#তবু_সুর_ফিরে_আসে
১৬তম পর্ব
প্লেন থেকে সমুদ্র দেখে হেরা মুগ্ধ হয়ে তাকাচ্ছে ! নওশাদকেও ইশারায় দেখালো !
একটু পরেই দেখবে কাছ থেকে !
কক্সবাজার এয়ার পোর্টে নেমে ফরহাদ আজমী নওশাদকে বলল,
বাবু থাকব কোথায় আমরা আগে থেকে ঠিক করেছিস?
জ্বি আব্বা সব ঠিক করা আছে! আমার লোকজন আছে ওরাই ঠিক করে রেখেছে!
রেজোয়ান নওশাদের কাছে এসে বলল, এবার হোটেলে যাচ্ছি না!
তাহলে?
একটা রিসোর্টে যাচ্ছি !
কেন?
আমি সিরিয়াসলি চাইছি এটাতে একটা হানিমুন আমেজ থাকুক তোর আর হেরার জন্য!
রেজোয়ান প্লিজ আব্বাকে নিয়ে এসেছি সঙ্গে, আমাকে আব্বার যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে ! তুই ফান করতে চাইছিস ঠিক আছে কিন্তু বাড়াবাড়ির দরকার নেই !
তুই আমার উপর ভরসা রাখ দেখবি ভালো লাগবে !
তোর উপর ভরসা করতেই তো ভয় হচ্ছে এখন ! তুই আমাকে ঠিক করে বলতো রেজোয়ান তোর মতলব কি ? আমার নার্ভাস লাগছে !
কেন ?
তুই নির্ঘাত এমন কিছু করে ফেলার প্ল্যান করেছিস আমি হেরার সামনে লজ্জা পেয়ে যেতে পারি !
এসব আবার কি কথা নওশাদ ! আমি তোকে এমবেরেস করব ? ভাবলি কিভাবে ? ছিঃ !
রেজোয়ান এদিকে আয় তুই হানিমুন হানিমুন বলছিস এতেই আমার ভয় হচ্ছে দেখা যাবে আমার আর হেরার জন্য এক রুমে থাকা ঠিক করে রেখেছিস এবং এক্সট্রিম যা করবি সেটা হলো তুই ফুল-টুল দিয়ে একটা তামাশা করে রাখার প্ল্যান করে রেখেছিস ! মন বলছে তুই বাসর টাইপের খাট সাজিয়ে রেখেছিস ?ঠিক বলছি আমি ? সত্যি করে বল ?
রেজোয়ান হাসছে !
নওশাদ নার্ভাস গলায় বলল,এই তো আমি ঠিক ধরেছি ! হায় আল্লাহ ! তোকে শালা আমার চেয়ে বেশি আর কে চিনে ! এরকম কিছু করলে তোকে দেখিস কি করব আমি তুই চিন্তাও করতে পারবি না রেজোয়ান !
হাসছি কেন জানিস নওশাদ, আমার মাথায় এসব কিছু কেন এলো না ! ইসস আফসোস হচ্ছে !
তুই সত্যি করে বল তো কি করেছিস রেজোয়ান ?
নওশাদ বিলিভ মি কিছু করিনি , শুধু এবার সব সময় যে হোটেলে থাকি সেটাতে না থেকে ইনানী র দিকে একটা রিসোর্টে থাকব ! ওদের নিজস্ব বীচ আছে ইদানিং ওদের রিসোর্ট টা দারুন পপুলার শুধু এতটুকুই !
ঠিক তো ?
হুম সত্যি বলছি ! দুইটা কটেজ নিতে বলেছি আজহারকে আমাদের দুই ফ্যামিলির জন্য ! আংকেলকে তোর কাছাকাছি রাখতে হবে ! আমি আর সুমনা তোদের ঠিক পাশের কটেজে !
এখন হেরার সঙ্গে রুম শেয়ার করতে সমস্যা কি বুঝলাম না নওশাদ ? তারচেয়ে ও বড় কথা অফিসের লোকদের জানানোর দরকার আছে তাদের চেয়ারম্যান স্যার নিজের নতুন বউয়ের সঙ্গে আলাদা রুমে থাকে ?
সুমনা আর হেরা চলে এলো বলেই নওশাদ আর রেজোয়ান চুপ করে গেল!
তোমার লোকজন কোথায় রেজোয়ান ?
সুমনা ও বাহিরে আছে লাগেজ গুলো আসলেই গাড়ি রেডি আছে আমরা রওনা হব !
নওশাদ হতাশ দৃষ্টিতে রেজোয়ান এর দিকে তাকালো ! রেজোয়ান ভালো করে জানে নওশাদ এর চোখ কি বলছে ! সে হাত তুলে ইশারা করলো ওর উপর ভরসা রাখতে !
কিন্তু সেটাই কেন জানি এই মুহূর্তে রাখতে পারছে না নওশাদ !
লাগেজ আসার পরই তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেল ওরা এয়ার পোর্ট থেকে চল্লিশ মিনিট লাগবে রিসোর্ট । সুমনা হেরাকে সানসেট দেখাবে তাই তাড়া দিচ্ছিল ওদের !
মেরিন ড্রাইভ থেকেই সমুদ্র দেখে হেরা এক্সাইটেড ! শ্বশুর কে উদ্দেশ্য করে বলল , আব্বা সমুদ্র দেখেছেন ! একদম আমাদের পাশে !
গাড়ি থামাতে বলো বৌমা !
আব্বা এখানে থামা যাবে না আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখান থেকে সমুদ্র আরো কাছে হবে , নওশাদ বলল!
ঠিক আছে চল!
নওশাদ এর হোটেল প্রোজেক্ট এর এগজিকিউটিভ আজহার, নওশাদ আর রেজোয়ান এখানে ভিজিটে আসলে সব সময় থাকা হবে কোথায় সব ঠিকঠাক করে রাখে ! এবার রেজোয়ান কক্সবাজারে র হোটেল না করেছে। নিজেই রিসোর্টের নাম উল্লেখ করে দিয়েছে রেজোয়ান এর কথা মতই ঠিক করে রেখেছে আজহার সব কিছু!
ওরা পৌঁছেছে যখন রিসোর্টে তখন সানসেট হতে আর একটুক্ষন বাকি । হাবিজাবি ফুলের মালা দিয়ে রিসিপশন শেষ করেই সবাই বীচের দিকে চলে এলো! নওশাদের আব্বা বীচের কাছে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে ! নওশাদের টেনশন যদিও রেজোয়ানের প্ল্যান নিয়ে কমছে না । কিন্তু হেরার এক্সাইটমেন্ট দেখে ওর খুব ভালো লাগছে ! হেরা সুমনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে ! নওশাদ তার আব্বাকে হুইলচেয়ারে করে বীচের যতটুকু কাছে আনা যায় সেখানে নিয়ে এলো !
হেরা !
জ্বি ভাবি ?
যাও নওশাদ এর পাশে যাও !
আমার আপনার সঙ্গে থাকতে ভালো লাগছে !
বোকা মেয়ে বলেই সুমনা হেসে দিল !
এত লজ্জা পেলে হবে ?
চলেন ভাবি পানির কাছে যাই !
এখন এত কাছে যাওয়া ঠিক হবে না !
নওশাদ ওদের দুজনের কাছে এসে দাঁড়ালো !
সুমনা রেজোয়ান কে দেখছি না যে ?
তোমার বন্ধু আমি কিভাবে বলব নওশাদ ?
হেরা শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলছে !
নওশাদ সুমনা কে ফিসফিস করে বলল,
সুমনা রেজোয়ান হানিমুন হানিমুন করে কিসব পাগলামী করছে আমার কাছে ! আমি ওকে নিয়ে নার্ভাস ফীল করছি !
সুমনা হো হো করে হাসছে ! নওশাদ সত্যিই তোমাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে !
তুমি কিছু জানো ওর প্ল্যানিং ?
না আমি কিছু জানি না ! তুমি যাও দেখে আসো কটেজ গুলো তো ঐ দিকে ! সুমনা হাত তুলে ইশারা করলো !
এইটা ভালো কথা বলেছো ! নওশাদ কটেজের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো !
তারপর হেরা আর আব্বার কাছে গিয়ে বলল, আমি রুম টা দেখে আসি তুমি আব্বার সঙ্গে থেকো !
নওশাদ কটেজের দিকে চলে গেল !
হেরার বারবার এলিন আর নাহিনের বলা হানিমুন কথাটা মনে হচ্ছে ! তাই নওশাদের কাছে যেতেই লজ্জা লাগছে ! যদিও তার মনে হচ্ছে তার আর নওশাদের মাঝের দূরত্বটাই তাদের সম্পর্কে র সৌন্দর্য! তিনি কত কেয়ারিং ওর বেলায় ! জীবনে কেউ তার কোন দিন কেয়ার করেছে ? সামান্য সন্মান দিয়ে কথা বলেনি ! এই যে বৃদ্ধ শ্বশুর তাকে কতটা আদর করে বড় বৌমা বলে ডাকে ! হোক তাকে মৃত একজন মানুষের সঙ্গে তিনি গুলিয়ে ফেলেছেন তবুও তো সে উনার বড় বৌমা! তারচেয়ে বয়সে এবং সব কিছুতে বড় দেবর, দেবরের বউ রা তাকে ভাবি ডাকে সন্মান দেয় সব নওশাদের বিনিময়ে ! তিনি যদি দূরত্ব টা , জড়তা টা বজায় রাখেন হেরার আপত্তি নেই ! সে সারাজীবন নওশাদের অপেক্ষায় থাকতে পারবে !
আব্বা আপনার ঠান্ডা লাগছে না তো ?
একটু লাগছে বৌমা !
চলেন তাহলে রুমের দিকে যাই !
চলো যাই ঐ ছেলেটা কোথায় ওকে বলো আমাকে নিয়ে যেতে !
হেরা রাজুকে ডাকলো ! দূরে দাঁড়িয়ে আছে রাজু !
সুমনা হেঁটে হেরার দিকে এগিয়ে এলো ! আমি ঐ দিকটা দেখে এলাম সুন্দর জায়গাটা । আগে কখনো এখানে আসিনি বুঝলে !
ভাবি রুমের দিকে যাই চলেন !
চলো !
নওশাদ রেজোয়ানের খোঁজে কটেজের দিকে এসেছে ! রেজোয়ান কটেজ থেকে বের হচ্ছিল নওশাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল!
কি রে কোথায় তুই ?
কোথায় আবার, সব কিছু ঠিক আছে কিনা খেয়াল করছিলাম।
তুই না সানসেট দেখতে গেলি ?
রেজোয়ান আমাদের কটেজ টা কোন দিকে ? এটাই !
সব ঠিক আছে গিয়ে দেখতে পারিস ! লাক্সারি কটেজে পাশের রুমে আংকেল থাকবে আর বীচ সাইডে তোদের রুম ! এদের সার্ভিস ভালো গিয়ে দেখ!
হুম সেটা দেখতেই এলাম ! তুই কক্সবাজার থেকে এতদূরে কেন যে নিলি অহেতুক !
নওশাদ সব সময় এত কিছু ভাবলে হয় না। ফ্যামিলি নিয়ে এসেছি তাই একটু অন্যরকম পরিবেশ বেছে নিলাম!
ঐ যে দেখ আংকেল চলে আসছে ! আমি আংকেল কে রুমে দিয়ে আসি তুই তোদের রুমটা দেখ ।
ঠিক আছে !
রেজোয়ান নওশাদ এর আব্বা কে রুমে নিয়ে যাচ্ছে !
নওশাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে সুমনা আর হেরাও কটেজের দিকে আসছে! সে কটেজের ভেতরের অবস্থা দেখার জন্য একটু আগেই কেটেছে ঢুকে গেল !
রুমে ঢুকে তার চক্ষু চড়কগাছ ! রেজোয়ান একটা কিছু করবেই সে জানত কিন্তু একি করেছে ! পুরো রুম কালারফুল ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো ! বিভিন্ন জায়গায় নানান রকমের ফুল । পুরো রুমটা আলো আধারিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে! কিন্তু একি বিছানায় ফুল দিয়ে হার্ট সেইপ বানানো ! নওশাদ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
আর যাই হোক এই জিনিস হেরার সামনে পড়লে নওশাদের লজ্জার শেষ থাকবে না !
নওশাদ ফুল গুলো তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে তুলে ফেলছে ! ডাস্টবিন কোথায় ? আশেপাশে ডাস্টবিন খুঁজতে খুঁজতে যা হওয়ার হয়ে গেল ! হেরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গে সুমনা ! আর ওরা দেখছে নওশাদের হাতে ফুল !
হেরা আস্তে করে দরজা থেকে সরে যেতে নিল !
সুমনা বলল,এই হেরা কোথায় যাচ্ছো তুমি ?
ভাবি আব্বা কে দেখে আসি !
আংকেলের কাছে লোক আছে তুমি ভেতরে ঢুকো দেখো তোমার বর কি সুন্দর করে ঘর সাজাচ্ছে তোমার জন্য!
সুমনা বিশ্বাস করো এসব আমার কাজ না সব রেজোয়ান শালার কাজ । নওশাদ একরকম আর্তনাদ করে উঠলো!
কি বলছো এসব, ফুল বেডে ছিটাচ্ছো তুমি আমাদের সামনে তোমার হাতে ফুল আর দোষ রেজোয়ানের কামন নওশাদ !
সুমনা বিলিভ মি !
সুমনা মুচকি হেসে হেরাকে রুমে ঢুকিয়ে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে চলে গেল ! যাওয়ার সময় নওশাদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টামির হাসি দিয়ে গেল একটা । নওশাদের বুঝতে বাকি নেই শুধু রেজোয়ান না এসকল কিছুর সঙ্গে সুমনা ও আছে !
হেরা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ! নওশাদ অসহায়ের মত করে তাকালো হেরার দিকে !
হেরা তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কাজ গুলো ওদের দুজনের করা ?
হেরার খুব হাসি পাচ্ছে আবার কেমন গা ছমছম ও করছে ! পরিস্থিতি নরমাল করার জন্য সে নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
আপনি মনে হয় ফুলের পাপড়ি গুলো ফেলার জন্য নিচ্ছিলেন ?
তুমি ঠিক ধরেছো হেরা ! কিন্তু দেখো কি হয়ে গেল !
ব্যাপার না আমি ফেলে দিচ্ছি । ডাস্টবিন টা কোথায় ?
কি জানি , হবে আশেপাশে ?
ঐ তো বলে হেরা ফুলের পাপড়ি গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিল।এ গুলো এখানে থাকলে রুমটা আরো নোংরা হতো !
নওশাদের মোবাইল এ মেসেজ এসেছে ! সে সেটা
দেখার জন্য মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে রেজোয়ান এর মেসেজ !
রুম পছন্দ হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছে ?
ফাজিল কোথাকার !
কিছু বললেন ?
না তোমাকে না ! রেজোয়ান কে বলছি!
বাদ দাও হেরা তোমাকে এসব করতে হবে না রুম সার্ভিস কে বলে দিলে ওরাই ক্লিন করে দিবে !
হেরা বলল,যদি কিছু মনে না করেন তাহলে মোমবাতি গুলো জ্বালানো থাকুক ? খুব সুন্দর লাগছে!
ঠিক আছে ! নওশাদের অস্বস্তি লাগছে হেরার সঙ্গে রুম তো রুম বেড ও শেয়ার করতে হবে ভেবে !
ডাবের পানি খেয়েছো হেরা ?
না ! দিব আপনাকে ?
আমি দিচ্ছি বলে নওশাদ ডাব এগিয়ে দিল হেরার দিকে !
আপনি নিবেন না ?
হুম নিচ্ছি ! চলো বারান্দায় গিয়ে বসি !
জ্বি চলুন !
দুজন বারান্দায় রাখা বেতের সোফায় গিয়ে বসলো !
আপনার হোটেল টা তো এরকম না !
এটা কে রিসোর্ট বলে !
আমার টা হোটেল !
অনেক টাকা নিশ্চয়ই খরচ হয়েছে বানাতে ?
হুম অনেক টাকা ! তবে সব আমার টাকা না ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছি !
ও আচ্ছা !
কবে কাজ শেষ হবে ?
তিন চার মাসের ভেতরে আশাকরি !
ইনশাআল্লাহ !
হুম!
কেমন লাগছে এখানে হেরা ?
খুব খুব খুব ভালো! স্বপ্নেও ভাবিনি এত সুন্দর জায়গায় আসব কোনদিন !
এর চেয়েও সুন্দর রিসোর্ট আছে হেরা ! তুমি মালদ্বীপের রিসোর্ট গুলো দেখলে বলবে ওগুলো আরো সুন্দর ! পানির উপরে প্রতিটি ভিলা !
সত্যি !
হুম !
আমি তো আর ওগুলো দেখছি না আমার কাছে এটাই সুন্দর যা এখন দেখছি !
নওশাদ মনে মনে বলল, তোমাকে আমি ঐসব কিছু দেখাতে নিয়ে যাবো হেরা !
আচ্ছা এখন কি পানির কাছাকাছি যাওয়া যাবে না ?
হুম যাবে ! যেতে চাচ্ছো ?
আপনি পারমিশন দিলে !
একা তো যেতে দিব না ! ঠিক আছে আর একটু রাত বাড়ুক আমরা দুজন হাঁটতে যাব !
ঠিক আছে!
চলো দেখি আব্বার কিছু লাগবে কিনা ? আব্বা কে নিয়ে টেনশন হচ্ছে , নিয়ে তো এসেছি আবার অসুস্থ না হয়ে যায় !
ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না চিন্তা করবেন না আপনি !
হেরা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও ড্রেস চেঞ্জ করলে করো আমি আব্বাকে দেখে আসি !
জ্বি ঠিক আছে!
নওশাদ রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ডিনারের আগে ওরা সবাই রিসোর্টে র পাশে বসে গল্প করছে ! সুমনা হেরার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
রুম পছন্দ হয়েছে হেরা ?
জ্বি ভাবি !
আমি আগে এই রিসোর্টে আসিনি ! খারাপ না ভালোই লাগছে !
আমি তো আগে সমুদ্র ই দেখিনি ভাবি ! আমার তো সব কিছু ভালো লাগছে !
নওশাদ গতবার বালি তে যে রিসোর্টে ছিলাম আমরা বিশ্বাস করবে না এত সুন্দর ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল পুল টা ! প্রতিটা কটেজের আলাদা আলাদা পুল ! এবং ঘেরা দেয়া ! ওদের প্রাইভেসি টা দারুন লেগেছে !
নওশাদের কানের কাছে মুখ এনে রেজোয়ান বলল, পার্ফেক্ট হানিমুন রিসোর্ট বুঝলি। গিয়ে দেখতে পারিস !
নওশাদ ফিসফিস করে বলল,এই বয়সে কি মার খেতে চাস আমার হাতে রেজোয়ান ?
তোর ন্যাকামি দেখলে বাঁচি না নওশাদ !
আর তোর চাইল্ডিস এটিচ্যুয়েট দেখে আমি মরে যাচ্ছি লজ্জায় ! জানিস ফুল ফেলে দিচ্ছি তখন হেরাকে নিয়ে সুমনা হাজির ! মেয়েটা কি ভাবছে ?
কি আর ভাবছে ওর বর ওর জন্য রুমটা স্প্যাশল বানাচ্ছে !
তাই না ?
হুম!
ভালো বলেছিস !
নওশাদ সিরিয়াসলি সমস্যা টা কোথায় ?
বলেছি না তুই বুঝবি না !
বুঝিয়ে বল !
শোন হেরা কে কখনো তো দেখলাম না আমার দিকে সেরকম কোন ফিলিংস নিয়ে দেখতে !
কি বলিস, তুই অসুস্থ হয়ে ছিলি তোর সেবা যত্ন করলো, খাইয়ে দিচ্ছে, মাথায় পানি দিচ্ছে তারপরও একথা বলছিস ?
এসব কিছুই হয়তো সে কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে করছে ! ওকে বাঁচিয়েছি ভেবে করছে !
কি করলে বুঝবি ?
শোন বোঝা যায় ! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ও আমাদের এই বয়সের গ্যাপ টার জন্য অনেক আনইজি ফীল করছে !
তাহলে করনীয় কি ?
চিন্তা করছি সেটাই ?
একটা কথা বলব , আজ প্লেনে ওর হাত ধরে যেভাবে বসে ছিলি সেভাবেই ওর ভরসার জায়গা হয়ে , ওর তারুণ্যের সঙ্গী হয়ে একটু একটু এগিয়ে যাওয়া যায় না নওশাদ ? তোর মত একটা ম্যাচিউর মানুষ কে আমার জ্ঞান দিতে হবে ভাবতে কষ্ট হচ্ছে ! তোর ভেতরে সমস্যা তাই ইচ্ছা করে আমি ডাবল বেডের কটেজ নেই নাই !
কি ডাবল বেডের কটেজ ছিল রেজোয়ান ?
ছিল কিন্তু আমার সামনেই রিসিপশনে একটা ফ্যামিলি চেক ইন করেছে তাই এত খুশি হওয়ার কিছু নেই!
রেজোয়ান হাসছে নওশাদের দিকে তাকিয়ে !
সুমনা আর হেরা কি নিয়ে হো হো করে হাসছে ওরা দুইজন সেদিকে মনোযোগ দিল ! তাকিয়ে দেখে বছর দেড়েকের একটা ছোট্ট বাচ্চা কোলে নিয়ে হেরা বসে আছে !
রেজোয়ান ওদের কাছে এগিয়ে সুমনা কে জিজ্ঞেস করলো , আরে এই বাচ্চা কোথায় পেলে তোমরা ?
সুমনা একটা বড় ফ্যামিলি গ্রুপ দেখিয়ে বলল ওদের !
হাঁটতে হাঁটতে হেরার কাছে এসেছে, এখন নিতে চাচ্ছে ওর মা যাচ্ছে না ! তাই হাসছি আমরা !
তোমাকে পছন্দ করেছে হেরা !
ভাইয়া দেখেন কি কিউট মেয়েটা। মাসাআল্লাহ ! একদম পুতুল !
হুম বুঝলে হেরা ভেবেছিলাম তোমার সুমনা ভাবি এত কিউট আমাকে একটা কিউট পুতুল দিবে তিনি দিয়েছে দুটো বাঁদর ছেলে !
রেজোয়ান বাঁদরের বাচ্চা বাঁদর ই হয় তোমার ছেলেরা তোমার মতই হয়েছে ! আমার মত হলে কিউট ই হতো !
হেরা হাসছে রেজোয়ান আর সুমনার কথা শুনে !
তোমার বাঁদর ছেলেদের খোঁজ নিয়েছিলে কি করে তারা ?
টিচার এসেছে পড়ছে বড়জন আর ছোটজন পাশের ফ্ল্যাটে তার ফ্রেন্ড মিরাব দের বাসায় ! আম্মার মাথা খারাপ করে দিসে তোমার ছোটছেলে বাহিরে ফ্রেন্ডের সাথে পাস্তা খেতে যাবে পারমিশন দিতে ! আম্মা বলেছে তোমার মা না বললে যেতে দিব না ! রাগ দেখিয়েছে কতক্ষণ এখন গজগজ করতে করতে মিরাবের কাছে গেছে !
পেরেন্টিং ইজ এ ভেরী ডিফিকাল্ট জব নাউ এ ডে !
বুঝলে তো রেজোয়ান কেন ইন্জিনিয়ার হয়েও ঘরে বসে থাকি ! এদের জন্য !
সে জন্যই তো তোমাকে হাজার বার স্যালুট দেই দিনে সুমনা !
তুমি তো চাপাবাজি করেই পার করে দিলে বাপের দ্বায়িত্ব!
কি বলো ওদের নিয়ে সাইকেল চালাই, সপ্তাহে একদিন সুইমিং করাই, শপিং এ নিয়ে যাই কয়টা বাবা এসব করে এখন ?
রেজোয়ান সামনে থেকে যাও তো মেজাজ খারাপ হচ্ছে তোমাকে দেখে ! যাও দেখো ডিনার কখন খেতে পারব !
যাচ্ছি ইওর হাইনেস ! রেজোয়ান হাসতে হাসতে উঠে গেল !
ভাইয়া অনেক মজার মানুষ !
ওর মনটা সোনার মত বুঝলে হেরা ! আমি খুব ভাগ্যবতী ওকে জীবনে পেয়ে !
হেরা মুগ্ধ হয়ে সুমনার মুখটা দেখছে কি সুন্দর লাগছে চোখে মুখে রেজোয়ান ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা চকচক করছে ! হেরা আশেপাশে নওশাদ কে খুঁজছে ! কিন্তু কোথাও নওশাদ কে পেলো না !
উনি কি রুমে চলে গেলেন ? মনে মনে ভাবছে হেরা !
ডিনার শেষ করে ওরা রেস্টুরেন্টে র পাশে বসে কফি খেলো ! নওশাদ তার আব্বাকে খাইয়ে ওষুধ দিয়ে এসেছে ! যদিও সার্বক্ষণিক রাজু আছে সঙ্গে তারপরও বাসায় আর এই পরিবেশ আলাদা ! ছোট দুই ভাই ও ফোন করে জানতে চাইছে আব্বার শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা !
কফি খাওয়া শেষ হলে নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল , চলো তুমি ঢেউয়ের কাছে যেতে চেয়েছিলে ,চলো তোমাকে নিয়ে যাই !
হেরার চোখ মুখ খুশিতে চকচক করছে !
ভাবি আপনারাও চলেন ? হেরা সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল !
সুমনা বলল,তোমরা যাও আমার ঘুম পাচ্ছে আমি রুমে যাচ্ছি !
ঠিক আছে !
নওশাদ রেজোয়ানের দিকে তাকাতেই রেজোয়ান বুড়ো আংগুল দেখিয়ে বেস্ট অব লাক ইশারা করলো !
হাঁটতে হাঁটতে ওরা ঢেউয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে!
আজ তো পূর্ণিমার রাত মনে হচ্ছে হেরা !
আজ না আগামীকাল পূর্ণিমা !
তাই ?
জ্বি !
আজকেও কত বড় চাঁদ উঠেছে দেখো !
অনেক সুন্দর চাঁদ ! আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, পায়ের কাছে সমুদ্রের ঢেউ কোন দিন এত সুন্দর রাত আসবে সত্যি ভাবিনি জানেন !
তাই !
হ্যাঁ । আপনাকে এর জন্য বারবার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে আমার!
আমাকে কেন ধন্যবাদ দিতে হবে ?
আপনি তো এসব কিছুর উপলক্ষ ! আপনি আমাকে এসব দেখার সুযোগ করে দিলেন !
সব তোমার ভাগ্য হেরা ! ভাগ্যে ছিল তাই আজ তুমি আর আমি এখানে এভাবে হাঁটছি ! ধন্যবাদ আল্লাহ কে দিবে !
সেটাও সব সময় দেই !
নওশাদ হঠাৎ হেরার হাতটা ধরলো ! সাবধানে দেখে দেখে হাটো !
হেরার যে কতটা ভালো লাগছে নওশাদের হাত ধরে এরকম একটা পরিবেশে হাঁটতে ! নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে! একটা সময় নিজেকে সবচেয়ে অসহায়, দুঃখী একটা মানুষ হিসেবেই জানতো ! এই মানুষটা তার জীবনে কি এলো তার জীবনটা আমূল বদলে গেল! আবর্জনার মত জীবনটা হঠাৎ চাঁদের আলোর মত ঝলমল করে উঠল ! হেরার চোখ ভিজে উঠেছে ! গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে ! ভাগ্যিস এতটাও আলো নেই তা না হলে নওশাদ দেখে ফেলতো ওর চোখে পানি !
নওশাদ অনেক কিছুই দেখে না ! দেখতে পাওয়ার কথা ও না ! যদি দেখতে পেতো তাহলে সে অবাক হতো , ওর জন্য কতটা ভালোবাসা বুকে পুষে রেখেছে হেরা ! হেরার প্রতিটি রোমকূপ এ নওশাদ এর একটু ছোঁয়া কতটা আন্দোলন শুরু করে ! হেরা বলে একবার ডাকলেই ওর সকল ইন্দ্রীয় কাঁপতে থাকে গাছের পাতা যেমন ঝড়োহাওয়ার মধ্যে কাঁপে সেরকম ! একবার নওশাদ ওর দিকে তাকিয়ে হাসলে হেরার মনে হয় পুরো পৃথিবী টা হেসে উঠে ওকে ঘিরে আনন্দে !
এই যে মানুষ টা তার হাত ধরে আছে ওর মনে হচ্ছে হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এই হাতের অনুভূতি শক্তি টা আর নেই ! এরকম আগেও হয়েছে !
হেরা !
জ্বি ! হেরা চমকে গেল !
কি ব্যাপার চমকে গেলে মনে হলো ?
না সেরকম কিছু না !
কোন কিছু নিয়ে খুব চিন্তা করছিলে মনে হয় ?
হুঁ ! ভাবছিলাম এত সুন্দর একটা পরিবেশে আমি কি সত্যিই আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি কোন !
ও আচ্ছা !
আসলেই চাঁদের আলো টা আজ এত সুন্দর লাগছে আমারও খুব ভালো লাগছে ! কত বার এই হোটেল বানানো নিয়ে কক্সবাজার এসেছি কিন্তু সাগরের পাড়ে হাঁটতে আসিনি ! হোটেলের বারান্দায় বসে থেকেছি ! বিশ্বাস করবে আজ অন্য রকম লাগছে ! হেরা হঠাৎ করে গীতি চলে যাওয়ার পর এতটা একা হয়ে গিয়েছিলাম ইচ্ছে ই হতো না কোন আড্ডায় মত্ত হওয়ার ! ধীরে ধীরে কাজে এত বিজি করে ফেললাম নিজেকে বাসা, অফিস মনটা কে রিফ্রেশ করার জন্য গলফ খেলতাম ! এই ছিল জীবন!
আকাশের চাঁদ, বর্ষার বৃষ্টি, সমুদ্রের ঢেউ সব একসময় যা মনকে আলোড়িত করতো একটা সময় সেগুলো আমাকে টানতো না ! একাকীত্বের চেয়ে বড় কষ্ট কিছুতে নেই !
কথা বলতে বলতে ওরা কটেজের কাছে চলে এসেছে ! হঠাৎ হেরা নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি এখনও আগের মতই একা ?
নওশাদ হেরার চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তারপর বলল, এখন আর আগের মতো একা লাগে না সব সময় ! মনে হয় আমার খেয়াল রাখছে কেউ ! ডাকলেই তাকে পাশে পাওয়া যায় !
হেরার এত ভালো লাগলো নওশাদের কথাটা শুনে আনন্দে মনটা ভরে গেল !
একটা কথা বলি , এই যে বললেন না ডাকলেই পাশে পাওয়া যাবে আমি চাইবো আপনি এই কথাটা সব সময় মনে রাখবেন !
নওশাদ চোখের পলক ফেলে সম্মতি জানালো !
চলেন ভেতরে যাই !
হেরা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নওশাদ শ্বশুরের ঘর থেকে এখনো আসেনি !
কটেজের বারান্দার দরজা খুলে দিলেই সমুদ্র দেখা যাচ্ছে ! সে দরজায় এসে দাঁড়ালো ! চাঁদটা এখন মধ্য আকাশে ! হেরার মনে হচ্ছে এই আলোটা সরাসরি তার জীবনটাকে আলোয় ভরে দিচ্ছে ! এত সুন্দর একটা জীবন তার জন্য কোথাও অপেক্ষা করছিল ! বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে !
নওশাদ দরজায় নক করে ঘরে ঢুকলো !
আব্বার সঙ্গে কথা বলছিলাম ! কালকে নাকি সমুদ্রের পানিতে নামবে ! আল্লাহ জানে এই কথা যদি কালকে পর্যন্ত মনে থাকে কিভাবে আটকাবো !
আপনি চিন্তা করবেন না সমুদ্রে নামলে আমি ধরে থাকব আব্বা কে !
দেখা যাক কি হয় ! আমাকে কালকে হোটেল সাইটে যেতে হবে ততক্ষণ আব্বাকে কন্ট্রোল করতে পারবে তুমি ? হেরা নওশাদের ঘরের ড্রেস হাতে তুলে দিল !
পারব চিন্তা করবেন না ! আপনি খুব ভালো একজন সন্তান ! একা মানুষ হয়েও বৃদ্ধ বাবার কত খেয়াল রাখেন , উনার সব ছোটখাটো বিষয়ে আপনি কত মনোযোগ দেন !
ভালো সন্তান কিনা জানিনা ! তবে আম্মা নেই আব্বার খেয়াল তো রাখতেই হবে তাই না! আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছে সাহায্য করার মত লোক রাখার নিজে তো সব পারি না । দ্বায়িত্ব কখনো ফেলে রাখতে পারি না আমি !
তুমি কি সমুদ্র দেখছিলে ? আমি ফ্রেশ হয়ে আসি দু’জনে এক সঙ্গে দেখি !
ঠিক আছে!
হেরা রুমটা গুছিয়ে নিলো ! হঠাৎ ওর মনে হলো আজ এই প্রথম ও আর নওশাদ এক ঘরে এক বিছানায় ঘুমাবে !
সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেল ! শুধু যে লজ্জায় সে আক্রান্ত হলো তা নয় , লজ্জা ছাড়াও অন্য এক অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরলো যে অনুভূতি র সঙ্গে ওর পরিচয় হয়নি আগে কখনো !
হেরার হঠাৎ মনে হচ্ছে খুব ঠান্ডা লাগছে ! দাঁতের সঙ্গে দাঁত লেগে যাচ্ছে !
নওশাদ ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দেখে হেরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে !
হেরা !
হেরা কোন জবাব দিলো না যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে !
নওশাদ আবার ডাকলো ! কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নওশাদ ওর পাশে এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখতেই হেরা খুব চমকে উঠলো !
নওশাদ পুরো অবাক হয়ে গেল ! কি ব্যাপার তুমি কি চিন্তায় মগ্ন ছিলে হেরা দুইবার এত কাছ থেকে ডাকলাম তোমার কোন সাড়াশব্দ নেই !
না মানে কিছু না ! আপনি ঘুমাবেন এখন ! হেরার মনে হচ্ছে ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না !
তোমার ঘুম পাচ্ছে ?
সেরকম কিছু না !
তোমাকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে !
আমি একটা বই পড়ছিলাম সেটা পড়তাম !
সঙ্গে বই নিয়ে এসেছো ?
হুম একটা বই পড়ছিলাম শেষ হয়নি নিয়ে এসেছি সঙ্গে !
গ্রেট তুমি বই পড়তে থাকো আমি ল্যাপটপে একটু কাজ করব ! ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কিছু লবির ডিজাইন পাঠিয়েছে দেখব !
ঠিক আছে !
হেরা বই খুলে বিছানায় হেলান দিয়ে পড়া শুরু করেছে ! সে কোন ভাবেই মনোযোগ দিতে পারছে না ! বারবার আড় চোখে নওশাদ কে দেখছে !
নওশাদ খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে হোটেলে র লবির জন্য করা ডিজাইন গুলো দেখছে ! আগামীকালকে একটা ডিজাইন ফাইনাল করতে হবে ! অনেকক্ষণ পর্যন্ত নওশাদ ল্যাপটপ এ কাজ করলো !
কাজ করার সময় হঠাৎ হঠাৎ খেয়াল করেছে হেরা ওকে খেয়াল করছে !
ও কি খুব অস্বস্তি বোধ করছে হয়তো নওশাদের সঙ্গে এক ঘরে এক বিছানায় ঘুমাবে বলে !
তখন চমকে গেল কি এই জন্য ! নওশাদের নিজের ই কেমন লাগছে এখন !
আচ্ছা হেরা কি ভয় পাচ্ছে ? নওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরা কাত হয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে ! অনেক রাত হয়ে গেছে ! নওশাদ ল্যাপটপ বন্ধ করলো !
হেরা কে সরাসরি বলে দিলে কেমন হবে তুমি আরাম করে ঘুমাও আমাকে নিয়ে ভয় পেতে হবে না ! ছিঃ এটা কিভাবে বলবে সে ?
নওশাদ ল্যাপটপ এর চার্জার টা আনার জন্য উঠে দেখে হেরা কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে ! ঘুমন্ত হেরা কে দেখার সঙ্গে সঙ্গে নওশাদের বুকে পাথর ভাঙার মত কিছু একটা ফাটলো যেন ! নওশাদ বেড সাইড ল্যাম্প টা ছাড়া সব আলো নিভিয়ে দিলো ! উঠে বারান্দার দরজা, ঘরের দরজা লক করলো ! হেরার ঠান্ডা লাগছে বোঝা যাচ্ছে কেমন কুঁজো হয়ে ঘুমোচ্ছে !
পায়ের কাছে রাখা চাদর টা নিয়ে কাছে গিয়ে দাড়াতেই ওর ঠোঁটের নিচের সেই ছোট্ট তিল টাতে চোখ আটকে গেল নওশাদের ! এই তিলটা দেখলে ওর খুব ইচ্ছে করে তিলটাতে চুমু খেতে ! আজও যখন কটেজের সামনে কথা বলছিল দুজন তখনও ইচ্ছে হচ্ছিল তিলটা দেখে চুমু খেতে ! একদিন হেরাকে বলবে হেরা আমাকে দিবে তোমার ঠোঁটের নিচের তিলটায় আর বুকের ঐ ক্ষত দাগটায় চুমু খেতে ? জানো হেরা তুমি কথা বলার সময় যখন তিলটা কাঁপে তখন মনে হয় আমার বুকের ভেতরের সবকিছু কাঁপে আর তোমার সেই ব্যথার দাগে চুমু খেলে একবার, দেখবে আমি সব কষ্ট আমার মাঝে টেনে নিব সেই চুমুতে ! আর কোন কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করবে না দেখো তখন!
কি একটা পোকা এক গতিতে ডেকে যাচ্ছে বাহিরে ! মনে হয় ঝিঁঝিঁ পোকা ! নওশাদ অনুভব করছে তার শরীরের ভেতরেও আজ ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে ! বহু বছর পর ঝিঁঝিঁ পোকা টা ডেকে যাচ্ছে ওর ভেতর ! কোথায় এরা লুকিয়ে ছিল এত দিন ! নাকি সে এদের পশ্রয় দেয়নি বলেই লুকিয়ে ছিল আজ সে বেপরোয়া ঝিঁঝিঁ পোকার দল কে আটকাতে পারছে না !
নওশাদ হেরার গায়ে চাদরটা ঝুঁকে যখন দিয়ে দিচ্ছে হঠাৎ হেরা চোখ খুলে তাকালো !
নওশাদ এতটা চমকে গেলো মনে হচ্ছে ও কোন গোপন কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে !
সরি আমার মনে হচ্ছে তোমার ঠান্ডা লাগছে !
হেরা চোখ বন্ধ করে ফেলল!
হেরা যেমন ছিল সেভাবেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো ! ওর মনে হচ্ছে পুরো ঘর কাঁপছে !
নওশাদ দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো !
( চলবে )