এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ২৬.

0
191

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২৬.

সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রাখা দূর্জয়ের মধ্যে বিন্দুমাত্র হেলদোল দেখা গেলো না। কেবল ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন করে,

“ ডিড হি ডিড দ্যাট টু ইউ এগেইন? “

বাণীর পা ঝুলিয়ে সোফায় সোজা হয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না। পুরনো ক্ষত তাকে দূর্বল করে দিচ্ছে আবারও। শরীর ক্ষানিকটা টলছে। অশ্রুসিক্ত চোখের পানি মুছে ঝুলিয়ে রাখা পা জোড়া এবার সোফায় তুলে দ আকারে বসে বাণী। বুকের কাছে ঠেকানো হাঁটুর উপর থুতনি ঠেক দিয়ে সে মলিন গলায় বলে,

“ হুম। “

দূর্জয় এবার চোখ মেলে তাকায়। তবে সোজা হয়ে উঠে বসে না। নিজের থেকে ঠিক কয়েক হাত দূরের সোফাটিতে বসে থাকা নিজের মা’য়ের শাড়ি পরিহিতা নারীকে দেখে সে একপল। ভারী অমাবস্যায় মোড়ানো এই নারীর জীবন। জোছনার ছিটেফোঁটাও নেই যে জীবনে। বাণীর চোখ এড়ায় না দূর্জয়ের দৃষ্টি। সে-ও কিছুপল দূর্জয়ের পানে চেয়ে রয়। অত:পর রুগ্ন গলায় আবারও বলতে শুরু করে অতীতকথা,

“ ভাইয়ার মৃত্যুর ছয় বছর পর আমি দ্বিতীয় বারের মতো আবার পালাই। তবে এবার সঙ্গে করে বহ্নিকে নিয়ে। আমি জানতাম কখনো না কখনো আমি হিরণের কাছে ধরা পড়বো। তবুও আমি ওই জীবন থেকে মুক্তি লাভের লোভে সুযোগটা হাতছাড়া করি না। সকল গার্ডদের মনযোগ আকর্ষণ করে আমি পালাই। সবাই তখন আমার পিছু নেওয়ায় বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বাড়াবাড়ি সিচুয়েশনটা কমে আসে। ওই পাপের রাজত্বে আমি একজন বড় আপুর মতো শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছিলাম। আফিফা আপা। উনি আমার পালানোর প্ল্যান সম্পর্কে জানতো। উনি নিজেও এই প্ল্যানে শরিক ছিলেন। বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা দূর্বল হতেই উনি সেই সুযোগে বহ্নিকে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে পালায়। কথা ছিলো আপার ভাইয়ের বাসা থেকে আমি বহ্নিকে পিক করে এই শহর ছেড়ে পালাবো। কিন্তু পথিমধ্যে তোমার গাড়ির সঙ্গে আমার এক্সিডেন্ট হয়। গাড়িতে যখন তুমি আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলে তখন আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে মিথ্যে এবং বানোয়াট জবাব দিচ্ছিলাম। এতো বছর পর আমি আবার তোমার বিরক্তির কারণ হতে চাচ্ছিলাম না। আমি শুধু আমার বাচ্চাকে নিয়ে ঝামেলাহীনভাবে এই শহর ছাড়তে চাইছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। আমাকে সাহায্য করার অপরাধে আফিফা আপা নিজের প্রাণ হারায়। আবার ধরা পড়ে যাই আমি হিরণের কাছে। আরো একবার ওর ক্ষোভের শিকার হই। আরো একবার… “

এতদূর বলতেই বাণী থেমে যায়। চোখ বুজে জোরে নিঃশ্বাস টেনে নেয়। গলার কাছে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে সে। দূর্জয় পুরো দৃশ্যটা দেখে। কিন্তু কিছু বলে না। সে বাণীকে এই মুহুর্তে থামাতে চাইছে না। মেয়েটা প্রথম বারের মতো এই সুযোগ পেয়েছে। বলে হালকা হয়ে নেক। দূর্জয় নাহয় নীরবে সয়ে গেলো এই মানসিক যন্ত্রণা। তার এই ক্ষনিকের মানসিক যন্ত্রণা নিশ্চয়ই বাণীর লালিত সাত বছরের শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণার থেকে বড় নয়? বাণী আবার বলতে থাকে,

“ সেই রাতে ঝড়ের তান্ডব মাথায় নিয়ে আমি ওই অভিশপ্ত ব্যাক ইয়ার্ডে যাই। যেখানে আমার ভাইয়া খুন হয়েছিলো। শিমুল গাছটার নিচে গিয়ে মাটি আঁকড়ে ঝড় সয়ে নেই। মাটিতে মাথা রাখার পর মনে হচ্ছিলো ভাইয়ার কোলে মাথা রেখেছি। ভাইয়া হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সারারাত বৃষ্টিতে ভেজার ফলস্বরূপ অসুস্থ হয়ে পড়ি। সিরিয়াস অবস্থা হয়ে যাওয়ায় হিরণ আমাকে হসপিটালে এডমিট করাতে বাধ্য হয়। আমি সুযোগ বুঝে তৃতীয় বারের মতো পালাই। তবে এবার সম্পূর্ণ একা। “

দূর্জয় এবার নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে,

“ বহ্নি কোথায়? ও নিজের বাবার আসল রূপ সম্পর্কে জানে? “

“ বহ্নি হিরণের কাছে আছে। কিন্তু বেশিদিন থাকবে না। আমি আমার মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আর রইলো বহ্নির হিরণ সম্পর্কে জানার ব্যাপারে, তাহলে ওর কাছে ওর পাপা হিরো। মারভেল স্টুডিওজের সিনেমাগুলোর হিরোর মতো মনে করে ও নিজের পাপাকে। আমিও কখনো ওর সেই ধারণা পরিবর্তন করি নি। আমার মেয়ে এখনো খুব ছোট। এতো কম বয়সে আমি ওর মনে ঘৃণার বীজ বপন করে ওর মন কুলষিত করতে চাই না। ছোটবেলা থেকে যেই পুরুষকে হিরো জেনে এসেছি হঠাৎ করে সেই পুরুষের জঘন্য রূপ সামনে আসার অনুভূতি কেমন হয় তা আমি ভালো করেই জানি। আমি চাইনা আমার মেয়েও আমার মতো একই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করুক। শুধুমাত্র ওর জন্যই আমি বিয়ে না হওয়া সত্ত্বেও সবার সামনে হিরণের ওয়াইফ সেজে থাকার মিথ্যা অভিনয় করে এসেছি এতদিন। আমি চাই না কেউ আমার মেয়ের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলুক। “

দূর্জয় নীরবে সব শুনছিলো। বাণীর কথায় সে অনেকটাই গভীর ভাবে মশগুল হয়ে ছিলো। কিন্তু হঠাৎই তার টনক নড়ে উঠে। সে সোজা হয়ে উঠে বসে প্রশ্ন করে,

“ ওয়েট বাণী। হিরণের প্রফেশন কি? আই ডোন্ট থিংক হি ইজ এ র‍্যান্ডম রিচ গাই হু গট সাচ পাওয়ার। “

দূর্জয়ের প্রশ্নের পিঠে এবার বাণীও নড়েচড়ে বসে। তাকে ভাবুক দেখা যায়। সে জবাব দেয়,

“ হিরণের প্রফেশন কি তা আমার জানা নেই। উনি ওনার কাজের জগৎকে বাড়ির বাহিরে ফেলে আসে সবসময়। আমার সামনে কখনো নিজের কাজ নিয়ে কোনো কথাও বলে নি। অল আই নো এবাউট হিম ইজ দ্যাট হি ইজ এ অরফান। উনার কোনো ফ্যামিলি রুট নেই। “

দূর্জয় এতটুকু শুনে মনে মনে কিছু একটা ভাবতে থাকে। তার মাঝেই বাণী ফের বলে উঠে,

“ কিন্তু দেয়ার ইজ সামথিং। আমি জানিনা কিন্তু ফর সাম রিজন হিরণ আমার আর বহ্নির আইডেন্টিটি নিয়ে খুব প্রাইভেসি মেইনটেইন করতো সবসময়। এজ ইফ উনি কারো থেকে আমাদের ব্যাপারে লুকাচ্ছে। আর শমসের নামক একজন লোকের সঙ্গে উনার পরিচয় আছে। যে বর্তমানে আমার আর বহ্নির পরিচয় জানে। এই বিষয়টা নিয়ে হিরণকে খুব চিন্তিত হতে দেখেছি আমি। “

“ ওই শমসের নামক লোককে তুমি কখনো দেখেছো? “

“ হ্যাঁ। বাসায় এসেছিলো একবার। লোকটা সাধারণ কেউ নয়। অস্ত্রধারী। “

দূর্জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আজকের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। এই মুহুর্তে আর কিছু ভাবার পরিস্থিতিতে নেই সে। মস্তিষ্ক সামান্য আরাম চাইছে। দূর্জয়কে উঠে দাঁড়াতে দেখে বাণী হাঁটু থেকে মাথা তুলে প্রশ্ন করে,

“ তুমি কি বিরক্ত বোধ করছো? “

বাণীর প্রশ্নের কারণটা দূর্জয় ভালো করেই জানে। বহু বছর আগে সে বাণীকে নিজের বিরক্তির কারণ বলে সম্বোধন করেছিলো। বাণী হয়তো এখনো নিজেকে তাই ভাবছে। দূর্জয় বাণীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,

“ ঘুমাও বাণী। নিশ্চিন্তে ঘুমাও। হিরণ তোমার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না, আমি সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি। আর আমি আর্মিদের মেসে থাকি। এই বাসায় খুব কম আসা হয়। তাই তোমার এখানে কোনো অসুবিধা হবে না। কিছুর প্রয়োজন হলে বাহিরে ইলিয়াস এবং ফুয়াদ আছে। ওদের ডেকে বললেই চলবে। “

বাণী থমথমে গলায় বলে উঠে,

“ তুমি যথেষ্ট সাহায্য করেছো আমার। কিন্তু আমার তোমার ঝামেলা বাড়ানোর কোনো ইনটেনশন নেই। আমি যত দ্রুত সম্ভব আমার মেয়ের কাছে যেতে চাই। “

দূর্জয় নিজের ক্লান্ত গলা সামান্য দৃঢ় করে শুধায়,

“ তুমি ঝামেলা হও নাকি নও তা না-হয় আমি বুঝবো। আর বহ্নিকেও তুমি পাবে। আমাকে শুধু কিছুটা সময় দাও। আজ আসি। “

কথাটুকু বলে দূর্জয় আর অপেক্ষা করে না। প্রস্থান করে সেখান থেকে। বাণীর মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা যায় না। সে একই ভঙ্গিতে বসে রয়। বুকটা হঠাৎ এতো হালকা অনুভব হচ্ছে কেনো? কাউকে নিজের লাইফের বয়ে বেড়ানো স্যাড সংয়ের লিরিক্স শোনানোর ফলে? আচ্ছা সেই কেউ-টা কি অন্য কেউ হতে পারতো না? দূর্জয়ই কেনো হতে হবে?

__________

দ্বিতীয় মিশন সফল হওয়া উপলক্ষে শমসের মজুমদার নিজের বাসায় আজ আনন্দ মজলিসের আয়োজন করেছে। এই আনন্দ মজলিস আর দশটা সাধারণ আনন্দ মজলিসের মতো নয়। এ শয়তানের আনন্দ মজলিস। এখানে যেমন মদের যোগান রয়েছে, তেমনই রয়েছে এক লাস্যময়ী নারী। যে নিজের অঙ্গভঙ্গি দ্বারা বয়স্ক শমসেরের মনযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। শমসের মজুমদারও কম নয়। তিনিও নিজের মনযোগ সেই নারীর দিকে স্থির করে রেখেছে।

শমসের মজুমদার কখনো বিয়ে না করলেও নারী সঙ্গের অভাব হয় নি তার। যখনই ইচ্ছে জেগেছে এরকম লাস্যময়ী নারী নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে। হাঁটুর বয়সী মেয়েরাও মোটা অঙ্কের টাকার লোভে শমসের মজুমদারকে ফিরিয়ে দেয় নি কখনো।

আচমকা কারো আগমনে শমসেরের মনযোগ ভঙ্গ হয়। নিজের ডান হাত মানিককে দেখেই তিনি প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে তাকায়। মানিক এগিয়ে এসে শমসেরের কানে কানে জানায়,

“ হিরণ স্যারের স্ত্রী বাণী হসপিটাল থেকে পালিয়েছে। “

ছোট্ট খবরটুকু পেতেই শমসের মনে মনে হিসাব মিলিয়ে ফেলে। তবে এই কারণেই হিরণ আজকের মজলিসে উপস্থিত হয় নি। শমসের এটা ভেবে পায় না বাণী নামক ওই মেয়ে হিরণের থেকে পালিয়ে বেড়ায় কি কারণে। হিরণ নামক ওই জানোয়ারটা তো কুকুরের মতোই বিশ্বস্ত। শমসেরের এতো লোভ দেখানো সত্ত্বেও এতো বছরে কোনো লাস্যময়ী নারী দ্বারা আকর্ষিত হয় নি। ওই বাণী নামক রুগ্ন দেখতে মেয়েটা ছাড়া অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে যায় নি। এমন বিশ্বস্ত কুকুর কি নিজের স্ত্রীর মন জয় করতে পারে নি? ভাবনাটা মনে উঁকি দিতেই শমসের একা একা হাসে। হিরণ নামক ওই পালিত কুকুরটার খুব আত্মগরিমা। অথচ সামান্য এক নারীর মন জয় করতে কি-না সে ব্যর্থ হলো?

শমসেরের ভাবনার মাঝেই মানিক প্রশ্ন করে,

“ স্যার এখন আপনার কি অর্ডার? “

“ হিরণ কি ওই মেয়েটাকে খুঁজছে? “

‘’ হ্যাঁ, স্যার। আকাশ পাতাল এক করে খুঁজছে। খবর পেলাম যাদের গাফলতির ফলে কিনা মেয়েটা পালিয়েছে তাদেরকেও খুন করেছেন তিনি। পরিস্থিতি বেশ গরম। “

শমসের মজুমদার বাকা হেসে শুধায়,

“ গরম পরিস্থিতিকে আরো গরম কিভাবে করে তোলা যায় জানো মানিক? “

মানিক প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে জানতে চায়,

“ আপনি কি কিছু ভাবছেন স্যার? “

“ হিরণ মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়ার আগে আমাদের ওকে খুঁজে বের করতে হবে। কুকুরটা খুব ঘেউঘেউ শুরু করেছে না? ওকে মিনি বিড়াল বানিয়ে পা চাটানোর মোক্ষম সুযোগ এটা। “

নিজের স্যারের কথা শুনে মানিকের মুখে সন্তোষজনক হাসি ফুটে উঠে। কি দারুণ, কি দারুণ! স্যার অবশেষে ওই হিরণকে নাচানোর পরিকল্পনা করছেন। কি দারুণই না হবে যখন হিরণ স্ত্রীর জন্য পাগলের মতো ছটফট করবে। দৃশ্যটা কল্পনা করে আরেক দফা হাসে মানিক।

__________

নিজের বেডরুমের সিঙ্গেল সোফাটায় বসে আছে এক পুরুষ। একহাতে একটা ল্যাভেন্ডার রঙের শিফনের ওড়না জড়িয়ে রেখেছে সে। ওড়নাটা নাকের কাছে চেপে ধরে চোখ বুজে রয়েছে সে। অনুভব করার চেষ্টা করছে কারো অস্তিত্ব। অন্ধকারে তলানো রুমটায় সুনসান নীরবতা পরিলক্ষিত।

আজ তিনদিন ধরে বাণী পলাতক। কোথায় আছে কে জানে? কার কাছে আছে সেটাও জানা নেই হিরণের। বাণীকে খোঁজার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সে। বাস স্টপ, স্টেশন সর্বত্র নিজের লোক ছড়িয়ে রেখেছে। এতটুকু নিশ্চিত বাণী এখনো শহর ছেড়ে বেরোয় নি। কারণ সেই চেষ্টা করলেই হিরণের কাছে এতক্ষণে ধরা পড়ে যেতো। হিরণ একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,

“ দিনশেষে যেহেতু আমার কাছেই ফিরবে, তাহলে অযথা এই লুকোচুরি খেলে কি মজা পাও বাণী? আমার ভুলের জন্য আর কোনো শাস্তি খুঁজে পাও নি তুমি? খুব পুড়াচ্ছো। “

দরজা খোলার শব্দ পেতেই হিরণ ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। দরজাটা খুলে যেতেই বাহিরের আলোয় রুমটা কিঞ্চিৎ আলোকিত হয়ে উঠে। সেই আলোয় হিরণ দরজার সামনে বহ্নিকে দেখতে পায়। একহাতে একটা স্পাইডার ম্যানের সফট টয় ধরে মুখ লটকে দাঁড়িয়ে আছে সে। হিরণ মৃদু হেসে নরম গলায় ডাকে,

“ আসো মা। “

বহ্নি মুখ লটকেই তার পাপার কাছে এগিয়ে যায়। হিরণ মেয়েকে টেনে নিজের কোলে বসায়। একহাতে মেয়ের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে,

“ ঘুম আসছে না? “

বহ্নি মাথা নেড়ে না বলে। হিরণ ফের হেসে প্রশ্ন করে,

“ কি করলে আমার প্রিন্সেসের ঘুম আসবে? “

বহ্নি কিছুক্ষণ চোখ সরু করে কিছু একটা ভাবে। অত:পর বলে উঠে,

“ আমি একটা মুভি দেখেছি পাপা। ওখানে একটা আমার সমান বয় ছিলো। ওকে ওর পাপা গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। তুমিও আমার জন্য গান গাইবে? “

মেয়ের অদ্ভুৎ আবদারে হিরণ অপ্রস্তুত হয়ে পরে। এসব গান টান তার কখনো তেমন একটা শোনা হয় না। তার গলাও গান গাওয়ার মতো না। কি গান গাইবে সে? গানের কথা ভাবতে গিয়েই হিরণের মনে পড়ে যায় বাণীর কথা। আনিসুজ্জামান তালুকদারের কাছে সে শুনেছিলো বাণী গান গাইতে খুব পছন্দ করে। ছোটবেলায় শিল্পকলা একাডেমি হতে গান গাওয়া শিখেছিলো। পরে কি হয়েছে কে জানে। হুট করেই বাণী গান ছেড়ে দিলো। আর কখনো কেউ তাকে গাইতে শুনে নি। তবে হিরণের সেই সৌভাগ্য হয়েছে। আনিসুজ্জামানের বাড়ি থেকে বাণীর গাওয়া বেশ কিছু ট্যাপ রেকর্ডার নিজের সংগ্রহে রেখেছে সে। মাঝেমধ্যেই তা শোনা হয়। সেখান থেকেই একটা গানের কিছু চরণ তার মনে আছে। মেয়ের আবদার রাখতে নিজের বেসুরো গলায় সেই লাইন গুলো গাওয়া শুরু করে হিরণ,

“ তু যো জুদা হো গায়ি
তেরি সাদা খো গায়ি,
দেখ লে ফির জিন্দেগী
হা কেয়া সে কেয়া হো গায়ি।
যাব সে বিছড়ি হু,
রাব সে কেহতি হু,
কিতনা সুনা হে তেরা জাহান।
ফিরতা রাহু দার বাদার
মিলতা নেহি তেরা নিশান,
হোকে জুদা কাব মে জিয়া?
তু হে কাহা? মে কাহা? “

নিজের পাপার বেসুরো গান শুনতে শুনতে বহ্নি বাণীর ওড়নাটা টেনে নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়। অত:পর হিরণের বুকে গুটিসুটি মেরে বলে,

“ আ’ম মিসিং মাম্মা। “

হিরণ নিচু গলায় বলে,

“ আ’ম মিসিং হার মোর। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

[ লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিলো। তাই চট করে বসে এই পর্বটা লিখে ফেললাম। এক্সাম শেষ হওয়ার আগে এটাই শেষ পর্ব। চার/পাঁচ তারিখের দিকে পরবর্তী পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এর মধ্যে যদি আমি পড়া রেখে লিখতে বসি তাহলে আমাকে প্রয়োজনে হিরণের ভয় দেখিয়ে পড়তে পাঠাবেন। ম্যাথ কোর্সে এইট্টি প্লাস মার্ক তুলতে পারলে প্রয়োজনে পরে একটা বোনাস পর্বও দিবো। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here