এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৩০.
দুই হাত এবং পা বাঁধা অবস্থায় সোফার এককোণে বসে আছে বাণী। তার ঠিক পাশেই বসে আছে শমসের মজুমদার। যিনি একহাতে বাণীর কোমর চেপে ধরে বসে আছেন। অসভ্য বুড়ো লোকটার স্পর্শ ক্ষণে ক্ষণে বাণীকে আতংকিত করে তুলছে। কিন্তু সে ছটফট করা এবং চিৎকার করা ছাড়া প্রতিহত করার আর কোনো মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছে না। বাণীর আতঙ্ক মিশ্রিত চিৎকারে বেশ তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছে শমসের মজুমদার। তিনি সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে খুব আয়েশ করে অপরহাতে চানাচুর মাখা খেতে ব্যস্ত। বাহিরে আকাশ তখন গর্জন তুলে ডাকছে। এমন বাদলা দিনে চানাচুর মাখা খাওয়ার মজাই অন্যরকম। তিনি একমুঠো চানাচুর বাণীকে দেখিয়ে সাধে,
“ খাবে নাকি বৌমা? খাইয়ে দিবো? ছেলে এসে তো পরে বলবে আমি তার বউয়ের ঠিকঠাক খাতির যত্ন করিনি। “
কথাটা বলেই শমসের অশ্লীল ভঙ্গিমা করে হাসিতে ফেটে উঠে। বাণীর গা গুলিয়ে আসে সেই হাসি দেখে। আক্রোশে সে নিজের দঁড়ি দিয়ে বাঁধা পা জোড়া তুলেই সোফার সামনে রাখা টি টেবিল বরাবর একটা লাথি মারে। মুহুর্তেই টি টেবিলের উপরের কাঁচ এবং চানাচুর মাখা কাঁচের বাটিটা টাইলস বসানো ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন শব্দ তুলে ভেঙে গুড়িয়ে যায়। শমসের মজুমদার কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তার মুখেও একদলা থুতু নিক্ষেপ করে বাণী।
শমসের মজুমদারের হাসিমাখা মুখে মুহুর্তেই কালো আঁধার নামে। তিনি রাগে ফেটে পড়ে একহাতে বাণীর চুলের মুঠি চেপে ধরে অন্য হাতে তার গালে একটা কষে চড় বসিয়ে বলে,
“ মা*গী তোর এতো তেজ? তোর তেজ আমি ছুটামু দাঁড়া। তোর জামাইয়ের খুব পাংখা গজাইছে। আগে ওর পাংখা কাইট্টা নেই। পরে তোর তেজ ছুটামু। “
চড় খেয়েও বাণী দমে না। ফের থুতু ছুড়ে মারে শমসেরের মুখে। রাগে এবং বিতৃষ্ণায় শমসের মজুমদারের গা ঘিনঘিন করে উঠে। তিনি কিছু করবে তার পূর্বেই বাহির থেকে গাড়ির হর্ণের তীক্ষ্ণ শব্দ ভেসে আসে। শমসের একপল বাণীকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায়। গায়ের পাঞ্জাবিটা সামান্য ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে তাকাতেই দেখে মানিক সহ বেশ কিছু গার্ড দ্রুত লিভিং রুমে প্রবেশ করে সতর্ক অবস্থান জারি করে পিস্তল হাতে প্রস্তুত। তার ঠিক পরপরই গটগট পায়ে প্রবেশ করে হিরণ। তার পিছনে রয়েছে তার ব্যক্তিগত একদল গার্ড।
হিরণ সর্বপ্রথম সোফায় বসে থাকা শাড়ি পরিহিতা বাণীর দিকে দৃষ্টিপাত করে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সে হাতের পিস্তলের স্লাইড পুল করে শমসের মজুমদারের দিকে তা তাক করে ধরে। শমসেরের লোকেরাও দেরি না করে চারিদিক থেকে হিরণের দিকে পিস্তল তাক করে ধরে। বাদ যায় না হিরণের লোকেরাও। ট্রিগার চাপার পূর্বে হিরণ একমুহূর্ত চিন্তা করতো না, যদি না এখানে বাণী উপস্থিত না থাকতো। কিন্তু এখন তাকে কিছু করতে হলেও আগে একশো বার ভাবতে হবে। সে ট্রিগার চেপে এখনই শমসেরের বুকে ফায়ার করতে পারে, কিন্তু এতে উভয়পক্ষ থেকেই ক্রসফায়ার হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত। সেই ফায়ারিং এর মাঝে বাণী যে গুলিবিদ্ধ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হিরণ সেই রিস্ক নিতে রাজি না। তাই সে ক্রুদ্ধ গলায় কেবল বলে,
“ পথ আলাদা আজ থেকে আমাদের। কাজ সম্পর্কিত যত ডিল ছিলো আমাদের মধ্যে সেই সকল চুক্তিকে আমি আর তোয়াক্কা করবো না। বাণীকে আমার সাথে যেতে দে। বেঁচে থাকতে চাইলে আর কখনো বাণী কিংবা বহ্নির আশেপাশে যেনো আমি তোকে না দেখি। “
শমসের মজুমদার পাজামার পকেট হতে একটা রুমাল বের করে মুখটা মুছে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“ বৌমার মুখের থুতুতেও কি স্বাদ! “
হিরণের রাগে শরীর গিজগিজ করছে। সে গমগমে গম্ভীর স্বরে বাণীকে শুধায়,
“ গেট আপ বাণী। “
বাণীর ক্ষানিক পূর্বের তেজ হিরণকে দেখতেই মিইয়ে গেছে। সেই ভয়ঙ্কর দৃষ্টি তার কলিজায় কাঁপন ধরায়। কি হতে চলেছে ভেবে মনে মনে তটস্থ সে। কোনটা বেশি উত্তম? শমসের নাম এই অসভ্য বুড়ো লোকের কাছে হেনস্থা হওয়া? নাকি হিরণের সাহায্যে উদ্ধার হয়ে আবারও তার ভয়ংকর ক্ষোভের শিকার হওয়া? দুটোই বাণীর জন্য অসহনীয়। এর থেকে মরে যাওয়া কি উত্তম নয়? মরে যেতো বাণী। বহু পূর্বেই মরে যেতো। কিন্তু বহ্নির পিছুটান তাকে মরতেও দিচ্ছে না। নিজের মেয়েকে এমন অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে একা ছেড়ে দিয়ে মরে গিয়ে মুক্তি লাভের মতো স্বার্থপর বাণী হতে পারবে না।
হিরণের রাগের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতেই সে হাতের নিশানা ঘুরিয়ে শমসেরের এক লোকের পেটের বাম পাশ বরাবর গুলি ছুড়ে চেঁচিয়ে উঠে,
“ আই সেইড গেট আপ বাণী। “
বাণী কেঁপে উঠে। ভয়ে সে বলতেও পারে না যে সে উঠতে পারবে না। শাড়ির পাড়ের নিচে তার পা দুটো বাঁধা। আহত লোকটা পেট চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। শমসের মজুমদার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। তিনি এবার সিরিয়াস মুখভাব করে হিরণের চোখে চোখ রেখে বলে,
“ ভুলে যেও না কার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছো তুমি। বেশি সেয়ানা সাজলে মেরে আমার বাড়ির আঙিনায় বালি চাপা দিয়ে দিলেও কেউ টের পাবে না। আমার খেয়ে পড়ে এখন আমার দিকেই ঘেউঘেউ করবে, আর আমি তা মেনে নিবো? বউ সহ যদি এখান থেকে জীবিত বের হতে চাও তাহলে শুধুমাত্র একটা সিগনেচার করতে হবে। নিজের অস্ত্রের ব্যবসা আমার নামে করে দাও আমি তোমাদের যেতে দিবো। আর কখনো তোমাকে আমাদের প্রয়োজন পড়বে না। “
শমসেরের ধূর্ত প্ল্যান সম্পর্কে শুনে হিরণ অবাক হয় না। বহুদিন ধরে যে শমসের তার ব্যবসার দিকে নিজের নজর দিয়ে রেখেছে তা হিরণের ভালো করেই জানা আছে। সে এটাও জানে শমসের মজুমদারের বলা কথাটা মিথ্যা। একবার সিগনেচার পেয়ে গেলে সে কখনোই হিরণ এবং বাণীকে এখান থেকে জীবিত বের হতে দিবে না।
শমসের এবার আচমকাই দ্রুত গতিতে নিজের পাঞ্জাবির পকেট হতে একটা পিস্তল বের করে তা বাণীর মাথায় ঠেকায়। গম্ভীর গলায় শুধায়,
“ তোমার হাতে সময় কম হিরণ। দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও কি চাও। “
হিরণ একপল বাণীর ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে নিয়ে লিভিং রুমের এককোণে থাকা ঘড়িতে সময়টা দেখে নেয়। ঘড়ির কাঁটা ছয়টা উনপঞ্চাশে রয়েছে এই মুহুর্তে। তা দেখে হিরণ মৃদু হাসে। ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখেই সে শমসের মজুমদারের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া বন্ধ কর। আমরা দুইজনই ভালো করে জানি যে আমাকে কিংবা বাণীকে এখান থেকে কখনোই জীবিত যেতে দিবি না তুই। “
শমসের মজুমদার হিরণের কথা শুনে সামান্য হাসে। ছেলেটা খুব বুদ্ধিমান। হিরণ আবারও বলে উঠে,
“ আমাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব নতুন না শমসের মজুমদার। তুই যেমন নিজ স্বার্থে আমার মতো অনাথকে পেলে সুযোগ বুঝে ব্যবহার করেছিস, আমিও ঠিক একইভাবে নিজ স্বার্থে তোর দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছি। তোর কি মনে হয় তুই আমাকে নিজের মতো গড়ে তুলেছিস? হাহ! আমি নিজেকে গড়েছি। আর এতটা শক্তভাবে গড়ে তুলেছি যে এখন আমি তোর থেকেও বেশি ক্ষমতার মালিক। একটা প্রবাদ আছে না? একই বনে কখনো দুই রাজা থাকতে পারে না? আমাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। এই বনে রাজা শুধু একজনই থাকবে। সে হলাম আমি। “
হিরণ কথাটা শেষ করতে না করতেই লিভিং রুমে প্রবেশের প্রধান দরজা এবং দুই ধারের চারটে জানালার আড়াল হতে গুলি বর্ষণ শুরু হয়। শমসের মজুমদার কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তার অধিকাংশ গার্ড রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বুঝে উঠতেই শমসের ট্রিগার চাপার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু তার পূর্বেই হিরণ তার হাতের বাহু বরাবর ফায়ার করে। ফলস্বরূপ তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে পড়ে। হিরণের লোকেরা যখন বাসার বাহির এবং ভেতর থেকে গুলি ছুঁড়তে ব্যস্ত হিরণ সেই সুযোগে দ্রুত বাণীর দিকে এগিয়ে যায়। শমসের মজুমদার রক্তাক্ত হাত চেপে ধরে পিস্তলের কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই হিরণ ফের তার হাঁটু বরাবর গুলি ছুড়ে। শমসের হাঁটু ভেঙে মুহুর্তেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। গুলিটা একদম পায়ের হাঁড়ে গিয়ে লেগেছে। উঠে দাঁড়ানোর কোনো শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না সে।
হিরণ নিঃশব্দে এগিয়ে বাণীর দঁড়ি দিয়ে বাঁধা হাত জোড়াকে আগে বাঁধন মুক্ত করে। সঙ্গে সঙ্গে বাণীর হাত চেপে ধরতেই বাণী নিচু গলায় বলে,
“ পা বাঁধা। “
হিরণ তা শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় বাণীর পায়ের দিকে। বাণী নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেই শাড়ির পাড়টা সামান্য উঁচু করে দ্রুত হাতে পায়ের বাঁধন খুলে ফেলে। পা জোড়া মেঝেতে রাখতে নিলেই হিরণ তার পূর্বেই তাকে পাজাকোলে তুলে নেয়। ভয়ে বাণী চিৎকার করে উঠে,
“ হাঁটতে পারবো… নামান। “
হিরণ প্রতুত্তর করে না। বাণীকে নামায়ও না। কেবল শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। বাণী সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ে চুপ হয়ে যায়। বুক ভেঙে কান্না আসছে তার। সব বৃথা গিয়েছে। সব! আবার সেই জাহান্নামে ফিরতে হবে তার। আবার সেই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে তার। এতো সব ভাবনার মাঝেই একটা নাম বাণীর মস্তিষ্কে উঁকি দেয়। শাহরিয়ার দূর্জয়। কোথায় সে? তার কাছে কি বাণীর ম্যাসেজ পৌঁছায় নি? নাকি সে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত? নিজের ভাবনার প্রতি বাণীর করুণা হয়। সে কেনো আশা করছে দূর্জয় তাকে সাহায্য করতে আসবে? দূর্জয় কেনো আসবে? দেশের প্রতি নাহয় দূর্জয়ের দায়িত্ব এবং ভালোবাসা দুটোই আছে। কিন্তু বাণী? তার প্রতি তো দূর্জয়ের দুটোর একটিও নেই।
হিরণ নীরবে ভাঙা কাঁচ মাড়িয়ে দরজার কাছে যেতেই ইবাতের মুখোমুখি হয়। ইবাত বাণীকে দেখতেই প্রাণখোলা হাসি দিয়ে হিরণকে বলে,
“ স্যার থ্যাংক গড লাস্ট মোমেন্টে আমরা প্ল্যান চেঞ্জ করেছি। ব্যাক আপ ছাড়া আপনি এখানে আসলে শমসের স্যার আপনাকে আর ম্যাডামকে জীবিত যেতে দিতো না কখনো। “
হিরণ শান্ত গলায় বলে,
“ শমসের মজুমদারের কি ব্যবস্থা করতে হবে তা তোমার জানা আছে। এখানের কাজ শেষ করে বাড়ি যাও। বহ্নিকে কিছু একটা বুঝ দিয়ে আজকের জন্য সামলে নাও। আমরা আগামীকাল ফিরবো। “
বাণী সঙ্গে সঙ্গে ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে হিরণের পানে তাকায়। আগামীকাল ফিরবে মানে? আজ তাহলে তারা কোথায় যাবে?
ইবাত প্রশ্ন করে,
“ স্যার সঙ্গে গার্ড নিবেন না? “
“ প্রয়োজন নেই। “
__________
“ Something is wrong Durjoy. Please come soon. “
মিটিং রুম থেকে বের হয়ে বাণীর নাম্বার থেকে আগত ছয়টা মিসড কল এবং এই দুই বাক্যের ম্যাসেজ দেখে দূর্জয়ের কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। সে দ্রুত বাণীর নাম্বার ডায়াল করে। কিন্তু কলটা রিসিভ না হতেই সে পরপর আহসান এবং ইলিয়াসের নাম্বারে কল করে। তারাও যখন কল রিসিভ করে না, তখন দূর্জয় দ্রুত প্রস্থানের জন্য পা বাড়াতেই তার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে জুলফিকারের নামটা দেখে দূর্জয় তা রিসিভ করে। ফোনের অপর পাশ হতে জুলফিকার তাড়া দিয়ে বলে,
“ দ্রুত সেল নং এ থ্রিতে এসো। “
কথাটুকু বলেই জুলফিকার কল কেটে দেয়। দূর্জয় দুইপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। একটা রাস্তা বাণীর কাছে পৌঁছানোর এবং অন্য রাস্তা সেল নং এ থ্রিয়ে পৌঁছানোর। কোনদিকে পা বাড়াবে সে? অজানা কারণে বাণীকে নিয়ে অনুভূত ভয়, শঙ্কা দূর্জয়ের বুকের ভেতর বুঁদবুঁদ করছে। এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দূর্জয় এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। জুলফিকারের নাম্বারটা ডায়াল করে ফোন কানে চেপে ধরে। কলটা রিসিভ হতেই সে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে,
“ স্যার, সেল নং এ থ্রিতে যে খুব ইমারজেন্সি কোনো কারণে আপনি আমায় ডেকেছেন তা আমি জানি। এই মুহুর্তে সেই ইমারজেন্সি সিচুয়েশনটা সামলানোর জন্য এই হেডকোয়ার্টারে অসংখ্য সেনা উপস্থিত আছে। কিন্তু বাণী ইজ হেল্পলেস। শি ইজ ইন এ বিগ ট্রাবল। ওর ইমারজেন্সি কেসটা দেখার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নেই। এই অবস্থায় আমি কাকে চুজ করবো? আপনার পারমিশন ছাড়া আমি এক পা-ও বাড়াবো না। “
__________
সন্ধ্যা তখন ছয়টা নাগাদ বাজে। সূর্য ঢলে পড়লেও পশ্চিম আকাশে সূর্যের রক্তিম আভা তখনও ফুটে আছে। নিজের ভূখণ্ড ছেড়ে বহু দেশ ও সমুদ্র অতিক্রম করে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারটা ভিন্ন এক ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে বেশ অনেকক্ষণ হলো। স্বচ্ছ কাঁচের জানালা ভেদ করে স্পেশাল ফোর্সের তিন লেফটেন্যান্টেরা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক ভূখণ্ডের পানে তাকায়। যে দেশের বাতাসে মিশে আছে বারুদের গন্ধ। যে দেশে মৃত্যুর মাত্রা অতুলনীয়। যে দেশের প্রায় ১.৭ মিলিয়ন মানুষ বাস্তচুত্য হয়েছে, সম্প্রদায়গুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, পুরো পরিবার এবং গোটা একটা প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে।
রাফি, প্রত্যয় এবং রিদওয়ান স্ব চোক্ষে দেখে এমন একটা ভূখণ্ডকে, যে ভূখণ্ডের জাতির উপর অনাহার নেমে এসেছে। বাস্তব পৃথিবীর এরূপ চিত্র দেখে তিনজনই বাকহারা হয়ে পড়েছে। সামনে থেকে পাইলট জানায় আর সাত মিনিট পড়েই তারা ফিলিস্তিনের মাটিতে ল্যান্ড করবে। প্রত্যয়, রাফি এবং রিদওয়ান মনে মনে প্রস্তুত ব্যতিক্রমী এক অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হতে। স্ব চোক্ষে এই ভূখণ্ডে চালিত ধ্বংস লীলার চাক্ষুষ সাক্ষী হতে।
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]