে এসেছি সেটা দেখ !
কি জিনিস ?
জান্নাত আজমী একটা ছোট কাঠের বক্স থেকে পাঁচ লহরের মোটা সোনার চেইন বের করলেন । মটর দানার মতো দানা চেইনের ভেতরে !
এটা কি জিনিস বুবু ?
এটা আমাকে দাদী দিয়েছিল ছোট বেলায় ! আম্মার খুব ইচ্ছে ছিল দাদীর এই চেইন আমার মেয়েও পড়বে ! আমার তো কোন মেয়েই হলো না ! তোদের একটা ভাইয়ের ও মেয়ে নেই ! আমার ছেলেদের ও মেয়ে নেই ! এখন এই চেইন নিয়ে কি কবরে যাব ?
এটা আজ রাতে তুই হেরাকে দিবি ।
কেন বুবু তোমার জিনিস তুমি তোমার ছেলের ব‌উদের দাও !
চুপ কর, ওদের যা দেয়ার দিয়েছি !
হেরা কে ই কেন দিতে হবে এটা , আরো তো ভাইয়ের বউ আছে তাদের দাও !
কারণ আমার মন বলছে হেরাই এই বংশে নেক্সট একটা মেয়ের জন্ম দিবে ! আমি ততদিন থাকি না থাকি তাই ভাবলাম দিয়ে দেই ! আর কারো বাচ্চা হ‌ওয়ার সম্ভাবনা আছে বল?
ন‌ওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, কি যে বলো না তুমি বুবু হাস্যকর ! এই বয়সে তালেগোলে একটা বিয়ে করেছি এতেই লোকজন কি বলছে কে জানে ! তারপর আবার বাচ্চা ! নিশাল এবার এসএসসি দিবে কত বড় ছেলে আমার । আর তুমি কত কি চিন্তা করছো ! তোমাকে নিয়ে না পারি না !
তোর বাবা হ‌ওয়ার ইচ্ছে নাও থাকতে পারে কিন্তু হেরার তো মা হ‌ওয়ার খায়েস হবে তখন ?
বুবু আমি এত কিছু এখন চিন্তা করতে পারছি না !
আচ্ছা ঠিক আছে রাতে একটা গিফট দিতে হয় , এটা দিয়ে দিস হেরাকে প্লিজ !
না বুবু তোমার ইচ্ছে হলে যত খুশি দিতে চাও দাও কিন্তু আজ রাতে হেরাকে আমি কিছুই দিব না ! প্রয়োজনে কালকে সকালে গয়নায় মুড়িয়ে দিব কিন্তু আজ রাতে এ ঘরে ওকে আমি কোন উপহার দিব না !
কেন ?
একুশ বছর আগে গীতিকেও প্রথম রাতে কিছুই দিতে পারিনি বুবু !
জান্নাত আজমী উঠে দাঁড়ালেন এখানে রেখে গেলাম তোর যা ইচ্ছা করিস ! একটা কথা কি একুশ বছর আগে গীতি কে যা দিয়েছিলি এই মেয়েটাকে তুই সেটা কিন্তু আজ দিবি না আমি জানি ! জিনিস টা হলো , তোর ভালোবাসা!
জান্নাত আজমী উঠে চলে গেলেন !
ন‌ওশাদ বুবুর শেষ কথা টুকু শুনে একটু হোঁচট খেলো !
সত্যিই তো আজ রাতে হেরাকে সে কিছুই দিতে পারবে না ! কিছুই না !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here