এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ২৩.

0
199

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২৩.

চাবির সাহায্যে দরজার লকটা খুলেই নব ঘোরায় এক সু বলিষ্ঠ হাত। হাতের রগ গুলো তার ফুলে দৃশ্যমান হয়ে আছে। অতি নীরবে সাজানো রুমটায় প্রবেশ করতেই উৎকণ্ঠা মিশ্রিত দৃষ্টি মেলে চোখ বুলায় সম্পূর্ণ রুম জুড়ে। কেউ নেই। ধীর পায়ে আরো কয়েক কদম এগিয়ে আসতেই তার কানে পৌঁছায় কারো নিঃশ্বাসের শব্দ। নীরব রুমটায় সেই নিঃশ্বাসের স্বর বেশ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের সেই স্বর অনুসরণ করে সে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায়। অত:পর হাঁটু গেড়ে বসতেই দেখতে পায় বিছানার নিচে দৃশ্যমান একটা ফ্রকের অংশ।

বিছানার চাঁদর কিছুটা উঠিয়ে নিচের দিকে উঁকি দিতেই সে দেখতে পায় নিজের প্রিয় মুখখানি। কিন্তু সবসময়ের মতো সেই মুখে আজ মিষ্টি হাসি লেপ্টে নেই। সেই মুখ জুড়ে লেপ্টে আতংক। ফোলা ফোলা চোখ দিয়ে বয়ে পড়ছে অবিরত নোনাজল। হিরণকে দেখতে পেয়েই ভয়ে আরেকটু ভিতরের দিকে চলে যায় সেই ছোট্ট দেহের মালিক।

হিরণ ফ্যালফ্যাল চোখ মেলে অবলোকন করে নিজের মেয়ের এই দূরে সড়ে যাওয়ার চেষ্টা। মুখে কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারে না সে। গলার কাছটায় তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করে। যেনো কোনো কাঁটাতার দিয়ে তার গলা শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মুখে কিছু বলতে না পারলেও নিজের ডান হাতটা মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রয় হিরণ। বহ্নি সেই বাড়িয়ে দেওয়া হাতকে অগ্রাহ্য করে প্রতিবাদী গলায় বলে,

“ নো! তুমি কিলার পাপা। “

হিরণ আরেক দফা বুকে যন্ত্রণা অনুভব করে। হেরে যাওয়া গলায় বলে,

“ তুমি ভুল বুঝছো মা। “

“ নো পাপা। তুমি ওই আংকেলকে মারছিলে। তুমি আংকেলকে শুট করেছো। “

হিরণ এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার মতো করে বলে,

“ না মা। ওইটা ব্যাড আংকেল ছিলো। তাই পাপা মেরেছি। তুমি পাপাকে ট্রাস্ট করো না? “

হিরণের প্রশ্নের পিঠে বহ্নি দ্বিধায় পড়ে যায়। সে একহাতে চোখের পানি মুছে হিরণের দিকে তাকায়। কোনটা বিশ্বাস করা উচিত তার? যা সে চোখে দেখেছে নাকি যা তার পাপা বলছে? এটা সত্য যে তার পাপা কখনো কাউকে মারে না। অন্তত বহ্নি কখনো দেখে নি। তাহলে কি সত্যিই ওই আংকেলটা ব্যাড ছিলো?

দ্বিধা সংশয় নিয়ে বহ্নি প্রশ্ন করে,

“ কি করেছে ওই আংকেল? “

হিরণ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। বহ্নির এই প্রশ্নে মৃদু আশ্বাস খুঁজে পায় সে। শান্ত স্বরে বলে উঠে,

“ ধরো তুমি তোমার প্রিয় টয়েস একজনকে দিয়ে বললে সেটার খেয়াল রাখতে। কিন্তু সে সেটার খেয়াল রাখতে পারে নি। হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে তুমি কি করবে? “

বহ্নি ক্ষোভ মিশ্রিত সুরে বলে,

“ খুব রাগ করবো। ওকে খুব হেট করবো। “

“ এক্স্যাক্টলি! পাপাও ওই আংকেলকে একটা রিসপোন্সিবেলিটি দিয়েছিলাম। পাপার খুব দামী একটা জিনিস দেখে রাখার। কিন্তু ওই আংকেল সেই জিনিসটা ভালো করে দেখে রাখে নি। যেই কারণে জিনিসটা এখন হারিয়ে গিয়েছে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। “

বহ্নি এবার রাগ, কান্না ভুলে অবাক গলায় প্রশ্ন করে,

“ ওই জিনিসটা তোমার অনেক প্রিয়? “

“ খুব প্রিয়। “

বহ্নি এবার আরেকটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“ আমার থেকেও বেশি প্রিয়? “

মেয়ের প্রশ্নের পিঠে হিরণ হেসে দেয় এবার। হাসতে হাসতে জবাব দেয়,

“ ঠিক তোমার সমান প্রিয়। “

বহ্নি মনে মনে কিছুটা নারাজ হয়। কি সেই জিনিসটা? যেটার গুরুত্ব তার পাপার লাইফে ঠিক তার সমান? বহ্নির লটকে রাখা মুখ দেখে হিরণ মৃদু হেসে ফের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“ বেরিয়ে আসো মা। পাপা ওয়েট করছি। “

বহ্নি গাল ফুলিয়ে বলে,

“ একটা শর্ত আছে? “

“ কি শর্ত? “

“ ওই আংকেলকে তুমি শাস্তি দিয়েছো। এখন ট্রিট করে ঠিক করে দাও। কাউকে মারা খুব খারাপ কাজ। মাম্মা শুনলেও রাগ করবে। “

বহ্নির কথা শুনে হিরণ ক্ষনিক সময় নীরব রয়। ছেলেটা আর বেঁচে আছে বলে তো মনে হয় না। বেঁচে থাকলেও হয়তো তার দেহ এতক্ষণে জিন্দা মাটিতে সমাধি দিতে নিয়ে গিয়েছে ইবাত। আর হিরণ চায়ও না ছেলেটা বাঁচুক। কিছু দোষ ক্ষমার অযোগ্য হয়। ক্ষমা যতই মহৎ গুণ হোক না কেন, হিরণের দ্বারা ক্ষমা করা সম্ভব না। তবুও সে বহ্নির মন রক্ষার্থে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে,

“ আচ্ছা। “

বহ্নি এবার খুশি হয়। তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ওই আংকেল ঠিক হয়ে গেলে তার পাপা আর কিলার হবে না। এই বিশ্বাস মনে পুষে বহ্নি দ্রুত ইদুর ছানার মতো বিছানার নিচ হতে বেরিয়ে আসে। হিরণ মেয়েকে কোলে তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতেই একটা স্বস্তি অনুভব করে। মেয়ের চোখে ক্ষানিকের ঘৃণা এখনো তার বুকে ছুরির মতো বিঁধে আছে।

__________

অন্ধকার কক্ষের মেঝেতে বিছানার সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছে একজন পুরুষ। শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রয়েছে আঁধার পানে। ভাই হারানোর করুণ শোক নীরবে পালন করতেই যেনো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে সে। মনের মধ্যে জমে আছে অপ্রকাশিত দুঃখ ও প্রশ্নের পাহাড়। কি এমন শক্তি আছে এই জঙ্গি চক্রের কাছে? কোন শক্তি ব্যবহার করে তারা সাধারণ মানুষকে অমানুষে রূপান্তর করে? অলৌকিক কোনো শক্তি? কিন্তু তা কি করে সম্ভব?

দূর্জয়ের চোখের সামনে ভেসে উঠে দীপ্তর ছোটবেলার দৃশ্য। সরল হাসির অধিকারী ছেলেটা দূর্জয়ের বিপরীত চরিত্রের ছিলো। সবার সঙ্গে মিশতে জানতো, মন খুলে হাসতে জানতো। সেই ছেলেটা কিভাবে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে শিখলো? ঠিক কোন মন্ত্র পড়ে কানে ফুঁ দেওয়ার পর একটা মানুষের সম্পূর্ণ সত্তা বদলে দেওয়া সম্ভব?

এতো প্রশ্নের ভীড়ে দূর্জয়ের মস্তিষ্ক যখন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে ঠিক সেই সময় তার মাথায় আরেকটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। আসার পথে জুলফিকার মুজতবা বলেছেন, তিনি নাকি খবর পেয়েছেন যে এই টেরোরিজম রিলেটেড আপডেট পাবলিশ করা ওয়েবসাইটের এক্সেস নাকি ফিলিস্তিন থেকে দেওয়া হচ্ছে। কথাটা শুনে দূর্জয়ের মস্তিষ্ক আরো ফাঁকা হয়ে পড়ে। একজন বোধ সম্পন্ন মানুষের পক্ষে এরকম অবান্তর কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না কখনো। দূর্জয়ও বিশ্বাস করে না। কারণ এরকম স্টেটমেন্টের পক্ষে কোনো যুক্তিই খাটে না। একটা জাতি যারা কিনা নিজেদের সার্বভৌম এবং ঈমানের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে অবিরত তাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব না এমন অমানবিক একটা মিশন পরিচালনা করা। আর তাছাড়াও ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন বেশ নড়বড়ে। ওই দেশে বসবাসরত কোনো নাগরিকের পক্ষেই সম্ভব নয় এমন ব্যয়বহুল একটা মিশন চালিয়ে যাওয়া। মোদ্দা কথা কোনো লজিকই মিলাতে পারছে না দূর্জয়।

এক সঙ্গে শোক, কষ্ট, প্রশ্নের মাঝে রাগও এসে হানা করে দূর্জয়কে। কর্ণেল জুবায়ের শিকদারের সেই ননসেন্স মার্কা অর্ডারের জন্য আজ এতো গুলো হোস্টেজের প্রাণ গেলো। দূর্জয় উনাকে বারবার ওয়ার্ন করেছিলো যে এই ইলেকট্রিসিটি কেটে অন্ধকারে ভিতরে প্রবেশ করাটা শোচনীয় হবে না। টেরোরিস্ট এবং হোস্টেজ উভয়ই এতে ভীত হয়ে যাবে। টেরোরিস্টরা হয়তো এলোমেলো ভঙ্গিতে গুলি বর্ষণও করতে পারে। কেবল দূর্জয় নয় মিটিংয়ে উপস্থিত সকলেই এই বিষয়টা তুলে ধরেছিলো। কিন্তু কর্ণেল যেনো কানে তুলো গুঁজে রেখেছিলো। এতো গুলো অফিসারের কথা অগ্রাহ্য করে তিনি নিজের অর্ডারে অটল রইলেন। ফলাফল সরূপ এতো গুলো প্রাণ ঝরে পড়লো। এর দায়ভার কার? কর্ণেল তো কখনোই এই দায়ভার নিবেন না। তিনি কেবল নিজের পদোন্নতির পথ সুগম করতে ব্যস্ত।

বুকফাটা কষ্ট এবং প্রশ্নের ভীড়ে চাপা পড়ে দূর্জয় নিজের দু’হাতে মাথার চুল টেনে ধরে। সব অসহ্যকর ঠেকছে তার কাছে। একটাই তো জীবন। তা-ও এতো কঠিন কেনো হতে হবে?

__________

আঁধার রাতে টিমটিমে আলোয় বিছানার একপাশে উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে একটা জীবন্ত পুতুল। তারই ঠিক পাশে দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছে এক ত্রিশার্ধো পুরুষ। ঘাড়টা সামান্য ডান পাশে কাথ করে নিষ্পাপ পুতুলের মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত সে। তার এই পাপের রাজত্বে ছোট্ট এক টুকরো স্বস্তি বয়ে বেড়ায় এই মুখটা। স্বস্তি পাবে না-ই বা কেনো? মেয়েটা দেখতে অবিকল নিজের মায়ের মতো হয়েছে। হুবহু কিশোরী বাণীর প্রতিরূপ। যদিও এখন আর বাণীর চেহারায় সেই লাবণ্য নেই। অযত্ন এবং অবহেলায় পুরো চেহারার রূপ বদলে ফেলেছে।

আচমকা নিজের বাম পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই হিরণ মাথা ঘুরিয়ে সেই পানে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায় সে কিশোরী বাণীকে। গায়ে ঢিলেঢালা টিশার্ট এবং ট্রাউজার, চুলগুলো ব্যাঙ্গস কাট দেওয়া, গোলগাল মুখশ্রী। বহ্নির মতোই সে-ও উত্তর দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছে। হিরণ তাকাতেই একগাল হেসে প্রশ্ন করে,

“ বলুন তো, আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? টমবয় বাণীকে নাকি বহ্নির মা-কে? “

হিরণ সেই হাসিমাখা মুখে দৃষ্টি স্থির রেখে শান্ত স্বরে জবাব দেয়,

“ সম্পূর্ণ বাণীকেই ভালোবাসি। “

বাণীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসে। নীরবে হিরণের মাথার কাছটায় বসে সামান্য ঝুঁকে তার কপালে পরশ ছোঁয়ায়। হিরণের চোখ বুজে আসে। সে জানে এই সবটা কেবলই তার কল্পনা। কারণ কল্পনা ব্যতীত এটা কভু সম্ভব নয়। কল্পনায় ডুবে হিরণ ফিরে যায় অতীতের পাতায়।

__________

তীব্র বর্ষণ এবং গোধূলি লগ্নের বিদায়বেলা তখন। একহাত গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে রেখে অপর হাতে ফোন কানে চেপে ধরে কথা বলতে ব্যস্ত এক যুবক। গাড়ি এগিয়ে চলছে সবুজে ঘেরা সিলেট শহরের পাকা সরু পথ ধরে। আচমকা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় রাস্তায় কাউকে পড়ে থাকতে দেখে সে। কিন্তু ততক্ষণে ব্রেক কষার মতো অবস্থা আর নেই। তাই বাধ্য হয়ে দ্রুত গতিতে সুকৌশলে স্টিয়ারিং চালিয়ে গাড়ি অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে সে।

কোনো এক অপরিচিতাকে বাঁচানোর চক্করে লগ্ন শেষে গোধূলি বেলায় সেই যুবকও এক এক্সিডেন্টের শিকার হয়। সাদা গাড়িটা এক বিশাল গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ব্যাপক ধাক্কায় যুবকের মাথাও বাড়ি খায় স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে। যার ফলস্বরূপ তার নাক দিয়ে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসে তরল লাল পদার্থ। চেতনা হারায় সে।

__________

জ্ঞান ফিরতেই চোখ মেলে তাকায় সেই যুবক। সম্পূর্ণ শরীর অক্ষত থাকলেও আঘাতের ফলে মাথা কেবল সামান্য ভারী লাগছে তার কাছে। চারিদিকটা দেখার জন্য ঘাড় ঘোরাতেই তার দৃষ্টি স্থির হয় ঠিক তার পাশের বেডে। হসপিটালের নীল চাদরে ঢাকা সিঙ্গেল বেডটায় ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখশ্রীর মালিককে বেশ খুটিয়ে খুটিয়েই দেখে এক জোড়া নিষ্পলক চোখ। কি হলো কে জানে? সেই মুখশ্রী তাকে আকর্ষিত করে। নামহীন নিকষ মায়ায় ডুবতে বাধ্য করে। জীবনের প্রতিটা পদে নিজের মর্জির জোর খাটানো যুবক নিজের মনের উপর জোর হারিয়ে বসে। মস্তিষ্ক বলে উঠে,

“ থেমে যা। আগাস না। “

যুবক মস্তিষ্কর কথাকে অগ্রাহ্য করলো। খানিকটা সময় এভাবেই পেরিয়ে গেলো। যুবক নিজের সম্বিত ফিরে পেলো যখন একজন নার্স দুটো বেডের মধ্যে শুভ্র একটা পর্দা টেনে দিলো। ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখের আড়াল হতেই যুবক সেই নার্সের পানে তাকায় ক্ষানিকটা বিরক্ত মিশ্রিত দৃষ্টি মেলে। ত্রিশার্ধো নার্স হাতের ফাইলে কিছু একটা লিখতে লিখতে বলে,

“ এখানকার সাবেক মেয়রের মেয়ে। প্রায় সবাই চিনে ওকে। তাই ওর ফ্যামিলিকে ইনফর্ম করতে আমাদের ঝামেলা হয়নি। তারা যেকোনো সময় পৌঁছে যাবে। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির কাউকে ইনফর্ম করা সম্ভব হয় নি। ফোনটা অক্ষত নেই। সেজন্য নাম পরিচয়ও কিছু লেখা হয়নি। নিজের নামটা বলো। “

যুবক শান্ত গলায় জবাব দেয়,

“ হিরণ। “

নার্স ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ শুধু হিরণ? “

“ হ্যাঁ। “

“ আগে পিছে কিছু নেই? “

এহেন প্রশ্নে বেশ বিরক্ত হয় হিরণ। তার মুখেও ফুটে উঠে সেই বিরক্তির ভাব। কোনো উত্তর না পেয়ে নার্স বলে,

“ ফোন এনে দিবো? বাসায় জানাতে চাও? “

“ প্রয়োজন নেই। আমি ঠিক আছি। একাই যেতে পারবো। “

হিরণের উত্তর শুনে নার্স আর অপেক্ষা করে না। যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই হিরণ প্রশ্ন ছুড়ে,

“ মেয়েটার কি হয়েছে? “

নার্স এক পলক ভ্রু কুচকে হিরণকে আগাগোড়া পরখ করে জবাব দেয়,

“ বৃষ্টিতে ভিজেছে হয়তো। খুব জ্বর বাধিয়েছে। রাস্তায় পড়ার ফলে হাত পায়ে কিছু জায়গায় ছিলেও গিয়েছে। “

হিরণ ফের প্রশ্ন করে,

“ মেয়রের মেয়ের নাম কি? “

নার্স এবার হিরণের কৌতূহলে বেশ বিরক্ত হয়। এই ইমারজেন্সি ইউনিটে এতো গুলো রোগী রেখে কি এখন সে বসে এই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত পাগলের প্রশ্নের জবাব দেবে নাকি? তবুও সে শেষ বারের মতো বলে উঠে,

“ আনিসুজ্জামান তালুকদারের মেয়ে বাণী তালুকদার। “

__________

ফজরের আজান সবে পড়লো বলে। নির্ঘুম রাত পাড় করা দূর্জয় নীরবে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ব্যক্তিগত রুমটা চাবি দ্বারা লক করে এক মুহুর্তের জন্য অন্য পাশের বদ্ধ দরজার পানে চায়। অত:পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেইন দরজা খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। মেইন দরজাটা লাগানোর শব্দ হতেই দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে বাণী। নির্ঘুম রাত সে-ও পাড় করেছে। কখনো নিজের মেয়ের চিন্তায় তো কখনো দূর্জয়ের সেই থমথমে রূপের কারণ কি হতে পারে তা ভেবে। খুব ভয়ংকর কিছু কি ঘটেছে? নীরবে একমুঠ নিঃশ্বাস টেনে বুকে পুড়ে নিয়েই সে দরজার পানে তাকিয়ে রয়। সে জানে দূর্জয় ফিরবে। বাণীর মুখে সত্যটা শোনার জন্য সে অবশ্যই ফিরবে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here