এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ২২.

0
198

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২২.

[ আজকের পর্বে একটা সেন্সিটিভ ইস্যু উঠে আসবে। একটা নির্দিষ্ট দেশের নাম। সত্যি বলতে এই উপন্যাস লেখা শুরু করার আগে যখন আমি এই প্লট সাজাই তখন মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম যে এই ইস্যু গুলো নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না তো? এখনো আমি একই চিন্তাই করছি। তবুও আপনাদের জ্ঞানার্থে জানাচ্ছি যে এই সম্পূর্ণ উপন্যাসটা কাল্পনিক। তাই পুরো কাহিনীটাকে কাল্পনিক হিসেবেই বিবেচনা করবেন। ধৈর্য্য ধরে পড়ুন কোনো আজেবাজে মন্তব্য করার পূর্বে। ]

বাকহারা দূর্জয় জুলফিকারের ডাকে সম্বিত ফিরে পায়। কানের ব্লু টুথ ডিভাইসটা হতে ভেসে আসছে জুলফিকারের অস্থির স্বর,

“ দূর্জয়? ক্যান ইউ হেয়ার মি? দূর্জয়? “

দূর্জয় অবিশ্বাস্যকর দৃষ্টি মেলে রেখেই ক্ষীণ স্বরে জবাব দেয়,

“ ইয়েস স্যার। “

“ দূর্জয়, একটা আননোন ওয়েবসাইট থেকে একজন টেরোরিস্টের ফেস রিভিল করা হয়েছে। এন্ড ছবিতে থাকা মানুষটা দীপ্ত… “

দূর্জয় জুলফিকারকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,

“ দীপ্ত আমার সামনে আছে এই মুহুর্তে। “

জুলফিকার মুজতবার নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। সে আর কিছু বলবে তার পূর্বেই কলটা ডিসকানেকটেড হয়ে যায়। জুলফিকার চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি শুরু করে। এটা কিভাবে সম্ভব? দীপ্ত তো মৃত। সতেরো দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে আঠারো দিনের মাথায় তারা খবর পায় একটা ডেড বডি পাওয়া গিয়েছে। দূর্জয় নিজে সেই ডেড বডি শনাক্ত করে নিশ্চিত করেছিলো যে লাশটা দীপ্তরই। এতো দিন মৃত হিসেবে জেনে এসেছে যেই মানুষটাকে, সে কিভাবে টেরোরিস্টদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে? জুলফিকার কিছুতেই মেলাতে পারছে না কিভাবে দীপ্তর মতো একজন ব্রাইট স্টুডেন্ট এসবে জড়িয়ে পড়লো। খুব বড় কোনো রহস্য আছে এই ঘটনার পিছনে।

জুলফিকার আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে না। তার এই মুহুর্তে কলেজ লোকেশনে পৌঁছাতে হবে। যাওয়ার পূর্বে সে মিটিং রুমের কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা সৈন্যকে আদেশ দিয়ে বলে,

“ ওই আননোন ওয়েবসাইটের সব ডিটেইলস চাই আমি। সবার আগে ওই ওয়েবসাইট এক্সেসের লোকেশন ট্র্যাক করো। কিছু জানলে সবার আগে আমাকে কল করে জানাবে। “

__________

দূর্জয় এক কদম সামনে এগুতে নিলেই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক পিস্তল তাক করে বলে উঠে,

“ এক পা-ও সামনে এগোবে না। আমি তোমাদের দীপ্ত না। আমি আব্রাহাম। “

দূর্জয় বিস্ময় নিয়ে দেখছে নিজের ভাইকে। চোখে বিস্ময় থাকলেও সে বেশ শান্ত গলায় জবাব দেয়,

“ নাম বদলালে কি পরিচয়ও বদলে যায়? “

দীপ্ত কটুক্তি করে বলে,

“ হ্যাঁ যায়। আমি কোনো মেজরের ছেলে কিংবা ভাই নই। আমি আতঙ্কবাদীদের একজন। “

দূর্জয় আবার পা বাড়িয়ে সামনে এগোতে নিলেই দীপ্ত শক্ত করে পিস্তল তাক করে চেচিয়ে উঠে,

“ ভাইয়া সামনে এগোবে না। “

দূর্জয়ের দুই হাত অচল হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। কার দিকে বন্দুক তাক করবে সে? নিজের ভাইয়ের দিকে? আপন ভাইয়ের দিকে? দূর্জয় নরম গলায় বলে,

“ তুই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সতেরোটা দিন আমরা কোন জাহান্নামের মধ্যে দিয়ে পাড় করেছি তোর ধারণা আছে? বাবা চলে যাওয়ার পরও মামণি শক্ত ছিলো। কিন্তু তুই নিখোঁজ হওয়ার পর মামণি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। হসপিটালাইজড করতে হয়েছিলো। একদিকে মামণির এই অবস্থা অন্যদিকে তুই নিখোঁজ। আমি পাগলপ্রায় হয়ে তোকে খুঁজেছি দিন রাত। পুলিশ, সামরিক বাহিনী কিছু বাদ ছিলো না। কিন্তু তোর কোনো হদিস পাওয়া যায় নি। এসব ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে দেখি যে তোর বয়সী আরো কয়েকজন ভার্সিটি স্টুডেন্টস নিখোঁজের রিপোর্ট আসছে থানায়। তখনই আমি সম্পূর্ণ ছক কষে আন্দাজ করেছিলাম তুই কোথায় ফেসেছিস। কিন্তু এই কথা কাউকে বলতে পারি নি আমি। মামণি এরকম কিছু শুনলে সহ্য করতে পারতো না। আর যারা তোর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে দায়ী তাদের চক্রকে ধরার জন্য আমি অন্যের লাশকে তোর নামে নিশ্চিত করে সকলকে বলে দেই তুই মৃত। সবার আড়ালে তোকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়ে রাখি আমি। কিন্তু বিশ্বাস কর ভাই একটা কোনো ক্লু পাই নি আমি। একটা বছর ধরে আমি মামণির সামনে দাঁড়াতে পারছি না। মামণির সাথে কথা বলতে পারছি না। মিথ্যা বলার অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছি। “

দীপ্ত নীরবে দূর্জয়ের সমস্ত কথা শুনে। তার সল্পভাষী ভাই আজ কতো কথা একসঙ্গে বলে ফেললো! এক বছরের জমানো কথা কি এতো দ্রুত ফুরোয়? হয়তো না। তবে দূর্জয়ের কথাগুলো দীপ্তর মন নরম করতে পারে না। সে রাইফেল তাক করে রেখেই জবাব দেয়,

“ ভালো করেছো। দীপ্ত মৃতই। সবাই ওকে মৃত জানাতেই তোমাদের মঙ্গল। “

দূর্জয় শুধায়,

“ এরকম করিস না ভাই। ভাইয়াকে বল তোর সাথে কি কি হয়েছিলো। এসব কিছুর পিছনে কাদের হাত আছে ভাইয়াকে বল একবার। “

দীপ্ত দূর্জয়ের উৎকণ্ঠা দেখে হেসে বলে,

“ আমি এখন ওদের একজন ভাইয়া। তোমার নীতি আর আমার নীতি ভিন্ন। তোমার বিশ্বাস আর আমার বিশ্বাসও ভিন্ন। কিছুই বলতে পারবো না আমি। “

দূর্জয় এবার রেগে ধমকে উঠে,

“ একটা চড় মেরে তোর নাটক ছুটাবো। নিজেকে কাদের একজন বলে দাবী করছিস তুই? তুই কার ছেলে ভুলে যাচ্ছিস? নিজেকে ওদের একজন দাবী করে বাবার আত্মাকে কষ্ট দিচ্ছিস তুই। “

দূর্জয়ের কোনো কথাই দীপ্তকে নরম করতে পারে না। সে নিজের জায়গায় অনড় রয়। দূর্জয় ফের নরম স্বরে বলে,

“ ভাই ওরা কি বলে তোর ব্রেনওয়াশ করেছে? কিভাবে এতো বদলে দিলো তোকে? “

দূর্জয়ের ছলছল দৃষ্টি দেখে এবার কিছুটা মায়া হয় দীপ্তর। নিজের এতো বছরের জীবনে ভাইয়াকে কখনো কাঁদতে দেখে নি সে। বাবার জানাজার সময়ও না। আজও সে নিজের ভাইয়ের চোখে পানি দেখতে চায় না। দীপ্ত ক্ষনিকের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। উদাস গলায় বলে,

“ একটা জিনিস চাইবো ভাইয়া। দিবে? “

“ বলে দেখ। “

“ এই দরজার ওপারে একটা মেয়ের কান্নার ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছো? মেয়েটা এই কলেজের স্টুডেন্ট। রুহী মেহরোজ। ওর সাথে আমি প্রতারণা করেছি। কিন্তু ওই মেয়েটা বোকা আর দূর্বল। আমি আতঙ্কবাদী জেনেও ওর মধ্যে ঘৃণার কোনো পাদুর্ভাব দেখিনি। নিজের প্রতারকের পরিণতি জানতে চেয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলো। আমার বিশ্বাস ও নিজের গায়ে আতঙ্কবাদীর প্রেমিকা হওয়ার কলঙ্ক মাখবে। ওকে সেই কলঙ্ক থেকে বাঁচিও। ভালোবাসা থেকে না, ওর প্রতি ঋণী হিসেবে এই আবদার করছি। “

শেষের কথাটুকু দীপ্ত মৃদু হেসে বললো। দূর্জয় দূর্বল গলায় প্রশ্ন করে,

“ এই জীবনে কেনো জড়িয়ে পড়লি? নিজের পরিণতির কথা ভেবেছিস একবারও? “

দীপ্ত একইভাবে হেসে বলে,

“ আই হ্যাড নো আদার অপশন। কিন্তু চিন্তা করো না। আমার পরিণতি তোমার হাতে হবে না। তোমার রাইফেলের বুলেট শত্রু মারার জন্য, ভাই মারার জন্য নয়। “

কথাটুকু শেষ করে চোখের পলকেই দীপ্ত নিজের হাতের বন্দুকটা নিজের মাথার একপাশে তাক করে ট্রিগার পুল করে। ফায়ারের তীক্ষ্ণ শব্দের সঙ্গে দূর্জয়ের নিঃশ্বাসটাও গলার কাছে আটকে গেলো। যেনো কেউ দানবীয় হাতে তার গলা চেপে ধরেছে। মুহুর্তেই দরজার ওই পাশ হতে জোরে জোরে কেউ দরজায় আঘাত করে চিৎকার করতে শুরু করে। পাগলের মতো কান্না মিশ্রিত স্বরে আওড়াচ্ছে একটা নাম,

“ আব্রাহাম! দরজা খুলো। কি করেছো তুমি? এই! দরজা খুলো। “

দূর্জয়ের সেদিকে হুশ নেই। সে দ্রুত হাতের বন্দুক ফেলে মাটিতে পড়ে থাকা লাশকে গিয়ে ঝাপটে ধরলো। দুর্দম্য ব্যক্তিত্বের খোলস চিড়ে চোখ দিয়ে অশ্রু না বেরোলেও তার ভেতরটা সম্পূর্ণ ভেঙেচুরে আসে৷ অস্ফুটে ডাকে,

“ দীপ্ত? ভাই? ভাই তাকা। ভাইয়া ডাকছি। “

__________

দো তলায় হোস্টেজদের উদ্ধার অভিযানে দুইজন আতঙ্কবাদী নিহত হয়েছে এবং একজনকে জীবিত আটক করতে সক্ষম হয়েছে সৈন্যরা। ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ার ফলে জিম্মি মেয়ে গুলো সেই সুযোগে পালানোর চেষ্টা করতেই এবং আব্রাহামের “ একটাও যেনো না বাঁচে “ বাক্যটা শুনতেই আতঙ্কবাদীরা এলোমেলো গুলি ছোড়া শুরু করে। সেই গুলি বর্ষণে অন স্পট নিহত হয় ৩৩ জন শিক্ষার্থী। আহত হয় ১৫ জন। সব মিলিয়ে কেবল ৫০ জনকে সম্পূর্ণ সহি সালামতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সৈন্যরা। এছাড়াও ব্যাক আপ টিম ফোর্সের সদস্যরা অন্য ফ্লোর হতে আরো তিন জন আতঙ্কবাদীকে জীবিত অবস্থায় আটক করে।

সকল সৈন্যরা যখন আটককৃত আতঙ্কবাদী এবং হোস্টেজদের নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় কলেজ ভবনে প্রবেশ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার মুজতবা। উদ্ধার অভিযান সহজ করতেই বোধহয় ইলেকট্রিসিটি ফেরত এসে পড়েছে এখন। কৃত্রিম আলোয় আলোকিত ভবনের ভেতরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে দেখতে ভেতরের দিকে এগিয়ে যায় জুলফিকার। তখনই সে মুখোমুখি হয় সাদাতের। একটা আহত মেয়েকে কোলে তুলে ত্রস্ত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো সে। আহত মেয়েটাকে দেখতেই জুলফিকারের নিশার কথা মনে পড়ে যায়। সাদাত প্রশ্ন করে,

“ স্যার আপনি? “

“ মেজর দূর্জয় কোথায়? “

সাদাত দ্রুত গলায় জবাব দেয়,

“ স্যার গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলো। “

এইটুকু বলতেই জুলফিকার সাদাতকে ইশারা করে যেতে। সাদাতও আর অপেক্ষা না করে মেয়েটাকে নিয়ে বাহিরে চলে যায়। জুলফিকার দ্রুত করিডোরের দুই পাশে প্রত্যেকটা রুম চেক করতে করতে একাউন্টসের রুমের সামনে এসেই তার পা জোড়া থেমে যায়।

রক্তাক্ত মেঝের উপরে একটা লাশ বুকে টেনে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে নীরব ভঙ্গিতে বসে আছে দূর্জয়। দরজার ওপাশ হতে এখন কোনো নারী স্বরও ভেসে আসছে না। হয়তো সৈন্যরা মেয়েটাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। জুলফিকারের উপস্থিতিতেও দূর্জয়ের মধ্যে বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। যেমন ছিলো তেমনই আছে। নির্লিপ্ত। জুলফিকার এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে দূর্জয়ের পাশে। স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিথর দেহের মুখপানে। মুহুর্তেই তার বুকও কামড়ে উঠে। ছেলেটাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন জুলফিকার। ছেলেটার জন্মের দু’দিনের মাথায় বন্ধুর সঙ্গে হসপিটাল পৌঁছে কোলেও তুলেছিলেন সে। অথচ সেই দুই দিনের ছেলেটাই আজ জীবনের বাইশ বছর বয়সে এসে তার জীবন গতি থেমে গেলো।

দীপ্তর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জুলফিকার দূর্জয়ের কাধে হাত রাখতে নিলেই তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই অপরপ্রান্ত হতে বলে উঠে,

“ স্যার ওয়েবসাইটের লোকেশন ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছি। “

“ কোন জায়গা? কোন জায়গা হতে এই ওয়েবসাইট এক্সেস করা হচ্ছে? “

অপরপ্রান্তের মানুষটা এবার বেশ জড়তা মিশ্রিত সুরে বললো,

“ স্যার, এখানে কান্ট্রি নেম ফিলিস্তিন শো করছে। “

ছোট্ট বাক্যটুকু শুনতেই জুলফিকারের ভ্রু কুচকে কুচকে আসে। তার মুখ চিড়ে বেরিয়ে আসে,

“ হোয়াট! “

অপরপ্রান্তের মানুষটা এবার বেশ ভীত গলায় বলে,

“ স্যার আমি এক্ষুনি রিচেক করছি। আ’ম শিওর কোনো টেকনিক্যাল ইস্যুর জন্য হয়তো এমনটা শো করছে। আ’ম সরি। আমি আবার নিশ্চিত হয়ে আপনাকে একুরেট তথ্য জানাবো। “

কলটা কেটে জুলফিকারও এবার স্থির ভঙ্গিতে বসে রয়। তার মাথা ঝিম ধরে আসছে। প্রফেশনাল লাইফের বিভিন্ন ঝড় ঝাপ্টা সামলে এতো গুলো বছর পাড় করার পর এখন এই কেসটা তাকে খুব পীড়া দিচ্ছে। একের পর এক প্রশ্নের জালে কেসটা আরো ঘোলা হচ্ছে। ফিলিস্তিন? কিভাবে সম্ভব? ওই রকম ইহুদীদের বিপক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যস্ত একটা দেশের পক্ষে কিভাবে সম্ভব এতো বড় একটা মিশন পরিচালনা করা? কখনোই না। অন্তত জুলফিকার মুজতবার কাছে এই তথ্যটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জুলফিকার বলে উঠে,

“ এখান থেকে চলো দূর্জয়। নিজের আবেগ সামলাও। অন্তত এখানে আবেগটা দেখিও না। খুব বড়ো একটা ঝামেলায় ফাসবে তুমি। আমি সবটা সামলানোর ব্যবস্থা করছি। “

জুলফিকারের বলা কথাগুলো দূর্জয়ের কানে পৌঁছায়। আবেগ? আসলেই তো দূর্জয়ের আবেগ দেখানোর অনুমতি নেই। পুরুষ মানুষ! দু ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিলে লোকে দূর্বল ভাববে। শত্রুরা নিজের প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে তেড়ে আসবে। এতো বছর যেই কাজটা করে নি দূর্জয়, আজ তা কিভাবে করবে সে? দূর্জয় আবেগ দেখায় না। তবে উঠেও যায় না। একই ভঙ্গিতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বসে রয়। জুলফিকার এবার ধমকে উঠে,

“ বোকামি করো না দূর্জয়। আতঙ্কবাদীর লাশ বুকে জড়িয়ে বসে থাকার মানে বুঝতে পারছো? কারো কানে এই খবর গেলে খুব ফাসবে। চলো এখনি। “

আতঙ্কবাদী শব্দটা দূর্জয়ের কানে বেশ তীক্ষ্ণ ঠেকে। তার ভাই আতঙ্কবাদী নয়। তার ভাইকে আতঙ্কবাদী বানানো হয়েছে। আর যারা এই কাজটা করেছে তাদের পরিণাম আরো ভয়ংকর হবে। দূর্জয় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সেই পরিণতি দেখবে।

__________

কলেজ প্রাঙ্গণে এসে জমা হচ্ছে একের পর এক অসংখ্য এম্বুল্যান্স। সেই সকল এম্বুল্যান্সে আহত শিক্ষার্থীদের তোলা হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে। সেই আহত শিক্ষার্থীদের ঠিকঠাক ভাবে এম্বুল্যান্সে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব সৈন্যরাও নিজেদের কাধে যেনো তুলে নিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার পথে এম্বুল্যান্স গুলো চরম বিপাকে পড়েছে। সৈন্যদের নিরাপত্তা সীমার ওপারেই রয়েছে উপচে পড়া মানুষের ভীড়। হোস্টেজদের অভিভাবক এবং সাংবাদিকদের ভীড় ঠেলে গাড়ি বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে প্রায়।

এরকম পরিস্থিতি দেখে সাইফের মেজাজ বিগড়ে যায়। এই আবেগী জাতি অসময়ে আবেগ দেখায় প্রচুর। যা সাইফের কাছে চরম বিরক্তিকর মনে হয়। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,

“ বালামার, এদের কি বিবেক নাই নাকি? মাইয়া গুলারে হসপিটালে নেওয়া বেশি ইম্পোরট্যান্ট এখন। আর এরা রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায় আছে। “

কথাটা বলতে বলতেই সাইফ এগিয়ে যায় ভীড়ের দিকে। তার সাথে সাথে তার টিমের বাকিরাও এগিয়ে যায়। সবাই যখন ভীড় কমাতে ব্যস্ত তখন সাদাত পুলিশের কাছ থেকে মাইকটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,

“ আপনারা প্লিজ ভীড়টা কমান। জায়গা খালি করুন। এম্বুল্যান্স গুলোকে যেতে দিন। ইঞ্জুরডদের অবস্থা আরো ক্রিটিক্যাল করে তুলবেন না প্লিজ। “

সাদাতের কথার পিঠে একজন মধ্যবয়স্ক নারী কান্না মিশ্রিত সুরে বলে,

“ আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে দেখবো আমি। “

সাদাত নরম গলায় আশ্বাস দিয়ে বলে,

“ ম্যাম, আপনি হসপিটালে যান। সবাইকে ওখানেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানে ওয়েট করে আপনারা নিজেদের সময় নষ্ট আর পরিস্থিতি জটিল করা ছাড়া আর কিছুই করছেন না। প্লিজ বুঝুন। “

সারাদিন কিছু সংখ্যক পুলিশের চামাড়ের ন্যায় আচরণের পর সৈন্যদের তরফ থেকে এই নরম গলার কথায় হোস্টেজদের পরিবারের সদস্যরা কিছুটা শিথিল হয়। তারা একে একে সরে গিয়ে ভীড় কিছুটা কমায়। সাইফ সাদাতের থেকে মাইকটা নিজের হাতে নিয়ে বলে,

“ আমার সাংবাদিক ভাই বোনেরা আপনারাও প্লিজ একটু কো অপারেট করুন। এম্বুল্যান্স গুলো যাওয়ার সুযোগ করে দিন আগে। তারপর নিজেদের নিউজ কাভার করুন। “

লোক ভীড়ে চোখ বুলাতে ব্যস্ত সাদাতের দৃষ্টি হঠাৎ করেই এক জায়গায় স্থির হয়। সে বিস্ময় নিয়ে সেই পানে তাকাতেই ভীড়ের মধ্য থেকে একটি অবয়ব দ্রুত লুকিয়ে পড়ে। সাদাত প্রথমে অবাক হলেও সঙ্গে সঙ্গে সে সাইফকে বলে ভীড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে সেই অবয়বকে খুঁজতে।

ব্যস্ত পায়ে ভীড় ঠেলে বেরোনোর চেষ্টার মাঝেই আচমকা কারো সাথে ধাক্কা লেগে পাকা রাস্তায় বসে পড়ে এক রমণী। এম্বুল্যান্স বের হওয়ার রাস্তা করে দিতে সবাই তখন দ্রুত পায়ে সরে যেতে ব্যস্ত। সেই ধাক্কাধাক্কিতে কিছু সংখ্যক মানুষ রমণীর ডান হাতের পিঠের উপর দিয়ে হেঁটে চলে যায়। ব্যথায় কুঁকড়ে হাতটা সরিয়ে নিতেই একটি বলিষ্ঠ হাত এসে রমণীকে টেনে দাঁড় করায়। প্রথমে রমণী থ্যাঙ্কিউ বলতে নিলেও সেই হাতের মালিককে দেখে তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হয় না। সাদাত শক্ত মুখে প্রশ্ন করে,

“ কি নাম যেনো তোমার? হোয়াটেভার! তুমি এখানে কি করছো? আবার আমাকে ফলো করছো? “

মুখ লটকে রমণী প্রশ্ন করে,

“ তোমার মেমোরি এতো ডাল? ডিফেন্সে চান্স পেলে কি করে বলো তো? “

প্রশ্নের বিপরীতে পাল্টা প্রশ্ন শুনে সাদাত বিরক্ত হয়। সে মেয়েটার হাত ধরে টেনে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসে। কিছুটা দূরে নিরিবিলি এক জায়গায় এসে তার হাত ছেড়ে দিয়ে শাসায়,

“ উদ্দেশ্য কি সেটা বলো তোমার? “

“ তোমার কি মনে হয়? এই চট্টগ্রাম শহর তোমার একার? “

“ দেখো মেয়ে! তোমাকে আমি প্রথম দিন থেকে সন্দেহের খাতায় তুলে রেখেছি। এই নিয়ে তিনবার এবং এটাই শেষ বার। ফারদার যদি আমি তোমাকে এরকম স্পাইগিরি করতে দেখি খুব খারাপ হয়ে যাবে। “

কথাটা বলেই সাদাত প্রস্থান করতে নিলে মেয়েটা রাগী গলায় বলে উঠে,

“ এক্সকিউজ মি এংগরি ইয়াং ম্যান। আমার নাম স্নিগ্ধা। সো ফারদার কল মি বাই মাই নেম। “

সাদাত ফের বিরক্ত হয়। তার কেনো মনে হচ্ছে মেয়েটা চাইছে যেনো সাদাত তার নাম মনে রাখুক? ব্যস্ততা না থাকলে এখনই এই মেয়েটাকে দেখে নিতো সাদাত।

__________

ফোলা ফোলা চোখ মেলে ঘুম থেকে উঠেছে কেবল বহ্নি। চারিদিকে তাকিয়ে সে দেখে রুমে কেউ নেই। ফেইরি লাইটের টিমটিমে আলোয় রুমটা মৃদ আলোকিত হয়েছে। সেই আলোর সাহায্যে আরেকবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিজের পাপাকে খুঁজে সে। সন্ধ্যায় পাপা এসে কি আদুরে স্বরে তাকে ডেকেছিলো। বহ্নি সঙ্গে সঙ্গে সব অভিমান ভুলে দরজা খুলে দেয়। পাপা কি সুন্দর তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলো। নিজ হাতে খাইয়েও দিয়েছিলো। বহ্নি মাম্মার কথা জিজ্ঞেস করতেই পাপা বলেছিলো মাম্মা এখনো হসপিটালে। আরো কিছুদিন পর ফিরবে। বহ্নি আর কোনো প্রশ্ন করে নি। করবেই বা কেনো? সে তার পাপাকে সবথেকে বেশি বিশ্বাস করে। পাপা কখনো মিথ্যা বলবে না নিশ্চয়ই? কিন্তু এখন পাপা কোথায় গেলো? বহ্নি ঘুমানোর সময় তো তার পাশেই ছিলো!

প্রশ্নটা মনে উঁকি দিতেই বহ্নি বিছানা ছেড়ে পা টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। সবার আগে সে নিজের রুম বরাবর মাম্মা পাপার রুমে উঁকি দেয়। রুমটা খালি দেখে সে ভেবে নেয় সম্ভবত পাপা হসপিটালে মাম্মার কাছে গিয়েছে। এটা ভেবে বহ্নি নিজের রুমে যেতে নিলেই বাড়ির বাহির হতে অদ্ভুৎ শব্দ ভেসে আসে। বহ্নি বরাবরই কৌতূহলী সব ব্যাপারে। এই শব্দ শুনেও তার মনে আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ নিয়েই সে ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে। নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ির ব্যাক ইয়ার্ডে যেতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়ে আছে একটা পুরুষ। নাক মুখ দিয়ে তার বেলাগাম গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। তাকে লাগাতার লাথি মারছে হিরণ। হিংস্র পশুর ন্যায় ফোস ফোস করছে সে। তার ঠিক পাশেই ইবাত দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে হিরণকে থামানোর কোনো লক্ষ্মণ নেই। হিরণ এই পর্যায়ে লাথি মারা থামিয়ে এবার একটা শক্ত রড হাতে নিয়ে তা দু’হাতে ধরে আঘাত করতে শুরু করে সেই পুরুষকে। কিন্তু পুরুষটার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হওয়ার উপায় নেই। সাদা রঙা একটা টেপ দিয়ে তার মুখ আটকে দেওয়া হয়েছে। কেবল উউউ জাতীয় শব্দ বের করতে সক্ষম হচ্ছে সে। কিন্তু সেই শব্দটুকুও হিরণের সহ্য হয় না। সে আরো জোরে আঘাত করে হিসহিসিয়ে ভয়ংকর স্বরে বলে উঠে,

“ এই জানোয়ারের বাচ্চা! মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করবি না। আমার মেয়ের ঘুম ভাঙলে তোকে জানে মেরে ফেলবো আমি। “

এতটুকু দেখতেই বহ্নি দ্রুত দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে সামান্য ফাঁক দিয়ে দেখতে থাকে তার পাপার মতো দেখতে এক হিংস্র পশুর অত্যাচার। হিরণ ফের হিসহিসিয়ে বলে উঠে,

“ দায়িত্ব দিয়েছিলাম তোকে। বাণীকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। একটা মেয়ে তোর চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে গেলো অথচ তোরা হাতে চুড়ি পড়ে বসেছিলি? “

কথাটুকু বলেই আরো আগ্রাসী হয়ে মারতে শুরু করে হিরণ। লোকটা গলাকাটা মুরগির মতো মাটিতে কাতরাতে থাকলো। এতদূর দেখেই বহ্নি ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। সে মানতে চায় না এই মুহুর্তে সে যা দেখেছে সব সত্যি। বহ্নি যখন আড়ালে লুকিয়ে ভয়ে কাপছে সেই মুহুর্তে হিরণ পেটানো থামিয়ে একটা রিভলবার নিয়ে লোকটার দিকে তাক করে শুট করে। সাইলেন্সার বসানোর ফলে সেই শুটের কোনো শব্দ না হলেও, সেই দৃশ্য দেখে বহ্নি পালাতে নিলে দরজায় ঠিকই শব্দ হয়।

হিরণ, ইবাত সহ উপস্থিত আরো কয়েকজনের দৃষ্টি স্থির হয় দরজার পানে। হিরণ এক মুহুর্ত কিছু একটা ভেবে চোখ খিচে বন্ধ করে শিট বলে উঠে। পরপরই সে দ্রুত পায়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। বহ্নি ততক্ষণে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। দরজা লাগিয়ে সে সোজা বিছানার নিচে গিয়ে উবুড় হয়ে চোখ বুজে শুয়ে রয়। ভয়ে এখনো কাপছে সে। সম্পূর্ণ শরীর দিয়ে তরতর করে ঘাম ছুটেছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দ হতেই বহ্নি ভয়ে আরো কুঁকড়ে যায়। অস্ফুটে বলে উঠে,

“ মাম্মা। “

হিরণ বাহির থেকে লাগাতার ডেকে যাচ্ছে,

“ বহ্নি! মা! পাপা ডাকছি। দরজা খুলো মা। “

__________

গোছল সেড়ে প্রচন্ড লজ্জা এবং আড়ষ্টতা নিয়েই দূর্জয়ের কথামতো আলমারির তাক হতে তার মায়ের একটা শাড়ি নিয়ে পড়ে বাণী। হালকা সবুজ রঙের শাড়িটা কি কাপড়ের তৈরী সেই সম্পর্কে ধারণা নেই বাণীর। এসব ব্যাপারে ধারণা তার বরাবরই কম। তবে শাড়ির সঙ্গে পরিধেয় সাদা রঙের ব্লাউজটা যে সুতির কাপড়ের তা সে বুঝতে পেরেছে।

গোছলে যাওয়ার আগে সে জানালা দিয়ে একবার বাহিরে উঁকি মেরে দেখেছিলো। দূর্জয়ের নিযুক্ত করা সেই নিরাপত্তা কর্মীরা এখনো অটল পায়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে খানিকটা স্বস্তি অনুভব করে বাণী। এই নিরাপত্তা কর্মীদের বেড়াজাল পেরে নিশ্চয়ই হিরণ তার কাছে পৌঁছাতে পারবে না? নাকি পারবে? কে জানে!

আপাতত বাণী উদাস ভঙ্গিতে বিছানায় বসে নিজের মেয়ের কথা ভাবছে। বহ্নির জন্মের পর থেকে একদিনও নিজের মা ছাড়া থাকে নি। এই ক্ষানিকের বিচ্ছেদ বাণীর হৃদয় পুড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার কাছে আর কোনো উপায়ও নেই। সুযোগ বুঝে সে নিজের মেয়েকেও ওই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। নিজের কাছে নিয়ে আসবে। এইসব ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। যেখানে থাকবে না কোনো খারাপ ছায়া।

ভাবনায় ডুবে থাকা বাণী বাস্তবতায় ফিরে কলিংবেলের শব্দে। সে দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পীপহোল দিয়ে বাহিরে একবার উঁকি দিয়ে দ্রুত হাতে দরজা খুলে। দ্বারপ্রান্তে ইউনিফর্ম পরিহিত দূর্জয়কে দেখে সে কোনো প্রশ্ন করার আর সাহস পায় না। এই থমথমে দূর্জয় ভয়ংকর। তা বাণীর জানা আছে। সে নীরবে সড়ে দাঁড়ায়। দূর্জয় একপলক তাকে দেখে নিয়েই ঘরে প্রবেশ করে। বাণীও দরজা লাগিয়ে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। দূর্জয় বদ্ধ কামরার সামনে গিয়ে পকেট থেকে একটা চাবি বের করে। রুমের লক খুলে অন্ধকার সেই রুমে প্রবেশের পূর্বে থমথমে গলায় শুধায়,

“ আমি বাড়িতে আসায় যদি তোমার মধ্যে কোনো ইনসিকিউরিটি কাজ করে তাহলে রুমে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে লক করে বসে থাকো। ফজরের আজান হলেই আমি বেরিয়ে যাবো। তার আগে রুম থেকে বের হবে না। “

আদেশমূলক কথাটুকু বলেই দূর্জয় সেই অন্ধকার রুমের ভেতর প্রবেশ করে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দেয়। বাণী ঠায় দাঁড়িয়ে রয় আপন জায়গায়। তার মন কু ডাক গাইছে। খুব খারাপ কিছু কি হয়েছে? কে জানে!

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here